রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।
Continue readingসিমেন্ট ব্যবহারের আদ্যোপান্ত: কীভাবে বুঝবেন সিমেন্ট ভালো না খারাপ?
নির্মাণশিল্পের একদম সূচনালগ্নে মানুষ তার কাজে ব্যবহার করেছে মাটির মতো প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য মালামাল। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে আমাদের কাছে এসেছে নানান রকমের নির্মাণ উপকরণ। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতেই এখন বহু ধরনের উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনই একটি উপাদান হলো সিমেন্ট।
যেকোনো দালান নির্মাণে বালি, কংক্রিটের মিশ্রণের বাইন্ডার হিসেবে ধরে রাখা থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাত- সব ক্ষেত্রেই সিমেন্ট অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে এর উৎপাদন আর বাজারজাতকরণ। এর প্রমাণ মেলে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন মানের এবং দামের সিমেন্টের সমাহার থেকে। নিজের নির্মাণাধীন বাড়িটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন।
নানা রকমের সিমেন্ট
নির্মাণকাজের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের বিভিন্ন রকমের সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন উপাদানের অনুপাতে মিশ্রণ ও অন্যান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব ভিন্নতা আনা যায় সিমেন্টে।
বিভিন্ন সিমেন্টের নানা ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
দ্রুত শক্তি প্রদানকারী সিমেন্ট
সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতোই এই সিমেন্টের গুণাগুণ। অতিরিক্ত মসৃণ ও মিহি উপকরণ এবং বেশি ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেটের জন্য এর সাধারণ শক্তিমান পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট থেকে বেশি হয়ে থাকে। বলা হয় যে, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহারের ৭ম দিনে যে সুরক্ষা থাকে তা এই সিমেন্টে ৩য় দিনেই অর্জন সম্ভব। এই দ্রুততার জন্য প্রিফ্যাব্রিকেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে এর ব্যবহার বহুল।
কম তাপমাত্রার সিমেন্ট
ডাইক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ট্রাইক্যালসিয়াম হ্রাস করে এই সিমেন্ট তৈরি হয়, যার প্রাথমিকভাবে সেটিংয়ের সময় অন্যান্য সিমেন্ট থেকে বেশি।
সাদা সিমেন্ট
সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতো এই সিমেন্ট সাদা রংয়ের হয়ে থাকে এবং এর জন্য এর সাথে লাইমস্টোন ও চায়না ক্লে ব্যবহার করা হয়। রঙের জন্য সাধারণত বাসা-বাড়ির ভেতরে এই সিমেন্টের কাজ করা হয়।
নির্মাণকাজে এই সিমেন্টগুলা ব্যবহারের পাশাপাশি কাজের ভিন্নতার দরুণ আরও কিছু সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।
যেমন-
- সালফেটরোধক সিমেন্ট
- পানিরোধক সিমেন্ট
- রঙিন সিমেন্ট
- পোর্টল্যান্ড পোজোলানা সিমেন্ট
- হাই অ্যালুমিনা সিমেন্ট
- বায়ুশোষক সিমেন্ট
সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই
সাইটে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত সিমেন্টের সব ধরনের গুণাগুণ যাচাই করা সম্ভবপর না হলেও কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সাহায্যে সহজে সিমেন্টের সার্বিক মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্যাকেজিংয়ের সময়
সিমেন্টের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনের তারিখ আছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিৎ। সিমেন্ট অতিরিক্ত পুরাতন হয়ে গেলে তা না ব্যবহারই শ্রেয়।
সিমেন্টের রং
সাধারণত সিমেন্ট হাল্কা ধূসর থেকে ধূসর হয়ে থাকে।
রাবিং টেস্ট
সামান্য সিমেন্ট হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে মসৃণতা পরীক্ষা করা যায়।
তাপমাত্রার পরীক্ষা
সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে তার তাপমাত্রা যাচাই করে নিতে হয়। সাধারণত সিমেন্টের তাপমাত্রা কম হয় এবং হাতে ঠাণ্ডা অনুভূতির অর্থ হলো প্যাকেটের ভেতর কোনো প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের ক্ষতিসাধন হয়নি।
ফ্লোটিং টেস্ট
ভালো মানের সিমেন্ট পানিতে ডুবে যায়, ভেসে থাকে না। এক বালতি পানিতে সিমেন্ট নিয়ে পরীক্ষা করেও এর এই গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রাথমিক রং, গন্ধ কিংবা মসৃণতা যাচাইয়ের সাথে সাথে আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে আমরা বিশদভাবে সিমেন্টের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি।
রেডিমিক্স কংক্রিট: কীভাবে ও কেন?
