আসবাবপত্র ক্রয়ের আগে ভাবতে হবে যে বিষয়গুলো

কিংবদন্তি ব্রিটিশ কবি জন কিটস বলেছেন, “এক টুকরো সৌন্দর্য আমৃত্যু আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।” সেই সৌন্দর্য যেকোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে নেয়া যেতে পারে, আপনার বসবাসের ঘরখানিও থাকবে সেই তালিকায়। যেসব জিনিস প্রতিদিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, ঘর সাজানো তার মাঝে একটি। অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে অনেকে কিছুদিন পর পর ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থান অদলবদল করে থাকেন, তাতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আসবাবপত্র বদলে ফেলা খুব নিয়মিত কোনো ব্যাপার নয়। আর তাই আসবাবপত্র কেনার সময় সবদিক বিবেচনায় রেখে কিনতে হবে, মাথায় রাখতে হবে তার আকার-আকৃতি। কেননা ঘরের আকারের চেয়ে বড় কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ছোট, দুটোই হবে দৃষ্টিকটু।

ঘরের পরিমাপ

ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ক্রয়ের পূর্বে প্রাথমিক কাজ হলো ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সবকিছুর সঠিক মাপ নিয়ে নেয়া। ঘর বর্গাকার নাকি আয়তাকার, সেটির উপরও নির্ভর করবে আসবাবপত্রের আকার। মেঝে থেকে জানালার উচ্চতা, জানালার অবস্থান, আকার এবং এর দু’পাশে অবশিষ্ট দেয়ালের মাপ, সবকিছুই টুকে ফেলতে হবে, যাতে আসবাবপত্র দ্বারা জানালা ঢেকে না যায়। এসবের পাশাপাশি ঘরের দেয়ালে কোনো পিলার থাকলে তার প্রশ্বস্ততা নির্ণয় করাও জরুরি। আর মাপতে হবে মেঝে থেকে সুইচবোর্ডের উচ্চতা। সুইচবোর্ড দেয়ালের যেখানে থাকবে সেই স্থান ফাঁকা রাখাই বাঞ্ছনীয়। অগত্যা কেউ যদি সেখানেও কোনো ফার্নিচার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেটির উচ্চতা সুইচবোর্ডের চেয়ে কম হওয়া আবশ্যক।

এসব মাপ নিতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যা ভুলে যাই তা হলো দরজার মাপ। আপনার আসবাবের আকার অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয় যা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো কঠিন। শুধু তা-ই নয়, দরজার পাশে রাখার পরিকল্পনা করছেন, এরকম কোনো আসবাবপত্র কিনলে অবশ্যই তার আকৃতি দরজার উচ্চতার মাঝামাঝি বা তার চেয়ে কম হওয়া ভালো। এতে ঘরের ঐ অংশের সৌন্দর্য বজায় থাকে।

ঘরের স্কেচ করুন, ছবি তুলুন

ফার্নিচার ক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রস্তুতিই ঘরে বসে সেরে ফেলতে হয়। আর সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হলো ঘরের মেঝের একটি খসড়া ডিজাইন তৈরি করা। প্রথমেই ঘরের কোথায় সোফা, কোথায় টেবিল আর কোথায় বিছানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র রাখছেন তা ঠিক করে ফেলুন, অনুমান অনুযায়ী মেঝেতে সেই বস্তুটি কতটুকু স্থান দখল করবে তা চক দিয়ে টেনে ফেলুন।

পুরো ঘরের কোথায় কী রাখছেন তার দাগ টানা হয়ে গেলে সেটি কাগজে এঁকে নিন এবং একাধিক স্কেচ করে ফেলুন একই মাপের ফার্নিচারগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দিয়ে। ফার্নিচারের দোকানে পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা মাপের ফার্নিচার না-ও মিলতে পারে। একাধিক স্কেচ করার সুবিধা এখানেই। তখন ভিন্ন মাপের আসবাবপত্রগুলোর জন্য ভিন্ন স্কেচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।

এক্ষেত্রে ঘরের ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণও করা যেতে পারে। ফার্নিচারের শো-রুমে আপনি যে আকার, আকৃতি বা রঙের ফার্নিচার দেখবেন, তার সাথে তৎক্ষণাৎ ঘরের ছবি/ভিডিও দেখে উভয়ের কম্বিনেশন যাচাই করে নিতে পারবেন।

বিছানার পরিমাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বিছানার পরিমাপ। সাধারণ বিছানাই বেডরুমের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে, তাই এর অবস্থানও এরূপ হতে হবে যেন ঘরে অবাধ হাঁটাচলা বিঘ্নিত না হয়। বিছানার আকারও ক’জন মানুষ ঘুমাচ্ছে সেই অনুপাতে যতদূর সম্ভব ছোট রাখাই বাঞ্চনীয়। পাঠকের সুবিধার্থে বিছানার কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড আকার উল্লেখ করা হলো:

টুইন বেড- ৩৯″ X ৭৫″

ফুল সাইজ- ৫৪″ X ৭৫″

কুইন সাইজ- ৬০″ X ৭৫″ কিং সাইজ- ৭৬″ X ৭৫″

এছাড়া, বিছানার আকারও নির্ধারণ করতে হবে ঘরের আকার অনুযায়ী। ঘরটি যদি লম্বা হয় তাহলে ছোট আকৃতির টুইন বেডই ভালো। ঘর বর্গাকৃতির হলে বর্গাকৃতির বিছানা যুতসই হতে পারে।

সোফা কিনুন বুঝে-শুনে

ঘরের আকৃতি এবং সজ্জা নির্ধারণ করে যে আসবাবপত্রগুলো, সোফা তার মাঝে একটি। বিছানা বা অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি সোফার জন্য কতটুকু জায়গা থাকছে, তা বুঝে ক্রয় করুন সোফা। একেবারে শূন্যস্থানের মাপ বরাবর সোফা ক্রয় করা মস্ত বড় ভুল। সোফা রাখার পর কফি টেবিল রাখার জায়গা এবং কফি টেবিলের চারপাশে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা বাঞ্চনীয়। পাশাপাশি, সোফার পেছনে রাখতে হবে কিছুটা খালি জায়গা, সাধারণত ১-১.৫ ফুট। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে সোফা রাখা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

চলাফেরার কথা শুরুতেই ভাবুন

আসবাবপত্র কেনা এবং সেসব জায়গামতো বসানোর পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে যা প্রায়ই ভুল হয় সেটি হলো হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, কিংবা থাকলেও তা পরিমিতভাবে বণ্টন না হওয়া। দেয়ালের উচ্চতা, জানালা না ঢেকে ফেলা, দরজা থেকে ঠিকঠাক দূরত্ব রাখা, এসবের মাঝে অনেক সময়ই হারিয়ে যায় ঘরে হাঁটাচলার জায়গা। কখনো বা ঘরে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা থাকলেও পুরো ঘরে বাধাহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো যায় না। কেননা ঘরের একপাশে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তো অন্যপাশে কম হয়। আর এটি হয় ঘরের আসবাবপত্রের আকারের জন্য। হাঁটার জন্য আপনি আপনার ঘরে সোজাসাপ্টা করিডোর রাখতে চান নাকি কিছুটা এলোমেলো পথে হাঁটতে চান, সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচির ওপর। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভাবুন এবং সেই অনুপাতে যুতসই আসবাবপত্র ক্রয় করুন।

কুইজ কন্টেস্ট-২: সঠিক উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরষ্কার!

