কোভিড পরবর্তী আবাসন- সতর্কতা ও সচেতনতা

কোভিড১৯ মহামারি ২০২০ সালে আমাদের জীবনধারাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে স্থান, কাল, পাত্র, শ্রেণী, বর্ণ নির্বিশেষে। আমরা সবাই একটি পর্যায়ে ঘরবন্দী হতে বাধ্য হয়েছি এবং বর্তমানে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধানের আগেই আমাদের বের হয়ে আসতে হচ্ছে ঘর থেকে। কিন্তু এর মধ্যেই নিজের আবাসস্থল থেকে কাজ করা, শিক্ষাগ্রহণ হোম ডেলিভারিসহ অনেক বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বিশ্ববাসী। সাথে সাথে আমাদের মতো নগরবাসীর সামনে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবাসন বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনাটা আবশ্যক।

বর্তমানে আবাসন বিষয়ে ঢাকা শহরের একমাত্র পছন্দের বা বিলাসের নিয়ামক হচ্ছে স্কয়ার ফুট। এর সাথে টাইলস করা বাসা কিংবা খুব প্রাথমিক কিছু চাহিদার বিনিময়ে আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়ে কিনে নিচ্ছি বিভিন্ন মাপের বাক্স। সেই বাক্সগুলোতে আমাদের স্বপ্ন আমাদের প্রতিদিনের অবসর এবং পরিবারের সাথে কাটানো সেরা সময়গুলোকে করছি বাক্সবন্দী। এই জীবনধারাকে খুব বেশি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই বলা যায়। কিন্তু সানন্দে বসবাস করা বা একটি বিপর্যয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ থাকার জন্য এই ব্যবস্থা কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়। আমাদের এই জীবনধারার কারণে ঢাকা শহর শুধু কংক্রিটের জঞ্জালই হয়ে যায়নি বরং আবাসনের স্বাভাবিক সব সুযোগসুবিধার দামও হয়ে গিয়েছে আকাশচুম্বী। আমাদেরকে তাই অবশ্যই বদলাতে হবে।

স্থাপত্যে যেকোনো ভবনের নকশা শুরু হয় একজন মানুষের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দূরত্বের হিসাবনিকাশের নিরিখে। সেখানে মানুষসংক্রান্ত ব্যাপারে পরিবর্তন না এনে প্রকৌশলীগণ স্ট্রাকচারাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল প্লাম্বিংয়ের মতো কাজগুলো যোগ করেন। এতদিন এখানে সামাজিক দূরত্ব বা দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকার মতো হিসাব যেমন ছিল না, তেমনি পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হত না।

কোভিডের কারণে স্থাপত্য প্রকৌশলবিদ্যায় যারা শিক্ষিত তারা অবশ্যই ডিজাইন বা ভবন নকশায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। এমনকি যারা ভবন নির্মাণ আইন অনুমোদনের সাথে সংশ্লিষ্টতারাও মানুষের বসবাসের জন্য ন্যূনতম সুযোগসুবিধা এবং নিরাপত্তা বিধিমালায় মাথায় রাখবেন এই বিষয়গুলো। তাই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ইমারত সংক্রান্ত বিধিমালাতেও আমরা বিশ্বজুড়ে পরিবর্তন দেখব। 

কিন্তু ভবনের নকশা নির্মাণ করা হয় সেই ভবনে যারা বসবাস করবেন তাদের জন্য। এই কারণেই তাদের চাহিদাও ভবন নির্মাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই ভবনের নকশা কোভিডের মতো মহামারি প্রতিরোধী কিংবা সুরক্ষাবান্ধব হবে কিনা ব্যাপারে আপনাকেও হতে হবে সতর্ক সাবধান। 

কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন মহামারি থেকে নিরাপদ থাকতে? চলুন জেনে নেয়া যাক-

. নজর থাকুক স্কয়ার ফুটের বাইরেও

বেঁচে থাকতে হলে শুধু বেশি স্কয়ার ফুট যথেষ্ট নয়। এর সাথে চাই পর্যাপ্ত আলো বাতাস, চাই ঘরের ভেতর বাহিরের সাথে সুসম্পর্ক, চাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা। শুধু ঘরের স্কয়ার ফিট বাড়াতে গিয়ে বারান্দা বা টেরেসের মতো জায়গা ছোট করে ফেলবেন না। বেডরুমের একঘেয়েমি ঘরবন্দী অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে মানুষকে। সরকারি নিয়ম মেনে সেটব্যাক এবং প্লটের ৪০% জায়গা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি বানান। এতে মুক্ত বাতাস বা মাটির যোগান হবে। বারান্দাগুলোর গ্রিল অত্যধিক ঘন করে ফেলতে নিরুৎসাহিত করুন। শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতটুকু দরকার ততটুকুই নিন।

প্রত্যেক ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণায় আলো আসছে কিনা তা দেখে নিন। ভবনের পেছনের দিকে ফ্ল্যাটের অবস্থান হলে সেদিকে অন্য ফ্ল্যাট থেকে যথেষ্ট দূরত্ব না থাকলে সেই ফ্ল্যাট কেনা বা নির্মাণ অনুমোদন থেকে বিরত থাকুন। ছাদে বাগানসহ কম্যুনিটি স্পেস এখন সরকারি আইনের অংশ। এগুলো আপনার ক্রেতা হিসাবে অধিকারও। এই ব্যাপারগুলোতে তাই জোর দিন। 

. ফ্ল্যাটের ক্রমধারার গুরুত্ব

একটি ভালো ডিজাইনের ফ্ল্যাটে সাধারণত দুটো দরজা থাকে। একটিকে বলা হয় মূল প্রবেশপথ, আরেকটির নাম সার্ভিস প্রবেশপথ। ফার্নিচারের জায়গা বাঁচাতে গিয়ে অনেকে সার্ভিস সংক্রান্ত পথগুলো বন্ধ করে ফেলেন। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে সুস্থ থাকতে। সার্ভিস ফটকের কাছে কমন ওয়াশরুম একটি বেসিন থাকাটা বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের সময় হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্ত হওয়া এবং বাইরে থেকে কেনা বাজারসদাইসহ অন্যান্য সামগ্রী ঘরে আনার আগেই নিরাপদ করতে সাহায্য করে। এছাড়া ময়লা নিষ্কাশন ম্যানেজমেন্টেও এই ক্রমধারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই চিন্তাগুলো একজন প্রশিক্ষণবিহীন মানুষের জন্য আগে থেকে করা খুবই কঠিন। মনে রাখবেন এই পর্যায়কে বলা হয় Spatial Design যা আপনি নিজে এমনকি একজন প্রশিক্ষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও আপনাকে দিতে পারবেন না। এজন্য অবশ্যই IAB এর সদস্যপদপ্রাপ্ত স্থপতির নকশা গ্রহণ করুন। এরকম ছোট ছোট অনেক বিষয়ে একজন স্থপতির নকশা আপনাকে রোগব্যাধি থেকেও নিরাপদ রাখতে পারে।

. কমিয়ে আনুন গ্যারেজ এলাকা   

অনেকেই নিজের গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও গ্যারেজ স্পেস কিনে ভাড়া দেন বা একটি গাড়ি থাকলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে একাধিক গ্যারেজ কিনে রাখতে চেষ্টা করেন। এতে করে অল্প কিছু অর্থনৈতিক লাভ হয়তো হয়। কিন্তু ডেভেলপার স্থপতির উপর অতিরিক্ত গ্যারেজ নকশায় অন্তর্ভুক্ত করার চাপ তৈরি হয়। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায়, ওপরে জায়গা ছেড়ে দিলেও নিচে গ্যারেজের জন্য অনেক জায়গা পাকা করে ফেলতে হয়। এছাড়া গ্যারেজের বাইরে সেটব্যাকও অনেকে পাকা করে ফেলেন। এতে করে ভবনের বসবাসে তাপ বৃদ্ধি হয় এবং শহরজুড়ে মাটি পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে কেন্দ্রীয় পানির সাপ্লাইয়ের উপরে নির্ভরতা বাড়ে। ফলনশীল গাছ পানি শোষনের জন্য এসব জায়গা ফাঁকা রাখুন। গ্যারেজ এলাকায় বরং একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র (যেখানে ডাক্তার এসে ভবনের অসুস্থ রোগীদের প্রাথমিকভাবে দেখতে পারবেন), একটি ফায়ার ফাইটিং কক্ষ (বাধ্যতামূলক), চাকুরিরত গার্ডের জন্য নিজস্ব থাকার ঘর ইত্যাদি নির্মাণে মনোযোগী হোন। এগুলি আপনাকে মহামারির সময় সাহায্য করবে। 

