বাড়ি দোতলা করবার পূর্বে মাথায় রাখতে হবে যে বিষয়গুলো

আপনার বাড়িটি যদি হয় একতলা, আর তার ভিত্তিপ্রস্তর যদি দোতলা বা আরো অধিক উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির উর্ধ্বমুখী গমনই শ্রেয়। এতে আপনার সীমিত জমির সদ্ব্যবহার হবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া থেকে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হবে।

তবে একতলা বাড়ির ওপর আরেকটি ছাদ দিয়ে ফেলা অতটা সহজ নয়, অন্তত ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তো নয়ই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, খরচ আর নির্মাণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একতলা বাড়ির ওপর দ্বিতীয় ফ্লোরের প্রসারণ কাজের জন্য অবশ্যই কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে।

আবহাওয়া

বাড়ির প্রসারণ পরিকল্পনায় সবার আগে ভাবতে হবে আবহাওয়া নিয়ে। নির্মাণকাজের জন্য সর্বদাই শুষ্ক মৌসুম মানানসই। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে হেমন্তের শেষ থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে ভালো সময়। হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়া সব কাজে তালগোল পাকানো কিংবা টানা বর্ষণে কাজ থমকে থাকার ঝামেলা এ সময়ে হয় না।

বাজারদর কাঁচামাল ক্রয়

আবহাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রেখে যদি দোতলা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপ হবে বাজার যাচাই করা। ছোটখাট বিষয়গুলো যদি ধর্তব্যের মাঝে না-ও আনা হয়, তথাপি বাড়ি নির্মাণের প্রধানতম কাঁচামালগুলো, অর্থাৎ ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের বাজার অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে।

এসব বাজার সম্পর্কে যেহেতু নিত্যদিন খবর রাখা হয় না, তাই ভুলভাল দামে ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি না আপনি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাজার দ্রুত ওঠানামা করে। মাসখানেকের ব্যবধানে আপনার বাড়ি নির্মাণের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন, বাজার অস্থিতিশীল থাকলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।

বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই ক্রয় শুরু করতে পারেন, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রতিটি কাঁচামাল আলাদা আলাদা দিনে একাধিক বিক্রেতার কাছে দেখার পর কিনতে হবে। ভালো কাঁচামাল বাড়ির নির্মাণকে ত্রুটিমুক্ত করে, বাড়ি টেকসই হয়।

বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা প্রণয়ন

একসময় নীচতলার ডিজাইন ধরে রেখেই উপরের দিকে বাড়ানো হতো বাড়ি। তবে এখন আর মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। নীচতলার নকশা হুবহু অনুকরণ না করে ভিন্নতা আনতে পারেন দ্বিতীয় তলায়, বিশেষ করে নীচতলায় বসবাসকালীন যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোর সমাধান তো আনা যায়ই।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। নকশা কতটা সৌখিন আর নান্দনিক হবে তা নির্ভর করবে পুরো কাজে আপনি কতটুকু ব্যয় করতে প্রস্তুত তার ওপর। দক্ষ কোনো স্থপতির সাথে পরামর্শ করে তাই নকশা প্রণয়ন করে ফেলুন; পরিচিত হলে আরো ভালো, এতে বাজেটের মাঝে সর্বোচ্চটা পাবার নিশ্চয়তা থাকে।

অপ্রত্যাশিতখরচের বাজেট আলাদা রাখুন

হ্যাঁ, বাড়ি নির্মাণকালে সর্বনিম্ন বাজেটে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করবার লক্ষ্য যেমন থাকবে, তেমনি মনে রাখতে হবে যে বাড়ির এক্সটেনশন একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ, এবং এ কাজে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক খরচ হবে। তাই মূল বাজেটের একটা অংশ সরিয়ে রাখুন অপ্রত্যাশিত যেকোনো খরচের জন্য, যা পরিকল্পনা তৈরির সময় দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই টাকা বাদে বাড়ির মূল কাঠামোর বাজেট করতে হবে।

নির্মাণআইন মাথায় রাখুন

নির্মাণকাজে সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত দিকটি হলো নির্মাণ-আইন। নির্মাণ-আইন মেনে চলা আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি আইন মেনে নির্মাণকাজ করলে কোনোপ্রকার আইনি জটিলতার সম্ভাবনাও থাকে না।

নিরাপত্তা সবার আগে

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে হবে। প্রথমত, যেহেতু আপনার বসবাসরত বাসার উপরেই প্রসারণ কাজ হবে, এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা। তাছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়। একদিকে প্রাণহানি কাম্য নয়, অন্যদিকে আইনি জটিলতায় পড়ে আটকে যেতে পারে পুরো নির্মাণকাজ। তাই প্রচলিত নিরাপত্তা আইন মেনে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেই নির্মাণকাজ শুরু করুন।

বিশ্বস্ত বিল্ডার (নির্মাতা)

বেশ কিছু কারণে বিল্ডার নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে সুনাম আছে এরকম বিল্ডার কিংবা আপনার বা আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরিচিত বিল্ডারের কাছেই যান। এক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয়ে সঠিক পরামর্শ বিল্ডারদের নিকটই পাবেন, বাড়ির নকশায় কোনো ত্রুটি থাকলে, কিংবা উন্নতির সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টিও তারা আপনার দৃষ্টিগোচর করতে পারবে। আদৌ যদি পরিচিত বিল্ডার না থাকে, তাহলে একাধিক বিল্ডারের সাথে কথা বলুন, আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা জানিয়ে তাদের নির্মাণপ্রক্রিয়া, কাল (নির্মাণকাজের একটি টাইমলাইন) এবং বাজেট জানাতে বলুন। এরপর তাদের পরিকল্পনা তুলনা করে নিজেই ধারণা করতে পারবেন কোনটি ভালো হবে।

একটি ইনস্যুরেন্স করে ফেলুন

সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর একটি ইনস্যুরেন্স করিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিন। নির্মাণকাজ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পূর্বের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। তথাপি সাবধানতার মার নেই। যেকোনো নির্মাণকাজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্মাণ শুরুর পূর্বেই করে ফেলুন একটি ইনস্যুরেন্স, যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতি সামাল দেয়া যায়।

বাড়ি তৈরিতে খরচ নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

ঢাকা বা বাংলাদেশের যেকোনো বড় শহরে একটি বাড়ির স্বপ্ন যেন এদেশের বহু মানুষের আজীবন লালিত সাধ। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই সীমিত। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পরিচালিত একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, ঢাকা শহরের বিশাল জনসংখ্যার শতকরা ৮০ জন এখনও ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। গত দুই দশকে ফ্ল্যাটের দাম ৪ থেকে ৬ গুণ বাড়লেও চাহিদা কমেনি একটুও। বরং প্রতি বছর ১ লক্ষ ২০ হাজার বাসার চাহিদার বিপরীতে তৈরি হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার বাসা। সুতরাং কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলে দেওয়া যায়, খরচের হিসেবটা একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশের আরও বহু মানুষ নিশ্চয়ই নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণে আগ্রহী হবেন।

