বাড়ি বানানোর বেসিক: কেমন হবে বাড়ির ফ্রেমিং?

অধিক জনসংখ্যার এই দেশে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এবং সঠিক জ্ঞান না থাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন অনেকেই। সঠিক ধারণা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের বাড়ি কাঠামোগতভাবে হয়ে পড়ে দুর্বল আর বিপদজনক। অথচ বাড়ির কাঠামো নিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য জানা থাকলে সহজেই আপনি আপনার কষ্টে নির্মাণ করা বাড়ির গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারবেন। নির্মাণ সংক্রান্ত বেসিক তথ্যগুলো জানার ধারাবাহিকতায় এই আর্টিকেলে বাসার কাঠামো বা ফ্রেমিং কেমন হওয়া উচিৎ বা কত প্রকারের হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

ফ্রেমিংয়ের বৈশিষ্ট্য

স্থাপত্যের কাজে ফ্রেমিং (Framing) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেমিং এর মাধ্যমে ভবনের সাপোর্ট এবং আকার পাওয়া যায়। ভালো ফ্রেমিং এর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ। 

বৈশিষ্ট্যগুলো হলো – 

১। উপকরণের সহজলভ্যতা।

২। স্বল্পমেয়াদে স্থাপনার কাজ শেষ করার নিশ্চায়ক হবে।

৩। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভবনের ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস হয় কীনা দেখা।

৪। পরিবেশ দূষণ যতোটা সম্ভব কম করবে। 

৫। স্থাপনা যাতে দীর্ঘমেয়াদে মজবুত থাকে সেই দিকটা নিশ্চিত করবে।

ফ্রেমিং এর প্রকারভেদ

নির্মানশিল্পে বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং এর প্রচলন রয়েছে। বাড়ির নকশা ও ভারবহনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রেমিং ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং গুলো হচ্ছে – 

কাঠের ফ্রেমিং (Wood Framing) 

নির্মাণের জগতে সবচেয়ে পুরাতন এবং বহুল ব্যবহৃত ফ্রেমিং খুব সম্ভবত এই উড ফ্রেম। সহজলভ্য, বারবার ব্যবহার করা যায় এবং সাশ্রয়ী বলে বহু বছর ধরে ফ্রেমিং এর কাজে কাঠ জনপ্রিয়তার আসনে আছে। বড় বড় কাঠের গুড়ি প্রয়োজন মতো কেটে নিয়ে প্লেট, জয়েন্ট, র‍্যাফটার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই উপকরণের সুবিধা হল হাতেই যেমন বহন করা যায় তেমনি সাইটেই একে প্রস্তুত করে নেওয়া যায় প্রয়োজন মতো। কাঠের ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র দেয়ালে ড্রাইওয়াল, প্যানেলিং ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। অবশ্য আজকাল কাঠের ফ্রেমিং এর পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনার জন্য অন্য উপকরণের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এই ধরনের ফ্রেমিং এর স্থাপনার কাজে সময় কম লাগলেও এর কিছু অপকারী দিক ও আছে। কাঠ অগ্নি নিরোধ করতে পারেনা, সেই সাথে দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও খুব বেশি টেকসই না বলে আস্তে আস্তে এর ব্যবহার কমছে।

লাইট গজ স্টীল ফ্রেমিং (Light Gauge Steel Framing)

এই ধরনের ফ্রেমিং কাঠের ফ্রেমিং এর মতোই। পার্থক্য হল কাঠের পরিবর্তে লাইট গজ স্টীল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফ্রেমিং এ গ্যালভানাইজড কোটিং করা হয়ে থাকে ক্ষয়রোধের জন্য। মেটাল কাটিং যন্ত্রের সাহায্যে এই ধরনের স্টীলকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হয়। সাশ্রয়ী, অগ্নি নিরোধক এবং শক্তিশালী গুণাবলীর জন্য এই ফ্রেমিং এর ধরণ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে এই ফ্রেমিং বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Construction site background. Hoisting cranes and new multi-storey buildings. tower crane and unfinished high-rise building. many cranes. construction of a new district of the city