. ল্যান্ডস্কেপিং হোক স্মার্ট

নগরে সামান্য সবুজের সন্ধানে আমরা আধুনিক ভবনে সামান্য জায়গায় কিছু গাছপালা লাগাতে চেষ্টা করি। ছাদে বাগানের পাশাপাশি নিচে ভবনের সামনেও বর্ণিল গাছপালা লাগানো হয়। এর সাথে অনেক ভবনে সুইমিং পুল কিংবা বাহারী পাতাবাহার গাছের সজ্জাও আজকাল দেখা যায়। কিন্তু এই ধরনের খরচগুলোর জন্য পরে মেইনটেনেন্স খরচও দিতে হয়। শহরে সবুজ এবং নিসর্গ খুবই দরকারি এবং প্লটে গাছের পরিমাণ বাড়ানোও খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু কী গাছ লাগাচ্ছেন সে ব্যাপারে সচেতন হওয়াটা আরো বেশি জরুরি। এই ফাঁকা জায়গাগুলিতে পাতাবাহার বা সজ্জাকর গাছ না লাগিয়ে ফলনশীল দেশী গাছ লাগানোটা মহামারির সময় বাইরের বাজার উপকরণের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারা যায়। এছাড়া ভবনে যারা চাকরি করেন তাদের খাদ্য সংস্থানেও এগুলো হতে পারে দরকারি জায়গা। নগর কৃষি দিনে দিনে বিশ্বজুড়ে একটি বড় আন্দোলন হয়ে উঠছে নিজেরা এক হয়ে। Urban Farming-এর জন্য আপনার ভবন প্রস্তুত হলে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যগতভাবে লাভবান হতে পারেন সকল ভবনমালিকই। সাথে সাথে কৃত্রিম এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দিতে পারে স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপিং। 

. সামাজিকতা হোক নিজেদের মাঝেই 

নগরে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সামাজিক একটি জীবন সবাই আশা করেন। অনেকেই অভিযোগ করেন, ঢাকা শহরে সামাজিক বন্ধন কমে যাচ্ছে অনেকদিন ধরেই। রোবট হয়ে পড়ছি আমরা। আমাদের ভবনের নকশাগুলি এমনভাবেই করা যাতে খুব বেশি সামাজিকতার সুযোগ থাকে না। আমরা যেটুকু সামাজিক কর্মকাণ্ড করি তাও হয়ে পড়ে পার্ক, কম্যুনিটি সেন্টার বা শপিং মল কেন্দ্রিক। অথচ এই কোভিডের সময়ে আপনি বাইরে যেতে পারছেন না আপনার সামাজিক কাজগুলোর জন্য। এটিরও নেতিবাচক প্রভাব অনেক। ভবনের একটি ইউনিট কম নির্মাণ করে কিংবা ছাদকে ব্যবহার করে গড়ে তুলুন নিজস্ব সামাজিক স্পেস। এসব জায়গায় নিজেদের অনুষ্ঠান করার সুযোগ যেমন থাকবে, প্রতিদিন বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং বৈকালিক অবসর কাটাতেও আপনাকে জনারণ্য জায়গায় যেতে হবে না। 

. হোন শক্তি স্বনির্ভর

আধুনিক ভবনে বসবাসকারী আধুনিক নাগরিক হিসাবে আপনি নিঃসন্দেহে চান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। আপনার ভবনকে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন শক্তির ব্যাপারে স্বনির্ভর করতে। বেরিয়ে আসুন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অতি নির্ভরতা থেকে। ব্যবহার করুন সৌরশক্তি। প্রকৌশলীর পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সোলার প্যানেল লাগিয়ে নিলে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি কমে যাবে গ্রীষ্মের তাপমাত্রাও। নকশায় প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে স্থপতিকে উৎসাহ দিন। সঞ্চয় করার ব্যবস্থা করতে বলুন বৃষ্টির পানিনকশার কারিগরির মাধ্যমেই। আপনার বেসিনে বা গোসলে খরচ হওয়া পানি টয়লেটের ফ্ল্যাশে পুনঃব্যবহার করতে নির্দেশনা দিন প্রকৌশলীকে। আরেকটু সচেতন হলে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া পানিও খুব সহজে টয়লেটের ফ্ল্যাশে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পানি বিশুদ্ধকরণে যেমন খরচ কমবে সকলের, তেমনি আপনার পানির বিলও কমে যাবে অনেকভাবে। এই কাজগুলো করলে আপনার ভবন হবে স্বনির্ভর। তাই যেকোনো মহামারি বা দুর্যোগ অবস্থাতেও আপনি নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন সহজেই। 

. নকশার আওতায় আসুক এলাকাও 

আবাসিক এলাকার নকশার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায়, দুই বা তিন রাস্তা জুড়ে শুধুই বাড়ি তৈরি করা হয়। এতে মুদি দোকান, সেলুন বা বাজারের মতো সুবিধা পেতে যেতে হয় বহুদূর এবং অনেক মানুষ অল্প ব্যবসার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। ফলে ভীড় বাড়ে। 

কিন্তু এখন থেকেই এলাকাভিত্তিক নকশার অধীনে প্রতি ৩০ ভবনের জন্য একটি Amenity shop এর ব্যবস্থা চিন্তা করা উচিৎ। এতে করেই তৈরি হবে এলাকাভিত্তিক নিজস্ব অর্থনীতি। এই দোকানগুলি হতে পারে ভবনের ঠিক নিচেই। এমনকি স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপ বা সামনে ছেড়ে দেয়া জায়গায় ফলনশীল গাছ লাগিয়ে, সবজির চাষ করে সেগুলো নিজেদের মধ্যে বেচাকেনা হতে পারে এসব দোকানেই। এতে করে বাজারের উপর নির্ভরতা কমবে। মানুষ নিজের এলাকার সাথে সংযুক্ত হবে আরো গভীরভাবে এবং পণ্যের দাম বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াও হবে অনেক সহজ।

কোভিড মহামারির ফলশ্রুতিতে কোনো পরিবর্তন হঠাৎ করে চলে আসবে না। তবে শুরু করতে হবে আজই। কারণ, এই মহামারি কবে নির্মূল হবে সেটা বলা যেমন কঠিন, সেরকম আরো একবার এরকম মহামারি আসলে আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আপনারই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভবনের নকশায় নান্দনিকতা বা ডেকোরেশনের চেয়ে প্রযুক্তি নকশাগত উৎকর্ষ এখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাপারে আপনি, আপনার স্থপতি, প্রকৌশলী, নির্মাতা এবং সরকারের একীভূত মনোযোগই পারে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। 

ঢাকায় বসবাস: কেমন হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ?

