টেন্ডার ও চুক্তিপত্র দুটি সম্পূর্ণ আলাদা এবং ক্রম অনুসারে প্রয়োজনীয় ধাপ।
Continue readingবিধিমালা অনুসারে বাড়ির ছেড়ে দেওয়া জায়গায় কী কী করবেন?
বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে কোনো জমিতেই সমগ্র অংশ জুড়ে বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
Continue readingবাড়ি নির্মাণে সম্ভাব্য আইনি বাধাবিপত্তি
আর কিছুদিন পরই অবসরে যাবেন আলতাফ সাহেব। কয়েক বছর আগে একটি জায়গা কিনেছেন ঢাকাতে। অবসরের সময় একটি বড় পরিমাণ অর্থ পেলেই নিজের মতো করে একটি বাড়ি তৈরি করতে চান। কিন্তু বাড়ি তৈরির আইনি ঝামেলার কথা ভেবে তিনি সবসময়ই কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন।
ঢাকা শহরে একটি জরিপ চালালে এরকম গল্প শোনা যাবে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই। ঢাকা শহরে জমি বা নির্মাণের খরচটা একটু বেশির দিকে হলেও সাধারণ মানুষ ভবন নির্মাণে আগ্রহ হারায় মূলত পদে পদে আইনি জটিলতার কথা চিন্তা করেই।
ভবন নির্মাণের কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ রয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আইন রয়েছে। এগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১। জমি সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া
২। নির্মাণ সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া
দুটি ভাগের বিভিন্ন পদক্ষেপ এখানে ধাপে ধাপে পর্যালোচনা করে আমরা একটি তালিকা তৈরি করতে পারি। চলুন সেটি দেখে নিই।
জমি সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া
জমি কেনা ভবন নির্মাণের প্রথম পদক্ষেপ। আইনি প্রক্রিয়ার কথা বিবেচনা করলে এটি আসলে সবচেয়ে বেশি সমস্যাপূর্ণ ধাপ। জমি ও জমির মালিকানা সংক্রান্ত ব্যাপারে আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে হলে আপনাকে জমি কেনার আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। জমি কেনার চেকলিস্টটি মূলত এরকম:
জমির তথ্য সংগ্রহ
জমি কেনার আগে জমি যে এলাকায় অবস্থিত সেখানে নিজে চলে যান কিংবা লোক পাঠান কিছু তথ্য সংগ্রহের জন্য। এটিকে আপনি যাচাই বা সার্ভে ধরে নিতে পারেন। এই ধাপে আপনাকে যা যা জানতে হবে তা হলো:
১. জমির জন্য সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের প্রদত্ত প্লট নম্বর।
২. মালিকের নাম (বর্তমান এবং পূর্ব)
৩. মালিকানার স্থায়িত্ব (সম্ভব হলে আগের মালিকের নাম, মালিকানা পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এবং সময়কাল)
৪. ঠিকানা (সকল রোড নম্বর এবং ডাক নম্বরসহ)
এরপর আপনাকে যেতে হবে সিটি কর্পোরেশনে বা পৌরসভায়। এখানে সংরক্ষিত ডেটাবেজে থাকা তথ্যের সাথে মিলিয়ে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
দলিল নিরীক্ষণ
খোঁজ নেবার পরে আপনার দরকার হবে কাগজে-কলমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। জমির ক্ষেত্রে আইনি কাগজ হচ্ছে জমির দলিল। কেনার আগে বর্তমান দলিল সত্য ও প্রযোজ্য (Valid) কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
এই ধাপে যা যা করতে হবে-
১. বিক্রেতার কাছে দলিল দাবি করুন ও ফটোকপি সংগ্রহ করুন।
২. এই কপি ও খতিয়ান নাম্বারসহ চলে যান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে মূল দলিলের একটি কপি সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। সেটি হয়ে গেলে আপনার ফটোকপির সাথে সেটি মিলিয়ে নিন।
৩. জমি যদি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে দলিলের মতো একটি বণ্টননামাও থাকে। সেটিও বৈধ কিনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জেনে নিন।
৪. জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও জমি বন্ধক বা ইজারা থাকতে পারে। জমি বন্ধক বা ইজারা থাকলে তা বিক্রয় করা যায় না। সেটি আছে কিনা জানার জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দায়মুক্তির তথ্য পাওয়া যায়। এটি ১০ বছরের জন্য যাচাই করা যায়।
৫. খতিয়ান ও পোর্চা মিলিয়ে নিন। এই তথ্যগুলি থাকে সরকারি তহসিল অফিসে। খতিয়ান ও পোর্চা অনেক সময় রেকর্ড আপডেট করলে ভুল থাকে। সেটির ব্যাখ্যাও থাকতে হবে।
জমি কেনা
এবার আপনার জমিটি নিজের করে নেওয়ার পালা। এখানে আপনাকে যা যা করতে হবে তা হচ্ছে:
১. নতুন দলিল তৈরি করুন। সেখানে মালিকানা পরিবর্তনের জন্য সকল শর্ত এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে শর্তাদি লিখুন। একজন ভূমি আইনে দক্ষ আইনজীবীর সহায়তা নিন।
২. নিজের নামে রেজিস্ট্রি করতে হবে আপনার জমি। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে জমির দামের বিপরীতে নির্ধারিত রেজিস্ট্রি ফি পরিশোধ করে জমির রেজিস্ট্রেশন করুন।
৩. মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন দলিলের প্রযোজ্যতা ও পুরাতন দলিল বাতিলের বিষয়টি নথিভুক্ত করান। খতিয়ান ও পোর্চা রেকর্ডেও মালিক হিসাবে যে আপনার নাম এসেছে সেটিও আবেদন করে নিশ্চিত করুন। মিউটেশনের জন্য নামজারি জমাভাগ প্রস্তাবপত্র, ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ এবং মিউটেশন খতিয়ান সংগ্রহ করে নিন আপনার কাজ শেষ হলে।
নির্মাণ সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া
জমির পরে শুরু হবে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া। এখানে মোট তিনটি ধাপে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন, নির্মাণে আইনি প্রক্রিয়া না মানা হলে আপনার ভবন বা তার নিয়ম বহির্ভূত অংশ যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেঙে দিতে পারেন অথবা ভবনের অনুমোদন বাতিল করতে পারেন। এখানে যেসকল ধাপে নিয়ম মানতে হবে তা হচ্ছে:
ভবনের নকশা
আপনার জমি যদি সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন হয়, তাহলে নকশা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে লাইসেন্সধারী স্থপতির সাহায্য নিতে হবে। নকশায় স্থপতির স্বাক্ষর না থাকলে ভবনের নকশা পাশ হবে না। বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট পূর্ণ সদস্য ও অ্যাসোসিয়েট সদস্য হিসেবে আর্কিটেক্টদের অনুমোদন দিয়ে থাকে। আপনার ভবনের স্কয়ার ফিট অনুসারে সেই নকশায় স্বাক্ষর করার অধিকার রাখেন এরকম কাউকে দিয়ে নকশা করাতে হবে।
এর সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কমপক্ষে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার স্ট্রাকচারাল ও প্লাম্বিং নকশা প্রণয়ণ করবেন। নকশায় নকশাকারী স্থপতির এবং স্ট্রাকচার ডিজাইনে কাজ করা প্রকৌশলীর স্বাক্ষর থাকতে হবে এবং পরবর্তীতে ভবন নকশা সংক্রান্ত সকল ব্যাপারে তারা দায়বদ্ধ থাকবেন।
ভবনের অনুমোদন
নকশা যদি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং বাংলাদেশ গেজেটের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলেই আপনি ভবন তুলতে পারবেন। এই ভবনের আইনানুগ ব্যাপারগুলি যাচাই করে রাজউক বা সংশ্লিষ্ট পৌরসভা। এই অনুমোদনের জন্য আপনি নিজেও আবেদন করতে পারেন অথবা আপনার হয়ে আপনার জন্য নকশা প্রণয়নকারী স্থপতি বা স্থাপত্য ফার্মের মাধ্যমেও আবেদন করাতে পারেন। নিজে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় অনুমোদনের জন্য কী কী ড্রয়িং দরকার হবে সেটি আগে থেকেই জেনে নিন। যেমন- রাজউকে অনুমোদনের আবেদন করতে নিম্নলিখিত উপকরণ দরকার হয়:
