প্রয়োজন বুঝে হোক জানালার পছন্দ

একটু বর্ষা, একটু গ্রীষ্ম, একটুখানি শীত

সেই একটুখানি চৌকোছবি আঁকড়ে ধরে রাখি

আমার জানলা দিয়ে আমার পৃথিবী।

অঞ্জন দত্তের এই গান কে না শুনেছে? এ গানের কথার অনেক অর্থ দাঁড় করানো যাবে, তবে তা থেকে জানালা বাদ দেয়ার উপায় নেই। আক্ষরিক অর্থে ধরলে গানের লাইনগুলো তো ঘরের সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় একটি অংশের কথাই বলে, সেটি হলো জানালা। এই জানালা দিয়ে ঘরের বাইরে গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের আগমন টের পাওয়া যায়, চার দেয়ালের মাঝে জানালাই তো বাইরের পৃথিবীর সাথে সংযোগ ঘটায়।

তাই গৃহনির্মাণে নান্দনিকতার বালাই থাকুক বা না থাকুক, জানালা নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতেই হবে। ছোট, বড়, নাকি মাঝারি; কতটুকু উচ্চতায় স্থাপন করলে ভালো হবে, কোন দিকটায় জানালা দিতে হবে, কেমন জানালা দিলে আলো-বাতাসের সাথে সৌন্দর্যও যোগ হবে- কত প্রশ্ন জানালা নিয়ে কড়া নাড়ে মনের দরজায়! দরজা খুলে সেসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে যাওয়া যাক তাহলে।

যা যা ভাবতে হবে

জানালা নির্বাচনের আগে প্রথমেই এর স্থান এবং আকার আকৃতি নিয়ে ভাবতে হবে জরুরি কিছু বিষয়ে। কতটা আলো চাই আপনার ঘরে? আলোর প্রয়োজনীয়তা বুঝে জানালার সংখ্যা নির্বাচন করুন। ভোরের প্রথম আলোকে প্রতিদিন ঘরে আমন্ত্রণ জানাতে চাইলে পূর্বদিকের দেয়ালে দিয়ে দিন একটি জানালা। আবার পূর্বে না হলে পশ্চিমেও দেয়া যেতে পারে। দুপুরের পর থেকে সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করলেই ঘরে আসবে প্রচুর আলো, সাথে গরমও!

এক্ষেত্রে অনেকেই উত্তর বা দক্ষিণ যেকোনো এক বা উভয়দিকে জানালা দিতে চান, পূর্ব-পশ্চিম বাদ রেখে। কেননা, সরাসরি সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না দিনের বেলা ঘর আলোকিত করবার জন্য। তাছাড়া, সরাসরি সূর্যের আলো জানালায় পড়লে শত পর্দার বাধাতেও কাজ হয় না, প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই আলোকিত হয় ঘর। এতে ছুটির দিনে একটু বেশি ঘুমানোর বারোটা বাজবে যে!

সংখ্যা এবং আকারের ভাবনায় আবার বর্তমানে পরিবর্তন এসেছে বেশ। একসময় জানালার সংখ্যায় কিংবা আকারে প্রতিসাম্য বজায় রাখার কোনো বিকল্প ছিল না। অর্থাৎ সব ঘরেই একই আকারের জানালা সমান অনুপাতে (দেয়ালের আকার অনুযায়ী সংখ্যা) বসানো হতো। এখন সময় বদলেছে, বদলেছে রুচি, এবং চাহিদা। শোবার ঘরে মোটামুটি আলোর জন্য মাঝারি আকারের একটি বা দুটি জানালা হলেই চলছে। কিন্তু বসার ঘরে দেয়া হচ্ছে বিশালাকারের জানালা। রান্নাঘরের জানালা আবার বদলে যাচ্ছে চাহিদামতো।

জানালা স্থাপনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। এমন স্থানে জানালা স্থাপন না করাই ভালো যেখানে জানালাটি সর্বদা পর্দায় ঢেকে রাখতে হবে। উদাহরণ হতে পারে জানালার মুখোমুখি রেস্টুরেন্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জানালা, কিংবা এমন কোনো স্থান যেখানে সর্বদাই জনসমাগম থাকে।

তবে বাড়ির পাশে যদি মনোরম পরিবেশ থাকে, সেদিকের দেয়ালে জানালা দিতে ভুলবেন না যেন। সবুজ বৃক্ষরাজি কিংবা নদী, বিল বা জলাশয়, অথবা চমৎকার একটি বাগান যেদিকে, সেদিকে একটি বড় জানালা দিয়ে দিন, আর ঘরে বসে সময়ে সময়ে হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে।

যেসব জানালায় ডিজাইন হতে পারে

বে উইন্ডো (Bay Window)

বে উইন্ডো হলো একপ্রকার জানালা যা ঘরের মূল দেয়ালের সমতলে না থাকে কিছুটা প্রসারিত হয়ে বাইরের দিকে জায়গা করে নেয়। সহজভাবে বললে, বে উইন্ডো একপ্রকার প্রসারিত ঝুল বারান্দাই বটে। পার্থক্য হলো – এটি মূল ঘরের সাথেই থাকে।

বে উইন্ডো আকারে বেশ বড় হয়। এটি ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশে সাহায্য করে, সাথে সৌন্দর্যবৃদ্ধি তো থাকছেই। বাড়ির সামনের দিকের কক্ষগুলোয়, বসার কিংবা শোবার ঘর যেকোনো ঘরই হতে পারে, সাধারণ এই জানালাগুলো স্থাপন করা হয়, যার জন্য অন্দরের সৌন্দর্যের সাথে বাইরে থেকেও বাড়িকে পরিপাটি দেখায়।

কেসমেন্ট উইন্ডো (Casement Window)

এখনও পর্যন্ত এ ধরনের জানালাই সর্বাধিক ব্যবহৃত ও প্রচলিত, যদিও থাই গ্লাস একে প্রতিস্থাপন করে চলেছে। কেসমেন্ট উইন্ডো হলো একপ্রকার জানালা যা ক্র্যাংকের সাহায্যে দেয়ালে আটকে থাকে, এবং একে সম্পূর্ণ বাইরের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে খোলা যায়। এতে জানালার প্রায় পুরোটা দিয়ে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করে। একসময় লোহার বা অস্বচ্ছ কাচের কেসমেন্ট জানালা ব্যবহার করা হলেও এখন সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে স্বচ্ছ কাচ। এ জানালার দুটো অসুবিধা রয়েছে। প্রথমত, একে আকারে খুব বেশি বড় করা যায় না, এবং দ্বিতীয়ত, জানালার বাইরের দিকে কোনোপ্রকার শিল্ড বা ইনসেক্ট নেট (কীটপতঙ্গরোধী ঘন জালবিশেষ) ব্যবহার করা যায় না।

পিকচার উইন্ডো (Picture Window)

মূলত ছবির ফ্রেমের মতো জানালার স্থাপনই এর এরূপ নামকরণের কারণ। সব বাসায় কিংবা যেকোনো স্থানে এই জানালা ব্যবহারযোগ্য নয়। কেবল ঘরের ভেতর থেকে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা থাকলেই এরূপ জানালা দেয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য অনেকে বাড়ির সামনের দেয়ালে পিকচার উইন্ডো ব্যবহার করেন। ছবির ফ্রেমের মতো দেয়ালে স্থির এই জানালা খোলা যাবে না। প্রচুর আলো আসলেও বাতাসের উপায় নেই। আবার খুব একটা নিরাপদ বা টেকসইও বলা যাবে না।

উইন্ডো ওয়াল (Window Wall)

অনেকটা পিকচার উইন্ডোর মতোই, তবে আকারে আরো বড়। বসার ঘর বা হলঘরের পাশে যদি দেখার মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য থাকে, তবে সেই ঘরের বাইরের দেয়ালটি করে ফেলতে পারেন উইন্ডো ওয়াল। অর্থাৎ পুরো দেয়ালই হবে স্বচ্ছ কাচের তৈরি। এটাও পিকচার উইন্ডোর মতো স্থির, এবং খোলার ব্যবস্থা নেই এতে। একেবারে পূর্ব বা পশ্চিমমুখী দেয়ালে এরূপ জানালা করা যাবে না। এতে প্রচুর তাপ আসবে ঘরে।

স্লাইডার (Slider)

স্লাইডার বলার পর আলাদা করে পরিচয়ের প্রয়োজন আছে কি? এককথায়, বর্তমানের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সহজ বিকল্প হলো স্লাইডার জানালা, যা আড়াআড়িভাবে স্লাইড করে বা পিছলে খোলা বা বন্ধ করা যায়। এই জানালা একেবারে ছোট আকার থেকে শুরু করে মাঝারি বা বেশ বড় আকারের পর্যন্ত হয়। তাই বাসাবাড়ি, অফিস বা বাণিজ্যিক ভবন- সর্বত্রই এর ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে থাই গ্লাস নামেই সর্বাধিক পরিচিত স্লাইডার জানালা। দামে সাশ্রয়ী, টেকসই, এবং সহজে পরিষ্কার করা যায় এ জানালা। তবে মূল সমস্যা হতে পারে সম্পূর্ণ বাতাস নিরোধী না হওয়া।

আপনার চাহিদা এবং সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাই সুখের নীড়ের জন্য বেছে নিন কাঙ্ক্ষিত জানালা। কারণ, ‘হোম’কে ‘সুইট হোম’ করে তুলতে যে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন, যে প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রাচুর্যের অবলোকনের প্রয়োজন, ঘরের ভেতরে বসে সেসব উপভোগের প্রধান উপায় যে এই জানালাই!

কীভাবে বাড়াবেন ঘরের স্টোরেজ স্পেস

আপনার বসবাসের ঘরখানি, কিংবা সম্পূর্ণ বাসাটিই কি কখনো বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে? শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর- সবগুলোই যথেষ্ট বড় হওয়া সত্ত্বেও কি মনে হয়েছে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না? যদি মনে হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ভাবছেন অতিরিক্ত তৈজসপত্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরের স্থান সঙ্কুলানের ঝামেলা হয় উন্মুক্ত স্থানের সদ্ব্যবহার করতে না পারার কারণে। একটি ঘরের পুরোটা জুড়েই আসবাবপত্র থাকবে না, কিছু অংশ অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। অন্যথায় ঘরে ঢুকলেই দমবদ্ধ মনে হবে।

ঘরের আকৃতি নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বড় আকারের ঘরও যথাযথ উপায়ে না সাজালে ঘিঞ্জি মনে হবে, আবার ছোট ছোট ঘরের ভেতরেও রেখে দেয়া যেতে পারে অনেক মালামাল, যদি সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। কেমন হতে পারে সেই পরিকল্পনা? চলুন জানা যাক।

মাল্টিটাস্কিং আসবাবপত্র

ঘরের সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য সর্বদা এমনসব আসবাবপত্র ক্রয় করুন যা একাধিক কাজে লাগবে। নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধক কোনো আসবাবপত্র না হয়ে থাকলে তা যেন উদ্দিষ্ট কাজের সাথে কিছুটা বাড়তি স্টোরেজের জোগান দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

প্রথমেই বিছানা, যেহেতু এটি শোবার ঘরে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থান দখল করে রাখে। বিছানার নিচে ফাঁকা থাকা ভালো, এতে সেখানে অনেক কিছু রাখা যায়। তবে আদৌ যদি ফাঁকা না রাখতে চান, তাহলে এমন বিছানা ক্রয় করুন যার নিচে ড্রয়ার আছে। এতে অন্দরের সৌন্দর্যে ঘাটতি তো হবেই না, পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় এবং অনেকদিন পর পর প্রয়োজন হয় এমনসব বস্তু সেই ড্রয়ারে রেখে দিতে পারবেন।

ঘরে রাখা টেবিলে ড্রয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়, সাথে টেবিলের একপাশে শেলফ থাকলে আরো ভালো। প্রতিটি ঘরে একটি করে ছোট আকারের ক্লজেট রাখা যেতে পারে, যা কম আয়তনে অনেককিছু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। ক্লজেটের ভেতর এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই চলে যাবে, যেমন – পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টর্চ, খেলনা, কেচি, পারফিউম ইত্যাদি। এতে ঘর অনেক বেশি পরিপাটি হবে।

বাক্স ব্যবহার করুন

সবকিছুর জন্য ক্লজেট, আলমারি বা ওয়ারড্রোব, শেলফ ইত্যাদি কাজে আসবে না। প্রথমত, কিছু প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, যেগুলো নিত্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখান থেকে ড্রয়ার খুলে বের করতে হবে কিংবা প্রতিদিন ঠিকঠাকমতো সাজাতে হবে, যা বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়ও বটে।

দা-বটি, ছুরি, রান্নাঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র, বসার ঘরের রুম স্প্রে, তোয়ালে- বাসাবাড়িতে এরকম অসংখ্য বস্তু রয়েছে যা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। নিত্যদিন শেলফ থেকে নামিয়ে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখা কিংবা কিচেন ক্লজেট খোলা/বন্ধ করা কারোরই ভালো লাগার কথা না। বাক্সের ব্যবহার সব সমস্যার সহজ সমাধান।

ফ্রি স্ট্যান্ডিং কাঠের বা প্লাস্টিকের ধাপ করা বাক্স কিংবা দেয়ালে স্থাপনযোগ্য স্টিলের ঝুড়িসদৃশ বাক্স দেখতেও ভালো দেখায়, নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র রাখতেও সুবিধা হয়। সাজিয়ে রাখবার বালাই নেই বিধায় সময় বেঁচে যায় অনেক।

রান্নাঘরে বা বসার ঘরেই কেবল নয়, স্টোরেজ ঘরেও বাক্সের ব্যবহার জরুরি, অন্যথায় অল্প মালামাল রেখেই ঘর ভর্তি মনে হতে পারে। তাছাড়া বাক্সবন্দি করে মালামাল সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো খুঁজে পাওয়াও সহজ হয়। হালকা পিজবোর্ডের বা শক্ত কাগজের কার্টনবক্সগুলো এক্ষেত্রে উত্তম। প্রতিটি বাক্সে কাগজের লেবেল লাগিয়ে দিলে কোথায় কী রাখা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।

ডেড স্পেসএর সঠিক ব্যবহার

প্রতিটি ঘরেই এমন কিছু স্থান থাকবে যেগুলো আপাতত কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলে মনে হয়। এসব স্থানকে ডেড স্পেস (Dead Space) বলা হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে ডেড স্পেসের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব।

সবচেয়ে কমন ডেড স্পেস হলো জানালা। জানালার সামনে বড় কিছু রাখার উপায় নেই, রাখলে তা কুৎসিত দেখাবে বৈকি। তবে জানালার সামনের স্থানের সঠিক ব্যবহার ঘরের অন্যান্য স্থানের উপর চাপ কমায়। জানালার পাশে সোফা স্থাপন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বড় আকারের জানালা, যেগুলো মেঝের বেশ কাছাকাছি পর্যন্ত থাকে, সেগুলোর সামনে সোফা রাখা বেমানান। এক্ষেত্রে ছোট টেবিল বা শেলফ সেখানে রাখা যেতে পারে, যার ভেতরেও রাখা যাবে আরো অনেক কিছু।

একটি দেয়ালের শেষমাথা থেকে খানিক দূরে অপর দেয়ালে অর্ধেক বেরিয়ে থাকা পিলার থাকলে ঐ স্থানের ব্যবহারিক কোনো মূল্য থাকে না, যদি না আপনি সেখানে সরু আকারের একটি ক্লজেট বা টি টেবিল স্থাপন করেন। ঘরের দরজার একপাশে যদি কিছুটা স্থান অব্যবহৃত পড়ে থাকে, সেখানে স্থাপন করতে পারেন যথাযথ আকারের সুন্দর একটি বুকশেলফ।

প্রাইম রিয়েল এস্টেট (Prime Real Estate)

গৃহসজ্জার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বস্তু তুলে রাখা বা তুলে আনার জন্য আদর্শ উচ্চতা হলো মেঝে থেকে শুরু করে কাঁধের খানিকটা উপরে পর্যন্ত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা একে প্রাইম রিয়েল এস্টেট নামে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ যে অংশ পর্যন্ত বিনা ক্লেশে আপনার হাত পৌঁছুবে। ঘরের শূন্যস্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে এই প্রাইম রিয়েল এস্টেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বড় আসবাবপত্রগুলো বাদে ঘরের যে দেয়ালগুলো উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের বা স্টিলের শেলফ, ক্লজেট স্থাপন করে ফেলুন।

ঘরকে আড়াআড়ি না দেখে উল্লম্বভাবে দেখুন

যেসব বস্তু একটির উপরে আরেকটি রাখা যায়, সেগুলো পাশাপাশি রেখে অতিরিক্ত জায়গা নষ্ট করা অর্থহীন। আড়াআড়ি সজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্লম্ব সজ্জার দিকে মনোযোগ দিন। একটির উপর আরেকটি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ওজন এবং নমনীয়তা বিবেচনা করুন। অধিক ওজন এবং কঠিন বস্তুগুলোকে নীচে রেখে উপরের দিকে নমনীয় ও হালকা বস্তুগুলো রাখতে হবে। যদি বাসায় বুকশেলফ না থাকে এবং বইগুলো দেয়ালের সাথে সারি করে রাখতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন সারিগুলো উপরের দিকে লম্বা করে কম সংখ্যক সারি করার।

এসব তো ঘর সাজানোর কিছু কৌশল মাত্র। এসবের পাশাপাশি মাপমতো আসবাবপত্র কেনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সবশেষে, অপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, অব্যবহৃত বা পুরনো কাপড়, খেলনা, জুতা ইত্যাদি জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, পুরাতন জিনিসপত্রের বাজারে বিক্রি করে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন। এতে ঘরের জঞ্জাল কমবে অনেকটাই, ঘর হবে অধিকতর পরিপাটি, এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।

সিলিং ডিজাইন করুন পরিকল্পনামাফিক

একসময় বাড়ি নির্মাণে অন্দরের সাজসজ্জার মূল বিষয় ছিল ঘরের আসবাবপত্র। এরপর দেয়ালকে সুন্দর করে সাজানো, নিত্যনতুন নকশায় দৃষ্টিনন্দন করার ট্রেন্ড এলো, সাথে শুরু হলো সিলিংয়ের নকশায় সৃজনশীলতা আনা। গৃহসজ্জায় নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে সিলিং ডিজাইনিং হয়ে উঠলো গৃহসজ্জার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বর্তমানে কর্পোরেট অফিস ভবন, অডিটোরিয়াম কিংবা বড় বড় হলঘরেই সিলিং নান্দনিক সব ডিজাইনের ব্যবহার বেশি হলেও বাসাবাড়িতেও সিলিং ডিজাইন করতে ভোলেন না সৌখিন মানুষেরা। আর সিলিংয়ের নকশা বাড়ি নির্মাণের পর নয়, করলে নির্মাণকালেই করে ফেলতে হবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে। চলুন, সেসব জেনে নেয়া যাক।

১. ঘরের আকৃতি

নকশা বাছাইয়ের পূর্বশর্ত হলো ঘরের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা বাছাই করা। লম্বা, আয়তাকার কিংবা বর্গাকার ঘরে একরকম, গোলাকার ডাইনিং রুম হলে একরকম, বড় হলঘর হলে একরকম, আর বাথরুমের মতো সংক্ষিপ্ত পরিসরে একরকম নকশা।

২. যেমন ইন্টেরিয়র তেমন সিলিং

সিলিংয়ের ডিজাইন ঠিক করার আগে অবশ্যই ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ঠিক করতে হবে। ইন্টারিয়রের রং, প্রধান উপাদান (কাঠ, গ্লাস, মার্বেল কিংবা স্টিল), অ্যাম্বিয়েন্স- সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ঠিক করতে হবে সিলিংয়ের নকশা।