মাত্র তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে জিতে নিন হোম বিল্ডার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় পুরষ্কার!

কুইজে অংশগ্রহণ করার নিয়মাবলি

– প্রথমে Home Builders Club এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিতে হবে। ইনস্টাগ্রাম এ ফলো করতে হবে, ইউটিউব এ সাবস্ক্রাইব করতে হবে। এই তিনটির প্রমাণ (ক্রিনশট) কুইজের উত্তরের সাথে সাবমিট করতে হবে। 

ফেসবুক পেজ – https://www.facebook.com/homebuildersclub/

ইনস্টাগ্রাম পেজ – https://www.instagram.com/home.builders.club/

ইউটিউব চ্যানেল – https://www.youtube.com/channel/UC59r3vDN1D4s-5w07xO-7xw

– কুইজের পোস্টটি ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে প্রাইভেসি পাবলিক করে শেয়ার করতে হবে। 

– এরপর ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে ৩টি প্রশ্নের উত্তর, উত্তরদাতার নাম, বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠাতে হবে। 

– প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে Home Builders Club এর ফেসবুক পেইজ থেকে, চোখ রাখতে হবে পেইজে।   

– কুইজে অংশগ্রহণের শেষ সময় ২৩ অক্টোবর রাত ১২ঃ০০। একজন প্রতিযোগী মাত্র একবারই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। 

কুইজের প্রশ্ন 

১। ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে নিচের ধাপ কী?

২। সেটব্যাকের অংশ কোথা থেকে ছাড়তে হয়?

৩। ভবনে আরামদায়ক তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে দরজা-জানালা-বারান্দা কোন দিকে দেয়া উচিত?

কুইজের উত্তরগুলো খুঁজে পাবেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলোতেই!

নির্মাণশিল্পে কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং এর ভবিষ্যৎ

নভেল করোনা ভাইরাসের শেষ কোথায় এ সম্পর্কে কারও জানা নেই। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে আমাদের জীবন ও জীবিকা। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই এর ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। বিশ্বব্যাপী মার্চ মাসের শুরু থেকে চলছে লকডাউন। ঘরবন্দী থাকার দিন সেই যে শুরু হলো, তার শেষ এখনো হয়নি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। অফিস, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাজারসদাই সবকিছুই চলে আসছে চার দেয়ালে বন্দী থেকে।

কিন্তু কিছু কাজ রয়েছে যা কখনোই চার দেয়ালের ভেতরে থেকে করা সম্ভব নয়, আবার এই মহামারিতে করাও ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও আমাদেরকে তা বন্ধ রাখতে হয়েছে। তেমন একটি হলো নির্মাণশিল্প। করোনার প্রাদুর্ভাবে সাপ্লাই চেইন থেকে শুরু করে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সবকিছু মিলিয়ে এই শিল্প এক বিশাল হুমকির মুখে এসে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের সিমেন্টশিল্প, স্টিলশিল্পসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকল শিল্প একযোগে এই সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং স্থানীয় সকল ছোট প্রজেক্টের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অনুদান সম্বলিত সকল কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পদ্মা সেতু, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, কর্ণফুলি টানেল, ঢাকা মেট্রোরেলসহ প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের নির্মাণ কাজ, দেশি-বিদেশি শ্রমিকের সক্রিয়তা, কাঁচামালের স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় নির্মাণ কাজে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ সমাপ্তির সময় ২০২২ সাল পর্যন্ত বর্ধনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং করোনা প্রভাবমুক্ত দেশ থেকে শ্রমিক, প্রকৌশলীসহ লোকবল আমদানির কথা পর্যন্ত আমলে নেয়। কিন্তু করোনার প্রভাবমুক্ত কোনো দেশ থেকে জনশক্তি পাওয়া সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে উৎপাদন তথা নির্মাণকাজ বহুদিন বন্ধ থাকার কারণে কাঁচামাল নষ্ট, মেয়াদ উত্তীর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি সহজেই অনুমেয়। ইতোমধ্যে নির্মাণশিল্পের সাথে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষ, যেমন- টেকনিশিয়ান, দিনমজুরেরা কাজ হারিয়ে বেকারত্বের শিকার। ব্যাংকগুলো থেকে লোন নেয়ার পরেও কাজে লাগাতে পারছে না মালিক সম্প্রদায়। অর্থাৎ ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বৃহত্তর অর্থনীতি সবকিছু নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যেকোনো নির্মাণকাজের সময়সীমাকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগে পরিকল্পনা, নকশা অনুমোদন, সরকারি-বেসরকারি অনুদান নিশ্চিতকরণ হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ভাগে চলে সাপ্লাই চেইনের কাজ এবং মালামাল মজুতকরণ। নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে তৃতীয় এবং চতুর্থ ভাগে। আর সেই নির্মাণ কাজ শুরুর প্রাক্কালেই শুরু হয় আমাদের লকডাউন।

নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন মালামালের ক্ষতি হয় অন্যদিকে প্রায় ৩৫ লাখ নির্মাণ শ্রমিক এবং তাদের পরিবার অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন বলে জানান গবেষকরা। এক্ষেত্রে মালিক সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুচিন্তিত পদক্ষেপ এ যাবৎকালীন হয়ে যাওয়া ক্ষতির কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে।

১. যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের নির্মাণকাজে নিয়োগ দেওয়া যাতে পরবর্তীতে আর রোগ সংক্রমণের জন্য কাজ বন্ধ না হয়। কারণ, সরকার ইতোমধ্যে কিছু কিছু কাজ চালু করার অনুমোদন দিয়েছে।

২. সাইটে মালামাল মজুত থেকে শুরু করে কাজ শেষ পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা এবং প্রয়োজনে প্রোজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ।

৩. পররবর্তীতে নির্মাণকাজে প্রিফ্যাব্রিক্যাটেড উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো এবং আগে থেকে মজুদ না করে সাইটেই অল্প সময়ে বানানো সম্ভব এরকম বিকল্প উপকরণের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো। যেমন- কংক্রিট ব্লক অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইটের ব্লককে সুড়কি বানিয়ে ফেলা।

৪. এক গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ৩০,০০০ আবাসন প্রকল্পের কাজসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নির্মাণকর্ম এর মধ্যে হস্তান্তরের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভবপর হয়নি। এগুলো শেষ করার পূর্বে আর কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে এগুলো সম্পূর্ণ করার দিকে মনোনিবেশ করা শ্রেয়।

৫. ইতোমধ্যে ঠিকাদার ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তার জন্য প্রয়োজনে আলাদা ফান্ড গঠন করা যেতে পারে সরকারি অনুদানে, কারণ, সরবরাহ সচল না থাকলে এই প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই।

৬. পুনরায় পদ্মা ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সাইটেই ৪০০০ জন শ্রমিকের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে, যার কারণে শ্রমিকদের অন্য এলাকায় চলাচল বন্ধ হয়। এ যাবৎ এই প্রকল্প থেকে কোনো প্রকার সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। এভাবে প্রতিটি সাইটে প্রোজেক্টের স্কেল অনুযায়ী শ্রমিকদের আবাসনের ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্মাণ কাজকে কিছুটা হলেও সচল করা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার যে প্রভাব আমাদের দেশের উপর পড়েছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি খাতগুলোকেও তৎপর হতে হবে। বিগত মাসগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ মাথায় রেখে ভবিষ্যতে সুচিন্তিত উপায়ে অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

