বর্তমান সময়ে আভিজাত্যপূর্ন ক্লাসিক ডিজাইনের সাথে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয়তায় সমান তালে এগিয়ে আছে সারল্যপূর্ণ আধুনিক ডিজাইন।
Continue readingবাড়ির কাজে হাত দিচ্ছেন: কী পরিকল্পনা দরকার?
আমরা মানুষ হিসেবে কেউ যেমন এক নই, বাড়ি নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলোও আলাদা। কিন্তু একইসাথে মনে রাখতে হবে, বাড়ির নকশা শুধু স্বপ্নের বাস্তবায়নই নয়, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কী কী মাথায় রাখতে হবে একটি বাড়ির নকশা করার সময়? আসুন দেখে নিই একনজরে।
আলো-বাতাস
বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় আমরা ধরে নিই যে, দক্ষিণমুখী বাড়ি হলে বাতাস আসবেই। আর সূর্য তো এমনিতেই পূর্ব দিকে উঠে তাই সকালের মিষ্টি রোদ চাইলে দক্ষিণ-পূর্বমূখী ফ্ল্যাটের সন্ধানে আমরা সবাই প্রায় যুদ্ধে নেমে পড়ি। অথচ ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে যেখানে ৩ কাঠার একটি জায়গাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তিনটি আলাদা বহুতল ভবন, এমনকি ভবনের সামনে ১০ ফিট রাস্তার মতো সুবিধা আপনি না-ও পেতে পারেন, সেখানে এই প্রাগৈতিহাসিক ধারণা নিয়ে বাড়ি করা নির্ঘাত বোকামি।
এজন্য চাই সিমুলেশন, কনটেক্সট এবং আলো ও বাতাসের স্বাস্থ্যকর মাপ সম্পর্কে ধারণা। জানা উচিৎ জানালা কেমন হলে আলো বাতাস বেশি আসবে, বুঝতে হবে ভেন্টিলেশনের নিয়মগুলোও। তবেই স্বাস্থ্যকর আলো বাতাসে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে নিরাপদে!
আসবাব–বান্ধবতা
অনেকেই ঘরের নকশা আর ঘর সাজানোকে আলাদা দুটি বিষয় মনে করেন এবং ঘর সাজানোর ব্যাপারটি বলতে বোঝেন কিছু আসবাবপত্র কেনাকে। আপনার ঘরের নকশা যদি কোনো আসবাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই ঘরে ওই আসবাব রেখে আপনি ঘরের সকল সুযোগ-সুবিধা কোনভাবেই পাবেন না।
আপনার খাট কোনদিকে মুখ করে থাকবে, কত বড় হবে আপনার ঘরের ক্লজেট? জানালার মাপের সাথে টেবিলের মাপ কীভাবে মিলবে? এসব প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে আপনার ঘরের নকশাতেই। মনে রাখবেন, একটি ঘর মানে শুধু চার দেয়ালের একটি বাক্স নয়, এটি আপনার প্রতিদিনের জীবনের শুরু এবং শেষ। তাই ঘরের আসবাব-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভবনের নকশা করবার সময়েই যত্নবান হতে হবে।
ঘরের মনস্তত্ত্ব
অনেকেই চান, তার কিনে নেওয়া জমির সম্পূর্ণটা জুড়েই তৈরি হোক বাড়ি। নষ্ট না হোক এক স্কয়ার ফুট জায়গাও। সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থে করা বাড়িতে এই চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের ঘর মানুষের মানসিক শান্তির জায়গা। পুরো জায়গা জুড়ে ঘর করলে আইন ভঙ্গের পাশাপাশি মানসিক অশান্তির আখড়া হয়ে উঠতে পারে আপনার স্বপ্নের বাড়ি।
তাই পরিকল্পনা করতে বসে ভাবতে হবে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ছোট-বড় সকল চাহিদার কথা। তাতে শুধু বসবাসই সুন্দর হবে না, বাঁচবে খরচও। যেমন, ছোট ফ্ল্যাটে অনেকেই এখন সার্ভেন্ট টয়লেটকে ব্যবহার করেন স্টোর রুম হিসাবে। নকশার সময়ই স্থপতিকে এ ব্যাপারে অবগত করলে অতিরিক্ত ওয়াটার ক্লজেট বা পানির লাইনে অতিরিক্ত সামগ্রী ব্যবহারের খরচ বেঁচে যেতে পারত। এছাড়া কোন ঘরের পাশে কোন ঘর হবে, কার সাথে কার যোগাযোগ কতটা জরুরি এ ব্যাপারে দরকার পেশাদার নকশাবিদের সাহায্য।
সাধ ও সাধ্যের সামঞ্জস্যতা
একটি বাড়ি তৈরির পেছনে সবারই একটি গল্প থাকে। অনেক পরিশ্রম করে মানুষ ঘর তৈরির টাকা জমান। অথচ যথেষ্ট পূর্বপরিকল্পনার অভাবে বা বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার ফলে অনেক সময়েই পছন্দমতো ঘরের হিসেব মিলে না।
রডের দাম আপনার ধারণার চেয়ে বেশি হলে কি আপনি আপনার পছন্দমতো টাইলস দেবেন না? অথবা, বাজেট শেষ হয়ে গেলে কি থাকতে শুরু করবেন অস্বাস্থ্যকর রংবিহীন বাসাতেই? কিংবা বন্ধ হয়ে বহুদিন ঝুলে থাকবে আপনার সাধের বাড়ি? এসব ব্যাপারে চাই পরিকল্পনা ও সমতা।
এজন্য আপনাকে নিতে হবে পেশাদার স্থপতি, প্রকৌশলী এবং দক্ষ ঠিকাদারের সাহায্য। আর যদি ডেভেলাপারের শরণাপন্ন হন, তিনি আপনার হয়ে এই পেশাদার সাহায্য গ্রহণ করবেন। তাই অভিজ্ঞ, বন্ধুসুলভ ও সফল ডেভেলপারের শরণাপন্ন হোন। এই পেশাদার সাহায্যের পিছনে বিনিয়োগ আপনার খরচ তো বাড়াবেই না বরং উপরে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে সাহায্য করবে প্রতিনিয়ত।
আপনার বাড়ি জীবাণুমুক্ত আছে তো? জেনে নিন উপায়গুলো
মানুষ সবসময়ই চায় নিজের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও টিপটপ রাখতে। এজন্য ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আমরা করে থাকি। এতে করে আমাদের বাসার পরিবেশ থাকে সুস্থ, সুন্দর, পরিপাটি এবং আমাদের মন মানসিকতা থাকে শান্তিপূর্ণ। সাথে সাথে আমাদের শরীরও থাকে সুস্থ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা উচিৎ। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আমাদের বাড়িঘর এবং এর আশেপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা যায়।
কেন পরিষ্কার রাখতে হবে?
বাতাসে চোখে দেখা যায় না এমন অনেক কিছু যেমন- ধুলাবালি, রোগজীবাণু ভেসে বেড়ায়। অসতর্ক মুহূর্তে সেগুলো আমাদের দেহে ঘরবাড়ির বিভিন্ন কিছু থেকেও প্রবেশ করতে পারে, যদি তা ঠিকমতো পরিষ্কার না করা হয়। আমাদের খাদ্যদ্রব্য আমরা কাঁচাবাজার থেকে কিনে আনি, এর সাথে চলে আসতে পারে অনেক মারাত্মক জীবাণু।
বাসার বাথরুমে, রান্নাঘরের খাবারের পাশে রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে পারে জীবাণু বহনকারী পোকামাকড় যেমন- তেলাপোকা, ইঁদুর ইত্যাদি। এসব জীব বহন করে অনেক মারাত্মক জীবাণু। এসব জীবাণুর হাত থেকে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের ঘরবাড়ি ও এর আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে?
