কংক্রিট ফিনিশিংয়ের রকমফের

প্রাচীনকালে বসতবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো মাটি, চুন, সুড়কি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে রোমানরা প্রথম অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন বস্তুর মিশ্রণে একধরনের মিশ্রণ ব্যবহার শুরু করে। বালু, চুন, সুড়কির সাথে পরিমাণমতো পানি দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণ কংক্রিট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অবকাঠামো নির্মাণে। আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই রোমানদের মাঝে কংক্রিট অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান হিসেবে প্রচলিত হয় এবং কালের পরিক্রমায় কংক্রিটের মিশ্রণে চুনকে প্রতিস্থাপন করে সিমেন্ট।

কংক্রিটের ব্যবহার যেমন সহজ, তেমনই নিরাপদ ও বহুমাত্রিক। অবকাঠামোতে যেকোনো প্রকার ডিজাইন প্রয়োগেই কংক্রিট ব্যবহার করা যায়। কংক্রিটের ফিনিশিংয়ের রকমভেদের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে সৃজনশীল নির্মাণশৈলির নান্দনিকতা।

. ট্রোয়েল ফিনিশ

রাজমিস্ত্রী একপ্রকার হাতলযুক্ত মসৃণ স্টিলের গঠন নিয়ে কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর বারবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছেন- এই দৃশ্য আমাদের সকলের নিকটই সুপরিচিত। এরূপ ফিনিশিংকেই মূলত ট্রোয়েল ফিনিশিং বলা হয়। এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ফিনিশিং। মূলত কংক্রিটের ঢালাইয়ের কাজ হয়ে গেলে পৃষ্ঠতল মসৃণ ও সমতল করে দেয়াই ট্রোয়েল ফিনিশ। রাজমিস্ত্রীদের হাতে সচরাচর দেখা ম্যানুয়াল ট্রোয়েলের পাশাপাশি আজকাল যান্ত্রিক ট্রোয়েলের ব্যবহারও বেড়েছে।

২. ব্রুম ফিনিশ

এ ধরনের কংক্রিট ফিনিশে কংক্রিটের পৃষ্ঠতল মসৃণ রাখা হয় না। অবশ্য অনেকে একে ট্রোয়েলড-ব্রুমও বলে থাকে এজন্য যে ট্রোয়েল দিয়ে প্রথমে কংক্রিট মসৃণ করে সমতল করার পরই এর উপর ব্রুম বা ঝাঁটা দিয়ে টেনে টেনে একে অমসৃণ করা হয়। ব্রুম ফিনিশিংয়ে সময়ের ব্যাপারে বিশেষ সাবাধান হতে হয়। ট্রোয়েলের কাজ শেষ হবার সাথে সাথেই ব্রুমের কাজ শুরু করে দিতে হয়, অন্যথায় সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তা করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ফিনিশিং প্রধানত পৃষ্ঠতল যেন পিচ্ছিল না হয়ে যায় সে উদ্দেশ্যে করা হয়।

. স্ট্যাম্পড ফিনিশ

নাম থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব, কেননা স্ট্যাম্পড কংক্রিট ফিনিশিংয়ে আক্ষরিক অর্থেই কংক্রিটের উপর স্ট্যাম্পিং করা হয়। কংক্রিটের ঢালাই যথাযথভাবে ট্রোয়েল দিয়ে মসৃণ করার পর কংক্রিট নরম থাকতেই তার উপর কোনো নমুনা বস্তু দিয়ে চেপে সেটির আকৃতি ফুটিয়ে তোলার নাম স্ট্যাম্পড ফিনিশ। এটি মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে। স্ট্যাম্পড করার পর কংক্রিটের মেঝে দেখতে পাথর, স্লেট, ইট কিংবা যথাযথ উপায়ে করতে পারলে কাঠের মতোও হয়। বাসাবাড়িতে সাইডওয়াক কিংবা রাস্তায় ফুটপাতে, গাড়ির গ্যারেজে এ ধরনের ফিনিশিং দেয়া হয়।

. সল্ট ফিনিশ

সদ্য ঢালাই করা কংক্রিটের উপর এবড়োথেবড়ো ক্রিস্টাল আকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথড়ের টুকরো ফেলে তা রোলার দিয়ে চেপে মসৃণ করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে সল্ট ফিনিশিং বলে। কংক্রিট শক্ত হবার পর মেঝেটি ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সল্ট ফিনিশিংয়ের সৌন্দর্য বোঝা যায়। অবশ্য সৌন্দর্য এখানে গৌন ব্যাপার। মুখ্য হলো মেঝে পিচ্ছিলরোধী করা। সাধারণ সুইমিংপুলে এ ধরনের ফিনিশিং ব্যবহার করা হয় যার উপর সহজে শ্যাওলা পড়ে না কিংবা পিচ্ছিল হয়ে যায় না।

৫. এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ

এটাও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। মূলত ট্রোয়েলড ফিনিশের উপর অতিরিক্ত একস্তরের কংক্রিট বা সিমেন্ট যোগ করাই এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ। প্রথমে ট্রোয়েল দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই মসৃণ করা হয়। এরপর তা থেকে কয়েক মিলিমিটারের মতো চিকন একটি আবরণ পাওয়ার ফ্ল্যাটার বা ডায়মন্ড পলিশার দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই আবরণ উঠিয়ে নিলে ভেতরের কংক্রিটের পৃষ্ঠতল আরো মসৃণ হয়। এরপর তার উপর সিমেন্টের মিশ্রণের একটি অতিরিক্ত লেয়ার যোগ করা হয় যা একে অত্যন্ত মসৃণ এবং তকতকে করে তোলে।