করোনা-পরবর্তী সময়ে শ্রমিক নিয়োগ: যা যা মাথায় রাখা প্রয়োজন

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহতার নাম করোনাভাইরাস। করোনা পরবর্তী সময়ে ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে সকল ক্ষেত্রেই আসছে কাজ করার নতুন নিয়মনীতি। এসময়ে কর্মক্ষেত্রে সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য সকল শিল্পের মতো নির্মাণ শিল্পেও প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতামূলক বিশেষ ব্যবস্থা। এজন্য সাইটে বিভিন্ন ধাপে সঠিক উপায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। 

কাজ শুরুর পূর্বপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ

নির্মাণ কাজে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ রুখতে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সুষ্ঠু প্রয়োগ। নিম্নবর্ণিত পদক্ষপগুলোর সাহায্যে সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

১. নির্মাণকাজে যথাসম্ভব বড় শ্রমিক গ্রুপ নিয়োগ প্রত্যাহার করে ছোটো গ্রুপে কাজ বিভাজনের উদ্যোগ নিতে হবে।

২. কর্মরত সকল শ্রমিককে তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (PPE) প্রদান করতে হবে। এছাড়া ও নির্মাণের সাথে জড়িত সকল শ্রমিককে একাধিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মাস্ক প্রদান করতে হবে।

৩. সাইটে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার স্থান ও হাত ধোয়ার এবং বিশুদ্ধকরণের সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নির্মাণ সাইটে শ্রমিকদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি শ্রমিককে তার নিজস্ব যন্ত্রপাতি সেট সরবরাহ করতে হবে যাতে ছোঁয়াচে সংক্রমণের আশংকা না থাকে।

৫. কাছাকাছি বা পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা করতে হবে।

৬. নির্মাণ সাইটে পূর্বাবস্থার চেয়ে আরো জোরদার সুপারভিশন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।

শ্রমিকদের জন্য দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ

১. কাজ শুরুর পূর্বে শ্রমিকদেরকে কোভিড-১৯ এর বিস্তার এবং সংক্রমণ রোধে সরকার এবং WHO (World Health Organization) প্রণীত সকল দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে। কেননা, একমাত্র সঠিক সচেতনতাই পারবে এই মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ থেকে সবাইকে সাবধান রাখতে।

২. হাত সঠিকভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৬০% অ্যালকোহলযুক্ত) দিয়ে ধোয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রয়োগ এবং কাশি, থুতু ফেলার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে টিস্যুর ব্যবহার ও নির্দিষ্ট ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা জরুরি।

৩. সাইটে জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলোতে, যেমন- টয়লেট, ডাইনিংয়ে শ্রমিকদের ৬ ফুট দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং এসকল স্থানে নিরাপদ দূরত্ব নির্দেশক প্রতীক ব্যবহার করলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

৪. কোনো শ্রমিকের পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। 

৫. শ্রমিকদের কাজের সময়ে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব (৬ ফুট) বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. শ্রমিকদের প্রতিদিনের কাজের পর নিয়মিত জামা কাপড় সঠিকভাবে পরিষ্কারের ব্যাপারে অবহিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা কোভিড-১৯ প্রতিরোধী নয়। কাজেই ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও হাত সঠিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশাবলি প্রযোজ্য হবে।

সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের নির্দেশাবলী

১. প্রয়োজন ব্যতীত সাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং মনিটরিং , সুপারভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা।

২. সাইটে প্রবেশের পূর্বে সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা।

৩. সাইটে প্রবেশস্থানে স্ক্রিনিং এবং হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা রাখা।

৪. সাইটে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশের সময় যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. সাইটেই প্রবেশ এবং বহির্গমন গেইট সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।

৬. সাইটে প্রবেশের সময় উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তি এবং বয়স্ক, অসুস্থ এবং গর্ভবতী শ্রমিককে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

৭. সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় শ্রমিকদের সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধোয়া নিশ্চিত করা।

সর্বোপরি, সাইটে সঠিক নিরাপত্তার স্বার্থে আরো যা যা প্রয়োজন তা হলো:

১. কাজ করতে গিয়ে কারো লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গায় এবং টিস্যুর সাহায্যে কফ, থুতু ফেলার নির্দেশ প্রদানসহ দ্রুততম সময়ে তাদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

২. কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ি আসলে, ড্রাইভারদের যথাসম্ভব না নেমে, যথাস্থানে তা নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. হাত ধোয়ার জায়গা ও টয়লেটসহ পুরো সাইট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৪. সকল যন্ত্রপাতি ও বারবার স্পর্শ লাগে এমন সাইট এরিয়াগুলো প্রতিদিন নির্ধারিত সময় পর পর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৫. নিরাপদ পানি সরবরাহসহ শ্রমিকদেরকে ‘ওয়ান টাইম কাপ’ বা স্ব স্ব ব্যক্তিগত কাপ বা গ্লাস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

৬. কনস্ট্রাকশন সাইটের সকল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

৭. সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সময় ও কাজ ভেদে শিডিউল পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে একই সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন।

কন্সট্রাকশন সাইটের কাজে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক একত্রে কাজ করা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে কাজের সাথে জড়িত সকলকেই নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।

ভূমিক্ষয় কেন হয়? জানুন রোধের উপায়

আমাদের বাসার জন্য জমি ঠিকমতো তৈরি করে এরপরেই আমরা বাড়ি নির্মাণ শুরু করি। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে টপসয়েল এবং মাটির ক্ষয় হয়। যা আমাদের স্থাপনাকে করে তোলে দুর্বল এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠে বিপদসঙ্কুল। এজন্য আমাদের বাসাবাড়ির আশেপাশের জমি ক্ষয় রোধ করা খুবই জরুরি।

জমির ক্ষয় রোধ করতে না পারলে ফাউন্ডেশন দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে দেয়ালও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তাই নিরাপদ আবাসস্থানের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই জমির ক্ষয় রোধ করতে হবে। আসুন আমরা জেনে নিই জমি কী কী কারণে ক্ষয় হয়, কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর কী কী উপায়ে আমরা ভূমিক্ষয় রোধ করতে পারি।

ভূমিক্ষয় কেন হয়?

সাধারণত বাড়ি নির্মাণের আগে জমির উপযুক্ত পরিচর্যা করে নিয়ে এর পরে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রাকৃতিক কারণেই মূলত জমির ক্ষয় হয়। যেসব এলাকায় বৃষ্টির প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় জমিতে ভূমিক্ষয়ও বেশি, যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না করা হয়। বৃষ্টির ফোঁটা ক্রমাগত পড়ায় টপসয়েলের উপাদান হাল্কা হয়ে পানির স্রোতে ভেসে যায়। ফলে ভূমিক্ষয় দেখা যায়।

এছাড়া বাতাসের প্রভাবে মাটির উপরের স্তর হাওয়ায় ভেসে সরে যায়। এতে করে মাটির আদি আকৃতি নষ্ট হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়। ক্রমাগতভাবে পানি মাটিতে পড়লেও ভূমিতে আস্তে আস্তে ক্ষতি হতে থাকে। উপরের স্তরের মাটি সরে যেতে থাকে। এই সরে যাওয়ার ফলে মাটির গঠনগত প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে ভূমিক্ষয় হয়।

নদীভাঙন ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীর পাড়ের ক্ষয় হয়, পাড় ভাঙে। এর সাথে সাথে পাড়ে অবস্থিত মাটি নদীগর্ভে ক্ষয় হয়ে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও টেকসই পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার না করা, আগুন ইত্যাদি বহুবিধ কারণেও ভূমির টপসয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়।

কী কী হয় ভূমিক্ষয়ে

টপসয়েল হ্রাস

এটি মাটি ক্ষয়ের বৃহত্তম প্রভাব। কারণ টপসয়েল উর্বর, যদি এটি সরিয়ে ফেলা হয়, এটি উদ্ভিদের ক্ষতি করে বা জমির কার্যকারিতায় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে করে জমির ল্যান্ডস্কেপিং করা দুরূহ হয়ে যায়।

মাটির সংক্ষেপণ

টপসয়েলের নিচে মাটি সংক্রমিত এবং শক্ত হয়ে যায়, এটি পানির গভীরতর স্তরগুলোতে অনুপ্রবেশের ক্ষমতা হ্রাস করে, যা আরও মারাত্মক ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।

জৈব এবং উর্বর পদার্থ হ্রাস

জৈব পদার্থের সাথে ভারী টপসয়েল অপসারণের ফলে জমির নতুন উদ্ভিদ বা ফসলের নতুন করে জন্মানোর ক্ষমতা হ্রাস পাবে। যখন নতুন ফসল বা উদ্ভিদগুলো এলাকায় সফলভাবে স্থাপন করা যায় না, এটি জৈব পুষ্টির হ্রাস স্তরের চক্রকে স্থায়ী করে।

দুর্বল নিষ্কাশন

কখনো কখনো বালির সাথে অত্যধিক সংকোচন কার্যকর আলাদা ভূমির ক্রাস্ট তৈরি করে একটি কার্যকর ভূত্বক তৈরি করতে পারে, যেটি গভীর স্তরে পানি প্রবেশ করতে আরও কঠিন করে তোলে।

কিছু উপায়ে, ঘন কাদাযুক্ত মাটির কারণে এটি ক্ষয়কে সহায়তা করতে পারে, তবে এটি যদি বৃষ্টির পানি বা বন্যার ফলে বৃহত্তর স্তরের পানিবায়ু স্থায়ী হয়, তবে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ভূপৃষ্ঠের পানির উপর। ফলে পানি জমে থেকে যায়।

উদ্ভিদের পুনরুৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা

যখন একটি সক্রিয় ফসলি জমিতে মাটি ক্ষয় হয়, বিশেষত বাতাস হালকা মাটির বৈশিষ্ট্য, যেমন- নতুন বীজ এবং চারাগুলো কবর দেওয়া বা ধ্বংস করা হয়। এটি ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।

মাটির অম্লতার মাত্রা

যখন মাটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায়, তখন মাটির অম্লতা বৃদ্ধির উচ্চতর সম্ভাবনা থাকে, যা উদ্ভিদ এবং ফসলের বৃদ্ধির ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে।

দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়

দুর্ভাগ্যক্রমে, যদি কোনো অঞ্চল ক্ষয়প্রবণ হয় বা এর ক্ষয়ের ইতিহাস থাকে তবে ভবিষ্যতে একে সংরক্ষণ করা আরও শক্ত হয়ে যায়। এমন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের মাটির কাঠামো এবং জৈব পদার্থকে হ্রাস করেছে, যার অর্থ এটি দীর্ঘকালীন মেয়াদে পুনরুদ্ধার করা আরও কঠিন হবে।

পানি দূষণ

মাটি থেকে ক্ষয়ের একটি বড় সমস্যা, যেটি বিশেষত কৃষি প্রক্রিয়াগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো সার বা কীটনাশক ব্যবহারের মতো পলল এবং দূষণের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এটি মাছ এবং পানির গুণমানের উপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে।

কীভাবে রোধ করা যায়?

গাটার এবং ডাউনস্প্রাউট

বৃষ্টি পড়ার সময় আপনার ছাদের কার্নিশে জমা বৃষ্টির পানি যেদিকে প্রবাহিত করা দরকার সেদিকে এমনভাবে গাটার ও ডাউনস্প্রাউটগুলো সেট করতে হবে যাতে তারা বেলে বা কমপ্যাক্ট মাটিতে নির্মিত বাড়িগুলোর জন্য ঘর থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে প্রসারিত মাটিতে পানি ফেলে দেয়। নর্দমাগুলো যাতে ঘরের দীর্ঘ প্রান্তে চলে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ

বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারদিকে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ল্যান্ডস্কেপিং বা সজ্জাসংক্রান্ত ব্যবস্থা, যা দুটি উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে। মাটি যেখানে চান সেখানে রাখার জন্য ঘাস বা অন্য কোনো নিচু স্থান থেকে জমিটিতে কভার লাগান।

অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ কাঠ, কংক্রিট পেভারস, লাইনারস, শিলা বা নুড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও গাছের ছাল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ভালো দেখায়, তবে বৃষ্টিপাতের জায়গায় জায়গায় থাকার পক্ষে এটি উপযোগী নয়।

ফ্রেঞ্চ ড্রেন

বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারপাশে একটি ফ্রেঞ্চ ড্রেন সিস্টেম ইনস্টল করুন। যখন আপনার ফাউন্ডেশন মাটির পৃষ্ঠের নিচে কয়েক ফুট প্রসারিত হয়, একটি পরিখা খনন করে, নুড়ি দিয়ে রেখাযুক্ত করুন এবং ঘর থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটিতে পারফোরেশনসহ একটি বিশেষ ড্রেন রাখুন। নুড়ি দিয়ে একে ঢেকে রাখুন এবং তারপরে নুড়ি দিয়ে মাটি যুক্ত করুন। পানির প্রবাহটি ভিত্তি থেকে দূরে সরাতে একটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ডাউনস্লোপ রয়েছে, তা নিশ্চিত করুন।

গ্রেড মেরামত করুন

ফাউন্ডেশনের চারপাশে ঢালটি মেরামত করুন। ফাউন্ডেশনের ১০ ফুটের মধ্যে মাটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে ঢালু হওয়া উচিৎ।

আপনি যদি গ্রেডটি মেরামত করতে না পারেন, তবে খনন করুন এবং যদি সম্ভব হয় তবে ফাউন্ডেশনে একটি আর্দ্র বাধা যুক্ত করুন। অন্যথায়, বাড়ি থেকে দূরে পানি চ্যানেল করার জন্য একটি সামান্য ডাউনস্লোপ দিয়ে একটি সোয়েল তৈরি করুন। আপনি কংক্রিট বা শিলা দিয়ে সোয়েলটি লাইন করতে পারেন। তবে শিলাটি যথেষ্ট পরিমাণে ভারী হওয়া উচিৎ।

নিষ্কাশন নজরদারি করুন

ঝড়ের সময় নিষ্কাশন নজরদারি করুন। আপনার যদি ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে যা পানি প্রবাহিত করে পানি সরিয়ে ফেলে, তাহলে সেই ড্রেনগুলো পাতা এবং ময়লা মুক্ত রাখুন। আপনার ছাদে থাকা পানির ট্র্যাপ এবং ডাউনস্পাউট সিস্টেমের ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রযোজ্য।

ঢাকায় বসবাস: কেমন হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ?

