কংক্রিটে বাড়ি তৈরি: নির্মাণকাজের বিভিন্ন ধাপ

বর্তমানে নির্মাণশিল্পের বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান হলো কংক্রিট। কেবলমাত্র সহজলভ্যতার জন্য নয়, বরং সহজ ব্যবহার এবং যেকোনো নকশাকে দৃষ্টিনন্দন করতে ও বাস্তব রূপ দিতে আজকের সময়ে আমরা অনেক বেশি কংক্রিট ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছি। নির্মাণশিল্পে একটি ভবনের নির্মাণের সাথে কখনোই আরেকটি ভবনের নির্মাণ পদ্ধতির মিল পাওয়া সম্ভব নয়। কাঁচামাল একই হওয়া সত্ত্বেও মাটির প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জমির আকার-আকৃতি এবং নকশার ভিন্নতার উপর নির্ভর করে নির্মাণ পদ্ধতি।

কংক্রিটে বাড়ি বানাতে গেলে নির্মাণ-সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত থাকে-

  • কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ
  • কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ-কাল-সময় ভেদে এই দুই সময়কালীন কাজে শ্রমিকের সহজলভ্যতা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা এবং দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজ

সাধারণত এই ভাগে নির্মাণের পূর্বের সকল কাজ অন্তর্ভুক্ত। যেমন-

  • ভবন নির্মাণের প্রথমেই কোথায় নির্মাণকাজ হবে সেটি অর্থাৎ ভবনের লোকেশন ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় জায়গার স্বল্পতার কারণে কিংবা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্মাণের জায়গা নির্বাচনে অধিক সচেতন হতে হয়।
  • এরপর ক্লায়েন্টের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী একটি কার্যকর নকশা করা হয়।
  • নকশাকে বাস্তবায়ন করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সাহায্য নিয়ে ফাউন্ডেশন, স্ট্রাকচার এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • নকশা নির্বাচনের পর কাঁচামালের হিসেব, শ্রমিকের মজুরি এবং যাবতীয় খরচসহ একটি খসড়া বাজেট তৈরি করা হয় যা পরবর্তীতে নির্মাণকাজ চলাকালীন পরিবর্তিত হতে পারে।
  • সয়েল টেস্ট কিংবা মাটির পরীক্ষা একটি নিরাপদ ভবন নির্মাণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভবনের লোকেশন নির্ধারণের সাথে সাথে এই পরীক্ষা শুরু হয় এবং ভূ-বিশারদেরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ওই এলাকার মাটির উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকেন যেখানে মাটির প্রকৃতি, দূষণের প্রকৃতি-পরিমাণ এবং ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করা হয়।
  • সবশেষে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার অধীনে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ভবনের কাজ।

এবং এর মাধ্যমে ভবন নির্মাণের প্রথম ধাপ অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট-পূর্ববর্তী সময়কালীন কাজের সমাপ্তি ঘটে এবং শুরু হয় কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ। 

কন্ট্রাক্ট-পরবর্তী সময়কালীন কাজ

এই কাজের পরিধি ভবন নির্মাণের শেষ কাজ পর্যন্ত। নথিপত্র সংক্রান্ত কাজের চেয়ে এসময় সাইট এবং ব্যবহারিক কাজকর্ম বেশি হয়ে থাকে বিধায় অধিক সচেতনতা আবশ্যক। যেমন-

  • কাজ শুরু হয় সাইটের প্রস্তুতির মাধ্যমে। যেকোনো নির্মাণ কাজের শুরুতে সাইট নির্মাণের অনুকূলে থাকে না। তাই এসময় সাইট থেকে আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় গাছপালা এবং আগাছা অপসারণ, মাটি আলগা করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢালু করা এসব কাজ করা হয়ে থাকে। 
  • সাইট পরিষ্কারের পর ভবনের নকশা অনুযায়ী সুতা, চক এসবের মাধ্যমে লে-আউট সাইটে স্থাপন করা হয়। লে-আউট স্থাপনের পর সাইটে প্রবেশের জায়গা, চারিদিকে রাস্তার অবস্থান, শ্রমিকদের বসবাসের সুযোগ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য অফিসের অবস্থান ঠিক করা হয়।
  • লে-আউট স্থাপনের পর মাটি খননের কাজ শুরু হয়। মাটির প্রকৃতি এবং গুণাগুণের ভিত্তিতে এই খনন কাজ পরিচালিত হয় এবং সাধারণত এই সময় সাইটে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার আধিক্য দেখা দেয়। তাই খননের সময়ে যথাসম্ভব সাবধান হতে হয় এবং নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌঁছানোর পর রোলারের সাহায্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • পরবর্তী ধাপ হলো ফাউন্ডেশন নির্মাণ। ভবনের নকশা এবং ফাংশন অনুযায়ী কোন ফাউন্ডেশন ভবনের জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু ফাউন্ডেশন পুরো ভবনের ভার বহন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সেক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের কাঁচামাল নির্ধারণ এবং নির্মাণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা হয়।
  • ফাউন্ডেশন নির্মাণের পরপরই প্লিন্থ লেভেলে বীম তৈরি করা হয় পরবর্তী লেভেলের নির্মাণাকাজ পরিচালনার জন্য। এরপর যথাক্রমে কলাম, বীম, স্ল্যাব এবং দেয়াল তৈরি করা হয়। কলাম নির্মাণের ক্ষেত্রে উলম্ব বিচ্যুতি যাতে না হয় সেজন্য অভ্যন্তরীন রডগুলো কিছুতা বাড়তি রাখা হয়। 
  • সিভিল, প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রনিক সংক্রান্ত সকল কাজ এবং স্থাপনা শেষে ছাদ নির্মাণের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হয়। ছাদের ক্ষেত্রে সাধারণত পানির লিকেজ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পানিরোধক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
  • বীম-কলাম-স্ল্যাব সবকিছু নির্মাণের মাধ্যমে কখনো একটি ভবন বসবাস কিংবা কাজের উপযোগী হয় না যতক্ষণ না তার মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা প্লাম্বিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। 

ওপরে বর্ণিত সকল বিষয় কংক্রিট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধিমালা হিসেবে পরিচিত হলেও দেশ-কাল-অঞ্চলভেদে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে থাকে। একদম নতুন পরিবেশে কিংবা প্রথমবার কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বভাবতই অধিক সাবধানতা অনুসরণ করা হয়। সেসব কিছুসহ ভবন নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা বলুন দক্ষ প্রকৌশলী ও স্থপতির সাথে, আর হোম বিল্ডার্স ক্লাব তো আছেই আপনার পাশে! 

সাইট প্রিপারেশন: বাড়ির কাজে হাত দেবার আগে যা যা জানা প্রয়োজন

একটি ছোট ইট থেকে তিল তিল করে স্বপ্নের বাড়ি তৈরি হওয়ার জন্য এর নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজের একদম শেষ পর্যন্ত খুঁটিনাটি অনেক কাজ থাকে, আনুষঙ্গিক নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সুন্দর মজবুত বাড়ি নির্মাণ।

কিন্তু ভবন নির্মাণের আগে আগেই কিছু অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়, যেগুলো নির্মাণ বিধিমালার অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে সাইট প্রিপারেশন বা জমি প্রস্তুতির অন্তর্গত কিছু কাজের ধাপ আছে, যেগুলো বাড়ি তৈরির আগেভাগেই করে ফেলতে হয়। আসুন জেনে নিই কী কী কাজ আমাদেরকে করতে হবে, যা সাইট প্রিপারেশন পর্যায়ের অন্তর্গত।

রাস্তার মাপ ও প্রবেশ নির্ধারণ

বাড়ির আশেপাশের রাস্তার মাপের উপর সাইটের সেটব্যাক, দালানের অভিমুখ, প্রবেশপথ নির্ধারণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ভর করে। জমির সাথে রাস্তার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে দালানের উচ্চতা, আকৃতি ও দালানের অভিমুখ নির্ধারণ করা হয়। রাস্তার সাথে দালানের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য ইমারত নির্মাণ বিধিমালার প্রদত্ত নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। রাস্তার মাপ ও সঠিক প্রবেশপথ নির্ধারণ করার ফলে-

১. আশেপাশের দালানের সাথে দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভব হয়
২. দালানের সেটব্যাক এবং সম্পূর্ণ নকশা প্রণয়ন সহজতর হয়।

সাইটের আশেপাশের অবস্থা

বাড়ি বানানোর সময় আশেপাশের জমি এবং সাইটের পাশের অবস্থা বুঝতে পারা খুব দরকারি, কারণ জমির আশেপাশের মাটির প্রকৃতি, গঠন উপাদান, পানির পরিমাণ, জলাশয়ের অবস্থান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করে নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণনীতি স্থির করা হয়। এই সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে দালান মজবুত হবে না, সচেতনতার অভাবে জীবন পড়বে ঝুঁকির মধ্যে। তাই নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আগেই সাইটের আশেপাশের অবস্থা এবং জমি, পানির ও গাছপালার অবস্থান এসব বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকাটা আবশ্যক।

সাইটের আশেপাশের দালানকোঠা

সাধারণত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী সব জায়গায় সব রকমের দালান নির্মাণ সঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পকারখানার জন্য নির্ধারিত স্থানে ঘরবাড়ি নির্মাণ অবাঞ্চনীয়। এজন্য দালান নির্মাণের আগে সাইটের আশেপাশে কীরকমের জমির ব্যবহার প্রণালী নির্ধারিত এবং কীরকম দালানকোঠা নির্মাণ আইনত সঠিক, তা আমাদের অবশ্যই জেনে নিতে হবে।