. সোয়ার্ল ফিনিশ

কংক্রিটের ফিনিশের নানা রকমভেদের মাঝে এটি সবচেয়ে সৃজনশীলগুলোর একটি। প্রথম কংক্রিটের আবরণ সমতল করার পর তার উপর জ্যামিতিক মাপ ঠিক রেখে অভিন্ন পরিমাণ এবং আকার বজায় রেখে কংক্রিট মিশিয়ে দেয়া হয়। ফলে মেঝের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কংক্রিটের বৃত্তাকার গঠন তৈরি হয় যা মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একইসাথে হাঁটাচলার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়, কেননা এতে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

অবশ্য এটি ঘরের বাইরের মেঝেতেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যেসব স্থানে অধিক হাঁটাচলা হয় এবং মানুষের পায়ের ঘর্ষণে মেঝে খুব দ্রুতই ক্ষয় হয়ে কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেসব স্থানে এই প্রক্রিয়ায় কংক্রিটের ফিনিশিং দেয়া হয়। সোয়ার্ল ফিনিশিংয়ের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না, কারণ এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।

. পলিশড ফিনিশ

পলিশড ফিনিশ মূলত এরূপ যে মেঝে টাইলসের মতো মসৃণ ও আরামদায়ক হবে এবং তা এতটাই চকচকে হবে যে তাতে বিভিন্ন বস্তুর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণ বড় হলঘরে, প্রদর্শনীর মেঝেতে এ ধরনের ফিনিশ ব্যবহার করা হয়। পলিশড ফিনিশ যান্ত্রিকভাবেই করা হয়।

. কালারড ফিনিশ

কালারড বা রঙিন ফিনিশ মূলত মেঝেকে রঙিন করার জন্যই করা হয়। মেঝেকে রঙিন করতে দুটি উপায় ব্যবহার করে থাকেন রাজমিস্ত্রীরা। পিগমেন্ট বা একপ্রকার বিশেষ রঞ্জক পদার্থ প্রথমেই কংক্রিটের সাথে মিশিয়ে নেয়া হয় এবং তা ফিনিশিং করলে রঙ ফুটে ওঠে। অথবা কংক্রিট ফিনিশিং সম্পন্ন করে তা শুকিয়ে যাবার পূর্বেই তার উপর পছন্দমতো রঙের স্ট্রেইন প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখকৃত কংক্রিট ফিনিশিংগুলো হলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত কংক্রিটের ফিনিশিং। এগুলো ছাড়াও ডাইড, মার্বেলড, ফ্ল্যাশড, মাইক্রো টপিং, স্যান্ড ব্লাস্টারসহ নানা প্রকারের কংক্রিট ফিনিশিং রয়েছে।

প্লাস্টার ফিনিশিং-এর প্রকারভেদ

প্লাস্টার (পলেস্তারা) ফিনিশিং কী? সহজ ভাষায়- দেয়াল নির্মাণের পর তার মসৃণ বহিরাবরণ করার নামই প্লাস্টার ফিনিশিং। অবশ্য প্লাস্টার ফিনিশিং সর্বদাই মসৃণ হবে- এমন ভাবলে ভুল করবেন। দেয়ালের সুরক্ষা আর স্থায়িত্বের পাশাপাশি প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য দেয়ালকে নান্দনিক করে তোলা। আর নান্দনিকতার স্বার্থে প্লাস্টার সবসময় মসৃণ না-ও হতে পারে।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের কথা, যার নান্দনিক দর্শন ছাড়িয়ে যায় ব্যবহারিক গুণকেও।

পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ (Peeble Dash Plaster Finish)

নামের মতো প্লাস্টার ফিনিশের এ ধরনটি তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ মজার। সদ্য বসানো মসৃণ করা সিমেন্ট/কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর ছোট ছোট নুড়ি পাথরের টুকরো কিংবা অন্যান্য পাথরের টুকরো পরিমাণ মতো ফেলে পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক সিমেন্টের ঢালাই অন্তত ১ মিলিমিটার পুরু হতে হবে, অন্যথায় পাথরের গুঁড়ো তাতে স্থায়ী হবে না। প্রস্তুতি থেকেই অনুধাবনযোগ্য যে এই ফিনিশিং মসৃণ নয়, বরং রুক্ষ হয়। সাধারণ বাড়ির সীমানা দেয়ালের বহিরাবরণে এই ফিনিশিং দেয়া হয়, যা একইসাথে সৌন্দর্যবর্ধন করে এবং দেয়ালকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে।

স্ক্র্যাপড প্লাস্টার ফিনিশ (Scrapped Plaster Finish)

প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের এই ধরনের জন্য অন্তত ৬ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ১২ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরুত্বের কংক্রিট/সিমেন্টের ঢালাই প্রয়োজন। প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। প্রথমে সিমেন্টের ঢালাই যথাযথভাবে মসৃণ করে কয়েক ঘন্টা শুকাতে হবে। ঢালাই মোটামুটি শক্ত হয়ে এলে তার বহিরাবরণ ধারালো লোহার যন্ত্র বা অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে চেঁছে তুলে ফেলা হয়। এ কারণেই একে বলা হয় স্ক্র্যাপড প্লাস্টার (ছাঁটা প্লাস্টার)। এটি সৌন্দর্যবর্ধনে তেমন উপযোগী না হলেও দেয়াল বা মেঝেকে পিচ্ছিলরোধী করতে যথেষ্ট উপযোগী। অবশ্য স্ক্র্যাপ করবার উপকরণভেদে এই প্লাস্টার দেখতে একেকরকম হয়।

স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ (Stucco Plaster Finish)

স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ ঘরের বহির্ভাগ কিংবা অভ্যন্তর, উভয় ক্ষেত্রেই মানানসই। এটি মূলত তিন স্তরের প্লাস্টার, যে কারণে বেশ পুরু হয়ে থাকে, প্রায় ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। প্রথম আবরণকে বলা হয় স্ক্র্যাচ কোট (Scratch Coat), দ্বিতীয়টিকে ফাইনার কোট (Finer Coat), এবং সবার শেষে ফিনিশিং কোট (Finishing Coat) বা হোয়াইট কোট (White Coat)। এটি সম্পূর্ণ মসৃণ না হলেও এবড়োথেবড়োও নয় বটে।

স্মুদ কোট ফিনিশ (Smooth Coat Finish)

প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হলো স্মুদ কোট ফিনিশ। এটি দেয়ালের মসৃণ, সমতল ফিনিশ যা ১ ভাগ বালু আর ৩ ভাগ সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে সমতল করে দেয়ালে বসানো হয়।

স্যান্ড ফিনিশ প্লাস্টার (Sand Finish Plaster)

এটাও প্লাস্টার করার একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় দেয়ালে দুবার প্লাস্টার করা হয়। প্রথমবার ১২ মিলিমিটার পুরু অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টার করা হয় যাতে সিমেন্ট-বালুর অনুপাত থাকে ১:৪। প্রথম আবরণ সপ্তাহখানেক শুকানোর পর শুরু হয় দ্বিতীয় আবরণের কাজ। এই আবরণের জন্য সমান অনুপাতে বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করা হয় এবং অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টারের উপর ৬ মিলিমিটার পুরু প্লাস্টার দিয়ে তা মসৃণ করা হয়।

টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ (Textured Plaster Finish)

বালু, সিমেন্ট, চুন আর পানির পর্যাপ্ত মিশ্রণে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন প্রকার তন্তু ও রঞ্জক মিশ্রিত করে টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ তৈরি করা হয়। এটি মূলত স্টাকো প্লাস্টারিংয়েরই একটি প্রকারভেদ। ভিন্নতা কেবল এতটুকু যে এটি স্টাকোর তুলনায় অধিক মসৃণ, কেননা, এতে বারংবার প্লাস্টার করা হয় কম পুরু আবরণের। এছাড়াও এটি কিছুটা রঙিনও হয় যা দেয়ালকে দেখতে আকর্ষণীয় করে।

এক্সপোজড এগ্রিগেট প্লাস্টার ফিনিশ (Exposed Aggregate Plaster Finish)

এটি মূলত পিবল ড্যাশ ফিনিশিংয়ের একটি প্রকারভেদ, তবে এটি অধিকতর মসৃণ এবং নান্দনিক। এর প্রক্রিয়ায় অনেকটা একইরকম। এটি ১:১ সিমেন্ট ও সাদা পাথরের কুচির আবরণ। প্রাথমিকভাবে মসৃণ করে ঢালাই বা প্লাস্টার করা কংক্রিটের আবরণ (অন্তত ২০ মিলিমিটার পুরু) নরম থাকতে থাকতে এর উপর সিমেন্ট আর পাথর কুচির দ্বিতীয় আবরণ স্থাপন করা হয় এবং মোটামুটি মসৃণ করা হয়। ফলে পাথরের কুচি দৃশ্যমান থাকে, প্লাস্টারটি দেখতে অমসৃণ, কিন্তু সুন্দর হয়।

স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ (Spatter Dash Finish)

একভাগ বালু আর একভাগ সিমেন্টের মিশ্রণের উপর তিনভাগ পাথরের মিশ্রণ দিয়ে স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ দেয়ালে ৩-১২ মিলিমিটার (প্রয়োজনমতো আরো বেশি হতে পারে) পর্যন্ত পুরু করে একটি আবরণ দেয়া হয়। এই আবরণের উপর পাথরের মিশ্রণ সর্বত্র সমান অনুপাতে দিয়ে কর্ণিক (Trowel) ব্যবহার করে মোটামুটি সমতল করা হয়। মূলত বহিরাবরণের পাথরগুলোর একাংশ বাইরে বেরিয়ে থাকে, সেগুলোকে সমতল করতে পারলেই দারুণ একটি স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ হয়ে যায়। এই ফিনিশ পানিরোধক, টেকসই এবং সহজে ফাটে না।

আরো কয়েক প্রকার প্লাস্টার

উপরোক্ত প্লাস্টার ফিনিশগুলো সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজলভ্য। এসবের বাইরেও ভবনের নকশা ও প্রয়োজনভেদে আরো কিছু প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন– অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) প্লাস্টারে জিপসামের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টার হয়ে গেলে একে মৌচাকের মতো দেখতে দেখায়; অ্যাসবেস্টস (Asbestos) মার্বেল প্লাস্টারে সিমেন্টের মিশ্রণের সাথে অ্যাসবেস্টস আর পাথরের গুঁড়া মেশানো হয় যা বেশ দর্শনীয়। সাধারণ কর্পোরেট অফিসে এরকম প্লাস্টার ফিনিশ ব্যবহার করা হয়; এক্সরে কক্ষের তেজস্ক্রিয়তা যেন বাইরে ছড়াতে না পারে সেজন্য সেখানে বেরিয়াম (Barium) যুক্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করে বেরিয়াম প্লাস্টার ফিনিশ করা হয়; গ্রানাইট আর বালুর মিশ্রণে গ্রানাইট-সিলিকন (Granite-Silicon) প্লাস্টার সাধারণ অফিস কক্ষে দেখা যায়। এটি দেখতে সুন্দর এবং ফাটলরোধী।

বাড়ি নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের প্রচলন

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বাড়িঘর নির্মাণের পদ্ধতিতে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। অন্যান্য যান্ত্রিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে সাথে চোখে পড়ার মতো একটি পরিবর্তন হলো অবকাঠামো নির্মাণে ক্রমবর্ধমান সিমেন্টের ব্লক ব্যবহার। ইটের পর ইট সাজিয়ে রাজমিস্ত্রির হাতে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ানো ভবনগুলোর পাশেই আজকাল দাঁড়াচ্ছে সিমেন্ট ব্লক আর ‘হলো’ (ফাঁপা) ব্লকের তৈরি দালানকোঠা। দেখতেও মন্দ নয় ব্লকের তৈরি কাঠামো, বরং নির্মাণশৈলী ভালো হলে ব্লকের তৈরি বাড়িঘরেই আধুনিকতার ছাপ ফুটে ওঠে বেশি।