সাধারণত বাসার মেঝে সবাই ঝাড়ু দিয়ে ধুলা সাফ করে। আর আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে ধুলা ঝেড়ে সাফ করা হয়। এরপরে পানি দিয়ে মুছে শুকিয়ে যাওয়ার পরে অনেকটাই ঘর পরিষ্কার হয়ে যায়। আরও জীবাণুমুক্ত করতে পানি দিয়ে মোছার সময়, স্যাভলন বা ডেটল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সাধারণত সারা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে একে জীবাণুমুক্ত করে ফেলা উচিৎ।
কিন্তু কিছু কিছু ঘরে শুধু এতটুকু করলেই সব হয়ে যায় না। আপনার ঘরের মেঝেতে কার্পেট থাকলে কার্পেট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যদিও আমাদের দেশে সাধারণত কার্পেট পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো হয় ভালমতো পরিষ্কার করার জন্য। রোদের কথা আসার সাথে একটি ছোট্ট জিনিস জেনে রাখা যাক- রোদ খুব ভালো জীবাণুনাশক, তাই ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস আসার সুযোগ থাকা উচিৎ যাতে করে অনেক জীবাণু রোদের আলোতে ধ্বংস হতে পারে। এবার ঘরের কিছু বিশেষ বিশেষ জায়গা কীভাবে পরিষ্কার করা যায় সেরকম কিছু বিষয় আসুন জেনে নিই।
রান্নাঘর
কাঁচাবাজার থেকে মাছ, মাংস, শাকসবজি কাঁচা অবস্থায় এনে প্রথমে রান্নাঘরে রাখা হয়। কাঁচা অবস্থায় এবং বাজার থেকে এসবের সাথে অনেক জীবাণু আসে যেগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এজন্য রান্নাঘরকে রাখতে হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত।
কাঁচা খাদ্যসামগ্রী কাটাকুটির পরে সে জায়গাটি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এসময় হাতে রাবার বা ওয়ান টাইম ল্যাটেক্স গ্লাভস ব্যবহার করা উচিৎ। সাধারণত ওয়াইপ্স বা পাতলা পরিষ্কার শুকনা কাপড় ব্যবহার করা উচিৎ এর জন্য। ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, ফ্রিজের হাতল, কাউন্টার টপ, চুলার পাশের জায়গা, চুলা, বেসিন এসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা অবশ্যই দরকার। সম্ভব হলে মাসে একবার ব্লিচিং পাউডার পরিমাণমতো পানিতে দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
বাথরুম
বাসার সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত স্থান হলো আমাদের বাথরুম। বাথরুমের পানির ট্যাপ, বেসিন, কমোড কিংবা প্যানে থাকে হাজারো জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া। এই জায়গাগুলো খুব সচেতনভাবে আমাদের পরিষ্কার করতে হবে।
টয়লেটের ফ্লাশের ঢাকনা, হ্যান্ডেল, কমোডে বসার স্থান এবং এর ঢাকনা, বেসিন এবং শাওয়ারের হ্যান্ডেল, লাইট সুইচ (অবশ্যই অফ থাকা অবস্থায়), বাথরুমের সব উপকরণ- এসব কিছুই উপযুক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন- বেসিন, কমোড, প্যান মাঝেমধ্যে হারপিক বা সোডা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও নিশ্চিত করতে হবে যাতে তা স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যাতে আসতে পারে।
এসব পরিচ্ছন্নতার কাজের পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালমতো হাত ধুতে হবে, যাতে আপনার হাতে জীবাণু লেগে না থাকতে পারে। ঘর পরিষ্কার করার সাথে সাথে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আবর্জনা বাড়ির পাশে ফেলে পরিবেশ ময়লা করা যাতে না হয়। আবর্জনা ফেলতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে।
ভাঙা টব, পাত্র, পানি জমতে পারে এমন বস্তু ভালমতো ফেলতে হবে ডাস্টবিনে, যাতে মশা না হতে পারে। এভাবে নিয়মমতো নিয়মিত ঘর এবং ঘরের আশেপাশে সচেতনভাবে পরিষ্কার করে রাখলে স্বাস্থ্য থাকবে ভালো, মন থাকবে প্রফুল্ল। আসুন সবাই নিজেদের বাড়িঘর এবং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার করে রাখি এবং সুস্থ থাকি।