“ঢাকা শহরে একটি বাড়ি”- এই স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার পার্থক্য বাড়তে বাড়তে মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। চারশরও বেশি বছরের পুরাতন রাজধানী এই নগরী সারা বাংলার মানুষের বসবাসের জন্য এর লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, এই অঞ্চলে সভ্যতা যতই এগিয়েছে। পুরাতন ঢাকায় মানুষের বসত শুরু হয়েছিল ঢাকা রাজধানী হবারও অনেক আগে।

বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকা আর মধুপুর ট্র্যাকের লালচে উর্বর মাটি কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছিল ঢাকাকে। এরপর বৃটিশ ভারত, পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর ক্রমেই বেড়েছে শহর হিসাবে ঢাকার গুরুত্ব। এর সাথে সাথে আরো বেশি মানুষ এসেছে ঢাকায় বসবাস করতে।

ঢাকা শহরে আবাসন প্রথমদিকে পরিকল্পিত ছিল না একদমই। পুরাতন ঢাকায় সেই অপরিকল্পিত কিন্তু স্বতস্ফূর্ত আবাসন এখনো দেখা যায়। কিন্তু ঢাকায় যত মানুষ বাড়তে থাকল এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মতো সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকল, ততই পরিকল্পিত আবাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।

এ লক্ষ্যেই ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসাবে প্রথমে ধানমণ্ডি গড়ে ওঠে। তবে মধ্যবিত্তের আবাসনের জন্য বড় আকারে পরিকল্পিত নগরের অংশ হয়ে ওঠে মোহাম্মদপুর। সেকেন্ড ক্যাপিটাল হিসাবে শেরেবাংলা নগরের গোড়াপত্তন এ অঞ্চলে মানুষের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরে ঢাকা শহর বড় হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত।

এই কারণে আবাসনের চাহিদা কয়েক বছরের মাথায় বেড়েছে প্রায় শত গুণ। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতেই নতুন অভিজাত অঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠেছে বনানী, গুলশান ও বারিধারা। এর মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট বিপ্লবের জের ধরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে চলে আসে ধানমণ্ডি। একই সাথে গড়ে ওঠে উত্তরা এবং মিরপুরের পল্লবী। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

এখন পূর্বাচল ও উত্তরার বিভিন্ন অংশ গড়ে উঠছে নতুন এলাকা হিসাবে। কিন্তু ঢাকার আশেপাশে থাকতে মানুষের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার অঞ্চলের দিকে ঝুঁকে পড়া বা ঢাকার ক্রমেই খারাপ হতে থাকা নাগরিক অবস্থার কারণে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- “ঢাকায় কি এখনো আবাসন সম্ভব?”

ঢাকার আবাসনের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করলে একে খরচের হিসাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেই অঞ্চলগুলোতে দামের তারতম্য সুবিধা অসুবিধায় রয়েছে ভিন্নতা। সেগুলোই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

বাজেট যখন সীমিত নয়

ঢাকায় আবাসনের জন্য মানুষ মূলত পছন্দ করে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অঞ্চলগুলো। এইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগ, ভালো মার্কেট বা বড় সুপারস্টোরের সহজলভ্যতা, লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর উপস্থিতি, ভালো স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাছাকাছি দুরত্ব। এসব সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করলে ঢাকায় এখনো গুলশান, বনানী, বারিধারা উঁচু বাজেটের মানুষজনের জন্য পছন্দের জায়গায় থাকবে উপরেই। এর সাথে রয়েছে ধানমণ্ডি।

এসব জায়গায় নতুন প্লটের পরিমাণ খুবই সীমিত। তবে রেনোভেশান ও ডেভেলপার দ্বারা পুরাতন বাড়ি অধিগ্রহণের কারণে এখনো উঠছে নতুন ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট বাসার আকার বড় চাইলে ও বাজেটগত সমস্যা না থাকলে এই অঞ্চলগুলো এখনো হতে পারে ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবাসন অঞ্চল।

অর্থের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য

ঢাকায় বাসা তৈরি করা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু। অনেকের কাছেই বাজেট তুলনামূলক বেশি থাকলেও পুরাতন একটি বাসার চেয়ে নতুন একটি অঞ্চলে গোছানো আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অর্থের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চান। তাদের জন্য পূর্বাচল, উত্তরা নতুন প্রজেক্ট এবং বসুন্ধরা অঞ্চল হতে পারে আবাসনের জন্য খুবই ভবিষ্যতমুখী কিন্তু গোছানো পছন্দ।

এসব জায়গায় প্লট বরাদ্দ একবার শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু জায়গার বর্তমান মালিক থেকে জায়গা কেনা বা একদম ফ্রেশ জমিতে বাসা নির্মাণের সুযোগ এখনো বর্তমান। এছাড়া এসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ডেভেলপারের পরিকল্পিত আবাসন, যেগুলোতে দাম একটু বেশির দিকে হলেও আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিকল্পিত এবং দুর্দান্ত আবাসন গড়ে ওঠাটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।

ঢাকার নতুন আসা মেট্রো রেল প্রজেক্ট ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিরপুরের নতুন অঞ্চল, বেড়িবাঁধ ও ক্যান্টনমেন্ট-এর মাটিকাটা অঞ্চলেও জমির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগও হতে পারে বেশ স্মার্ট বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলে এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কম হলেও পলিসিগত কারণে এখানে বসতি ঘন হতে অনেক সময় লাগবে এবং অনেকদিন এলাকা থাকবে খুবই পরিকল্পিত।

বাজেট আবাসনের ঢাকা

অল্প বাজেটে ঢাকায় ভালো বাসা করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বসিলাকে। আশেপাশে মোহাম্মাদপুর ও মিরপুরের অবস্থান হওয়ায় এখানে পলিসিগত বাধ্যবাধকতা একটু কম এবং অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই। এর বাইরে উত্তরায় রেল লাইনের অন্য পাশে উত্তর ও দক্ষিণখানে, এয়ারপোর্ট এর আশেপাশের অঞ্চলে অনেকদিন ধরেই বাজেট ভিত্তিক আবাসন খুবই জনপ্রিয়।

১,০০০ বর্গফুটের আশেপাশে আদাবর এবং শেখেরটেক অঞ্চলেও এখনো ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। একই অবস্থা রাজারবাগ ও ধানমণ্ডির পেছনে থাকা জিগাতলা এলাকারও। এসব অঞ্চল একটু ঘনবসতিপূর্ণ হলেও যারা ঢাকা শহরের জনসমাগমকে উপভোগ করেন তারা এসব জায়গায় থাকতে অপছন্দ করবেন না।

এর বাইরে টঙ্গীসহ চেরাগ আলী হয়ে প্রায় সমগ্র গাজীপুর শহরাঞ্চল, নারায়ণগঞ্জ, কেরাণিগঞ্জ এবং সাভার অঞ্চল বেশ জনপ্রিয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে অনেকে এসব জায়গা থেকেও যাওয়া আসা করে থাকেন প্রায় নিয়মিতই। সুযোগ বা যাতায়াতের সুবিধা থাকলে এ অঞ্চলগুলোও ঢাকার অনেক অঞ্চল থেকে ভালো বসবাসের সুবিধা নিয়ে হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনার অংশ, কারণ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে জমির দামে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

আবাসন সমস্যাকে ঠিকভাবে সমাধান করতে ঢাকাকে আমাদের বিকেন্দ্রিকরণ ও পরিকল্পিত আবাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুবই দরকারি। তাই জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের বুঝে শুনে। বাজেটের সাথে বা জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই মানুষের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিজের ও সামাজিক চাহিদার মধ্যে পর্যাপ্ত ভারসাম্যই পারে আপনার বাড়ির জন্য সবচেয়ে উপযোগী অঞ্চল সম্পর্কে আপনাকে নিশ্চিত করতে।

নির্মাণ শ্রমিক: কেমন কাটছে তাদের দিন?