ইট নাকি ব্লক- বাড়ি তৈরির সময় তাই দ্বিধান্বিত হয়ে যান অনেকেই। দুটোরই রয়েছে নিজস্ব ধাঁচ, সৌন্দর্য আর সুবিধাদি। উভয়েই মজবুত, বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাপ ও চাপ সহনীয়। বাড়ির নকশা অনুযায়ী যেকোনোটিই বেছে নেয়া যেতে পারে নির্দ্বিধায়। তারপরও, দুটোর ব্যবহারের সুবিধাগুলো জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

সিমেন্ট ব্লক বনাম ইট

সিমেন্ট ব্লক সাধারণত ২০০ X ৪০০ X ২০০ মি.মি. (৭.৮৭ X ১৫.৭৫ X ৭.৮৭ ইঞ্চি) আকারের হয়ে থাকে, যেগুলো ২০০ মি.মি.-এর (৭.৮৭ ইঞ্চি) পুরু দেয়াল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। চিকন দেয়ালের জন্য ব্যবহার করা হয় ১০০ X ৪০০ X ২০০ মি.মি. (৩.৯৪ X ১৫.৭৫ X ৭.৮৭ ইঞ্চি) আকারের ব্লক। ইট সাধারণত ২৩০ X ১১০ X ৭৫ মি.মি. (৯.০৬ X ৪.৩৩ X ২.৯৫ ইঞ্চি) আকারের হয়ে থাকে।

ব্লকের তুলনায় ইটের ওজন কম হওয়ায় কাজ করার ক্ষেত্রে এটি সুবিধাজনক। সলিড (নিরেট) ব্লকগুলো আকারে বড় ও ভারী হলেও ‘হলো’ (ফাঁপা) ব্লকগুলো বেশ হালকা এবং কাজ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। ‘হলো’ ব্লকের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এর ভেতরে ফাঁকা স্থান থাকায় এটি ইট এবং সলিড ব্লক উভয়ের তুলনায় অধিক তাপনিরোধী। চাপ সহনশীলতাও ইটের চেয়ে ব্লকের বেশি।

অন্যদিকে, বর্ষাকালে পানি অধিক পানি শোষণ করায় ইটের দেয়ালে ছত্রাক গজায়, ব্লকের দেয়ালে যা অত সহজে জন্মাতে পারে না। আবার ব্লকের স্থায়িত্বও ইটের চেয়ে কিছু বেশি। নির্মাণকাল বিবেচনায় উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। ব্লকের আকার ইটের তুলনায় বড় হওয়ায় ব্লক দিয়ে দেয়াল নির্মাণ দ্রুত হয়। আবার ব্লকের চেয়ে ইট ছোট ও হালকা হওয়ায় ইট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ অপেক্ষাকৃত সহজ।

ইটের কিছু বিশেষ সুবিধা

১. ব্লকের চেয়ে ইটের তাপ শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি। ইটের কাঠামো ও গঠন এমন যে এটি অধিক তাপ ধারণ করতে পারে, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘থারমাল ম্যাস’। দিনভর তাপ ধারণ করলেও রাতের বেলা দ্রুত তাপ ছেড়ে দিতে সক্ষম ইট।

২. ‘হলো’ ব্লকের তুলনায় ইটের স্থায়িত্ব বেশি। ইটের তৈরি বাড়ি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হবার কারণেই বাড়ি নির্মাণে এটি এখনও সর্বাধিক জনপ্রিয় উপকরণ।

৩. ইটের একটি মৌলিক গুণ হলো ‘কম্প্রেসন’ বা সংনমন। ইট তৈরিতে এর উপকরণ অর্থাৎ মাটি এতটা কমপ্রেস করা হয় যে ইটের ঘনত্ব সহজেই ব্লকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হয়। ফলে ইটের তৈরি দেয়ালে কোনোরূপ দাহ্য বিস্ফোরণ বা দহনের সম্ভাবনা থাকে না।

৪. রক্ষণাবেক্ষণে ইটের দেয়ালের চেয়ে সুবিধাজনক আর কিছুই নেই। ইটের দেয়ালে নির্মাণ চলাকালে কিছু রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া পরবর্তীতে আর তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। যদিও ব্লকের দেয়াল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্লকের কিছু বিশেষ সুবিধা

১. ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খরচ কমে আসা। নির্মাতারা অনুমান করে থাকেন যে ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ ইটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম খরচে হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৪টি ইটের সমান একটি ব্লক বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫-৪০ টাকায়। ইটের ব্যবহারে যেখানে অধিক সিমেন্ট, অধিক সময়, এবং ফলস্বরূপ রাজমিস্ত্রির পেছনে অধিক ব্যয় হয়, ব্লকের ব্যবহারে সাশ্রয় হয় সবগুলোই।

২. ব্লকের একটি বড় গুণ হলো এটি পরিবেশবান্ধব। ব্লক তৈরি করা হয় ফ্লাই অ্যাশ থেকে। আর ফ্লাই অ্যাশ হলো তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার একটি অবশেষ মাত্র, যা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত হয়। এখানে ব্লকের কল্যাণে দ্বিমুখী লাভ পরিবেশের। প্রথমত, ব্লক উৎপাদনে মাটি পোড়াতে হচ্ছে না, ফলে চাষযোগ্য জমি বা পাহাড় খনন করতে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ফ্লাই অ্যাশ একটি বায়ু দূষণকারী উপাদান যা ব্লক নির্মাণে ব্যবহৃত হলে পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়। এছাড়াও, ফ্লাই অ্যাশের দাম কম হওয়ায় ব্লক নির্মাণে খরচও কম হয়।

৩. ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে হালকা হলো ‘অটোক্লেভড এরিয়েটেড কনক্রিট’ ব্লক বা এএসি ব্লক। এই ব্লক দিয়ে দেয়াল নির্মাণ অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ বলে এটি নির্মাতাদের পছন্দের উপকরণ হয়ে উঠছে।

৪. বর্তমানে বাড়ি নির্মাণের সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় যে বিষয়ে তা হলো বাড়ির ভূমিকম্প সহনশীলতা। নানা কারণে বেড়েছে ভূমিকম্প আর টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই অবকাঠামো নির্মাণের একটি প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হলো একে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা। আর এখানে বেশ এগিয়েই থাকে ব্লক। যেকোনো প্রকার কম্পন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইটের চেয়ে ব্লকের কার্যকারিতা অনেকাংশেই বেশি।

৫. শহুরে বাড়িঘর, বিশেষ করে ব্যস্ত সড়কের পাশে কিংবা শিল্প-কারখানাবেষ্টিত অঞ্চলে বাসা বাড়ি নির্মাণে ব্লক হতে পারে দারুণ উপযোগী। একটি ইট এককভাবে অধিক ঘন হলেও ইটের গাঁথুনিতে তুলনামূলকভাবে অধিক সংখ্যক সংযোগস্থল থাকে যা ব্লকের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম। ফলে ব্লকের তৈরি বাসাবাড়ি ইটের তৈরি বাসাবাড়ির তুলনায় অধিক শব্দনিরোধী। তাই শব্দবহুল এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ব্লকই শ্রেয়।

ইট এবং ব্লক, উভয়ের গুণাগুণ এবং বিশেষ সুবিধাদি জানবার পর কোনোটিকেই ব্যবহারের অনুপযোগী বলার সুযোগ নেই। বরং সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী। কেউ কেউ চান নির্মাণকাজ শেষে আর কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে। তাদের প্রথম পছন্দ হবে ইট। আবার যারা খরচ বাঁচিয়ে বাড়ি নির্মাণ এবং পরবর্তীতে নিয়মিত এর পরিচর্যা, পরিবর্তন আর পরিবর্ধনের ব্যাপারে আগ্রহী, তাদের জন্য ব্লকই যুতসই।

রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল ধরার কারণ ও এর প্রতিকার

কংক্রিট স্ল্যাবের ব্যবহার ছাড়া নির্মাণ কাজ প্রায় অকল্পনীয়। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ দালানের স্ল্যাবই রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব। কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে এই ফাটল দেখা দিতে পারে। জেনে নেয়া যাক কংক্রিট স্ল্যাবের ফাটল-বৃত্তান্ত।

Continue reading

কংক্রিটের অ্যাগ্রেগেট স্ট্যান্ডার্ড: ভালো অ্যাগ্রেগেটের যা যা গুণাবলি থাকা প্রয়োজন

স্থাপনার জগতে কংক্রিটের অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানে না, এমন কাউকে বর্তমানে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। প্রধানত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও কংক্রিট সুপারস্ট্রাকচার কনস্ট্রাকশনেও কার্যকর। স্ল্যাব এবং সিঁড়ি নির্মাণের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থাপনাশিল্পেও কংক্রিটের অনবদ্য ভূমিকা আছে। এত প্রয়োজনীয় এই উপাদান সম্পর্কে ভালো করে জানা তাই বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার পূর্বে বেশ দরকারি। এক নজরে তাই দেখে নেয়া যাক ভালো অ্যাগ্রেগেটের কী কী গুণাবলি থাকা দরকার ভালো মানের কংক্রিট পেতে হলে।

সারফেস, টেক্সচার, আকার, গ্রেডেশন, শোষণ ক্ষমতা, বাল্ক ইউনিট ওয়েট, স্পেসিফিক গ্র‍্যাভিটি, ময়েশ্চার কনটেন্ট ইত্যাদি হলো অ্যাগ্রেগেটের বৈশিষ্ট্য। অ্যাগ্রেগেটের কাজ হল ঘর্ষণজনিত প্রতিবন্ধকতা রোধ করা, জমাট বাধা রোধ করা, অ্যালকালি এবং সালফেটের প্রভাব ঠেকানো, সাথে সংকীর্ণভাব মোচন করা। সাধারণ স্থাপনার ক্ষেত্রে অ্যাগ্রেগেট ৬৫-৭৫ ভাগ আয়তনের হয়ে থাকে, বাকিটুকুতে থাকে সিমেন্টের মিশ্রণ, পানি এবং বাতাস। অ্যাগ্রেগেট প্রধান ভূমিকা রাখে মানসম্মত কংক্রিটের ক্ষেত্রে। যত ঘনভাবে Aggregate-এর গঠন নিশ্চিত করা যাবে কংক্রিটের স্থায়িত্ব ততই ভালো হবে। এই কারণে অ্যাগ্রেগেটের গ্রেডেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেডেশনের ভিত্তিতে অ্যাগ্রেগেট দুই রকমের হয়ে থাকে। 

১। কোর্স অ্যাগ্রেগেট (Coarse Aggregate) 

২। ফাইন অ্যাগ্রেগেট (Fine Aggregate)

কোর্স অ্যাগ্রেগেট

আমরা ফুটপাতে হেঁটে যাওয়ার সময়ে বা ড্রাইভের সময় পায়ের নীচে শক্ত যা অনুভব করি এইটাই কোর্স অ্যাগ্রেগেট। প্রাকৃতিক পাথর ভেঙেই এই অ্যাগ্রেগেট পাওয়া যায়। অ্যাগ্রেগেট কেমন হবে তা নির্ভর করে পাথরের ধরনের উপর। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অ্যাগ্রেগেট মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এই ধরনের উপাদান স্ল্যাবের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হয় না, বা রিইনফোর্সমেন্ট বারের মধ্যকার দূরত্বের এক-পঞ্চমাংশের বেশি হয় না।