রেডিমিক্স কংক্রিট হলো ব্যাচে বানানো সাইট সুনির্দিষ্ট এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত কংক্রিট। সাধারণত পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, পানি, পাথর বা খোয়া এবং বালি পরিমাণমতো জমির মাটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভালোভাবে মিশিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় সেটা সাইটে ব্যবহার করা হয়।
আধুনিক নির্মাণ কাজে রেডিমিক্স সিমেন্ট অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। এটি নির্মাণ কাজকে করেছে সহজ, দ্রুত এবং আরও নিখুঁত। যদিও এর দাম তুলনামূলক বেশি বাজারের খোলা সিমেন্টের চেয়ে, তবুও নির্মাণ কাজে এখন সর্বাধিক ব্যবহার করা হয় এই রেডিমিক্স কংক্রিটের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে।
সাধারণত রেডিমিক্স কংক্রিট বড় বড় প্রজেক্ট এবং সুউচ্চ দালানকোঠা নির্মাণকাজে ব্যবহার বেশি হয়। আসুন জেনে নেই রেডিমিক্স কংক্রিট নিয়ে অতি আবশ্যকীয় কিছু তথ্য।
কীভাবে মিক্সচার তৈরি করা হয়
মিক্সিং প্ল্যান্টে কী গ্রেডের কংক্রিট লাগবে এবং স্ট্রাকচারাল কনসাল্টেন্টের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ব্যাচ প্ল্যান্টে সূক্ষ্ম পরিমাপে খোয়া, বালু, পানি ও সিমেন্ট ওজন অনুপাতে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এর ফলে সাইটের প্রয়োজনমাফিক এবং নির্মাণ ধরনের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত মিশ্রণের কংক্রিট পাওয়া যায়। প্রথম রেডিমিক্স কংক্রিটের কারখানা ১৯৩০ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯৬০ সাল থেকে বড় পরিসরে এর চাহিদা বাড়তে থাকে।
রেডিমিক্স কংক্রিটের প্রকারভেদ
মিশ্রণের উপকরণ এবং এর ভিন্নতার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মূলত ৩ প্রকার।
১. ট্রানজিট মিক্স কংক্রিট – এই প্রকারের কংক্রিট বেশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দুই উপায়ে ট্রানজিট রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কারখানায় উপযুক্ত মিশ্রণ তৈরি করে সেটা ব্যারেল ট্রাক বা ইন-ট্রানজিট মিক্সিং ট্রাকের মাধ্যমে সাইটে পাঠানো হয়। এইসব ট্রাক যাত্রা পথেও মিক্স করতে থাকে যাতে করে সব উপকরণ শক্ত না হয়ে লেগে যায়। আরেকটি যে উপায়ে রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহারের পূর্বে পাঠানো হয় তা হলো, কাঁচামালগুলো শুকনা অবস্থায় পাঠানো হয় এবং অভিজ্ঞ লোকের নজরদারিতে উপযুক্ত পরিমাণে সেগুলো নিয়ে সাইটে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
২. শ্রিংক মিক্স কংক্রিট – এই পদ্ধতিতে কংক্রিট আংশিকভাবে প্ল্যান্ট মিক্সারে মিশ্রিত হয় এবং তারপরে ট্রানজিটের সময় ট্র্যাক মাউন্টেড ড্রাম মিক্সারে ব্যালেন্স মিক্সিং করা হয়। ট্রানজিট মিক্সারের মিশ্রণের পরিমাণ কেন্দ্রীয় মিক্সিং প্লান্টে মিশ্রণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ড্রাম মিক্সার মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা স্থাপনের জন্য পরীক্ষা করা উচিত যাতে এই স্থান পরিবর্তনের জন্য মিশ্রণের অনুপাত যাতে সঠিক থাকে।
