করোনা-পরবর্তী সময়ে শ্রমিক নিয়োগ: যা যা মাথায় রাখা প্রয়োজন

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহতার নাম করোনাভাইরাস। করোনা পরবর্তী সময়ে ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে সকল ক্ষেত্রেই আসছে কাজ করার নতুন নিয়মনীতি। এসময়ে কর্মক্ষেত্রে সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য সকল শিল্পের মতো নির্মাণ শিল্পেও প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতামূলক বিশেষ ব্যবস্থা। এজন্য সাইটে বিভিন্ন ধাপে সঠিক উপায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। 

কাজ শুরুর পূর্বপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ

নির্মাণ কাজে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ রুখতে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সুষ্ঠু প্রয়োগ। নিম্নবর্ণিত পদক্ষপগুলোর সাহায্যে সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

১. নির্মাণকাজে যথাসম্ভব বড় শ্রমিক গ্রুপ নিয়োগ প্রত্যাহার করে ছোটো গ্রুপে কাজ বিভাজনের উদ্যোগ নিতে হবে।

২. কর্মরত সকল শ্রমিককে তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (PPE) প্রদান করতে হবে। এছাড়া ও নির্মাণের সাথে জড়িত সকল শ্রমিককে একাধিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মাস্ক প্রদান করতে হবে।

৩. সাইটে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার স্থান ও হাত ধোয়ার এবং বিশুদ্ধকরণের সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নির্মাণ সাইটে শ্রমিকদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি শ্রমিককে তার নিজস্ব যন্ত্রপাতি সেট সরবরাহ করতে হবে যাতে ছোঁয়াচে সংক্রমণের আশংকা না থাকে।

৫. কাছাকাছি বা পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা করতে হবে।

৬. নির্মাণ সাইটে পূর্বাবস্থার চেয়ে আরো জোরদার সুপারভিশন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।

শ্রমিকদের জন্য দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ

১. কাজ শুরুর পূর্বে শ্রমিকদেরকে কোভিড-১৯ এর বিস্তার এবং সংক্রমণ রোধে সরকার এবং WHO (World Health Organization) প্রণীত সকল দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে। কেননা, একমাত্র সঠিক সচেতনতাই পারবে এই মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ থেকে সবাইকে সাবধান রাখতে।

২. হাত সঠিকভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৬০% অ্যালকোহলযুক্ত) দিয়ে ধোয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রয়োগ এবং কাশি, থুতু ফেলার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে টিস্যুর ব্যবহার ও নির্দিষ্ট ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা জরুরি।

৩. সাইটে জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলোতে, যেমন- টয়লেট, ডাইনিংয়ে শ্রমিকদের ৬ ফুট দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং এসকল স্থানে নিরাপদ দূরত্ব নির্দেশক প্রতীক ব্যবহার করলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

৪. কোনো শ্রমিকের পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। 

৫. শ্রমিকদের কাজের সময়ে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব (৬ ফুট) বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. শ্রমিকদের প্রতিদিনের কাজের পর নিয়মিত জামা কাপড় সঠিকভাবে পরিষ্কারের ব্যাপারে অবহিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা কোভিড-১৯ প্রতিরোধী নয়। কাজেই ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও হাত সঠিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশাবলি প্রযোজ্য হবে।

সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের নির্দেশাবলী

১. প্রয়োজন ব্যতীত সাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং মনিটরিং , সুপারভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা।

২. সাইটে প্রবেশের পূর্বে সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা।

৩. সাইটে প্রবেশস্থানে স্ক্রিনিং এবং হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা রাখা।

৪. সাইটে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশের সময় যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. সাইটেই প্রবেশ এবং বহির্গমন গেইট সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।

৬. সাইটে প্রবেশের সময় উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তি এবং বয়স্ক, অসুস্থ এবং গর্ভবতী শ্রমিককে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

৭. সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় শ্রমিকদের সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধোয়া নিশ্চিত করা।

সর্বোপরি, সাইটে সঠিক নিরাপত্তার স্বার্থে আরো যা যা প্রয়োজন তা হলো:

১. কাজ করতে গিয়ে কারো লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গায় এবং টিস্যুর সাহায্যে কফ, থুতু ফেলার নির্দেশ প্রদানসহ দ্রুততম সময়ে তাদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

২. কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ি আসলে, ড্রাইভারদের যথাসম্ভব না নেমে, যথাস্থানে তা নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. হাত ধোয়ার জায়গা ও টয়লেটসহ পুরো সাইট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৪. সকল যন্ত্রপাতি ও বারবার স্পর্শ লাগে এমন সাইট এরিয়াগুলো প্রতিদিন নির্ধারিত সময় পর পর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৫. নিরাপদ পানি সরবরাহসহ শ্রমিকদেরকে ‘ওয়ান টাইম কাপ’ বা স্ব স্ব ব্যক্তিগত কাপ বা গ্লাস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

৬. কনস্ট্রাকশন সাইটের সকল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

৭. সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সময় ও কাজ ভেদে শিডিউল পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে একই সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন।