বিভিন্নরকম কোর্স অ্যাগ্রেগেট আমরা ব্যবহার করে থাকি। যেমন-

১। পাথর বা গ্র‍্যাভেল

এই ধরনের পাথর একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে বা। কংক্রিটের মিশ্রণে এই গ্র‍্যাভেল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ইউনিট ওয়েট প্রতি ঘনফুটে ১৪০ থেকে ১৫২ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই মান ১৪৫ পাউন্ড ধরে নেয়া হয়। এ ধরনের অ্যাগ্রেগেটের সাধারণ আকার গ্র‍্যানিউল থেকে শুরু করে বোল্ডারের মতো বিশাল সাইজেরও হতে পারে।

২। স্যান্ড বা বালি

বালি হল সবচাইতে মসৃণ অ্যাগ্রেগেটের উদাহরণ। বিভিন্ন রকম বালি আছে, শার্প স্যান্ড/বিল্ডার্স স্যান্ড/ক্লিন ড্রাইড স্যান্ড যা কোর্স বা ফাইন বিভিন্ন অ্যাগ্রেগেটের কাজ করে। কোর্স বালি কংক্রিটের মিশ্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

৩। গ্রানাইট

Crushed stone texured background.

গ্রানাইট এক ধরনের ইগ্নিয়াস পাথরের উদাহরণ। একে বিভিন্ন ডায়ামিটারে চূর্ণ করে অ্যাগ্রেগেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪। পাথরচূর্ণ বা স্টোন চিপ

Stone. Crushed stone construction materials.

এই পাথরচূর্ণ সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাগ্রেগেট। কংক্রিটের বেস বা ভিত্তি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এই বস্তুর অ্যাগ্রেগেট-সিমেন্টের অনুপাত মেনে না চললেও হয়।

৫৷ রিসাইকেল্ড অ্যাগ্রেগেট

এই ধরনের অ্যাগ্রেগেট পূর্বে নির্মিত কংক্রিট ভেঙে পছন্দানুযায়ী সাইজে বানিয়ে নেওয়া হয়। বেস লেয়ার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই উপাদান। এর শোষণ ক্ষমতা এবং স্পেসিফিক গ্র‍্যাভিটি অন্যান্য প্রাকৃতিক অ্যাগ্রেগেটের চাইতে বেশি থাকে। 

এছাড়াও ভার্মিকুলাইট, গ্লাস, স্ল্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন নতুন রকমের অ্যাগ্রেগেট নিয়েও কাজ হচ্ছে। 

ফাইন অ্যাগ্রেগেট

ফাইন অ্যাগ্রেগেট হলো বালি বা পাথরচূর্ণ যার ডায়ামিটার ৯.৫৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম হয়। এই অ্যাগ্রেগেট ৪.৭৫ মিলিমিটার সীভের মধ্যে সহজেই পার হয়ে যায়। প্রাকৃতিক বালি, সিল্ট, পাথর গুড়ো, কাদা এসবও ফাইন অ্যাগ্রেগেটের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। ফাইন অ্যাগ্রেগেটের উদ্দেশ্যই হল কোর্স অ্যাগ্রেগেটের মধ্যে বিদ্যমান শূন্যস্থান পূরণ করে আরো বেশি কার্যকরী করে তোলা।

মজবুত দীর্ঘস্থায়ী ঘরের জন্য কংক্রিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যাগ্রেগেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাছাইতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভালো মানের অ্যাগ্রেগেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই আপনার স্থাপনার কাজ হতে পারে সফল এবং দীর্ঘমেয়াদী। 

কংক্রিটে বাড়ি তৈরি: নির্মাণকাজের বিভিন্ন ধাপ

বর্তমানে নির্মাণশিল্পের বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান হলো কংক্রিট। কেবলমাত্র সহজলভ্যতার জন্য নয়, বরং সহজ ব্যবহার এবং যেকোনো নকশাকে দৃষ্টিনন্দন করতে ও বাস্তব রূপ দিতে আজকের সময়ে আমরা অনেক বেশি কংক্রিট ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছি। নির্মাণশিল্পে একটি ভবনের নির্মাণের সাথে কখনোই আরেকটি ভবনের নির্মাণ পদ্ধতির মিল পাওয়া সম্ভব নয়। কাঁচামাল একই হওয়া সত্ত্বেও মাটির প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জমির আকার-আকৃতি এবং নকশার ভিন্নতার উপর নির্ভর করে নির্মাণ পদ্ধতি।

কংক্রিটে বাড়ি বানাতে গেলে নির্মাণ-সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত থাকে-

  • কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ
  • কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ-কাল-সময় ভেদে এই দুই সময়কালীন কাজে শ্রমিকের সহজলভ্যতা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ

সাধারণত এই ভাগে নির্মাণের পূর্বের সকল কাজ অন্তর্ভুক্ত। যেমন-

  • ভবন নির্মাণের প্রথমেই কোথায় নির্মাণকাজ হবে সেটি অর্থাৎ ভবনের লোকেশন ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় জায়গার স্বল্পতার কারণে কিংবা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্মাণের জায়গা নির্বাচনে অধিক সচেতন হতে হয়।
  • এরপর ক্লায়েন্টের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী একটি কার্যকর নকশা করা হয়।
  • নকশাকে বাস্তবায়ন করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সাহায্য নিয়ে ফাউন্ডেশন, স্ট্রাকচার এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • নকশা নির্বাচনের পর কাঁচামালের হিসেব, শ্রমিকের মজুরি এবং যাবতীয় খরচসহ একটি খসড়া বাজেট তৈরি করা হয় যা পরবর্তীতে নির্মাণকাজ চলাকালীন পরিবর্তিত হতে পারে।
  • সয়েল টেস্ট কিংবা মাটির পরীক্ষা একটি নিরাপদ ভবন নির্মাণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভবনের লোকেশন নির্ধারণের সাথে সাথে এই পরীক্ষা শুরু হয় এবং ভূ-বিশারদেরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ওই এলাকার মাটির উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকেন যেখানে মাটির প্রকৃতি, দূষণের প্রকৃতি-পরিমাণ এবং ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করা হয়।
  • সবশেষে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার অধীনে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ভবনের কাজ।

