নিজের বাড়ির স্বপ্নপূরণ: হোম লোনের খুঁটিনাটি

সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে মানুষ বানায় তার স্বপ্নের বাড়ি। যে বাড়ির অন্দরে বাহিরে লুকিয়ে থাকে শত স্বপ্ন, সাধ, আহ্লাদ। এই বাড়ি বানানোর জন্য মানুষ সঞ্চয় করে, তার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলে আপন মনের ঠিকানা- একান্ত নিজের একটি বাসা। কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যেটার জন্য মানুষ ব্যাংক বা এরকম ঋণপ্রদায়ী সংস্থা থেকে সহায়তা নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চুক্তি আর কিস্তিতে সাজানো স্কিমে আপনাকে ঋণ দেবে- যা ‘হোম লোন’ বা গৃহঋণ স্কিম নামে পরিচিত। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য জানা প্রয়োজন এই লোন কী, কেন নিবেন, কীভাবে নিবেন এবং কী কী ভাবনার পরে আপনি পছন্দ করবেন আপনার হোমলোন স্কিম। আসুন আজকে এই বিষয়গুলোই দেখে নেই এই লেখা থেকে।

হোমলোন কী?

হোমলোন হলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিশোধযোগ্য, নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তিতে পরিশোধ করার উপযোগী (ইএমআই ভিত্তিক) ঋণ প্রদানের পলিসি, যেই ঋণ উপযুক্ত ব্যক্তিকে ব্যাংক বা নির্ধারিত সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ক্রয়ের জন্য দেওয়া হয় ব্যক্তির মাসিক আয় এবং স্বক্ষমতার ভিত্তিতে।

কেন নেবেন হোম লোন?

আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে প্রধান যে বাধা তা হলো, সময় এবং অর্থ। আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সেটা আপনার হাতে না-ও থাকতে পারে। এছাড়াও এই বাস্তবায়নের জন্য লাগবে সুদীর্ঘ একটি সময়, যেখানে সর্বদা অর্থের যোগান থাকতেই হবে। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য ব্যাংক এবং বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় রেটে দেয় হোম লোন। হয়তো বাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা প্রয়োজন, সেই টাকা একসাথে যোগাড় করা আপনার পক্ষে সম্ভব না, আর এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে আপনার স্বপ্ন পূরণও সম্ভব নয়। একারণেই হোম লোন নিয়ে বাড়ির কাজ করে ধীরে ধীরে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার পদ্ধতিটির উদ্ভাবন। সেইসাথে বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুসারে, হোম লোনের ইন্টারেস্টের কারণে আয়করেও ছাড় রয়েছে।

কতটুকু লোন নেয়ার জন্য আপনি উপযুক্ত?

হোম লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে আগে ভাবতে হবে আপনি কতটুকু ঋণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত, কতটুকু আপনার সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করবে। এই ক্ষমতা নির্ভর করবে আপনার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা কতখানি তার উপর। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনার আয় এবং আনুষঙ্গিক খরচের পরে আপনার কতটা উদ্বৃত্ত থাকে তার উপর। ব্যাংক বা এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার উপযুক্ততা নির্ধারণ করবে আপনার বা আপনার স্বামী/স্ত্রীর আয়-উদ্বৃত্ত, সম্পত্তি, দেনা, আয়ের সুস্থিতিশীলতা ইত্যাদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভিত্তিতে।

ব্যাংকের আসল বিবেচনার বিষয় হচ্ছে আপনি আপনার ঋণ সঠিক সময়ের মধ্যে শোধ করতে পারবেন কিনা। আপনার আয়-উদ্বৃত্ত যত বেশি হবে, আপনি তত বেশি পরিমাণ ঋণের জন্য উপযুক্ত। আয়-উদ্বৃত্ত মানে হলো সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স বাদ দিয়ে আপনার আয়। ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানভেদে এই পরিমাণের হেরফের হয়, কিন্তু গড়পড়তায় ব্যাংক ধরে নেয় আপনার আয়- উদ্বৃত্তের ৫০ শতাংশ ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ। কত সময়ের জন্য ঋণ নিচ্ছেন আর কত শতাংশ ইন্টেরেস্টে ঋণ নিচ্ছেন এটিও লোন নেয়ার পরিমাণকে ঠিক করতে সহায়তা করে। এইসব কিছু বিবেচনা করে ব্যাংক আপনাকে একটি লিমিট ঠিক করে দেবে, যা আপনি কতটুকু ঋণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত তা ঠিক করতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন পেশার উপর একটা নির্ধারিত হারে ইন্টারেস্ট রেট আরোপ করে। সাধারণত আমাদের দেশে এই হার ৮.৫-১১% এর মধ্যে স্থির করা হয়।

সর্বোচ্চ কতটুকু লোন আপনি নিতে পারবেন?