এছাড়াও অ্যাভিয়েশনের জন্য দালানের উচ্চতা একটা হিসাবের বিষয়। সুতরাং কোনো জায়গায় দালান নির্মাণের আগে আগে সেই এলাকার অ্যাভিয়েশন নিয়ম কীরকম তা সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে এবং সরকারি ড্যাপ (DAP- Detailed Area Plan) সম্পর্কে আমাদের অবহিত হতে হবে, যাতে পরবর্তীতে আমাদের সমস্যা না হয় দালান নির্মাণে।

ড্যাপে কোন এলাকা কী ধরনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরকারি নকশার আওতাভুক্ত তা অঙ্কিত থাকে। সুতরাং ড্যাপ, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং অ্যাভিয়েশন নীতি সম্পর্কে জেনে তবেই আমাদের সাইটে দালান নির্মাণ কাজে নিয়ম অনুসারে অগ্রসর হতে হবে।

জমি প্রস্তুতির পর্ব

জমি প্রস্তুতির পর্বে আমাদের আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। সেগুলো হলো-
• মাটির গঠনগত তথ্য জানা
• মাটিতে পানির পরিমাণ জানা
• সঠিকভাবে সার্ভেয়ার দিয়ে জমির মাপ নির্ণয় করা
• জমিতে কোন গাছ কাটতে হবে, কোন গাছ সংরক্ষণ করতে হবে তা নির্ধারণ করে ফেলা
• জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা তা সঠিকভাবে জেনে নিয়ে নিশ্চিত হওয়া
• রাস্তার সাথে সঠিক সংযোগ নিশ্চিত করা
• ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাইন (পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নর্দমা ইত্যাদি) কোন স্থান দিয়ে গেছে তা জেনে নিয়ে সঠিক ভাবে তা মাথায় নিয়ে নকশা প্রণয়ন করা।

বিশেষজ্ঞ কর্তৃক সঠিক সয়েল টেস্ট জমির মাটির গুণগত মান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারে। একেক প্রকৃতির মাটিতে একেক রকমের নির্মাণ প্রযুক্তি, ফাউন্ডেশন ব্যবহৃত হয়। এজন্য মাটির গুণগত মান এবং মাটির প্রকৃতি জেনে তবেই নির্মাণ কাজে হাত দিতে হয়। মাটিতে পানির পরিমাণ দালানের স্থায়িত্ব নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানির পরিমাণ বেশি হলে ড্রেজিং করতে হয় এবং ফাউন্ডেশনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হয়, বেশি গভীর ফাউন্ডেশন দিতে হলে নির্মাণ সুরক্ষার জন্য রিটেইনিং দেয়াল দিতে হবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসারে।

দালানের ব্যবহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো ইনফ্রাস্ট্রাকচার। সাধারণত মাটির নিচ দিয়ে পানি, গ্যাসের লাইন প্রবাহিত হয়, যেগুলো থেকে সংযোগ প্রদান করে আমাদের বাসা-বাড়িতে এসবের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এদেশে বিদ্যুতের লাইন বাসা-বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় মাটির উপর দিয়ে। এসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাইন যাতে বাড়ি নির্মাণের সময় কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেটা আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য এদের অবস্থান আমাদের জানতে হবে দালান নির্মাণের আগে।

সাইটের কাটা মাটির ব্যবস্থাপনা, নির্ধারিত গাছ কিংবা জলাশয়ের সুবন্দোবস্ত করার পরেই সাইটের কাজে হাত দেওয়া সম্ভবপর হয়। এতসব কিছু করার জন্য উপযুক্ত স্থপতি, বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীর পরামর্শ গ্রহণ একান্ত আবশ্যক। তাদের পারদর্শিতা, দূরদৃষ্টি এবং বিশেষজ্ঞ অভিমতের দ্বারাই আমরা নির্ঝঞ্ঝাট, সুন্দর এবং মজবুত দালান নির্মাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি এবং ঝামেলামুক্তভাবে সাইটে দালানের নির্মাণকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারি।

বাড়ির ভেতরের প্লাস্টারিং

একটা সময় ঘর বানানো হতো মাটি আর ছন দিয়ে, এরপর এলো টিন, আর তারপর পাকা দালানের ইটের ঘরে প্লাস্টার করা মসৃণ দেয়াল। এখন গ্রামে বা শহরে, ইন্টিরিয়র-এক্সটেরিয়র সব জায়গাতেই দেখা মেলে প্লাস্টার করা ওয়ালের।

বাড়ির ইটের দেয়ালের উপর প্লাস্টারিং আমাদের দেশের পাকা দালানে বহুল প্রচলিত। প্লাস্টার বাড়ির আস্তরণের পাশাপাশি বাড়ির দেয়ালকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। প্লাস্টার করার পর কাঠামো মজবুত ও মসৃণ হয় এবং আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কাঠামোকে রক্ষা করে।

অন্যান্য যেকোনো ম্যাটারিয়ালের থেকে প্লাস্টারের ব্যবহার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী। যেকোনো আঁকাবাঁকা সারফেইস, দেয়ালের ভেতরের ফাঁকা অংশ ভরাট করা কিংবা যেকোনো আকৃতির দেয়ালে মসৃণ ফিনিশিং দেওয়া সম্ভব প্লাস্টারের মাধ্যমে। বাড়ির ভেতরের প্লাস্টারিং বাইরের দেয়ালের প্লাস্টারিং এর থেকে পূরত্বে কম হয়ে থাকে।

প্লাস্টার করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান

১. সিমেন্ট
২. সাদা বালি (এফ এম ১.৩ থেকে ১.৭)
৩. পানি
৪. বাঁশ
৫. প্লেইন শিট
৬. দড়ি

বালি ও সিমেন্ট মিশ্রণের অনুপাত ও নিয়ম

আর.সি.সি. পৃষ্ঠতলে সিমেন্ট ও বালির অনুপাত হচ্ছে ১:৪ এবং ইটের পৃষ্ঠতলে ১:৬ ও ১:৫। এখন জেনে নেওয়া যাক বালি ও সিমেন্ট মিশ্রণের নিয়মাবলী।

  • বালি ও সিমেন্টের গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্লাস্টারের বালি ভালো করে চালতে হবে যাতে কোনো রকমের ময়লা বালির সাথে না থাকে। এরপর উপরোক্ত অনুপাতে বালি ও সিমেন্ট মিশিয়ে নিতে হবে।
  • বালি ও সিমেন্ট শুকনা অবস্থায় এমনভাবে মেশাতে হবে যেন মশলা দেখতে অভিন্ন লাগে বা ছাই রঙের মতো মনে হয়। তারপর পরিমিত পানি দিয়ে পুনরায় ভালো করে কোদাল দ্বারা কেটে মেশাতে হবে। মনে রাখতে হবে, বানানো মশলা ১ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
    প্লাস্টার করার সময় লক্ষণীয় বিষয়

প্লাস্টার করার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে নিতে হবে, নাহয় প্লাস্টারের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। প্লাস্টারের মাঝে কোনো ময়লা থেকে গেলে সেটি প্লাস্টার ঠিকভাবে সেট হতে বাধা দেয়, এতে প্লাস্টারে ফাটলসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই অবশ্যই ব্যবহৃত সকল জিনিস প্লাস্টারের আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

যে দেয়ালে প্লাস্টার করা হবে, সেই সারফেইসটি আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং হালকা পানি দিয়ে নিতে হবে। নাহলে দেয়ালের ময়লা প্লাস্টার থেকে পানি শুষে নেয়, এতে প্লাস্টার সেট হওয়ার প্রয়োজনীয় সময় পায় না। এসব কিছুই প্লাস্টারের স্থায়িত্বে প্রভাব ফেলে।

দেয়ালে প্লাস্টার করার আগে ফ্লোরে প্লাস্টিক বা পেপারের আস্তরণ দিয়ে নিতে হবে যাতে প্লাস্টার পড়ে ফ্লোর নষ্ট না হয়। কেননা প্লাস্টার ফ্লোরে পড়লে সেটি পরিষ্কার করা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় আর কাঠের ফ্লোর হলে প্লাস্টারের স্থায়ী দাগ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর.সি.সি. পৃষ্ঠতল ভালো করে চিপিং করতে হবে। চিপিং হচ্ছে হাতুড়ির সরু পাশ দিয়ে দেয়ালে খোদাইকরণ। অবাঞ্ছিত কোনো ময়লা থাকলে তুলে ফেলতে হবে। পানি দিয়ে পৃষ্ঠতল ধুয়ে ফেলতে হবে। শুকনা পৃষ্ঠতলে প্লাস্টার করলে তা ফেটে যাবে।

ব্রিক পৃষ্ঠতলে ইটের গাঁথুনির পৃষ্ঠতল আগের মতোই পরিষ্কার করতে হবে। শ্যাওলা বা লবণ থাকলে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ইটের গাঁথুনির জয়েন্টগুলো পরিষ্কার করতে হবে। দেয়ালের পৃষ্ঠতলে উঁচু হয়ে থাকা ইটের অংশ ভালোভাবে কেটে-ছেঁটে দেয়াল মোটামুটি সমতলে আনার পর প্লাস্টার লাগানোর উপযুক্ত করতে হবে।

প্লাস্টার করার আগে সিমেন্ট-বালির মিশ্রণ দিয়ে ৩”X৩” মাপের ৫’ থেকে ৬’ পর পর পায়া করতে হবে। প্রয়োজন হলে পুরুত্ব কমানোর জন্যে পায়া করার সময় দুই/এক জায়গায় ছেঁটে নিতে হবে।
আর. সি. সি. পৃষ্ঠতলে গ্রাউটিং (পানিতে শুধু সিমেন্টের মিশ্রণ) ব্যবহার করতে হবে।
ভালো প্লাস্টার করতে হলে অবশ্যই পুরুত্ব ঠিক রাখতে হবে। কোনো কারণে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেড়ে গেলে সেই স্থানে অবশ্যই ডাবল প্লাস্টার সিস্টেমে প্লাস্টার করতে হবে। অর্থাৎ প্লাস্টারের পুরুত্ব ১.৫” হলে প্রথমবার ১” করে উলম্ব ও অনুভূমিক বরাবর লেভেল ঠিক করে প্লাস্টার করে রাখতে হবে এবং পরের দিন হাফ ইঞ্চি প্লাস্টার করে ফিনিশিং দিতে হবে।

প্লাস্টারে কখনোই ড্রাই মর্টার ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না, আমাদের দেশের মিস্ত্রিদের মাঝে এই প্রবণতা আছে। ড্রাই মর্টার ব্যবহারে প্লাস্টার খসে পড়তে পারে, দেয়ালে ফাটল ধরতে পারে। এছাড়া রং করার আগে ঘষার সময় প্লাস্টার উঠে আসতে পারে।

একই দেয়ালের প্লাস্টারের কাজ একদিনেই শেষ করার চেষ্টা করতে হবে। একই সারফেসে কয়েকদিন ধরে প্লাস্টার করলে আগের প্লাস্টারের সাথে পরের প্লাস্টার মিশতে চায় না, বরং একটা স্থায়ী অসমতল সারফেসের তৈরি হয়।

ট্রাই স্কেল বা মাটামের সাহায্যে কলাম বা বিম উলম্ব ভাবে আছে কিনা দেখে নিতে হবে। প্লাস্টার সমান হয়েছে কিনা দেখার একটি কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে লাইট টেস্ট। একটি টর্চ লাইট নিয়ে দূর থেকে সারফেসের উপর ফেললে, যে কোনো উঁচু-নিচু বা ত্রুটি ধরা পড়ে।

প্লাস্টার গুলানো অর্থাৎ মসলা ছাপানোর সাথে সাথেই প্লাস্টার করা যাবে না, অল্প কিছু সময় হালকা শুকানোর জন্য দিতে হবে। নাহলে দেয়ালে লাগানোর সাথে সাথে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

আলাদাভাবে অনুপাত অনুসারে বালি-সিমেন্ট মিক্স করে তা নরম মশলার সাথে মেশাতে হবে, কখনোই আলাদা আলাদাভাবে বালি কিংবা সিমেন্ট দেওয়া যাবে না, এতে প্লাস্টারের মান নষ্ট হয়।

মর্টার গুলানোর পর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে, নাহলে দলা পাকিয়ে প্লাস্টারের মান নষ্ট হয়ে যায়, ক্ষেত্রবিশেষে শক্ত হয়ে থাকে বসতে চাইবে না দেয়ালে।

প্লাস্টার শেষে সাধারণত ২৪ ঘন্টা পর থেকে ৭-১৪ দিন পর্যন্ত কিউরিং করতে হবে, দিনে কমপক্ষে দুইবার। কংক্রিটের মতো প্লাস্টারের মশলা তৈরিসহ কিউরিং এর কাজেও পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে সময় লিখে রাখতে হবে দেয়ালে যেদিন প্লাস্টার করা হয়েছে, তাহলে হিসেব রাখতে সুবিধা হবে।

প্লাস্টারকৃত সমতল পৃষ্ঠের মধ্যে ফোস্কা সৃষ্টি হওয়াকে ব্লিস্টারিং বলে। এটা হয় মূলত সদ্য প্লাস্টারকৃত সারফেস পানির সংস্পর্শ পেলে। তাই এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্লাস্টারের সমতল পৃষ্ঠে এলোমেলো যে সরু ফাটলগুলো দেখা যায় তাকে ক্রেজিং বলে, একে অন্য ভাষায় চুল ফাটলও বলে। প্লাস্টারের মর্টার সঠিকভাবে প্রস্তুত না করলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্লাস্টার শেষে সারফেসে যে গভীর ফাটল দেখা দেয় তাকে ক্র্যাকিং বলে। ত্রুটিপূর্ন প্লাস্টারের কারণে যেমন ক্র্যাকিং হতে পারে, তেমনি ব্রিক ওয়ালের ফাটলের কারণেও ক্র্যাকিং হতে পারে। ফাটল বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। যেমন-

  • সিমেন্ট ও বালির মিক্সিং রেশিও কিংবা মেশানোর পদ্ধতি সঠিক না হলে।
  • অগ্নি কিংবা অন্যান্য কারণে অত্যাধিক তাপের প্রভাবে।
  • প্লাস্টারের প্রসারণ ও সংকোচনের ফলে।
  • প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশী হলে।
  • পানি ও সিমেন্টের অনুপাত সঠিক না হলে।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিমেন্ট ব্যবহার করা হলে।
  • সবচেয়ে বড় কারণ হলো ঠিকমত কিউরিং না করলে।

সর্বোপরি, প্লাস্টার বাড়ির দেয়ালের স্থায়িত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্লাস্টার করার আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে এসব ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।

বর্ষাকালে নির্মাণসাইটে সতর্কতা

অনেক ক্ষেত্রেই বসন্ত আর শরৎকালকে বড় কোনো নির্মাণ প্রজেক্টের সূচনার জন্য খুব ভালো সময় মনে করা হয়। যেকোনো নির্মাণ প্রজেক্টে বাজেট প্রাপ্তি, জনবলের সুলভ সরবরাহ এবং কন্ট্রাক্টর ও সাব কন্ট্রাক্টরদের জন্য আমদানি-রপ্তানির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারার সুযোগ থাকায় মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে প্রচুর কাজ শুরু হতে দেখা যায়। তাই যখন কাজ শুরু হয়, তখন পরিবেশ সাধারণত সুন্দর ও সহনশীল থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। আর বাংলাদেশে নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় জুড়ে চলার প্রবণতায় প্রায় প্রতিটি নির্মাণ প্রজেক্টকেই বৃষ্টি মোকাবেলা করতে হয় একাধিকবার। 

প্রজেক্টের কয়েকটি ধাপের কাজের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি কিছু সুবিধা নিয়ে আসে। মাটি নরম থাকলে ফাউন্ডেশনের জন্য মাটি খোঁড়া সুবিধাজনক হয়। এছাড়া নির্মাণকাজে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বৃষ্টির কিছু সুবিধাজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অসুবিধার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বৃষ্টি নির্মাণকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরকম কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

  • আর্দ্রতার জন্য কাঠের ফ্রেম বেঁকে বা ফেটে যাওয়া।
  • মাপমতো বানানো উপকরণ সংকুচিত হয়ে বা ফুলে গিয়ে জায়গামতো ফিট না হওয়া। 
  • ধাতব উপকরণে মরিচা ধরে যাওয়া।
  • সাইটের মাটি সরে গিয়ে ফাউন্ডেশন বা স্ট্রাকচারকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া।

এসব কারণে অনেক সময় বর্ষাকালে নির্মাণকাজ বন্ধও করে দিতে হয়। কিন্তু তাতে নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়িক দিকগুলোতে নেমে আসে ক্ষতি এবং মালিক বা ডেভেলপারের জন্যও এমন সময়ক্ষেপণ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললে বর্ষাকালেও নির্মাণ নিরাপদ ও সচল রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নিই সেই বিষয়গুলো।

নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিন

নির্মাণে সংশ্লিষ্ট লোকবলই আপনার নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি। সকলে সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকাটা যেমন আপনার নির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সেরকম আপনার নির্মাণের টাইমলাইন থাকা চাই দুর্ঘটনামুক্ত। যেকোনো ঋতুতেই তাই নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। কিন্তু বর্ষাকালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি বলে চিন্তাও করতে হবে বেশি। কাজের জন্য গামবুটসহ সকল নিরাপত্তা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এর সাথে অস্থায়ী রেলিং বা সেফটি নেট ব্যবহার করতে কনট্রাক্টরকে তাগাদা দিন। সাথে সাথে শ্রমিকদের বৃষ্টিতে বাইরে কাজ করতে হলে তাদের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী গিয়ারও নিশ্চিত করুন যেন তারা সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আপনার কাজটি শেষ করতে পারেন।  

আগে থেকে পরিকল্পনা করুন

ছাদ ঢালাইয়ের মতো কিছু বিশেষ কাজ বৃষ্টি চলাকালীন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঢালাইয়ের পর যখন কিউরিং দরকার হয়, তখন বৃষ্টির পানি আপনার পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে একটি সময় নির্ধারণ করে আগেই প্ল্যান করে নিন। স্থপতি থেকে ভবনের নকশা ও ইঞ্জিনিয়ার থেকে স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং নেবার পরই নির্মাণের টাইমলাইন নিয়ে নির্মাতার সাথে কথা বলুন। বর্ষা শুরুর আগে সংবেদনশীল অংশ, যেগুলোর পানি বা আর্দ্রতায় ক্ষতি হতে পারে, পলিথিনে সেগুলো মুড়িয়ে নিন এবং স্ক্যাফোল্ডিংসহ আলগা ভারী নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ করে ফেলুন।

বৃষ্টি নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ

ধাতব ও কাঠের তৈরি সামগ্রীর পানিতে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই বর্ষার আগেই এগুলোকে পানি থেকে নিরাপদে রাখতে অস্থায়ী শেড জাতীয় কাঠামো তৈরি করা উচিৎ। এছাড়া নির্মাণে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও এই শেডের নিরাপত্তায় আনা উচিৎ এবং নিশ্চিত করা উচিৎ যেন পানি জমে থাকে এরকম কোনো অংশে আলগা বৈদ্যুতিক তার বা সংযোগ না থাকে। কম খরচে পানিরোধী ট্র্যাপ তৈরি করাও একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। বর্তমানে খুব সহজে নির্মাণ করা যায় এরকম অস্থায়ী কাঠামো উপকরণ কিনতেও পাওয়া যায়।

সঠিক উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার

আধুনিক সময়ে অনেক নির্মাণ উপকরণ ও যন্ত্রাংশই পানিরোধী। যেমন- বর্তমানে পানিরোধী রুফশিট পাওয়া যায়। যেটি দিয়ে চাল নির্মাণ করলে অনেক কম খরচে শ্রমিকদের থাকা ও বাইরে কাজ করার স্থানগুলোকে পানি থেকে নিরাপদ করা যায়। এছাড়া কাঠের উপরে বিশেষ কোটিংয়ের ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে, যেগুলো সিজন করা বা না করা দুই ধরনের কাঠকেই পানি থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই একটু বেশি বিনিয়োগ করে এধরনের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কিনলেই বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখতে হয় না।

কংক্রিট ও বৃষ্টির সম্পর্ক

অবশ্যই নির্মাণের টাইমলাইন এমন হওয়া উচিৎ যেন বর্ষা আসার আগেই কংক্রিট কাস্ট করে ফাউন্ডেশন তৈরি করে নির্মাণ গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়। এই কাজ বর্ষার সময় করা যায় না। কংক্রিটের ফুটিং বসানোর আগেও পানি জমে নেই- এটা নিশ্চিত করাটা আবশ্যক। নির্মাণের অন্য অংশেও কাস্টিংয়ের জন্য কংক্রিট প্রস্তুত করা ও ঢালাই করা উচিৎ নয় বৃষ্টি চলমান অবস্থায়। এতে করে পানি ঢুকে মিক্সচারের অনুপাত পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আলাদাভাবে। চলুন দেখে নিই সেগুলো-

১. আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বালি ও সিমেন্ট পানি শোষণ করে আর্দ্র হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায় এদের সাথে পর্যাপ্ত অনুপাতে পানি মেশালেও পানি বেশি হয়ে যেতে পারে ও মিশ্রণকে দুর্বল করে ফেলতে পারে।

২. অনেক মিক্সচার তৈরিতে অ্যাডমিক্সচার ব্যবহার করে বন্ধন বাড়ানো হয় কংক্রিটের। এগুলো কংক্রিট বা ব্লকে ফাঁপা জায়গা ও ফাটল কমাতে সাহায্য করে। মূলত কংক্রিটের ভেতর পানির কণা জমে থাকা প্রতিরোধ করে এই উপাদান, যাতে পরে পানি বের হয়ে এসে ফাটল তৈরি করতে না পারে। এই উপাদানটি বর্ষায় কাজ করতে বাধ্য হলে ব্যবহার করা উচিৎ।

৩. যখন কনক্রিট ঢালাই করা হবে সেসময় পরিবেশ আর্দ্র বা বাতাস বেশি থাকা কোনোভাবেই কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নয়। টানা ১২ ঘণ্টা শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে এই নিশ্চয়তা না থাকলে সেটা বন্ধ রাখাই নিরাপদ।

৪. বর্ষাকালে অনেক সময় প্রচণ্ড বাতাস বা ঝড় হতে পারে। এ সময়েও ঢালাই করা উচিৎ নয়। ঝড় বা বাতাসের কারণে শাটারিংয়ের বাইরে চুইয়ে আসতে পারে কনক্রিট। যেটি পরবর্তীতে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে বা ফাটল তৈরি করতে পারে।

৫. প্লাস্টিকের তারপুলিন বা অন্য যেকোনো ধরনের বৃষ্টিরোধী ক্যানভাস ঢালাইয়ের সময় তৈরি রাখা উচিৎ। আর বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও ঢালাইয়ের স্থান ঢেকে ফেলা উচিৎ আগেই। কংক্রিটের সাথে খোয়াও ঢেকে রাখা দরকারি।

৬. বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক সময় কংক্রিটের সারফেসের মান নষ্ট করে দিতে পারে। সামান্য একটি স্ক্র্যাচ টেস্টের মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এটি বুঝতে পারবেন। এরকম কোনো সমস্যা হলে বৃষ্টি থামার সাথে সাথে একই কংক্রিট বা সিমেন্ট স্প্রে দিয়ে এটিকে মেরামত করা উচিৎ। তবে চিকন স্ল্যাবের বড় ক্ষতি হলে সেটি সরিয়ে নতুন করে কাস্ট করাটাই নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। 

নির্মাণে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সতর্কতার অভাব নির্মাণের অংশবিশেষ বা গোটা প্রজেক্টকেই অনেকক্ষেত্রে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা, স্মার্ট প্ল্যানিং ও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে আপনাকে এই সময় নির্মাণ কাজ চালাতে হবে। ছোট ছোট স্মার্ট পদক্ষেপই পারে কঠিন আবহাওয়াতেও আপনার নির্মাণকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে। 

ঢালাইয়ের পর কিউরিং করার সঠিক উপায়

বাড়িঘর নির্মাণের সময় আমাদের নানান অসুবিধা এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই সকল বিষয়ে তাই আগে থেকে ধারণা থাকলে স্বপ্নের আবাসস্থল হবে নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের উপমহাদেশে বাড়ির ছাদ ঢালাই করা উৎসবের উপলক্ষ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এ বাড়ি ঢালাইয়ের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে কিউরিং।  

কিউরিং কী? 

কংক্রিট স্থাপন ও কম্পেকশন (জমে শক্ত হয়ে যাওয়া) করার পর কিছু দিন অবিরামভাবে কংক্রিটকে আর্দ্র রাখার পদ্ধতিকে কিউরিং বলে। 

কিউরিংয়ের পদ্ধতি

কিউরিংয়ের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা হয়:

১. পানি ছিটিয়ে (Sprinkling of Water)

২. মাটি দ্বারা ঘের তৈরি করে (Ponding)

৩. ছায়াময় করে (Shading)

৪. পৃষ্ঠদেশ আচ্ছাদিত করে (Covering the Surface) 

সময়কাল

কংক্রিটের মান এবং ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ২৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ২১-২৮ দিন অবধি কিউরিং করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে কংক্রিট জমাট বেঁধে চূড়ান্ত শক্ত অবস্থায় আসলে অর্থাৎ ৮-১০ ঘণ্টা পর কিউরিং প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। তবে আবহাওয়া এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিউরিংয়ের যথাযথ কার্যকারিতার জন্য কংক্রিট ফিনিশিংয়ের পরপরই কিউরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে ছাদ বা ফ্লোর ঢালাইয়ের পর প্রখর রোদ বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য ফিনিশিংয়ের পরপরই প্লাস্টিক কাভার দিয়ে ঢালাই স্থান ঢেকে রাখতে হবে। এ সময় কংক্রিটের উপরিভাগে শতভাগ প্লাস্টিক কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্লাস্টিক যেন সরে না যায় এজন্য কাঠের ব্লক অথবা ইটের সাহায্যে আটকে রাখতে হবে। শুষ্ক অবস্থা পর্যবেক্ষণে কভার সরিয়ে পানি স্প্রে করে আবার প্লাস্টিক বিছিয়ে দিতে হবে। 

কিউরিং করার সময়সূচি

কিউরিং করার সময়সূচি বেশ কয়েকটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো:

১. মিশ্রণের অনুপাত

২. কংক্রিটের স্ট্রেংথ

৩. কনক্রিটের আকার ও আকৃতি

৪. আবহাওয়া ও পরিবেশ

৫. ভবিষ্যতে ব্যবহারের প্রকৃতি

সাধারণভাবে, আমাদের দেশে কিউরিং করার সময় নিম্নোক্ত হিসাব অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

কাজের বিবরণকিউরিং শুরু করার সময়যতদিন কিউরিং করতে হবে
মাস কংক্রিটের কাজে (১:৩:৬)   (ফাউন্ডেশন)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ইটের গাঁথুনির কাজ (সকল)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ড্যাম্পপ্রুফ কোর্স সিমেন্ট কংক্রিট কাজে (১:২:৪)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
লিনটেল, সানশেডের কাজে২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ছাদ ঢালাইয়ের কাজে২০ ঘণ্টা পর২১ দিন পর্যন্ত
ফ্লোর ঢালাই সিমেন্ট কংক্রিটের কাজে   (১:৩:৬)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
১ ইঞ্চি পেটেন্ট স্টোন সিমেন্ট কংক্রিটের (১:২:৪) কাজে১৫ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত

নির্মাণ কাজের সেন্টারিং বা সাটারিং খোলার সময়সূচি:

কাজের বিবরণসেন্টারিং (সাটারিং) খোলার সময়
কলাম ও বীমের পার্শ্বদিক৩  দিন পর
বীমের তলা২১  দিন পর
ছাদের স্ল্যাবের তলা (১৫‘ স্প্যান পর্যন্ত)১৫  দিন পর
ছাদের স্ল্যাবের তলা  (১৫‘ স্প্যানের  চেয়ে  বড় পর্যন্ত)২১  দিন পর

  মোজাইক এবং জলছাদের মিশ্রণ পদ্ধতির ছক:

কাজের বিবরণমিশ্রণ সামগ্রীমিশ্রণ  অনুপাত
গ্রে-মোজাইক (০.৫ ইঞ্চি পুরু)সিমেন্ট : মার্বেল১ : ১
জলছাদ (৪ ইঞ্চি পুরু) কাজেচুন : সুরকী : খোয়া২ : ২ : ৭

কংক্রিট মিশ্রণ পদ্ধতির ছক (নমুনা)

কাজের বিবরণকাজের বিবরণ        মিশ্রণ  অনুপাত
মাস-কংক্রিট (ফাউন্ডেশনের তলায়)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
ড্যাম্প-প্রুফ কোর্স (D.P.C)সিমেন্ট : বালি :খোয়া(১ : ১.৫ : ৩)
বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোর (কংক্রিট)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
১” থেকে ১.৫” পুরু (পেটেন্ট স্টোন)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
১” পুরু মোজাইক বেস (তলা)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
আর.সি.সি. (কংক্রিট) [২৬০০ পি.এস.আই]সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
আর.সি.সি. (কংক্রিট) [২৯০০ পি.এস.আই]সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ১.৫: ৩)
দরজা-জানালা ফ্রেম দেওয়ালে আটকানোর মশলাসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
গ্রীলের ফ্রেম আটকানো মশলাসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
স্যানিটারি পাইপ কংক্রিটসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
ড্রেন-পিটের কংক্রিট বেস (তলা)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
সেপটিক ট্যাংকের কংক্রিটসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
সেপটিক ট্যাংকের ছাদসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)

(তথ্যসূত্র: বাড়ি নির্মাণ গাইড, লেখক: পুরকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী) 

সাধারণভাবে ছাদ বা ফ্লোর কিউরিং এর ক্ষেত্রে ঢালাইয়ের ১০ ঘণ্টা পর পুরো কাস্টিং এরিয়াতে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে কিউরিং করা হয়ে থাকে। কলাম এবং বীমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী কিউরিং পেতে ফর্ম ওয়ার্ক বা সাটার ধরে রাখতে হবে। কলামের ক্ষেত্রে সাটারিং উঠিয়ে ফেলার পরেও ভেজা চট দিয়ে জড়িয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কাঠের সাটারিং ব্যবহারের পূর্বে তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া উচিৎ। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি ঢালাইয়ের স্থান নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দিনে ৫ থেকে ৭ বার কিউরিং করতে হবে।  

নিয়মমাফিক কিউরিং না করা হলে ঢালাইয়ের গুণগত মান কমে আসে, ফলে সম্পূর্ণ কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া ক্ষয় আর আর্দ্রতাজনিত কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মনে রাখতে হবে, ভালো মানের কংক্রিট পেতে ঢালাইয়ের পর কিউরিং যথাযথ হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। 

বাড়ি বানাবেন? জেনে নিন ব্রিক সোলিং সম্পর্কে

বাড়ি নির্মাণের সময় লক্ষ্য রাখতে হয় খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারে। কিছু কাজ ক্ষেত্রবিশেষে দৃশ্যমান থাকে, আবার কোনো কোনো কাজ দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু এর প্রতিটি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা কঠিন। এরকম একটি কাজই হচ্ছে সোলিং।

সোলিং কী? কোথায় করা হয় সোলিং? কীভাবে হিসাব করা হয় এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ? আসুন জেনে নিই এক নজরে।

ব্রিক সোলিং কী?

ভবনের ভিত্তি বা ফাউন্ডেশনে, মেঝেতে, কলাম/পিলারের নিচে, রাস্তার সাবগ্রেড স্তরের উপরে সাধারণত এক বা দুই স্তরে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর এই ইটের মাঝে যে ফাঁকা স্থান থাকে তা পূর্ণ করা হয় বালি দিয়ে। নির্মাণের পরিভাষায় একেই বলা হয় সোলিং। 

ফুটপাথে, রাস্তায়, গ্রাম্যপথে, দালানের মেঝেতে, বাগানের ভিতরে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কংক্রিটের ভিতের নিচে এরকম ইটের সোলিং করা হয়ে থাকে। 

কেন করা হয় সোলিং?

সোলিংয়ের উপরে যে ভার থাকে তা সাবগ্রেড স্তরের উপর ছড়িয়ে দিতে মূলত সোলিং করা হয়। সাবগ্রেড স্তরের মাটির ভারবহন ক্ষমতা দরকারের চেয়ে কম হলে সোলিং করে মাটির উপর সাব-বেজ তৈরি করা হয়। সাব-বেজ মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

Rigid বা Flexible Pavement এর চেয়ে অনেক কম খরচে মাটির রাস্তাকে উন্নত করতে সোলিং করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ‘৮০-র দশকের শেষ ভাগে ও ‘৯০ এর দশকে প্রচুর গ্রাম্য রাস্তা সোলিং করে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নত করে কাদামুক্ত করা হয়েছিল।

কংক্রিট বা গাঁথুনির কাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিমেন্ট-বালি-পানির মিশেল বা মর্টার (যাকে স্থানীয় ভাষায় মশলা বলা হয়) থেকে পানি চুঁইয়ে মিশ্রণের শক্তি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি মোকাবেলা করতে ইটের সোলিংয়ের ফাঁকে বালি দিয়ে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে নিশ্ছিদ্র সমতল তৈরি করা হয় ও তা নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হয়। 

সোলিংয়ের প্রকারভেদ

সোলিং মূলত ইট বিছানোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মূলত তিন ধরনের সোলিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

১. ফ্ল্যাট বা সোজা সোলিং  (Flat Soling)

২. হেরিং-বোন বন্ড সোলিং (Herring-Bone Bond Soling)

৩. কোনাকুনি বা ডায়াগোনাল সোলিং (Diagonal Soling) 

কোথায় ব্যবহার করা হয় সোলিং?

উপকরণের সহজলভ্যতা, শ্রমের স্বল্পমূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আমাদের দেশে ইট সবচেয়ে সুলভ মূল্যের নির্মাণ উপকরণ। তাই সোলিংয়ের কাজে অনেক আগে থেকেই ইট ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন কাজে সোলিং করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-

– ইমারতের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিতে।

– কলাম/পিলার ইত্যাদির নিচে।

– রাস্তা তৈরির সময় সাবগ্রেড স্তরের নিচে।

– কালভার্ট তৈরির সময় অ্যাবেটমেন্ট এবং উইং দেয়ালের নিচে।

– ঘরের মেঝেতে। 

– জমি বা ঘরের সীমানা প্রাচীরের নিচে।

– লন, বাগান বা মহল্লার ভেতরের রাস্তা তৈরিতে।

– রিটেইনিং দেয়ালের নিচে।

সোলিংয়ের খরচের হিসেব

সোলিংয়ের কাজে খরচের হিসেব করতে গেলে দুটি ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।

১। ইটের আকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা

২। গাঁথুনির প্যাটার্ন ও উক্ত প্যাটার্নে ইটের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা।

নিচে একটি উদাহরণ দিয়ে এদের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হলো।

সোলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ইটের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল

= ২৫.৪ সেমি. X ১২.৭ সেমি.
= ০.২৫৪ মি. X ০.১২৭ মি.
= (০.২৫৪ X ০.১২৭) বর্গমিটার

ফ্ল্যাটসোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর ফ্ল্যাটসোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৩১টি। হেরিং-বোন বন্ড সোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর হেরিং-বোন বন্ড সোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৫২টি।

ক্ষেত্রফল অনুসারে এভাবে বের করে নিন আপনার প্রয়োজনীয় সোলিং-এ দরকারি ইটের সংখ্যা। ইটের বাজার মূল্য দিয়ে গুণ করুন। স্থপতি বা প্রকৌশলীর কাছে জেনে নিন প্রয়োজনীয় ইটের সাথে কী পরিমাণ পরিমাণ বালি, সিমেন্ট ও পানি মেশাতে হবে তার অনুপাত। এগুলোর বাজার মূল্য বের করে ইটের দামের সাথে যোগ করলে আপনি নিজেই বের করে ফেলতে পারবেন সোলিংয়ের খরচের আদ্যোপান্ত। 

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: ডার্ট ব্যালান্স কীভাবে করে?

নিজের জায়গায় নিজের বাড়ি করার স্বপ্ন মানুষের পরম আরাধ্য। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে বাড়ি বানানোর জন্য কিছু অত্যাবশ্যকীয় কাজ আমাদের করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো আর্থওয়ার্ক কিংবা জমির মাটির ব্যবস্থাপনা। জমি তৈরি করা যেকোনো নির্মাণকাজের প্রথম ধাপ।

জমির প্রকৃতি, মাটির প্রকরণ, মাটিতে পানির উপস্থিতির পরিমাণ, বালু, কাদা ইত্যাদির অনুপাত সঠিকভাবে পরিমাপ করে এরপরে জমি সঠিকভাবে পরিচর্যা করে তবেই তা বাড়ি তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়। আর বাড়ি তৈরির জন্য জমিতে নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নকে আর্থওয়ার্ক বলে। আর্থওয়ার্ক একটা স্থিতিশীল, দীর্ঘস্থায়ী বাড়ি নির্মাণের জন্য অত্যন্ত আবশ্যক বিষয়।

ডার্ট ব্যালান্স কী?

সাধারণত এক জায়গার মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী জায়গার মাটির উপর ফেলে সে জায়গার মাটি উঁচু করা হয়- এই প্রক্রিয়াটিকেই ডার্ট ব্যালান্স বলে। পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ কমানোর জন্য এবং প্রয়োজনমাফিক জমির বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা কম বেশি করার জন্য জমি থেকেই এক জায়গার মাটি সরিয়ে আরেক জায়গায় দেওয়া হয় এর জন্য।

সাধারণত কাট এবং ফিল পদ্ধতিতে ডার্ট ব্যালান্স করা হয়। ল্যান্ডস্কেপিং-এর অংশ হিসেবে কিংবা মাটি ভরাট করে গ্রাউন্ড ফ্লোর উন্নীত করতে ডার্ট ব্যালান্স করতে হয়।

মাটির বিভিন্ন স্তরের প্রকৃতি এবং অঞ্চলভেদে, একেক জায়গায় একেকভাবে ডার্ট ব্যালান্স করতে হয় নকশাকৃত বাড়ির প্রয়োজনমাফিক। সাধারণত রাস্তার লেভেল থেকে উঁচুতে বাড়ি বানাতে হয়। এজন্য সাইটে মাটি ফেলে এরপরে এতে সঠিক গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে সাইটের স্থান বিশেষ উঁচু করতে হয়। তাই সাইটের মধ্যে যে স্থান নিচু করা উচিত, সেখান থেকে মাটি নিলে বাইরে থেকে মাটি আনার খরচ ও পরিশ্রম দুইটাই কমে যায়, জমির টপ সয়েল সুরক্ষিত হয়।

ডার্ট ব্যালান্স কীভাবে করতে হয়?

কাটা ঢালগুলোর খুব কমই ২:১ অনুপাতে (অনুভূমিক থেকে উল্লম্ব মাত্রাগুলো) তৈরি হয়। রোডওয়ে বা রেলের কাটা অংশগুলো পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর তুলনায় উচ্চতায় কম হয়। অপারেশনাল দৃষ্টিকোণ থেকে রাস্তার কাটা অংশগুলোর সাথে সম্পর্কিত অনন্য পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বায়ু দূষণকারী উপাদানগুলো, কাটা অংশ দ্বারা নির্মিত ‘উপত্যকাগুলোতে’ অবস্থান করতে পারে।

বিপরীতভাবে, শব্দদূষণকারী উপকরণগুলো কাটা বিভাগগুলো দ্বারা হ্রাস করা সম্ভব হয় যেহেতু নিচু রোডওয়ের নকশা দ্বারা শব্দের সঞ্চালনের লাইনের কার্যকর বাধা তৈরি করা সম্ভব হয়। ভরাট সেকশনগুলো কোনো রোডওয়ে বা ট্র্যাকবডের উঁচু সেকশান হিসাবে তৈরি করা হয়।

ভরাট সেকশানের পরিবেশগত প্রভাবগুলো সাধারণত বায়ু দূষণ রোধের ক্ষেত্রে অনুকূল, তবে শব্দ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে, আশেপাশের বাসিন্দাদের এক্সপোজার সাধারণত বৃদ্ধি পায়, কারণ শব্দ জ্যামিতিতে শব্দ প্রাচীর এবং অন্যান্য ধরনের শব্দ পথের বাধা কম কার্যকর হয়।

আর্থ রিটেইনিং স্ট্রাকচার কী?

রিটেইনিং কাঠামো মাটি এবং/অথবা শিলা ধরে রাখতে প্রস্তুত করা হয়। এগুলো সাধারণত গ্রেডে পরিবর্তনগুলো সামঞ্জস্য করতে, ঢাল আটকে রাখতে কিংবা ঢালের মাটি যাতে খননকৃত গর্তে না আসে সেজন্য ব্যবহৃত হয়। একটি বিস্তৃত অর্থে, আর্থ রিটেইনিং কাঠামোগুলো তাদের ফেসিং অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে, যেমন: এটি যদি ৭০ ডিগ্রির চেয়ে বেশি হয় তবে এগুলো সাধারণত প্রাচীর ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

সাধারণত, জমি খনন করে পাশের মাটি যাতে খননকৃত গর্তে না পড়ে সেজন্য দেওয়া হয়। বিভিন্ন কাজের উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন রকমের আর্থ রিটেইনিং স্ট্রাকচার তৈরি ও ব্যবহার করা হয়, যেমন- অভিকর্ষজ, শীটপাইল, ক্যান্টিলিভার ইত্যাদি। আসুন জেনে নেই কোনটির উপযোগিতা কী।

গ্র্যাভিটি রিটেইনিং ওয়াল

– গ্র্যাভিটি রিটেইনিং ওয়াল কেবলমাত্র পার্শ্বীয় পৃথিবীর চাপ প্রতিরোধ করার জন্য তার নিজের ওজনের উপর নির্ভর করে।

– সাধারণত, এই প্রকারের প্রাচীরটি বিশাল কারণ এটি মাটির চাপকে লড়াই করার জন্য উল্লেখযোগ্য মাধ্যাকর্ষণ বোঝা প্রয়োজন।

– এই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ প্রাচীর কাঠামোটি নকশাকৃত করার সময় স্লাইডিং, ওভারট্রিং এবং ভারবহন বাহিনী বিবেচনা করা হবে।

– এটি বিভিন্ন উপকরণ যেমন কংক্রিট, পাথর এবং রাজমিস্ত্রি ইউনিট থেকে তৈরি করা যেতে পারে।

– এটি ৩ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার জন্য অর্থনৈতিক।

পাইলকৃত রিটেইনিং ওয়াল

– একে অপরের সাথে সংলগ্ন করে কাঠ কিংবা কংক্রিটের পাইলগুলো চালনা করে পাইল ধরে রাখার প্রাচীরটি নির্মিত হয়।

– পাইলকে এমন গভীরতায় বাধ্য করা হয় যা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে যথেষ্ট যা প্রাচীরের উপরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে।

– এটি অস্থায়ী এবং স্থায়ী উভয় কাজে নিযুক্ত করা হয়।

– পাইলড দেয়ালগুলো উচ্চ শক্তিকে ধরে রাখার উপাদান সরবরাহ করে যা পার্শ্ববর্তী কাঠামো বা বৈশিষ্ট্যগুলোতে প্রায় কোনও ঝামেলা ছাড়াই বৃহত খনন গভীরতায় পার্শ্বীয় চাপ ধরে রাখতে সক্ষম।

– স্টিল শীট ব্যবহার করে একটি ঢাল বা খনন করে প্রয়োজনীয় গভীরতা পর্যন্ত তৈরি করা হয় তবে এটি খুব বেশি চাপ সহ্য করতে পারে না।

– শীটের পাইলটি ৬ মিটার উচ্চতা অবধি প্রাচীরটি ধরে রাখে

– সাধারণত শহরে এই রকমের স্ট্রাকচার বেশি ব্যবহৃত হয় যদি ফাউন্ডেশন গভীর হয়।

এছাড়াও আরো কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো বড় বড় সিভিল কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর্থওয়ার্ক যেকোন স্ট্রাকচারের স্থায়িত্ব ও মজবুত করে রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এক্সপার্টের পরামর্শ নিয়ে আমাদের আর্থওয়ার্কের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে। সঠিক নিয়মমাফিক আর্থওয়ার্ক সবার জীবনের নিরাপত্তা দান করে আর আমাদেরকে আমাদের এক টুকরো জমিতে উপহার দেয় স্বপ্নের নীড়।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: শাটারিং কী ও কীভাবে

আমাদের বাসা-বাড়ি নির্মাণের কাজে কংক্রিট এক অতি পরিচিত সুলভ উপকরণ। কংক্রিট সাধারণত সিমেন্ট, বালি, খোয়া, মশলার মিশ্রণকে পানির সাথে মিশিয়ে তরল করে ছাঁচে ঢালা হয়।

সাইটে এই ছাঁচ বা বক্স, যাতে তরল কংক্রিট ঢেলে তাকে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে এই তরল কংক্রিট পড়ে, প্রবাহিত হয়ে শক্ত হতে পারে, এরকম ছাঁচ ও এ সংক্রান্ত কাজকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় ফর্মওয়ার্ক বা শাটারিং বলা হয়।

এই ছাঁচ বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা যায় এবং অভ্যন্তরীণ টেক্সচারের উপর ভিত্তি করে কংক্রিটের গায়ে এই টেক্সচারও দেয়া যায়। আসুন আমরা জেনে নেই শাটারিং কী ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত।

কী কাজে লাগে

ফর্মওয়ার্ক কংক্রিটটিকে কাঙ্ক্ষিত আকার এবং আকৃতিতে রূপ দেয় এবং এর অবস্থান ও অ্যালাইনমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে।ফর্মওয়ার্কগুলো অস্থায়ী কাঠামো হিসেবেও কাজ করে যা ভার বহন করে এসব কিছুর: এটির নিজস্ব ওজন + ফ্রেশ মিশ্রিত কংক্রিট + কনস্ট্রাকশন লাইভ লোড (উপাদান, মানুষের ভার, লজিস্টিকাল উপকরণ)।

ফর্মওয়ার্ক হলো একটি ক্লাসিক অস্থায়ী কাঠামো এই অর্থে যে, এটি দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে এবং এটি কংক্রিট স্থাপনের সময় কয়েক ঘণ্টা উচ্চভাবে লোড করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে এটি অন্যান্য অস্থায়ী কাঠামোর মতো ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য ডিসম্যান্টেল করা সম্ভব।

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্য

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

১. সাশ্রয়ী ও নিরাপদ

২. ডেড ও লাইভ লোড নিতে পারার ক্ষমতা

৩. উপযুক্ত সাপোর্ট দেওয়া সাপেক্ষে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা

৪. জয়েন্টগুলো লিকপ্রুফ হতে হবে

৫. যদি শাটার সরাতে হয়, তাহলে তা যেন কংক্রিটের ক্ষতি না করে

৬. শাটারিং এর উপকরণ যাতে বার বার ব্যবহার করা যায়

৭. ওজনে যাতে কম ভারী হয়

৮. ফর্মওয়ার্কের সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনরকম ভাজ বা কুঁচকানো না থাকে

৯. সহজে নির্মাণযোগ্য এবং সহজে বহন করে সরানো যায়

শাটারিংয়ে কী কী ব্যবহার করা যায়?

বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে শাটারিং করা যায়। আসুন জেনে নিই কী কী দিয়ে আমরা শাটারিং করতে পারি।

১. কাঠ

সর্বাধিক পরিচিত শাটারিং উপকরণ হলো কাঠ। স্টিলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাটার ব্যবহার করার আগে কাঠ ব্যবহার হতো সবচেয়ে বেশি। কাঠের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো, এটি অতি সহজেই তৈরি করা যায় এবং সরিয়ে ফেলা যায়। লোকাল কাঠ দিয়ে বানানো সম্ভব হয়। স্টিলের ফ্রেমের চেয়ে সস্তা, ও কাজের জন্য অধিক ফ্লেক্সিবল।

এছাড়া কাঠের গায়ে সুন্দর প্রাকৃতিক টেক্সচার থাকে যা অনেক সময় দালানের এস্থেটিক্স বাড়াতে ব্যবহার করা যায়। কাঠ দিয়ে সুবিধামতো মডিউল তৈরি করে সুবিধাজনকভাবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এছাড়া কাঠের ফ্রেমিং ছোট প্রজেক্টের জন্য বেশি সুবিধাজনক।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কাঠের মান ভাল থাকে এবং এতে উইপোকা বা অনাকাঙ্ক্ষিত উপকরণের উপস্থিতি যেমন- ছত্রাক, আর্দ্রতা ইত্যাদি না থাকে।

২. প্লাইউড

সাধারণত কাঠের পাশাপাশি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়। মসৃণ তল পেতে প্লাইউডের ব্যবহার সুবিধাজনক। এর ব্যবহার মূলত শিথিং, ডেকিং ও ফর্ম লাইনিংয়ের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। কাঠের মতো প্লাইউডও সস্তা, ওজনে হাল্কা এবং সুবিধামতোভাবে ব্যবহার করা সহজ।

৩. স্টিল ফ্রেমওয়ার্ক

ইস্পাতের ফর্মগুলো কাঠের ফর্মওয়ার্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং তাদের পুনঃব্যবহার করা যায় বেশি। ইস্পাতের ফর্মগুলো আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং দ্রুততার সাথে ইনস্টল করা এবং তা ভেঙে ফেলা যায়।

ইস্পাত ফর্ম ব্যবহার করে এক্সপোসড কংক্রিট পৃষ্ঠের গুণমান ভালো এবং এ জাতীয় পৃষ্ঠগুলোর জন্য আর পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্কটি কংক্রিট থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্ক সঙ্কুচিত বা মুড়িয়ে যায় না।

৪. অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক

প্রায়শই প্রিকাস্ট ফর্মওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যেটি সাইটে ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম শক্তিশালী এবং হালকা এবং ফলস্বরূপ কম সাপোর্ট এবং বন্ধন প্রয়োজন। হাল্কা অংশগুলো ডিফ্লেকশন বেশি করে, তবে কেবল নির্মাতাদের সুপারিশ অনুসরণ করে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

৫. গ্লাস ফ্রেমওয়ার্ক

এই ধরনের ফর্মওয়ার্কটি ইন্টারলকিং প্যানেল বা হালকা প্লাস্টিকের তৈরি মডিউলার সিস্টেম থেকে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক ছোট প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে ভাল কাজ করে যেমন- স্বল্প ব্যয়যুক্ত আবাসন সংস্থাগুলোর পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোতে।

প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক হালকা এবং পানি দিয়েই এর বড় অংশ একাধিকবার পুনঃব্যবহারের জন্য উপযুক্ত থাকার সময়, পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। এর মূল দূর্বলতা হলো এটি কাঠের তুলনায় কম নমনীয়তা রয়েছে, যেহেতু অনেকগুলো উপাদান পূর্বনির্দিষ্ট।

কাঠামোগত প্রকারভেদ

উপাদান দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা ছাড়াও, কাঠামো সমর্থিত বিল্ডিং উপাদানগুলো অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:

  • ওয়াল ফর্মওয়ার্ক
  • বীম ফর্মওয়ার্ক
  • ফাউন্ডেশন ফর্মওয়ার্ক
  • কলাম ফর্মওয়ার্ক

সমস্ত ফর্মওয়ার্ক ধরনের কাঠামো তাদের সমর্থন করা কাঠামো অনুযায়ী ডিজাইন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট নির্মাণ পরিকল্পনাগুলো উপকরণ এবং প্রয়োজনীয় বেধ ধরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ফর্মওয়ার্ক নির্মাণে সময় লাগে, এবং এটি কাঠামোগত ব্যয়ের ২০ এবং ২৫% এর মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

ফর্মওয়ার্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ দালানের সঠিক নির্মাণের জন্য। উপযুক্ত এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদেরকে শাটারিং ও ফর্মওয়ার্ক করতে হবে যাতে করে আমাদের স্বপ্নের দালান হয়ে উঠে সুন্দর, টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: পাইলিং এর ইতিবৃত্ত

ভবন নির্মাণ করতে গেলে প্রারম্ভিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি হচ্ছে পাইলিং। বহুতল ভবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা এবং কাঠামোগত স্থিতির জন্য পাইলিং একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। কিন্তু কোথায় পাইলিং প্রয়োজন হবে, কতটুকু পাইলিং করতে হবে অথবা পাইলিং করার ক্ষেত্রে খরচের হিসেবটাই বা কীভাবে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে নির্মাণ কাজে হাত দেবার আগেই।

পাইলিং কী?

পাইলিং মূলত ভবন বা স্থাপনার জন্য এক ধরনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি, যা মাটিতে দণ্ডায়মান স্থাপনার ভর একটি স্ট্রাকচারাল পদ্ধতি থেকে মাটির নিচে স্থানান্তর করে ও স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখে।

ভবনের ভার বহন ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে কোনো ভবনে পাইলিং করার প্রয়োজন আছে কিনা। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে তলার সংখ্যাও এক্ষেত্রে একটি নিয়ামক। অনেক সময় একে মাটির গভীরে প্রবেশ করা কলামের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে।

কেন করা হয় পাইলিং?

যেকোনো স্থাপনাকে সুদৃঢ় করাই মূলত পাইলিং-এর কাজ। এছাড়া এর কাজগুলো হলো মূলত-

১. ভবনের ভার বহন করা।

২. ভবনের চাপে বা অবস্থানের কারণে যেন মাটি সরে না যায় বা ক্ষয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।

৩. ভবনের দ্বারা তৈরি হওয়া ঘূর্ণন মোমেন্ট বা তীর্যক বলকে প্রতিরোধ করা।

৪. অনেক ক্ষেত্রে জমিতে বালি দিয়ে জমি ভরাট করা হয়। পাইলিং এই বালি-মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৫. ভবনের ভারকে নরম বা সংকোচনশীল পদার্থের মধ্যে দিয়ে মাটির শক্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়া।

কী কী ধরনের পাইলিং হয়?

  • কাস্ট ইন সিটু (CAST IN-SITU) পাইল

বাংলাদেশে প্রচলিত পাইলিং পদ্ধতির মধ্যে কাস্ট-ইন-সিটু পাইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়এটি মূলত সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে, যার ব্যাস ১৮ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারেবিশেষ প্রয়োজনে এটি আরো বাড়ানো যায়। আর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে মাটির স্তরের উপর, যা সয়েল টেস্ট রিপোর্টে পাওয়া যায়।

  • স্যান্ড (SAND) পাইল

স্যান্ড পাইলের ধারণাটি অপেক্ষাকৃত নতুন। সাধারণত কম তলা বিশিষ্ট স্থাপনা, যেখানে মাটির ভারবহন ক্ষমতা কম, সেখানে স্যান্ড পাইল করে সেটি বৃদ্ধি করা যায় এবং এধরনের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরতবে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভবপর নয়।

  • প্রি-কাস্ট (PRE-CAST) পাইল

প্রি-কাস্ট পাইলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাইল আগে কাস্টিং বা ঢালাই করে নেয়া হয় সুবিধামতো স্থানে (অবশ্যই মাটির অভ্যন্তরে নয়)তারপর এটি আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বা হাতুড়ি পেটা করে জমির ভুমিতে যথাস্থানে প্রবেশ করানো হয়।

  • শোর (SHORE) পাইল

যে সমস্ত স্থাপনায় বেসমেন্ট থাকে, কিংবা অন্য কোনো কারণে মাটি কাটতে হয়, সেখানে পাশের মাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেখানে শোর পাইল করা হয়। এটি করা হয় মূলত, মাটির পার্শ্বচাপ প্রতিরোধ করার জন্য। এর সাথে শিয়ার ওয়ালের তুলনা করা যায়। এটা প্রিকাস্ট বা কাস্ট ইন সিটু বা টিম্বার পাইল হতে পারে।

  • টিম্বার (TIMBER) পাইল

টিম্বার পাইল হলো গাছকে (সাধারণত শাল গাছের কাণ্ড) পাইল হিসেবে ব্যবহার করা। এটি ব্যবহার করা হয় কম তলা বিশিষ্ট ভবনে।

পাইলিং-এর হিসেব

পাইলিং-এর ক্ষেত্রে রড, রিইনফোর্স করা কনক্রিট এবং বোরিং এই তিনটি জিনিসের হিসেব করা হয়। একটি সাধারণ পাইলিং (যা কাস্ট ইন সিটু ধরনের) এর হিসাব নিম্নরূপ:

কাস্ট ইন সিটু পাইলের হিসেব (1:1.5:3)

  • পাইলটির ব্যাস 18″
  • গভীরতা 60′-0″
  • পাইলটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মোট 8টি 16mm ব্যাসের রড ব্যবহার করা হয়েছে
  • কাট অফ লেভেল আরো 2′-0″ ধরা আছে
  • 10mm রড দিয়ে স্পাইরালের কাজ করা আছে

প্রথম L/4 এবং শেষ L/4 এ স্পাইরালের স্পেসিং 4″C/C, বাকিটা 6″C/C ধরতে হবে। কভারিং আদর্শ পরিমাণ ধরে নিতে হবে।

Estimate for 18″Dia Boring = 1×62′-0″ = 62.00 Rft.

