কংক্রিট স্ল্যাবের ব্যবহার ছাড়া নির্মাণ কাজ প্রায় অকল্পনীয়। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ দালানের স্ল্যাবই রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব। কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে এই ফাটল দেখা দিতে পারে। জেনে নেয়া যাক কংক্রিট স্ল্যাবের ফাটল-বৃত্তান্ত।

কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল ধরার কারণ:
রড-সিমেন্ট কংক্রিট নির্মিত সমতল পাতলা ঢালাইকে স্ল্যাব বলে। এর উপরের ও নিচের দুই তলই সাধারণত সমান্তরাল হয়ে থাকে। এই স্ল্যাবেই বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে ফাটল যাকে ক্র্যাক (crack) বলা হয়। সাধারণত যেকোনো দালানে দুই ধরনের ফাটল পরিলক্ষিত হয়- কাঠামোগত ফাটল ও অকাঠামোগত ফাটল। কংক্রিট স্ল্যাবের ফাটল কাঠামোজনিত ফাটলের মধ্যে পড়ে। কাঠামোজনিত ফাটল সাধারণত দুটি কারণে হয়ে থাকে- নকশাজনিত ত্রুটি এবং নির্মাণকাজে ত্রুটি।

নকশাজনিত ত্রুটি:
দালানের কাঠামোগত ডিজাইন সঠিকভাবে করা না হলে, এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সঠিকভাবে কাঠামোগত নকশা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজন বিল্ডিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে এবং বিল্ডিং কোড নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা এবং বিল্ডিংয়ে আগত সকল প্রকার লোড এবং বাতাস, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য পার্শ্বীয় লোডের হিসাব সঠিকভাবে করা।
বাংলাদেশে প্রায়শই দেখা যায় এক কাজের জন্য নির্মিত ভবন অন্য কাজে ব্যবহার হতে। যেমন রেসিডেন্সিয়াল লোড হিসাব করে কাঠামো নকশা করে তাতে অফিস বা ফ্যাক্টরির কাজ করলে সেই ক্ষেত্রে লোড হিসাবে তারতম্য হওয়াতে ফাটলজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

বিল্ডিং নির্মাণের কাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সংশ্লিষ্ট সাইটের মাটি পরীক্ষা করা। এই মাটি পরীক্ষার কাজ সঠিকভাবে না করার কারণে এবং ভুল ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করার কারণে অনেকসময় ব্লিডিং হেলে পড়ে। আর এতে স্ল্যাবে ফাটল দেখা দিতে পারে।
তদুপরি, রডের সাইজ ও ডিজাইনে ভুল থাকার কারণেও দেখা দিতে পারে ফাটল। কোড অনুযায়ী রডের ডিজাইন করা উচিত।

নির্মাণজনিত ত্রুটি
অনেক সময় স্ল্যাবের কংক্রিট ক্লিয়ার কাভার না হওয়াতে জলীয় বাষ্প বা পানি ঢুকে কংক্রিট ও রিইনফোর্সমেন্টের গুণগত মান নষ্ট হয়ে ফাটল দেখা দেয়। বীম ও কলামের সংযোগস্থলে প্রয়োজনের বেশী রড ব্যবহার করলে কংক্রিট ঠিকমতো ঢুকতে না পারলেও ফাটল দেখা দেয়।
আরেকটি বড় কারণ হল কংক্রিট সঠিকভাবে মিক্স না করা ও ভুল অনুপাতের কংক্রিট মিক্স ব্যবহার করা।শুধুমাত্র তাই নয়- ইট, বালি, খোয়া ইত্যাদির গুণগত মানে ত্রুটি থাকলেও স্ল্যাবে ফাটল দেখা দিতে পারে।
ফাটলের আরেকটি কারণ হিসাবে উল্লখ করা যেতে পারে সঠিক সময়ের আগে সাটারিং খুলে ফেলা। এতে কংক্রিট পূর্ণ শক্তি পাওয়ার আগেই তার উপরে লোড পড়ার কারণে স্ল্যাব ফেটে যায়।

প্রতিকার:
স্ল্যাব তৈরির আগে ও ঢালাইয়ের সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হলে খুব সহজেই এড়ানো যায় ফাটল ধরার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব তৈরির সময় তাই নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা উচিৎ-
- বিল্ডিংয়ের কাঠামোগত নকশা প্রণয়নের সময় সঠিকভাবে বিল্ডিং কোড মেনে চলা।
- কংক্রিট মিক্স এর অনুপাত সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া।
- মাটির সয়েল টেস্ট অনুযায়ী কাঠামো নির্মাণ করা।
- বিল্ডিংয়ের লোড হিসাব করে কাঠামো নির্মাণ করা।
- সাইট অনুযায়ী দুর্যোগ বিবেচনা করে ভিত্তি প্রস্থর নির্মাণ।
- সাটারিং খোলার সময় সঠিকভাবে মেনে চলা।
- কংক্রিট এর উপাদানসমূহের গুণগত মান নিশ্চিত করা।
স্ল্যাবকে যেকোনো দালানের হৃৎপিণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা যায়। তাই স্ল্যাব নির্মাণ সঠিক না হলে পুরো দালান নির্মাণকাজই বৃথা হয়ে যাবে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে এবং যথাযথ তত্ত্বাবধানের আওতায় রেখে রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব নির্মাণ করা আবশ্যক।
No comment yet, add your voice below!