আধুনিক বাড়ি নির্মাণ: ঢালাইয়ে ভাইব্রেটরের ব্যবহার

একটি দালানের নির্মাণকাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। সময়ের সাথে সাথে নির্মাণ পদ্ধতি এবং এসব যন্ত্রপাতির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। আসছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশল, যা নির্মাণকাজকে করছে সহজতর, দ্রুত এবং বানাতে সাহায্য করছে আরো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী দালানকোঠা ও বসতবাড়ি।

সেরকমই একটি যন্ত্র হলো ভাইব্রেটর। মূলত দালানের কনক্রিট ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় ভাইব্রেটর নামের এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। আসুন জেনে নেওয়া যাক কখন, কেন ও কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এই যন্ত্র।

ভাইব্রেটর কী ও কীভাবে কাজ করে?

কনক্রিট ঢালাইয়ের সময়ে সাধারণত ফর্মার মধ্যে মশলা (সিমেন্ট, পানি ও বালুর মিশ্রণ) ঢালা হয়। আরসিসির মধ্যে সেটা পড়ার সময় কিছু কিছু জায়গায় আটকে যায়। এর মধ্যে বাতাস জমে ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করে কাঠামোকে দুর্বল করে ফেলে। এজন্য কলাম, বীম কিংবা মেঝে ঢালাইয়ের সময় ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটির উদ্ভাবন দালানের কাঠামোগত মজবুতির জন্য অনেক সুবিধা করে দিয়েছে।

বিভিন্ন রকমের ভাইব্রেটর আছে, যেগুলো বিভিন্নভাবে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। সাইট, ভূমি, দালানের ধরন এসবের ভিত্তিতে উপযোগিতার উপর নির্ভর করে এই যন্ত্রগুলোর ব্যবহারের নিয়মনীতি আছে, যা ঠিকমত মেনে এগুলো ব্যবহার করতে হবে।

এদের কর্মপদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও মূল কার্যপদ্ধতিতে মিল পাওয়া যায়। ভাইব্রেটর মূলত ফর্মাতে কম্পন সৃষ্টি করে মশলাগুলোকে ভালোভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং বায়ু থাকলে তা বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে করে পরিমাণমতো মশলা আরসিসি রডের সাথে সুদৃঢ়ভাবে বন্ধন তৈরি করে।

প্রকারভেদ ও ব্যবহার

সাধারণত কনক্রিটের মিশ্রণের উপর ভাইব্রেটরের প্রকরণ নির্ভর করে। আবার কাজের ধরনের উপরেও নির্ভর করে কীভাবে কোন ভাইব্রেটর ব্যবহার করা লাগবে। দালানের প্রকারভেদ, সাইটের মাটি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করেও ঠিক করা হয় কোন রকমের ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হবে সেটি। আসুন জেনে নেওয়া যাক সংক্ষেপে।

ইমারসান বা নিডল ভাইব্রেটর

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাইব্রেটর হলো ইমারসান বা নিডল ভাইব্রেটর। এটি সাধারণত ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ভাইব্রেটর, যাতে একদিক বন্ধ একটি নিডল বা স্টিল টিউব আছে যাতে ভাইব্রেটিং এলিমেন্ট থাকে। রিইনফোর্সমেন্ট-এর দূরত্বের উপর নির্ভর করে এই টিউবের মাপ ৪০-১০০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। এতে সাধারণত ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত ভাইব্রেট করা হয় এবং এর জন্য কনক্রিটের স্তরের মাপ ৬০০ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি হতে পারবে না।

এক্সটার্নাল বা সাটার ভাইব্রেটর

এই ভাইব্রেটরগুলো পূর্বপরিকল্পিত পয়েন্টে ফর্মার সাথে ক্ল্যাম্প করে আটকিয়ে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি জায়গায় লাগিয়ে রাখা হলেও পরে তা সরিয়ে সরিয়ে সব জায়গায় সমান মশলা যাওয়া নিশ্চিত করা হয়। ইন্টার্নাল ভাইব্রেটরের চেয়ে এর পাওয়ার কনজাম্পশন বেশি হয়। এটি সাধারণত প্রি-কাস্ট কনক্রিটের জন্য এবং সাইটে পাতলা সেকশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