আপনি লোন গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হলে, অধিকাংশ ব্যাংক কিংবা লোন প্রদায়ী সংস্থাগুকে তাদের নীতিমালা অনুসারে আপনার ফ্ল্যাট বা বাড়ির দামের ১০-২০% টাকা এককালীন ডাউন পেমেন্ট হিসেবে দিতে হবে। বাকি ৮০-৯০% টাকা আপনাকে ঋণপ্রদায়ী সংস্থা কিংবা ব্যাংক দেবে। আপনার রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা হস্তান্তরের ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি ফি ইত্যাদি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মোট প্রদানকৃত অংকের অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সাধারণত ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাধিক কত ঋণ পাবেন সেটার ভিত্তিতে আপনাকে লোনের পরিমাণ দেখায়, কিন্তু এটি আপনাকে পুরাটাই নিতে হবে এমন নয়। আপনি আপনার সুবিধামতন এই পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে কম পরিমাণ ঋণ নিতে পারেন। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, ডাউন পেমেন্ট বেশি হলে এবং লোনের পরিমাণ কম হলে, আপনার ইন্টারেস্টের পরিমাণও কমে যাবে। যেটা আপনার জন্য পরবর্তীতে স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কী কী লাগবে?

আপনি যদি লোন নিতে চান আপনার সাথে আইন ও নীতিমালা অনুসারে কিছু দরকারি কাগজপত্র এবং তথ্য সাথে থাকতে হবে। আপনি প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পরে আপনি সে প্রতিষ্ঠানের হোম লোন সেকশনের মানদণ্ড এবং চাহিদা মোতাবেক আপনাকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এরজন্য মূলত যেসব তথ্য অবশ্যই লাগবে তা হলো:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র

২. ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

৩. ট্যাক্স পরিশোধের সার্টিফিকেট

৪. বায়না, মালিকানার দলিল

৫. মূল্যমানের যথাযথ দলিল

৬. ইন্স্যুরেন্স এর কাগজপত্র

৭. মোক্তারনামা বা যথাযথ লিখিত অনুমোদনপত্র

এসব ছাড়াও আপনাকে আপনার অবস্থা বুঝে আরো কিছু তথ্য দিতে হতে পারে। আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে আপনাকে ১ বছরের বেতনের স্টেটমেন্ট এবং এর সাথে যেই প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিচ্ছেন সেখানে একজন ইন্ট্রোডাক্টর লাগবে যার সূত্রে আপনাকে ব্যাংক ঋণ দেবে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির সার্টিফিকেট ও পার্টনারশিপের কাগজপত্র দেখাতে হবে, সাথে আপনার বিগত বছরের ইনকাম স্টেটমেন্ট দিতে হবে।

আপনি যদি সেলফ এমপ্লয়েড বা উদ্যোক্তা হন তাহলে আপনাকে নিজস্ব প্যাডে, দলিলকৃত সই, সিল সহ পেশাগত সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে। আর আপনি যদি নিজে জমির মালিক হন তাহলে আপনাকে  বিলের কাগজপত্র দেখাতে হবে।

কোথায় পাবেন হোমলোন?

বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল কোম্পানি আর ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব কিংবা সরকারি পূর্ব-নির্ধারিত হারে আপনাকে ব্যাংকের স্কিম অনুযায়ী লোন দেয়। সাধারণত ব্যাংকে নিজস্ব একাউন্ট থাকলে বা লেনদেন থাকলে হোম লোন পাওয়া সুবিধাজনক হয়। বিভিন্ন বেসরকারি কিংবা সরকারি ব্যাংক, বীমা কিংবা ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর হোম লোন স্কিম তাদের সাইটেই পাওয়া যায়, যেখান থেকে তুলনা করার পরে আপনার জন্য কোনটি সুবিধাজনক সেটি পছন্দ অনুসারে বেছে নিতে পারেন। সরকার এবং ব্যাংক অনুমোদিত যেকোন পদ্ধতিতে আপনি এই হোমলোন পরিশোধ করতে পারেন।

বাড়ি বানানোর জন্য কত টাকা লাগবে আমার?

বাজেট

সবার আগে, আপনার একটা বাজেট বানাতে হবে বাড়ি বানানোর জন্য। সেটা ব্যাংক থেকে  ধার করে হোক বা নিজের জমানো টাকা দিয়ে হোক, আপনি জানেন বাজেট থাকলে আপনারই সুবিধা হবে কোন জায়গায় বাড়ি বানাতে চান কিভাবে বানাতে চান সেটা নির্ধারণ করার জন্য। সবসময় বাড়ি বানানোর খরচের থেকে  ০-১০% বেশী খরচ হিসাব করে রাখবেন , কেননা বাড়ি বানাতে গেলে অনেক অজানা খরচ ও হয়ে যায় যা কি না আপনি আগে ও জানতেন না।

টাকা প্রদান পদ্ধতি

ব্যাংকে ধার করার পর তা কিভাবে শোধ করবেন সেটা ভালো করে আগে থেকেই বুঝে নিবেন। আপনি ব্যাংক থেকে ধার করলে মাসিক কিস্তিতে আপনাকে মর্টগেজ বিল শোধ করতে হবে। আগে থেকেই অন্তত ১২ মাসের কিস্তির টাকা জমিয়ে রাখবেন না হলে প্রতি মাসে ধার শোধ করতে গেলে আপনার মাসিক আয়ের উপর অনেক চাপ পড়বে।

একজন কন্ট্র্যাক্টর রাখুন

বাড়ি বানানোর কাজে হাত দেওয়ার আগে একজন ভালো কন্ট্র্যাক্টর রাখুন কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্য। আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিজ এলাকার ভালো কন্ট্র্যাক্টর কে, সে আগে যার যার কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলে দেখুন সে আসলে কি রকম কাজ করে।

গড়ে খরচ কেমন হতে পারে?

বাড়ি বানানোর জন্য জায়গা খরচ, বানানো খরচ, শ্রমিকের খরচ, বিভিন্ন উপাদান কেনার খরচ এসবের পাশাপাশি ও বিভিন্ন আয়কর ও ইন্স্যুরেন্স এর কথা মাথায় রাখতে হয়, যেটার খরচ আপনার বাড়ি বানানোর আগেই লাগবে। দেশীয় নিয়মের কথা চিন্তা করলে, বিল্ডারের ইন্স্যুরেন্স ও অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে আপনার। সাধারণত একটা ২০০০ বর্গফুটের বাসার জন্য ৫,০০০,০০০ থেকে ৭,০০০,০০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে বাসার মধ্যে কি কি খরচ করবেন সেটা এর মধ্যে হিসাব করা নেই। আপনার খরচ অনেক নির্ভর করবে আপনি কি রকম কন্ট্র্যাক্টর রেখেছেন তার উপরেও। আরো কিছু বিষয় আছে যার জন্য খরচ হয় সাধারণত –

  • জায়গা কোথায়
  • এলাকার জায়গার দাম
  • জিনিসপত্রের দাম
  • স্থাপত্য ডিজাইন
  • প্রপার্টির স্কয়ার ফুটেজ ইত্যাদি

প্রপার্টি বাবদ খরচ বাদে একজন ক্রেতা কে আর কি কি খরচের ব্যাপারে অবগত থাকতে হয়?

প্রপার্টির খরচ বাদেও অনেক খরচ আছে যেমন, আইনি ও ট্যাক্সের বিভিন্ন খরচ, যা একজন ক্রেতাকে বহন করতে হয়। একটা প্রপার্টি কেনার সম্পূর্ণ খরচ আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে যেমন জায়গা কোথায়, জায়গার খরচ ক্রেতা কিভাবে পরিশোধ করবেন ইত্যাদি। এ জন্যই একজন ক্রেতাকে সবসময় পেশাদার ব্রোকার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও উকিলের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো একজন ক্রেতাকে মাথায় রাখতে হয় আর কি কি খরচ করতে হবে –

ডকুমেন্ট স্ট্যাম্প ট্যাক্স

সকল ধরণের কাগজপত্রের উপরেই বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্যাক্স ধরা হয়। একজনের কাছ থেকে যখন আরেকজনের কাছে প্রপার্টি হস্তান্তর হয় তখন জায়গার দামের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স ধার্য করা হয়ে থাকে যেটা ক্রেতাকে প্রদান করতে হয়।