৩. কেন্দ্রীয় মিক্স কংক্রিট – একে সেন্ট্রাল ব্যাচিং প্লান্টও বলা হয় যেখানে ট্রাক মিক্সারে লোড করার আগে কংক্রিটটি পুরোপুরি মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও প্ল্যান্টকে ভিজা-ব্যাচ বা প্রাক-মিশ্রণ প্ল্যান্ট হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। কংক্রিট পরিবহনের সময়, ট্রাক মিক্সার কেবল নাড়াচাড়ার (এজিটেটর) যন্ত্র হিসাবে কাজ করে। কখনো কখনো, যখন কর্মক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা কম হয় বা সীসা কম হয়, স্থির রাখার (নন-এজিটেটর) ইউনিট বা ডাম্প ট্রাকগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যবহারবিধি
রেডিমিক্স কংক্রিট ভলিউমের ভিত্তিতে কেনা বেচা হয়। সাধারণত কিউবিক মিটার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিউবিক ইয়ার্ড) দ্বারা প্রকাশিত হয়। ব্যাচিং এবং মিক্সিং নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে করা হয়।
যুক্তরাজ্যে, প্রস্তুত-মিশ্রিত কংক্রিটটি অনানুষ্ঠানিকভাবে, উপাদান ওজন বা ভলিউম দ্বারা (১-২-২ বা ১-৩-৬-৬ সাধারণ মিশ্রণ) বা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড EN 206+ A1 এর আনুষ্ঠানিক স্পেসিফিকেশন মান ব্যবহার করে নির্দিষ্ট করা হয়, যা বিএস ৮৫০০ দ্বারা যুক্তরাজ্যে পরিপূরক করা হয়েছে এটি গ্রাহককে ভূমির অবস্থা, এক্সপোজার এবং শক্তির ক্ষেত্রে কংক্রিটটি কী সহ্য করতে সক্ষম হবে তা নির্দিষ্ট করা হয় এবং নির্মাতাকে এমন একটি মিশ্রণ ডিজাইন করতে দেয়, যা ব্যবহারের সাথে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এবং যা স্থানীয়ভাবে একটি ব্যাচিং প্ল্যান্টে উপকরণ উপলব্ধ।
রেডিমিক্স কংক্রিটের সুবিধাসমূহ
আসুন জেনে নেওয়া যাক রেডিমিক্স কংক্রিট ব্যবহারের সুবিধাগুলো। রেডিমেড কংক্রিট একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা মেনে নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশিনে উপযুক্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়। এতে ভুলের সুযোগ কম থাকে এবং প্রস্তুতির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে বেশি।
সাইটে মিশ্রণের ফলে অনেক ভুল ত্রুটির সুযোগ থাকে যা প্ল্যান্টে করলে অনেক কমে যায়। ফলে উপযুক্ত মিশ্রণ দালানের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং নির্মাণ করে সহজতর ও বিশ্বাসযোগ্য।
- বিল্ডিংয়ে ব্যয় এবং বিস্তৃত ব্যবহারের কারণে রেডিমিক্স কংক্রিট প্রায়শই অন্যান্য উপকরণগুলোর উপরে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে যেমন- সুউচ্চ বিল্ডিং এবং সেতুর মতো বড় প্রকল্পগুলোতে এবং রাস্তাপথ নির্মাণের কাজে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একই ট্র্যাফিকের পরিমাণের সাথে এস্ফাল্ট কংক্রিটের ১০ থেকে ১২ বছরের জীবনের তুলনায় উচ্চ ট্র্যাফিক অঞ্চলে রেডিমিক্স কংক্রিটের গড় আয়ু ৩০ বছর হয়। - যেহেতু মেশিনে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা হয়, তাই স্বল্প সময়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা যায়। এতে করে নির্মাণের জন্য সময় সাশ্রয় হয় এবং নির্মাণ খরচও কমে আসে।
- হ্যান্ডলিং এর সুবিধার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মিশ্রণে ১০-১২% কম সিমেন্ট লাগে। এতে করে সিমেন্ট খরচ কম হয়। এডমিক্সচার এবং অন্যান্য সিমেন্টিং উপকরণ ব্যবহারে সিমেন্ট এর ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