সারফেস ভাইব্রেটর

অগভীর সারফেস, যার গভীরতা ২৫০ মিলিমিটারের বেশি নয়, এমন সারফেসে সরাসরি ভাইব্রেট করিয়ে মশলা ঠিকমতো কম্প্যাক্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয় সারফেস ভাইব্রেটর। ছোট ছোট স্ল্যাব এবং পেভমেন্টের স্ল্যাবের ঢালাই ও মেরামতির কাজে সারফেস ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়।

কংক্রিট ভাইব্রেটর টেবিল

ল্যাবরেটরি এবং প্রিকাস্ট কংক্রিট বানানোর ফ্যাক্টরিগুলোতে এটি ব্যবহৃত হয়।

ভাইব্রেশনের রকমফের ও কীসের ভিত্তিতে নিবেন?

ফর্মওয়ার্কের জন্য সাধারণত সারফেস ভাইব্রেটর ব্যবহার করা যায়, যা সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটার পর পর ঢালাইয়ের গায়ে লাগিয়ে কাজ করা হয়। সর্বাধিক ৬ ইঞ্চির কাস্টিং-এ ভাইব্রেশনের জন্য বড়সড় মাপের ভাইব্রেটর ব্যবহৃত হয় যাদেরকে জাম্পার বলে। এগুলো সুন্দর মসৃণ তল তৈরি করে। আভ্যন্তরীণ ভাইব্রেটর ব্যবহার করে ভিতর থেকে বায়ু বের করে আনা হয়, যাতে মশলা সুন্দরভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সাধারণত ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয় একদম সব কাজ শেষের দিকে। নিয়মমতো ব্যবহার করলে দ্রুতই এই যন্ত্রে কাজ হয়ে যায়। যদি ইন্টার্নাল ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভাইব্রেশনের কাজের পরে ২.৫ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড হারে সরাতে হয়। যদি এরপরেও ভাইব্রেট করা জায়গা থেকে বায়ু বুদবুদ বের হয় তাহলে সেই স্থানে আরও ভাইব্রেশন দিতে হবে। ভাইব্রেটর ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে অনেক বেশি সময় ধরে ভাইব্রেট করা না হয়, কেননা এতে করে পানি ও খোয়া আলাদা হয়ে পড়তে পারে।

এবার আসুন জেনে নেই ভাইব্রেটর ব্যবহারের সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলোর ব্যাপারে।

– যেকোনো কন্সট্রাকশন কাজের সময় এক বা একাধিক ভাইব্রেটর অতিরিক্ত রাখতে পারাটা ভালো।

– শক্ত কনক্রিটের জন্য বেশি সময় ভাইব্রেটর ব্যবহার করতে হয়।

– কোনো কোনো কনক্রিটের জন্য ভাইব্রেটর লাগে না, তাই ব্যবহারবিধি জেনে নিতে হবে।

– সবসময় নিশ্চিত করতে হবে, ভাইব্রেটর যাতে পুরাতন ঢালা কনক্রিটের স্তর ভেদ করে পরের স্তরে যেতে পারে, ন্যূনতম ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।

– ভাইব্রেটর খাড়াভাবে ব্যবহার করতে হবে।

– এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, এক জায়গায় ভুলক্রমে একাধিকবার যাতে ভাইব্রেটর ব্যবহার না হয়।

এসব বিধি মেনে সঠিকভাবে ভাইব্রেটর ব্যবহার করতে পারলে সহজেই দৃষ্টিনন্দন, মজবুত এবং সুরক্ষিত দালান নির্মাণ করা সম্ভব যা হবে আপনার স্বপ্নের বাড়ি।