কিন্তু বাড়ি তোলার প্রশ্নে আইনি এবং কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতার সাগর পার হয়ে যখন কোটি টাকার হিসেব ধরিয়ে দেওয়া হয়, তখন অনেকেই চরম নিরুৎসাহিত হয়ে যান। প্রথমেই মেনে নিতে হবে যে, ঠিকভাবে বাড়ি নির্মাণ একটি ব্যয়সাধ্য প্রক্রিয়া। তাই একটি ভালো পরিমাণ খরচের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়াটাই বাড়ি তৈরির প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু একইসাথে সঠিক পরিকল্পনা, তদারকি এবং স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বাড়ি তৈরির খরচের অনেক খাতেই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা খুবই সম্ভব। 

বাড়ি নির্মাণের সময় মূলত তিনটি পর্যায়ে খরচ কমানো সম্ভব-

১. নির্মাণ পরিকল্পনা,

২. নির্মাণ তদারকি এবং

৩. রক্ষণাবেক্ষণ।

নির্মাণ পরিকল্পনা

বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনার সময় আপনার মূলত তিনটি জিনিস দরকারি। বাড়ির নকশা, নির্মাণ খরচের হিসেব (Specification) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। এক্ষেত্রে অবশ্যই IAB লাইসেন্সধারী স্থপতি, নূন্যতম বিএসসি পাস করা প্রকৌশলী এবং লাইসেন্সধারী নির্মাতা নিয়োগ করুন।

অনেকেই তাদের ফি-র কথা চিন্তা করে খরচ কমাতেই হাতুড়ে পেশাজীবিদের সহায়তা নেন বা নিজেই নকশা ও নির্মাণ করতে যান। এতে প্রাথমিকভাবে খরচ বেঁচে যাচ্ছে মনে হলেও এমন অদক্ষ লোকেরা আপনার চাহিদার কথা বিবেচনা না করে কোনোভাবে একটা নকশা করে দিয়ে আপনার অর্থ নিয়ে তো যাবেনই, ওই বাড়িতে থাকতে গেলে আলো-বাতাসের অভাবে আপনাকে গুণতে হবে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসের বিল। এছাড়া প্রাথমিক পরিকল্পনায় তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার থেকে আপনার সামাজিক জীবন ও ভবনের  নকশার অংশ- এগুলোর অভাবে বিনোদন লাভ থেকে শুরু করে ছোট একটা অনুষ্ঠান আয়োজনেও আপনাকে গুণতে হবে অতিরিক্ত অর্থ। 

অন্যদিকে FAR ও MGC সংক্রান্ত নিয়ম মেনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেও খরচের বিপরীতে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করবে প্রশিক্ষিত হাতের পেশাদার নকশা। কিন্তু ভুল মানুষের হাতের নকশায় স্ট্রাকচারে ভুল (যেমন অতিরিক্ত কলাম কিংবা দরকারের চেয়ে কম স্ট্রাকচারাল সাপোর্টের) পরিকল্পনাগতভাবে আপনাকে বিশাল ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারে। এছাড়া অনুমোদনের ক্ষেত্রেও দক্ষ আইনজীবী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে কাজ করুন। এতে অযাচিত খরচ যেমন কমাতে পারবেন তেমনি আইনগতভাবেও থাকবেন নিরাপদ। 

নির্মাণ তদারকি

নির্মাণ পরিকল্পনা শেষ হয়ে গেলে শুরু হবে নির্মাণ। এখানে আপনি নিজে তদারকিতে সংযুক্ত হবেন- সেটা অবশ্যই কাম্য। কিন্তু অবশ্যই আপনার সাথে থাকতে হবে স্থপতির দেওয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ স্পেসিফিকেশন। এটি আপনাকে প্রতিটি উপাদানের দাম ও খরচ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবে এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে একজন লাইসেন্সধারী ও দক্ষ কন্ট্রাক্টরের সহায়তা নিলে অনেক সহজেই এই কাজগুলো করা সম্ভব। তদারকির ক্ষেত্রে যেসব জিনিস খেয়াল রাখতে হবে-

১. নির্মাণসামগ্রীর বাজারদর,

২. পরিবহন খরচ ও

৩. শ্রমিকের মজুরি

এসবের প্রতিটি ব্যাপারেই একজন নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি খেয়াল রাখুন যেন শ্রমিকদের যথাযত শিফট এবং নিরাপত্তার দিকে আপনার নজর থাকে। কারণ, যেকোনো দুর্ঘটনা শুধু মানবিক ক্ষতি করে সেটাই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও আপনার নির্মাণের জন্য হতে পারে হুমকি। 

রক্ষণাবেক্ষণ

ভবন রক্ষণাবেক্ষণ হলো নির্মাণের চেয়ে অনেক বড় সময় জুড়ে চলা প্রক্রিয়া। এছাড়া অন্দরসজ্জা (Interior) বা সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে, কিংবা প্রয়োজন হতে পারে আপনার পরিবারের চাহিদা অনুসারে নির্মিত ভবনের পরিবর্তনও (Retrofit)। নির্মাণে স্থপতির সহায়তা নেওয়া এখানেও আপনাকে দেবে খরচ বাঁচানোর সুযোগ।

ভবনের নকশা যদি BIM পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে ভবনের প্রতিটি উপাদান Data আকারে জমা থাকে এবং ভবনের পারফর্মেন্স আগে থেকেই যাচাই করা যায়। এই উপায়ে আপনার ভবনের কোথায় সমস্যা বা কী ধরনের পরিবর্তন কত সময় পর হবে তা যেমন আগে থেকে যাচাই করা যায়, তেমনি সঠিক সময়ে এসে আবারো যেখানে নকশা শেষ করা হয়েছিল সেখান থেকেই অতি স্বল্প সময়ে এবং কোনো সার্ভে খরচ ছাড়াই যেকোনো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা সম্ভব।

এই তিনটি ধাপ ছাড়াও কিছু সিদ্ধান্তে যুগোপযোগী ও স্মার্ট হলেই আপনি আরও খরচ বাঁচাতে পারেন। যেমন-