এবং এর মাধ্যমে ভবন নির্মাণের প্রথম ধাপ অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজের সমাপ্তি ঘটে এবং শুরু হয় কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ। 

কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

এই কাজের পরিধি ভবন নির্মাণের শেষ কাজ পর্যন্ত। নথিপত্র সংক্রান্ত কাজের চেয়ে এসময় সাইট এবং ব্যবহারিক কাজকর্ম বেশি হয়ে থাকে বিধায় অধিক সচেতনতা আবশ্যক। যেমন-

  • কাজ শুরু হয় সাইটের প্রস্তুতির মাধ্যমে। যেকোনো নির্মাণ কাজের শুরুতে সাইট নির্মাণের অনুকূলে থাকে না। তাই এসময় সাইট থেকে আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় গাছপালা এবং আগাছা অপসারণ, মাটি আলগা করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢালু করা এসব কাজ করা হয়ে থাকে। 
  • সাইট পরিষ্কারের পর ভবনের নকশা অনুযায়ী সুতা, চক এসবের মাধ্যমে লে-আউট সাইটে স্থাপন করা হয়। লে-আউট স্থাপনের পর সাইটে প্রবেশের জায়গা, চারিদিকে রাস্তার অবস্থান, শ্রমিকদের বসবাসের সুযোগ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য অফিসের অবস্থান ঠিক করা হয়।
  • লে-আউট স্থাপনের পর মাটি খননের কাজ শুরু হয়। মাটির প্রকৃতি এবং গুণাগুণের ভিত্তিতে এই খনন কাজ পরিচালিত হয় এবং সাধারণত এই সময় সাইটে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার আধিক্য দেখা দেয়। তাই খননের সময়ে যথাসম্ভব সাবধান হতে হয় এবং নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌঁছানোর পর রোলারের সাহায্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • পরবর্তী ধাপ হলো ফাউন্ডেশন নির্মাণ। ভবনের নকশা এবং ফাংশন অনুযায়ী কোন ফাউন্ডেশন ভবনের জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু ফাউন্ডেশন পুরো ভবনের ভার বহন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সেক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের কাঁচামাল নির্ধারণ এবং নির্মাণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা হয়।
  • ফাউন্ডেশন নির্মাণের পরপরই প্লিন্থ লেভেলে বীম তৈরি করা হয় পরবর্তী লেভেলের নির্মাণাকাজ পরিচালনার জন্য। এরপর যথাক্রমে কলাম, বীম, স্ল্যাব এবং দেয়াল তৈরি করা হয়। কলাম নির্মাণের ক্ষেত্রে উলম্ব বিচ্যুতি যাতে না হয় সেজন্য অভ্যন্তরীন রডগুলো কিছুতা বাড়তি রাখা হয়। 
  • সিভিল, প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রনিক সংক্রান্ত সকল কাজ এবং স্থাপনা শেষে ছাদ নির্মাণের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হয়। ছাদের ক্ষেত্রে সাধারণত পানির লিকেজ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পানিরোধক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
  • বীম-কলাম-স্ল্যাব সবকিছু নির্মাণের মাধ্যমে কখনো একটি ভবন বসবাস কিংবা কাজের উপযোগী হয় না যতক্ষণ না তার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা প্লাম্বিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। 

ওপরে বর্ণিত সকল বিষয় কংক্রিট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধিমালা হিসেবে পরিচিত হলেও দেশ-কাল-অঞ্চলভেদে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। একদম নতুন পরিবেশে কিংবা প্রথমবার কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বভাবতই অধিক সাবধানতা অনুসরণ করা হয়। সেসব কিছুসহ ভবন নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা বলুন দক্ষ প্রকৌশলী ও স্থপতির সাথে, আর হোম বিল্ডার্স ক্লাব তো আছেই আপনার পাশে! 

মেঝের একাল সেকাল

ঘরের মাঝে আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি সংস্পর্শে থাকে মেঝে, সারাক্ষণ মেঝের ওপর দিয়েই চলাচল হয় সবার। তাই ফ্লোর ফিনিশিংয়ের বিষয়টি বাড়ি নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

Continue reading

নির্মাণশিল্পের আধুনিক সদস্য: রঙিন কংক্রিট

রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।

Continue reading

ইট-মসলার ভালো গাঁথুনি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য উপকরণ হলো ইট। ইটের মডিউলার প্রকৃতির কারণে এটি অনেক স্থপতি আর প্রকৌশলীর কাছেই প্রিয়। তাই যুগ যুগ ধরে ইট ও মশলার মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে আমাদের স্বপ্নের বাড়িগুলো।

বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ইট ও মশলা ঠিক পরিমাণে থাকার বিষয়টি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভাষায় যাকে বলে ব্রিকওয়ার্ক। আজকে এই ব্রিকওয়ার্ক নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলা যাক।

প্রকারভেদ

আমাদের দেশে ব্রিক ওয়ার্ক দুই রকমের হয়ে থাকে।

 ১. অর্ডিনারি ব্রিক ওয়ার্ক   

 ২. পয়েন্টিং ব্রিক ওয়ার্ক

অর্ডিনারি ব্রিক ওয়ার্ক 

আমাদের দেশে সাধারণত এই ব্রিকওয়ার্কই বহুলভাবে প্রচলিত। ইট দিয়ে গাঁথুনি নির্মাণের পর সেই পৃষ্ঠ বা সারফেসকে এদেশের মৌসুমী ঝড় বা বিরূপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে প্লাস্টার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এই প্লাস্টার সৌন্দর্য বর্ধনেও কাজে দেয় বেশ চমৎকারভাবেই।     