আমাদের দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ নতুন ভবন তৈরি হয় এ নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা পাওয়া খুবই কঠিন। তবে দেশের ক্রম উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে নির্মাণ শিল্প কলেবরে বড় হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। সাথে যোগ হচ্ছে নতুন মানুষ। বাড়ছে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা।

নির্মাণকাজ সারা বিশ্বে প্রতিদিন আধুনিকায়নের মধ্যে দিয়ে গেলেও আমাদের দেশে এটি এখনো অনেকাংশেই শ্রমিক নির্ভর। সস্তা শ্রম এবং বিভিন্ন দক্ষতার লোক নিয়োগের সুযোগ থাকায় মেশিনের চেয়ে নির্মাণশ্রমিকের উপরে এই নির্ভরতা নিকট ভবিষ্যতে কমে যাবার সম্ভাবনাও খুবই কম।

কিন্তু বাংলাদেশে নির্মাণশ্রমিকদের জীবন সহজ নয়। নানা সমস্যায় নির্মাণ শিল্প এবং এর কারিগরেরা জর্জরিত। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করা হলো সংক্ষেপে।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা

নির্মাণশিল্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি শিল্প। এখানে প্রতিদিনই কাজ করতে হয় অসম্পূর্ণ ভবন ও ঝুঁকিপূর্ণ মেশিনারির মধ্যে। অথচ বাংলাদেশে নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার যে গাইডলাইন রয়েছে তা মানা হয় না প্রায়ই। শ্রমিকদের জন্য বেশিরভাগ সাইটেই দেখা যায় না কোনো ধরনের নিরাপত্তা পোশাক, হেলমেট এবং গামবুট।

এর বাইরে ইট তোলা, রড বহন করা সহ বিভিন্ন ভারী উপকরণ ব্যবহারেও রয়েছে নিরাপত্তার ঘাটতি। সেইসাথে অনেক সাইটেই সেফটি নেটও ব্যবহার করা হয় না। যেটার কারণে পড়ে গিয়েও অনেক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়।

অর্থনৈতিক অবস্থান

বাংলাদেশে শ্রমিক নিয়োগে এখনো কোনো লিখিত বিধিমালা নেই। এই কারণে কোনো নির্ধারিত বেতন তালিকা এবং কোনো ধরনের সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য বেতনের নিয়মকানুন এখানে ভয়াবহভাবে অনুপস্থিত। এছাড়া সরাসরি কোনো ইউনিয়নের অধীনে না থাকায় স্বাভাবিক সুযোগ সুবিধাও তাদের নাগালের অনেক বাইরে।

ঢাকায় দক্ষ নির্মাণ শ্রমিকদের বেতন হিসাবে দিনে ৫০০ টাকা এবং তুলনামূলক অদক্ষ শ্রমিকদের ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেতন দেয়া হয়। এই বেতন অনেক সময় দিনের পর দিন বাকি থাকে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও কোনো ধরনের জীবনবীমা বা ওয়ার্ক ইনস্যুরেন্সেরও ব্যবস্থা নেই।

আবাসন

ঢাকায় বেশিরভাগ নির্মাণ সাইটের শ্রমিকেরা নির্মাণ সাইটেই বসবাস করেন। স্বল্প বেতনে আবাসনের সুযোগ ঢাকায় না থাকাই মূলত এই কাজে তাদের বাধ্য করে। ফাউন্ডেশনের সময় তারা থাকেন সেই খুঁড়তে থাকা মাটিতেই। ভবনের ফ্লোর ঢালাই হয়ে গেলে তারা ভবনে শিফট করেন। এসব ভবনে নিরাপদ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে শুরু করে, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই থাকে না। এসব কারণে তারা প্রায় মানবেতর জীবনযাপন করেন।

আর এই জীবন কখনোই শেষ হয় না, কারণ একটি ভবন শেষ করতে গড়ে আড়াই বছর সময় লাগে এবং তারপর তারা তাদের পরবর্তী কাজের জায়গায় চলে যান। নির্ধারিত বেতন, বীমা ও কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়া এভাবে বছরের পর বছর বসবাস তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রচণ্ড খারাপ প্রভাব রেখে যায়।

দক্ষতা ও শিক্ষা

আবাসন সমস্যা ও অর্থনৈতিক কারণে অনেক নির্মাণশ্রমিকই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না। তাই প্রজন্মান্তরে একই পেশাতেই রয়ে যায়ে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এই একই কারণে নতুন নির্মাণ কৌশল বা মেশিন পরিচালনার নতুন কোনো জ্ঞান যোগ হয় খুবই ধীরে।

নির্মাণশিল্পে সামনের দিনগুলোতে আমাদের মেশিন ও বিদেশী কন্ট্রাকটরদের সাথে কাজ করার সম্ভাবনা থাকায় এই শিল্পের শ্রমিকরা কাজ হারাতে পারেন বা পড়তে পারেন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়, যা তাদের অত্যন্ত নিম্ন সুযোগ সুবিধার পেশাটিকে ফেলতে পারে আরো বড় হুমকির মুখে।

এসব মাথায় রেখেই, নির্মাণ শ্রমিকদের আবাসন, অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে ভবন মালিক, স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ার এবং কন্ট্রাকটরসহ সকলকেই। কারণ শ্রমিকের হাতেই ভবন তার স্বপ্ন, নকশা, অংক আর অর্থনৈতিক ধাপগুলো পার হয়ে বাস্তবে চেহারা পায়। তাদের দক্ষতা, মনোযোগ এবং সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা হতে পারে আমাদের সকল নির্মাণের পেছনের সবচেয়ে বড় শক্তি!

জাদুর শহর ঢাকা: বসবাসের বর্তমান অবস্থা

জাদুর শহর ঢাকা। লাল নীল বাতি দেখে আশা মেটানোর শহর ঢাকা। ৪১০ বছরের পুরাতন রাজধানী শহরের আবেদন বাংলাদেশের মানুষের কাছে শুধু রাজধানী বা তিলোত্তমা নগরী হিসেবে নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, অর্থনীতি আর জীবিকার কেন্দ্রস্থল এই নগরী। এই নগরী কখনো ঘুমায় না।

স্বপ্ন গড়া আর ভাঙার এই কারখানায় যোগ দিতে প্রতিদিন এসে যোগ হচ্ছে নতুন মানুষ। ঢাকায় বসবাসের স্বপ্নে, ঢাকায় এক টুকরো জমির আশা বহু মানুষের। নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঢাকায় এক টুকরো ছাদ অনেকের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। যে ঢাকায় বসবাসের জন্য সারা দেশের মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, তার বুকে বসবাসের প্রকৃতি আসলে কেমন?