১. দেশীয় নির্মাণ সামগ্রী, যেমন- দেশে নির্মিত ইট ও সিমেন্ট এবং সম্ভব হলে পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন- মাটি, কাঠ ও বালি ব্যবহার করুন। এতে পরিবহন খরচ, ট্যাক্সসহ বেশ কিছু বিষয়ে আপনার খরচ কমে যাবে। শুধু নির্মাণেই নয়, অন্দরসজ্জাতেও শুধু চাকচিক্যের জন্য অনেকে বিদেশি টাইলস এবং স্যানিটারি সামগ্রী ব্যবহার করেন। অনেক কম খরচে প্রায় সমমানের দেশীয় সামগ্রী পাওয়া যায়, যা ব্যবহারে অনেক বেশি সাশ্রয় সম্ভব।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে বাসা নির্মাণ করলে স্থপতিকে দিয়ে নকশা করানো আপনার দায়িত্ব। তিনি আগে থেকেই আপনাকে দূর্যোগরোধী উপায়ে নকশা করে দেবেন। এতে করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ পরবর্তী সংস্কারেও আপনার খরচ কমে যাবে। এর সাথে কিছু বেশি খরচ হলেও সূর্যশক্তির প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পদ্ধতি, টয়লেটের বেসিনের পানি ফ্ল্যাশে পুনঃব্যবহার করার মতো প্রযুক্তিও ভবনে যোগ করে নিন। এতে করে মাসে মাসে বিলের পরিমাণ যত কমবে, তা নির্মাণের বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ বছরে পূরণ করে আপনাকে দেখাবে লাভের মুখ। 

৩. নির্মাণে প্রথম শ্রেণীর ভালো উপাদান ব্যবহার করুন। যেমন- প্রথম শ্রেণীর ইট যদি যথাযথ মানের মর্টারের সাথে ব্যবহার করা হয় তাহলে ইটের দেয়ালে শুধু মোমের আবরণ দিলেই চলে। প্লাস্টার না করেই আধুনিক মানের দেয়াল পাওয়ায় ভবন দেখতে যেমন সুন্দর হয়, তেমনি খরচও সাশ্রয় হয়।

৪. ভবনের ভেন্টিলেশনের জন্য প্রাকৃতিক উপায়ের চর্চা করতে উৎসাহী হোন। প্রচুর জানালা, দরজা, ভেন্টিলেটর দিতে কার্পণ্য করবেন না। এতে করে এয়ার কন্ডিশনের পেছনে খরচ যেমন কমবে, তেমনই সলিড দেয়ালের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ইট ও কংক্রিটের খরচও কমে আসবে। নির্মাণ শেষে কম বিদ্যুৎ বিলও আপনার সাশ্রয়কে তরান্বিত করবে।

৫. দরজা-জানালায় দামী কাঠের পরিবর্তে বাইরের দেয়ালে স্টিল, অ্যাংগেল ফ্রেম এবং ধাতব শিট ব্যবহার করা যায়। বাড়ির ভেতরের দরজা দামী কাঠ দিয়ে না বানিয়ে পি.ভি.সি. বা ফ্লস কাঠের তৈরি পাল্লা ব্যবহার করে ব্যয় কমানো যায়। এছাড়া অন্দরসজ্জায় বোর্ডের ব্যবহার ও খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আপনার ইন্টেরিয়র যদি আধুনিক ও মিনিমালিস্টিক হয় সেক্ষেত্রে খুব কম খরচে অকৃত্রিম (Raw) এবং অল্প বার্নিশের রুচিশীল সজ্জাও করা খুবই সহজ।

৬. নির্মাণের শুরুতেই সাইটে বাউন্ডারি তৈরি করে ফেলুন। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি জান-মালের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণ কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা (কাজের অগ্রগতি), সাইটে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সাইটে সহজ প্রবেশ পথ তৈরি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা সহজ হবে। এর প্রতিটিই আপনার খরচ কমাতে পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে। 

সবশেষে, নির্মাণের ক্ষেত্রে চিন্তা করুন দীর্ঘমেয়াদী। অল্প কিছু খরচ বাঁচাতে বেআইনি, ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা অদক্ষ লোকের পরামর্শে কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। এধরনের পদক্ষেপ কিছু সংক্ষিপ্ত খরচ ঠেকিয়ে রাখলেও ভবিষ্যতে ওই টাকার কয়েকগুণ বেশি খরচের শঙ্কা তৈরি করে রাখে, যা আপনাকে কোনো না কোনো সময় বহন করতেই হবে। 

বাড়ি নির্মাণ করবেন: কত খরচ পড়বে?

“আমি একটি বাড়ি নির্মাণ করতে চাই। বলতে পারেন কেমন খরচ পড়বে?” এই প্রশ্নটি নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে প্রায় প্রতিদিনই শুনতে হয়। একটি বাড়ি তৈরিতে খরচ কত হবে এ সম্পর্কে সরাসরি একটি উত্তর দেয়া সবসময়ই কঠিন।

কারণ, ভবন নির্মাণ একটি শিল্প যেখানে অনেক বিষয়ই একসাথে কাজ করে। জমির মাপ, ভবনের নকশা, কত বর্গফুট জায়গা, সাইটের অবস্থা ও অবস্থান, উপকরণের সহজলভ্যতা ও পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি নানা কারণে খরচ পরিবর্তন হতে পারে। 

তবে ভবন তৈরি করতে হলে আপনাকে সকল দরকারি জমিসংক্রান্ত কাগজ ও সার্ভেসহ প্রথমে যেতে হবে স্থপতির বা স্থাপত্য ফার্মের কাছে। তারা আপনাকে নকশা ও খরচের প্রাথমিক হিসাব প্রদান করবেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ও সরকার অনুমোদিত নকশা নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা ফার্ম থেকে পুরকৌশল সংক্রান্ত নকশা ও বাজেট নির্ধারণ শেষে আপনি নির্মাণে হাত দিতে পারবেন।

এখন স্থপতি ও প্রকৌশলীর ফি এবং অনুমোদনের ফি প্রদানের পর আপনি নির্মাণ বাজেটকে বিভিন্ন খাতে ভাগ করতে পারেন। এই খাত এর আনুপাতিক হার সম্পর্কে ধারণা দেয়া সম্ভব।

বিভিন্ন খাত অনুসারে আপনার নির্মাণ বাজেট খরচের শতকরা হিসাব

১. ভিত্তি ও কাঠামো = ৩৫%

২. ইটের কাজ = ৬%

৩. ফ্রেম ও কাঠের কাজ = ৫%

৪. ধাতব কাজ = ২%

৫. পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ = ৬%

৬. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি = ৭%

৭. প্লাস্টার = ৪%

৮. টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ = ৬%

৯. স্নানঘর ও টয়লেটের সাজসজ্জা = ৩%

১০. অ্যালুমিনিয়াম ও জানালার ফ্রেমিংয়ের সাজসজ্জা = ৪%

১১. কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি (লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশান)= ১০%

১২. রঙের কাজ = ৩%

১৩. বিবিধ পুরকৌশলজনিত কাজ = ৬%

১৪. নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল = ৩%
___________________________________________________________

মোট খরচ  = ১০০%

এখন যদি আমরা প্রতিটি খাতে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্মাণ সংস্কৃতিতে একটি ছয়তলা বাড়ির কথা চিন্তা করি (যা ৩, ৫ বা ৭ কাঠা জায়গার উপর নির্মিত হবে) তাহলে এর বিভিন্ন খাতকে আরো বিস্তারিতভাবে খরচ সাপেক্ষে নিরুপণ করা যায়। সেটা অনেকটা এরকম-