ইলেকট্রিক্যালের গল্প

একটি বাড়ি মানে নিরাপদ আশ্রয়। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বাড়িতে ফিরেই সবাই বিশ্রাম নেয়। তাই নিজের আবাসটি হওয়া দরকার সব ধরণের সুযোগ সুবিধায় পরিপূর্ণ। বাড়ি তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো এর প্রয়োজনীয় সব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ করা। বাড়ির ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, এসি, হিটার, কম্পিউটার ইত্যাদি যেকোন ইলেকট্রনিক সুবিধা পাবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরী। এসব সংযোগের রয়েছে নানা ধরণ, আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও রয়েছে খেয়াল রাখার মতো বিষয়। চলুন জেনে নেই বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন।

গৃহস্থলির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালানোর জন্য পুরো বাসায় উপযুক্ত সতর্কতা ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করার প্রক্রিয়াকে “হাউজ ওয়্যারিং” বলে। চারটি বেসিক অংশ থাকে যেকোন হাউজ ওয়্যারিং-এর। যেমনঃ

১। কারেন্ট ক্যারিয়ার (তার ব্যবহার করা হয় এই কাজের জন্য)

২। কন্ট্রোলিং ডিভাইস (এই কাজের জন্য সুইচ ব্যবহার করা হয়)

৩। ইলেকট্রিক্যাল মাউন্টেড ডিভাইস

৪। প্রোটেক্টিভ ডিভাইস (সাধারণত মিনিয়েচার সার্কিট ডিভাইস ব্যবহৃত হয়)

বাড়ির কিছু স্থানে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করা সবচেয়ে জরুরী। এগুলোকে হাউজ ওয়্যারিং পয়েন্টস বলা হয়। যেমনঃ

  • সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্টঃ বাড়ির যেখান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের শুরু হয়, তাকেই সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্ট বলে। এই সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্ট স্থাপন করে তারপর তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হয়। এটি ছাড়া কোন ধরণের বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া বেআইনি।
  • এনার্জি মিটারঃ এই মিটারটি বাড়িতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসেব রাখে। এখান থেকেই বিদ্যুৎ বিল পরিমাপ করা হয়। সাধারণত সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্টেই এনার্জি মিটার বসানো হয়।
  • মেইন প্যানেলঃ এনার্জি মিটার থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক তার বেরিয়ে একটি প্যানেল বোর্ডে গিয়ে যুক্ত হয়। এই বোর্ড থেকেই পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ, অর্থ্যাৎ,“অন-অফ” করা হয়।
  • ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডঃ আবাসিক বাসা-বাড়িতে মেইন প্যানেলের পরই স্থাপন করা হয় এই বোর্ড। প্যানেল থেকে নির্গত সকল তার এখানে এসে ভাগ হয়ে যায়। বাড়ির কোথায় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সংযোগ লাগবে এবং কোন ডিভাইসে বা মেশিনে কোন তার যুক্ত হবে সেসব নির্ধারিত হয় এখান থেকে।

ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং সিস্টেমের যত ধরণ-ধারণ

কোন ধরণের ওয়্যারিং সিস্টেম বাড়িতে ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের আগে জেনে নেওয়া দরকার কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন –

  • ওয়্যারিং-এর মেয়াদ
  • ওয়্যারিং-এর ম্যাটেরিয়েল
  • ভবিষ্যতে সংযোগ বর্ধনের (লাইন এক্সটেনশন) এর সম্ভাবনা
  • কী পরিমাণ লোড নিতে হবে, অর্থাৎ কতগুলো ডিভাইস যুক্ত হবে
  • বিল্ডিং-এর কনস্ট্রাকশনের ধরণ
  • নিরাপত্তা
  • ওয়্যারিং-এর খরচ

সবচেয়ে বেশি যে ওয়্যারিং সিস্টেমগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিম্নরূপ –

১। পিভিসি কেসিং ওয়্যারিংঃ এক্ষেত্রে কাঠের পরিবর্তে প্লাস্টিক বা পিভিসি ব্যাটেন ব্যবহার করা হয়। উডেন ওয়্যারিং-এর মতই এটি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এবং কন্সট্রাকশন এর পর স্থাপন করা যায়।