কংক্রিট ব্লক/ইটের ফ্রেমিং (Concrete Block/Brick Framing)

নাম থেকেই বুঝতে পারছি এই ফ্রেমিং এর উপকরণ হল কংক্রিটের ব্লক/ইট। ভারী স্থাপনার জন্য বহুল প্রচলিত এই ফ্রেমিং অবশ্য ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার জন্য উপযুক্ত নয়। তৈরি উপাদান থেকে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত হলেও এই ফ্রেমিং এ শ্রম অনেকটাই বেশি দিতে হয়। কংক্রিট /সিন্ডার ব্লক, ইট ইত্যাদি হাতে করে বসিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে তাই বলা যায় বেশ কষ্ট। এছাড়া শীতকালে মেসোনারি জয়েন্টের কিছুটা সমস্যা দেখা যায়। 

স্টীল ফ্রেমিং (Steel Framing)

বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মানে স্টীল ফ্রেমিং খুবই জনপ্রিয়। স্টীল কলাম এবং স্টীল ট্রাসের মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন তলা এবং ছাদ নির্মাণ করে ফেলা যায়। মেইন স্ট্রাকচার স্টীল এবং নন সাপোর্ট স্ট্রাকচারের কাজে লাইন্ট গজ স্টীল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাতে স্টীলের স্থাপনা বেশ কার্যকরী কেননা এর স্থিতিস্থাপক গুণ থাকায় কাঠামোর ক্ষতি বেশি হয় না। তবে এই ধরনের স্থাপনা খুব উচ্চ তাপমাত্রার জন্য উপযোগী না। সেই সাথে অধিক হিউমিডিটির জায়গায় দ্রুত করোসনের আশংকা থাকে।

কংক্রিটের ফ্রেমিং (Concrete Framing)

কংক্রিটের তৈরি বীম,কলাম,স্ল্যাব দিয়ে এই ফ্রেমের ভবন নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বহুতল ভবনের পাশাপাশি পার্কিং গ্যারেজ, এলিভেটেড রোডওয়ে নির্মানেও ব্যবহার করা হয় এই ফ্রেমিং। ভবন নির্মাণের কাজে কংক্রিট সাইটেই প্রয়োজন মতো প্রস্তুত করা হয় বলে কিউরিং অনেক সময় ঠিকমতো হয় না। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে খুব বেশি কার্যকর না হলেও বাতাস এবং আবহাওয়াতে এই ফ্রেমিং বেশ কার্যকরী। 

আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাঁশ, তালপাতা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাসার কথা ভুললেও বা চলবে কেন? যদিও খুব বেশি স্থায়ী নয় ওই উপকরণ নির্মিত ফ্রেমিং, তবুও স্বল্প আয়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নির্মাণে এইসব প্রাকৃতিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার আগে ভবনের ভৌগোলিক অবস্থান, কার্যকারিতা, উপকরণের সহজলভ্যতার দিক নজর রেখে ফ্রেমিং বাছাই করে নিলে মজবুত ভবনের নিশ্চয়তা শতভাগ। 

আধুনিক অন্দরসজ্জায় কাঠের মেঝে

কাঠের মেঝে যুগ যুগ ধরে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

Continue reading

মেঝের একাল সেকাল

ঘরের মাঝে আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি সংস্পর্শে থাকে মেঝে, সারাক্ষণ মেঝের ওপর দিয়েই চলাচল হয় সবার। তাই ফ্লোর ফিনিশিংয়ের বিষয়টি বাড়ি নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