ভিত্তি ও কাঠামোগত খরচ


– ফুটিং ও কলামের ভিত্তিমূলের কাজ = ২০%

– গ্রেড বীম ও ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংকের উপরের স্ল্যাব = ৫%

– বেজমেন্ট-এর কলাম ও স্ল্যাব = ৪%

– ১ম ফ্লোরের স্ল্যাব = ৯%

– সাধারণ ফ্লোরের কলাম (৫x৩%) = ১৫%

– দ্বিতীয় তলা থেকে বাকি ফ্লোর সহ ছাদের স্ল্যাব (৫x৮) = ৪০%

– ছাদের কাঠামোগত খরচ = ৭%
____________________________________

ভিত্তি ও কাঠামোর জন্য মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৩৫% যেভাবে খরচ হবে।)

ইটের কাজে খরচ

– বেজমেন্ট এ ইটের কাজ = ৬%
– প্রথম ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– দ্বিতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– তৃতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– চতুর্থ ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– পঞ্চম ফ্লোরে ইটের কাজ = ১৮%
– ছাদে ইটের কাজ= ৪%
____________________________________

ইটের কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

কাঠের কাজ বাবদ খরচ

– দরজার ফ্রেম = ৪০%
– মূল দরজার শাটার = ১৫%
– পারটেক্সের দরজার শাটার= ৩৫%
– পোষ্য দরজা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি = ১০%
____________________________________

দরজার কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৫% যেভাবে হবে।)

ধাতব কাজ বাবদ খরচ

– জানালার গ্রিল = ৫৫%
– বারান্দার রেলিং = ২০%
– সিঁড়ির রেলিং = ১০%
– মূল ফটক ও সকল ধরনের সেফটি গ্রিল = ১৫%
____________________________________

ধাতব কাজে পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ২% যেভাবে খরচ হবে।)

পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ

– উলম্ব পিভিসি লাইন ও সকল ডাক্ট এর খরচ = ২৫%
– জি আই লাইনের কাজ = ৩০%
– ফিক্সচার ও ফিটিং = ৪০%
– নিচতলার ফ্লোর এর পয়ঃনিষ্কাশনের আলাদা খরচ = ৫%
____________________________________

পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের খরচ = ১০০% ( পুরো নির্মাণ কাজের ৬% যেভাবে হবে।)

বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ

– স্ল্যাবের ভেতর দিয়ে লাইন বহনের খরচ = ১০%
– দেয়াল ও বৈদ্যুতিক বক্সের ভেতর লাইন বহনের খরচ = ১৫%
– তার সংক্রান্ত কাজ = ৫৫%
– সুইচ ও সকেট বাবদ খরচ = ২০%
____________________________________

বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৭% যেভাবে খরচ হবে।)

প্লাস্টার বাবদ খরচ

– সিলিং-এর প্লাস্টার = ২০%
– ভেতরের দেয়ালের প্লাস্টার = ৫০%
– বাইরের দেয়ালের প্লাস্টার বা ইটের ফেসিং ও পয়েন্টিং = ৩০%
____________________________________

প্লাস্টার বাবদ পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)

টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ

– সাধারণ ফ্লোর ও বারান্দার টাইলস = ৭৫%
– সিড়ি, লিফটকোর এর দেয়াল ও লবির টাইলস = ২০%
– বেজমেন্ট এর লিফটের লবি, দেয়াল এবং লবির টাইলস = ৫%

____________________________________

টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

স্নানঘর ও টয়লেট এর সাজসজ্জা সংক্রান্ত খরচ

– স্নানঘরের দেয়াল = ৬০%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ২০%
– স্নানঘরের মেঝে = ৯%
– স্নানঘরের কাউন্টার টপ= ৪%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ৩%
– কিচেন কাউন্টারের টপ =৪%

____________________________________

সাজসজ্জা বিষয়ে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ

– স্লাইডিং জানালার বাইরের দিকের ফ্রেম = ৪০%
– গ্লাসের শাটার ও স্লাইড করার ফ্রেম = ৩০%
– বারান্দার স্লাইডিং উপকরণ = ২০%
– টয়লেটের উঁচু জানালা = ৫%
– সাধারণ এরিয়া এর উপকরণ = ৫%
____________________________________

অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)

কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ

– লিফট = ৫০%
– জেনারেটর =২৫%
– বৈদ্যুতিক সাবস্টেশান = ২০%
– অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি ও ইন্টারকম সংযোগ = ৫%
____________________________________

কেন্দ্রীয় সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ১০% যেভাবে খরচ হবে।)

রঙের কাজ বাবদ খরচ

– পুটি লাগানো পর্যন্ত খরচ = ৪০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ প্রথম আস্তর = ২০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ পরের আস্তর= ১৫%
– বাইরের রঙ ও মোমের কোটিং = ২৫%
____________________________________

রং বাবদ মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

বিবিধ পুরকৌশল সংক্রান্ত কাজ

– সীমানার দেয়াল সংক্রান্ত খরচ = ৩০%
– টেরাস ও ছাদের পেভিং সংক্রান্ত খরচ= ১৫%
– ছাদে বাগান, ডেভেলপারের ব্যবসায়িক অলংকরন = ৪%
– বেজমেন্ট লেভেলের বিবিসি = ১৪%
– বেজমেন্ট এর পেভমেন্ট ও জমির ভেতর ফুটপাথ সংক্রান্ত কাজ = ১০%
– লিন্টেল, ড্রপ স্ল্যাব, এফ স্ল্যাব ইত্যাদি= ২০%
– তারের ট্রে = ১%
– ডাক্ট ও সিলিং এ তারের উপরে কাভার ও তার লুকানোর খরচ= ৪%
– অভ্যর্থনা ডেস্ক ও চিঠির বাক্স = ২%
____________________________________

বিবিধ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল

– বিদ্যুৎ বিল (ডেসা ও ডেসকোর রেট অনুসারে) = ৩৫%
– গ্যাসের বিল (তিতাস এর রেট অনুসার) = ২০%
– পানির বিল (ওয়াসা এর রেট অনুসারে) = ১৫%
– অন্যান্য বিল = ৩০%
____________________________________

সম্পূর্ণ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

সাধারণত ঢাকায় অঞ্চলভেদে প্রতি স্কয়ার ফুট নির্মাণ কাজে আবাসিক ভবনে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে নকশা ও এর খুঁটিনাটি অনুসারে এটি অনেক ওঠানামা করতে পারে।

বাড়ি নির্মাণ একটি দীর্ঘ ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এজন্য খরচের হিসাব সম্পর্কে শুরুতেই পরিষ্কার ধারণা নিন। আপনার স্থপতিকে শুরুতেই আপনার বাজেট সম্পর্কে ধারণা দিন ও চাহিদার কথা পরিষ্কারভাবে জানান। শুধুমাত্র এভাবেই আপনি নির্ধারিত বাজেটে আপনার পছন্দের বাড়ি পেতে পারেন।

একই বাড়ির খরচ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কেন?