২। কনডুইট ওয়্যারিংঃ প্রোটেকশন-এর মধ্যে দিয়ে ক্যাবল প্রবাহিত হলে তাকে বলে কনডুইট ওয়্যারিং। কনডুইট হলো টিউব, চ্যানেল অথবা পাইপ যার মধ্য দিয়ে তার স্থাপিত হয়। সারফেস কনডুইট ওয়্যারিং ছাদ ও দেয়ালের গায়ে স্থাপন করা হয়। আর কনসিলড কনডুইট ওয়্যারিং দেয়ালের ভেতরে ধাতব অথবা পিভিসি কাভারের ভেতর স্থাপিত হয়। এ ধরণের ওয়্যারিং টেকসই বেশি এবং নিরাপত্তাও বেশি দেয়। ফলে আগুন থেকে দূর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু দেয়ালের ভেজা ভাব বেড়ে গেলে তার ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেক্ষেত্রে শর্ট সার্কিট অথবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। এগুলো স্থাপনের খরচও বেশি। হেভি গেজ কনডুইট পাইপ ব্যবহৃত হয় দেয়ালের ওপরে সংযোগ দেবার জন্য। আর লাইট ওয়েট গেজ ব্যবহৃত হয় দেয়ালের ভেতরে স্থাপনের জন্য। তবে ঠিকঠাক মতো জোড়া না দেওয়া হলে ভেতরে পানি ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পিভিসি ধাতবের চাইতে ৫ গুণ বেশি বর্ধিত হয় এবং সেই জায়গা অবশ্যই রাখতে হবে। তাই -৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর ভেতর এর তাপমাত্রা রাখা উচিত।

৩। ফ্লেক্সিবল ওয়্যারিংঃ এই ধাতব কাভারগুলোকে মোচড়ানো বা বাঁকানো যায় প্রয়োজনমতো। ফলে  স্থাপন ও ব্যবহার সহজ।

সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং যেন সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়। তা নাহলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার বসতি হোক নিরাপদ ও আরামদায়ক।

 

নির্মাণ কাজে কি কি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ? এবং এদের ব্যবহার

নির্মাণ কাজের সাইটে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-

  • সাইট অফিস সরঞ্জামসমূহ যেমন- টেলিফোন, ক্যালকুলেটর, খাতা, পেন্সিল, ইঞ্জিনিয়ারের সাইট অর্ডার বই ইত্যাদি।
  • সার্ভে কাজের জন্য মেশিনসমূহ- লেভেল মেশিন, থিউডোলাইট মেশিন, মেজারিং টেপ-বড় ও ছোট ফিতার টেপ ইত্যাদি
  • মালামাল বহনের মেশিনসমূহ- ট্রাক, পিক-আপ, ভ্যান ইত্যাদি

নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতিসমূহ –

১) ছোট যন্ত্রপাতি –

ক)     পাথর এবং বালু মাপার ফেরা / বক্স প্রয়োজন,

খ)      কনক্রিট টেষ্টের জন্য সিলিন্ডার প্রয়োজন,

গ)      কনক্রিট স্লাম টেষ্ট পরীক্ষার জন্য স্লাম টেষ্ট কোণ (চোঙা) প্রয়োজন,

ঘ)      পানি মাপার জন্য মগ (৫ লিটার আয়তনের) প্রয়োজন,

ঙ)      পানির পাম্প,

চ)      ব্যালচা, কোদাল, সাপল, হাঁতুড়ি, কড়াই, ওলন, কর্ণি, বাশুলি ইতাদি।

২) বড় যন্ত্রপাতি- 

নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি :

মাটি খনন মেশিন :

এই ধরণের মেশিন মাটি খনন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত অল্প গভীরতা ও প্রস্থের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা কোদাল দিয়ে মাটি খনন করে। কিন্তু বড় বড় প্রজেক্টে অর্থাৎ, যেখানে অনেক গভীরতার মাটি কাটতে হয় সেক্ষেত্রে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন ধরণের মাটি খননকারী যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে –

             স্ক্র্যাপার (Scraper)

             পাওয়ার শোভেল (Power Shovel)

             ড্রাগ লাইন (Drag Line)

 

মাটি দৃঢ়করণ যন্ত্র (Earth Compaction Equipment) :

মাটি দৃঢ়করণ যন্ত্রকে রোলার বলে। মাটি চাপানো, লেভেলিং করা ইত্যাদি কাজে রোলার ব্যবহৃত হয়। এটি বৈদ্যুতিক বা জ্বালানী শক্তিতে চলে।

বিভিন্ন ধরণের রোলার আছে । যেমন –

            স্মূথ হুইল, রোলার (Smooth Wheel Roller)

             শিপ ফুট রোলার (Sheep Foot Roller)

             নিউসেটিক টাবার (Pneumatictyned Roller)

             ভাইব্রেটর রোলার (Vibrator Roller )

 

মালামাল পরিবহন যন্ত্রপাতি (Hauling Equipment) :

নির্মাণ সামগ্রী, মালামাল পরিবহনের কাজে এ সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়।

এ সকল যন্ত্রের মাঝে রয়েছে –

             ট্রাক (Truck)

             ডাম্প ট্রাক (Dump Truck)

             ডাম্পার (Dumper)

             ক্যাবল ওয়ে (Cable Way)

             ট্রিপার (Tripper)

ব্যবহার :

১.            নির্মাণস্থলের বাহির থেকে মালামাল আনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

২.           নির্মাণস্থলের মাটি বা ধ্বংসাবশেষ স্থানান্তরিত করা হয়।

 

কনভেয়র (Conveyor) :

নির্মাণ প্রকল্পে অভ্যন্তরে নির্মাণ সামগ্রী বহন স্থানান্তরের জন্য কনভেয়র ব্যবহৃত হয়। অনেক বড় নির্মাণ কাজের পরিসরে নির্মাণ সামগ্রী অতি অল্প আয়াসেই কনভেয়রের সাহায্যে স্থানান্তরিত সম্ভব।

এটি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে –

             বেল্ট কনভেয়র (Belt Conveyor)

             শেকার কনভেয়র (Shaker Conveyor)

             স্ক্যাপার চেইন (Scraper Chain)

 

উত্তোলক যন্ত্র (Hoisting Equipment)  :

এসব যন্ত্রের সাহায্যে নির্মাণ সামগ্রী মালামাল উপরে উঠানো হয়। বড় প্রজেক্টে অথবা উঁচু বহুতল ইমারত নির্মাণ সামগ্রী, মালামাল উঠানামা করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

বিভিন্ন উত্তোলক যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে :

             পুলি (Pule)

             চেইন হোয়েস্ট (Chain Hoist)

             চেইন উইনচ (Chain Winch)

             ক্রেন (Crane)

 

ডিওয়াটারিং যন্ত্র (Dewatering Machine)

ইমারত, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ নির্মাণ খাতে মাটি কেটে গর্ত করতে হয়। সেক্ষেত্রে গর্তের ঢাল রক্ষার জন্য সেই স্থানকে শুষ্ক করতে হয়। নির্মাণ সাইটে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের এই যান্ত্রিক পদ্ধতি হলো ডিওয়াটারিং।

ডিওয়াটারিং এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা  হয়। যেমন :

             পরিখা ও সাম্প নির্মাণ (Construction of sumps & ditches)

             ডিপ ওয়েল সাম্প (Deep well sump)

             ডিপ ওয়েল ড্রেনেজ (Deep well Drainage)

             ওয়েল পয়েন্ট পদ্ধতি (Well point system)

             আনুভূমিক ড্রেনেজ পদ্ধতি (Horizontal Drainage System)

 

ব্যবহার :

১.            নির্মাণস্থল শুষ্ক  রাখবে পানি চুঁয়ানো (Seepage)  রোধ করে।

২.           খননকৃত ঢালের স্থায়িত্ব রোধ করে

৩.           গর্তের তলদেশের ভাঙ্গন রোধ করে

৪.           পিটিং ব্রেসিং (Sheeting & Bracing)  এর উপর পার্শ্বচাপ হ্রাস করে।

৫.           টানেলে বায়ুচাপ হ্রাস করে।

 

পাম্পিং যন্ত্র (Pumping Machine)  :

নির্মাণ কাজে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পাম্পের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। পাম্বের সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে পানি উত্তোলন করাকে বলে পাম্পিং ।

ব্যবহার :

১.            নির্মাণ কাজে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য

২.           ভিত্তির প্রাউটিং এর জন্য

৩.           রাস্কার ড্রামের ডিওয়াটারিং এর জন্য

 

চূর্ণকারী যন্ত্র (Machine)  :

কনক্রিট মিক্সিং এর জন্য বড় বড় পাথর, বোল্ডার, ইট ভেঙ্গে ছোট, সুষম আকার প্রদান করার জন্য চূর্ণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। বৃহদাকৃতির শক্ত পাথরকে চাপ প্রয়োগে নরম-মাঝারি আকৃতির পাথরকে আঘাত করে, সুরকি বা বালি তৈরী করা হয় ঘর্ষণের মাধ্যমে। সাধারণত, জ্য ক্রাশার (Jaw Crusher)  এর মাধ্যমে এটি করা হয়।

 

কনক্রিট মিক্সার মেশিন (Concrete Mixer Machine)  :

কনক্রিটের সকল উপকরণ (সিমেন্ট, বালু, খোয়া, পানি ইত্যাদি) একত্রে মিশ্রিত করে নির্দিষ্ট ঘনত্বের মিশ্রণ তৈরীর জন্য এই মেশিন ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে অত্যন্ত উন্নতমানের কনক্রিট তৈরী করা যায়।

মেশিনটি চালাতে ৩-৪.৫ অশ্বশক্তির পেট্রোল বা ডিজেল চালিত ইঞ্জিন বা ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহার করা হয়। ড্রামটি প্রতি মিনিটে ১৮-২০ বার ঘুরে।

ব্যবহারের উপকারিতা :

১.   এতে প্রস্তুতকৃত কনক্রিট মিশ্রণের প্রতিটি অংশে উপাদানগুলো সঠিক ভাবে মিশ্রিত হয় ফলে সুষম-সমসত্ত্ব মিশ্রণ পাওয়া যায়।

২.   বড় বড় ঢালাইয়ে একসাথে অনেক কনক্রিটের প্রয়োজন হয়। সেখানে এটি অধিক কার্যকর এটি ব্যবহারের কম লোক বলের প্রয়োজন হয়।

 

কনক্রিট উত্তোলক মেশিন (Concrete Hoisting Machine)  :

বড় প্রজেক্টে উঁচু ইমারতের নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ের সময় কনক্রিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরে উত্তোলন করা হয়। এতে ক্রেন, হোয়িস্ট বা স্কিপ ব্যবহার করা হয়।

এতে ডেরিক এবং মোবাইল ক্রেন থাকে। হুইলার ক্রেনের ২৪ মিটার বুম প্রায়  ৪০ টন মালামাল উঠাতে পারে।

 

ভাইব্রেটরী যন্ত্র (Vibratory Machine)  :

ঢালাইয়ের কাজে কনক্রিট স্থাপনের পর নির্দিষ্ট আকার দান করা হয়। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দৃঢ়করণ (Compaction)। এই কাজে ডাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়। যে কনক্রিটের ন্যূনতম  ৫%  শূন্যস্থান (Void)  থাকে, তার শক্তি (Strength)  প্রায় ৩০% কমে যায়।

 

প্রয়োজনীয়তা :

১.  কনক্রিটের মাঝ থেকে ভয়েড দূর করে কনক্রিটকে দৃঢ় করা

২.  সেগ্রিগেশন (Segregation)  হতে না দেওয়া

৩.  কনক্রিটকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদান করা

৪.  অল্প লোক বলের প্রয়োজন হয়। সমতল ও সুষম তলদেশ প্রদান করা বিভিন্ন ধরণের ভাইব্রেটর আছে, যেমন-হ্যান্ড কম্পাকশন রডিং (Rodding),  টেম্পিং (Temping)  এর সাহায্যে কম্পাকশন করা হয়।