- অধিক দৃঢ় ও মজবুত স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয় যাতে করে পরবর্তীতে খরচ অনেক কমে যায়। দালানের স্থায়িত্ব বাড়ে, মানুষ নিরাপদে সুস্থভাবে জীবন নির্বাহ করতে পারে।
রেডিমিক্স কংক্রিট একটি পরিবেশ বান্ধব এবং সাস্টেইনেবল প্রযুক্তি যা আমাদেরকে সহজেই এবং দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে।
প্লাস্টার নিয়ে জেনে নিন সব খুঁটিনাটি
প্লাস্টার কেন করা হয়
ভবনের অমসৃণ পৃষ্ঠতলকে মসৃণ, সুষম, পরিষ্কার, এবং দীর্ঘস্থায়ী পৃষ্ঠতলে পরিণত করতে প্লাস্টার প্রয়োজন। অন্যদিকে খারাপ আবহাওয়া ও বৃষ্টির পানি ইটের গাঁথুনির ভিতরে যেন না ঢুকে সেজন্যেও প্লাস্টার অতীব জরুরী। যেখানে তাপ, পানি, বাতাস ইত্যাদির প্রভাব বেশি সেখানে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। অনেক সময় প্লাস্টার কেটে বাহির দেয়ালে বিভিন্ন ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন বেশি পুরুত্বের প্লাস্টার।
প্লাস্টার করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান
১। সিমেন্ট
২। সাদা বালি (এফ এম ১.৩ থেকে ১.৭)
৩। পানি
৪। বাঁশ
৫। প্লেইন শিট
৬। দড়ি
বালি সিমেন্ট মিশ্রণের অনুপাত ও নিয়ম
আর.সি.সি. পৃষ্ঠতলে সিমেন্ট:বালি অনুপাত হচ্ছে ১ঃ৪ এবং ইটের পৃষ্ঠতলে ১:৬। এখন জেনে নেওয়া যাক বালি ও সিমেন্ট মিশ্রণের নিয়মাবলী:
১। বালু ও সিমেন্টের গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্লাস্টারের বালু ভালো করে চালতে হবে যাতে কোন রকমের ময়লা বালুর সাথে না থাকে। এরপর উপরোক্ত অনুপাতে বালু ও সিমেন্ট মিশিয়ে নিতে হবে।
২। বালু ও সিমেন্ট শুকনা অবস্থায় এমনভাবে মিশাতে হবে যেন মশলা দেখতে অভিন্ন লাগে বা ছাই রঙ এর মত মনে হয়। তারপর পরিমিত পানি দিয়ে পুনরায় ভালো করে কোদাল দ্বারা কেটে মিশাতে হবে। মনে রাখতে হবে বানানো মশলা ১ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
প্লাস্টার করার পদ্ধতি
১। প্লাস্টার শুরু করার পূর্বে প্রথম কাজ হচ্ছে পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণ
আর.সি.সি. পৃষ্ঠতল
ক) ভালো করে চিপিং করতে হবে। চিপিং হচ্ছে হাতুড়ির সরু পাশ দিয়ে দেয়ালে খোদাইকরণ।
খ) অবাঞ্ছিত কোন ময়লা থাকলে তুলে ফেলতে হবে।
গ) পানি দিয়ে পৃষ্ঠতল ধুয়ে ফেলতে হবে। শুকনা পৃষ্ঠতলে প্লাস্টার করলে তা ফেটে যাবে।
ব্রিক পৃষ্ঠতল
ক) ইটের গাঁথুনির পৃষ্ঠতল আগের মতই পরিষ্কার করতে হবে।
খ) শ্যাওলা বা লবণ থাকলে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
গ) ইটের গাঁথুনির জয়েন্টগুলি পরিষ্কার করতে হবে।
ঘ) দেয়ালের পৃষ্ঠতলে জেগে থাকা ইটের অংশ ভালোভাবে কেটে ছেঁটে দেয়াল মোটামুটি সমতলে আনার পর প্লাস্টার লাগানোর উপযুক্ত করা হয়।
২। প্লাস্টার করার পূর্বে আর. সি. সি. এবং ইট উভয় পৃষ্ঠতলই ভাল করে পানি দিয়ে ভিজাতে হবে।
৩। প্লাস্টার করার পূর্বে সিমেন্ট বালির মিশ্রণ দিয়ে ৩”X৩” @ ৫’ থেকে ৬’ পর পর পায়া করতে হবে।
৪। প্রয়োজন হলে পুরুত্ব কমানোর জন্যে পায়া করার সময় দুই/এক জায়গায় ছেঁটে নিতে হবে।
৫। আর. সি. সি. পৃষ্ঠতলে গ্রাউটিং (পানিতে শুধু সিমেন্টের মিশ্রণ) ব্যবহার করতে হবে।
৬। ভালো প্লাস্টার করতে হলে অবশ্যই পুরুত্ব ঠিক রাখতে হবে।