হস্তান্তর ট্যাক্স

আসলেই কতটুকু ট্যাক্স প্রদান করতে হবে প্রপার্টি কেনার সময়, সেটা জানার জন্য এসব সম্পর্কে যে জানে তার সাথে আগে থেকেই কথা বলে রাখতে হবে। তিনি তখন ক্রেতাকে পুরো বাড়ি বানানোর সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি ট্যাক্স দেওয়া লাগবে সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে পারবেন।

রেজিস্ট্রেশন ফি

প্রপার্টি কেনার সময় বা হস্তান্তরের সময় এক ধরণের রেজিস্ট্রেশন ফি থাকে, বিভিন্ন ধরণের প্রপার্টির জন্য বিভিন্ন ধরণের রেজিস্ট্রেশন ফি থাকে।

লোন ফি

সাধারণত যেকোন ক্রেতাই প্রপার্টি একেবারে কেনার থেকে কিস্তিতে কিনতে বেশী পছন্দ করেন, কিন্তু কিস্তিতে কিনতে গেলে মূল দামের থেকেও বেশী দাম দিতে হয় একটু, কেননা ট্যাক্স যুক্ত হয়ে যায় তখন। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও মাথায় রাখতে হয়।

নটোরিয়াল ফি

ডিড কে নটোরাইজ করার জন্যেই প্রপার্টি কেনার সাথে সাথে ঐ বাবদ আরেকটু খরচ করতে হয়।

হোম লোন কি? হোম লোনের ধরণ, বৈশিষ্ট্য এবং নেওয়ার যোগ্যতা

হোম লোনঃ

একটি হোম লোন একটি নিরাপদ ঋণ যেখানে একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনাকে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি ক্রয়ের জন্য  টাকা ধার দিতে পারে। এটি সাধারণত অন্যান্য ঋণের প্রকারের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী সময় সীমার জন্য দেওয়া হয়। কারণ ,ঋণের পরিমাণ সাধারণত বেশি হয় এবং তা ফেরত দেওয়ার জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়।

হোম লোনের ধরণঃ

  • হোম ক্রয় ঋণ: একটি নতুন বাড়ি কেনার সময় এই ঋণ গ্রহণ করুন।
  • জমি ক্রয় ঋণ: বিনিয়োগ বা নির্মাণ উদ্দেশ্যে কোন সম্পত্তি কিনতে এই ঋণ নিতে পারেন।
  • গৃহ নির্মাণ ঋণ: যদি আপনি ইতিমধ্যে মালিকানাধীন জমির উপর একটি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য নির্বাচন করুন।
  • গৃহ উন্নয়ন ঋণ: যখন আপনি একটি বাড়ি মেরামতের বা পুণঃনির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঋণ নিবেন তখন এটা বেছে নিন।
  • হোম লোন ট্রান্সফার: বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নিম্ন সুদের হারের সুযোগ গ্রহণের জন্য একটি নতুন ঋণদাতার এ্যাকাউন্ট বিদ্যমান হোম লোনকে ট্রান্সফার করুন।

হোম লোন এর বৈশিষ্ট্যঃ

  • এটা একটি নিরাপদ ঋণ। অর্থাৎ, ঋণদাতা আপনার বাড়ি / সম্পত্তিকে একটি নিরাপত্তা হিসাবে বিবেচনা করে। যদি আপনি ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হন ,তবে ঋণদাতা আপনার বাড়ি/সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা উত্তোলন করার অধিকার পাবেন।
  • এই ঋণের জন্য ফেরত সময়সীমা ৩ থেকে ২৫ বছর রেঞ্জের মধ্যে হয়। হোম লোনের সমান মাসিক কিস্তি (ইএমআই) মূল পরিমাণ এবং সুদ যোগ করে মোট গণনা করা হয়। হোম লোনে নিবন্ধন চার্জ, প্রক্রিয়াকরণ ফি, প্রাক্কলন, প্রতিশ্রুতি চার্জ এবং বিবিধ চার্জ (ডকুমেন্টেশন/পরামর্শ) এর মত খরচ ও অন্তর্ভূক্ত।

হোম লোন নেওয়ার জন্য যে যোগ্যতা থাকা দরকারঃ

যোগ্যতা কোন এক ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যের পরিবর্তিত হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে:

