বাড়ি দোতলা করবার পূর্বে মাথায় রাখতে হবে যে বিষয়গুলো

আপনার বাড়িটি যদি হয় একতলা, আর তার ভিত্তিপ্রস্তর যদি দোতলা বা আরো অধিক উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির উর্ধ্বমুখী গমনই শ্রেয়। এতে আপনার সীমিত জমির সদ্ব্যবহার হবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া থেকে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হবে।

তবে একতলা বাড়ির ওপর আরেকটি ছাদ দিয়ে ফেলা অতটা সহজ নয়, অন্তত ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তো নয়ই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, খরচ আর নির্মাণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একতলা বাড়ির ওপর দ্বিতীয় ফ্লোরের প্রসারণ কাজের জন্য অবশ্যই কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে।

আবহাওয়া

বাড়ির প্রসারণ পরিকল্পনায় সবার আগে ভাবতে হবে আবহাওয়া নিয়ে। নির্মাণকাজের জন্য সর্বদাই শুষ্ক মৌসুম মানানসই। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে হেমন্তের শেষ থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে ভালো সময়। হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়া সব কাজে তালগোল পাকানো কিংবা টানা বর্ষণে কাজ থমকে থাকার ঝামেলা এ সময়ে হয় না।

বাজারদর কাঁচামাল ক্রয়

আবহাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রেখে যদি দোতলা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপ হবে বাজার যাচাই করা। ছোটখাট বিষয়গুলো যদি ধর্তব্যের মাঝে না-ও আনা হয়, তথাপি বাড়ি নির্মাণের প্রধানতম কাঁচামালগুলো, অর্থাৎ ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের বাজার অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে।

এসব বাজার সম্পর্কে যেহেতু নিত্যদিন খবর রাখা হয় না, তাই ভুলভাল দামে ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি না আপনি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাজার দ্রুত ওঠানামা করে। মাসখানেকের ব্যবধানে আপনার বাড়ি নির্মাণের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন, বাজার অস্থিতিশীল থাকলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।

বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই ক্রয় শুরু করতে পারেন, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রতিটি কাঁচামাল আলাদা আলাদা দিনে একাধিক বিক্রেতার কাছে দেখার পর কিনতে হবে। ভালো কাঁচামাল বাড়ির নির্মাণকে ত্রুটিমুক্ত করে, বাড়ি টেকসই হয়।

বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা প্রণয়ন

একসময় নীচতলার ডিজাইন ধরে রেখেই উপরের দিকে বাড়ানো হতো বাড়ি। তবে এখন আর মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। নীচতলার নকশা হুবহু অনুকরণ না করে ভিন্নতা আনতে পারেন দ্বিতীয় তলায়, বিশেষ করে নীচতলায় বসবাসকালীন যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোর সমাধান তো আনা যায়ই।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। নকশা কতটা সৌখিন আর নান্দনিক হবে তা নির্ভর করবে পুরো কাজে আপনি কতটুকু ব্যয় করতে প্রস্তুত তার ওপর। দক্ষ কোনো স্থপতির সাথে পরামর্শ করে তাই নকশা প্রণয়ন করে ফেলুন; পরিচিত হলে আরো ভালো, এতে বাজেটের মাঝে সর্বোচ্চটা পাবার নিশ্চয়তা থাকে।

অপ্রত্যাশিতখরচের বাজেট আলাদা রাখুন

হ্যাঁ, বাড়ি নির্মাণকালে সর্বনিম্ন বাজেটে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করবার লক্ষ্য যেমন থাকবে, তেমনি মনে রাখতে হবে যে বাড়ির এক্সটেনশন একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ, এবং এ কাজে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক খরচ হবে। তাই মূল বাজেটের একটা অংশ সরিয়ে রাখুন অপ্রত্যাশিত যেকোনো খরচের জন্য, যা পরিকল্পনা তৈরির সময় দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই টাকা বাদে বাড়ির মূল কাঠামোর বাজেট করতে হবে।

নির্মাণআইন মাথায় রাখুন

নির্মাণকাজে সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত দিকটি হলো নির্মাণ-আইন। নির্মাণ-আইন মেনে চলা আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি আইন মেনে নির্মাণকাজ করলে কোনোপ্রকার আইনি জটিলতার সম্ভাবনাও থাকে না।

নিরাপত্তা সবার আগে

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে হবে। প্রথমত, যেহেতু আপনার বসবাসরত বাসার উপরেই প্রসারণ কাজ হবে, এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা। তাছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়। একদিকে প্রাণহানি কাম্য নয়, অন্যদিকে আইনি জটিলতায় পড়ে আটকে যেতে পারে পুরো নির্মাণকাজ। তাই প্রচলিত নিরাপত্তা আইন মেনে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেই নির্মাণকাজ শুরু করুন।

বিশ্বস্ত বিল্ডার (নির্মাতা)

বেশ কিছু কারণে বিল্ডার নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে সুনাম আছে এরকম বিল্ডার কিংবা আপনার বা আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরিচিত বিল্ডারের কাছেই যান। এক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয়ে সঠিক পরামর্শ বিল্ডারদের নিকটই পাবেন, বাড়ির নকশায় কোনো ত্রুটি থাকলে, কিংবা উন্নতির সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টিও তারা আপনার দৃষ্টিগোচর করতে পারবে। আদৌ যদি পরিচিত বিল্ডার না থাকে, তাহলে একাধিক বিল্ডারের সাথে কথা বলুন, আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা জানিয়ে তাদের নির্মাণপ্রক্রিয়া, কাল (নির্মাণকাজের একটি টাইমলাইন) এবং বাজেট জানাতে বলুন। এরপর তাদের পরিকল্পনা তুলনা করে নিজেই ধারণা করতে পারবেন কোনটি ভালো হবে।

একটি ইনস্যুরেন্স করে ফেলুন

সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর একটি ইনস্যুরেন্স করিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিন। নির্মাণকাজ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পূর্বের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। তথাপি সাবধানতার মার নেই। যেকোনো নির্মাণকাজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্মাণ শুরুর পূর্বেই করে ফেলুন একটি ইনস্যুরেন্স, যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতি সামাল দেয়া যায়।

সিলিং ডিজাইন করুন পরিকল্পনামাফিক

একসময় বাড়ি নির্মাণে অন্দরের সাজসজ্জার মূল বিষয় ছিল ঘরের আসবাবপত্র। এরপর দেয়ালকে সুন্দর করে সাজানো, নিত্যনতুন নকশায় দৃষ্টিনন্দন করার ট্রেন্ড এলো, সাথে শুরু হলো সিলিংয়ের নকশায় সৃজনশীলতা আনা। গৃহসজ্জায় নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে সিলিং ডিজাইনিং হয়ে উঠলো গৃহসজ্জার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বর্তমানে কর্পোরেট অফিস ভবন, অডিটোরিয়াম কিংবা বড় বড় হলঘরেই সিলিং নান্দনিক সব ডিজাইনের ব্যবহার বেশি হলেও বাসাবাড়িতেও সিলিং ডিজাইন করতে ভোলেন না সৌখিন মানুষেরা। আর সিলিংয়ের নকশা বাড়ি নির্মাণের পর নয়, করলে নির্মাণকালেই করে ফেলতে হবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে। চলুন, সেসব জেনে নেয়া যাক।

১. ঘরের আকৃতি

নকশা বাছাইয়ের পূর্বশর্ত হলো ঘরের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা বাছাই করা। লম্বা, আয়তাকার কিংবা বর্গাকার ঘরে একরকম, গোলাকার ডাইনিং রুম হলে একরকম, বড় হলঘর হলে একরকম, আর বাথরুমের মতো সংক্ষিপ্ত পরিসরে একরকম নকশা।

২. যেমন ইন্টেরিয়র তেমন সিলিং

সিলিংয়ের ডিজাইন ঠিক করার আগে অবশ্যই ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ঠিক করতে হবে। ইন্টারিয়রের রং, প্রধান উপাদান (কাঠ, গ্লাস, মার্বেল কিংবা স্টিল), অ্যাম্বিয়েন্স- সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ঠিক করতে হবে সিলিংয়ের নকশা।

৩. আলোকসজ্জা

সিলিংয়ে আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থানের ওপর। ঘরের প্রধান আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক উপাদানগুলো যদি দেয়াল বরাবর হয়, তাহলে আলোকসজ্জাও ঘরের দেয়ালগুলোর নিকটবর্তী হতে পারে। এতে দেয়ালের রংও ফুটে ওঠে। আবার লক্ষ্য যদি থাকে পুরো ঘরে আলোর সুষম বন্টন, তাহলে সিলিংয়ের কেন্দ্র বরাবর আলোকসজ্জাই মানানসই হবে।

৪. উচ্চতা মাথায় রাখা জরুরি

সিলিংয়ের যেকোনো নকশা নির্ধারণ করার পূর্বে অবশ্যই উচ্চতা বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে ড্রপ সিলিংয়ের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যেসব সিলিং প্রধান সিলিংয়ের সাথে অতিরিক্ত একটি সিলিং হিসেবে সংযুক্ত থাকে। তাছাড়া সিলিং থেকে ক্রিস্টাল লাইট, ফ্ল্যাশ লাইট বা নানারকম ঝাড়বাতি ঝোলানোর জন্য সিলিংয়ের উচ্চতা যথেষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৫. রং নির্বাচন

সিলিংয়ের রং নির্বাচনে দেয়ালের রঙের চেয়ে এখন অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় ঘরের আসবাবপত্রকে। পুরো ঘরটি যদি একটি বিশেষ থিমের রঙ দিয়ে সাজানো হয়, সিলিংও সেই রঙেই সাজিয়ে ফেলতে হবে। আবার ঘরে কেমন আলো চান, তার উপরও নির্ভর করবে সিলিংয়ের রং। কারণ আলোকসজ্জা করবার পর সিলিং থেকে আলো প্রতিফলিত হবে পুরো ঘরেই।

৬. প্রতিধ্বনি এড়াতে চাইলে

সিলিংয়ের নকশা নির্বাচনে প্রতিধ্বনি হতে পারে বড় মাথাব্যথার কারণ, বিশেষত বড় হলঘর, কিংবা বসার ঘরে। ড্রপ সিলিং ব্যবহারে সিলিংয়ের উচ্চতা কমে আসে এবং লম্বা ঘরে কথার প্রতিধ্বনি হয়। এ থেকে মুক্তির উপায় অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) সিলিং, যা শব্দ প্রতিধ্বনিত না করে শুষে নেয়।

নকশা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর উপর নজর রাখতে হবে, তা তো জানা হলো। এবার কিছু নান্দনিক সিলিং ডিজাইন সম্পর্কে জানা যাক।

হাই গ্লস সিলিং (High gloss)

এটি সিলিং ডিজাইনে একটি সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। ড্রপ সিলিং বা ভারী আলোকসজ্জা ছাড়াই ঘরে আলোর সুষম বণ্টন এবং আরামদায়ক এম্বিয়েন্স তৈরির জন্য এ ধরনের সিলিং ব্যবহার করা হয়। মূলত সিলিং সর্বোচ্চ পরিমাণ মসৃণ করাই হাই গ্লস সিলিংয়ের মূল আকর্ষণ। মসৃণ সিলিংয়ে হালকা উজ্জ্বল রঙের মসৃণ প্রলেপ স্বচ্ছ হয় এবং আলোর প্রতিফলনও করে। পাশাপাশি এরূপ সিলিং ডিজাইন ব্যবহারে মনে হয় সিলিংয়ের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এরূপ সিলিং অনেক সময় স্বচ্ছ কাচের মতোও হয় এবং ঘরের মেঝে এতে প্রতিফলিত হয়।

প্ল্যান্ট (Plant) সিলিং

শিল্পায়ন, নগরায়ন, সবকিছুতেই এখন সবুজায়নের উপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়। বড় বড় অবকাঠামোতে চলছে সবুজের আত্মীকরণ। বাসাবাড়ির ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয় ব্যাপারটা। অনেকেই ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক আবহ তৈরির জন্য গাছগাছালি ব্যবহার করেন। তবে গাছ/ঘাস লতাপাতা যদি টবে না থেকে সিলিং থেকে ঝুলে যায়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? সহজ ভাষায় বললে- প্ল্যান্ট সিলিং হলো সিলিং থেকে বেশ কয়েক প্রকারের সৌন্দর্যবর্ধক লতা-গুল্ম ঝুলিয়ে দেয়ার পদ্ধতি। এগুলো ঝোলাবার জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহারই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

কাঠের নকশা

পাথুরে যুগের পর মানুষ বসতবাড়ি নির্মাণে কাঠের ব্যবহারই করেছে সবচেয়ে বেশি। সময়ের সাথে বাড়িগুলো কলেবরে বড় হয়েছে, আকাশপানে যাত্রা করে উঠেছে অনেক উপরে। এসব বাড়ি কাঠে নির্মাণ হয় না এখন আর। তবে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঠিকই কাঠের কাছে ফিরেছে মানুষ।

মসৃণ গ্লসি সিলিংয়ে অসম আকৃতির মসৃণ কাঠ ব্যবহারে চমৎকার সিলিং তৈরি হয়। আবার ড্রপ সিলিংটি কাঠের হলে তা অন্যান্য ড্রপ সিলিংয়ের চেয়ে অভিজাত মনে হয়। সিলিং কাঠের নানা কারুকাজও স্থাপন করে থাকেন অনেকে।

আর্ট

সিলিংয়ে অতিরিক্ত কোনোকিছু যোগ না করে কেবল দস্তুরমতো রং করে ফেললেও সিলিং হতে পারে সাধারণ সিলিংয়ের চেয়ে সুন্দর। তবে যেনতেন রং নয়, সাধারণ ত্রিমাত্রিক আবহ ফুটিয়ে তোলা ডিজাইনই সিলিংয়ে সাধারণ একটি চিত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারে।

ভাস্কর্য

সিলিংয়ে খোদাই করার মতো ভাস্কর্যের গড়ন গড়ে তোলার চল এখনো রয়েছে। মসৃণ সিলিংয়ে উপর গৃহে বসবাসকারীর রুচি অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলা হয় নানা আকৃতি। ভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলা হলে সিলিং সাধারণত সাদা রাখা হয়, তবে অনেকেই রং করতে ভালোবাসেন ভাস্কর্যসমেত।

স্কাইলাইট

যদিও স্কাইলাইট সিলিং সাধারণত বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহৃত হয়, যেমন- রেস্টুরেন্ট, অফিসের মিটিং কক্ষে কিংবা শিল্প কারখানায়, তবে সৌখিন মানুষজন বসতবাড়িতেও স্কাইলাইট ব্যবহার করে থাকেন। স্কাইলাইট হলো গ্লাসনির্মিত বাহারি ডিজাইনের সিলিং যা দিনে সূর্যের আলোয় ঘরকে আলোকিত রাখে। এর একটাই অসুবিধা, চাইলেও টপ ফ্লোর ব্যতীত অন্য কোনো ফ্লোরে স্কাইলাইট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এছাড়াও রুচিশীল মানুষজন অসংখ্য রঙের, ধরনের সিলিং ডিজাইন ব্যবহার করেন। যেমন – ঘরে ক্লাসিক লুক আনবার জন্য ‘ব্রিক অ্যান্ড স্টোন’-এর ব্যবহার, মেটাল সিলিং, ফেব্রিক সিলিং, স্টেনসিল, গ্লাস সিলিং ইত্যাদি।

আপনার ওপেন কিচেনটি যেভাবে সাজাবেন

গৃহনির্মাণে কারো প্রধান লক্ষ্য হয় কেবলই বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি তৈরি করা, কারো সবটুকু মনোযোগ থাকে বাড়ির সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা বর্ধনে। বিলাসি মনের সৌন্দর্যপ্রিয় ভাবনাগুলো ছুঁয়ে যায় ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিংবা কিচেনে। ঘরখানি দেখে যেন মনে প্রশান্তি আসে, সেটাই তো আসল ভাবনা।

সেই ভাবনায় ঘরের রসুইখানা কিংবা কিচেনের অবস্থান কোথায়? নির্মাণশৈলির তাবৎ কারিকুরি যেন আটকে আছে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমেই। তবে আধুনিক স্থাপত্যকলা সৌখিন মানুষের সেই ভাবনাও দূর করেছে। কিচেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আবির্ভাব হয়েছে ওপেন কিচেন। বন্ধ দেয়ালের রান্নাঘরকে বিদায় বলে খোলা কিচেনে বিস্তর প্রশস্ত পারিপার্শ্বিকতায় রান্না করতে কার না ভালো লাগবে? উপরন্তু, আপনার রন্ধনশৈলির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।

তো এই ওপেন কিচেনখানি কীভাবে আরো একটু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবেন, সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা হয়ে যাক তাহলে।

স্টোরেজ করুন, তবে গোপন

ওপেন কিচেন যেহেতু আপনার বসার ঘরের সাথে মিশে যাবে, তাই সাধারণ রান্নাঘরের মতো এর সাজসজ্জা হলে চলবে না। বিশেষ করে, রান্নাঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী রাখবার শেলফ কিংবা স্টোরেজ ক্যাজুয়াল ঘরোয়া ডিজাইনে করতে হবে যেন পুরোটাই একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করে, কিচেন বলে আলাদা না হয়। এতে করে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে রান্নার মাঝে গল্প করা যাবে, মেহমানরাও ঘরোয়া পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।

লেআউট ঠিক করুন ভেবে-চিন্তে

ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ে লেআউট ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ধরবার পূর্বেই মাপজোখ ঠিক করে নিন এই বিষয়গুলোর– বসার স্থান থেকে চুলার দূরত্ব, হাঁটা-চলা করবার স্থানটুকু বসার ঘরের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, টিভির অবস্থানটা খুব কাছে হলো কিনা যেখানে রান্নার আওয়াজে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটবে ইত্যাদি। এই সবকিছু বিবেচনা করে ঘরের আকৃতি এবং আপনার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য বিষয়বস্তু অনুসারে ওপেন কিচেনটি ইংরেজি ইউ কিংবা এল আকৃতির হতে পারে।

জোন ভাগ করুন

ওপেন কিচেনের মানেই হচ্ছে বসার ঘর আর রান্নাঘরের তফাৎ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে হ-য-ব-র-ল হলে চলবে না। কিচেন আর বসার ঘর মিলিয়ে পুরোটাকে একটি ঘর বিবেচনা করে কয়েকটি জোনে ভাগ করুন– রান্না, ধোয়ামোছা, খাওয়া, বসা (টিভি দেখা) প্রভৃতি। ঘর একটিই, কিন্তু প্রতিটি জোন আলাদা ও স্বতন্ত্র। এবং সব জোনের মাঝে একটি কমন ফাঁকা স্থান থাকবে যেন একটিতে যেতে হলে অন্যটির সীমানা ভেদ না করতে হয়।

কিচেন জোন জানালার পাশে রাখুন

জোন ভাগ করার ক্ষেত্রে কিচেন জোনটি বহিঃস্থ দেয়াল বা জানালার দিকে রাখুন। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে এই কৌশল কাজে দেবে। তাছাড়া রান্নার মাঝে যদি খানিকটা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার ছোঁয়া চান তাহলে কিচেনের সাথের দেয়াল স্বচ্ছ কাচ দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এ দেয়ালটি বাড়ির পাশে থাকা বাগানের সাথে লাগোয়া হলে তো কথাই নেই।

কিচেনে কী কী সংযুক্ত করবেন ঠিক করুন

পানির কল, চুলা, এক্সহস্ট ফ্যান, স্টোরেজের মতো মৌলিক উপাদানগুলো ছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে কিচেনে উন্মুক্ত জায়গা অনুযায়ী বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করুন। যেমন– কিচেন আইল্যান্ড, ব্রেকফাস্ট বার, রেঞ্জ কুকার, স্টাইলিস ফ্রিজার ইত্যাদি।

মার্বেল, গ্লাস, স্টিল না উড?

উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে ঠিক করুন আপনার ওপেন কিচেনটির বিশেষত্ব। সাধারণ নির্মাণশৈলি অনুসরণ করলে কিচেনে আনুষঙ্গিক অংশগুলো তৈরি করা যায় স্টিল দিয়েই। মার্বেল বা কাচ, উভয়ের ব্যবহারই কিচেনকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করবে। মার্বেলের বাহারি ডিজাইন কিংবা কাচের স্বচ্ছতা ও চাকচিক্য, যেকোনো একটি বেছে নিন মর্জিমতো। তবে রাজকীয় ভাব আনতে কাঠই এখনো সবার উপরে। কালচে বা বাদামি রঙয়ের পাইন, মেপল, মেহগনি বা রোজউড হতে পারে আপনার ওপেন কিচেনের আভিজাত্যের প্রতীক।

উন্মুক্ত স্থান রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে

ওপেন কিচেন করলে কিচেন আর বসার ঘর, অর্থাৎ পুরো ঘরে এমন কোনো স্থান থাকা যাবে না যেখানে পৌঁছতে হলে বিশেষ কসরত করতে হয়, কোনো কিছু ডিঙিয়ে যেতে হয় কিংবা কিছুটা ঘুরে যেতে হয়। ওপেন কিচেনের ধারণাই তৈরি হয়েছে খোলামেলা আবহ তৈরি করার জন্য। তাই প্রয়োজনে ‘কিচেন-এলিমেন্টস’ কম রাখুন, তথাপি ঘরকে যথেষ্ট খোলামেলা রাখবার চেষ্টা করুন।

রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন

কিচেনের বিভিন্ন আসবাবের রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন, রং নির্ধারণ করুন বুঝে-শুনে। ঘরের দেয়ালের সাথে সাদৃশ্য আছে এরকম কোনো রং বাছাই করুন। বসার সোফা, টেবিল, ঘরের দেয়াল আর কিচেনের স্টোরেজ কিংবা অন্যান্য উপাদানের রঙের সিংক হলে সেটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। তবে রং নির্ধারণেও একটি নির্দিষ্ট নিশ খুঁজে নিতে হবে। যে রং বাছাই করবেন, পুরো ঘরের নিশ হবে সেটি। এক্ষেত্রে খুব বেশি রঙচঙে কিংবা চোখে লাগছে, এরকম রঙ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাদা, অফ-হোয়াইট, ধূসর, ক্রিমি, ডার্ক ইত্যাদি ওপেন কিচেন ডিজাইনের জনপ্রিয় রঙ।

আলোকসজ্জার কথা ভুলবেন না যেন

কিচেনের জোন ভাগ করার সময়ই আলোকসজ্জা ঠিক করে ফেলতে হবে। রান্নার জোনে যতটা আলো প্রয়োজন, ধোয়ামোছা কিংবা বসার জোনে ততটা নয়। আবার বসার জোনে যেরকম আলো চাই, ডাইনিং জোনে সেরকম নয় নিশ্চয়ই। যদি আপনার ওপেন কিচেনটি যথেষ্ট বড় হয়, তাহলে অন্যসবের সাথে খেয়াল রাখুন এ বিষয়েও, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা প্রাকৃতিক আলোর (জানালা, স্কাইলাইট, ইত্যাদি) ব্যবস্থা করুন যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে।

সর্বোপরি, একটি ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে সৌন্দর্য; অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে হিজিবিজি করে ফেলা নয়। আপনার রুচি ও সাধ্য অনুসারে যে নকশা ধরেই এগোন না কেন, ওপেন কিচেন যেন ওপেনই থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় ওপেন কিচেনের মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করবেন যেভাবে

পৃথিবীর কোন প্রাকৃতিক সম্পদ সবচেয়ে বেশি দূষিত? কিংবা কোন প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি? অথবা অন্য একটি প্রশ্ন, কোন প্রাকৃতিক সম্পদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি? অধিকাংশ মানুষই উত্তর জেনে চমকে উঠতে পারে। কেননা সবগুলোর উত্তর একই- পানি।

পানির অপচয়ের কোনো নির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত নেই। গবেষণা বলছে প্রতিবার টয়লেটের ফ্লাশেই খরচ হয় প্রায় ৪ লিটার পানি! অথচ সুপেয় পানির পরিমাণ কমছে প্রতিদিনই। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ তথ্য- ২০২৫ সালের মাঝেই পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ পাবে না ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানি। পানি দূষণের হারও ততদিনে প্রায় দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে বিশ্বে বছরে প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে পানিবাহিত রোগ থেকে। বলা বাহুল্য, সুপেয় পানির সংকট প্রকট হলে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

বিশুদ্ধ পানি সংক্রান্ত এতসব জটিলতার সমাধান হিসেবে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বৃষ্টির পানির কথা। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ‘রেইনওয়াটার হারভেস্টিং’ বলা হয়। সাধারণ ছাদে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি দূষণমুক্তভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পুরো প্রক্রিয়াই হলো রেইনওয়াটার হারভেস্টিং।

সুবিধাসমূহ

প্রকৃতির দান বিশুদ্ধ ও সকল প্রকার খরচমুক্ত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের রয়েছে বহুবিধ সুবিধা। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- সঠিক প্রক্রিয়ায় এই পানি সংরক্ষণ করা গেলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া, সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি বাগানের জন্য বা বাড়ির উঠানে লাগানো গাছের চারার জন্য অধিক উপকারী। কারণ ভূগর্ভস্থ পানিতে অনেকসময় ক্লোরাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা বৃষ্টির পানিতে থাকে না বললেই চলে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি সংরক্ষণ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় হয় না। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। সব মিলিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুবিধা বহুবিধ। এছাড়াও টয়লেটের ফ্লাশ, গাড়ি ধোয়া, সুইমিং পুলের পানি, ইত্যাদি অদরকারি কিংবা কম দরকারি কাজে বৃষ্টির পানি ব্যবহার ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমায়, অপচয় রোধ করে।

প্রক্রিয়া

রেইনওয়াটার হারভেস্টিং অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সুলভ একটি প্রযুক্তি। আধুনিককালে প্রযুক্তির উন্নয়নে পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ এবং নির্ভরযোগ্য হয়েছে। এককালীন খরচের মাধ্যমে একটি রেইনওয়াটার হারভেস্টিং প্ল্যান্ট নিজ বাসায় তৈরি করে নিতে পারলে বছরের পর বছর এর সুফল ভোগ করা সম্ভব।

রেইন ব্যারেল

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের আদিমতম এবং সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ‘রেইন ব্যারেল’। মূলত এ প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ জটিলতা নেই; নামের মতো এখানে কেবল প্রয়োজন একটি ব্যারেল বা পিপা। ছাদ থেকে পানি নামার নালার নীচে একে স্থাপন করলেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো এর জন্য অতিরিক্ত জায়গা, খরচ বা দক্ষতা কোনোটিরই প্রয়োজন নেই। কেবল বাজার থেকে একটি ব্যারেল কিনে আনলেই কাজ শেষ। কিন্তু সমস্যা হলো এর সক্ষমতা অত্যন্ত কম, মাত্র ২০০-২৫০ লিটার। অধিক বৃষ্টির সময় পানি উপচে পড়ে সংরক্ষণের সুযোগও অপচয় হয়।

ড্রাই সিস্টেম

এটি মূলত রেইন ব্যারেলেরই বৃহত্তর সংস্করণ। এই পদ্ধতিতে ছাদ থেকে পাইপ এনে একটি বড় আকৃতির ব্যারেলের সাথে সংযুক্ত করা হয়। বৃষ্টি শেষে পানি পাইপের নীচে থাকায় পাইপটি দ্রুত শুকিয়ে যায়; তাই একে বলা হয় ড্রাই সিস্টেম। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অধিক পানি সংরক্ষণের সুবিধা দিলেও ঠিক বাড়ির পাশেই ট্যাংক স্থাপন করাটা খুব বেশি আকর্ষণীয় নয়।

ওয়েট সিস্টেম

ড্রাই সিস্টেমের তুলনায় এ প্রক্রিয়াটি অধিক সুবিধাজনক কেননা এখানে সংরক্ষণ ট্যাংকটি বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাখারও সুযোগ রয়েছে। অসুবিধা কেবল একটিই- খরচ। এ প্রক্রিয়ায় মূলত ছাদের বা অন্য কোনো প্ল্যান্টের উপর পতিত বৃষ্টির পানি পাইপের মাধ্যমে মাটির নীচে দিয়ে স্থাপন করা পাইপে দূরবর্তী ট্যাংকে পৌঁছানো হয়। ফলে বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলেও পাইপের মাঝে সবসময় কিছু পানি রয়ে যায়।

যেভাবে করতে হবে

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো ধাপে ধাপে করতে হবে।

  • ওয়াটার-হারভেস্টিং শুরু হয় বাড়ির ছাদ থেকে। তাই বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখাই প্রথম কাজ।
  • পানি প্রবাহের পাইপ বা নালার মুখে অবশ্যই ছাঁকনি বা অনুরূপ কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম লাগাতে হবে যেন ঝড়ের সময় উড়ে আসা বড় কোনো আবর্জনা নালায় প্রবেশ করতে না পারে।
  • অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে পানি প্রবাহের নালার মুখে ছাঁকনির পাশাপাশি নালায় একটি ফিল্টারও স্থাপন করা যেতে পারে।
  • মশা-মাছি আর অন্যান্য কীটপতঙ্গ দূরে রাখতে ট্যাংক স্ক্রিন বা অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • ট্যাংকের ওভারফ্লো পাইপ (যে পাইপ দিয়ে ট্যাংক পানিতে ভরে গেলে পানি উপচে পড়ে) এর মুখেও লাগাতে হবে কীটপতঙ্গনাশক ছাঁকনি বা অনুরূপ কিছু।
  • পানি বিতরণের জন্য ট্যাংকের সাথে সংযুক্ত করতে হবে একটি পাম্প।

ওয়াটার লেভেল মনিটরিং নামক একপ্রকার মিটার পাওয়া যায় যা ট্যাংকে উপস্থিত পানির পরিমাণ বলে দিতে পারে। এরকম মিটার তারবিহীন কিংবা তারসহ, উভয়ই বাজারে বিদ্যমান।

মোদ্দাকথা এই যে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত সহজ এবং সুলভ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া স্থাপনে যেমন অধিক খরচ নেই, তেমনি এর রক্ষণাবেক্ষণেও বিশেষ কোনো মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি অপচয় রোধের ব্যাপার তো রয়েছেই। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রতিটি উন্মুক্ত বাড়ির ছাদেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

আধুনিক কেবিনেট নকশায় নান্দনিক হেঁশেল

বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ত ঘর কোনটি, এমনটা প্রশ্ন করলে প্রথম উত্তরে হয়তো রান্নাঘরের কথাই আসবে মাথায়। আগেকার দিনের বাড়ির বাইরের রান্নাঘরগুলোর খোঁজ গ্রামাঞ্চলে যা-ও মেলে, শহরে তা বিলুপ্ত। শহরগুলোর বহুতল আবাসগুলোয় রান্নাঘর হয়েছে আরো ছোট, অনেকাংশেই বদ্ধ। বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ত ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের প্রতিই অবহেলা যেন আরো বেশি। তাই ভ্যাপসা, স্যাঁতস্যাঁতে, বদ্ধ রান্নাঘরে কাজ করে করে রাঁধুনির অস্থিরতার সূচক বাড়তি থাকাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আধুনিক সময়ে মানুষ এখন এই বিষয়কে দেখছে বেশ গুরুত্ব দিয়ে। রান্নাঘরের নকশায় তাই আসছে নতুনত্ব, যোগ হচ্ছে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

রান্নাঘর মানেই কিন্তু এখন কাটা, বাটা আর চুলোর গরম আঁচ বোঝায় না; খুব ভারী রান্নাঘরের চল এখন কমে আসছে অনেকটাই। ছোট ও এলোমেলো রান্নাঘরে কাজের ইচ্ছেটাও বেশিক্ষণ থাকে না, বিশেষ করে এই ব্যস্ত নগরজীবনের ছোটাছুটিতে। তাই আজকাল মাঝারি ফ্ল্যাট, বড় অ্যাপার্টমেন্ট বা ডুপ্লেক্স বাড়িগুলোতে রান্নাঘরের আকার বেশ বড় রাখা হয় ক্রেতাদের চাহিদার সাথে মিল রেখে। রান্নাঘরের জায়গাটুকু সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে কিচেন কেবিনেটের জুড়ি নেই বললেই চলে। তবে আধুনিক কিচেন কেবিনেট বা ওপেন কিচেন বানানোর জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। জেনে নেওয়া যাক এমন নান্দনিক কিচেন কেবিনেট নকশার কিছু খুঁটিনাটি।

রান্নাঘরের নকশায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর আকৃতি ও ব্যাপ্তি। যদি তুলনামূলক ছোট রান্নাঘর হয় যেখানে জায়গা কম, তাহলে স্ট্রেইট কিচেন বা সমান্তরাল নকশায় আগানো উচিত বলে মনে করেন নকশাকাররা। এতে কেবিনেটগুলো যেকোনো একপাশে বা উভয়পাশে থাকতে পারে, মাঝে অবশ্যই হাঁটাচলা ও প্রয়োজনে বসতে পারার মতো জায়গা থাকতে হবে। এমন রান্নাঘরে যদি অতিরিক্ত শেলফ বা প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করা হয় অথবা খুব বেশি উঁচু করে কেবিনেট তৈরি করা হয়, তাহলে ঘিঞ্জি বা দমবন্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তুলনামূলক বড় রান্নাঘরে ইংরেজি ইউ (U) বা এল (L) আকৃতির নকশা কাজে লাগানো যায়, যা বেশি সুবিধাজনক। যেকোনো নকশার শুরুতেই রান্নাঘরে থাকা বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডগুলো এবং প্লাম্বিং পয়েন্টগুলোর অবস্থান মাথায় রাখতে হবে। এসবের ওপর কেবিনেটের কোনো অংশ যেন সরাসরি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত, এতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন- ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, টোস্টার প্রভৃতি ব্যবহারে সুবিধা হবে।

রান্নাঘরের নকশা যেমনই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার জন্য যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে। কেবিনেটের একদিকে এক্সহস্ট ফ্যান লাগানো গেলে রান্নাঘরের গরম বাতাস বা ধোঁয়া দ্রুত বের হয়ে যেতে পারে, এতে চিটচিটে ভাবটাও বেশ খানিকটা কমে যায়। খোলামেলা রান্নাঘরের জন্য তুলনামূলক বড় আকারের জানালা রাখা যায়, যা কেবিনেটের ফ্রেম ও নকশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এতে রান্নাঘরের পরিবেশ যেমন তরতাজা থাকবে, তেমনই এর সাজে নান্দনিক ভাবও আসবে।

এবার আসা যাক কেবিনেটগুলোর নকশা কেমন হতে পারে, সেই আলোচনায়। বর্তমানে সাধারণ রান্নাঘর বা ওয়েট কিচেনের পাশাপাশি ড্রাই কিচেনের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। তাই কেবিনেট নকশায়ও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেবিনেটগুলো প্রয়োজন অনুসারে পৃথকভাবে ভাগ করে নেওয়া উচিত, এতে কোন কেবিনেটে কেমন জিনিস রাখা হবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, মূল্যবান ক্রোকারিজ/তৈজসপত্রের জন্য, যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত হয়, সেসব ওপরের দিকের বায়ুনিরোধক তাকে রাখা উচিত, যাতে ধুলোবালি না ঢুকতে পারে। দৈনন্দিন ব্যবহারের তৈজসপত্র স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি তাকে রাখা যায় অথবা পুলআউট ড্রয়ারেও রাখা যায়। মশলাপাতি ও অন্যান্য দরকারি ব্যবহারি জিনিস রাখার জন্য চুলা বা বার্নার স্টোভের পাশেই কিছু খোলা কেবিনেট রাখা যায়।

আধুনিক কিচেনের জন্য বর্তমানে কেবিনেটের সাথে পুলআউট ড্রয়ারের ব্যবহার হচ্ছে। একে নাইফ ড্রয়ার, তৈজসপত্র রাখার কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি ভেজিটেবল ট্রায়াঙ্গল বক্সও তালিকায় রাখা যায়।

কিচেনের নকশায় যে দিকটির কথাও আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা হলো ব্যবহারকারীর উচ্চতা। এদিকে যত্নবান হলে এর নিয়মিত ব্যবহারকারী কাজকর্মেও এক অন্যরকম স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন। এজন্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন বার্নার, কিচেন হুড, সিংকসহ পুরো রান্নাঘরেই ব্যবহারকারীর উচ্চতা ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। এর ফলে কাজে আসবে স্বস্তি, দৃষ্টিতে মিলবে শান্তি।

বর্তমানে পাশ্চাত্যধারার সাথে মিল রেখে অনেক বাসাবাড়িতে কিচেন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়। এটি মূলত একটি গ্রানাইট বা মার্বেল পাথরের টেবিলাকৃতি অংশ যার আশেপাশে টুল বা ছোট চেয়ার দিয়ে বসা যায়। ড্রাই কিচেন বা ওপেন কিচেনে এই টেবিল ব্যবহার করা যায়। অধিক স্থায়িত্বের জন্য গ্রানাইট ও মার্বেল পাথর দিয়ে কিচেন কেবিনেটের কাউন্টার-টপও তৈরি করা যায়।

জিপসাম বোর্ডের পাশাপাশি জুট স্টিক বোর্ড, ভিনিয়ার বোর্ড, প্লাইউড বা মেলামাইন বোর্ডও ব্যবহার করা যায় কেবিনেট তৈরির উদ্দেশ্যে। এসব বোর্ডের স্থায়িত্ব যেমন বেশি, তেমনি পরিষ্কার করাও বেশ সহজ, দাগও পড়ে না। জিপসাম বোর্ড অগ্নিনিরোধক ও মেলামাইন বোর্ড পানিনিরোধক, তাই এগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সাধারণ বোর্ডের সাথে পিভিসি ব্যবহার করেও কেবিনেট তৈরি করা যায়।

এভাবেই পরিপাটি ও ছিমছাম নকশার নান্দনিক হেঁশেলে মুগ্ধ হবে সবাই।

আধুনিক অন্দরসজ্জায় কাঠের মেঝে

কাঠের মেঝে যুগ যুগ ধরে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

Continue reading

ইটের কাজের নানা উপায়

আমাদের দেশে পাকা দালান বলতে ইটের ব্যবহার সবক্ষেত্রে দেখা যায়। সেই ইটের গাঁথুনিতেও আছে নানা উপায় এবং নিয়ম কানুন।

গাঁথুনিতে ইট সাজানো বা জোড়া দেয়ার কৌশলকে বন্ড বলে। এতে ইটকে এভাবে জোড়া দেওয়া হয় যাতে উপরের বা নিচের দুই স্তরের খাড়া জোড়া একই খাড়া লাইনে না থাকে।

কারিগরি নিয়ম-কানুন না মেনে ইট বা পাথর গাঁথুনি করলে তা দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য হয় না। স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য, আর্থিক দিক, ভারবহন ক্ষমতাসহ নানাদিক বিবেচনায় দেয়াল গাঁথুনিতে বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইটের কাজে বন্ডের প্রয়োজনীয়তা  

1. কাঠামো স্থায়ী ও শক্তিশালী করা।

2. ইটের মধ্যকার বন্ধন সুদৃঢ় করা।

3. গাঁথুনিতে উল্লম্ব বা খাড়া জোড়া পরিহার করা।

4. নির্মাণ কাজ দ্রুত করা।

5. দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।

6. শিয়ার ফোর্স প্রতিরোধ করা।

7. দেয়ালের উপর আসা ভার সমানভাবে ও নিরাপদে বণ্টন করা।

ইটের বন্ডের প্রকারভেদ

গাঁথুনিতে ব্যবহৃত বন্ডকে নানাভাগে ভাগ করা যায়

  1. ইংলিশ বন্ড (English bond)
  1. ফ্লেমিশ বন্ড (Flemish bond)
  1. স্ট্রেচার বন্ড বা রানিং বন্ড (Stretcher bond)
  1. হেডার বন্ড (Header bond)
  1. গার্ডেন ওয়াল বন্ড (Garden wall bond)
  1. রেকিং বন্ড (Raking bond)
  1. ডাচ বন্ড (Dutch bond)

৪. ফেসিং বন্ড (Facing bond)

9. ইংলিশ ক্রস বন্ড (English cross bond)

10. ব্রিক-অন-এজ বন্ড (Brick on edge bond)

প্রচলিত ইটের বন্ড এবং এদের ব্যবহার

আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটি বন্ডে ইট গাঁথুনি পদ্ধতি এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো নিম্নে দেওয়া হল:

ইংলিশ বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে এক স্তর হেডারের উপর অপর স্তর স্ট্রেচার ইট স্থাপন করা হয় অর্থাৎ এক স্তরে  ইটগুলো লম্বালম্বিভাবে এবং অপর স্তরে ইটগুলো আড়াআড়িভাবে স্থাপন করা হয়। এ বন্ড খুবই শক্তিশালী এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। খাড়া জোড়াগুলো যাতে একই উলম্ব রেখায় না পড়ে সেজন্য হেডার স্তরের প্রথম হেডার ইটের পর একটি কুইন ক্লোজার বসাতে হয়।

হাফ ইটের মোটা পুরুত্বের যেকোনো দেয়াল নির্মাণে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা হয়।

ফ্লেমিশ বন্ড :

এই বন্ডে একই স্তরে একটি ইট লম্বালম্বি ও পরেরটি আড়াআড়ি করে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়। ফ্লেমিশ বন্ডে প্রতিটি স্তরে হেডার ইটের কেন্দ্র বরাবর এর উপরের এবং নিচের স্তরের স্ট্রেচার ইটের কেন্দ্র থাকবে। প্রতিটি হেডারের দুই পাশে একটি করে স্ট্রেচার ইট থাকবে। ইংলিশ বন্ড থেকে এটি দেখতে সুন্দর হলেও অধিক সংখ্যক ক্লোজার ব্যবহার করার কারণে এই বন্ড দূর্বল হয়।

দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং কারুকার্যের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ নান্দনিক ফ্লেমিশ বন্ড।

স্ট্রেচার বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে প্রতিটি স্তরে দেয়ালের দৈর্ঘ্য বরাবর ইটকে স্ট্রেচার হিসেবে স্থাপন করা হয়। কেবলমাত্র অর্ধ ইট বা ১২.৫ সে.মি পুরুত্বের দেয়ালে নির্মাণে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের বন্ডে গাঁথুনিতে যথাযথ বন্ড সৃষ্টি হয় না। অর্ধ ইটের বেশি পুরুত্বের দেয়ালে এ বন্ড ব্যবহার করা যায় না। একে রানিং বন্ডও বলে।

চিমনির দেয়াল, পার্টিশন এবং ডিভিশন ওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে স্ট্রেচার বন্ড ব্যবহৃত হয়। 

হেডার বন্ড :

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি স্তরের প্রতিটি ইটকে হেডার হিসেবে স্থাপন করা হয়। এক ইটের দৈর্ঘ্যের সমান বা ২৫ সে.মি. পুরুত্বের দেয়াল বা বাঁকা দেয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বন্ড বেশি উপযোগী।

বাঁকা দেয়াল এবং ফুটিং নির্মাণের সময় হেডার বন্ড ব্যবহার করা হয়। 

গার্ডেন ওয়াল বন্ড :

গার্ডেন ওয়াল, কম্পাউন্ড ওয়াল ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য যে বন্ড ব্যবহৃত হয় তাকে গার্ডেন ওয়াল বন্ড বলে। সাধারণত ২৫ সে.মি বা এক ইট পুরু দেয়ালের ক্ষেত্রে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। ইংলিশ বা ফ্লেমিশ উভয় বন্ডে এ দেয়াল গাঁথা যায়।

সীমানার দেয়াল, বাগানের দেয়াল এই ধরনের হালকা নির্মাণে গার্ডেন ওয়াল বন্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাড়ি নির্মাণে ইট বহুল প্রচলিত একটি উপাদান। সেক্ষেত্রে বাড়ির স্থায়িত্ব এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিজের কষ্টের অর্থ পরিশ্রম ব্যয়ে গড়ে তোলা বাড়িটি বাসযোগ্য এবং স্থায়ী হওয়া জরুরি। সবকিছুর সাথে ইটের দালানে বন্ডের বিষয়টিও লক্ষ্য রেখে বানালে নির্মাণ হবে সমৃদ্ধ এবং স্থায়ী।

ছাদের ওপর পানির ট্যাংক: বাড়ির স্ট্রাকচারের কথা আমলে এনেছেন তো?

আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়ির বিভিন্ন অংশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওভারহেড ট্যাংকের কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। ওভারহেড ট্যাংক ধ্বসে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু সাবির্ক স্ট্রাকচার ও গুরুত্বের বিবেচনায় ওভারহেড ট্যাংকের ভূমিকা অতুলনীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওভারহেড ট্যাংক কী ও এটি কীভাবে স্থাপিত হয়।

ওভারহেড ট্যাংকের প্রকারভেদ

সাধারণত ভবনে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য বাড়ির ছাদে যে জলাধার স্থাপন করা হয়, তাকেই প্রচলিত ভাষায় ওভারহেড ট্যাংক বলে। গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী দুই ধরনের ওভারহেড ট্যাংকের ব্যবহার দেখা যায় –

১. প্লাস্টিক ট্যাংক

২. কংক্রিট নির্মিত ট্যাংক

প্লাস্টিক ট্যাংক পলিইথিলিন নির্মিত এবং কংক্রিটের ট্যাংক কংক্রিট ও ক্ষেত্রবিশেষে ফেরোসিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়। সুবিধা অসুবিধা এবং বহনযোগ্যতার কথা বিবেচনায় এখন প্লাস্টিকের ট্যাংকের প্রয়োগ বেশি দেখা গেলেও স্থায়িত্ব বিবেচনায় কংক্রিটের ট্যাংকের ব্যবহার এখনও বহুল প্রচলিত। কিন্তু কংক্রিট ট্যাংক নির্মাণের সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন স্ট্রাকচারের খুঁটিনাটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কংক্রিট ট্যাংকের বিস্তারিত।

ট্যাংকের আকার কেমন হবে?

প্রথমেই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় ট্যাংকের আকার নির্ধারণ নিয়ে। ট্যাংকের আকার সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারের প্রকৃতি এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর। একজন ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি প্রতিদিন ১৫০ লিটার এবং পানযোগ্য পানি ৪ লিটার বিবেচনা করে মোট প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ বের করা হয়।

যেমন- ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ, (১৫০+৪) x ৫ = ৭৭০ লিটার, অর্থাৎ পানির আয়তন হলো ০.৭৭ কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১.২ মিটার দৈর্ঘ্যের, ০.২ মিটার প্রস্থের ও ০.৭৭ মিটার উচ্চতার ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে। উপরে ফাঁকা অংশের পরিমাণ হবে ০.১ মিটার। এভাবে সকল সদস্যের পানির প্রয়োজনীয়তার হিসাব করে ট্যাংকের আকার নির্ধারণ করা হয়।

নির্মাণ করবেন কীভাবে?

এবারে আসা যাক ট্যাংক নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে। ট্যাংকের আকারের উপর নির্ভর করে এর স্ট্রাকচার ডিজাইন করা হয়। বাংলাদেশে আয়তাকার ও বর্গাকার আকৃতির কংক্রিট ট্যাংক হয়ে থাকে। পানির আধার হওয়ার কারণে সাধারণত ছাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে কিছুটা উপরে এই ট্যাংক স্থাপনের কাজ করা হয়। ট্যাংকটির নির্দিষ্ট একটি লোড থাকার কারণে নিচের ফ্লোরগুলোর স্ট্রাকচারের উপর ভিত্তি করে এটি স্থাপন করা হয়। 

হাইরাইজের ক্ষেত্রে তা সাধারণত কোরের (core) ওপর স্থাপন করা হয়। এতে লোড সমভাবে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। লোডকে সমভাবে বণ্টন না করলে পানির চাপে স্ট্রাকচার ফেইল করে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। তাই স্ট্রাকচার ডিজাইন অনুযায়ী নির্দেশিত পরিমাণ রড এবং বন্ডিং সঠিকভাবে মেনে চলে এবং বিল্ডিংয়ের প্রধান বীম-কলাম লেআউটের উপর নির্ভর করে এই ট্যাংক নির্মাণ করলে সম্ভাব্য সকল বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। 

পানির লিকেজ বন্ধ করাও ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে কংক্রিটের সাথে ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টারের ক্ষেত্রেও ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল মেশানো হয়। এছাড়া নির্মাণের সময়ই সঠিকভাবে ইনলেট ও আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে।

কংক্রিট ওভারহেড ট্যাংকের ক্ষেত্রে নির্মাণের পরও নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। ট্যাংকের ঢালাই কাজের সময় ও লিকেজ বন্ধের প্রক্রিয়াতে চাই বাড়তি সচেতনতা। বিভিন্ন বড় দুর্যোগ এবং পানির চাপে ট্যাংক ধ্বসে পড়া থেকে রক্ষা করতে বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারের বিবেচনায় লোড ও বেন্ডিং মোমেন্ট হিসাব রেখে নির্মাণ করা অতীব জরুরি। ভবন নির্মাণের সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিৎ সবার নিরাপত্তার কথা ভেবেই।  

কংক্রিটে বাড়ি তৈরি: নির্মাণকাজের বিভিন্ন ধাপ

বর্তমানে নির্মাণশিল্পের বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান হলো কংক্রিট। কেবলমাত্র সহজলভ্যতার জন্য নয়, বরং সহজ ব্যবহার এবং যেকোনো নকশাকে দৃষ্টিনন্দন করতে ও বাস্তব রূপ দিতে আজকের সময়ে আমরা অনেক বেশি কংক্রিট ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছি। নির্মাণশিল্পে একটি ভবনের নির্মাণের সাথে কখনোই আরেকটি ভবনের নির্মাণ পদ্ধতির মিল পাওয়া সম্ভব নয়। কাঁচামাল একই হওয়া সত্ত্বেও মাটির প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জমির আকার-আকৃতি এবং নকশার ভিন্নতার উপর নির্ভর করে নির্মাণ পদ্ধতি।

কংক্রিটে বাড়ি বানাতে গেলে নির্মাণ-সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত থাকে-

  • কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ
  • কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ-কাল-সময় ভেদে এই দুই সময়কালীন কাজে শ্রমিকের সহজলভ্যতা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ

সাধারণত এই ভাগে নির্মাণের পূর্বের সকল কাজ অন্তর্ভুক্ত। যেমন-

  • ভবন নির্মাণের প্রথমেই কোথায় নির্মাণকাজ হবে সেটি অর্থাৎ ভবনের লোকেশন ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় জায়গার স্বল্পতার কারণে কিংবা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্মাণের জায়গা নির্বাচনে অধিক সচেতন হতে হয়।
  • এরপর ক্লায়েন্টের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী একটি কার্যকর নকশা করা হয়।
  • নকশাকে বাস্তবায়ন করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সাহায্য নিয়ে ফাউন্ডেশন, স্ট্রাকচার এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • নকশা নির্বাচনের পর কাঁচামালের হিসেব, শ্রমিকের মজুরি এবং যাবতীয় খরচসহ একটি খসড়া বাজেট তৈরি করা হয় যা পরবর্তীতে নির্মাণকাজ চলাকালীন পরিবর্তিত হতে পারে।
  • সয়েল টেস্ট কিংবা মাটির পরীক্ষা একটি নিরাপদ ভবন নির্মাণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভবনের লোকেশন নির্ধারণের সাথে সাথে এই পরীক্ষা শুরু হয় এবং ভূ-বিশারদেরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ওই এলাকার মাটির উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকেন যেখানে মাটির প্রকৃতি, দূষণের প্রকৃতি-পরিমাণ এবং ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করা হয়।
  • সবশেষে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার অধীনে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ভবনের কাজ।

এবং এর মাধ্যমে ভবন নির্মাণের প্রথম ধাপ অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজের সমাপ্তি ঘটে এবং শুরু হয় কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ। 

কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

এই কাজের পরিধি ভবন নির্মাণের শেষ কাজ পর্যন্ত। নথিপত্র সংক্রান্ত কাজের চেয়ে এসময় সাইট এবং ব্যবহারিক কাজকর্ম বেশি হয়ে থাকে বিধায় অধিক সচেতনতা আবশ্যক। যেমন-

  • কাজ শুরু হয় সাইটের প্রস্তুতির মাধ্যমে। যেকোনো নির্মাণ কাজের শুরুতে সাইট নির্মাণের অনুকূলে থাকে না। তাই এসময় সাইট থেকে আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় গাছপালা এবং আগাছা অপসারণ, মাটি আলগা করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢালু করা এসব কাজ করা হয়ে থাকে। 
  • সাইট পরিষ্কারের পর ভবনের নকশা অনুযায়ী সুতা, চক এসবের মাধ্যমে লে-আউট সাইটে স্থাপন করা হয়। লে-আউট স্থাপনের পর সাইটে প্রবেশের জায়গা, চারিদিকে রাস্তার অবস্থান, শ্রমিকদের বসবাসের সুযোগ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য অফিসের অবস্থান ঠিক করা হয়।
  • লে-আউট স্থাপনের পর মাটি খননের কাজ শুরু হয়। মাটির প্রকৃতি এবং গুণাগুণের ভিত্তিতে এই খনন কাজ পরিচালিত হয় এবং সাধারণত এই সময় সাইটে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার আধিক্য দেখা দেয়। তাই খননের সময়ে যথাসম্ভব সাবধান হতে হয় এবং নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌঁছানোর পর রোলারের সাহায্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • পরবর্তী ধাপ হলো ফাউন্ডেশন নির্মাণ। ভবনের নকশা এবং ফাংশন অনুযায়ী কোন ফাউন্ডেশন ভবনের জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু ফাউন্ডেশন পুরো ভবনের ভার বহন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সেক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের কাঁচামাল নির্ধারণ এবং নির্মাণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা হয়।
  • ফাউন্ডেশন নির্মাণের পরপরই প্লিন্থ লেভেলে বীম তৈরি করা হয় পরবর্তী লেভেলের নির্মাণাকাজ পরিচালনার জন্য। এরপর যথাক্রমে কলাম, বীম, স্ল্যাব এবং দেয়াল তৈরি করা হয়। কলাম নির্মাণের ক্ষেত্রে উলম্ব বিচ্যুতি যাতে না হয় সেজন্য অভ্যন্তরীন রডগুলো কিছুতা বাড়তি রাখা হয়। 
  • সিভিল, প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রনিক সংক্রান্ত সকল কাজ এবং স্থাপনা শেষে ছাদ নির্মাণের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হয়। ছাদের ক্ষেত্রে সাধারণত পানির লিকেজ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পানিরোধক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
  • বীম-কলাম-স্ল্যাব সবকিছু নির্মাণের মাধ্যমে কখনো একটি ভবন বসবাস কিংবা কাজের উপযোগী হয় না যতক্ষণ না তার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা প্লাম্বিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। 

ওপরে বর্ণিত সকল বিষয় কংক্রিট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধিমালা হিসেবে পরিচিত হলেও দেশ-কাল-অঞ্চলভেদে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। একদম নতুন পরিবেশে কিংবা প্রথমবার কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বভাবতই অধিক সাবধানতা অনুসরণ করা হয়। সেসব কিছুসহ ভবন নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা বলুন দক্ষ প্রকৌশলী ও স্থপতির সাথে, আর হোম বিল্ডার্স ক্লাব তো আছেই আপনার পাশে! 

নির্মাণের সময় ভুল? যেভাবে শোধরাবেন

নির্মাণকাজের মতো জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ও দীর্ঘসূত্রিতা লঘু করতে আসলে শুরু থেকেই যতটা সম্ভব ভুল এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

Continue reading