৭। কোন কারণে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেড়ে গেলে সেই স্থানে অবশ্যই ডাবল প্লাস্টার সিস্টেম এ প্লাস্টার করতে হবে। অর্থাৎ প্লাস্টারের পুরুত্ব ১.৫” হলে প্রথমবার ১” করে উলম্ব ও অনুভূমিক বরাবর লেভেল ঠিক করে প্লাস্টার করে রাখতে হবে এবং পরের দিন হাফ ইঞ্চি প্লাস্টার করে ফিনিশিং দিতে হবে।
৮। কোন অবস্থাতেই ভিজা প্লাস্টারের উপর শুকনা সিমেন্ট বালির মিশ্রণ লেপ্টে দিয়ে প্লাস্টার করা যাবে না। মিস্ত্রিদের ভাষায় একে “ভুরা” বলে।
৯। অ্যালুমিনিয়াম পাট্টা ও স্প্রিট লেভেলের সাহায্যে প্লাস্টার এর উলম্ব ও অনুভূমিক পৃষ্ঠতল চেক করতে হবে। প্লাস্টারের কোন সমস্যা থাকলে সাথে সাথে ঠিক করতে হবে।
১০। চৌকাঠের চারিদিকে, টাইলসের স্কাটিং এর উপরে এবং এসডিবি বক্সের চারিদিকে ৫মিমি প্রস্থ ৬ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে। সানশেড, ড্রপওয়াল এবং ক্যান্টিলেবার অংশে ১০ থেকে ১২ মিমি প্রস্থ এবং ১০ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে।
১১। সাধারণত স্কাটিং এর জায়গা বাদ দিয়ে প্লাস্টারের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। পরে টাইলস বসিয়ে প্লাস্টার ফিনিশিং দেওয়া হয়।
১২। প্লাস্টার করার পর মনে রাখার জন্যে প্লাস্টার এর গায়ে তারিখ লিখে রাখা যেতে পারে।
১৩। প্লাস্টার করার ২৪ ঘন্টা পর হতে কমপক্ষে ৭ দিন, দিনে ৩-৪ বার করে কিউরিং করতে হবে।
প্লাস্টার করার জন্যে উপাদান খরচের হিসাব
ফিল্ডে প্লাস্টার চেক
১। প্লাস্টারের উপর যদি হাত দিয়ে হাতুড়ির বাড়ি মারা হয় তবে গর্ত হয়ে গেলে সে প্লাস্টার পালটিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।
২। কলাম, বিম, স্লাব এবং স্লাব ও বিমের মিলিত জায়গায় প্লাস্টার স্ট্রেট আছে কিনা চেক করতে হবে।
৩। প্লাস্টারে ক্রাক আসলে তা ফেলে দিয়ে প্রয়োজনে ওয়্যার মেশ দিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।
৪। প্লাস্টারের মসৃণতল পরীক্ষার জন্যে দেয়ালের প্রান্ত দেশে বাতি ধরলে অসমান প্লাস্টারের ছায়া দেখা যাবে।
৫। কাঠের দরজা জানালার চৌকাঠের উপর প্লাস্টার চড়ানো যাবে না।
৬। নখ ফুটালে বালি বেড়িয়ে আসলে কিউরিং কম হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
প্লাস্টার চেক ফরম্যাট
প্লাস্টারের সমস্যা ও সমাধান:
১। প্লাস্টার ঝড়ে পড়া
কারণ:
ক।মিক্সার ভালো না হলে ঝড়ে পড়তে পারে।
খ। ভেজা প্লাস্টারের উপরে শুকনা বালি সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করলে প্লাস্টার ঝড়ে পড়তে পারে।
গ। বালুতে কয়লার গুঁড়া থাকলে ঝড়ে পড়তে পারে।
সমাধান: খারাপ প্লাস্টার ফেলে দিয়ে নতুন করে উক্ত স্থানে প্লাস্টার করতে হবে।
২। প্লাস্টার ক্রাক করলে
কারণ:
ক। আর সি সি ও ব্রিক জয়েন্টে প্লাস্টার ক্র্যাক হতে পারে। কাজ করার সময় উক্ত স্থানে ভালোভাবে মশলা ঢুকাতে হবে।
খ। প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ক্র্যাক দেখা দিতে পারে। প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ডাবল প্লাস্টার সিস্টেমে প্লাস্টার করতে হবে।
সমাধান:
ক্রাককৃত প্লাস্টার ফেলে দিয়ে এক্সপান্ডেড মেটাল বসিয়ে পুনরায় প্লাস্টার করতে হবে।
কোন সিমেন্ট ভালো? কোন সিমেন্ট কিনবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা কিছু আলোচনার মাঝে খুঁজে নিব। প্রথমে দেখা যাক যে সিমেন্টগুলো বাজারে পাওয়া যায় তাদের প্যাকেটে কী লেখা থাকে?
কোন কোড মেনে তৈরি করা হয়?
বাংলাদেশে সিমেন্টের গায়ে বিডিএস ইএন ১৯৭-১:২০০৩ (BDS EN 197-1:2003) লেখা থাকে। এটা লেখা থাকার মানে হচ্ছে এটি বি. এস. টি. আই. দ্বারা মান নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বি. এস. টি. আই. কর্তৃক প্রণীত সিমেন্টের বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে বাংলাদেশে সিমেন্টগুলো তৈরি হয়। এজন্য সিমেন্টের ব্যাগগুলোতে বি. এস. টি. আই. এর লোগো থাকা অত্যাবশ্যক।
কোন ধরণের সিমেন্ট?
সিমেন্টের গায়ে সিইএম II/বিএম (এস-ভি-এল) [CEM II/B-M (S-V-L)] এই ধরণের লেখা থাকে যা দ্বারা বুঝা যায় এটি কোন ধরণের সিমেন্ট। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডে ২৭ ধরণের সিমেন্টের কথা বলা আছে যাদের মূল ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়।
– সিইএম I পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (CEM I Portland cement): এটি সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিমেন্ট। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫৫% (C3S), ১৯% (C2S), ১০% (C3A), ৭% (C4AF), ২.৮% MgO, ২.৯% (SO3), ১.0% ইগনিশন লস এবং ১.0% মুক্ত CaO। এই সিমেন্টের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে C3A কখনোই ১৫% এর বেশি হতে পারবে না।
– সিইএম II পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (CEM II Portland-composite cement): এটি সালফেট অ্যাটাক প্রতিরোধক হওয়ায় মাটি এবং পানি সংযুক্ত স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এটি কম তাপ উৎপাদন করে। এটির দাম আর সিইএম I এর দাম একই হওয়ায় এই সিমেন্টই নির্মাণের কাজে এখন বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫১% (C3S), ২৪% (C2S), ৬% (C3A), ১১% (C4AF), ২.৯% MgO, ২.৯% (SO3), .৮% ইগনিশন লস এবং ১.0% মুক্ত CaO। এই সিমেন্টের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে C3A কখনোই ৮% এর বেশি হতে পারবে না।
– সিইএম III ব্লাস্টফার্নেস সিমেন্ট (CEM III Blastfurnace cement): জরুরী নির্মাণ বা মেরামত, প্রিকাস্ট নির্মাণ ইত্যাদি কাজে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এটি আগেই স্ট্রেথ দিয়ে থাকে। সাধারণত টাইপ III এর তিন দিনের স্ট্রেথ পাওয়া যায় সাত দিনের টাইপ I এবং II সিমেন্টে। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫৭% (C3S), ১৯% (C2S), ১০% (C3A), ৭% (C4AF), ৩% MgO, ৩.১% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ১.৩% মুক্ত CaO।
– সিইএম IV পোজোলানিক সিমেন্ট (CEM IV Pozzolanic cement): এটি যে ইমারতে অনেক কংক্রিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেসব নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। যেমন ড্যাম। একসাথে অনেক কংক্রিট ব্যবহার করলে অত্যাধিক তাপ উৎপন্ন হয় যা কমানোই এই সিমেন্টের উদ্দেশ্য। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ২৮% (C3S), ৪৯% (C2S), ৪% (C3A), ১২% (C4AF), ১% MgO, ১.৯% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ০.৮% মুক্ত CaO। এখানে C3A ৭% এবং C3S ৩৫% এর বেশি হতে পারবে না।
– সিইএম V কম্পোজিট সিমেন্ট (CEM V Composite cement): যেখানে অ্যালকালি মাটি এবং পানিতে সালফেট রয়েছে সেখানে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৩৮% (C3S), ৪৩% (C2S), ৪% (C3A), ৯% (C4AF), ১.৯% MgO, ১.৮% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ০.৮% মুক্ত CaO। এখানে C3A ৫% এর বেশি হতে পারবে না এবং C4AF+2C3A ২০% এর বেশি হতে পারবে না।
এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, সাধারণ নির্মাণ কাজে সিইএম II ব্যবহৃত হয়। এই পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট আবার দুই ধরণের। একটি A-M অন্যটি B-M যা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে এবং এটি লেখা থাকা অত্যাবশকীয়। কোন সিমেন্টেই সিলিকা ফিউম ১০% এর বেশি হতে পারবে না।
স্ট্রেথ ক্লাস
নিচের টেবিল থেকে এই শ্রেণীবিভাগ আমরা বুঝে নিতে পারি।
শক্তির শ্রেণী | সংকোচকারী শক্তি (এমপিএ) | প্রাথমিক সেটিং সময় (মিনিট) | |||
শুরুতে শক্তি | প্রমাণ শক্তি | ||||
২ দিন | ৭ দিন | ২৮ দিন | |||
৩২.৫ এন | – | ≥১৬ | ≥৩২.৫ | ≤৫২.৫ | ≥৭৫ |
৩২.৫ আর | ≥১০ | – | |||
৪২.৫ এন | ≥১০ | – | ≥৪২.৫ | ≤৬২.৫ | ≥৬০ |
৪২.৫ আর | ≥২০ | – | |||
৫২.৫ এন | ≥২০ | – | ≥৫২.৫ | – | ≥৪৫ |
এখানে ২৮ দিনের শক্তিকে দুইটি ভাগে ভাগ করে সাধারণ শুরুতে শক্তি পাওয়া কে এন এবং বেশি শক্তি পাওয়াকে আর নামে সূচিত করা হয়েছে।
এছাড়া প্রত্যেকটি সিমেন্টের প্যাকেটের গায়ে লাইসেন্স নং, ম্যানুফ্যাকচারারের নাম ও ঠিকানা, ওজন, উৎপাদনের তারিখ, অন্য দেশের অরিজিন দেওয়া থাকবে।
এবার জানা যাক অন্যান্য বিষয়
ল্যাবরেটরী টেস্ট:
সিমেন্টের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী টেস্ট আছে। যেমন- টেস্ট ফর ফাইননেস, প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত সেটিং টাইম, সাউন্ডনেস, কম্প্রেসিভ এবং টেনসাইল স্ট্রেন্থ ইত্যাদি। বাজারে ভালো ব্রান্ডের সিমেন্ট এই টেস্টগুলো বুয়েট থেকে করিয়ে থাকে এবং ভোক্তাদের টেস্ট রেজাল্টগুলো দেখিয়ে বিক্রি করে থাকে। আপনি মালিক হিসেবে তাদের রেজাল্টগুলো তুলনা করে দেখতে পারবেন।
সিমেন্টের ব্যাগের ওজন:
বাজারে সিমেন্টের যে ব্যাগগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর নেট ওজন ৫০ কেজি থাকে। এটিও খুব সহজে ওজন নিয়ে যাচাই করা যায়।
বায়ুরোধক কিনা:
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এই সিমেন্টের ব্যাগগুলোকে ভালোভাবে বায়ুরোধক করে প্যাকেজিং করা হয়েছে কিনা দেখে নিতে হবে। অন্যদিকে কংক্রিটিং করার জন্য বেশিদিন সিমেন্ট স্টোরে রাখলেও তার শক্তির হ্রাস পেতে থাকে তবে তা কখনই একেবারে শূন্যের কোটায় আসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি পানি দ্বারা জমাট না বাধবে। গুদামজাত করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সিমেন্টের ব্যাগ সরাসরি মাটির উপর না রেখে শুষ্ক জায়গায় কোন উপযুক্ত পাটাতনের উপর (সাধারণত মাটি থেকে ৬ ইঞ্চি উপরে) রাখতে হবে যাতে খুব সহজে পানির সংস্পর্শে না আসতে পারে এবং পাশের ব্যাগের সাথে একেবারে লাগিয়ে পরের ব্যাগগুলো রাখতে হবে যেন দুই ব্যাগের মাঝের পথ দিয়ে সেভাবে বায়ু চলাচল না করতে পারে। সবশেষে সম্পূর্ণ সিমেন্টের স্তুপ পলিথিন বা রেক্সিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো। বেশিদিনের গুদামজাত সিমেন্ট শক্ত হয়ে যায় তাও গুঁড়া করে পুনঃ ব্যবহার করা যায় তবে এক্ষেত্রে সিমেন্টের অনুপাত বাড়িয়ে দিতে হয়।
গুণগত মান নির্ণয়ের মাঠ পরীক্ষাঃ
সিমেন্টের গুণগতমান নিরূপণের জন্য নিম্নে আরো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ
১। যদি সিমেন্টের ভেতর কোনো ঢেলা পাওয়া যায় যা আংগুলের চাপে ভাঙা সম্ভব নয় তাহলে উক্ত সিমেন্ট কংক্রিটিং এর কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
২। দু’ আঙুলের মাঝে কিছু সিমেন্ট নিয়ে ঘর্ষণ করলে যদি রেশমের মতো মসৃণ অনুভূত হয় তাহলে সেই সিমেন্ট ভালো।
৩। একটি নতুন সিমেন্টের বস্তায় সরাসরি হাত ঢুকিয়ে যদি ঠান্ডা অনুভূত হয় তবে তাকে ভালো সিমেন্ট বলা যাবে।
৪। কিছু সিমেন্ট দৃঢ় মুঠিতে ধারণ করে পানির ট্যাপের নীচে ধরে অথবা কিছু পানি ঢেলে যাতে করে মুঠোর ফাঁক দিয়ে পানি প্রবেশ করে সিমেন্ট ভিজতে পারে তখন যদি হাতের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়ছে বলে অনুমিত হয় তাহলে সেই সিমেন্টের গুণগত মান ভালো।
এই ফিল্ড টেস্টগুলো সহজেই আপনি নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
সিমেন্ট কি ? সিমেন্টের ধরণ কি কি ?