৩. আলোকসজ্জা

সিলিংয়ে আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থানের ওপর। ঘরের প্রধান আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক উপাদানগুলো যদি দেয়াল বরাবর হয়, তাহলে আলোকসজ্জাও ঘরের দেয়ালগুলোর নিকটবর্তী হতে পারে। এতে দেয়ালের রংও ফুটে ওঠে। আবার লক্ষ্য যদি থাকে পুরো ঘরে আলোর সুষম বন্টন, তাহলে সিলিংয়ের কেন্দ্র বরাবর আলোকসজ্জাই মানানসই হবে।

৪. উচ্চতা মাথায় রাখা জরুরি

সিলিংয়ের যেকোনো নকশা নির্ধারণ করার পূর্বে অবশ্যই উচ্চতা বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে ড্রপ সিলিংয়ের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যেসব সিলিং প্রধান সিলিংয়ের সাথে অতিরিক্ত একটি সিলিং হিসেবে সংযুক্ত থাকে। তাছাড়া সিলিং থেকে ক্রিস্টাল লাইট, ফ্ল্যাশ লাইট বা নানারকম ঝাড়বাতি ঝোলানোর জন্য সিলিংয়ের উচ্চতা যথেষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৫. রং নির্বাচন

সিলিংয়ের রং নির্বাচনে দেয়ালের রঙের চেয়ে এখন অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় ঘরের আসবাবপত্রকে। পুরো ঘরটি যদি একটি বিশেষ থিমের রঙ দিয়ে সাজানো হয়, সিলিংও সেই রঙেই সাজিয়ে ফেলতে হবে। আবার ঘরে কেমন আলো চান, তার উপরও নির্ভর করবে সিলিংয়ের রং। কারণ আলোকসজ্জা করবার পর সিলিং থেকে আলো প্রতিফলিত হবে পুরো ঘরেই।

৬. প্রতিধ্বনি এড়াতে চাইলে

সিলিংয়ের নকশা নির্বাচনে প্রতিধ্বনি হতে পারে বড় মাথাব্যথার কারণ, বিশেষত বড় হলঘর, কিংবা বসার ঘরে। ড্রপ সিলিং ব্যবহারে সিলিংয়ের উচ্চতা কমে আসে এবং লম্বা ঘরে কথার প্রতিধ্বনি হয়। এ থেকে মুক্তির উপায় অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) সিলিং, যা শব্দ প্রতিধ্বনিত না করে শুষে নেয়।

নকশা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর উপর নজর রাখতে হবে, তা তো জানা হলো। এবার কিছু নান্দনিক সিলিং ডিজাইন সম্পর্কে জানা যাক।

হাই গ্লস সিলিং (High gloss)

এটি সিলিং ডিজাইনে একটি সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। ড্রপ সিলিং বা ভারী আলোকসজ্জা ছাড়াই ঘরে আলোর সুষম বণ্টন এবং আরামদায়ক এম্বিয়েন্স তৈরির জন্য এ ধরনের সিলিং ব্যবহার করা হয়। মূলত সিলিং সর্বোচ্চ পরিমাণ মসৃণ করাই হাই গ্লস সিলিংয়ের মূল আকর্ষণ। মসৃণ সিলিংয়ে হালকা উজ্জ্বল রঙের মসৃণ প্রলেপ স্বচ্ছ হয় এবং আলোর প্রতিফলনও করে। পাশাপাশি এরূপ সিলিং ডিজাইন ব্যবহারে মনে হয় সিলিংয়ের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এরূপ সিলিং অনেক সময় স্বচ্ছ কাচের মতোও হয় এবং ঘরের মেঝে এতে প্রতিফলিত হয়।

প্ল্যান্ট (Plant) সিলিং

শিল্পায়ন, নগরায়ন, সবকিছুতেই এখন সবুজায়নের উপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়। বড় বড় অবকাঠামোতে চলছে সবুজের আত্মীকরণ। বাসাবাড়ির ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয় ব্যাপারটা। অনেকেই ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক আবহ তৈরির জন্য গাছগাছালি ব্যবহার করেন। তবে গাছ/ঘাস লতাপাতা যদি টবে না থেকে সিলিং থেকে ঝুলে যায়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? সহজ ভাষায় বললে- প্ল্যান্ট সিলিং হলো সিলিং থেকে বেশ কয়েক প্রকারের সৌন্দর্যবর্ধক লতা-গুল্ম ঝুলিয়ে দেয়ার পদ্ধতি। এগুলো ঝোলাবার জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহারই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

কাঠের নকশা

পাথুরে যুগের পর মানুষ বসতবাড়ি নির্মাণে কাঠের ব্যবহারই করেছে সবচেয়ে বেশি। সময়ের সাথে বাড়িগুলো কলেবরে বড় হয়েছে, আকাশপানে যাত্রা করে উঠেছে অনেক উপরে। এসব বাড়ি কাঠে নির্মাণ হয় না এখন আর। তবে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঠিকই কাঠের কাছে ফিরেছে মানুষ।

মসৃণ গ্লসি সিলিংয়ে অসম আকৃতির মসৃণ কাঠ ব্যবহারে চমৎকার সিলিং তৈরি হয়। আবার ড্রপ সিলিংটি কাঠের হলে তা অন্যান্য ড্রপ সিলিংয়ের চেয়ে অভিজাত মনে হয়। সিলিং কাঠের নানা কারুকাজও স্থাপন করে থাকেন অনেকে।

আর্ট

সিলিংয়ে অতিরিক্ত কোনোকিছু যোগ না করে কেবল দস্তুরমতো রং করে ফেললেও সিলিং হতে পারে সাধারণ সিলিংয়ের চেয়ে সুন্দর। তবে যেনতেন রং নয়, সাধারণ ত্রিমাত্রিক আবহ ফুটিয়ে তোলা ডিজাইনই সিলিংয়ে সাধারণ একটি চিত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারে।

ভাস্কর্য

সিলিংয়ে খোদাই করার মতো ভাস্কর্যের গড়ন গড়ে তোলার চল এখনো রয়েছে। মসৃণ সিলিংয়ে উপর গৃহে বসবাসকারীর রুচি অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলা হয় নানা আকৃতি। ভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলা হলে সিলিং সাধারণত সাদা রাখা হয়, তবে অনেকেই রং করতে ভালোবাসেন ভাস্কর্যসমেত।

স্কাইলাইট

যদিও স্কাইলাইট সিলিং সাধারণত বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহৃত হয়, যেমন- রেস্টুরেন্ট, অফিসের মিটিং কক্ষে কিংবা শিল্প কারখানায়, তবে সৌখিন মানুষজন বসতবাড়িতেও স্কাইলাইট ব্যবহার করে থাকেন। স্কাইলাইট হলো গ্লাসনির্মিত বাহারি ডিজাইনের সিলিং যা দিনে সূর্যের আলোয় ঘরকে আলোকিত রাখে। এর একটাই অসুবিধা, চাইলেও টপ ফ্লোর ব্যতীত অন্য কোনো ফ্লোরে স্কাইলাইট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এছাড়াও রুচিশীল মানুষজন অসংখ্য রঙের, ধরনের সিলিং ডিজাইন ব্যবহার করেন। যেমন – ঘরে ক্লাসিক লুক আনবার জন্য ‘ব্রিক অ্যান্ড স্টোন’-এর ব্যবহার, মেটাল সিলিং, ফেব্রিক সিলিং, স্টেনসিল, গ্লাস সিলিং ইত্যাদি।

আপনার ওপেন কিচেনটি যেভাবে সাজাবেন

গৃহনির্মাণে কারো প্রধান লক্ষ্য হয় কেবলই বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি তৈরি করা, কারো সবটুকু মনোযোগ থাকে বাড়ির সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা বর্ধনে। বিলাসি মনের সৌন্দর্যপ্রিয় ভাবনাগুলো ছুঁয়ে যায় ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিংবা কিচেনে। ঘরখানি দেখে যেন মনে প্রশান্তি আসে, সেটাই তো আসল ভাবনা।

সেই ভাবনায় ঘরের রসুইখানা কিংবা কিচেনের অবস্থান কোথায়? নির্মাণশৈলির তাবৎ কারিকুরি যেন আটকে আছে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমেই। তবে আধুনিক স্থাপত্যকলা সৌখিন মানুষের সেই ভাবনাও দূর করেছে। কিচেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আবির্ভাব হয়েছে ওপেন কিচেন। বন্ধ দেয়ালের রান্নাঘরকে বিদায় বলে খোলা কিচেনে বিস্তর প্রশস্ত পারিপার্শ্বিকতায় রান্না করতে কার না ভালো লাগবে? উপরন্তু, আপনার রন্ধনশৈলির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।

তো এই ওপেন কিচেনখানি কীভাবে আরো একটু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবেন, সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা হয়ে যাক তাহলে।

স্টোরেজ করুন, তবে গোপন

ওপেন কিচেন যেহেতু আপনার বসার ঘরের সাথে মিশে যাবে, তাই সাধারণ রান্নাঘরের মতো এর সাজসজ্জা হলে চলবে না। বিশেষ করে, রান্নাঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী রাখবার শেলফ কিংবা স্টোরেজ ক্যাজুয়াল ঘরোয়া ডিজাইনে করতে হবে যেন পুরোটাই একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করে, কিচেন বলে আলাদা না হয়। এতে করে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে রান্নার মাঝে গল্প করা যাবে, মেহমানরাও ঘরোয়া পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।

লেআউট ঠিক করুন ভেবে-চিন্তে

ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ে লেআউট ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ধরবার পূর্বেই মাপজোখ ঠিক করে নিন এই বিষয়গুলোর– বসার স্থান থেকে চুলার দূরত্ব, হাঁটা-চলা করবার স্থানটুকু বসার ঘরের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, টিভির অবস্থানটা খুব কাছে হলো কিনা যেখানে রান্নার আওয়াজে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটবে ইত্যাদি। এই সবকিছু বিবেচনা করে ঘরের আকৃতি এবং আপনার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য বিষয়বস্তু অনুসারে ওপেন কিচেনটি ইংরেজি ইউ কিংবা এল আকৃতির হতে পারে।