পয়েন্টিং ব্রিক ওয়ার্ক

এই ব্রিকওয়ার্কে জয়েন্টের উপর প্লাস্টার দেওয়া হয় না। গাঁথুনি পরবর্তী জয়েন্টগুলোকে পয়েন্টিং করে দেওয়া হয়, যা সাধারণত ১০ ইঞ্চির হয়। এক্ষেত্রে মর্টার বা মশলা খুব হালকা লেয়ারে শক্তভাবে থাকে এবং বাইরে মসৃণ সারফেসের রূপ দেওয়া হয়ে থাকে।

নিয়মাবলী

ইটের গাঁথুনির কাজ শুরু করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, যা গাঁথুনিকে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।  চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক গাঁথুনির কাজ শুরু হওয়ার আগে আমাদের যা যা করতে হবে।

ব্রিকওয়ার্কের ব্রিক বা ইটকে অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে। অর্থাৎ শক্ত, মজবুত আর সেইসাথে সুষমভাবে পোড়ানো, সঠিক আকার-আকৃতি এবং রং বিশিষ্ট ইট ব্যবহার করতে হবে। ইটকে প্রথমেই ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ইটের কাজ শুরু হওয়ার একদিন আগে পানি থেকে ইটকে তুলে ফেলতে হবে। এই কাজটি করা হয় যাতে শুষ্ক ইট সিমেন্ট মসলার পানি শোষণ না করতে পারে। কেননা পানি শোষণ করা হলে সিমেন্টের হাইড্রেশন বন্ধ হয়ে যায় যার ফলাফল দূর্বল গাঁথুনি। 

এছাড়াও ইটের মাঝে বেশি পানি থাকায় সিমেন্ট মশলা নরম হয়ে জয়েন্ট থেকে ইটের গা বেয়ে পড়ে যেতে পারে। মসলার পুরুত্ব কম হলে এর ফলে গাঁথুনিও দূর্বল হবে, গাঁথুনি ভার্টিক্যালি শল আউটের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এমনকি এই অবস্থায় মিস্ত্রিও কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করবে কেননা এতে হাতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বেশিই থাকে।    

ইট ভিজানোর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বালি চালা এবং ভেজানো। যদিও আর্থিক ও সময়ের ব্যাপার বিবেচনায় এই কাজ এদেশে কম করা হয়, কিন্তু কাজের মান ভালো চাইলে বালিকেও ইটের মতো ভিজিয়ে রাখার পর চেলেও নিতে হবে। এরপর আসবে চিপিং। ব্রিকওয়ার্ক শুরু করার আগে সকল ধরনের সারফেস ভালোভাবে চিপিং করা খুবই জরুরি। চিপিং এর পর ফ্লোরকে ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করার পরেই গাঁথুনির কাজে হাত দেওয়া যাবে। ইট বিছানোর আগে ফ্রগ মার্ক যাতে উপরে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক দিনে গাঁথুনি ১.৫ মিটারের বেশি হওয়া উচিত না। তবে ভবিষ্যতে দেয়াল বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে দেয়াল টুথিং করে কাজ বন্ধ রাখা যেতে পারে।   

এবার আসা যাক মশলার ব্যাপারটিতে। পানি দেওয়ার আগে ড্রাই সিমেন্ট এবং বালির ভালোভাবে মিক্সিং করাটা ভীষণ জরুরি। মনে রাখতে হবে ভালো মিশ্রণেই ভালো গাঁথুনি নিশ্চিত হবে। সাধারণত ৫ ইঞ্চি গাঁথুনিতে ১:৪ অথবা ১:৫ এবং ১০” গাঁথুনিতে ১:৬ অথবা ১:৫ মশলা প্রস্তুত করতে হয়। মশলা নরম থাকা অবস্থায় ১২ মিলিমিটার গভীরে রেকিং করা হয়, এতে প্লাস্টারিং বা পয়েন্টিং এ সুবিধা হয়। যদি দেয়াল দুই বা ততোধিক ইটের পুরু হয়,  তবে মশলা প্রত্যেক কোর্সে বেডিং এবং ফ্লাশিং ছাড়াও গ্রাউটিং করতে হবে।

গাঁথুনির কাজ শেষ হলে চুন মশলার ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ এবং সিমেন্ট মশলার ক্ষেত্রে এক-দুই সপ্তাহ কিউরিং করা লাগবে। 

সতর্কতা 

গাঁথুনির কাজে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

১. সম্পূর্ণ বেডে ভালো করে মশলা বিছিয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে ইট বসাতে হবে যাতে ভালো করে মশলার সাথে ইট লেগে যায়।

২. ইটের গাঁথুনির কাজে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা ভালো। 

৩. ইটের গাঁথুনির পর প্লাস্টারিং এর কাজ কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পর শুরু করা উচিৎ।

৪. প্রথমে দেয়ালের দুই প্রান্তের ইট বসানোর পর সুতা ধরে মাঝের দেয়ালের ইট বসাতে হবে। সুতা টেনে অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখা হয়, যাতে সব সমান থাকে।  

লোড বহনকারী সাপোর্ট হিসেবে কাজ করা ছাড়াও গাঁথুনির কারণে বড় জায়গার লোড ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়। সেই সাথে আগুন বা আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব থেকেও ইন্টেরিয়রকে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা করে। সঠিকভাবে গাঁথুনি সম্পন্ন হওয়া ইটের দেয়াল তাপ এবং শব্দ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও রক্ষা করে৷ কাজেই গাঁথুনি ভালো হওয়া খুবই জরুরি৷ এজন্য উপযুক্ত গাঁথুনি নিশ্চিতকরণে উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে ভবিষ্যতে বাড়ির কাজে হাত দেওয়া সকলকেই।