- দলিল
- অবিকল কার্বন রশিদ (DCR)
- ভূমি ভাড়া রশিদ
- পরিব্যক্তি (মিউটেশন)
- খসড়া প্রকাশনা ফরম (ড্রাফট পাবলিকেশন ফরম)
- পরিকল্পনার ৭ কপি (৬ তলা পর্যন্ত ভবনের জন্য)
- যদি ভবনটি ৬ তলার বেশি হয়, একটি কাঠামোগত নকশার প্রয়োজন হয় এবং ২ নং প্রশ্নের উত্তরের বর্ণিত ৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়।
ভবন নির্মাণ
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে আইনি জটিলতা নেই। তবে কয়েকটি জিনিস মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. অনুমোদিত নকশায় নিজের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করবেন না। FAR (Floor Area Ratio) এবং MGC মেনে ভবনের নকশায় অনুমোদন নেয়া হয়। তাই কোনো পরিবর্তন থাকলে স্থপতিকে জানান। তিনি নিয়মের ভেতরে থেকে যদি পরিবর্তন সম্ভব হয় সেটা করে দিতে পারবেন। অতিরিক্ত বারান্দা বা জমি ও সেটব্যাকের মধ্যে ভবনের অংশ প্রবেশ করালে সেটা অবৈধ বলে পরিগণিত হবে এবং ভবনের ওই অংশ ভেঙে দিতে কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ।
২. ইমারত নির্মাণের সময় শ্রমিক নিরাপত্তা আইন মেনে চলুন। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে যেকোনো ছোট বা বড় দুর্ঘটনা।
৩. রাজউকের নকশা পাসের সময় অতিরিক্ত নয়টি ছাড়পত্র দরকার হয়। এর মধ্যে পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু বিষয় ও থাকে। নির্মাণের সময় পরিবেশ বিধিমালা মেনে চলুন।
আপনার সাইটে তৈরি হওয়া ধুলা ও বর্জ্য যেন আশেপাশের পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করে না ফেলে সে ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে আপনাকেই।
অনেক ধাপ মেনে চলতে হলেও ভবন নির্মাণে প্রতিটি পদক্ষেপেই আপনাকে আসলে সচেতন হতেই হবে। আপনার জ্ঞান, সচেতনতা ও স্মার্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই আপনাকে সকল আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।
বাড়ি তৈরির পথে আইনি কাজ
বাংলাদেশে ভূমি নির্মাণ ও বাড়ি করার ধাপে ধাপে প্রতারণা এবং ঠকে যাওয়ার গল্প এত বেশি সাধারণ যে, সাধারণ মানুষ পুরো প্রক্রিয়াটিকে অনেক ক্ষেত্রে শুধু ঝামেলারই মনে করেন না, রীতিমতো ভয় পান। অবশ্যই বাড়ি নির্মাণের সাথে ভূমিক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিক্রয় এবং শ্রমনির্ভর নির্মাণকাজের মতো নানা ধাপ রয়েছে বলে এ ব্যাপারে অনেকগুলো আইন মেনে চলার ব্যাপার থাকে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। কিন্তু জানা থাকলে ও সচেতন থাকলে সকল ঝামেলাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
আসুন দেখে নিই বাড়ি নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে আইনি ঝামেলা এড়িয়ে চলতে আপনাকে কী কী করতে হবে।
তথ্য সংগ্রহ
জমি কেনার আগেই জমি ও তার ইতিহাস সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নিন। প্লট নম্বর, বর্তমান মালিকের নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর এই বিষয়গুলি অবশ্যই জেনে নিন। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের জমির ডেটাবেজ রয়েছে। পৌরসভা পর্যায়েও ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। তাই এই তথ্যগুলো জানতে পারলে জমি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা পাওয়াটা অনেক সহজ হয়।
যিনি প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন, তার উচিত প্রপার্টির আগের সব ইতিহাস তথ্য খুঁজে বের করা। যদি আপনার এলাকায় ডেটাবেজ তৈরির কাজ না হয়ে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে আগের মালিক ও এলাকার লোকজন আপনাকে সহায়তা করতে পারেন।
দলিলের প্রযোজ্যতা যাচাই
দলিল হচ্ছে যেকোন সম্পত্তির মালিকানার একমাত্র স্বীকৃত নথি। তাই প্রতিটি ব্যাপারেই দলিল হতে হবে আসল, ত্রুটিমুক্ত এবং নির্ভরযোগ্য। এই নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা যাবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রত্যেকটি রেজিস্টার্ড দলিলের অধীনে আসল দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পর্কে সকল তথ্য থাকে। সাবরেজিস্ট্রারকে সরকারের নির্ধারিত ফি দিয়ে সহজেই মূল দলিলের একটা কপি বের করা যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ক্ষেত্রে বৈধ বণ্টননামা রয়েছে কিনা সেটাও জেনে নেওয়া যাবে।
এছাড়া এই সম্পদের গত দশ বছরের সকল তথ্য অনুসন্ধান করা যায় সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে। জমির মালিকানা যদি বদল বা বন্ধকে রাখা হয়ে থাকে কখনো, সেই তথ্যও পাওয়া যাবে এভাবে। যাচাই করে নিন কেনার আগে যে আপনার জমি দায়মুক্ত কিনা।
খতিয়ান ও পোর্চা মিলিয়ে নেয়া
এলাকার সরকারি তফসিল অফিসে কোন জমির খতিয়ান বা পোর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। খতিয়ান বা পোর্চার সকল তথ্যই তফসিল অফিস থেকে জানা যাবে, জমির মালিকের নামের সাথে জমির বাকি তথ্যের মিল আছে কিনা সেটাও যাচাই বাছাই করে রাখতে হবে। কোন তথ্যে ভুল থাকলে সেটারও একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা সেখানে উল্লেখ থাকবে। তাই ক্রস রেফারেন্সিং এর জন্য দলিলের বিপক্ষে খতিয়ান ও পোর্চার নাম্বারও মিলিয়ে নিন।
মিউটেশান
অনেকক্ষেত্রে জমির দলিল পুরাতন হলে জমিতে বর্তমান বিক্রেতার নাম থাকে না। কিন্তু জমি কারো কাছ থেকে কিনতে হবে অবশ্যই জমির মালিকের নাম মিউটেশান করে আপডেট করে নেয়াটা অত্যন্ত দরকারি। মিউটেশানের জন্য তিনটি দলিল থাকতে হয়-
১. নামজারি জমাভাগ প্রস্তাবপত্র
২. ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ
৩. মিউটেশান খতিয়ান
খাসজমি এবং ইজারা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনেক ক্ষেত্রে জমি নিজের বিভিন্ন কাজে ইজারা দিয়ে থাকেন। আইন অনুসারে সরকার দেশের সব জমির মালিক এবং এই কারণেই জমির খাজনা সরকারকে দিতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত কাজের জন্য সরকার কোন জমি ইজারা দিয়ে থাকলে তা আইনত কেনাবেচা করা যায় না। তবে আবাসিক কারনে ইজারা দেয়া হলে তার জন্য আলাদা বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক আবাসিক প্রপার্টিই সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। সরকার সাধারণত সিডিআর কিংবা রাজউক ইত্যাদি সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে অনেক প্রপার্টি ইজারা দিয়ে থাকে। তাই ওসব প্রপার্টির উপর কোন কাজ করতে গেলে এইসব সংস্থার অনুমতি নিতে হয়, আপনি যে প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন সেটা সরকারি ইজারায় আছে কিনা সেটা নিজে গিয়ে অনুসন্ধান করে আসতে হবে।
খাজনা পরিশোধ
জমি কেনার আগের বছর পর্যন্ত জমির খাজনা পরিশোধ আছে কিনা সেটা অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত। নইলে পরবর্তীতে জমিতে বকেয়া খাজনা খরিদ্দারকেই শোধ করতে হবে। দিতে হতে পারে জরিমানাও। এছাড়া আগের মালিকের দীর্ঘদিনের খাজনা বাকি থাকা সাপেক্ষে হতে পারে সরকারি মামলাও। তাই খাজনা পরিশোধের রশিদসহই জমি ক্রয় করা উচিত।
ইমারত নির্মাণে আইন
জমি কেনার পরে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে ভবন করলে সেটা সরকার যেকোন সময় ভেঙ্গে দিতে পারেন। তাই আপনাকে যা যা করতে হবে তা নিয়ে আলাপ করা হলো।
অবশ্যই একজন লাইসেন্সধারী স্থপতিকে দিয়ে ভবনের নকশা করাতে হবে যেন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার FAR, MGC এর পাশাপাশি সকল আগুন, ভূমিকম্প এবং সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মেনেই নকশাটি করা হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে FAR বা MGC সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকলেও এবং ইট কাঠের দাম বলতে পারলেও একজন নন-লাইসেন্সড মানুষ ডিজাইন বা নকশা করার যে প্রাথমিক জ্ঞান তাও রাখেন না। সুতরাং এই চর্চা শুধু বিপদই ডেকে আনবে।
পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মের কড়াকড়ি কম হলেও এখানেও একইভাবে একটি বিধি বিধানের বই রয়েছে। এখানেও পেশাদারের সাহায্য নিয়েই ডিজাইন করানো উচিৎ। কারণ, স্থান পরিবর্তন হলেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনে ছাড় দেয়া উচিৎ নয়।
ভবন নির্মাণের সময় শ্রম অধিকার আইন অনুসারে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অনুমোদিত মজুরি এবং জীবনমান সম্পর্কে সচেতন হোন। কোন দুর্ঘটনায় আইন অমান্য হলে সেটাও হতে পারে ঝামেলার কারণ।
নকশা রাজউক বা সিটি কর্পোরেশান থেকে পাশ করানোর পর সেই নকশায় বড় পরিবর্তন আনা (যেমন- ফ্লোরের আয়তন বাড়ানো বা ফাঁকা জায়গা কমিয়ে দেয়া) আইনত দণ্ডনীয়। এ অবস্থায় যেকোন ইন্সপেক্টর এসে প্রমাণ সাপেক্ষে ভবন বা তার অংশবিশেষ ভেঙে দিতে পারেন। তাই এই চর্চাও পরিহার করতে হবে। এ জন্য অনুমোদিত ড্রয়িং অনুসারেই ভবন তুলুন এবং নকশা সংরক্ষণ করুন।
আইন মেনে প্রতিটি ধাপে ভবন তৈরি করলে আপনি ভবন সংক্রান্ত কাজে আইনি ঝামেলায় পড়বেন না। ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ হলেও আপনি ভবনে বসবাস করবেন আরো বেশি সময় ধরে। সেই দীর্ঘ সময়ে নিজের এবং নিজের পরবর্তী প্রজন্মের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে পারে আপনার সচেতনতাই।
বাড়ির নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ
প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে তার জীবনের কষ্টার্জিত সকল সঞ্চয় দিয়ে তার কল্পলোকের বাড়িটি নির্মাণ করা। আর এ বাড়ি নির্মাণের প্রথম এবং অন্যতম প্রধান ধাপ হলো নকশা অনুমোদন। ঢাকায় এই অনুমোদন প্রদানের কাজটি করে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেককেই পোহাতে হয় নানাবিধ ঝক্কি-ঝামেলা।
প্লটের প্রকারভেদ
প্রথমেই ধারণা নেয়া প্রয়োজন প্লটের প্রকারভেদ সম্পর্কে। রাজউকে সাধারণত তিন ধরনের প্লটের শ্রেণীবিভাগ করা হয়-
- রাজউকের প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।
- রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের প্লটঃ এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা শাখার প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
- ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র নিতে হবে। রাজউক এলাকাভিত্তিক ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদান করে। সেই ছাড়পত্র নিয়ে নির্মাণ অনুমোদনের জন্য নকশা রাজউকের ‘ইমারত নির্মাণ কমিটি’-তে দাখিল করতে হয়।
নকশা অনুমোদন
ইতোমধ্যে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের প্রশংসনীয় ডিজিটাল উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে । এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ৭-৫৩ দিনের মধ্যে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
এবারে জেনে নেয়া যাক রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ-
- প্রথমেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার জমির দাগ ও মৌজা নম্বর সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর এটি ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) এর কোন শ্রেণিভুক্ত তা দেখে নিতে হবে। আপনার নির্ধারিত জমিটি আবাসিক শ্রেণিভুক্ত হলেই কেবল সেক্ষেত্রে আবাসিক বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।
- জমি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই যা করতে হবে তা হল ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র সংগ্রহ। এজন্য রাজউকের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে।
- ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হল – জমি রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, খাজনা, জমা, খারিজ, সিএস (CS), আরএস (RS), মৌজা, থানা নাম, অঙ্গীকার নামা, নির্ধারিত আবেদনপত্রে আবেদন, আবেদনপত্র অনুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি এবং ব্যাংকে নির্ধারিত ফি প্রদান।
- প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হলো- প্রাতিষ্ঠানিক নকশা অনুমোদনের জন্য বরাদ্দপত্র, কিস্তি পরিশোধের রিসিট, ভূমি জরিপের নকশা, লিজ দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (তৃতীয় ব্যক্তিকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে), ছাড়পত্রের আবেদনপত্র এবং তদানুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি।
- নকশা প্রণয়নে উভয় ধরনের মালিকানার ক্ষেত্রে জমি সংলগ্ন রাস্তার ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ অনুযায়ী ফার (FAR) প্রযোজ্য হবে।
- জমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের সাথে রাজউকের নির্ধারিত ফি প্রদানসহ জমির কাগজপত্র এবং সাইটপ্ল্যানের প্রিন্টকপি জমা দিতে হবে।
- আবেদনের পর রাজউকের জরিপ কর্মকর্তাদের দ্বারা জমি পরিদর্শন শেষে, রিপোর্ট পজিটিভ হলে, খুব দ্রুত জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
- জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ হল মাটি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্ট। এই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে পরের ধাপগুলোতে অগ্রসর হতে হবে।
- এরপর সুদক্ষ স্থপতি এবং প্রকৌশলী কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের নকশা (প্ল্যান, লে আউট, স্ট্রাকচারাল লে আউট, প্লাম্বিং ইত্যাদি) প্রস্তুত করাতে হবে। নকশা অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও দলিলাদির মধ্যে যা যা থাকবে-
- ৮ প্রস্থ নকশাসহ আবেদন ছক সম্পূর্ণরূপে পূরণ ও স্বাক্ষর
- নকশা-প্রণেতা কারিগরি ব্যক্তির পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য নম্বরসহ স্বাক্ষর
- বৈধ মালিকানার হালনাগাদ সকল দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান
- A4 সাইজের কাগজে FAR-এর হিসাব
- গভীর ভিত্তি, পাইলিং এবং বেজমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ছকে (ইন্ডেমনিটি বন্ড ফর্ম ৩০১) এবং প্রযোজ্য হলে ক্ষতিপূরণ মুচলেকা প্রদান
- A0-A4 সাইজে মেট্রিক ম্যাপে নকশা প্রণয়ন এবং দাখিলকরণ
- নকশাতে অবশ্যই আবেদনকারী (মালিক/ আম মোক্তারের) নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকা জরুরি
- ছাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানির লে-আউট প্রদর্শনপূর্বক ছাদের নকশা প্রদান
- প্রবেশ, নির্গমন এবং ড্রাইভওয়ে প্রদর্শনপূর্বক ড্রাইভিং প্ল্যান
- লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি দুটি সেকশন এবং সকল দিকের উন্নতি ড্রয়িং (এলিভেশন)
- প্লটের সীমানারেখা হতে প্রযোজ্য ন্যূনতম সেটব্যাক
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রাস্তার জন্য জমি হস্তান্তরের অঙ্গীকারনামা
- বাসযোগ্য রুম, রান্নাঘর ও গোসলখানা বা টয়লেটের ন্যূনতম ক্ষেত্রফল ও প্রস্থ
- প্রস্তুতকৃত সকল নকশা চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য পুনরায় রাজউকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ পূর্বক নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
- পরিশেষে রাজউকের দায়িত্ত্বরত প্রকৌশলীবৃন্দ জমাকৃত নকশা যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে আপনার চাহিদা মোতাবেক অনুমোদন প্রদান করবেন।
সম্পন্ন হয়ে গেলো আপনার বাড়িটির জন্য জমি ও নকশার অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। এবার নির্বিঘ্নে কাজে নামতে পারেন সুদক্ষ কারিগরি ব্যাক্তিদের সহায়তায় আপনার স্বপ্নের বাড়িটিকে বাস্তবরূপ দিতে।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা: জেনে নিন একনজরে
গতবছর ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় জনগণের জানমালের। বহু মানুষ আহত ও নিহত হন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অগ্নিনিরাপত্তা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। আগুন সংক্রান্ত সমস্যায় এর আগে বসুন্ধরা সিটি বা নিমতলীর মতো ট্রাজিক ঘটনার সাক্ষীও ঢাকা। এর বাইরে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়া বা বেগুনবাড়িতে ভবন ধ্বসে ২৫ জনের মৃত্যুর মতো ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেছে নিয়মিতই।
বাংলাদেশে ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা ও ভবনের বাসিন্দাদের জন্য মানসম্পন্ন অবস্থানের কথা চিন্তা করে করা রয়েছে গেজেটেড আইন, রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিধিমালা না মানাই এধরনের দুর্ঘটনাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং ভবনে অবস্থানকারী ও আশেপাশের মানুষের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।
ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা কী এ সম্পর্কে প্রত্যেকেরই জানা উচিত। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে তা তুলে ধরা হলো।
ইমারত নির্মাণ সংক্রান্ত আইনের ইতিহাস
ইমারত নির্মাণ আইন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে ১৯৫১ সালে ‘পূর্ববঙ্গ ইমারত নির্মাণ অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের পর ১৯৫২ সালে ‘ইমারত নির্মাণ আইন’ করা হয়, যা ১৯৫৩ সালে কার্যকর হয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর এই আইন সংশোধন করা হয়। মূলত দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে এমন এলোমেলো ইমারত নির্মাণ ও জলাধার খনন নিবারণের জন্য বিধান করতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
ইমারত নির্মাণ, জলাধার খনন ও পাহাড় কাটায় বিধিনিষেধ
যেহেতু জলাধার, পাহাড় ও বনভূমি সংরক্ষণের জন্যই এই বিধিমালার প্রচলন হয়, এই আইনগুলো ছিল ইমারত নির্মাণ বিধিমালার প্রাথমিক ভিত্তি। এই আইনগুলো এখনো বলবৎ রয়েছে। এই আইন অনুসারে, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির পূর্ব অনুমতি ব্যতীত কেউ ইমারত নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ কিংবা এতে সংযোজন বা পরিবর্তন করতে পারবেন না।
কোনো জলাধার খনন বা পুনঃখনন, পাহাড় কাটা বা ভূমিসাৎ করতে পারবে না বলে ইমারত নির্মাণ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে DAP ও জলাধার সংরক্ষণ আইন দ্বারা ভবন নির্মাণ এর অবস্থানকে আরো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি দেয়া হয়েছে।
৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে ইমারত নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইমারত ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আবাসিক বাড়ির জন্য ইমারত নির্মাণের অনুমতি নিলে ওই ভবনকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
এই আইনে আরও বলা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ ইমারত নির্মাণ করলে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ওই ইমারত ভেঙে ফেলার বা অপসারণের নির্দেশ দিতে পারবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আবাসিক ভবনের নিচতলায় দোকান বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অফিস করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি আইন অনুসারে বৈধ নয় এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিধিতেও মামলাযোগ্য অপরাধ।
আবার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে অবৈধ ইমারত ভেঙে ফেলতে বা অপসারণ করতে পারবে। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করে ইমারত নির্মাণ করলে তাও ভেঙে ফেলতে পারবে কর্তৃপক্ষ। ভোগদখলকারীকে উচ্ছেদও করতে পারবে। আইন অমান্যকারীকে কোনো রকম পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করতে পারবে।
আধুনিক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা
ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ সালে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সরকার ১৯৯৬ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আধুনিকায়ন করে। এই নতুন বিধিমালায়,
– ইমারত নির্মাণের অনুমোদন,
– জলাধার খননের অনুমোদন ও পাহাড় কাটার অনুমোদনের আবেদন,
– অনুমোদন ফি,
– ইমারত নির্মাণের নকশা,
– ইমারত প্রণয়নকারীর যোগ্যতা,
– ইমারত নির্মাণের অনুমোদনের জন্য করা আবেদনের নিষ্পত্তি ইত্যাদির প্রক্রিয়া বলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কীভাবে নির্মাণ করতে হবে তারও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইমারত নির্মাণের বিধিগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ আলোচনা করা হলো।
পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও দূরত্ব
ইমারতের প্লট এর অবস্থান, ব্যবহার প্রকৃতির পাশাপাশি পাশ্ববর্তী রাস্তা
(ক) ইমারত বা বিল্ডিংসংলগ্ন রাস্তা বা এর সঙ্গে সংযোগকারী অনূ্ন্য ৩.৬৫ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন রাস্তার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে।
(খ) কোনো পাশে লম্বাভাবে রাস্তা শেষ হলে এর প্রস্থ পার্শ্বরাস্তার প্রস্থ বলে গণ্য হবে।
(গ) মালিকানা অনুল্লিখিত রাস্তা সর্বসাধারণের রাস্তা বলে গণ্য হবে।
(ঘ) দুই রাস্তার সংযোগ স্থলের কোণে এক মিটার জায়গা রাস্তা সরলীকরণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
(ঙ) কোনো ইমারতের নিকটবর্তী কোনো রাস্তার কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে সাড়ে চার মিটার অথবা রাস্তাসংলগ্ন সীমানা থেকে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরে নির্মাণ করতে হবে।
চ) পার্শ্ববর্তী রাস্তার অভিমুখী দিককে ইমারতের সামনের দিক এবং এর বিপরীত দিককে পশ্চাৎ দিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ইমারতের দূরত্ব
কোনো ইমারত খোলা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অথবা ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষের নিয়ম মোতাবেক নিরাপদ দূরত্বে নির্মাণ করতে হবে।
ভূমি ব্যবহারের নীতিমালা
(ক) সব রকম ইমারত নির্মাণ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংশ্লিষ্ট শহর, নগর বা মহানগরীর মহাপরিকল্পনায় নির্দেশিত ভূমি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
(খ) আবাসিক বা অন্যান্য ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আবাসিক ছাড়াও অনধিক ১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্লিনিক, ব্যাংক, ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ, দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রীর দোকান, সেলুন, চিকিৎসকের চেম্বার, ঔষধালয়, সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, ফুলের দোকান, লাইব্রেরি, ভিডিও ক্লাব, নার্সারি স্কুল, লন্ড্রি ও টেইলারিং শপের জন্য ইমারত নির্মাণ করা যাবে। তবে এ রকম ইমারত কেবল দুটি রাস্তার সংযোগস্থলে নির্মাণ করা যাবে। যার মধ্যে একটি রাস্তা কমপক্ষে ছয় মিটার প্রশস্ত হতে হবে এবং ওই ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে আবাসিক ইমারত নির্মাণসংক্রান্ত বিধান প্রযোজ্য হবে।
(গ) আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আবাসিক, বাণিজ্যিক, অথবা উভয় উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে। তবে এসব ভবন ব্যবহারে গাড়ি পার্কিং, মালামাল রাখার গুদাম থাকতে হবে। থাকতে হবে প্রশস্ত রাস্তাও। রাস্তা হতে হবে কমপক্ষে ২৩ মিটার প্রশস্ত।
সীমানা দেয়াল
ইমারত পাশের সীমানা দেয়ালের উচ্চতা হতে হবে ১.৭৫ মিটার বা তার কম। ২.৭৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন দেয়াল করা যাবে। তবে উপরের এক মিটার গ্রিল বা জালি হতে হবে।
ইমারতের উচ্চতা
সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে এলাকাভিত্তিক ইমারতের উচ্চতা নির্ধারণ করতে পারবে। ইমারতের উচ্চতা সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে সাধারণত ইমারতের সামনের রাস্তার প্রস্থ এবং ইমারত ও রাস্তার মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানের যোগফলের দুই গুণের বেশি উচ্চতাসম্পন্ন কোনো ভবন নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় FAR ও MGC এর নির্ধারিত তালিকা রয়েছে।
গাড়ি পার্কিং
ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য প্রত্যেকটি ভবনে কমপক্ষে ২৩ বর্গমিটার জায়গা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখতে হবে। আর বণিজ্যিক স্থানে সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখতে হবে।
আলো-বাতাস চলাচল
(ক) ইমারতের সব কক্ষে দরজা জানালা, ফ্যান, লাইট ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচলের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
(খ) রান্নাঘরের অবস্থান ইমারতের এক পাশে (বহির্দেয়ালে) হতে হবে।
ছাদ, কার্নিশ ও সানশেড নির্মাণ
(ক) ইমারতের ছাদ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে করে ওই ছাদের পানি রাস্তায় বা অন্যের জমিতে কিংবা ইমারতের কাঠামোতে পানি নিষ্কাশিত না হয়।
(খ) ইমারতের ছাদ বা কার্নিশ উন্মুক্ত স্থানের ওপর এক মিটারের অর্ধেকের বেশি বর্ধিত করা যাবে না।
(গ) ইমারতের দরজা ও জানালার ওপর ১/২ মিটার প্রস্থের বেশি সানশেড নির্মাণ করা যাবে না।
জরুরি নির্গমন পথ
ইমারতের মেঝের যেকোনো অবস্থান থেকে অনধিক ২৫ মিটারের মধ্যে জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। জরুরি ইমারত ত্যাগের নির্দেশিত ফায়ার অ্যালার্মও থাকতে হবে।
বিবিধ
– ইমারতে বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– আবর্জনা অপসারণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– ইমারতের প্রবেশ পথে চিঠির বাক্স থাকতে হবে।
সাধারণ বাড়ি নির্মাণে এসব বিধান মেনে চলতে হবে। এর বাইরেও হাসপাতাল, বড় মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধানাবলি রয়েছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অত্যন্ত বিস্তারিত ও প্রায় সব বিষয়েই বিস্তারিত বিধিমালা রয়েছে। তাই এই সম্পর্কে অজ্ঞ কাউকে কখনো ভবনের নকশা করার দায়িত্ব দেবেন না। আপনার বাড়ির জন্য অবশ্যই ডিগ্রীধারী ও লাইসেন্সড স্থপতির সাহায্য নিন।
ইমারত নির্মাণ আইন ও এ বিষয়ে নির্ধারিত বিধিমালা না মেনে ভবন তৈরি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সকলে এইসব আইন মেনে চলছে কী না তা দেখার জন্য রাজউক এবং সিটি করপোরেশন বা আঞ্চলিক পৌরসভার রয়েছে আলাদা কমিটি এবং মনিটরিং সেল। কমিটির কাজ হচ্ছে স্থপতি দ্বারা প্রণীত নকশার প্রাথমিক পর্যায়েই জমা নেয়া এবং সার্বিক পর্যালোচনা করে তবেই ভবন নির্মাণ এর অনুমতি প্রদান করা।
আর মনিটরিং সেল এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারী করেন। নির্মাণকালে খেয়াল রাখেন সকল নিয়ম মানা হচ্ছে কী না। কখনো কখনো ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর তা ভাঙতে নির্দেশ দেওয়া হয় বা ভাঙা হয়। যদি কোন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব দুর্ঘটনার জন্য ভবন মালিকরাও যেমন দায়ী, তেমনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও মনিটরিং কাজ পালন না করার জন্য দায়ী থাকেন।
নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রত্যেককেই ভবনের বিধিমালা মেনে চলতে হবে কড়াকড়িভাবে। প্রত্যেকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বা বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বা ভবন নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ও ঘটলেও তাতে হতাহতের ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
জমি কিনবেন: যা যা করা লাগবে
প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মৌলিক অধিকার হিসাবে বাসস্থানের কথা থাকলেও, নিজের জমিতে নিজের বাসস্থান বিলাসিতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। প্রায় ২ কোটি লোকের ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় নিজের জমি শুধু বিলাসিতাই নয়, অনেক সময় প্রায় সোনার হরিণও বলা যায়।
তবে জমির জন্য মানুষের সঞ্চয় বা বিনিয়োগ যেহেতু থেমে নেই, তাই থেমে নেই জমির বেচা-বিক্রিও। বসতবাড়ির জন্য নির্ভেজাল এক টুকরো জমির চাহিদা ঢাকার সীমানা পার হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভাগ বা জেলা শহরগুলোতেও।
কিন্তু জমি কেনা মানে তো শুধু কিছু টাকার লেনদেন নয়। টাকা-পয়সার হিসেব মিলে গেলে শুরু হবে মালিকানা ও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে অনেক অনেক কাজ। শুধুমাত্র পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে অনেকেই শরণাপন্ন হন দালালের। এর ফলে অপচয় হয় নিজের সময়, অর্থ এবং মূল্যবান মানসিক শান্তি। অনেক সময় তারপরও ঝামেলামুক্ত কেনাবেচা নিশ্চিত করা যায় না। জমি কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে রাখতে হবে সম্যক ধারণা। এজন্য একটি চেকলিস্ট করে মিলিয়ে নিতে হবে প্রতিটি ধাপ। কী কী থাকবে সেই তালিকায়?
বিদ্যমান তথ্যাদি
জমির ক্রেতা হিসাবে প্রথমে বিক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি সকল কাগজপত্র চেয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে-
- জমির সকল খতিয়ান (CAS, RAS, SA এবং BS খতিয়ান)।
- জমিটি সরকারের তালিকাভুক্ত হবার পর যতবার কেনাবেচা হয়েছে সম্ভবপর সকল দলিল।
এই সকল কাগজ দেখে প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি যার কাছ থেকে জমি কিনছেন, তিনি (এবং তার শরীকেরা) বর্তমানে জমির প্রকৃত মালিক। এছাড়া খতিয়ানের তথ্যাদির ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কিনা তা-ও যাচাই করতে হবে।
এখানে লক্ষ্যণীয় কয়েকটি বিষয় হলো-
- মৌজা নকশা ছাড়া খতিয়ান অর্থহীন।
- তেজগাঁওয়ের ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অফিস থেকে নির্দিষ্ট ফি-র বিনিময়ে যেকোনো জমির নকশা সংগ্রহ করা যায়। ঢাকার বাইরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এই সরবরাহের কাজ করে।
- যেসকল জমির মৌজার চূড়ান্ত প্রকাশনা সম্পন্ন হয়েছে সেগুলার ফটোকপি পাওয়া সম্ভব।
নামজারি
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে চলে যান সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী ভূমি কমিশনারের অফিসে। খোঁজ নিন জমিতে মালিক হিসেবে কার নামজারি করা রয়েছে। যদি সকল কাগজপত্র সঠিকও থাকে, তবুও বিক্রেতার নামে নামজারি থাকা আবশ্যক।
যদি সেটা করা না থাকে, তাহলে বিক্রেতাকে বলুন তার নামে বিক্রির আগে জমির নামজারি করিয়ে নিতে। নামজারিকে অনেক ক্ষেত্রে মিউটেশনও বলা হয়ে থাকে। নিজে থেকে গিয়ে নামজারি না করালে এই তথ্য হালনাগাদ থাকে না। কারণ সরকারিভাবে ২০ বছরের আগে জরিপ করা হয় না। আর মিউটেশন না থাকলে খাজনা দেওয়া যায় না।
খাজনা
মনে রাখবেন, জমির মালিকানা আসলে সরকারের কাছ থেকে জমির এক ধরনের ইজারা নেওয়া মাত্র। সুতরাং, অবশ্যই জমির বিপরীতে ভূমিকর দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। জমি কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন বর্তমান মালিক জমির খাজনা হালনাগাদ করেছেন। খাজনা পরিশোধের সকল কাগজপত্র বিক্রেতার কাছ থেকে চেয়ে নিন (মূলকপি সম্ভব না হলে ফটোকপি, তবে মূলকপি নিজে দেখে নেবেন) এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন।
সাব রেজিস্ট্রি অফিস
সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে NEC সংগ্রহ করতে হবে। একে বাংলায় বলা হয় নির্দায় সনদ। এই অফিসে, বিগত ১২ বছরে জমিটির হেবা, দান, বিক্রি বা এওয়াজমূলে হস্তান্তর নিয়ে তথ্য থাকবে ও সর্বশেষ মালিকের নামের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
হিস্যাবণ্টন নিশ্চিতকরণ
একটি জমি অনেক ক্ষেত্রেই ভাগাভাগির ফলে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। কিন্তু সেই অনুসারে দলিলাদি নিশ্চিত করা থাকে না। শরীকদের সঙ্গে বিক্রেতার অংশনামা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে মিলিয়ে দেখতে হবে যে, বিক্রেতা তার প্রাপ্য অংশই শুধু বিক্রি করছেন। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমির ক্ষেত্রে উপরের ধাপ অনুসারে বিক্রেতার নামজারি করতে হবে ও শরীকদের নাম নিশ্চিত করতে হবে।
পরিত্যক্ত পরীক্ষাকরণ
তিনটি আলাদা প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হওয়ার ব্যাপারে ক্রেতাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে।
- জমিটি কোনভাবে খাস কিনা।
- জমিটি পরিত্যাক্ত বা শত্রু সম্পত্তি কি না।
- কোনো কারণে সরকার জমিটি অধিগ্রহণ করেছে কি না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (ভূমি) বা সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিলে এই সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।
বন্ধকী
জমির উপরে কোনো ব্যক্তিকে বিক্রয় বা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা (Power of Attorny) অর্পণ করা আছে কিনা সেটিও যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়া জমি দেখিয়ে বা বন্ধক রেখে কোনো ব্যাংক, বীমা বা অন্য ধরনের অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ বা অন্য কোনো ধরনের সুবিধা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে এবং খোঁজ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে।
সরেজমিনে দেখা
সকল কাগজ সঠিক থাকা সাপেক্ষে ক্রেতাকে জমিতে সরেজমিনে যেতে হবে এবং জমির অস্তিত্ব ও কাগজপত্রের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে যা যা দেখা প্রয়োজন তাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।
- জমি- জমির ব্যাপারে যা যা দেখতে হবে-
১. কাগজপত্রে উল্লেখিত দাগ ও খতিয়ান নম্বর মিলিয়ে দেখতে হবে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি আর দেখানো জমি একই কিনা। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের আমিনের সহায়তা নিন।
২. আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে আপনার জানা তথ্যসমূহের (জমির ইতিহাসসহ) প্রতিটির ব্যাপারে আবারো নিশ্চিত হোন।
৩. জমির সংযোগ রাস্তার অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিন। রাস্তার ব্যাপারে ভবিষ্যৎ কোনো প্রস্তাবনা আছে কিনা তা-ও জেনে নিন। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা বর্ধনের প্রস্তাবনা থাকতে পারে, যাতে ক্রেতাকে জমির অংশ ছাড়তে হতে পারে। এ ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত হওয়া উচিত।
৪. জমির ব্যাপারে কোনো মামলা-মোকদ্দমা আছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ নিন।
- বিক্রেতা- বিক্রেতা ও জমির উপর তার অধিকার নিয়ে নিচের বিষয়গুলো দেখতে হবে-
১. জমির উপর বিক্রেতা বলে যিনি নিজেকে দাবি করেছেন তার বিক্রির পর্যাপ্ত অধিকার আছে কিনা।
২. জমির মালিক সাবালক ও মানসিকভাবে সুস্থ কিনা। নাবালক মালিকের জমি আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিযুক্ত করে বেচাকেনার বিধান রয়েছে।
৩. জমির মালিকের কাছ থেকে সরাসরি মৌখিক সম্মতি নেওয়া যে তিনি জমি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
জমির কোনো বিষয় সম্পর্কে সামান্য পরিমাণ সন্দেহের উদ্রেক হলেও জমি বায়না করার আগেই, পত্রিকায় আইনগত বিজ্ঞপ্তি দিন। এতে করে অন্য কেউ মালিকানা দাবি করতে চাইলে আগেভাগেই তা করতে পারবে এবং আপনি মামলা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
নোটিশ
আইন অনুসারে জমি বায়না করার আগে জমির মালিক ও প্রত্যেক শরীককে নোটিশ দিন। এই প্রক্রিয়া আপনাকে পরবর্তীতে হয়রানি মামলা থেকে রক্ষা করবে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে দলিল প্রণয়ন ও মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কারো উপস্থিতি আপনার প্রয়োজন হবে।
উপরে সকল প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ মনে হলেও শুধু নামজারি পেতেই কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে। বাকি সকল প্রক্রিয়া একজন দক্ষ কনসালট্যান্ট এবং দেওয়ানী আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে করতে পারলে সম্পূর্ণ বৈধভাবে মাত্র দুই থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব।
জমি কেনার ব্যাপারটি শুধু এখন একটি জীবনভর লালিত স্বপ্নই নয়, অনেক ক্ষেত্রে একটি স্মার্ট বিনিয়োগ। তাই বিনিয়োগের পূর্বে সেটি নিয়ে যথার্থভাবে যাচাই-বাছাই একটি কঠিন প্রক্রিয়া হলেও, তা দেখে, শুনে ও বুঝে নেওয়া একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনার কর্তব্য!
রাজউক বিধিমালা: যা কিছু জানতে হবে
রাজউক বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজধানী ঢাকার সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমান রাজউক গঠিত হয় ৩০ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে। তবে পাকিস্তান আমল থেকে DIT বা Dhaka Improvement Task নামে সংস্থাটি কাজ করে আসছিল। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানটির একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে ভবন নকশার অনুমোদন দেওয়া। তাই ঢাকায় যেকোনো ভবন নির্মাণের আগে তার নকশা রাজউকে জমা দিতে হয় ও অনুমোদন নিতে হয়। একারণে ভবন নির্মাণের আগে তার নকশাও রাজউকের বিধিমালা অনুসারে তৈরি হওয়া আবশ্যক।
নির্মাণের অনুমোদন পেতে, যেকোনো ভবনের নকশা মূলত দুটি আলাদা বিধানের কোনো অংশের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া অত্যাবশ্যক।
১. Bangladesh National Building Code (বাংলাদেশের ভেতরে যেকোনো স্থানে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি মানতে হবে)
২. রাজউক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (ঢাকা শহরের ভিতরে, BNBC এর পাশাপাশি এই নিয়মগুলোও মানতে হবে)
BNBC
এই অঞ্চলে ইমারত নির্মাণের জন্য Public Works Department প্রথম বিধিমালা প্রণয়ন করে ১৯৫২ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সেই বিধিমালার আলোকেই BNBC প্রণয়ন করা হয় ও এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি গেজেটেড আইন এবং বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে ভবন নির্মাণের প্রশ্নে এর প্রতিটি ধারার সাথে ভবনের নির্মাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। এই বিধিমালা বাংলাদেশ গেজেটের অন্তর্ভুক্ত ও পুস্তিকা আকারে কিনতে পাওয়া যায়।
রাজউক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা
রাজধানী ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশানের অধীনে ভবন করতে এই অঞ্চলের জন্য আলাদা বিধিমালা রয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্য সিটি কর্পোরেশনের জন্য, প্রতিটি পৌরসভার জন্য আলাদা আলাদা ভবন নির্মাণের বিধিমালা রয়েছে একইভাবে। জমির এলাকা নির্ধারণ সাপেক্ষে রাজউক, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা হতে এই বিধিমালা সংগ্রহ করা যায়।
মনে রাখতে হবে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই দুই ধরনের বিধিমালা ভঙ্গ করে কোনো ভবন বা অংশবিশেষ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের আইনে সেই ভবন বা অংশবিশেষ অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যেকোনো সময় তদন্ত করতে পারেন এবং ত্রুটিপূর্ণ বা অননুমোদিত নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি বা অনুমোদিত নকশা ভঙ্গ করে নির্মাণ করা অংশ নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে ভেঙে ফেলতে পারেন।
সিটি কর্পোরেশনে বা পৌরসভায় অনুমোদনের ব্যাপারে করণীয় কী?
প্রথমত চাই একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা। ভবনের নকশা করার জন্য একজন প্রশিক্ষিত স্থপতির কাছ থেকে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে নকশা করিয়ে নিন। মনে রাখবেন একজন স্বল্প প্রশিক্ষিত অথবা প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি (ড্রাফটসম্যান, ডিপ্লোমাধারী, এমনকি প্রকৌশলীও) এসকল নকশাগত বিধিমালা সম্পর্কে সবক্ষেত্রে সচেতন নন।
এছাড়া ভবনের নকশা অনুমোদন করতেও নকশায় স্থপতির স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক। নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ভবনের নকশা করা স্থপতির Institute of Architects Bangladesh-এর সদস্যপদ রয়েছে কী না। শুধুমাত্র সদস্যপদপ্রাপ্ত স্থপতিই আপনার ভবনের নকশা করতে আইনগতভাবে অনুমোদিত।
অনেক ক্ষেত্রে স্থপতি বা স্থাপত্যকাজে নিয়োজিত ফার্মই আপনার নকশার অনুমোদনের কাজটিও করে দিতে আপনাকে সাহায্য করবেন। তবে আপনি চাইলে নিজেও এই কাজগুলো করতে পারেন।
রাজউকে অনুমোদনের ক্ষেত্রে যা যা করতে হবে
১. রাজউক নির্ধারিত ব্যাংক হতে নির্মাণ অনুমোদনপত্র নকশা অনুমোদনের আবেদন ফরম নং-৪০১ সংগ্রহ করতে হবে।
২. সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নকশা অনুমোদন শাখা কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা প্রদান করে ব্যাংক রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
৩. দলিল, নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, ডিসিআর, পর্চা ইত্যাদি কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি প্রস্তাবিত ভূমিতে আবেদনকারীর বৈধ মালিকানার স্বপক্ষে দাখিল করতে হবে।
৪. নির্দিষ্ট ভূমি ব্যবহারের জন্য রাজউক নির্ধারিত ছাড়পত্র, সার্ভিস চার্জ পরিশোধের রশিদ ও ১ কপি প্রস্তাবিত নকশা জমা দিতে হবে। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-
- নগর পরিকল্পনা শাখার ছাড়পত্র- ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে
- এস্টেট শাখার ছাড়পত্র- রাজউক প্লট অথবা জমির ক্ষেত্রে
- সংশ্লিষ্ট অফিসের ছাড়পত্র- অন্যান্য সরকারি জমি/প্লটের ক্ষেত্রে
- বিশেষ প্রকল্প ছাড়পত্র- বৃহদায়তন বা বিশেষ ধরনের প্রকল্পের জন্য (প্রযোজ্য হলে)
- নির্মাণ অনুমোদন পত্র
- বসবাস ও ব্যবহার ছাড়পত্র
- উন্নয়ন অনুমতি পত্র (প্রযোজ্য হলে)
এখানে উল্লেখ্য যে, রাজউকে সাধারণত তিন ধরনের ভূমি চিহ্নিত করা হয়-
- রাজউক প্লট
- রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের প্লট
- ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লট
রাজউক প্লটে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য আবেদন করতে রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। রাজউক প্লট অনুমোদিত বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের প্লট হলে রাজউক নগর পরিকল্পনা শাখার প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লট হলে রাজউক নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র নিতে হবে।
৫. ৮ কপি স্থাপত্য নকশা (প্রণয়নকারী স্থপতি বা প্রকৌশলী, মালিক বা ডেভেলাপারের নাম, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের সদস্য নিবন্ধন নম্বর, ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ) নির্ধারিত মাপের কাগজে অ্যামোনিয়া প্রিন্ট করে জমা দিতে হবে।
৬. সাইট প্ল্যান, লে-আউট প্ল্যান, ফ্লোর প্ল্যান, পার্কিং প্ল্যান, লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি ২টি সেকশন ও উন্নতি (Elevation)- এই ড্রয়িংগুলো জমাকৃত নকশার মধ্যে থাকা আবশ্যক। তবে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন সাপেক্ষে আরো ড্রয়িং দেখতে চাইতে পারেন।
৭. এছাড়া নকশার সাথে রাজউকের DAP (Detailed Area Plan) অনুসারে নির্ধারিত কিছু অংশের জন্য Soil Test এর রিপোর্টও জমা দিতে হয়।
রাজউক বিধিমালাতে জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, শহরের ঘনত্ব, প্রতিবেশী হিসাবে ভূমির এলাকাভিত্তিক অধিকারসমূহ, অগ্নি নির্বাপণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধিবিধান রয়েছে। একটি বৈধ, কার্যকরী ও বসবাসযোগ্য ভবন তৈরি করতে এটি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
অনেকেই মনে করেন, ভূমির সেটব্যাক বা সবুজ জায়গা ছেড়ে দেবার কারণে জমি হারানো হচ্ছে। অথচ এই নিয়মনীতি না মেনে চলার কারণে ঢাকা শহরের বসবাসযোগ্য পরিবেশের ক্ষতিসাধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটি সুন্দর বাড়ি যেমন আপনার স্বপ্ন, একটি সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশও সকলের অধিকার। এই আইনগুলো মেনে চলার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করা আমাদের সবার কর্তব্য।
জমি কেনার সময় যা জিজ্ঞাসা করা উচিত
জমি ক্রয়ের সময় সবচেয়ে কঠিন কাজ হল খালি জায়গা পাওয়া। জমি কেনার বিভিন্ন প্রশ্ন থাকতে পারে এবং এখানে আপনার সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হলো ঃ
প্রথমত ,
- উদ্দেশ্য– আপনি জমি কেন কিনছেন ?
- ব্যবহার– জমির আকার বা লোকেশান কী আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক আছে?
- খরচ– জমি কী বাজেটের মধ্যেই আছে? জমি কিনার আনুষাঙ্গিক সব খরচ যেমনঃ ভবন, আইনি এবং অনুসন্ধান খরচ – সব কী বাজেটের মধ্যেই আছে ?
- পুনঃবিক্রয়– আপনি আপনার এই কেনা জমি যদি আবারো বিক্রয় করেন তবে এই জমির উপর লাভ করা সম্ভব হবে ?
একবার যদি আপনি আপনার উত্তর বলে দেন যে আপনি আসলে কী চান , তাহলে আপনি আরও নির্দিষ্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা শুরু করতে পারেন সংশ্লিষ্ট লোকজনদেরকে :
যেসব প্রশ্ন বিক্রেতা বা এজেন্টকে জিজ্ঞেস করবেন :
- সম্পত্তির কোন চুক্তি আছে কিনা ?
- সাধারণ সুবিধাগুলি কী কাজ করছে (পানি, রাস্তা, সেপ্টিক) ?
- সাইটের বা জায়গায় বিদ্যুৎ, নিষ্কাশন, প্রাকৃতিক গ্যাস ঠিকঠাকমত পাওয়া যায় তো?
- সেখানে কী ভালোমত পানি পাওয়া যায় ?
- জায়গাটায় কী আসলেই বাড়ি বানানো যাবে ?
- জায়গাটি কী ভূমি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্ট এ পাস রয়েছে ? যদি পাস করা না থাকে, তবে পাস করাতে কত খরচ হতে পারে , আর কী কী করতে হবে পাস করানোর জন্য ?
- সেখানে কী পর্যাপ্ত বিস্তৃত রাস্তা আছে ?
নির্মাণ বিষয়াদি :
- জায়গাটায় বন্যার ঝুঁকি কী রকম? বন্যা হয়, নাকি হয় না ?
- জায়গাটি কি অসমতল যার বিশেষ ভিত্তির প্রয়োজন হতে পারে ?
- নির্মাণ যন্ত্রপাতি রাখার জন্য আশেপাশে কী পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা আছে ?
- জমির যথেষ্ঠ নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা আছে কী ?
যেসব প্রশ্ন আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করবেন :
বিক্রেতার এবং বিল্ডারের সাথে কথা বলার পরে, কিছু সমস্যার সমাধান করা বাকি থাকতে পারে, এই ক্ষেত্রে আপনাকে একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলা উচিত।
- আপনি কি নিজস্ব মালিকানার পানি এবং অন্যান্য সুবিধাসমূহ ব্যবহার করবেন ?
- জায়গার দাম বিড করার জন্য আপনার অন্য কিছু কী দরকার ?
- কোন সমস্যা পাওয়া গেলে কীভাবে, কত সময়ে এবং সমাধান করার জন্য কেমন খরচ হবে ?
- মালিকানা ইন্সুরেন্স থাকলে ‘ডিড’ এ কোন ওয়ারেন্টি থাকবে কী না ?
ব্যক্তিগত প্রশ্ন :
- আপনি কী আপনার প্রতিবেশীর ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন ?
- আপনি কী বিভিন্ন ঋতুতে ভূমির উপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা বিবেচনা করেছেন ?
- এলাকাটির ভবিষ্যত পরিকল্পনার অবকাঠামো কী? ভবিষ্যতে এই জায়গাটার কী রকম অবস্থা হবে ?
- এলাকায় কোন নতুন সড়ক বা নির্মাণ খরচ পাইপলাইন আছে কী না ?
- এলাকায় কোনো নিষ্কাশন অথবা কোনো দূর্গন্ধ আছে কী না ?
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে কিভাবে নিশ্চিত করবেন যে জায়গাটা নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই?
বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেটের কোন কিছু কিনতে চাইলে সেটার জন্য জমি ভালোভাবে দেখে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনার স্বপ্নের অ্যাপার্টমেন্টটা একটা জায়গার উপরে দাঁড়িয়ে থাকবে। তাই সেই জায়গাটার কোন সমস্যা আছে কি না, জায়গাটা নিয়ে কারোর কোনো দ্বন্দ্ব চলছে কি না, সেসব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে আপনাকেই। এটা ঠিকভাবে না করলে আপনার জীবনের জমানো সকল সম্পত্তি এক নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। তাই জমি কেনার আগে হয় নিজে, কিংবা উকিলের সাহায্য নিয়ে জমি সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে হবে।
জমির প্রকার –
সাধারণত দুই প্রকারের জমি পাওয়া যায় রিয়েল এস্টেটের মতে।
১. লিজহোল্ড জমি – আপনি যখন লিজহোল্ডে কোন প্রপার্টি বা জমি কিনছেন, সেটা আপনাকে সরকার বা সরকারী কোন এজেন্সির কাছ থেকে ইজারায় নিতে হব।
২. ফ্রিহোল্ড জমি – জামিনদারি প্রক্রিয়ায় ফ্রিহোল্ড জমি কেনার অর্থ হল পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজপত্র ও মালিকানা পরিবর্তনের মাধ্যমে জমি ক্রয় করা
ফ্ল্যাট কেনার আগে যেসব কাগজপত্র ভালোভাবে দেখে নিতে হবে তা হল –
(লিজহোল্ড প্রপার্টির জন্য)
১. অ্যালটমেন্ট লেটার
২. লিজ ডিড
৩. পজিশন লেটার
৪. সংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক মিউটেশন (প্রথম এলার্টির ক্ষেত্রে)
৫. সেলস ডিড (আগে জমির মালিকানা বদল হয়ে থাকলে)
৬. সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছ থেকে জমি বিক্রি করার অনুমতি (মালিকানা আগেই বদল হয়ে থাকলে)
৭. জমি অফিস থেকে মিউটেশন
৮. ট্যাক্স রিসিপ্টের কপি
(ফ্রিহোল্ড প্রপার্টির জন্য)
১. টাইটেল ডিড (যদি বিক্রেতা জমির মালিক হয়ে থাকে)
২. বিক্রেতা যার কাছ থেকে জমি কিনেছে সেই কাগজপত্র
৩. গত ২৫ বছর বা সর্বশেষ সমীক্ষার পরে জমির মালিকানা যতবার পরিবর্তিত হয়েছে তার কাগজপত্র
৪. জমির অধিকার সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র
৫. ট্যাক্স রিসিপ্টের কপি
৬. পার্টিশান ডিড
অন্যান্য কাগজপত্র
১. বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস – ইত্যাদি বিল
২. সকল সংশ্লিষ্ট ডিড, কাগজপত্র
৩. বাড়ি বা ফ্ল্যাটের অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিজাইন
কাগজপত্র পাওয়ার পর
সকল কাগজপত্র পাওয়ার পরে সিটি কর্পোরেশান বা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্রের সাথে একটা দরখাস্ত জমা দিয়ে আসতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য গত ২৫ বছর বা সর্বশেষ সমীক্ষার পরে জমির মালিকানা যতবার পরিবর্তিত হয়েছে তার কাগজপত্র নজরে রাখতে হবে। ফলে জমির সকল তথ্য সঠিক কি না, তা জানা যাবে।
অধিক সতর্ক থাকার জন্য যা যা করতে হবে
জমি বিক্রেতা যদি উত্তরাধিকারসূত্রে জমিটা পেয়ে থাকেন, তবে সেই উইল, উত্তরাধিকারের কাগজপত্র যোগাড় করতে হবে। যুগ্ম মালিকানার প্রপার্টির ক্ষেত্রে আগে থেকে ডিড সই করিয়ে রাখতে হবে এই মর্মে যে পরবর্তীতে আর যেন তারা কোন ঝামেলা না করে মালিকানা নিয়ে।
যেসব জমি কেনা একদমই উচিত নয় –
১. ইতোমধ্যে দখল করা জমি
২. রাস্তার সাথে যোগাযোগ ছাড়া জমি
৩. ইজারার জমি
৪. যে জমির সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট এর মধ্যেই হয়ে গেছে
৫. মামলাওয়ালা জমি
৬. যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে