

ভূমিকম্প বর্তমানে বহুল পরিচিত একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না যে, এটি পৃথিবীর একটি নিয়মিত ঘটনা। এটি আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, ভূতাত্ত্বিত প্লেট বিচলন অথবা মানবসৃষ্ট বিস্ফোরণের কারণে এই ভূমিকম্প হতে পারে। অধিকাংশ ভূমিকম্পই প্লেট টেকটনিকসের কারণে হয়ে থাকে। ভূত্বক একটি অখন্ড নিরবিচ্ছিন্ন সত্ত্বা নয়, বরং তা খন্ডাংশের সমষ্টি যেগুলোকে প্লেট বলা হয়। এই প্লেট নামক খন্ডাংশগুলো বিভিন্ন আয়তনের হতে পারে। প্লেটগুলো পরস্পর সংস্পর্শে আসলে ভূত্বকে পীড়ন বা চাপের সৃষ্টি হয়। এটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১। পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়া
২। একটি অপরটির সীমান্ত বরাবর পরস্পরের অবস্থান সাপেক্ষে পাশাপাশি সরে যাওয়া
৩। একটি অন্যটিকে ধাক্কা দেওয়া
সাধারণত ২ ও ৩ নং এর কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
পৃথিবীর ভূত্বক অনেকগুলো প্লেট সমবায়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়ান, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, আফ্রিকান, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা এবং এ্যান্টার্কটিকা প্লেট। এই প্লেট গুলো আবার ছোট ছোট সাব-প্লেট নিয়ে গঠিত। প্লেটগুলো বছরে ১ থেকে ৬ সেঃমিঃ গড় দ্রুতিতে পরস্পর সংঘর্ষজনকভাবে চলনশীল হয় এবং তাদের সংঘর্ষ সীমান্তই ভূমিকম্প সক্রিয়তার এলাকা। প্লেট সীমান্তগুলোর মাঝে রয়েছে ভূত্বক ভাঁজ বা ফল্ট।

ছবিঃ প্লেট এবং তাদের বিচরণ (ফোলার ১৯৯০)
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ইউরো-এশিয়ান, ইন্ডিয়ান প্লেট রয়েছে। তিনটি বড় ফল্ট রয়েছে যাদের নাম হচ্ছে মধুপুর ফল্ট, ডাউরি ফল্ট এবং পূর্ব প্লেট বাউন্ডারী ফল্ট। গত ২৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে অনেকগুলো বড় ভূমিকম্প হয়েছে যার মান রিক্টার স্কেলে ৭ এর উপরে।

ছবিঃ বাংলাদেশে অবস্থিত ফল্টগুলো (২০১৪)
টেবিলঃ বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ৮৫ বছরের ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
সাল ও তারিখ | স্থান | ভূমিকম্পের মাত্রা (রিখটার স্কেল) |
১৮৮৫, ১৪ জুলাই | মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ | ৭+ |
১৯১৮, ৮ জুলাই | শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ | ৭.৬ |
১৯৩০, ২ জুলাই | ধুবড়ি, আসাম, ভারত | ৭.১ |
১৯৩৪, ১৫ জানুয়ারি | বিহার, ভারত | ৮.৩ |
১৯৩৪, ৩ জুলাই | আসাম, ভারত | ৭.১ |
১৯৫০, ১৫ আগস্ট | আসাম, ভারত | ৮.৭ |
১৯৯৭, ২২ নভেম্বর | চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ | ৬.০ |
১৯৯৯, জুলাই | মহেশখালি দ্বীপ, বাংলাদেশ | ৫.২ |
২০০২ | বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ৪০ বার হয় | – |
২০০৩, ২৭ জুলাই | বরকল উপজেলা, রাঙামাটি, বাংলাদেশ | ৫.১ |
যে কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হতে পারে
১। ইন্ডিয়ান এবং ইউরো-এশিয়ান প্লেট বাংলাদেশের পাশে হওয়ায় এখানে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে। এখানে পূর্বেও ভূমিকম্প সংঘঠিত হয়েছে এবং এখনো সক্রিয় আছে।
২। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে উত্তর-পূর্ব দিকে ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতি বছর ৬ সেঃমিঃ সরে যাচ্ছে এবং ইউরো-এশিয়ান প্লেট এর সাথে পার্শ্ববর্তী এবং নিম্নগামী হচ্ছে যা প্রতি বছর ৪৫ মিঃমিঃ হয়ে থাকে। বার্মিজ প্লেট এবং উত্তর ও পূর্ব দিকে প্রতিবছর ৩৫ মিঃমিঃ সরে যাচ্ছে । প্রতিনিয়ত এই সরে যাওয়া সক্রিয় ফল্টের সৃষ্টি করছে। যার ফলে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
৩। মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে রয়েছে ডাউকি ফল্ট যা প্রায় ৩০০ কিঃমিঃ দীর্ঘ। উত্তর-দক্ষিণে মধুপুর ও যমুনা সমতল অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ১৫০ কিঃমিঃ দীর্ঘ মধুপুর ফল্ট।
৪। উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ সুরমা অববাহিকায় রয়েছে ৩০০ কিঃমিঃ দীর্ঘ আসাম-সিলেট ফল্ট। চট্টগ্রাম-মিয়ানমার উপকূলে সমান্তরালে রয়েছে ৮০০ কিঃমিঃ দীর্ঘ চিটাগাং-মায়ানমার ফল্ট।
এসব প্লেট ও ফল্টের উপর ভিত্তি করে নতুন বিএনবিসিতে বাংলাদেশকে মোট চারটি অংশে ভাগ করা হয়েছে।
টেবিলঃ ভূমিকম্প অঞ্চল
ভূমিকম্প অঞ্চল | স্থান | ভূমিকম্পের মাত্রা |
১ | বরিশাল, খুলনা, যশোর, রাজশাহী সহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল | কম |
২ | নোয়াখালী, ঢাকা, পাবনা, দিনাজপুর সহ নিম্ন মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ | মধ্য অবস্থা |
৩ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুরসহ উচ্চ মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল | তীব্র |
৪ | সিলেট, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম সহ উত্তর-পূর্ব অঞ্চল | অতি তীব্র |