Continue reading

বাড়ি নির্মাণ: দরজা-জানালায় বিশেষ পরিকল্পনা

নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর এই দেশের বাড়িগুলোতে জানালা একটি অপরিহার্য উপাদান। উচ্চ আর্দ্রতা আর তাপের কারণে বাতাসের প্রবাহের মাধ্যমে তাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সেই আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। এক সময়ে আমাদের বাড়িগুলোর ঐতিহ্য ছিল কাঠের খড়খড়ি দেয়া ভারী পাল্লার দরজা আর জানালা, যাতে পাল্লা আটকে দিলেও খড়খড়ির বদৌলতে ঘরের ভেতর বায়ুপ্রবাহ থাকত নিরবচ্ছিন্ন।

বাড়ির প্রতিটি ঘরে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস নিশ্চিত করতে জানালা যেমন আবশ্যক, তেমনি নিরাপত্তার অনুষঙ্গ হিসেবে জানালার সাথে চলে আসবে গ্রিলের নাম। চলুন জেনে নেয়া যাক বাড়ির দরজা, জানালা আর গ্রিল নির্বাচনের সময় যা যা মাথায় রাখা উচিৎ। 

গ্রিলের ব্যবহার  

বিদেশের অনুকরণে আজকাল পাল্লা দেয়া কাঠের জানালার স্থান দখল করে নিয়েছে থাই গ্লাস। এটি একদিকে যেমন এদেশের জলবায়ুর ধরনের পরিপন্থী, তেমনি বাড়ির সৌন্দর্যেও এটি যেন ঠিক সেই আগের আভিজাত্য বজায় রাখতে হচ্ছে ব্যর্থ। তারপরও খরচ এবং প্রাপ্তির হিসেবে ক্রেতাদের ঝুঁকতে হচ্ছে থাই গ্লাসের দিকেই।

সেই ব্রিটিশ আমল থেকে স্থাপত্যের সাথে বনেদিয়ানার আভিজাত্য প্রকাশেই শুরু হয় গ্রিলের ব্যবহার। বাড়ির ছাদের রেলিং, ভেন্টিলেটর, সিঁড়ির সাথে বেয়ে ওঠা রেলিংয়ে প্রচলন ছিল ফুলেল নকশার লোহার গ্রিলের ব্যবহারের। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আজও আবাসিক, অনাবাসিক প্রতিটি ভবন নির্মাণেই জানালা, বারান্দা এবং সিঁড়ির রেলিং, কলাপসিবল গেইট ও মেইন গেইটে এমন গ্রিলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। 

প্রকারভেদ

বাংলাদেশে বর্তমানে গ্রাম এবং শহরে সর্বত্রই বাড়ি নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের গ্রিল ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে স্কয়ার বার, ফ্ল্যাট বার, চ্যানেল বার ইত্যাদি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। গত দশকে রেলিং এবং প্রবেশ দরজার ক্ষেত্রে এম এস-এর তৈরি নকশাদার গ্রিলের ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেলেও বর্তমান সময়ে এর জায়গা দখল করছে এস এস-এর তৈরি সিম্পল স্কোয়ার বার, থাই গ্রিল এবং প্লেইন শিট। সাধারণত চার সুতার স্কয়ার বার আর দেড় সুতার পাতি দিয়ে গ্রিল প্রস্তুত করা হয়। আর বাজারদর নির্ণয়ের ক্ষেত্র হয় সাধারণত ভর হিসেবে কেজিতে হিসাব বা দৈর্ঘ্যে ফুটের পরিপ্রেক্ষিতে। কেজি হিসেবে ধরে প্রতিটি গ্রিলের দাম আলাদাভাবে পড়বে কেজি-প্রতি ৮০-৮৫ টাকা। আর ক্ষেত্রফল হিসেবে বর্গফুট-প্রতি দাম পড়বে ১৫০-১৫৫ টাকা। 

দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং বাসায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নান্দনিক ডিজাইনের পাশাপাশি, সঠিক গুণগত মান দেখে গ্রিল নির্বাচন করা প্রয়োজন। আপনার কল্পলোকের বাড়ি নির্মাণে উৎকৃষ্ট গ্রিল নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য করা প্রয়োজন, তা হলো- 