“ঢাকা শহরে একটি বাড়ি”- এই স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার পার্থক্য বাড়তে বাড়তে মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। চারশরও বেশি বছরের পুরাতন রাজধানী এই নগরী সারা বাংলার মানুষের বসবাসের জন্য এর লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, এই অঞ্চলে সভ্যতা যতই এগিয়েছে। পুরাতন ঢাকায় মানুষের বসত শুরু হয়েছিল ঢাকা রাজধানী হবারও অনেক আগে।

বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকা আর মধুপুর ট্র্যাকের লালচে উর্বর মাটি কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছিল ঢাকাকে। এরপর বৃটিশ ভারত, পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর ক্রমেই বেড়েছে শহর হিসাবে ঢাকার গুরুত্ব। এর সাথে সাথে আরো বেশি মানুষ এসেছে ঢাকায় বসবাস করতে।

ঢাকা শহরে আবাসন প্রথমদিকে পরিকল্পিত ছিল না একদমই। পুরাতন ঢাকায় সেই অপরিকল্পিত কিন্তু স্বতস্ফূর্ত আবাসন এখনো দেখা যায়। কিন্তু ঢাকায় যত মানুষ বাড়তে থাকল এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মতো সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকল, ততই পরিকল্পিত আবাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।

এ লক্ষ্যেই ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসাবে প্রথমে ধানমণ্ডি গড়ে ওঠে। তবে মধ্যবিত্তের আবাসনের জন্য বড় আকারে পরিকল্পিত নগরের অংশ হয়ে ওঠে মোহাম্মদপুর। সেকেন্ড ক্যাপিটাল হিসাবে শেরেবাংলা নগরের গোড়াপত্তন এ অঞ্চলে মানুষের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরে ঢাকা শহর বড় হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত।

এই কারণে আবাসনের চাহিদা কয়েক বছরের মাথায় বেড়েছে প্রায় শত গুণ। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতেই নতুন অভিজাত অঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠেছে বনানী, গুলশান ও বারিধারা। এর মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট বিপ্লবের জের ধরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে চলে আসে ধানমণ্ডি। একই সাথে গড়ে ওঠে উত্তরা এবং মিরপুরের পল্লবী। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

এখন পূর্বাচল ও উত্তরার বিভিন্ন অংশ গড়ে উঠছে নতুন এলাকা হিসাবে। কিন্তু ঢাকার আশেপাশে থাকতে মানুষের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার অঞ্চলের দিকে ঝুঁকে পড়া বা ঢাকার ক্রমেই খারাপ হতে থাকা নাগরিক অবস্থার কারণে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- “ঢাকায় কি এখনো আবাসন সম্ভব?”

ঢাকার আবাসনের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করলে একে খরচের হিসাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেই অঞ্চলগুলোতে দামের তারতম্য সুবিধা অসুবিধায় রয়েছে ভিন্নতা। সেগুলোই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

বাজেট যখন সীমিত নয়

ঢাকায় আবাসনের জন্য মানুষ মূলত পছন্দ করে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অঞ্চলগুলো। এইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগ, ভালো মার্কেট বা বড় সুপারস্টোরের সহজলভ্যতা, লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর উপস্থিতি, ভালো স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাছাকাছি দুরত্ব। এসব সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করলে ঢাকায় এখনো গুলশান, বনানী, বারিধারা উঁচু বাজেটের মানুষজনের জন্য পছন্দের জায়গায় থাকবে উপরেই। এর সাথে রয়েছে ধানমণ্ডি।

এসব জায়গায় নতুন প্লটের পরিমাণ খুবই সীমিত। তবে রেনোভেশান ও ডেভেলপার দ্বারা পুরাতন বাড়ি অধিগ্রহণের কারণে এখনো উঠছে নতুন ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট বাসার আকার বড় চাইলে ও বাজেটগত সমস্যা না থাকলে এই অঞ্চলগুলো এখনো হতে পারে ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবাসন অঞ্চল।

অর্থের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য

ঢাকায় বাসা তৈরি করা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু। অনেকের কাছেই বাজেট তুলনামূলক বেশি থাকলেও পুরাতন একটি বাসার চেয়ে নতুন একটি অঞ্চলে গোছানো আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অর্থের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চান। তাদের জন্য পূর্বাচল, উত্তরা নতুন প্রজেক্ট এবং বসুন্ধরা অঞ্চল হতে পারে আবাসনের জন্য খুবই ভবিষ্যতমুখী কিন্তু গোছানো পছন্দ।

এসব জায়গায় প্লট বরাদ্দ একবার শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু জায়গার বর্তমান মালিক থেকে জায়গা কেনা বা একদম ফ্রেশ জমিতে বাসা নির্মাণের সুযোগ এখনো বর্তমান। এছাড়া এসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ডেভেলপারের পরিকল্পিত আবাসন, যেগুলোতে দাম একটু বেশির দিকে হলেও আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিকল্পিত এবং দুর্দান্ত আবাসন গড়ে ওঠাটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।

ঢাকার নতুন আসা মেট্রো রেল প্রজেক্ট ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিরপুরের নতুন অঞ্চল, বেড়িবাঁধ ও ক্যান্টনমেন্ট-এর মাটিকাটা অঞ্চলেও জমির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগও হতে পারে বেশ স্মার্ট বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলে এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কম হলেও পলিসিগত কারণে এখানে বসতি ঘন হতে অনেক সময় লাগবে এবং অনেকদিন এলাকা থাকবে খুবই পরিকল্পিত।

বাজেট আবাসনের ঢাকা

অল্প বাজেটে ঢাকায় ভালো বাসা করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বসিলাকে। আশেপাশে মোহাম্মাদপুর ও মিরপুরের অবস্থান হওয়ায় এখানে পলিসিগত বাধ্যবাধকতা একটু কম এবং অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই। এর বাইরে উত্তরায় রেল লাইনের অন্য পাশে উত্তর ও দক্ষিণখানে, এয়ারপোর্ট এর আশেপাশের অঞ্চলে অনেকদিন ধরেই বাজেট ভিত্তিক আবাসন খুবই জনপ্রিয়।

১,০০০ বর্গফুটের আশেপাশে আদাবর এবং শেখেরটেক অঞ্চলেও এখনো ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। একই অবস্থা রাজারবাগ ও ধানমণ্ডির পেছনে থাকা জিগাতলা এলাকারও। এসব অঞ্চল একটু ঘনবসতিপূর্ণ হলেও যারা ঢাকা শহরের জনসমাগমকে উপভোগ করেন তারা এসব জায়গায় থাকতে অপছন্দ করবেন না।

এর বাইরে টঙ্গীসহ চেরাগ আলী হয়ে প্রায় সমগ্র গাজীপুর শহরাঞ্চল, নারায়ণগঞ্জ, কেরাণিগঞ্জ এবং সাভার অঞ্চল বেশ জনপ্রিয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে অনেকে এসব জায়গা থেকেও যাওয়া আসা করে থাকেন প্রায় নিয়মিতই। সুযোগ বা যাতায়াতের সুবিধা থাকলে এ অঞ্চলগুলোও ঢাকার অনেক অঞ্চল থেকে ভালো বসবাসের সুবিধা নিয়ে হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনার অংশ, কারণ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে জমির দামে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

আবাসন সমস্যাকে ঠিকভাবে সমাধান করতে ঢাকাকে আমাদের বিকেন্দ্রিকরণ ও পরিকল্পিত আবাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুবই দরকারি। তাই জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের বুঝে শুনে। বাজেটের সাথে বা জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই মানুষের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিজের ও সামাজিক চাহিদার মধ্যে পর্যাপ্ত ভারসাম্যই পারে আপনার বাড়ির জন্য সবচেয়ে উপযোগী অঞ্চল সম্পর্কে আপনাকে নিশ্চিত করতে।

জাদুর শহর ঢাকা: বসবাসের বর্তমান অবস্থা

জাদুর শহর ঢাকা। লাল নীল বাতি দেখে আশা মেটানোর শহর ঢাকা। ৪১০ বছরের পুরাতন রাজধানী শহরের আবেদন বাংলাদেশের মানুষের কাছে শুধু রাজধানী বা তিলোত্তমা নগরী হিসেবে নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, অর্থনীতি আর জীবিকার কেন্দ্রস্থল এই নগরী। এই নগরী কখনো ঘুমায় না।

স্বপ্ন গড়া আর ভাঙার এই কারখানায় যোগ দিতে প্রতিদিন এসে যোগ হচ্ছে নতুন মানুষ। ঢাকায় বসবাসের স্বপ্নে, ঢাকায় এক টুকরো জমির আশা বহু মানুষের। নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঢাকায় এক টুকরো ছাদ অনেকের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। যে ঢাকায় বসবাসের জন্য সারা দেশের মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, তার বুকে বসবাসের প্রকৃতি আসলে কেমন?