কন্সট্রাকশন সাইটের কাজে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক একত্রে কাজ করা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে কাজের সাথে জড়িত সকলকেই নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।

বর্ষাকালে নির্মাণসাইটে সতর্কতা

অনেক ক্ষেত্রেই বসন্ত আর শরৎকালকে বড় কোনো নির্মাণ প্রজেক্টের সূচনার জন্য খুব ভালো সময় মনে করা হয়। যেকোনো নির্মাণ প্রজেক্টে বাজেট প্রাপ্তি, জনবলের সুলভ সরবরাহ এবং কন্ট্রাক্টর ও সাব কন্ট্রাক্টরদের জন্য আমদানি-রপ্তানির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারার সুযোগ থাকায় মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে প্রচুর কাজ শুরু হতে দেখা যায়। তাই যখন কাজ শুরু হয়, তখন পরিবেশ সাধারণত সুন্দর ও সহনশীল থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। আর বাংলাদেশে নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় জুড়ে চলার প্রবণতায় প্রায় প্রতিটি নির্মাণ প্রজেক্টকেই বৃষ্টি মোকাবেলা করতে হয় একাধিকবার। 

প্রজেক্টের কয়েকটি ধাপের কাজের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি কিছু সুবিধা নিয়ে আসে। মাটি নরম থাকলে ফাউন্ডেশনের জন্য মাটি খোঁড়া সুবিধাজনক হয়। এছাড়া নির্মাণকাজে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বৃষ্টির কিছু সুবিধাজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অসুবিধার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বৃষ্টি নির্মাণকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরকম কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

  • আর্দ্রতার জন্য কাঠের ফ্রেম বেঁকে বা ফেটে যাওয়া।
  • মাপমতো বানানো উপকরণ সংকুচিত হয়ে বা ফুলে গিয়ে জায়গামতো ফিট না হওয়া। 
  • ধাতব উপকরণে মরিচা ধরে যাওয়া।
  • সাইটের মাটি সরে গিয়ে ফাউন্ডেশন বা স্ট্রাকচারকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া।

এসব কারণে অনেক সময় বর্ষাকালে নির্মাণকাজ বন্ধও করে দিতে হয়। কিন্তু তাতে নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়িক দিকগুলোতে নেমে আসে ক্ষতি এবং মালিক বা ডেভেলপারের জন্যও এমন সময়ক্ষেপণ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললে বর্ষাকালেও নির্মাণ নিরাপদ ও সচল রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নিই সেই বিষয়গুলো।

নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিন

নির্মাণে সংশ্লিষ্ট লোকবলই আপনার নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি। সকলে সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকাটা যেমন আপনার নির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সেরকম আপনার নির্মাণের টাইমলাইন থাকা চাই দুর্ঘটনামুক্ত। যেকোনো ঋতুতেই তাই নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। কিন্তু বর্ষাকালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি বলে চিন্তাও করতে হবে বেশি। কাজের জন্য গামবুটসহ সকল নিরাপত্তা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এর সাথে অস্থায়ী রেলিং বা সেফটি নেট ব্যবহার করতে কনট্রাক্টরকে তাগাদা দিন। সাথে সাথে শ্রমিকদের বৃষ্টিতে বাইরে কাজ করতে হলে তাদের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী গিয়ারও নিশ্চিত করুন যেন তারা সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আপনার কাজটি শেষ করতে পারেন।  

আগে থেকে পরিকল্পনা করুন

ছাদ ঢালাইয়ের মতো কিছু বিশেষ কাজ বৃষ্টি চলাকালীন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঢালাইয়ের পর যখন কিউরিং দরকার হয়, তখন বৃষ্টির পানি আপনার পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে একটি সময় নির্ধারণ করে আগেই প্ল্যান করে নিন। স্থপতি থেকে ভবনের নকশা ও ইঞ্জিনিয়ার থেকে স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং নেবার পরই নির্মাণের টাইমলাইন নিয়ে নির্মাতার সাথে কথা বলুন। বর্ষা শুরুর আগে সংবেদনশীল অংশ, যেগুলোর পানি বা আর্দ্রতায় ক্ষতি হতে পারে, পলিথিনে সেগুলো মুড়িয়ে নিন এবং স্ক্যাফোল্ডিংসহ আলগা ভারী নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ করে ফেলুন।

বৃষ্টি নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ

ধাতব ও কাঠের তৈরি সামগ্রীর পানিতে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই বর্ষার আগেই এগুলোকে পানি থেকে নিরাপদে রাখতে অস্থায়ী শেড জাতীয় কাঠামো তৈরি করা উচিৎ। এছাড়া নির্মাণে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও এই শেডের নিরাপত্তায় আনা উচিৎ এবং নিশ্চিত করা উচিৎ যেন পানি জমে থাকে এরকম কোনো অংশে আলগা বৈদ্যুতিক তার বা সংযোগ না থাকে। কম খরচে পানিরোধী ট্র্যাপ তৈরি করাও একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। বর্তমানে খুব সহজে নির্মাণ করা যায় এরকম অস্থায়ী কাঠামো উপকরণ কিনতেও পাওয়া যায়।