  • Any salaried, self-employed or business person with Bangladeshi nationality can apply for a home loan .
  • বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে কোন বেতনভোগী, স্বনির্ভর বা ব্যবসায়িক ব্যক্তি একটি হোম ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন ।
  • আপনার বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে ।
  • আপনার ঋণের সময়কালীন পরিশোধের জন্য আয়ের একটি নিয়মিত উৎস থাকা উচিত ।
  • আপনার পেশাদার স্থায়িত্ব এবং সঞ্চয় ইতিহাস দ্রুত ঋণ অনুমোদনে সাহায্য করবে ।
  • হোম লোনের জন্য আবেদন করার আগে খেয়াল রাখুন অন্তত তিন মাস আগ পর্যন্ত আপনার কাছে কোন খারাপ ক্রেডিটের ইতিহাস নেই।
  • আপনি যদি একজন বেতনভোগী পেশাদার হন তাহলে আপনার মাসিক গ্রস আয় ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
  • স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য অর্জিত মুনাফা প্রধাণত ঋণের মূল্য নির্ধারণ করে।

হোম লোন নেওয়ার শর্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

হোম লোন – প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ক্রেতাঃ
  • আবেদনপত্র ( ব্যাংকের প্রদত্ত বিন্যাস অনুসারে )
  • এনআইডি এর ফটোকপি
  • ট্রেড লাইসেন্স / বেতন সনদ / প্রবর্তন পত্র
  • গত ৬ মাসের বেতন সনদ
  • টিন সার্টিফিকেট / আয়কর রিটার্ন
  • গত ১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • ব্যক্তিগত নিট মূল্যের বিবৃতি
  • বাণিজ্য লাইসেন্সের সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি
  • নিবন্ধনসমূহের স্মারকলিপি ( লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে )
জমি সংক্রান্তঃ
  1. প্রত্যায়িত ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা খরচ মূল্যায়ন
  1. অনুমোদন পত্রের সাথে অনুমোদিত প্ল্যানের প্রতিলিপি
  1. মূল ক্রয় / বিক্রয় দলিলের প্রতিলিপি।
  1. ( সিএস, এসএ, আরএস ) / ( আরএস, পিএস, বিএস ) খতিয়ান
  1. ডিসিআর-এর সঙ্গে মিউটেশন খতিয়ান
  1. BIA দলিল-এর মূল / সার্টিফাইড কপি, যদি থাকে।
  1. ইজারা দলিল ( ইজারা জমির ক্ষেত্রে )
  2. বরাদ্দকরণ পত্র ( ইজারা জমির ক্ষেত্রে )
  3. সাম্প্রতিক এনইসি ( এসআরও থেকে নন ইনকামব্রান্স সার্টিফিকেট )
জমি সম্পর্কিত নথি ( অ্যাপার্টমেন্ট / ফ্লাট ):
  1. ক্রেতা এবং ডেভেলপারদের মধ্যে প্রধান বিধি কপি
  1. ভূমি মালিক এবং ডেভেলপারদের মধ্যে POA এবং অংশ ভাগ
  1. প্রধান রশিদের ফটোকপি
  1. অনুমোদন চিঠির সঙ্গে প্রধান পরিকল্পনার কপি।
  1. ভূমি মালিকের ডিসিআর, মিউটেশন, খতিয়ান এবং অন্যান্য খতিয়ানসহ প্রধান শিরোনাম ডিপি প্রতিলিপি।
  1. ভূমি মালিকের ইজারা দলিল, বরাদ্দকরণের চিঠি, ডিসিআর, এবং মিউটেশন এর প্রতিলিপি।
  1. সাম্প্রতিক এনইসি ( এসআরও থেকে নন ইনকামব্রান্স সার্টিফিকেট )
  1. একটি প্যাডে ডেভেলপারদের বিবরণ।
ঋণ বিতরণের পূর্বশর্ত :

আগুন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্পের জন্য বিষয় সম্পত্তি বীমা করা উচিত, তবে এর মধ্যে আগুন এবং ভূমিকম্প নীতিমালা গ্রহণ বাধ্যতামূলক।

বাড়ির ঋণ গ্রহণ করার সময় জিজ্ঞাসা করা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ

একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনা কঠিন কাজ, বিশেষ করে যখন আপনি আপনার প্রথম স্বপ্নের বাড়ির অর্থায়ন বিবেচনা করেন। ঢাকায় বা চট্টগ্রামে বা যেখানেই বিক্রয়ের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট অনুসন্ধান করলে আপনার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত । একটি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়কারী হিসাবে কিভাবে আপনার বাড়ির জন্য অর্থ প্রদান করবেন তা আপনি সহজে আর্থিক সংস্থার বা ঘরে হোম ঋণ জন্য চালু করতে পারেন। তবে একটি চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে বেশ কিছু সম্ভাব্য বন্ধকী ঋণদাতাদের মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে।

রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে বাড়ি ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে হোম ল্যান্স ফাইন্যান্সারদের সাথে কথা বলা উচিত। আপনার গৃহঋণ চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আপনার জিজ্ঞাসা মোতাবেক ১০ টি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন নিম্নে আলোচনা করা হলো –

সুদের হার কি ?

অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য একটি গৃহঋণ পাওয়ার সময় সুদের হার চেক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুদের হার এবং মেয়াদের সাথে ঋণের পরিমাণ আপনার মাসিক পেমেন্ট নির্ধারণ করবে। কম সুদের হারের সঙ্গে হোম ঋণ আপনার মাসিক পেমেন্ট কমানো হবে। আপনাকে বিভিন্ন অর্থের সুদের হার তুলনা করা উচিত এবং কোন সংস্থাটি সর্বনিম্ন সুদের হার দেয়, তা খুঁজে বের করতে হবে। আপনি যদি বর্তমান বাজারের হার জানতে চান তবে প্রতিযোগিতামূলক সুদের হারে হোম ঋণ গ্রহণের জন্য আপনার ফাইন্যান্সিয়ারের সাথেও আলোচনা করতে পারেন। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সুখ্যাত অর্থদাতা একক ইউনিট সুদের হার দিচ্ছে।

সুদের হার নির্দিষ্ট বা পরিবর্তনশীল ?

স্থির হারের গৃহঋণ ঋণের মেয়াদ জুড়ে একই হারে থাকে, তবে পরিবর্তনশীল সুদের হার নিয়মিত বিরতির সময়ে মুদ্রা বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে হার পরিবর্তন করে। যদি আপনি ভেরিয়েবলের সুদের হারের জন্য যান, তাহলে আপনার জিজ্ঞাসা করা উচিত কখন হার পরিবর্তন হবে এবং তার কারণে আপনাকে কত টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে তা জানা। এতে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন যে আপনি পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধের জন্য আর্থিকভাবে সচল থাকবেন কিনা।

ইএমআই কি ?

ইএমআই মাসিক কিস্তির সমান। এটি মূলত একটি মাসিক টাকা জমা যাতে প্রিন্সিপাল ও সুদের উভয়েরই অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ২০ লক্ষ টাকার ঋণ গ্রহণ করেন ,১৫ বছর মেয়াদকালে এতে ৯% সুদের হার থাকবে আর তারপর ইএমআই পরিমাণ হবে ১৫,২১৪ টাকা। মূলত, আপনাকে অবশ্যই ১৫ বছর ধরে প্রতি মাসে ১৫,২১৪ টাকা দিতে হবে।

আমাকে কি ফি পরিশোধ করতে হবে ?

হোম লোন নির্বাচন করার সময় আপনি প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং অন্যান্য ফি সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, যেগুলো অর্থদাতাদের ইএমআই থেকে আলাদা করে। এতে যেন কোন লুকানো চার্জ নেই তা নিশ্চিত করুন যাতে আপনি পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন। সাধারণত, প্রখ্যাত ফিন্যান্সিয়ারদের একটি প্রক্রিয়াকরণ ফি থাকে। আপনি যদি আপনার ঋণ তাড়াতাড়ি শোধ করতে চান তবে, কোনও প্রাথমিক বা আংশিক নিষ্পত্তি ফি প্রযোজ্য কিনা তা জিজ্ঞাসা করে নিন। পরিসেবা চার্জ, বীমা চার্জ বা অন্যান্য চার্জ ও থাকতে পারে। যদি আপনি মনে করেন যে এই সমস্ত চার্জগুলো পরিমাণে যোগ হয়ে বেশি হয়ে যায় তবে, আপনি অন্য আর্থিক সংস্থার বিবেচনা করতে পারেন।

কিভাবে ঋণের জন্য যোগ্যতা যাচাই করবেন ?