কনক্রিট তৈরীর খরচঃ

আমরা বাংলাদেশে কংক্রিট তৈরি করার জন্য স্টোন চিপসের পাশাপাশি ব্রিক চিপসও ব্যবহার করে থাকি। তবে স্টোন চিপস দিয়ে তৈরি কংক্রিটের খরচ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি কারণ স্টোন চিপসের প্রতি ঘনফুটের দাম ব্রিক চিপসের চেয়ে বেশি। ফলে স্টোন চিপস দিয়ে তৈরি বিল্ডিংগুলোর খরচ স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি হবে।

ভবন তৈরীর পর আরোপিত ওজন (লোড)

আমরা প্রতিনিয়ত তুলনা করতে ভালোবাসি। ওমুক বিল্ডিংয়ের খরচ এত কম কিন্তু আমার বিল্ডিংয়ের খরচ কেন এত বেশি? আরোপিত ওজন (লোড) এক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্টর। কারণ অতিরিক্ত আরোপিত ওজন যেটা আপনার ভবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সেটা হিসেবে নিতে হয় বলেই স্বাভাবিকভাবেই বিল্ডিংয়ের ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন হয় ফলে অনেক সময়ই খরচ বেড়ে যায়।

বাগান

অনেকই বাড়ির সৌন্দর্যের জন্যে ছাদে বাগান করতে চান। এক্ষেত্রেও বিল্ডিং আরোপিত লোড বাড়ছে। সাথে ছাদে ডেড লোডের পাশাপাশি লাইভ লোডও বৃদ্ধি পায়। ফলে সেফ বিল্ডিং করতে গেলে খরচ বাড়ছে।

কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে আপনার বাড়ি

আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি, অনেক বাসা আসলে রেসিডেন্সিয়াল ব্যবহারের জন্যে তৈরি করা হলেও পরে সেখানে ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু একটি রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংয়ের লোডিং আর ফ্যাক্টরির লোডিং এক নয়। এটি নির্ভর করে বিল্ডিংয়ের টাইপ এবং ব্যবহারের উপর। যেমন রিডিং রুম এবং স্ট্যাক করে রাখা রিডিং রুমের লোড একরকম হবে না, চার্চ এবং মসজিদ একই লোডিংয়ে তৈরি হয় না, রিটেইল মার্কেট এবং হোলসেল মার্কেট একই লোডিংয়ে তৈরি হয় না। তাই একটি রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং যে লোডিং ধরে তৈরি হবে, স্বাভাবিকভাবেই একটি গার্মেন্টস বিল্ডিং তার চেয়ে বেশি লোডিং ধরেই তৈরি করতে হবে। এটির উপরও বিল্ডিংয়ের খরচ নির্ভর করে।

ভূমিকম্প এলাকা

বিএনবিসি ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ অনুযায়ী ভূমিকম্প এলাকাগুলোকে তিন ভাগে এবং সাম্প্রতিক ২০১৭ অনুযায়ী চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিল্ডিংয়ের খরচ এটির উপরও নির্ভর করে। কম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা থেকে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বিল্ডিংয়ের খরচ বেশি হবে।

ঘনবসতি এলাকা নাকি নদীর ধারে বাড়ি

এটিও বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ। ঘনবসতি এলাকায় বাতাসের প্রেসারের চেয়ে সমুদ্র বা নদীর ধারে বাতাসের প্রেসার বেশি হবে। বেশি প্রেসার সহায়ক বিল্ডিং করতে গেলে খরচ বাড়বে।

বিল্ডিংয়ের ওকুপেন্সি গুরুত্ব

বিএনবিসিতে বিল্ডিংয়ের ওকুপেন্সি ভাগ করা হয়েছে বিল্ডিংয়ের গুরুত্বের উপর। যেমন হসপিটাল, স্লাইকোন সেন্টার, টক্সিক বা কেমিক্যাল ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি বিল্ডিংকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে এসব বিল্ডিং করতে নরমাল বিল্ডিংয়ের চেয়ে খরচ বাড়বে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিল্ডিং

ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিল্ডিংগুলোতে নরমাল বিল্ডিংয়ের চেয়ে স্পেশাল ডিটেইলিং করতে হয়। যা করতে গেলে বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়বে।

মাটির ধারণক্ষমতা

বিল্ডিংয়ের সমস্ত লোড মাটিতে স্থানান্তর করলে মাটি যদি সেই লোড নিতে না পারে তবে সেই বিল্ডিং ভেঙে পড়তে পারে। মাটির ধারণক্ষমতা একেক জায়গায় একেক রকম। ফলে একেক জায়গায় একেক রকম ফাউন্ডেশন লাগে। ফলে নরমাল ফুটিংসহ বিল্ডিংয়ের চেয়ে পাইল দিয়ে বিল্ডিং করতে গেলে বা মাটির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে ট্রিটমেন্ট করে বিল্ডিং করলে খরচ বাড়বে।

লবণাক্ত এলাকা

লবণাক্ত এলাকায় কংক্রিটের ক্লিয়ার কভার বাড়াতে হয়। আর ক্লিয়ার কভার বাড়লে মেম্বারের ক্যাপাসিটি কমতে থাকে বিধায় সাইজ বাড়াতে হয়। ফলে বিল্ডিংয়ের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিল্ডিং কনফিগারেশন

অনেক জায়গায় বিল্ডিং লম্বায় অনেক কিন্তু প্রস্থে সে তুলনায় অনেক কম হয়। আবার অনেক জায়গায় কংক্রিট ওয়াল বা শেয়ার ওয়াল ব্যবহার করতে হয়। এধরণের বিষয়গুলোর জন্যও বিল্ডিংয়ের খরচ বেড়ে যায়।

বিল্ডিং ব্যবহারের উপযোগী কিনা

অনেক বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের পরপরই বীম বা স্লাবে অনেক সময় ডিফ্লেকশন দেখা দেয়। আবারো অনেক সময় অনেকদিন পরে গিয়েও ডিফ্লেকশন হয়। এধরনের বিল্ডিং ব্যবহার করা আরামদায়ক না এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব যেন না হয় সেভাবেই ডিজাইন করা উচিত। আর এটি করতে গেলে বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়ে। আবার ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিং যদি অধিক পরিমাণে কাঁপে তবেও সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকে না। ফলে এটি রোধ করতে খরচ বাড়ে।

কম খরচে বাড়ি

নিজের একটা বাড়ি তৈরির স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে। কিন্তু সেই বাড়ি তৈরির খরচ নেহায়েৎ কম না। অনেকেরই সারাজীবনের পুঁজি একত্র করেও একটি দালান বাড়ি গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই চান কংক্রিটের বাড়ি না বানিয়ে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ এক বসতি গড়তে। স্বল্প ব্যয়ে মনের মতো করে বাড়ি তৈরি করা অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু কিছু সেজন্য প্রয়োজন টেকনিক এবং বিচক্ষণতা। আসুন জেনে নেই কী কী উপায় অবলম্বনে স্বল্প ব্যয়ে বাড়ি তৈরি করতে পারবেন।