বসবাসের প্রকৃতি

ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে মাত্র ৪% লোকের নিজের জমি বা বাড়ি রয়েছে ঢাকা শহরের মাঝে। প্রায় দুই কোটি লোকের শহরে সেই সংখ্যাটি মাত্র আট লাখ। বাকি সবাই থাকেন ভাড়া বাসা বা অন্য কোনো আয়োজনে। সাবলেট হিসেবে থাকেন এর একটি বড় অংশ। এছাড়া মেস, হোস্টেল বা বোর্ডিংয়ের পরিমাণও একদম নগণ্য নয়। ভবিষ্যতে এসব বসবাস পদ্ধতির পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে ভাড়া বা শর্ট টার্ম রেন্টাল পদ্ধতি জনপ্রিয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রেন্ট টু বাই মডেলেও অনেকে আবাসনে যুক্ত হচ্ছেন। 

বসবাস অবকাঠামো

যেকোনো স্থানে বসবাসের জন্য ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অবকাঠামোগত দিক থেকে জায়গাটির আবেদন থাকা আবশ্যক। ঢাকা রাজধানী শহর ও বিশাল জনগোষ্ঠির বসবাস এলাকা হিসাবে সামাজিক অবকাঠামোর দিক থেকে দেশের অন্য যেকোনো জায়গা থেকে এগিয়ে। এখানে বাংলাদেশের হিসেবে সর্বোচ্চ মানের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

বিনোদনের শহর হিসাবেও ঢাকা ছাড়িয়ে যাবে যেকোনো বাংলাদেশি শহরকে। রেস্তোরাঁ থেকে সিনেমা হল, পার্ক, উদ্যান থেকে শুরু করে বিনোদন স্পট রয়েছে মানুষের নগরজীবনের অনুসঙ্গ হিসাবে। ধর্মীয় দিক থেকে সকল ধর্মাবলম্বীর জন্যও দরকারি পরিমাণে উপাসনালয় বর্তমান এখানে।

কিন্তু আধুনিক শহর হিসাবে বিশ্বমান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা। ব্যক্তিগত অবকাঠামোর হিসেবে ঢাকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্তমানে ইলেকট্রিসিটি ও পানির ব্যাপারে আগের চেয়ে উন্নতি লাভ করলেও নতুন বাসভবনে গ্যাসের সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে। তবে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় ঢাকা বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নগরী, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।


যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ- বিষয়টি এভাবে বলাটা আসলে ভুল। ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আসলে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ভালো। প্রান্তিক রাস্তা বাদ দিলে প্রতিটি এলাকা বেশ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে সংযুক্ত।

এছাড়া ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অসাধারণ। কিন্তু ঢাকা শহরের যোগাযোগ অবস্থাকে শোচনীয় করে তুলেছে নগরের সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের বাস ও তাদের ব্যক্তিগত যানের উপরে নির্ভরতা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের যানবাহনের গড় গতিবেগ ৭ কিমি/ঘণ্টার চেয়েও কম। এবং এটি আরো কমে আসছে।

রাস্তাঘাটের এই অবস্থার কারণে ঢাকা একটি মৃত নগরী হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাও ব্যাক্তিমালিকানা নির্ভর হওয়ায় কার্যত কিছু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার মাঝেই বন্দি যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে নতুন আসতে চলা মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়।

মানুষের আয়ের প্রকৃতি

শুরুতেই বলা হয়েছে, ঢাকা আসলে দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই যেকোনো কাজের মূল্যমান ঢাকায় অন্য স্থানের তুলনায় অনেক বেশি। ঢাকায় কৃষিজীবী মানুষের পরিমাণ দেশের অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অনেক কম। তবে সবচেয়ে বেশি পেশাগত বৈচিত্র্য দেখা যায় এই নগরেই। একদম নিম্ন আয় থেকে উচ্চ আয়ের সর্বোচ্চ মান পর্যন্ত মানুষ ঢাকাতেই বসবাস করে। আর অর্থনীতি সবচেয়ে সচল বলেই ঢাকায় এসে কাজ করতে মানুষের আগ্রহ বেশি।

ভবিষ্যতের ঢাকা

ঢাকা শহরের এসব সমস্যা নিয়ে আমরা সকলেই কম-বেশি ওয়াকিবহাল। তবে সবাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আবাসনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। ঢাকাতে মানুষের পরিমাণ যত বাড়বে, অনেক নাগরিক সুবিধার অবনতি চলতেই থাকবে।

বাতাস বা পানির মানের ক্ষেত্রে ঢাকায় নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ না নিলে উন্নতি হবার সুযোগ খুব সীমিত। তবে পরিবহন ব্যবস্থা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটতে পারে নতুন গৃহীত কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে। মাস্টারপ্ল্যান নতুন করে করা হলে ঢাকা থেকে শিল্প কারখানা ও অনেক সেবাকে ঢাকার বাইরের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হতে পারে নগর ও নগরের মানুষকে বাচানোর সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে এই বিকেন্দ্রীকরণের সময়ে সবচেয়ে ভাল বিনিয়োগ হতে পারে ঢাকার নতুন অঞ্চলের (পূর্বাচল, উত্তরা নতুন ফেজ) জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করা। যদিও এসব এলাকা এখনই অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে বা যাচ্ছে।

টঙ্গী বা গাজীপুরের নিকটবর্তী এলাকা, সাভার অঞ্চলীয় অনেক অঞ্চল এবং নারায়ণগঞ্জের দিকেও বিনিয়োগে এখন একটি উপযুক্ত সময়। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রজেক্টের সাফল্যের পর জলাধার আইন মেনে জমি ও বাড়ি করাটা এখন সময়ের দাবি। এরকম আরো দুয়েকটি প্রজেক্ট ভবিষ্যতের ঢাকাকে আরেকটু বসবাস উপযোগী করতে রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা। 

বাড়ির কাজে হাত দিচ্ছেন: কী পরিকল্পনা দরকার?

আমরা মানুষ হিসেবে কেউ যেমন এক নই, বাড়ি নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলোও আলাদা। কিন্তু একইসাথে মনে রাখতে হবে, বাড়ির নকশা শুধু স্বপ্নের বাস্তবায়নই নয়, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কী কী মাথায় রাখতে হবে একটি বাড়ির নকশা করার সময়? আসুন দেখে নিই একনজরে।

আলো-বাতাস

বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় আমরা ধরে নিই যে, দক্ষিণমুখী বাড়ি হলে বাতাস আসবেই। আর সূর্য তো এমনিতেই পূর্ব দিকে উঠে তাই সকালের মিষ্টি রোদ চাইলে দক্ষিণ-পূর্বমূখী ফ্ল্যাটের সন্ধানে আমরা সবাই প্রায় যুদ্ধে নেমে পড়ি। অথচ ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে যেখানে ৩ কাঠার একটি জায়গাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তিনটি আলাদা বহুতল ভবন, এমনকি ভবনের সামনে ১০ ফিট রাস্তার মতো সুবিধা আপনি না-ও পেতে পারেন, সেখানে এই প্রাগৈতিহাসিক ধারণা নিয়ে বাড়ি করা নির্ঘাত বোকামি।

এজন্য চাই সিমুলেশন, কনটেক্সট এবং আলো ও বাতাসের স্বাস্থ্যকর মাপ সম্পর্কে ধারণা। জানা উচিৎ জানালা কেমন হলে আলো বাতাস বেশি আসবে, বুঝতে হবে ভেন্টিলেশনের নিয়মগুলোও। তবেই স্বাস্থ্যকর আলো বাতাসে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে নিরাপদে!