বসবাসের প্রকৃতি

ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে মাত্র ৪% লোকের নিজের জমি বা বাড়ি রয়েছে ঢাকা শহরের মাঝে। প্রায় দুই কোটি লোকের শহরে সেই সংখ্যাটি মাত্র আট লাখ। বাকি সবাই থাকেন ভাড়া বাসা বা অন্য কোনো আয়োজনে। সাবলেট হিসেবে থাকেন এর একটি বড় অংশ। এছাড়া মেস, হোস্টেল বা বোর্ডিংয়ের পরিমাণও একদম নগণ্য নয়। ভবিষ্যতে এসব বসবাস পদ্ধতির পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে ভাড়া বা শর্ট টার্ম রেন্টাল পদ্ধতি জনপ্রিয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রেন্ট টু বাই মডেলেও অনেকে আবাসনে যুক্ত হচ্ছেন। 

বসবাস অবকাঠামো

যেকোনো স্থানে বসবাসের জন্য ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অবকাঠামোগত দিক থেকে জায়গাটির আবেদন থাকা আবশ্যক। ঢাকা রাজধানী শহর ও বিশাল জনগোষ্ঠির বসবাস এলাকা হিসাবে সামাজিক অবকাঠামোর দিক থেকে দেশের অন্য যেকোনো জায়গা থেকে এগিয়ে। এখানে বাংলাদেশের হিসেবে সর্বোচ্চ মানের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

বিনোদনের শহর হিসাবেও ঢাকা ছাড়িয়ে যাবে যেকোনো বাংলাদেশি শহরকে। রেস্তোরাঁ থেকে সিনেমা হল, পার্ক, উদ্যান থেকে শুরু করে বিনোদন স্পট রয়েছে মানুষের নগরজীবনের অনুসঙ্গ হিসাবে। ধর্মীয় দিক থেকে সকল ধর্মাবলম্বীর জন্যও দরকারি পরিমাণে উপাসনালয় বর্তমান এখানে।

কিন্তু আধুনিক শহর হিসাবে বিশ্বমান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা। ব্যক্তিগত অবকাঠামোর হিসেবে ঢাকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্তমানে ইলেকট্রিসিটি ও পানির ব্যাপারে আগের চেয়ে উন্নতি লাভ করলেও নতুন বাসভবনে গ্যাসের সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে। তবে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় ঢাকা বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নগরী, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।


যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ- বিষয়টি এভাবে বলাটা আসলে ভুল। ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আসলে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ভালো। প্রান্তিক রাস্তা বাদ দিলে প্রতিটি এলাকা বেশ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে সংযুক্ত।

এছাড়া ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অসাধারণ। কিন্তু ঢাকা শহরের যোগাযোগ অবস্থাকে শোচনীয় করে তুলেছে নগরের সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের বাস ও তাদের ব্যক্তিগত যানের উপরে নির্ভরতা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের যানবাহনের গড় গতিবেগ ৭ কিমি/ঘণ্টার চেয়েও কম। এবং এটি আরো কমে আসছে।

রাস্তাঘাটের এই অবস্থার কারণে ঢাকা একটি মৃত নগরী হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাও ব্যাক্তিমালিকানা নির্ভর হওয়ায় কার্যত কিছু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার মাঝেই বন্দি যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে নতুন আসতে চলা মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়।

মানুষের আয়ের প্রকৃতি

শুরুতেই বলা হয়েছে, ঢাকা আসলে দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই যেকোনো কাজের মূল্যমান ঢাকায় অন্য স্থানের তুলনায় অনেক বেশি। ঢাকায় কৃষিজীবী মানুষের পরিমাণ দেশের অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অনেক কম। তবে সবচেয়ে বেশি পেশাগত বৈচিত্র্য দেখা যায় এই নগরেই। একদম নিম্ন আয় থেকে উচ্চ আয়ের সর্বোচ্চ মান পর্যন্ত মানুষ ঢাকাতেই বসবাস করে। আর অর্থনীতি সবচেয়ে সচল বলেই ঢাকায় এসে কাজ করতে মানুষের আগ্রহ বেশি।

ভবিষ্যতের ঢাকা

ঢাকা শহরের এসব সমস্যা নিয়ে আমরা সকলেই কম-বেশি ওয়াকিবহাল। তবে সবাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আবাসনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। ঢাকাতে মানুষের পরিমাণ যত বাড়বে, অনেক নাগরিক সুবিধার অবনতি চলতেই থাকবে।

বাতাস বা পানির মানের ক্ষেত্রে ঢাকায় নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ না নিলে উন্নতি হবার সুযোগ খুব সীমিত। তবে পরিবহন ব্যবস্থা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটতে পারে নতুন গৃহীত কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে। মাস্টারপ্ল্যান নতুন করে করা হলে ঢাকা থেকে শিল্প কারখানা ও অনেক সেবাকে ঢাকার বাইরের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হতে পারে নগর ও নগরের মানুষকে বাচানোর সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে এই বিকেন্দ্রীকরণের সময়ে সবচেয়ে ভাল বিনিয়োগ হতে পারে ঢাকার নতুন অঞ্চলের (পূর্বাচল, উত্তরা নতুন ফেজ) জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করা। যদিও এসব এলাকা এখনই অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে বা যাচ্ছে।

টঙ্গী বা গাজীপুরের নিকটবর্তী এলাকা, সাভার অঞ্চলীয় অনেক অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জের দিকেও বিনিয়োগে এখন একটি উপযুক্ত সময়। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রজেক্টের সাফল্যের পর জলাধার আইন মেনে জমি ও বাড়ি করাটা এখন সময়ের দাবি। এরকম আরো দুয়েকটি প্রজেক্ট ভবিষ্যতের ঢাকাকে আরেকটু বসবাস উপযোগী করতে রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা। 

বাড়ি বানাবেন: জলবায়ুর প্রভাবের কথা ভেবেছেন তো?