একটুখানি কৌশল আর ইচ্ছাশক্তি

প্রাথমিক যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন, সেগুলো হলো –

  • বাড়ির নকশাঃ চেষ্টা করবেন বাড়ির নকশা যতটা সম্ভব সাদামাটা রাখতে। কারণ যত বেশি কারুকাজ আর নকশা, উপাদান তত বেশি খরচ হবে, খরচও একইসাথে বাড়বে। আয়তাকার, বর্গাকার অথবা যেকোন জ্যামিতিক শেপের স্থাপনায় খরচ কম পড়বে।

  • পরিকল্পনা ছাড়া কর্মসূচি নয়ঃ যেকোন কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায় যদি পরিকল্পনা ঠিকঠাক করা হয়ে থাকে। আপনি যদি আগেই হিসেব না করে রাখেন কেমন বাড়ি বানাবেন, কোথায় কী পরিমাণ র ম্যাটেরিয়েল খরচ হবে, তাহলে কাজে নামার পর জলের মতো টাকা বেরিয়ে যাবে কিন্তু মনের মতো বাড়ি আর বানানো হবে না।
  • ফ্লোর এরিয়া ও স্পেস প্ল্যানিংঃ স্কয়ার কাট ফ্লোর ডিজাইনে জায়গা কম নষ্ট হয়। এছাড়া ইদানিং ওপেন স্পেস-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এতে দেয়াল ও কলাম বা পিলারের জন্য নষ্ট হওয়া জায়গা বেঁচে যায়। আলো-বাতাসও বেশি আসে। ফলে ছোট জায়গায় বানানো বাড়িকেও বড় আর উন্মুক্ত লাগে। তবে এর ডিজাইনের জন্য কিছু বাড়তি বীম ব্যবহারের দরকার পড়ে ছাদে। এসবের খরচ এবং জায়গা খরচ থেকে বাঁচতে চাইলে কৌশল করে কিছু কলাম সেট করা যেতে পারে বাড়ি ভেতর। তবে সেগুলোও এমনভাবে সেট করতে হবে যেন বাসার ভেতরের খোলা আবহটা নষ্ট না হয়।

  • ম্যাটেরিয়েল সিলেকশনঃ কম খরচে বাড়ি বানানোর অন্যতম কৌশল হলো কম দামী ম্যাটেরিয়েল সংগ্রহ করা। ব্যবহৃত কিচেনওয়্যার অনলাইন শপ-এ অর্ডার করলে খুব কম খরচে পাওয়া যায়। এছাড়া মার্চেন্টদের সাথে ভালো দামাদামি করতে পারলে একসাথে অনেককিছুই কিনে নেওয়া যায় স্বল্প খরচে। বাড়ি বানানোর উপাদান হিসেবে স্বল্প খরচে যে ম্যাটেরিয়েলগুলো পাবেন সেগুলো হলো –
    • প্রিফেব্রিকেটেড প্যানেলঃ এগুলো সাধারণত কাঠের ফ্রেম হয়। আগে থেকেই বাড়ির আকারে তৈরি থাকে। তাই শ্রমিক খরচ এবং সময় ব্যয় কমে আসে। এমনকি ওয়েদারের কারণে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাবারও সম্ভাবনা থাকে না। ঘরের সেকশনগুলোতেও ফিটিং-এ কোন সমস্যা হয় না কারণ সব কাজ আগে থেকেই করা থাকে। ইদানিং যে প্যানেলগুলো নকশা করা হয়, সেগুলো দেখতে প্রিফেব্রিকেটেড লাগে না।
    • কংক্রিট শিটসঃ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়েলগুলোর মাঝে কংক্রিট শিট ইদানিং দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর দামও কম, দেখতেও স্টাইলিশ। পাশাপাশি, এগুলো দীর্ঘস্থায়ী, ওয়াটারপ্রুফ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধী এবং ইনসুলেশন ঘটায়। সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয় হলো এটি অগ্নিকান্ড হওয়া থেকে বাঁচায়।

  • স্টোন ক্ল্যাডিংঃ পাথরে তৈরি বাড়ি দেখতে দারুণ হলেও নিশ্চয়ই স্বল্পব্যয়ী নয়। সে কারণে পাথরের প্রলেপ ব্যবহার করা যেতে পারে বাড়ির দেয়ালের ওপর। এতে ম্যাটেরিয়েলের খরচও কম পড়ে আর আলাদা করে শ্রমিকেরও দরকার পড়ে না, নিজে থেকেই করা যায় একটু চেষ্টা করলে। রাস্টিক, মডার্ন ইত্যাদি বিভিন্ন স্টাইলের স্টোন ক্ল্যাডিং হয়। ধরণের ওপর ভিত্তি করে এর পুরুত্বে পার্থক্য ঘটে।
  • শিপিং কনটেইনারঃ ব্যবহৃত শিপিং কনটেইনারগুলো কম খরচে পাওয়া যায়। একাধিক কনটেইনার একত্রিত করে বেশ বড়সড় বাড়ি বানানো সম্ভব। এগুলো দেখতে স্টাইলিশ আর স্থাপনও সহজ।

  • টিম্বারঃ টিম্বার হলো সবচেয়ে ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ বাড়ি বানানোর উপকরণ। তবে খেয়াল রাখবেন পুরনো টিম্বার বেশি মজবুত ও টেকসই। আর এটি পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। তাই এটি স্বল্প ব্যয়ে বাড়ি বানানোর জন্য একটি দারুণ চয়েস হতে পারে।

বাড়ি বানাবার প্রজেক্টে নামবার আগে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা করে নেওয়া দরকার। আপনার বাজেট কেমন, আপনি কেমন বাড়ি বানাতে চাইছেন, আপনার বাজেটের ভেতর কেমন বাড়ি বানানো সম্ভব, সেটি কতদিন টিকবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেওয়া খুব জরুরী। আপনার নিজের বাড়িটি হোক আপনার মনের মতো।

বাড়ি বানানোর জন্য কত টাকা লাগবে আমার?