সিমেন্ট এক ধরণের বাইন্ডিং ম্যাটেরিয়াল যা পানির সংমিশ্রণে কংক্রিট, মর্টার বা মসলা, প্লাস্টার ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে বালি এবং খোঁয়ার সংযোগ ঘটায়।
সিমেন্টের ধরণ :
BDS EN 197-1:2003 স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সিমেন্ট মূলত ৫ (পাঁচ) ধরণের হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা সচরাচর ৩ (তিন) ধরণের সিমেন্ট পেয়ে থাকি।
- সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (Ordinary Portland Cement – CEM I)
- পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (Portland Composite Cement – CEM II)
- ব্লাস্ট ফার্নেস সিমেন্ট (Blast Furnace Cement – CEM III)
এছাড়াও এক্সপোর্টের জন্য ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট এবং সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজের জন্য হোয়াইট সিমেন্ট বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
বাড়ি নির্মাণের জন্য কি ধরণের সিমেন্ট দরকার?
ল্যাবরেটরিতে সিমেন্ট এর মর্টার পরীক্ষণের মাধ্যমে ২৮ দিনের নূন্যতম মান যদি PCC (A-M অথবা B-M) সিমেন্টের ক্ষেত্রে ৩,৬২০ Psi ও OPC সিমেন্টের ক্ষেত্রে ৪,০৬০ Psi পাওয়া যায় তবে, সেই সিমেন্ট যে কোন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
ভাল সিমেন্ট চেনার উপায় কি কি?
ভাল সিমেন্ট চিনতে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার পাশাপাশি কিছু হাতেকলমে পরীক্ষাও আছে, নিম্নে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো-
ক) ভাল মানের সিমেন্টের ব্যাগে হাত প্রবেশ করালে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। কিন্তু বর্তমানে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সিমেন্ট প্রস্তুতের পরপরই সরবরাহ করা হয় বলে সিমেন্টের ব্যাগ গরম থাকে।
খ) এক মুঠো সিমেন্ট হাতে নেয়ার পর হাতের তালুতে একটি স্তুপ তৈরি করা হলে যদি তা অপরিবর্তিত থাকে তবে তা ভাল সিমেন্ট।
গ) এক মুঠো সিমেন্ট নিয়ে পানিতে ফেললে তা যদি সাথে সাথে পানিতে তলিয়ে যায় এবং কোন অংশ পানিতে ভেসে না থাকে তবে বুঝতে হবে ঐ সিমেন্ট ভাল মানের।
ঘ) ভাল মানের সিমেন্ট হাতের মধ্যে নিয়ে মুষ্টি বন্ধ করে পানির ট্যাপের নিচে ধরলে অথবা কিছু পানি মুষ্টির উপর ঢাললে যাতে করে মুঠোর ফাঁক দিয়ে পানি প্রবেশ করে সিমেন্ট ভিজতে পারে তখন হাতের ভেতর তাপমাত্রা বাড়ছে বলে অনুভূত হবে।
ঙ) দু-আংগুলের মাঝে সিমেন্ট নিয়ে ঘর্ষণ করলে যদি রেশমের মত মসৃণ অনুভূত হয় তাহলে ঐ সিমেন্ট ভাল বলে গণ্য হবে।
সাশ্রয়ী মূল্যে ভাল সিমেন্ট কোথায় পাওয়া যাবে ?
এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা একটু কঠিন। ব্যবহার, বাড়ির ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কোন ধরণের সিমেন্ট ভালো হবে। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারের সেরা সিমেন্ট যদি কিনতে চান, তাহলে আপনার জন্য নিঃসন্দেহে ফ্রেশ সিমেন্ট সবচেয়ে ভালো। আপনার নিকটস্থ সিমেন্ট ডিলার এর সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করুণ। সিমেন্ট ডিলারদের খুঁজুন আমাদের ডিরেক্টরি থেকে।