বাংলাদেশে এক সময় মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুধাবন করা যেত ঘরের চাল দেখে। একদম নিম্ন আয়ের মানুষেরা ছনের চালের ঘর তৈরি করতেন। আরেকটু অবস্থাসম্পন্ন মানুষেরা করতেন টিনের চাল। সে টিনের চালও আবার অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে একচালা, দোচালা থেকে চৌচালা ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেত।

তবে এদের মধ্যে একটি সাধারণ মিল হচ্ছে, চালগুলো সমতল হতো না। যখন পাকা ভবন বানানো শুরু হলো, এটিকে বাহুল্য হিসাবে ধরে নেওয়া হলো আর এর জায়গা দখল করে নিল সমতল ছাদ। ছাদে যাওয়ার সুবিধার সাথে বৃষ্টির জন্য সামান্য ঢালু করে দিলেই বৃষ্টির পানি নেমে যেতে পারল। আমাদের এই অঞ্চলে এমন হলেও ইউরোপের ঘরের ছাদগুলো কিন্তু অন্যরকম। সেখানে বেশিরভাগ ঘরের চাল এখনো টালির তৈরি এবং চুড়ার মতো উঠে যাওয়া চাল দেখা যায় সারা ইউরোপেই।

অঞ্চলভেদের এমন পার্থক্যের কারণ কী? এর কারণ মূলত জলবায়ুর বিভিন্নতা। বাংলাদেশে অসমতল চাল প্রয়োজন হয় মূলত বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার সুবিধা করে দিতে। সমতল ছাদে সামান্য কিন্তু সুষম অসমতল তৈরি করে সে চাহিদা মেটানো সম্ভবপর হয়েছে। কিন্তু ইউরোপের তুষারপাত সুলভ শীতের কারণে চালে জমে থাকা বরফ পরিষ্কার করা ও গলে যাওয়ার সুবিধার্থে প্রয়োজন হয় হেলানো ও টালি দ্বারা তৈরি চাল।

এরকম আরও অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ভবন দেখতে ও ব্যবহারের দিক থেকে কেমন হবে তা ঠিক করতে হয় জলবায়ু অনুসারে। তাই ভবন নির্মাণ করতে গেলে অবশ্যই জলবায়ুর বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। এক্ষেত্রে আসুন এক নজরে দেখে নিই কী কী ধাপ মেনে ভবন নকশা করা দরকারি।

জায়গা বা ‘সাইট’ বিশ্লেষণ

ভবন নির্মাণের আগে স্থপতিকে ওই এলাকার আবহাওয়ার প্রকৃতি, মাটির ধরন, বাতাসের গতি প্রকৃতি, আশেপাশের ভবনের বসবাসের ধরন এবং ভুগোল সম্পর্কে ধারণা রেখে কাজ করতে হবে ও নকশায় তার প্রতিফলন ঘটতে হবে। সফল ও দীর্ঘস্থায়ী ভবনের মালিক হতে স্থপতিকে এসকল ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করুন ও উৎসাহিত করুন যেন এর প্রতিটি বিষয় মাথায় রাখা হয়।

ভবনের ‘লে আউট’ তৈরিতে জলবায়ু

জলবায়ু ও পরিবেশগত উপাদানই ভবনের প্রাথমিক লে-আউট তৈরির মূল চালিকাশক্তি। যেমন- বাংলাদেশের মৌসুমী জলবায়ুতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ হবার পথে আর গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে বাতাস আসে। শীতকালে বাতাস আসে উত্তর থেকে এবং পশ্চিম দিক থেকে সবচেয়ে বেশি তাপ আসে। তাই যেকোনো লে-আউটে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ঘরগুলোকে দক্ষিণ দিকে স্থাপন করা এখানে আবশ্যক।

সূর্যের গতি প্রকৃতি

জলবায়ু অনুসারে সূর্যের কৌণিক পথ সবসময় আলাদা হয়। তাই ভবন নির্মাণের আগে এই ব্যাপারে বৈজ্ঞানিকভাবে জেনে নেওয়া ও গবেষণা করে নেওয়া দরকারি। সরাসরি সুর্যালোক ঘরে প্রবেশ কমিয়ে ও সূর্যালোকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে ভবনের বসবাসকে আরামদায়ক করা যায়। ভবনে ব্যবহৃত সানশেড-লিন্টেল, পোর্চ এবং সোলার প্যানেল (PV প্যানেল) এর অবস্থান ঠিক করতে হবে সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই।

দরজা-জানালা

বাংলাদেশে সহজ নির্মাণ, দাম ও বাজারে সুলভ প্রাপ্তির কারনে থাই গ্লাস জনপ্রিয় হলেও, এধরনের জানালা আমাদের দক্ষিণ-পূর্বের বাতাসের আগমনপথ যেমন অর্ধেক করে দেয়, তেমনি সূর্যালোক সরাসরি ঢুকতেও তেমন কোনো বাধা প্রদান করতে পারে না। বাংলাদেশের জলবায়ুগত কারণে এই ধরনের কাঁচের জানালা বা কমার্শিয়াল ভবনে কাঁচের তৈরি দিকগুলো তাপ ধরে রাখে ও এসির উপর আমাদের নির্ভরতা বাড়ায়। জলবায়ুগত কারণে দরজা ও জানালা সুইং ও কাঠের তৈরি হলে ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হয়।

ভৌগোলিক প্রকৃতি ও ভবন

মাটির প্রকৃতির উপরে ভবনের ফাউন্ডেশন বা পাইলিংই শুধু নয়, নকশাও নির্ভর করবে। ঢাকার সমতল ভূমিতে ভবন যেমন হবে, চট্টগ্রামের পাহাড়ি প্রকৃতিতে একই বিবেচনায় ভবন নির্মাণ করলে সেটি হবে দীর্ঘমেয়াদী একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এছাড়া আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার পার্থক্য মাথায় নিয়ে কাজ না করলেও ভৌগলিক কারণে ভবনের ক্ষতি হতে পারে।

পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি ঢাল ও পাহাড়ের কারণে ঝড়ের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন মাথায় রাখা যেমন দরকারি, তেমনি সমতলে ভবন নির্মাণের সময় জলাধার ও পানি প্রবাহের অঞ্চল পরিহার করাও অত্যাবশ্যক।

ভবন, জলবায়ু এবং আমাদের ভূমিকা

একটি দেশের স্বাভাবিক জলবায়ুকে ভবন নির্মাণের সময় সম্মান করতে হবে আমাদের নিরাপদে ও দীর্ঘমেয়াদে আরামদায়ক বসবাসের স্বার্থেই। কিন্তু এই জলবায়ু বিশ্বজুড়েই এখন হুমকির সম্মুখীন। অসংবেদনশীলভাবে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের কারণে জলবায়ুর উপরে পড়ছে খারাপ ভুমিকা। একারণে আমাদের দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।

ভবনের ফুটপ্রিন্ট ব্যবহারে সচেতন হোন। দরকারের চেয়ে বেশি জায়গা ধরে ভবন তৈরি করবেন না। ভবনের নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রে ইট বা কংক্রিটের মতো উপাদানের ব্যবহার পরিবেশের কিছুটা হলেও ক্ষতি করে। তাই এই আধুনিক সময়ে স্মার্ট নকশা করান ও স্থপতির সাহায্য নিন।

এছাড়া ভবনের ছাদে ও MGC বা FAR এর অনুমোদিত অংশের বাইরে গাছ লাগান। সারা ভবনের প্লট জুড়ে বেজমেন্ট তৈরি না করে সরকারের নিয়মমতো ২৫% জায়গা পুরোপুরি বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য ছেড়ে দিন।

মনে রাখবেন, আপনার ভবনে আপনি কতটা আরামদায়কভাবে থাকবেন তা বেশি স্কয়ার ফুট জায়গার চেয়েও বেশি নির্ভর করে আপনি এলাকার জলবায়ুর সাথে ভবনকে কতটা মানানসই হিসাবে তৈরি করতে পারছেন তার উপর। তাই সংবেদনশীল হোন। নিজে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভবন তৈরি করুন। আর আপনার শহর, দেশ ও বিশ্বের মানুষকে সহায়তা করুন একটি আরামদায়ক জীবন পেতে।