আসবাববান্ধবতা

অনেকেই ঘরের নকশা আর ঘর সাজানোকে আলাদা দুটি বিষয় মনে করেন এবং ঘর সাজানোর ব্যাপারটি বলতে বোঝেন কিছু আসবাবপত্র কেনাকে। আপনার ঘরের নকশা যদি কোনো আসবাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই ঘরে ওই আসবাব রেখে আপনি ঘরের সকল সুযোগ-সুবিধা কোনভাবেই পাবেন না।

আপনার খাট কোনদিকে মুখ করে থাকবে, কত বড় হবে আপনার ঘরের ক্লজেট? জানালার মাপের সাথে টেবিলের মাপ কীভাবে মিলবে? এসব প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে আপনার ঘরের নকশাতেই। মনে রাখবেন, একটি ঘর মানে শুধু চার দেয়ালের একটি বাক্স নয়, এটি আপনার প্রতিদিনের জীবনের শুরু এবং শেষ। তাই ঘরের আসবাব-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভবনের নকশা করবার সময়েই যত্নবান হতে হবে।

ঘরের মনস্তত্ত্ব

অনেকেই চান, তার কিনে নেওয়া জমির সম্পূর্ণটা জুড়েই তৈরি হোক বাড়ি। নষ্ট না হোক এক স্কয়ার ফুট জায়গাও। সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থে করা বাড়িতে এই চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের ঘর মানুষের মানসিক শান্তির জায়গা। পুরো জায়গা জুড়ে ঘর করলে আইন ভঙ্গের পাশাপাশি মানসিক অশান্তির আখড়া হয়ে উঠতে পারে আপনার স্বপ্নের বাড়ি।

তাই পরিকল্পনা করতে বসে ভাবতে হবে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ছোট-বড় সকল চাহিদার কথা। তাতে শুধু বসবাসই সুন্দর হবে না, বাঁচবে খরচও। যেমন, ছোট ফ্ল্যাটে অনেকেই এখন সার্ভেন্ট টয়লেটকে ব্যবহার করেন স্টোর রুম হিসাবে। নকশার সময়ই স্থপতিকে এ ব্যাপারে অবগত করলে অতিরিক্ত ওয়াটার ক্লজেট বা পানির লাইনে অতিরিক্ত সামগ্রী ব্যবহারের খরচ বেঁচে যেতে পারত। এছাড়া কোন ঘরের পাশে কোন ঘর হবে, কার সাথে কার যোগাযোগ কতটা জরুরি এ ব্যাপারে দরকার পেশাদার নকশাবিদের সাহায্য।

সাধ সাধ্যের সামঞ্জস্যতা

একটি বাড়ি তৈরির পেছনে সবারই একটি গল্প থাকে। অনেক পরিশ্রম করে মানুষ ঘর তৈরির টাকা জমান। অথচ যথেষ্ট পূর্বপরিকল্পনার অভাবে বা বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার ফলে অনেক সময়েই পছন্দমতো ঘরের হিসেব মিলে না।

রডের দাম আপনার ধারণার চেয়ে বেশি হলে কি আপনি আপনার পছন্দমতো টাইলস দেবেন না? অথবা, বাজেট শেষ হয়ে গেলে কি থাকতে শুরু করবেন অস্বাস্থ্যকর রংবিহীন বাসাতেই? কিংবা বন্ধ হয়ে বহুদিন ঝুলে থাকবে আপনার সাধের বাড়ি? এসব ব্যাপারে চাই পরিকল্পনা ও সমতা।

এজন্য আপনাকে নিতে হবে পেশাদার স্থপতি, প্রকৌশলী এবং দক্ষ ঠিকাদারের সাহায্য। আর যদি ডেভেলাপারের শরণাপন্ন হন, তিনি আপনার হয়ে এই পেশাদার সাহায্য গ্রহণ করবেন। তাই অভিজ্ঞ, বন্ধুসুলভ ও সফল ডেভেলপারের শরণাপন্ন হোন। এই পেশাদার সাহায্যের পিছনে বিনিয়োগ আপনার খরচ তো বাড়াবেই না বরং উপরে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে সাহায্য করবে প্রতিনিয়ত।

নিজেই নিজের বাড়ি: তৈরি হোক পছন্দমতো

দৃশ্যপট ১

আজমল সাহেব একজন চিকিৎসক। সারাজীবন সরকারি হাসপাতালে সেবাদানের পর যখন অবসরে যান, পেনশন হিসেবে টাকাগুলোকে এক করে ঢাকার বুকে কিনে ফেলেন ৫ কাঠার এক টুকরো জমি। অনেকদিনের ইচ্ছে, নিজের জন্য নিজের মতো করে তৈরি করবেন একটি বাড়ি। বিকেল বেলা এক চিলতে রোদে ভরে থাকবে সে বাড়ির ছোট বারান্দা।

কিন্তু আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে নির্মাণ কাজ নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে যান তিনি। ভবনের নকশা, একাধিক অনুমোদন, নির্মাণ সামগ্রীর বাজার সম্পর্কে সচেতন ধারণা রাখা থেকে হাজারটা চিন্তা এসে ভর করে নির্মাণ নিয়ে ভাবতে গেলেই। জমির ভবিষ্যৎ আর বাড়ির স্বপ্নের মাঝে বিশাল এক অনিশ্চয়তায় ভোগেন আজমল সাহেব।


দৃশ্যপট ২

প্রান্তিক ঢাকায় এক টুকরো জমি নিয়ে অনেকদিন ধরেই প্রায় একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন রফিকুল হক। আশেপাশের সবাই তৃতীয় পক্ষের সাহায্যে বাড়ি তুলে কয়েকটি ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু রফিকুল হকের জন্য এই এক টুকরো জমি তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের ফসল। এখানে বাণিজ্যিক চিন্তাধারায় ভবন তৈরি হলে সেটি যে তার ইচ্ছা বা পছন্দকে পরিপূর্ণ করবে না, সে ব্যাপারে তিনি প্রায় নিশ্চিত। তিনি নিজের চাহিদামতো ভবন চান নিজের জমিতে। নকশার আলোচনার অংশ হতে চান। নিশ্চিত করতে চান নিজের ও নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুযোগ সুবিধা। 

নিজের টাকায় এক টুকরো নিষ্কণ্টক জমি আর তার উপর নিজের মনমতো আরামদায়ক বাসস্থান- এ যেন এই দেশের প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন। এই স্বপ্নের জ্বালানী যোগান দিতে সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন এ দেশের অনেক অনেক মানুষ।

নিজের জমি থাকা সত্ত্বেও আজমল আর রফিক সাহেবের মতো নানারকম অনিশ্চয়তার দোলাচলে সেই জমিতে বাড়ির স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ তৃতীয় পক্ষের শরণাপন্ন হয়ে নিজের জমিতে বাড়ি পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে থাকছে না নিজের চিন্তা ও চাওয়া-পাওয়ার স্বাতন্ত্র্যের ছাপ। নিজের জমিতে নিজেই বাড়ি করার ব্যাপারে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন কিছু নির্দিষ্ট কারণে। আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নির্মাণ ও স্থাপত্য মানের বিবেচনায় এখনো নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করাই কিন্তু সবচেয়ে প্রচলিত ও লাভজনক প্রক্রিয়া। নির্মাণের নানা ধাপে এর সুফল পেতে পারেন একজন জমির মালিক।

১. নকশা

জমির উপরে বাড়ির নকশার জন্য একজন প্রশিক্ষিত স্থপতির দারস্থ হওয়াটা খুবই দরকারি। অনেকে মনে করেন, স্থপতির শরণাপন্ন হওয়া মানেই নির্মাণে শুধুমাত্র অলংকরণ যোগ করা ও অতিরিক্ত খরচ। অথচ একটি বাড়িতে বসবাসরত মানুষের জীবনযাপনের মান থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত জায়গা, আলো-বাতাসের পর্যাপ্ততা এবং জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন শুধুমাত্র একজন স্থপতি। এর জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে আপনার পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ বাজেটের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ অর্থ।

কোনোরকম তৃতীয় পক্ষের সহায়তা ছাড়াই আপনি পেশাদার স্থপতির সাহায্য নিতে পারেন খুবই সহজে। আপনি নিজে যদি আপনার বাড়ির নির্মাণে নিযুক্ত স্থপতির সাথে কথা বলেন এবং তাকে আপনার নিজের বাড়ির খুঁটিনাটি চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞাত করেন, তাহলে তিনি প্রতিটি সূক্ষ বিষয় নকশায় প্রতিফলিত করতে চেষ্টা করবেন এবং নির্মাণ শুরু হবার অনেক আগেই আপনি পাবেন বাড়ির প্রতিটি বিষয় নিয়ে তার কাছ থেকে সবকিছু জেনে নেবার স্বাধীনতা।