যে কেউ গৃহঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন কিন্তু যোগ্যতা অর্জনের জন্য আপনাকে অর্থদাতাদের দ্বারা নির্ধারিত কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হবে, যেমন বয়স, আয়, পেশাগত অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। আপনার ডকুমেন্টেশনের মধ্যে প্রমাণ দেখাতে হবে যে আপনি হোম ঋণ পরিশোধ করতে আর্থিকভাবে সবল। সাধারণ নথিপত্র, ব্যক্তিগত ব্যাংকের বিবৃতি, ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি অবশ্যই আপনার সাথে  রাখতে হবে।

আমি ঋণের জন্য কত টাকা পেতে পারি ?

ব্যাংকিং ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির ৭০% মূল্যের সমান ঋণ প্রদান করতে পারে এবং আপনাকে আপনার নিজস্ব ইকুইটি থেকে ৩০% অর্থ প্রদান করতে হবে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান/ নির্ধারিত ব্যাংকগুলো , ১.২ কোটি টাকার উপরে ঋণ দিতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ৭০% এর বেশি হতে পারে।

আমার গ্যারান্টি বা নগদ নিরাপত্তা প্রয়োজন ?

গৃহঋণের জন্য আবেদন করার সময় আপনার ফাইন্যান্সিয়ারকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে আপনার ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বা নগদ নিরাপত্তা প্রয়োজন। আপনি ডিফল্ট করে থাকলে এই পরিমাণটি আপনার সিকিউরিটি হিসেবে বিবেচিত হবে।

আমি কি আমার ব্যাংকে থেকে অন্য ব্যাংকে ঋণ হস্তান্তর করতে পারি ?

আপনি একটি ফাইন্যান্সিয়ার থেকে ঋণ গ্রহণ করার পরে এমন একটি প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পেতে পারেন যারা তাদের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনি হোম লোন হস্তান্তর করতে পারেন। তবে আপনার ফাইন্যান্সিয়ারকে এই স্থানান্তর, আনুষ্ঠানিকতা এবং এতে কি জড়িত খরচ আছে তা আগেই জিজ্ঞাসা করা ভাল।

আমাকে কি ঋণ পরিশোধের মাসিক বা বার্ষিক বিবৃতি দিতে পারবে ?

আপনার ফাইন্যান্সিয়ারকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যদি তারা আপনার ফেরত দেওয়া ঋণের পরিমাণের মাসিক বা বার্ষিক বিবৃতি দিতে পারবে কি না। এই ভাবে, আপনি কত টাকা ফেরত দিয়েছিলেন এবং কতটা বাকি আছে তা নিয়ে ধারণা থাকবে।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির একটি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রেতা হিসাবে আমার অঙ্গীকার কি ?

একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য ঋণ দেয়ার আগে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে তিনটি দল রয়েছে- আপনি, ডেভেলপার কোম্পানি এবং আপনার গৃহঋণের ফাইন্যান্সিইয়ার। আপনার প্রধান অঙ্গীকার হবে –

  • সম্পূর্ণ নিবন্ধন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পত্তির মিউটেশন
  • ইএমআই নিয়মিতভাবে পরিশোধ করুন
  • অ্যাপার্টমেন্টটি নিবন্ধন করার পরে আপনার ফাইন্যান্সিয়ারকে সরাসরি রেজিস্ট্রারের মূল রসিদ দিয়ে বিক্রয়ের নিবন্ধন হস্তান্তর করার জন্য ডেভেলপার কোম্পানিকে অনুমোদন করুন।
  • ডিফল্ট করা হয়ে থাকলে ডেভেলপার কোম্পানিকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে উর্ধ্বমুখী সুদ বা ধার্য পরিমাণের চার্জ দিয়ে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের জন্য অনুমোদন করুন।

আপনি যদি প্রথমবারের মতো একটি বাড়ি কিনেন, তাহলে আপনি প্রথম যে ফাইন্যান্সিয়ারের সাথে কথা বলবেন, তার সাথেই কাজ শুরু করে দিতে পারেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি একটি আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। এটি সর্বোত্তম হবে যদি আপনি আশেপাশে আরও খুঁজেন এবং এমন একটি গৃহঋণ পছন্দ করে নিন যা আপনার জন্য সর্বোত্তম। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগ আছে কি না তা-ও পরীক্ষা করে নিতে হবে। আবার, যদি আপনি একটি সুখ্যাত ডেভেলপার কোম্পানীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেন তবে ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া কম সময় ব্যয় করতে পারে।