Estimate for RCC (1:1.5:3) = 1x{(πx1′-6″x1′-6″)/4}x62′-0″ = 109.56 Cft.

Estimate for Reinforcement:

For 16mm Dia Main Rod. = 8×62′-0″ = 496.00 Rft.

= 238.57 Kg. Lap = 8×2′-0″ = 16.00 Rft. = 7.69 Kg. For 10mm Dia Spiral

= Nπ{(D+d)+8d}

= 152π{(1′-0″+0.032)+(8×0.032)}

= 152π(1.032+0.256) = 615.04 Rft.

= 115.01 Kg. Lap

= 15×1′-0″

= 15.00 Rft = 2.80 Kg.

Total Rod = 364.00 Kg. = 3.64 qntl.

মনে রাখবেন, প্রত্যেক ভবনের পাইলিং-এর হিসেব একইরকম হবে না। তবে এই ধাপ ও ফর্মুলাতে বসিয়েই হিসেব করা হয়। এভাবে হিসেব করে আপনি পাইলিং-এর আগেই আপনার ভবনের পাইলিং-এর জন্য দরকারি রড, সিমেন্ট, বোরিং-এর হিসেব বের করতে পারেন। এরপর বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে মিলিয়ে নিলেই পেয়ে যাবেন আপনার ভবনের পাইলিং-এর খরচের হিসাবটি।

ভবনের ফাউন্ডেশন: বাড়ির নিরাপত্তার প্রথম ধাপ

ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিকে বলা যায় ভবনের রক্ষাকর্তা। যেকোনো ভবন শুরু হয় ফাউন্ডেশন তৈরি করার মাধ্যমে। মাটির নিচে দরকারি জায়গা খুঁড়ে ফাউন্ডেশন তৈরি করার দৃশ্য যেকোনো নির্মাণ সাইটে গেলে চোখে পড়বে হরহামেশাই। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের গুরুত্বও অপরিসীম।

ভবনের নিজের, ভবনে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীর ওজন বহন করে ফাউন্ডেশন। এছাড়া প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগ থেকে ভবনের রক্ষাকবচ হিসাবেও কাজ করে এটি। আসুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ফাউন্ডেশনের খুঁটিনাটি।

ফাউন্ডেশন কী?

কোনো প্রকৌশল কাঠামোর যে অংশ মাটির নিচে থাকে তাকে ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন বা Sub Structure বলে। ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন কাঠামোর সর্বনিম্ন অংশ, যার সাহায্যে কাঠামোর নিজস্ব ওজন এবং অন্যান্য আরোপিত ওজনকে মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করা হয়। ভিত্তি মূলত মূল ভবন বা সুপার স্ট্রাকচার (Super Structure) এর বেইজ হিসাবে কাজ করে।

অর্থ্যাৎ কাঠামোর নিজস্ব ওজন এবং এর উপরস্থ অন্যান্য ওজনকে মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করার জন্য কাঠামোর যে ভূনিম্মস্থ অংশ কংক্রিট ব্লক, পাইল, গ্রিলেজ ইত্যাদির সমন্বয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়, তাকেই ভিত্তি বা Foundation বলে।

ফুটিং কী?

নিজের বা প্রযুক্ত ওজনের কারণে কাঠামোর বসে যাওয়া (Settlement) প্রতিরোধ করার জন্য কাঠামোর লোডকে মাটির শক্ত স্তরে ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হয়। এজন্য ভিত্তির সবচেয়ে নিচের অংশকে ধাপে ধাপে বড় করে প্রশস্ত করা হয়। এ অংশকেই আসলে ফুটিং বলে। ফুটিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হতে পারে। আগেকার দিনে দোতলা গ্রাম্যবাড়ির ক্ষেত্রে কাঠ (Timber) এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। তবে অধিক লোড আরোপিত হলে ফুটিংকে বর্তমানে আর.সি.সি. ( R.C.C. ) পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।

ফাউন্ডেশনের প্রকারভেদ

ভিত্তি (Foundation) প্রধানত দুই প্রকার –

১. গভীর ভিত্তি ( Deep Foundation)

২. অগভীর ভিত্তি (Shallow Foundation)

গভীর ভিত্তি

যখন সুপার স্ট্রাকচারের সবচেয়ে নিচের অংশকে অনেক গভীরে স্থাপন করা হয়, তখন তাকে গভীর ভিত্তি বলে।

ফুটিংয়ের প্রকারভেদ অনুসারে এটি তিন প্রকার-

  • পাইল ফাউন্ডেশন
  • কফার ড্যাম
  • কেইসন বা ওয়েল ফাউন্ডেশন 

অগভীর ভিত্তি

যখন সুপার স্ট্রাকচারের সবচেয়ে নিচের অংশকে মাটির অভ্যন্তরে স্বল্প গভীরতায় স্থাপন করা হয়, তখন তাকে অগভীর ভিত্তি বলে।

 

ফুটিং ব্যবহার সাপেক্ষে এটি চার প্রকার-

  • স্প্রেড ফুটিং (Spread Footing)
  • কম্বাইন্ড ফুটিং (Combined Footing)
  • স্ট্রাপ বা ক্যান্টিলিভার ফুটিং (Strap or Cantilever Footing )
  • ম্যাট বা র‍্যাফট ফুটিং (Mat or Raft Footing)

ফাউন্ডেশনের গুরুত্ব

একটি কাঠামো বা Superstructure এর উপর নানা ধরনের লোড কাজ করে। ফাউন্ডেশনের কাজ এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনা ও অতিরিক্ত ওজনকে ভূমিতে বড় এলাকার উপর ছড়িয়ে দেওয়া। কাঠামোর উপর নানা ধরনের লোড কাজ করতে পারে। তবে তিন ধরনের লোড অবশ্যই কাজ করবে। 

১. ভবনের নিজের ওজন (Dead Load) 

২. প্রযুক্ত ওজন (Live load) 

৩. বাতাস প্রযুক্ত চাপ (Wind load)

এর বাইরে পরিবেশের অবস্থাভেদে পানি, তুষার, বালি ইত্যাদির ওজন প্রযুক্ত হতে পারে। তবে একটি আলাদা ধরনের চাপ সম্পর্কে ফাউন্ডেশন তৈরির সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে ভূমিকম্পের প্রভাব।

এক্ষেত্রে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ফাউন্ডেশন শক্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। সাথে সাথে এটিও মনে রাখতে হবে, ফাউন্ডেশন তৈরি একটি অত্যন্ত হিসেবী কাজ ও বিশেষজ্ঞ ডিজাইনারের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তাই ফাউন্ডেশন নির্মাণের সময় যা যা অবশ্যই করতে হবে –

  • জমির সয়েল টেস্ট করিয়ে নিন এবং কী ধরনের ফাউন্ডেশন দরকার হবে সেটি সয়েল টেস্টের নিরিখে সিদ্ধান্ত নিন।
  • নিজে কিংবা মিস্ত্রি বা ঠিকাদারের উপর নির্ভর করে ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। এমনকি সাধারণ আলাপের ভিত্তিতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞ ও পেশাদার ইঞ্জিনিয়ারের সহায়তা নিন যিনি এ পেশায় সক্রিয়। এ সম্পর্কে দরকারি ড্রয়িং তার কাছ থেকে সংগ্রহ করুন। সে অনুসারে পেশাদার ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রকৌশলীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ফাউন্ডেশন ও ফুটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করুন। 
  • ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নিন। প্রকৌশলীর নির্ধারিত সময় পর পর ভবন ইনস্পেকশন করান, যেন ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। 

আপনার বাড়িটি যদি পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে ফেরোস্কেনিং ও কোরকাটিংয়ের মাধ্যমে সহজেই ফাউন্ডেশনের বর্তমান অবস্থা আপনি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। শুরুতে ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে নিতে হবে। এজন্য প্রতি বর্গফুটে খরচ হতে পারে ৫ থেকে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ ২,০০০ বর্গফুটের ছয় তলা একটি ভবনের মূল্যায়ন করতে খরচ হবে মাত্র ৬০ হাজার টাকা।

আর নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে প্রকৌশলী শুরুতেই আপনাকে ফাউন্ডেশনের স্থায়িত্বকাল (সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ বছর) সম্পর্কে ধারণা দেবেনএছাড়া রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কেও অবগত করবেন তিনি। ফাউন্ডেশন যেহেতু ভবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি, তাই এর নির্মাণের ব্যাপারে থাকুন বিশেষভাবে সতর্ক।