পেশাদার স্থপতি সরকারের সব নিয়মনীতি সম্পর্কে সচেতন এবং নকশা করা বাড়ির ডিজাইন সংরক্ষণের নিশ্চয়তাও তিনি প্রদান করবেন। এছাড়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে স্ট্রাকচার ও প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা (বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইনের নকশা) সম্পর্কেও আপনি জ্ঞাত থাকতে পারবেন, যা পরবর্তীতে আপনার বাড়িকে করে তুলবে পূর্ণাঙ্গভাবে আপনার নিজের।

২. অনুমোদন

রাজউকে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নকশা অনুমোদন সহজ করতে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন ও নকশা অনুমোদনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। খুব দ্রুতই সকল অনুমোদন নেবার প্রক্রিয়া হবে অনিয়ম ও ঝামেলামুক্ত। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্থপতির কাছ থেকে প্রাপ্ত নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠানো যাবে এবং মোবাইল ফোনে পাবেন নিয়মিত আপডেট। নিজের বাড়ি নিজে করার ক্ষেত্রে অনুমোদন কখনোই কোনো বাধা নয় যদি আপনি সরকারি নিয়মনীতি মেনে বাড়ি তৈরি করেন। 

৩. নির্মাণ সামগ্রী, খরচ সময়

বাড়ির নির্মাণ সামগ্রীর দাম ওঠা-নামা করে প্রায় প্রতিবছরই। একারণে বাড়ি নির্মাণে ব্যয়ের পরিমাণও নির্দিষ্ট রাখা খুবই কঠিন হয়ে যায়। দক্ষ ঠিকাদার নির্বাচন করা এক্ষেত্রে একজন বাড়ির মালিকের জন্য হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান। নিজে নির্মাণ কাজ পরিচালনার সাথে যুক্ত থাকলে এ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকে এবং ব্যয়, সময় ও সামগ্রীর মানের ব্যাপারে একজন জমির মালিক নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেন।

এছাড়া নির্মাণের সময় সম্পর্কে ধারণা একদম পরিষ্কার থাকায় বাজেট ম্যানেজমেন্টও তুলনামূলক সহজ ও সাশ্রয়ী হয়। তৃতীয় পক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় দিনের পর দিন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রাখেন। এতে নির্মাণ সামগ্রীর যেমন অপচয় হয় তেমনি ভবনের মান ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিভিন্নভাবে।

৪. স্বকীয়তা

প্রতিটি মানুষ যখন জমি ক্রয় করেন, নিজের মনে নিজের বাসার একটি ছবি থাকে। বাড়ি বা বাসা মানে শুধু এক টুকরো মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়। নিজের বাসা বা বাড়ি মানে একটি পরিবারের এক চিলতে স্বপ্নও। হয়তো আপনি আপনার রান্নাঘরটি চান একটু বড়, হয়তো আপনার চাই প্রতিটি ঘরের সাথে লাগোয়া এক টুকরো বারান্দা অথবা আপনি চান আপনার পরিবারের সব সদস্যই যেন নিজের পছন্দমতো একটি ঘর বরাদ্দ যেন পায় বাড়িতে।

এসব চাহিদা মানুষের মানবিক বোধ থেকে তৈরি এবং প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদা, প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা। যদি সর্বসাধারণের মাঝে বিক্রয়ের জন্য বাড়ির নকশা করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই এই স্বকীয় চিন্তাধারা চলে যেতে পারে আড়ালে। আপনার বাড়ি হয়ে যেতে পারে আর দশটি বাড়ির মতোই ইট-কাঠের বাক্স। তাই ব্যবসায়িক চিন্তাধারার বাইরে থেকে বাড়ি তৈরি করতে চাই নিজের শক্ত উপস্থিতি। শুধুমাত্র নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করতে সাহস করলেই এই স্বকীয় চিন্তাধারা বেঁচে থাকতে পারে প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ প্রক্রিয়ায়।

৫. অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

২০২০ সালে এসে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন হয়ে উঠেছে সর্বোচ্চ মানের অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র। ব্যাংকের লভ্যাংশের চেয়ে অনেক দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে জমির দাম, ফ্ল্যাটের দাম। নিজের জমিতে নিজের বিনিয়োগ এই লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে প্রচুর পরিমাণে। বলা বাহুল্য, তৃতীয় পক্ষের নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্টতার কারণে এসব ক্ষেত্রে জমির মালিকের জন্য লভ্যাংশ যোগ হচ্ছে না তেমন কিছুই। নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করা তাই অনেক দিক থেকে ঝামেলার মনে হলেও মান নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত দিক ঠিক রাখতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য এটি হতে পারে একটি দুর্দান্ত বিনিয়োগ।

. ভবিষ্যতের পথে

ঢাকা শহরে এক টুকরো জমি বা একটি বাড়ি শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, সামাজিকভাবেও একটি দূরদর্শী বিনিয়োগ। নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা, তাদের সামাজিক বিবর্তন বা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা একটি কমার্শিয়াল চিন্তাধারার বাড়িতে বাধাগ্রস্থ হবে, এটি খুবই স্বাভাবিক। এ সম্পর্কে তাই চাই মানবিক চিন্তাধারা, পারিবারিক বন্ধনকে ভবনের নকশায় স্থান দেওয়া।

বাড়ির সাথে আত্মিক বন্ধন তৈরিও তাই ভবিষ্যতের পথে একটি পরিবারকে এগিয়ে দিতে পারে অনেকদূর। নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করার মাধ্যমে একটি পরিবার একসাথে থাকার ও একভাবে সামনে এগিয়ে যাবার যে প্লাটফর্ম তৈরি হয়, তা শর্তসাপেক্ষে কয়েকটি ফ্ল্যাটের বিনিময়ে তৈরি করে দেওয়া বাড়িতে পাওয়া কি আদৌ সম্ভব?

এসব কারণেই নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করতে আগ্রহী হতে সেরা সময়টা আসলে এখনই। তবে এজন্য চাই প্রশিক্ষিত স্থপতি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, যারা আপনার চাহিদা বুঝবেন ও কমার্শিয়াল ধ্যান-ধারণার বাইরে এসে আপনাকে সাহায্য করবেন। আর চাই নিষ্ঠাবান ঠিকাদার। আর এসবের জন্য প্রয়োজন একটি বিশ্বমানের কনসাল্টেশন সার্ভিসও।

এই কয়টি জিনিস নিশ্চিত করতে পারলেই আপনার স্বপ্নের বাড়ি ইট-কাঠের খাঁচা ভেঙে হয়ে উঠবে চিরায়ত সেই বাসস্থান, যার মায়ায় যুগের পর যুগ আপনার মন পড়ে থাকবে এই ভৌগোলিক পরিসীমাতে। তখন বাড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়, হবে আপনার আবেগ, অনুভূতি আর পরিবারের সুখ-দুঃখের সূতিকাগার।

আদিকাল থেকে বর্তমান: বসতবাড়ির বিবর্তনের ইতিহাস

মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলো বাসস্থান। বাসস্থান মানুষকে বিরুদ্ধ শক্তি থেকে দেয় সুরক্ষা, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে দেয় নিরাপত্তা, দেয় দিনের শেষে স্বস্তিতে ঘুমানোর জায়গা। কালের বিবর্তনে মানুষের কারিগরী দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও তা প্রয়োগ করার দক্ষতা। মানুষ নিজের আরাম-আয়েশের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে, নিত্য-নতুনভাবে বানিয়েছে তার বাসস্থান, যা কালের পরিক্রমায় তার স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে কালের বিবর্তনে মানুষের বাসস্থান আদিমকাল থেকে আজকের আধুনিক রূপ পেয়েছে।

প্রস্তরযুগ

যখন মানুষ বাসা বানাতে পারত না, তারা প্রকৃতি থেকে নিজের সব চাহিদা পূরণ করত। মানুষ গাছের ছায়াতে ছোট ছোট দলভুক্ত হয়ে থাকত। ঝড়, বৃষ্টি, প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে গাছের শীতল ছায়া তাদের দিত খুব সীমিত পরিসরের সুরক্ষা।