বাজেট

সবার আগে, আপনার একটা বাজেট বানাতে হবে বাড়ি বানানোর জন্য। সেটা ব্যাংক থেকে  ধার করে হোক বা নিজের জমানো টাকা দিয়ে হোক, আপনি জানেন বাজেট থাকলে আপনারই সুবিধা হবে কোন জায়গায় বাড়ি বানাতে চান কিভাবে বানাতে চান সেটা নির্ধারণ করার জন্য। সবসময় বাড়ি বানানোর খরচের থেকে  ০-১০% বেশী খরচ হিসাব করে রাখবেন , কেননা বাড়ি বানাতে গেলে অনেক অজানা খরচ ও হয়ে যায় যা কি না আপনি আগে ও জানতেন না।

টাকা প্রদান পদ্ধতি

ব্যাংকে ধার করার পর তা কিভাবে শোধ করবেন সেটা ভালো করে আগে থেকেই বুঝে নিবেন। আপনি ব্যাংক থেকে ধার করলে মাসিক কিস্তিতে আপনাকে মর্টগেজ বিল শোধ করতে হবে। আগে থেকেই অন্তত ১২ মাসের কিস্তির টাকা জমিয়ে রাখবেন না হলে প্রতি মাসে ধার শোধ করতে গেলে আপনার মাসিক আয়ের উপর অনেক চাপ পড়বে।

একজন কন্ট্র্যাক্টর রাখুন

বাড়ি বানানোর কাজে হাত দেওয়ার আগে একজন ভালো কন্ট্র্যাক্টর রাখুন কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্য। আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিজ এলাকার ভালো কন্ট্র্যাক্টর কে, সে আগে যার যার কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলে দেখুন সে আসলে কি রকম কাজ করে।

গড়ে খরচ কেমন হতে পারে?

বাড়ি বানানোর জন্য জায়গা খরচ, বানানো খরচ, শ্রমিকের খরচ, বিভিন্ন উপাদান কেনার খরচ এসবের পাশাপাশি ও বিভিন্ন আয়কর ও ইন্স্যুরেন্স এর কথা মাথায় রাখতে হয়, যেটার খরচ আপনার বাড়ি বানানোর আগেই লাগবে। দেশীয় নিয়মের কথা চিন্তা করলে, বিল্ডারের ইন্স্যুরেন্স ও অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে আপনার। সাধারণত একটা ২০০০ বর্গফুটের বাসার জন্য ৫,০০০,০০০ থেকে ৭,০০০,০০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে বাসার মধ্যে কি কি খরচ করবেন সেটা এর মধ্যে হিসাব করা নেই। আপনার খরচ অনেক নির্ভর করবে আপনি কি রকম কন্ট্র্যাক্টর রেখেছেন তার উপরেও। আরো কিছু বিষয় আছে যার জন্য খরচ হয় সাধারণত –

  • জায়গা কোথায়
  • এলাকার জায়গার দাম
  • জিনিসপত্রের দাম
  • স্থাপত্য ডিজাইন
  • প্রপার্টির স্কয়ার ফুটেজ ইত্যাদি

বাড়ি তৈরির সময় খরচ কমানোর টিপস

সঠিক পরিকল্পনা ও তদারকির মাধ্যমে এবং নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ কাজের যথাযথ গুণগতমান বজায় রেখে কম খরচে বাড়ি নির্মাণ করা যায়। কম খরচে বাড়ি নির্মাণ বলতে নিম্নমানের বাড়ি নয়, সঠিক বাড়ির প্লান, ডিজাইন, এস্টিমেট, সয়েলটেস্ট এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলী/আর্কিটেক্ট/কন্ট্রাকটর ও দক্ষ কারিগর নিয়োগের মাধ্যমে জমির মালিক ২০% কম খরচে বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব।

নির্মাণ ব্যয় কমানোর উপায়সমূহ সাধারণত নিম্নরূপ

সঠিক নির্মাণ পরিকল্পনা এবং উহার তদারকি (সুপারভিশন)।

  • দেশীয় নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার।
  • সঠিক ভূমির ব্যবহার।
  • পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
উপরোক্ত উপায়সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপঃ

সঠিক নির্মাণ পরিকল্পনা এবং উহার তদারকি (সুপারভিশন)  সঠিক নির্মাণ পরিকল্পনা এবং উহার বাস্তবায়ন ও সুপারভিশনের সাহায্যে বাড়ি নির্মাণ ব্যয় ২০% কমানো সম্ভব।

দেশীয় নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার : বিদেশী নির্মাণ সামগ্রীর পরিবর্তে দেশীয় সামগ্রী যথাযথ মান বজায় রেখে ব্যবহার করা  সত্ত্বে ও নির্মাণ ব্যয় কমানো সম্ভব।

সঠিক ভূমি/জমির ব্যবহার : প্ল্যান অনুযায়ী ভূমির সঠিক ব্যবহার করা হলে নির্মাণ ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব।

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা : সঠিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার মাধ্যমে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।

সঠিক পরিবেশ বলতে:

সাইটে বাউন্ডারী ওয়াল তৈরী জান-মালের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণ কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা (কাজের অগ্রগতি), সাইটে পানি সরবরাহ ও নিস্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সাইটে সহজ প্রবেশ পথ তৈরী এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন- বন্যা, ঝড়, বৃষ্টি, দূর্যোগ আবহাওয়া, ভূমিকম্প ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে নির্মাণ পরিকল্পনা করা হলে ব্যয় অনেকটা কমানো যায়।

এছাড়াও নিম্নলিখিত কাজের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ ব্যয় কমানো সম্ভব
  • জমির মাপ অনুযায়ী সঠিক ভাবে বাড়ির প্ল্যান তৈরী করা হলে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।
  • ফাউন্ডেশন সিলিং এবং ঢালাই বাদ নিয়ে ডিজাইন কতৃক ফাউন্ডেশন করা হলে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।
  • ১ম শ্রেণীর ইট দিয়ে এবং যথাযথ মানের মশলা ( শর্টার ) ব্যবহার করে কিউরিং করা হলে ইটের দেয়ালে প্লাষ্টারের প্রয়োজন হয় না। এভাবে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।
  • অনেক সময় দরজা জানালার উপর টানা লিন্টেল না দিয়ে ডিজাইন কতৃক খন্ড বা টুকরা লিন্টেল দিয়ে বা ব্যবহার করে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।
  • ছাদে রুফিং কম্পাউন্ড ব্যবহার করে ছাদেও কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং তাতে নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।
  • দরাজা জানালা দামী কাঠের পরিবর্তে বাহিরের দেয়াল ষ্টীল, এংগেল ফ্রেম এবং সিট ব্যবহার করা যায়। বাড়ির ভেতরের দরজা দামী কাঠ দিয়ে না বানিয়ে পি.ভি.সি বা ফ্লস কাঠের তৈরি পাল্লা ব্যবহার করে ব্যয় কমানো যায়।
  • স্যানিটারি বিদেশী সামগ্রীর পরিবর্তে দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ খরচ কমানো যায়।
  • অনেক সময় আর.সি.সি ফ্লোরের পরিবর্তে বালির মেঝে ভালভাবে দুরমুজ করে পলিথিন দিয়ে ইটের সিলিং এবং মর্টার ব্যবহার করে ফ্লোর তৈরি করা হলে ব্যয় কমানো সম্ভব।
  • বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে দেয়ালের সারফেসে ওয়ারিং করার জন্য আমাদের দেশে সস্তায় বিদ্যুৎ সামগ্রী যথাযথ মানের পাওয়া যায় যা দ্বারা নির্মাণ ব্যয় কমানো যায়।

প্রপার্টি বাবদ খরচ বাদে একজন ক্রেতা কে আর কি কি খরচের ব্যাপারে অবগত থাকতে হয়?

প্রপার্টির খরচ বাদেও অনেক খরচ আছে যেমন, আইনি ও ট্যাক্সের বিভিন্ন খরচ, যা একজন ক্রেতাকে বহন করতে হয়। একটা প্রপার্টি কেনার সম্পূর্ণ খরচ আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে যেমন জায়গা কোথায়, জায়গার খরচ ক্রেতা কিভাবে পরিশোধ করবেন ইত্যাদি। এ জন্যই একজন ক্রেতাকে সবসময় পেশাদার ব্রোকার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও উকিলের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো একজন ক্রেতাকে মাথায় রাখতে হয় আর কি কি খরচ করতে হবে –

ডকুমেন্ট স্ট্যাম্প ট্যাক্স

সকল ধরণের কাগজপত্রের উপরেই বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্যাক্স ধরা হয়। একজনের কাছ থেকে যখন আরেকজনের কাছে প্রপার্টি হস্তান্তর হয় তখন জায়গার দামের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স ধার্য করা হয়ে থাকে যেটা ক্রেতাকে প্রদান করতে হয়।

হস্তান্তর ট্যাক্স

আসলেই কতটুকু ট্যাক্স প্রদান করতে হবে প্রপার্টি কেনার সময়, সেটা জানার জন্য এসব সম্পর্কে যে জানে তার সাথে আগে থেকেই কথা বলে রাখতে হবে। তিনি তখন ক্রেতাকে পুরো বাড়ি বানানোর সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি ট্যাক্স দেওয়া লাগবে সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে পারবেন।

রেজিস্ট্রেশন ফি

প্রপার্টি কেনার সময় বা হস্তান্তরের সময় এক ধরণের রেজিস্ট্রেশন ফি থাকে, বিভিন্ন ধরণের প্রপার্টির জন্য বিভিন্ন ধরণের রেজিস্ট্রেশন ফি থাকে।

লোন ফি

সাধারণত যেকোন ক্রেতাই প্রপার্টি একেবারে কেনার থেকে কিস্তিতে কিনতে বেশী পছন্দ করেন, কিন্তু কিস্তিতে কিনতে গেলে মূল দামের থেকেও বেশী দাম দিতে হয় একটু, কেননা ট্যাক্স যুক্ত হয়ে যায় তখন। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও মাথায় রাখতে হয়।

নটোরিয়াল ফি

ডিড কে নটোরাইজ করার জন্যেই প্রপার্টি কেনার সাথে সাথে ঐ বাবদ আরেকটু খরচ করতে হয়।

কোন ধরণের বাড়ি তৈরির জন্য কেমন বাজেট প্রয়োজন ?

কোন ধরণের বাড়ি তৈরির জন্য কেমন বাজেট প্রয়োজন ?

কোন ধরনের বাড়ি তৈরির জন্য কেমন বাজেট হবে তা নির্ভর করে-

  • নির্মাণস্থল এবং তার আশেপাশের পরিবেশের অবস্থা
  • স্থাপনাটির পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান, এলিভেশন, সেকশন, ও ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং।
  • প্রতিটি উপাদানের বাজার দর।
  • স্থাপনার (স্ট্রাকচার) ধরন।
  • মিস্ত্রী, লেবার ও কন্ট্রাকটর খরচ।
  • প্রয়োজনীয় সকল খরচ। যেমন- গ্যাস সরবরাহ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কাঠ, গ্রীল, দরজা-জানালা, স্যানিটারি আইটেম, রং, টাইলস/মোজাইক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।

বাড়ির প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ণয় প্রক্রিয়া

একটি নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে সম্পূর্ণ নির্মাণে কি পরিমাণ খরচ হবে তা বের করাকে এস্টিমেটিংবলে। এস্টিমেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  • খসড়া (রাফ) এস্টিমেট
  • পূর্ণাঙ্গ বা ডিটেইল এস্টিমেট
খসড়া (রাফ) এস্টিমেট

রাফ এস্টিমেট এ ডিটেইল এস্টিমেটের মত সঠিক মানের এস্টিমেট হয় না। তবে ডিটেইল এস্টিমেটের আগে রাফ এস্টিমেট করলে বাজেটের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রাফ এস্টিমেট করতে যাওয়ার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে-

  • মাটির আপাতত অবস্থা এবং মাটি পরীক্ষার জন্য আনুমানিক খরচ।
  • নির্মাণ স্থল এবং তার আশেপাশের রাস্তার অবস্থা এবং তার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা।
  • পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।
  • স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
  • বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা।
  • গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা।
  • সীমানা প্রাচীর ও রিটেইনিং ওয়ালের প্রয়োজনীয়তা।
  • স্থাপনার (স্ট্রাকচার) ধরণ।
  • সিঁড়িতে অতিরিক্ত খরচ লাগবে কিনা।
  • পাইল বা র‌্যাপ্ট লাগলে তার খরচ।
পূর্ণাঙ্গ বা ডিটেইল এস্টিমেট

প্রতিটি নির্মাণের পূর্বে একটি ডিটেইল এস্টিমেট করতে হয়। ডিটেইল এস্টিমেট শুরু করার পূর্বে কতগুলো বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে-

  • স্থাপনাটির পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান, এলিভেশন, সেকশন, ও ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং।
  • প্রতিটি উপাদানের বাজার দর।
  • ড্রইং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান।
  • একটি পূর্ণাঙ্গ এস্টিমেট সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয় সমূহের উপর নির্ভর করে। যেমন-
  • নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয়
  • পরিবহন ব্যয়
  • মিস্ত্রীর ব্যয়
  • মাচা তৈরির ব্যয়
  • যন্ত্রপাতির ব্যয়
  • পানি সরবরাহ ও রাজস্ব (ট্যাক্স) ব্যয়

বিবিধ ব্যয়-

  • ওবারহেড ব্যয় (প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যয়)
  • কন্ট্রাকটরের লাভ ইত্যাদি।
একটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয়ের হিসাব:
ডায়া (ইঞ্চিতে)সুতা নাম্বারপ্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল (বর্গ ইঞ্চি)প্রতি ফুটে ওজন
১/৪২ সুতা০.০৪৯০.১৬৭   পাঃ
৩/৮৩ সুতা০.১১০.৩৭৬  পাঃ
১/২৪ সুতা০.১৯৬০.৬৬৯  পাঃ
৫/৮৫ সুতা০.৩০৭১.০৪৩   পাঃ
৩/৪৬ সুতা০.৪৪২১.৫০২   পাঃ
৭/৮৭ সুতা০.৬০১২.০৪৪   পাঃ
৮ সুতা০.৭৮৫২.৬৭০  পাঃ