১। এর উপাদানের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা এবং সোজা আছে কিনা দেখে নেয়া 

২। মসৃণতা এবং নিখুঁত ফিনিশিং

দরজার চৌকাঠ বা ফ্রেমিং নির্মাণ

বাড়ি নির্মাণের আরেকটি অপরিহার্য কাজ হলো, দরজার জন্য নিখাদ ফ্রেমিং বাছাই। বাংলাদেশে এখনও দরজা ও ফ্রেম তৈরিতে কাঠের বহুল প্রচলন দেখা যায়। ফ্রেম বানানোর ক্ষেত্রে সঠিক কাঠ বাছাই করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত যেসব কাঠের বহুল ব্যবহার দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে মেহগনি, বার্মা টিক, চিটাগং শিলকড়ই, টিক চাম্বুল, চিটাগং টিক এবং লোহা কাঠের ব্যবহার অন্যতম। ফ্রেমিং এর জন্য সাধারণত দুই ধরনের পুরুত্বের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এক ধরনের হচ্ছে ২.২৫” x ১১.৭৫” যা ১০” দেয়ালের ক্ষেত্রে, এবং অন্যটি হচ্ছে ২.২৫” x ৫.৭৫” যা ৫” ইটের দেয়ালের জন্য নির্ধারিত। এছাড়াও নিরাপত্তা ও কাঠের আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে স্টিলের দরজার ব্যবহারও পরিলক্ষিত হয়।  

কোথায় পাবেন

ঢাকার ভিতর পাইকারি দরে দরজা প্রাপ্তির স্থানগুলো হলো কুতুবখালি, নয়াবাজার, পান্থপথ, বাড্ডা, রোকেয়া সরণী ও কুড়িল বিশ্বরোড। এখানে চৌকাঠ বা ফ্রেমের দাম পড়বে ২,০০০-৪,০০০ টাকা। পাইকারি বাজার ছাড়াও বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানি দরজা প্রস্তুত ও বাজারজাত করে থাকে। এই ধরনের জায়গায় দরজার ফ্রেমের দাম আকার, উপাদান এবং ডিজাইনের প্রকারভেদে ৩,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

স্টিল বা কাঠের দরজার পানিতে নষ্ট হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এই কারণে বাথরুমে সাধারণত প্লাস্টিকের দরজা এবং ফ্রেমিং ব্যবহার করা হয়। বংশাল এবং পান্থপথে পাল্লাসহ এধরনের দরজার দাম পড়ে সাধারণত ২,৫০০-৪,০০০ টাকা।

আমাদের কল্পনায় থাকা স্বপ্নের বাড়িকে বাস্তব রূপ দেয়ার সময় আমাদের সামনে আসে নানা সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গা, আসে হরেক রকম প্রশ্নও। স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের সময় এর কাঠামো, সৌন্দর্য ইত্যাদির দিকে আমাদের থাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি। ইট, বালি, সিমেন্ট, কংক্রিটের মাঝে আমরা সঠিক গ্রিল এবং দরজার ফ্রেম নির্বাচনকে প্রায়ই গুরুত্বহীন করে দেখি। কিন্তু বাড়ির সার্বিক নিরাপত্তা এবং সর্বাঙ্গিক নান্দনিকতা নিশ্চিত করার জন্য দরজা, জানালার ফ্রেম ও গ্রিলের মতো বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ সমানভাবেই।

কলাম বীম স্ট্রাকচার: আপনার বাড়ির ভার নিচ্ছে যারা

স্বপ্নের বাড়ি, উঁচু দালান কিংবা যেকোনো কাঠামোকে সোজা, স্থিতিশীল করে সুরক্ষিত রাখতে, মাথার উপর ছাদকে সু-উন্নত রাখতে ঘরের খুঁটি, কড়িকাঠ অথবা ইংরেজিতে যাকে কলাম-বীম বলে, তার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।

ঐতিহাসিক কাল থেকে সভ্যতার উচ্চতার জন্য এর ব্যবহার চলে আসছে, যা হয়ে উঠেছে আমাদের স্বপ্নের বসতবাড়ির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। আসুন আজ আমরা জেনে নিই কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী, কীভাবে এর উৎপত্তি হলো এবং কেন আপনার বাড়িতে এর প্রয়োজন।

কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী?

একটি দালানের ভার নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত নির্মাণ পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে ভার পরিবহন করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এভাবে কাজ করে- প্রথমে ভর দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ভর/ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এর পরে ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান সুরক্ষিত থাকে এবং অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীমের প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয় যেটির মাপ উপাদানের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসেব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

আবিষ্কার এবং ব্যবহার

মানুষ স্বভাবতই একঘেঁয়েমি অপছন্দ করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণের অংশ হিসেবে কলাম, বীমের নীতি এবং নকশায় এসেছে নতুনত্ব, মানুষ বের করতে পেরেছে অনেক অভিনব পন্থা। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় প্রাথমিকভাবে গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হতো বড় বড় কলাম, যেগুলো ছাদের ভার নিতে পারত। পরবর্তীতে পাথর ব্যবহার করে আরো শক্ত মজবুত কলাম বানানো শুরু করা হয়। এর ফলে স্ট্রাকচার হয়ে উঠে আরও মজবুত ও অভিজাত।

এরপরে এই সভ্যতার পরে অন্য সভ্যতাগুলোতে কলাম এবং বীমের সুস্পষ্ট বিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এর পরে প্রাচীন গ্রীক, রোমান সভ্যতার কলামযুক্ত স্পেসগুলো প্রমাণ বহন করে কলাম-বীমের মাহাত্ম্য। তখনও অবশ্য মূলত পাথর ছিল শক্ত এবং মজবুত কলামের মূল উপকরণ।

এর উপকরণ বাছাই হতো মূলত অঞ্চলভেদে প্রাপ্ত বিভিন্ন কিছু থেকে। যেমন- এই কাজে অঞ্চলভেদে এখনও কাঠ, বাঁশ, লোহা কিংবা ইটের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। ইউরোপীয় সভ্যতার ক্রমাগত উন্নতি এবং শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে লোহার ব্যবহার ও কারখানায় প্রস্তুতকৃত বস্তুর চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

মানুষ আরো অধিক শক্তিশালী কলামের আবিষ্কারের জন্য মেধা ও শ্রম নিয়োগ করে। আবিষ্কার হয় সিমেন্ট ও রডের। মানুষ এই দুটো উপকরণ দিয়ে তার অবাস্তব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করে। তৈরি করতে শুরু করে সুউচ্চ দালানকোঠা, ইমারত। এরপরে কলাম-বীমের বিভিন্ন রকমফের উদ্ভাবিত হয় ব্যবহার ও প্রয়োজনমাফিক।

আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম কোনটি?

সাধারণত, আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

প্রথমত, স্ট্রাকচারাল শক্তি, ভার বহনের ক্ষমতা সুনিশ্চিত করতে সঠিক মাপের এবং আকৃতির কলাম ও বীম। এর মধ্যে কতটা রড লাগবে, কত দূর পরপর কলাম বসবে এসবের হিসাব ঠিক করবেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার।

কলাম বা বীমের আকৃতি, এর ফিনিশিং ও কীসে তৈরি হবে এসব বিষয়ে উপযুক্ত দিকনির্দেশনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাথে স্থপতিকেও নিতে হয়। রুমের ব্যবহারযোগ্য স্পেস যাতে নষ্ট না হয় এবং আপনার স্বপ্নের দালান যাতে মজবুত ও টেকসই হয়, এজন্য ভালো নকশা নির্ধারণ করা একান্ত আবশ্যক। এর জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে উপযুক্ত ও পেশাদার স্থপতি ও প্রকৌশলীদের।