তারা একসময় হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। যেসব স্থানে ঘন বন পাওয়া যেত না, সেসব স্থানের পাহাড়ে বা আশেপাশের গুহাতে মানুষ থাকার চেষ্টা করত। গুহা মানুষকে আবহাওয়া থেকে রক্ষা করত আরো ভালোভাবে। আগুন আবিষ্কারের পরে বন্যপ্রাণী থেকে সুরক্ষা আরো সুনিশ্চিত হলো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পাথরের তৈরি বাসন এবং অস্ত্র আবিষ্কার করে কার্বন ডেটিং-এর মাধ্যমে এত সব তথ্য পেয়েছেন।

তখনও মানুষ খাদ্য সংগ্রহ ও সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াত। নিজের ঘর তৈরি করতে পারত না।

মধ্য-নব্যপ্রস্তরযুগ

এসময়ে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে এবং আগুন ও চাকার আবিষ্কারের সাথে সাথে নিত্যনতুন যন্ত্রের সাহায্যে ছোট ছোট ঘর গড়ে তুলে একটি ছোট জায়গার বন সাফ করে। এসময়ে মানুষ কিছু লম্বা, সরু রকমের গাছ, যেমন- খেজুর বা সুপারি এসব গাছের মাথা বাঁকিয়ে একসাথে করে বেঁধে এর উপর ঝোপ-ঝাড় দিয়ে মানুষ তৈরি করে প্রথম বাসা।

এরকম দলভুক্ত বাসাগুলোতে বাসকারী সদস্যরা তাদের সুরক্ষার জন্য বাসার চারিদিকে বেড়া দিত। এর মধ্যে গবাদি পশু আর তারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারত। কিছু কিছু স্থানে বড় গাছ পাওয়া না গেলে মাটি, পাথর কিংবা শিকারকৃত পশুর হাড় দিয়ে বাসা বানাতো।

সভ্যতার উত্থান

সমাজ ব্যবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ প্রকৃতির উপর নিজের আধিপত্য স্থাপন করতে শুরু করে। বিভিন্ন বড় বড় নদ-নদীর অববাহিকায় মানুষ গড়ে তোলে বড় বড় সভ্যতা। নীলনদের অববাহিকায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা, টাইবার নদীর পাশে রোমান সভ্যতা, তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদীর অববাহিকায় সুমেরীয় বা আক্কাডিয়ান সভ্যতা, আমাজন বেসিনের অববাহিকায় ইনকা সভ্যতা কিংবা মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার এই কথাটার ইঙ্গিত দেয়।

এসব অববাহিকা থেকে পাওয়া মাটি দিয়ে বানানো ইট হয়ে উঠে ঘর বানানোর প্রধান উপকরণ। বড় বড় স্থাপনা বানাতে পাথরের ব্যবহারও লক্ষ্যণীয়। পোড়ামাটি বা পোড়া ইটের বাসার সাথে অঞ্চল ভেদে ছাদে নলখাগড়া, তালপাতা, প্যাপিরাস পাতা কিংবা কাঠের ব্যবহার হতো। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে এদের ব্যবহার ও তৈরিতে এসেছে নতুনত্ব।

মধ্যযুগ

মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মপ্রচার, নতুন দেশ আবিষ্কারের জন্য মানুষ নৌপথে বিভিন্ন স্থানে যেতে শুরু করে। মানুষের মধ্যে শ্রেণিবিভেদ আরো প্রকট হয়ে উঠে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং কৃষক শ্রেণির ঘর তৈরির পদ্ধতিতে আসে ভিন্নতা, মূলত অর্থনৈতিক কারণে।

শিল্প বিপ্লবের আগপর্যন্ত হাতে বানানো হতো গৃহ নির্মাণ সামগ্রী, যা শুধু ধনীরাই কিনে ব্যবহার করতে পারত। এজন্য কাঠ, খড় কিংবা পাটখড়ির ব্যবহার শুরু হয় বাড়ি তৈরিতে। বহিশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বড় বড় দুর্গ বানানো হতো পাথর, চুন, কাদামাটি, খড় এবং কাঠ দিয়ে। পরবর্তীতে লোহার ব্যবহার শুরু হয় অল্প পরিসরে।

শিল্পযুগ

শিল্পযুগের শুরুতে কলকারখানার কার্যক্রম ও বিভিন্ন যন্ত্রের আবিষ্কার মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির চাকাকে করে তোলে বেগবান। কম সময়ে দ্রুততার সাথে নিখুঁতভাবে নির্মাণসামগ্রী বানানো শুরু হয়।

লোহা ও কলে পোড়ানো ইটের ব্যবহার মানুষের গৃহের স্থাপত্যকলার আমূল পরিবর্তন আনতে শুরু করে। মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয় শিল্প বিপ্লব। রেল ও সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় মানুষের কাছে দ্রুততার সাথে পণ্য পৌঁছানো সম্ভবপর হয়ে উঠে।

বর্তমান যুগ

শিল্প, বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে মানুষ সহজে গৃহনির্মাণ সামগ্রী তৈরির জন্য গবেষণা শুরু করে। কংক্রিট হলো এর ফসল। আরসিসি স্ট্রাকচারে কনক্রিট ও লোহার মেলবন্ধনের ফলে মানুষ আজ বানাতে পারছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বড় বড় ব্রিজ।

ইটের ব্যবহার হয়েছে আরো বহু বিস্তৃত। কাঁচ দিয়ে হচ্ছে জানালা, যা বড় বড় দালানকে দিচ্ছে নান্দনিক ও আকর্ষণীয় রূপ। মানুষ নিজের স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে আজ চাঁদে কিংবা মঙ্গলে। আজকে মানুষের বাসার কোনো স্বপ্নই অলীক নয়। যা ভাবতে পারা যায়, তার প্রায় সবটাই বাস্তবে করা সম্ভবপর এখন।

এভাবেই কালের বিবর্তনে মানুষ নিজের বাসাকে আজকের স্বপ্নাতীত, কল্পনাতীত স্থানে চিন্তা করতে পেরেছে। এর পুরোটাই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানুষের স্বপ্ন দেখার সাহসের জন্য।

আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে, একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য স্থপতি এবং প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এভাবেই নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাসা বানানোর সাথে সাথে বিবর্তিত হচ্ছে মানুষের বাসস্থানের চাহিদা ও পূরণ হচ্ছে সভ্যতার আধুনিকতম সব স্বপ্ন।

বাড়ি বানানোর আগে যা যা করবেন

১. প্রথমে নিজের বাজেট ঠিক করুন। আগেই চিন্তা করে নিন আপনি আপনার বাড়ি বানানোর জন্য কত টাকা আসলেই খরচ করতে পারবেন, আর প্লটের জন্য কত টাকা খরচ করতে পারবেন, কেননা একেক জায়গার প্লটের দাম একেকরকম হয়। বাড়ি বানানোর সময় শুধুমাত্র বাড়ি বানানোর খরচ বা অন্যান্য মর্টগেজ পেমেন্টই নয়, বরং বাড়ি বানানোর সময় আরো বিভিন্ন যেসব রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতের জন্য খরচ লাগে সেগুলোও মাথায় রাখতে হবে।

২. কিভাবে কি খরচ করবেন তার একটা প্লান প্রস্তুত করে ফেলুন, একটা নির্দিষ্ট প্লানে টাকা খরচ করুন, নিজের ক্রেডিট রিপোর্টের একটা তালিকা প্রস্তুত করে ফেলুন যা আপনার ঋণদাতারা দেখতে পারেন।

৩. বাড়ি নির্মাণের জন্য নির্বাচিত জায়গাটি কি আবাসিক না বাণিজ্যিক এলাকার অন্তর্ভূক্ত সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । কেননা,  আবাসিক বা বাণিজ্যিক এলাকার কর ও অন্যান্য খরচ একেক রকম।

 ৪. বাড়ি নির্মাণের জন্য নির্বাচিত জায়গাটি কি আবাসিক না বাণিজ্যিক এলাকার অন্তর্ভূক্ত সে দিকে ও লক্ষ্য রাখা উচিত।  কারণ, ইলেকট্রিক লাইনের (Unit Cost) এলাকাভেদে  ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

৫. Home Building Finance এর প্রয়োজন আছে কিনা সে দিকটা বিবেচনায় রাখতে হবে। যদি Home Building Finance এর প্রয়োজন হয় ,তাহলে কোথায় কি রেট চলছে এবং এর Terms and Condition সম্পর্কে  জানতে হবে।

৬. CS , RS  এবং  Mutation এর কাগজ নামজারি ও খাজনা হালনাগাদ করা আছে কি না সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৭. বাড়ি নির্মাণের পূর্বে বাড়ির ডিজাইন জমা দেওয়া পূর্বক অবশ্যই Fire Service থেকে অনুমতি নিতে হবে।

বাড়ি বানানোর জন্য কত টাকা লাগবে আমার?

বাজেট

সবার আগে, আপনার একটা বাজেট বানাতে হবে বাড়ি বানানোর জন্য। সেটা ব্যাংক থেকে  ধার করে হোক বা নিজের জমানো টাকা দিয়ে হোক, আপনি জানেন বাজেট থাকলে আপনারই সুবিধা হবে কোন জায়গায় বাড়ি বানাতে চান কিভাবে বানাতে চান সেটা নির্ধারণ করার জন্য। সবসময় বাড়ি বানানোর খরচের থেকে  ০-১০% বেশী খরচ হিসাব করে রাখবেন , কেননা বাড়ি বানাতে গেলে অনেক অজানা খরচ ও হয়ে যায় যা কি না আপনি আগে ও জানতেন না।

টাকা প্রদান পদ্ধতি

ব্যাংকে ধার করার পর তা কিভাবে শোধ করবেন সেটা ভালো করে আগে থেকেই বুঝে নিবেন। আপনি ব্যাংক থেকে ধার করলে মাসিক কিস্তিতে আপনাকে মর্টগেজ বিল শোধ করতে হবে। আগে থেকেই অন্তত ১২ মাসের কিস্তির টাকা জমিয়ে রাখবেন না হলে প্রতি মাসে ধার শোধ করতে গেলে আপনার মাসিক আয়ের উপর অনেক চাপ পড়বে।

একজন কন্ট্র্যাক্টর রাখুন

বাড়ি বানানোর কাজে হাত দেওয়ার আগে একজন ভালো কন্ট্র্যাক্টর রাখুন কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্য। আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিজ এলাকার ভালো কন্ট্র্যাক্টর কে, সে আগে যার যার কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলে দেখুন সে আসলে কি রকম কাজ করে।

গড়ে খরচ কেমন হতে পারে?

বাড়ি বানানোর জন্য জায়গা খরচ, বানানো খরচ, শ্রমিকের খরচ, বিভিন্ন উপাদান কেনার খরচ এসবের পাশাপাশি ও বিভিন্ন আয়কর ও ইন্স্যুরেন্স এর কথা মাথায় রাখতে হয়, যেটার খরচ আপনার বাড়ি বানানোর আগেই লাগবে। দেশীয় নিয়মের কথা চিন্তা করলে, বিল্ডারের ইন্স্যুরেন্স ও অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে আপনার। সাধারণত একটা ২০০০ বর্গফুটের বাসার জন্য ৫,০০০,০০০ থেকে ৭,০০০,০০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে বাসার মধ্যে কি কি খরচ করবেন সেটা এর মধ্যে হিসাব করা নেই। আপনার খরচ অনেক নির্ভর করবে আপনি কি রকম কন্ট্র্যাক্টর রেখেছেন তার উপরেও। আরো কিছু বিষয় আছে যার জন্য খরচ হয় সাধারণত –

  • জায়গা কোথায়
  • এলাকার জায়গার দাম
  • জিনিসপত্রের দাম
  • স্থাপত্য ডিজাইন
  • প্রপার্টির স্কয়ার ফুটেজ ইত্যাদি

বাড়ি তৈরির গল্প

নিজের ঘরে থাকতে কে না চায়? হোক সেটা বড় বা ছোট। আপন ঘরে আপন ভুবনে পরিবার নিয়ে থাকার স্বপ্ন সবাই দেখে। তেমনই একজন নাজমুল হক। আজ আমরা শুনবো নাজমুল হকের স্বপ্নের বাড়ি তৈরির গল্প ।

নাজমুল হক এখন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবী। অবসরে গিয়েছেন ২ বছরের মত হলো। চাকুরীর বয়স যখন ১৫ বছর তখন তিনি খিলক্ষেত এলাকায় ৩ কাটা জমি বায়না দেন এবং চাকরী শেষ করতে করতে পুরো টাকাই পরিশোধ করেন। এখন তিনি তার সারাজীবনের কিছু সঞ্চয় এবং প্যানশনের টাকা দিয়ে তৈরি করবেন তার সেই স্বপ্নের বাড়ি!

বাড়ি তৈরি খুব সহজ বিষয় নয়। প্রতি পদে পদে অনেক ধরনের সমস্যা চলে আসে আর খরচ হয় প্রচুর টাকা। নাজমুল সাহেব প্রথমে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কারন বাড়ি ডিজাইন, তৈরি, সরঞ্জাম ক্রয়, লেবারদের মজুরি রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তার খুব একটা ধারণা ছিলো না। নাজমুল সাহেব এরপর পরিচিত কিছু বন্ধু এবং অনলাইনে বিভিন্ন বাড়ি তৈরি সহায়ক ব্লগ এবং সাইট থেকে প্রাথমিক ব্যাপারগুলি সম্পর্কে জানতে পারেন, তার কেমন খরচ হতে পারে সেটির একটি আইডিয়াও তিনি পান। জানতে পারেন কোথায় কত টাকায় বাড়ি তৈরির উপকরণ পাওয়া যাবে, কিভাবে বুঝা যাবে কোন উপকরণ ভালো, লেবার কোথায় পাবনে, আইনত বিষয়গুলি কি, তাছাড়াও কিভাবে বাড়ি তৈরির জন্য লোন পাবেন কিভাবে তা পরিশোধ করবেন সেই ব্যাপারে ধারণা লাভ করেন।

নাজমুল সাহেবের জমানো টাকায় শুধু মাত্র তার স্বপ্নের ৫ তলা বাড়ির ফাউন্ডেশন আর এক তলার কাজ মোটামোটি হত। তিনি তার সেই টাকা দিয়েই কাজ শুরু করে দেন। ফাউন্ডেশনের কাজ শেষ হয়, পানির লাইন বসানো হয় শুরু হয় এর উপর এক তলার কাজ। অনেক ব্যস্ত দিন কাটে নাজমুল সাহেবের। তিনি বুঝতে পারেন যে, বাড়ি তৈরির সময় শুধু লেবার নয় যার বাড়ি তাকে অবশ্যই সেখানে সব সময় থাকা লাগে নাহলে অনেক কাজই ঠিকমত হয় না।

এত ব্যস্ততার পরেও শুধু মাত্র সঠিক তথ্য জানার কারনে নাজমুল সাহেব খুব সহজেই হাউজ বিল্ডিং লোন ম্যানেজ করে ফেলেন। সাথে সঠিক দাম ও সঠিক জায়গা সম্পর্কে তার ধারণাগুলি তার সাশ্রয় করেছে অর্থ এবং অনেক সময়।  নাজমুল সাহেবের বাড়ির ২ তলার কাজ শেষ হয়েছে। এক তলা তিনি ভাড়া দিয়েছেন এবং দোতলায় নিজের পরিবার নিয়ে থাকছেন। তার স্বপ্ন এখনও উপরের দিকে উঠছে তলার পর তলার মাধ্যমে। আস্তে আস্তে পূরণ করছেন তার নিজের বাড়ির স্বপ্ন। একটু সঠিক দিকনির্দেশনা আর সঠিক তথ্য তার এই কঠিন পথকে করে দিয়েছে সহজ এবং ত্রুটিমুক্ত।

এইরকম হাজারো নাজমুল সাহেবরা প্রতিনিয়ত কষ্ট করছেন নিজেদের স্বপ্ন পূরণে। আপনার কষ্টার্জিত অর্থে স্বপ্নের বাড়ির পথকে একটু সহজ করতেই ফ্রেশ সিমেন্ট হোম  বিল্ডার্স  ক্লাব। বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আর দিকনির্দেশনা নিয়ে আমরা আছি আপনাদের পাশে।