জোন ভাগ করুন

ওপেন কিচেনের মানেই হচ্ছে বসার ঘর আর রান্নাঘরের তফাৎ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে হ-য-ব-র-ল হলে চলবে না। কিচেন আর বসার ঘর মিলিয়ে পুরোটাকে একটি ঘর বিবেচনা করে কয়েকটি জোনে ভাগ করুন– রান্না, ধোয়ামোছা, খাওয়া, বসা (টিভি দেখা) প্রভৃতি। ঘর একটিই, কিন্তু প্রতিটি জোন আলাদা ও স্বতন্ত্র। এবং সব জোনের মাঝে একটি কমন ফাঁকা স্থান থাকবে যেন একটিতে যেতে হলে অন্যটির সীমানা ভেদ না করতে হয়।

কিচেন জোন জানালার পাশে রাখুন

জোন ভাগ করার ক্ষেত্রে কিচেন জোনটি বহিঃস্থ দেয়াল বা জানালার দিকে রাখুন। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে এই কৌশল কাজে দেবে। তাছাড়া রান্নার মাঝে যদি খানিকটা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার ছোঁয়া চান তাহলে কিচেনের সাথের দেয়াল স্বচ্ছ কাচ দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এ দেয়ালটি বাড়ির পাশে থাকা বাগানের সাথে লাগোয়া হলে তো কথাই নেই।

কিচেনে কী কী সংযুক্ত করবেন ঠিক করুন

পানির কল, চুলা, এক্সহস্ট ফ্যান, স্টোরেজের মতো মৌলিক উপাদানগুলো ছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে কিচেনে উন্মুক্ত জায়গা অনুযায়ী বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করুন। যেমন– কিচেন আইল্যান্ড, ব্রেকফাস্ট বার, রেঞ্জ কুকার, স্টাইলিস ফ্রিজার ইত্যাদি।

মার্বেল, গ্লাস, স্টিল না উড?

উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে ঠিক করুন আপনার ওপেন কিচেনটির বিশেষত্ব। সাধারণ নির্মাণশৈলি অনুসরণ করলে কিচেনে আনুষঙ্গিক অংশগুলো তৈরি করা যায় স্টিল দিয়েই। মার্বেল বা কাচ, উভয়ের ব্যবহারই কিচেনকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করবে। মার্বেলের বাহারি ডিজাইন কিংবা কাচের স্বচ্ছতা ও চাকচিক্য, যেকোনো একটি বেছে নিন মর্জিমতো। তবে রাজকীয় ভাব আনতে কাঠই এখনো সবার উপরে। কালচে বা বাদামি রঙয়ের পাইন, মেপল, মেহগনি বা রোজউড হতে পারে আপনার ওপেন কিচেনের আভিজাত্যের প্রতীক।

উন্মুক্ত স্থান রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে

ওপেন কিচেন করলে কিচেন আর বসার ঘর, অর্থাৎ পুরো ঘরে এমন কোনো স্থান থাকা যাবে না যেখানে পৌঁছতে হলে বিশেষ কসরত করতে হয়, কোনো কিছু ডিঙিয়ে যেতে হয় কিংবা কিছুটা ঘুরে যেতে হয়। ওপেন কিচেনের ধারণাই তৈরি হয়েছে খোলামেলা আবহ তৈরি করার জন্য। তাই প্রয়োজনে ‘কিচেন-এলিমেন্টস’ কম রাখুন, তথাপি ঘরকে যথেষ্ট খোলামেলা রাখবার চেষ্টা করুন।

রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন

কিচেনের বিভিন্ন আসবাবের রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন, রং নির্ধারণ করুন বুঝে-শুনে। ঘরের দেয়ালের সাথে সাদৃশ্য আছে এরকম কোনো রং বাছাই করুন। বসার সোফা, টেবিল, ঘরের দেয়াল আর কিচেনের স্টোরেজ কিংবা অন্যান্য উপাদানের রঙের সিংক হলে সেটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। তবে রং নির্ধারণেও একটি নির্দিষ্ট নিশ খুঁজে নিতে হবে। যে রং বাছাই করবেন, পুরো ঘরের নিশ হবে সেটি। এক্ষেত্রে খুব বেশি রঙচঙে কিংবা চোখে লাগছে, এরকম রঙ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাদা, অফ-হোয়াইট, ধূসর, ক্রিমি, ডার্ক ইত্যাদি ওপেন কিচেন ডিজাইনের জনপ্রিয় রঙ।

আলোকসজ্জার কথা ভুলবেন না যেন

কিচেনের জোন ভাগ করার সময়ই আলোকসজ্জা ঠিক করে ফেলতে হবে। রান্নার জোনে যতটা আলো প্রয়োজন, ধোয়ামোছা কিংবা বসার জোনে ততটা নয়। আবার বসার জোনে যেরকম আলো চাই, ডাইনিং জোনে সেরকম নয় নিশ্চয়ই। যদি আপনার ওপেন কিচেনটি যথেষ্ট বড় হয়, তাহলে অন্যসবের সাথে খেয়াল রাখুন এ বিষয়েও, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা প্রাকৃতিক আলোর (জানালা, স্কাইলাইট, ইত্যাদি) ব্যবস্থা করুন যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে।

সর্বোপরি, একটি ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে সৌন্দর্য; অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে হিজিবিজি করে ফেলা নয়। আপনার রুচি ও সাধ্য অনুসারে যে নকশা ধরেই এগোন না কেন, ওপেন কিচেন যেন ওপেনই থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় ওপেন কিচেনের মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে।

কীভাবে মার্বেলের দাগ দূর করবেন?

আদিকাল থেকেই গৃহনির্মাণে মার্বেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গৃহসজ্জায় চাকচিক্য, নান্দনিকতা, সর্বোপরি মসৃণ এক অনুভূতি দেয় মার্বেলের মেঝে, দেয়াল কিংবা অন্যান্য ব্যবহার। অবশ্য সৌন্দর্যের সাথে মার্বেল নিয়ে আসে বাড়তি দায়িত্বও। নিয়মিত যত্ন না নিলে মার্বেলের গায়ে তৈরি হয় অনেকরকম দাগ, যেগুলো মার্বেলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।

কিন্তু নিয়ম করে পরিচর্যার পরও যদি দাগ পড়েই যায়, তাহলে কী করা যায়? ভাবনার কারণ নেই। কীরকম দাগ তার ওপর নির্ভর করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মার্বেলের দাগও দূর করা যায়। কীভাবে দাগ দূর করবেন, সেটি জানবার আগে চলুন দেখে আসি মার্বেলে কত রকমের দাগ হতে পারে।

মার্বেলে যত দাগ

তেলের দাগ – রান্নার তেল থেকে শুরু করে লোশন, দুধ, মাখন, প্রসাধনী তেল, গ্রিজ ইত্যাদি থেকে মার্বেলে তেল চিটচিটে ধূসর হলুদাভ দাগ হতে পারে।

জৈবিক কারণ – কফির কাপ, কাচের বাসনকোসন, বালতি, মগ ইত্যাদির কারণে এই দাগ হতে পারে যা ধূসর বা কালচে হয়।

পানির দাগ – নিয়মিত পানি পড়লে বা পানি জমে থাকলে, দ্রুত না মুছে ফেললে এই দাগ ধীরে ধীরে তৈরি হয়।

চিটি পড়া – এ ধরনের দাগ সবচেয়ে বেশি হয় গোসলখানায়, বিশেষ করে যে অংশে মার্বেল পুরো ভিজে না গেলেও পানির ফোঁটা পড়ে তার উপর।

মরচে পড়া দাগ – লোহা ও ইস্পাতের সামগ্রী থেকে মার্বেলে এই দাগ পড়ে।

এগুলো সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। তবে এগুলো ছাড়াও ঘর্ষণের দাগ, কালির দাগ, চা-কফির দাগ, রঙের দাগ ইত্যাদি উপায়ে মার্বেলে দাগ পড়তে পারে।

দাগ ওঠানোর উপায়

মার্বেল থেকে কঠিন কঠিন দাগ ওঠানোর জন্য পোল্টিস (Poultice) নামক একপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। পোল্টিস বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। এটি নানা প্রকার রাসায়নিক ও পরিষ্কারক দ্রব্যের সংমিশ্রণে তৈরি। কেওলিন ক্লে (Kaolin Clay- একপ্রকার কাদামাটি), ফুলার্স আর্থ (Fuller’s Earth – অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট সমৃদ্ধ একপ্রকার কাদামাটি), ট্যাল্ক, বেকিং সোডা, চকের গুঁড়া ইত্যাদি মিশ্রিত করে চাইলে বাসাতেই প্রস্তুত করা যাবে এই ক্লিনার।

তেল চিটচিটে দাগ

তেলজাতীয় দ্রব্য সাধারণত মার্বেলের ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলোতে প্রবেশ করে স্থায়ী কালচে দাগ তৈরি করে। এ দাগ দূর করার একটাই উপায়- ছিদ্রগুলোতে অবস্থান নেয়া এই তেল অপসারণ, যা সাধারণ ধোয়া-মোছায় সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রথম পদ্ধতি হলো অ্যামোনিয়া বা অ্যাসিটোন মিশ্রিত তরল ক্লিনার দিয়ে দাগ ওঠানোর চেষ্টা করা। এ পদ্ধতি কাজ না করলে পোল্টিস দিয়ে ভালো করে ঘসে ২৪ ঘণ্টা পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে দ্বিতীয় দিনের মতো পোল্টিস দিয়ে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হবে।

জৈবিক দাগ

চা, কফি, লেবুর রস ইত্যাদির জৈবিক দাগ তোলা বেশ সহজ। ১২% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাথে কয়েক ফোঁটা অ্যামোনিয়ার মিশ্রণে তৈরি লিকুইড ক্লিনার দিয়ে এ দাগ সহজেই তোলা যাবে। তবে কালো রঙের মার্বেল পাথরের ক্ষেত্রে এই মিশ্রণ ব্যবহারে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অধিক সময় এর ব্যবহারে কালো রঙের মার্বেলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে।

গোসলখানায় পানির দাগ

গোসলখানার দেয়ালে প্রতিনিয়ত পানির ছিটা কিংবা সাবান/ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানির ছিটা পড়ে, তাতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ তৈরি হয়। তবে এই দাগ দূর করাও বেশ সহজ। একটি মাঝারি আকারের বালতিতে (৬-৮ লিটার পানি) আধা কাপ অ্যামোনিয়া মিশিয়ে দেয়ালে ভালোভাবে ঘষলেই এ দাগ উঠে যাবে। একদিনে না উঠলে ২/৩ দিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যহত রাখতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, অধিক অ্যামোনিয়া মানেই অধিক পরিষ্কার নয়। বরং অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া ব্যবহার করলে দেয়ালের মার্বেলের রঙ ঝলসে যেতে পারে।

মরচে পড়ার দাগ

ধাতব বস্তু থেকে মরচে পড়ার যে দাগ তৈরি হয় মার্বেলে, তা তুলতে গিয়ে অনেকে মার্বেলের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে থাকেন তীক্ষ্ম বা ধারালো কোনো ধাতব বস্তু দিয়ে ঘষে। যদিও মরচে পড়া দাগ দূর করা দুরূহ ব্যাপার, তবে ধাতব বস্তুর ঘর্ষণ একেবারেই করা যাবে না।

প্রথমত, মোলায়েম ব্রাশ দিয়ে ভালো করে দাগ পড়া অংশগুলো ঘষতে হবে যেন মরচের অতিরিক্ত আবরণই কেবল উঠে যায়, নতুন কোনো দাগ সৃষ্টি না হয়। এরপর পোল্টিস প্রয়োগ করে ঘষতে হবে। টানা কয়েকদিন পোল্টিস প্রয়োগ করলেই কেবল মার্বেলের সূক্ষ্ম ছিদ্রের ভেতর প্রবেশ করা মরচে বের করে আনা সম্ভব হবে। এতেও না হলে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা পেশাদার কাউকে দিয়ে করানো উত্তম।

কালির দাগ

যেসব কালির দাগ পানিতে ধুয়ে দিলে যায় না, সেগুলোর জন্য পোল্টিসই যথেষ্ট। তবে অত্যধিক পরিমাণে কালি পড়লে কিংবা আঠালো এবং স্থায়ী কোনো কালচে দাগ তুলবার জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত অধিক শক্তিশালী লিকুইড ক্লিনার প্রয়োজন। তবে এই লিকুইড ক্লিনার নিজে ব্যবহার না করে পেশাদার কাউকে দিয়ে করানোই যুক্তিযুক্ত। কারণ সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে না পারলে এতে দু’রকম ঝামেলা হতে পারে– মার্বেলের চাকচিক্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, এবং হাতে চুলকানির সৃষ্টি হওয়া।

ধোঁয়া কিংবা আগুনে পোড়া দাগ

দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়ায় থাকলে কিংবা আগুনের সংস্পর্শে মার্বেলে গভীর কালো দাগ হতে পারে যা ওঠানোর জন্য বেশ কসরত করতে হবে। পোল্টিসের প্রলেপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর ভালো করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং সেটি শুকিয়ে এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এভাবে কয়েকবার করার পর মার্বেল প্রাথমিক রূপে ফিরে আসতে পারে।

দেয়ালে কী লাগাবেন- মিরর নাকি পেইন্টিং?

রুচিশীল মানুষের বাড়ি নির্মাণে যতখানি ভাবনা, বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন আর সাজসজ্জায়ও ঠিক ততখানিই। ঘরের দেয়াল যদি হয় আকর্ষণীয় পেইন্টিং কিংবা দর্শনীয় সব মিররের সমাহার, তা সৌন্দর্যই বাড়ায় না কেবল, দেয় মানসিক প্রশান্তিও। ঘরের দেয়ালসজ্জায় মিরর ব্যবহার করবেন নাকি পেইন্টিং- সেটা ঠিক করুন নানারূপ ঘরসজ্জার মিরর আর পেইন্টিংয়ের সাথে পরিচিত হয়েই।

হরেক রকম মিরর ভাবনা

ঝকঝকে গ্যালারি (Glimmering Gallery)– ঘরের দেয়াল সাজানোর একটি সহজ কিন্তু চমৎকার উপায় হলো নানা আকৃতির মিররের ব্যবহার। একই দেয়ালে পাশাপাশি ভিন্ন রঙ, আকার, আকৃতি আর ফ্রেমের মিরর স্থাপন করে দেয়ালকে দিতে পারেন নান্দনিকতার ছোঁয়া।

অফ সেন্টার মিরর (Off Center Mirror)- ঘরের যেকোনো দেয়ালে মিরর লাগানোর প্রচলিত নিয়ম হলো মাঝখান বরাবর স্থাপন করা। টেবিল, শো-কেস অন্য কোনো আসবাবপত্রের উপরে ঠিক মাঝ বরাবর মিরর স্থাপন করার রীতিতে ভুল নেই কোনো। তবে আজকাল মধ্যরেখা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মিরর সাঁটানো হচ্ছে দেয়ালে, যা দেখতে বরং অধিকতর সুন্দর।

মিররড অবজেক্ট (Mirrored Object)– সাধারণ বড় আকারের অর্ধবৃত্তাকার মিরর একটি আয়তাকার বা বার্গাকার মিররের তুলনায় দেয়ালের চেহারাই পাল্টে দেয়, প্রচলিত সজ্জার বাইরে গিয়ে নতুনত্ব আনে। অর্ধবৃত্তের ব্যাস বরাবর সমান দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তু (ওয়ালম্যাট) দেয়ালে টাঙালে সেটি মিররকেও পূর্ণতা পাইয়ে দেয়।

মিররড ডোর (Mirrored Door)– মিররড ডোরের প্রচলন আজকাল বেশ বেড়েছে, কেবল এর নান্দনিক কদরের জন্যই নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এখানে। সাতসকালে অফিসে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে যেতে হয় যাদের, প্রায়ই সময়ের কারণে নিজের সাজসজ্জার দিকে লক্ষ্য করা হয় না। পুরো দরজা জুড়ে একটি বড় আকারের মিরর থাকলে তাই ঘর থেকে বেরোনোর পূর্বে একনজর নিজেকে দেখে নিলে সহজেই পোশাকের বা অঙ্গসজ্জার ত্রুটি ঠিক করে ফেলা যায়।

হ্যাংয়িং উইন্ডো (Hanging Window)– মিররড ডোরের মতো মিররড উইন্ডোর কদরও বাড়ছে। ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো আর স্বচ্ছ কাচের সতেজকারক আবহের জন্য জানালায় মিররের ব্যবহারই এখন স্বাভাবিক। তবে মিররড উইন্ডোর মধ্যে সর্বশেষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উদ্ভাবন হলো হ্যাংয়িং উইন্ডো। দেয়ালে লাগানো গোলাকার মিরর দেখতে সাধারণত ভালোই লাগে। তবে সেটিকে নান্দনিক করে তোলে এই হ্যাংয়িং উইন্ডো। চিকন আর কালো ফ্রেমের গোলাকার একটি মিররকে মাঝামাঝি উচ্চতায় স্থায়ীভাবে না লাগিয়ে বরং ঝোলানো হয় কোনোকিছু থেকে। আর এই ঝুলে থাকা মিররটি যেন কাজ করে একটুকরো ঝুলন্ত জানালা হিসেবে।

ইনভিজিবল মিরর (Invisible Mirror)– ইনভিজিবল বা অদৃশ্য মিরর বলতে মূলত অত্যন্ত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল মিররের কথা বোঝা হয়েছে। ঘরে কোনো ফায়ারপ্লেস থাকলে, কিংবা অন্য কোনো মাঝারি উচ্চতার আসবাবের ওপরে, বিশেষ করে টেবিলের উপরে এই মিরর স্থাপন করা হয়। এটি এতটা স্বচ্ছ থাকে যে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে জানালা দিয়ে পাশের ঘরে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

পেইন্টিংয়ের রকমফের

ওম্বার ওয়াল (Ombre Wall)– ওম্বার ওয়াল পেইন্টিংয়ের মূল উপজীব্য হলো ঘরের সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক আবহ আনা। এই পেইন্টিংয়ে ঘরের দেয়ালকে মনে হতে পারে স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি, পশুর লোম, মসৃণ সবুজ ঘাসের মাঠ, নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো মেঘের দল, কিংবা সকালবেলা সূর্যাস্তের কাঁচা আলো। এই পেইন্টিংয়ের মূল উপকরণ  গ্রেডিয়েন্ট (Gradiant) রঙ, যার মাধ্যমে রঙের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাবল্য বাড়িয়ে কমিয়ে এসব ফুটিয়ে তোলা হয়।

পোলকা ডট ওয়াল (Polka Dot Wall)– হলিউড সিনেমা সুইসাইড স্কোয়াড দেখে থাকলে আপনার পোলকা ডটের সাথে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই। এ সিনেমায় রহস্যময় পোলকা ডট ম্যান তার শরীর থেকে নির্ধারিত সময় পরপর পোলকা ডট ছাড়ে যা দেখতে রঙিন ও চোখধাঁধানো। ঘরের দেয়ালেও সেই পোলকা ডটগুলো পেইন্টিং আকারে বসিয়ে দিতে পারেন। একটু নিগূঢ় ডিজাইনের জন্য ছোট আকৃতির ডট আঁকা যেতে পারে একই রঙের উপর। আবার আপনি যদি চান রঙের খেলা, তাহলে বড় বড় পোলকা ডট ভিন্ন ভিন্ন রঙে পেইন্ট করাই শ্রেয়।

জলরঙ (Water Color)– দেয়ালে জলরঙের ব্যবহার একসময় মানুষের ভাবনার বাইরে থাকলেও এখন তা বেশ প্রচলিত। বিশেষ করে শোবার ঘরে বিছানা বরাবর দেয়ালকে জলরঙে রাঙিয়ে ফেললে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়বে মন ভালো করে দেয়া এক দৃশ্য।

ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ (Vertical Stripe)– ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ বা উল্লম্ব ডোরা সাধারণত বসার ঘরের জন্য উপযোগী একটি পেইন্টিং ডিজাইন। উজ্জ্বল মনোক্রোম্যাটিক (Monochromatic) কোনো রঙের উপর হালকা, প্রশান্তিদায়ক কোনো রঙ ব্যবহার করে লম্বালম্বি স্ট্রাইপ এঁকে এই পেইন্টিং সম্পন্ন করা হয়। বসার ঘরের সাজসজ্জায় এটি ভিন্নতা আনে।

সলিড কালার ব্লক (Solid Colour Block)– একটি ঘরের দেয়ালের রঙ সাধারণত একই রঙে করা হয়। তার উপর নানা ডিজাইন করা হয়ে থাকে। অবশ্য আপনি যদি চান সলিড কালার রেখেই দেয়ালে নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘরের মাঝামাঝি, বিশেষ করে শোবার ঘর হলে বিছানা বরাবর, বিছানার আকার অনুযায়ী একটি সলিড কালার ব্লক পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন ঘরের দেয়ালে। এতে একই রঙের একঘেয়েমি কাটে, এবং এক রঙের মাঝে অন্য রঙের সলিড ব্লকের উপস্থিতি ঘরের অ্যাম্বিয়েন্ট বদলে দেয়।

রেইনবো স্ট্রাইপ (Rainbow Stripe)– একটি-দুটি রঙ বাছাই করতে পারছেন না? চাইলে ঘরের দেয়ালে নিয়ে আসতে পারেন রংধনুর সাতটি রঙই। রেইনবো স্ট্রাইপ নামে পরিচিত এই পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে ঘরের দেয়ালের পরতে পরতে রংধনুর সাতটি রঙ দিয়ে এঁকে ফেলতে পারেন। কেউ কেউ একে রংধনুর মতো অর্ধচন্দ্রাকার করে আঁকেন, অনেকে আবার সমান্তরালেই ডিজাইন করে ফেলেন। রুচি ও রঙের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে স্ট্রাইপগুলোর প্রস্থ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

মিরর কিংবা পেইন্টিং, দুটিই ঘরের দেয়ালের সজ্জায় সমান উপযোগী, যদি আপনি তা ঘরের আসবাবপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করতে পারেন। যেহেতু দুটো সম্পর্কেই জেনে গেলেন, কোনটি আপনার ঘরের জন্য যুতসই হবে সেই সিদ্ধান্ত এখন আপনিই নিতে পারবেন।

আসবাবপত্র ক্রয়ের আগে ভাবতে হবে যে বিষয়গুলো

কিংবদন্তি ব্রিটিশ কবি জন কিটস বলেছেন, “এক টুকরো সৌন্দর্য আমৃত্যু আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।” সেই সৌন্দর্য যেকোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে নেয়া যেতে পারে, আপনার বসবাসের ঘরখানিও থাকবে সেই তালিকায়। যেসব জিনিস প্রতিদিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, ঘর সাজানো তার মাঝে একটি। অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে অনেকে কিছুদিন পর পর ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থান অদলবদল করে থাকেন, তাতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আসবাবপত্র বদলে ফেলা খুব নিয়মিত কোনো ব্যাপার নয়। আর তাই আসবাবপত্র কেনার সময় সবদিক বিবেচনায় রেখে কিনতে হবে, মাথায় রাখতে হবে তার আকার-আকৃতি। কেননা ঘরের আকারের চেয়ে বড় কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ছোট, দুটোই হবে দৃষ্টিকটু।

ঘরের পরিমাপ

ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ক্রয়ের পূর্বে প্রাথমিক কাজ হলো ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সবকিছুর সঠিক মাপ নিয়ে নেয়া। ঘর বর্গাকার নাকি আয়তাকার, সেটির উপরও নির্ভর করবে আসবাবপত্রের আকার। মেঝে থেকে জানালার উচ্চতা, জানালার অবস্থান, আকার এবং এর দু’পাশে অবশিষ্ট দেয়ালের মাপ, সবকিছুই টুকে ফেলতে হবে, যাতে আসবাবপত্র দ্বারা জানালা ঢেকে না যায়। এসবের পাশাপাশি ঘরের দেয়ালে কোনো পিলার থাকলে তার প্রশ্বস্ততা নির্ণয় করাও জরুরি। আর মাপতে হবে মেঝে থেকে সুইচবোর্ডের উচ্চতা। সুইচবোর্ড দেয়ালের যেখানে থাকবে সেই স্থান ফাঁকা রাখাই বাঞ্ছনীয়। অগত্যা কেউ যদি সেখানেও কোনো ফার্নিচার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেটির উচ্চতা সুইচবোর্ডের চেয়ে কম হওয়া আবশ্যক।

এসব মাপ নিতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যা ভুলে যাই তা হলো দরজার মাপ। আপনার আসবাবের আকার অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয় যা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো কঠিন। শুধু তা-ই নয়, দরজার পাশে রাখার পরিকল্পনা করছেন, এরকম কোনো আসবাবপত্র কিনলে অবশ্যই তার আকৃতি দরজার উচ্চতার মাঝামাঝি বা তার চেয়ে কম হওয়া ভালো। এতে ঘরের ঐ অংশের সৌন্দর্য বজায় থাকে।

ঘরের স্কেচ করুন, ছবি তুলুন

ফার্নিচার ক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রস্তুতিই ঘরে বসে সেরে ফেলতে হয়। আর সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হলো ঘরের মেঝের একটি খসড়া ডিজাইন তৈরি করা। প্রথমেই ঘরের কোথায় সোফা, কোথায় টেবিল আর কোথায় বিছানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র রাখছেন তা ঠিক করে ফেলুন, অনুমান অনুযায়ী মেঝেতে সেই বস্তুটি কতটুকু স্থান দখল করবে তা চক দিয়ে টেনে ফেলুন।

পুরো ঘরের কোথায় কী রাখছেন তার দাগ টানা হয়ে গেলে সেটি কাগজে এঁকে নিন এবং একাধিক স্কেচ করে ফেলুন একই মাপের ফার্নিচারগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দিয়ে। ফার্নিচারের দোকানে পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা মাপের ফার্নিচার না-ও মিলতে পারে। একাধিক স্কেচ করার সুবিধা এখানেই। তখন ভিন্ন মাপের আসবাবপত্রগুলোর জন্য ভিন্ন স্কেচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।

এক্ষেত্রে ঘরের ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণও করা যেতে পারে। ফার্নিচারের শো-রুমে আপনি যে আকার, আকৃতি বা রঙের ফার্নিচার দেখবেন, তার সাথে তৎক্ষণাৎ ঘরের ছবি/ভিডিও দেখে উভয়ের কম্বিনেশন যাচাই করে নিতে পারবেন।

বিছানার পরিমাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বিছানার পরিমাপ। সাধারণ বিছানাই বেডরুমের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে, তাই এর অবস্থানও এরূপ হতে হবে যেন ঘরে অবাধ হাঁটাচলা বিঘ্নিত না হয়। বিছানার আকারও ক’জন মানুষ ঘুমাচ্ছে সেই অনুপাতে যতদূর সম্ভব ছোট রাখাই বাঞ্চনীয়। পাঠকের সুবিধার্থে বিছানার কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড আকার উল্লেখ করা হলো:

টুইন বেড- ৩৯″ X ৭৫″

ফুল সাইজ- ৫৪″ X ৭৫″

কুইন সাইজ- ৬০″ X ৭৫″ কিং সাইজ- ৭৬″ X ৭৫″

এছাড়া, বিছানার আকারও নির্ধারণ করতে হবে ঘরের আকার অনুযায়ী। ঘরটি যদি লম্বা হয় তাহলে ছোট আকৃতির টুইন বেডই ভালো। ঘর বর্গাকৃতির হলে বর্গাকৃতির বিছানা যুতসই হতে পারে।

সোফা কিনুন বুঝে-শুনে

ঘরের আকৃতি এবং সজ্জা নির্ধারণ করে যে আসবাবপত্রগুলো, সোফা তার মাঝে একটি। বিছানা বা অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি সোফার জন্য কতটুকু জায়গা থাকছে, তা বুঝে ক্রয় করুন সোফা। একেবারে শূন্যস্থানের মাপ বরাবর সোফা ক্রয় করা মস্ত বড় ভুল। সোফা রাখার পর কফি টেবিল রাখার জায়গা এবং কফি টেবিলের চারপাশে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা বাঞ্চনীয়। পাশাপাশি, সোফার পেছনে রাখতে হবে কিছুটা খালি জায়গা, সাধারণত ১-১.৫ ফুট। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে সোফা রাখা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

চলাফেরার কথা শুরুতেই ভাবুন

আসবাবপত্র কেনা এবং সেসব জায়গামতো বসানোর পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে যা প্রায়ই ভুল হয় সেটি হলো হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, কিংবা থাকলেও তা পরিমিতভাবে বণ্টন না হওয়া। দেয়ালের উচ্চতা, জানালা না ঢেকে ফেলা, দরজা থেকে ঠিকঠাক দূরত্ব রাখা, এসবের মাঝে অনেক সময়ই হারিয়ে যায় ঘরে হাঁটাচলার জায়গা। কখনো বা ঘরে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা থাকলেও পুরো ঘরে বাধাহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো যায় না। কেননা ঘরের একপাশে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তো অন্যপাশে কম হয়। আর এটি হয় ঘরের আসবাবপত্রের আকারের জন্য। হাঁটার জন্য আপনি আপনার ঘরে সোজাসাপ্টা করিডোর রাখতে চান নাকি কিছুটা এলোমেলো পথে হাঁটতে চান, সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচির ওপর। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভাবুন এবং সেই অনুপাতে যুতসই আসবাবপত্র ক্রয় করুন।

যেভাবে স্থাপত্যে মিশে গেল গ্লাস

আধুনিককালের অবকাঠামো নির্মাণশৈলীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে থাই গ্লাস বা আর্কিটেকচারাল গ্লাস। বসত-বাড়ি থেকে শুরু করে অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানা— সর্বত্রই এই গ্লাস ব্যবহারের ছড়াছড়ি। সৌন্দর্যের দিকটা তো রয়েছেই, আছে আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেবার ব্যাপারও। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নতুন যেসব বাড়িঘর বা অফিস ভবন গড়ে উঠেছে, সেসবের কোনোটিই গ্লাসের ব্যবহার ব্যতিরেকে নয়। শহরের ধুলো-ময়লা আর অত্যধিক শব্দদূষণ থেকে বাঁচিয়ে রাখে থাই গ্লাস। পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণে গ্লাসের বিকল্প নেই। গ্লাস বা কাঁচ হলো এমন একটি বস্তু যা আবিষ্কারের পর থেকে অদ্যাবধি খুব বেশি পরিবর্তন ছাড়াই নিত্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও গ্লাস আবিষ্কারের সঠিক ইতিহাস জানা দুষ্কর, তবে গ্লাসের ইতিহাস খুঁজতে গেলে খ্রিস্টের জন্মেরও ৭০০০ বছর পূর্বে, নিওলিথিক যুগে, এর হদিস পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে মিশরীয়দের মাঝে গ্লাসের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। অবশ্য বসতবাড়ি নির্মাণে গ্লাসের নান্দনিকতার ছোঁয়া এসেছে এর ঢের পরে।

আর্কিটেকচারাল গ্লাসের সবচেয়ে পুরাতন রূপটি হলো কাস্ট গ্লাস। পাটা লোহার মতো এই পাটা গ্লাস রেনেসাঁপূর্ব ইংল্যান্ডে ব্যবহার করা হতো। মধ্যযুগে ক্রাউন গ্লাসের আবির্ভাব এর ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দেয়। ক্রাউন গ্লাস মূলত বিলাসবহুল জাহাজের অঙ্গসজ্জায় ব্যবহার করা হলেও দ্রুতই এটি ধনাঢ্যদের বাড়ির জানালায় স্থান করে নেয়। সিলিন্ডার গ্লাস, ড্রন শিট, কাস্ট প্লেট গ্লাস- সবই একে একে অবকাঠামো নির্মাণের সাথে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে। প্রাথমিকভাবে এসব গ্লাস মূলত গবেষণাগার, প্রাসাদ আর ধনী ব্যক্তিদের বাড়িঘরে শোভা পেত।

এরপর রোলড প্লেট গ্লাস নামে আরেক প্রকার অমসৃণ গ্লাসের উদ্ভব হয় যা মূলত বড় আকারের জানালায় ব্যবহার করা হতো। প্রিজম গ্লাসের আগমন গ্লাসের ব্যবহারে বিলাসিতার মাত্রা আরেকটু চড়িয়ে দিলেও গ্লাস ব্লকের আগমন তা মধ্যবিত্তের নাগালের মাঝে নিয়ে আসে।

এরপর ১৭ শতকে ইউরোপে লেড গ্লাস উৎপাদনের প্রযুক্তি তৈরি হলে স্থাপত্যের সাথে গ্লাসের সম্পর্ক অটুট হয়ে যায়। শুরুর দিকে যদিও কৃষি ও গবেষণার জন্য গ্রিন হাউজ এবং কনজারভেটরি নির্মাণে গ্লাস ব্যবহৃত হতো। ১৮ শতকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাড়িঘরের জানালায় গ্লাসের ব্যবহার শুরু হয় এর সৌন্দর্যের জন্য। শুরুতে যদিও একে বিলাসিতা মনে করা হতো, শিল্পবিপ্লবের সাথে সাথে দ্রুতই ধারণা বদলে যেতে থাকে এবং বড় এক্সিবিশন হল, টাউন হলের পাশাপাশি রেলওয়ে স্টেশন আর সরকারি দালানকোঠায়ও গ্লাস উঁকি দিতে শুরু করে। দ্রুতই গ্লাসের দরজা-জানালাকে আরও টেকসই করতে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য ধাতব বস্তুর ফ্রেমিংয়ে আবদ্ধ করা শুরু হয়।

অবশ্য অবকাঠামো নির্মাণে গ্লাসের ব্যবহারে বিপ্লব ঘটায় কিছু যুগান্তকারী ভবনের নির্মাণ। ১৮৫১ সালে স্থপতি জোসেফ প্যাক্সটন লন্ডনে ক্রিস্টাল প্যালেস নির্মাণ করে স্থাপত্যশিল্পে গ্লাস ব্যবহারের ধারণা চিরতরে বদলে দেন। তিনি সেসময় প্রচলিত অস্বচ্ছ লেড গ্লাসের পরিবর্তে স্বচ্ছ এবং ঝকঝকে (গ্লেজি) গ্লাস দিয়ে চোখ ধাঁধানো এক দালান নির্মাণ করেন। তার এই ভবন নির্মাণই আর্কিটেকচারাল গ্লাসের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। যদিও তিনি এরূপ গ্লাস সৌন্দর্য নয় বরং ইন্টেরিয়রে সূর্যালোক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। তথাপি নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ক্রিস্টাল প্যালেস সার্বজনীন প্রশংসা পায় এর সৌন্দর্যের জন্য।

ক্রিস্টাল প্যালেসের হাত ধরে স্বচ্ছ গ্লাসের ব্যবহার শুরু হয়ে গেলেও প্রখর সূর্যালোক কিছুটা ঝামেলারও হয়ে দাঁড়ায়। এর কয়েকবছর পর লিভারপুলে ওরিয়েল চেম্বার নামে একটি ভবন নির্মাণে রঙিন গ্লাসের পরীক্ষা চালান স্থপতি পিটার এলিস। তিনি প্রথমবারের মতো গ্লাস কার্টেইন ওয়ালের ব্যবহার করেন যা ছিল স্থাপত্যে গ্লাস ব্যবহারের আরেকটি যুগান্তকারী অধ্যায়। তার এই পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে গ্লাস নির্মিত কার্টেইন ওয়ালের ব্যবহার বেড়ে যায়।

এরপর ১৯ শতকের শেষভাগে এবং ২০ শতকের শুরুর সময়ে আমেরিকায় ‘অল-গ্লাস বিল্ডিং’ ব্যাপক প্রচলন হয়। এরূপ ভবনগুলোয় মূলত ভবনের পুরো বহিরাবরণটাই গ্লাস দ্বারা নির্মাণ করা হতো। স্বচ্ছতা আর উজ্জ্বলতাই ছিল তখন মুখ্য। ভবনের বহিরাবরণে ধীরে ধীরে কনক্রিটের জায়গা নিয়ে নিল গ্লাস, এবং সময়ের সাথে ঝকঝকে-চকচকে স্বচ্ছ গ্লাসকে প্রতিস্থাপন করলো অনুজ্জ্বল, মসৃণ ও আধা-স্বচ্ছ গ্লাস।

প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে হাজারো রঙের, ডিজাইনের আর ভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৈরি গ্লাস। এনিলিড গ্লাস, হিট স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, কেমিক্যালি স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, হিটেবল গ্লাস, ইনসুলেটিং গ্লাস, টাফেন্ড গ্লাস, ইত্যাদি। এমনকি ভূমিকম্পের কম্পন এবং উচ্চমাত্রা কম্পন বিশিষ্ট শব্দতরঙ্গ সহনশীল সাইজমিক গ্লাসও তৈরি হচ্ছে আজকাল।

বর্তমান সময়ে আর্কিটেকচারাল গ্লাস তথা রঙ-বেরঙের থাই গ্লাস ভবন নির্মাণের একটি অপরিহার্য উপাদান। বিশ্বজুড়ে এই গ্লাস শিল্পের বাজার এখন কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের। এই বাজারে ফ্রেঞ্চ বহুজাতিক কোম্পানি সেইন্ট গোবেন সর্বোচ্চ মুনাফা নিয়ে রাজত্ব করছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি (২০২০ সালের হিসেব)। এছাড়াও পিপিজি ইন্ডাস্ট্রি, নিপ্পন শিট গ্লাস কোম্পানি, কর্নিং ইন্টারন্যাশনালের মতো বড় বড় বৈশ্বিক গ্লাস রপ্তানিকারক রয়েছে বাজারে।

ঘরের সিলিংয়ের সৌন্দর্য বাড়াবেন কীভাবে?

আমাদের বাসস্থান কিংবা কর্মস্থল, যেকোনো স্থানের অন্দরমহলের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সচেতন সবসময়ই। নিত্য-নতুন নকশার সব আসবাবপত্র কিংবা রঙের পরিবর্তন, আবার কখনোবা নতুন ধরনের লাইটের সংযোজন- সবকিছু মিলিয়েই বেড়ে উঠে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। 

অন্দরমহলের সজ্জা বললে হয়তো সবার শেষে আমাদের বিবেচনায় আসে সিলিংয়ের নকশার কথা। কারণ, চিরকালই সিলিং বলতে আমরা কেবল মাথার উপর এক খণ্ড সাদা সরল তলকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এটিও যে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করার বিষয়, তা বোঝা যায় আধুনিক সময়ে এই সিলিং নকশার পেছনেও নকশাকারদের বিশদ পড়াশোনা এবং বিচার-বিবেচনা থেকে।

প্রকারভেদ

ব্যবহার ও নকশার উপর ভিত্তি করে কয়েক রকমের সিলিং বেশি দেখা যায়। যেমন-

  • কনভেনশনাল সিলিং
  • সাসপেন্ডেড সিলিং
  • ক্যাথেড্রাল সিলিং
  • শেড সিলিং
  • কোভ সিলিং
  • বীম সিলিং

সিলিংয়ের নকশার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ছাদের স্ট্রাকচার বহাল রেখে ফলস সিলিং কিংবা সিলিং টাইলসের মাধ্যমে নকশা করা হয়। সিলিংয়ের নকশা রুমের কার্যকারিতা, নির্মাণকাল, লোকেশন ও নকশার বাকি রুমের সাথে সামঞ্জস্যতা এসবের উপরও নির্ভর করে। মুঘল আমলের কোনো স্থাপনার সিলিংয়ের সাথে যেমন এখনকার কোনো সিলিংয়ের মিল খোঁজা ভিত্তিহীন, তেমনি বাসস্থানের বিভিন্ন রুমের সিলিংয়ের সাথে বিপণি-বিতান বা অফিসের সিলিংয়ের সাদৃশ্যও নেই বললেই চলে।

শহর ও গ্রামভেদে সিলিংয়ের পরিবর্তন

কেবলমাত্র কংক্রিটের তৈরি বাড়িতেই নয় বরং গ্রামাঞ্চলে টিনের তৈরি ছাদের ক্ষেত্রেও সিলিং ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। একসময় টিনের তৈরি ঘরের ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই, ছন, খড় এসব দিয়ে সিলিং তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে পিভিসি প্লাস্টিক সিলিংয়ের বহুমাত্রিক ব্যবহারে সিলিংয়ে পরিবর্তন এসেছে। সাশ্রয়ী মূল্যের এই সিলিংয়ের সহজ ব্যবহার, কম খরচে মেরামতযোগ্যতা, সহজলভ্যতাসহ নানাবিধ গুণ রয়েছে। 

ফলস সিলিংয়ের ব্যবহার

আমাদের বাসা কিংবা অফিসে বর্তমানে ফলস সিলিংয়ের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। আসল সিলিংয়ের নিচে জিপসাম বোর্ড, কাঠ কিংবা প্যারিস প্লাস্টারের এক বা একাধিক লেয়ারের সিলিং সংযোজন করা হয় এধরনের সিলিংয়ে। নকশার পরিবর্তন কিংবা দৃষ্টিনান্দনিকতার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কারণে ফলস সিলিং ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ওয়্যারিং ঢাকা, রুমের টিভি, হোম থিয়েটারের একুইস্টিক (শাব্দিক) সামঞ্জস্যতা রক্ষা এবং শীতপ্রধান দেশে ঘরের তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের উপর ভিত্তি করে যে কয়েক রকমের ফলস সিলিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো- 

  • জিপসাম সিলিং
  • উডেন সিলিং
  • প্যারিস প্লাস্টার সিলিং
  • মেটাল সিলিং
  • সিন্থেটিক ফাইবার সিলিং

সিলিংয়ের নকশা এবং রং

বাড়ির কোন রুমের জন্য সিলিং ডিজাইন করা হচ্ছে তা প্রথমে দেখে নিতে হবে। সাধারণত বসার ঘর, শোবার ঘর, শৌচাগার ভেদে সিলিংয়ের নকশায় তারতম্য হয়ে থাকে। রুমভেদে সিলিংয়ের উচ্চতার পার্থক্য হয়। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে যে ফলস সিলিং যোগ করা হয় তার অবকাশ সবসময় থাকে না। 

বিভিন্নভাবে সিলিংয়ের রঙের মাধ্যমে রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণত ছোট রুমকে বড় দেখানোর জন্য হালকা রঙের শেড ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কম উচ্চতার সিলিংয়ে কিছুটা গ্লসি রঙ ব্যবহার করলে উচ্চতার পার্থক্য অনুভূত হয়। 

রঙের সাথে সাথে সিলিং ও ফলস সিলিংয়ের বিভিন্ন নকশা নিয়েও কাজ করা যায়। বর্তমান সময়ে সিলিং-সাইড ধরে চারকোনা নকশা কিংবা মাঝে গোল নকশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দিকে ও জায়গায় স্পট লাইট, রিসেসড লাইট কিংবা পেন্ডেন্ট লাইটের সংযোজন করা যেতে পারে। কিন্তু সিলিং যে কাঁচামালেই তৈরি হোক না কেন, পানিরোধক না হলে অচিরেই সিলিং অকেজো হয়ে পড়ে। সাধারণত সিলিংয়ের পানিরোধন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভেতরের দিকে পলিইউরেথিন সিলার ব্যবহার করা হয়। বাথরুমের সিলিংয়ের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব কমানোর জন্য সেমি গ্লসি কিংবা অয়েল বেসড রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিলিং তৈরির সময় আগুনের বিষয়ে সতর্কতার কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত রান্নাঘর কিংবা আগুনের সংস্পর্শে আসা সিলিংসমূহের ক্ষেত্রে এটি বিবেচ্য। এক্ষেত্রে প্লাস্টারবোর্ড সিলিং, ফাইবারড সিলিং ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলিং যে ম্যাটেরিয়াল কিংবা নকশাতেই তৈরি হোক না কেন, সিলিংয়ের পরিচর্যার অভাবে অনেক সময়েই সিলিংয়ের কাঠামো কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে সিলিং পরিষ্কার, ভালো মানের রং ব্যবহার ও যেকোনো সমস্যা অচিরেই মেরামত করা বাঞ্ছনীয়। সেইসাথে সিলিং বিষয়ক যেকোনো প্রশ্নের উত্তর ও নির্মাণ বিষয়ক খুঁটিনাটি জানাতে আপনাদের সাথে আছে হোম বিল্ডার্স ক্লাব। 

ছাদের ওপর পানির ট্যাংক: বাড়ির স্ট্রাকচারের কথা আমলে এনেছেন তো?

আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়ির বিভিন্ন অংশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওভারহেড ট্যাংকের কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। ওভারহেড ট্যাংক ধ্বসে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু সাবির্ক স্ট্রাকচার ও গুরুত্বের বিবেচনায় ওভারহেড ট্যাংকের ভূমিকা অতুলনীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওভারহেড ট্যাংক কী ও এটি কীভাবে স্থাপিত হয়।

ওভারহেড ট্যাংকের প্রকারভেদ

সাধারণত ভবনে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য বাড়ির ছাদে যে জলাধার স্থাপন করা হয়, তাকেই প্রচলিত ভাষায় ওভারহেড ট্যাংক বলে। গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী দুই ধরনের ওভারহেড ট্যাংকের ব্যবহার দেখা যায় –

১. প্লাস্টিক ট্যাংক

২. কংক্রিট নির্মিত ট্যাংক

প্লাস্টিক ট্যাংক পলিইথিলিন নির্মিত এবং কংক্রিটের ট্যাংক কংক্রিট ও ক্ষেত্রবিশেষে ফেরোসিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়। সুবিধা অসুবিধা এবং বহনযোগ্যতার কথা বিবেচনায় এখন প্লাস্টিকের ট্যাংকের প্রয়োগ বেশি দেখা গেলেও স্থায়িত্ব বিবেচনায় কংক্রিটের ট্যাংকের ব্যবহার এখনও বহুল প্রচলিত। কিন্তু কংক্রিট ট্যাংক নির্মাণের সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন স্ট্রাকচারের খুঁটিনাটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কংক্রিট ট্যাংকের বিস্তারিত।

ট্যাংকের আকার কেমন হবে?

প্রথমেই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় ট্যাংকের আকার নির্ধারণ নিয়ে। ট্যাংকের আকার সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারের প্রকৃতি এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর। একজন ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি প্রতিদিন ১৫০ লিটার এবং পানযোগ্য পানি ৪ লিটার বিবেচনা করে মোট প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ বের করা হয়।

যেমন- ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ, (১৫০+৪) x ৫ = ৭৭০ লিটার, অর্থাৎ পানির আয়তন হলো ০.৭৭ কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১.২ মিটার দৈর্ঘ্যের, ০.২ মিটার প্রস্থের ও ০.৭৭ মিটার উচ্চতার ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে। উপরে ফাঁকা অংশের পরিমাণ হবে ০.১ মিটার। এভাবে সকল সদস্যের পানির প্রয়োজনীয়তার হিসাব করে ট্যাংকের আকার নির্ধারণ করা হয়।

নির্মাণ করবেন কীভাবে?

এবারে আসা যাক ট্যাংক নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে। ট্যাংকের আকারের উপর নির্ভর করে এর স্ট্রাকচার ডিজাইন করা হয়। বাংলাদেশে আয়তাকার ও বর্গাকার আকৃতির কংক্রিট ট্যাংক হয়ে থাকে। পানির আধার হওয়ার কারণে সাধারণত ছাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে কিছুটা উপরে এই ট্যাংক স্থাপনের কাজ করা হয়। ট্যাংকটির নির্দিষ্ট একটি লোড থাকার কারণে নিচের ফ্লোরগুলোর স্ট্রাকচারের উপর ভিত্তি করে এটি স্থাপন করা হয়। 

হাইরাইজের ক্ষেত্রে তা সাধারণত কোরের (core) ওপর স্থাপন করা হয়। এতে লোড সমভাবে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। লোডকে সমভাবে বণ্টন না করলে পানির চাপে স্ট্রাকচার ফেইল করে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। তাই স্ট্রাকচার ডিজাইন অনুযায়ী নির্দেশিত পরিমাণ রড এবং বন্ডিং সঠিকভাবে মেনে চলে এবং বিল্ডিংয়ের প্রধান বীম-কলাম লেআউটের উপর নির্ভর করে এই ট্যাংক নির্মাণ করলে সম্ভাব্য সকল বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। 

পানির লিকেজ বন্ধ করাও ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে কংক্রিটের সাথে ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টারের ক্ষেত্রেও ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল মেশানো হয়। এছাড়া নির্মাণের সময়ই সঠিকভাবে ইনলেট ও আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে।

কংক্রিট ওভারহেড ট্যাংকের ক্ষেত্রে নির্মাণের পরও নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। ট্যাংকের ঢালাই কাজের সময় ও লিকেজ বন্ধের প্রক্রিয়াতে চাই বাড়তি সচেতনতা। বিভিন্ন বড় দুর্যোগ এবং পানির চাপে ট্যাংক ধ্বসে পড়া থেকে রক্ষা করতে বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারের বিবেচনায় লোড ও বেন্ডিং মোমেন্ট হিসাব রেখে নির্মাণ করা অতীব জরুরি। ভবন নির্মাণের সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিৎ সবার নিরাপত্তার কথা ভেবেই।