সঠিক উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার

আধুনিক সময়ে অনেক নির্মাণ উপকরণ ও যন্ত্রাংশই পানিরোধী। যেমন- বর্তমানে পানিরোধী রুফশিট পাওয়া যায়। যেটি দিয়ে চাল নির্মাণ করলে অনেক কম খরচে শ্রমিকদের থাকা ও বাইরে কাজ করার স্থানগুলোকে পানি থেকে নিরাপদ করা যায়। এছাড়া কাঠের উপরে বিশেষ কোটিংয়ের ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে, যেগুলো সিজন করা বা না করা দুই ধরনের কাঠকেই পানি থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই একটু বেশি বিনিয়োগ করে এধরনের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কিনলেই বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখতে হয় না।

কংক্রিট ও বৃষ্টির সম্পর্ক

অবশ্যই নির্মাণের টাইমলাইন এমন হওয়া উচিৎ যেন বর্ষা আসার আগেই কংক্রিট কাস্ট করে ফাউন্ডেশন তৈরি করে নির্মাণ গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়। এই কাজ বর্ষার সময় করা যায় না। কংক্রিটের ফুটিং বসানোর আগেও পানি জমে নেই- এটা নিশ্চিত করাটা আবশ্যক। নির্মাণের অন্য অংশেও কাস্টিংয়ের জন্য কংক্রিট প্রস্তুত করা ও ঢালাই করা উচিৎ নয় বৃষ্টি চলমান অবস্থায়। এতে করে পানি ঢুকে মিক্সচারের অনুপাত পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আলাদাভাবে। চলুন দেখে নিই সেগুলো-

১. আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বালি ও সিমেন্ট পানি শোষণ করে আর্দ্র হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায় এদের সাথে পর্যাপ্ত অনুপাতে পানি মেশালেও পানি বেশি হয়ে যেতে পারে ও মিশ্রণকে দুর্বল করে ফেলতে পারে।

২. অনেক মিক্সচার তৈরিতে অ্যাডমিক্সচার ব্যবহার করে বন্ধন বাড়ানো হয় কংক্রিটের। এগুলো কংক্রিট বা ব্লকে ফাঁপা জায়গা ও ফাটল কমাতে সাহায্য করে। মূলত কংক্রিটের ভেতর পানির কণা জমে থাকা প্রতিরোধ করে এই উপাদান, যাতে পরে পানি বের হয়ে এসে ফাটল তৈরি করতে না পারে। এই উপাদানটি বর্ষায় কাজ করতে বাধ্য হলে ব্যবহার করা উচিৎ।

৩. যখন কনক্রিট ঢালাই করা হবে সেসময় পরিবেশ আর্দ্র বা বাতাস বেশি থাকা কোনোভাবেই কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নয়। টানা ১২ ঘণ্টা শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে এই নিশ্চয়তা না থাকলে সেটা বন্ধ রাখাই নিরাপদ।

৪. বর্ষাকালে অনেক সময় প্রচণ্ড বাতাস বা ঝড় হতে পারে। এ সময়েও ঢালাই করা উচিৎ নয়। ঝড় বা বাতাসের কারণে শাটারিংয়ের বাইরে চুইয়ে আসতে পারে কনক্রিট। যেটি পরবর্তীতে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে বা ফাটল তৈরি করতে পারে।

৫. প্লাস্টিকের তারপুলিন বা অন্য যেকোনো ধরনের বৃষ্টিরোধী ক্যানভাস ঢালাইয়ের সময় তৈরি রাখা উচিৎ। আর বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও ঢালাইয়ের স্থান ঢেকে ফেলা উচিৎ আগেই। কংক্রিটের সাথে খোয়াও ঢেকে রাখা দরকারি।

৬. বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক সময় কংক্রিটের সারফেসের মান নষ্ট করে দিতে পারে। সামান্য একটি স্ক্র্যাচ টেস্টের মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এটি বুঝতে পারবেন। এরকম কোনো সমস্যা হলে বৃষ্টি থামার সাথে সাথে একই কংক্রিট বা সিমেন্ট স্প্রে দিয়ে এটিকে মেরামত করা উচিৎ। তবে চিকন স্ল্যাবের বড় ক্ষতি হলে সেটি সরিয়ে নতুন করে কাস্ট করাটাই নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। 

নির্মাণে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সতর্কতার অভাব নির্মাণের অংশবিশেষ বা গোটা প্রজেক্টকেই অনেকক্ষেত্রে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা, স্মার্ট প্ল্যানিং ও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে আপনাকে এই সময় নির্মাণ কাজ চালাতে হবে। ছোট ছোট স্মার্ট পদক্ষেপই পারে কঠিন আবহাওয়াতেও আপনার নির্মাণকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে।