আসবাবপত্র ক্রয়ের আগে ভাবতে হবে যে বিষয়গুলো

কিংবদন্তি ব্রিটিশ কবি জন কিটস বলেছেন, “এক টুকরো সৌন্দর্য আমৃত্যু আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।” সেই সৌন্দর্য যেকোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে নেয়া যেতে পারে, আপনার বসবাসের ঘরখানিও থাকবে সেই তালিকায়। যেসব জিনিস প্রতিদিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, ঘর সাজানো তার মাঝে একটি। অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে অনেকে কিছুদিন পর পর ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থান অদলবদল করে থাকেন, তাতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আসবাবপত্র বদলে ফেলা খুব নিয়মিত কোনো ব্যাপার নয়। আর তাই আসবাবপত্র কেনার সময় সবদিক বিবেচনায় রেখে কিনতে হবে, মাথায় রাখতে হবে তার আকার-আকৃতি। কেননা ঘরের আকারের চেয়ে বড় কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ছোট, দুটোই হবে দৃষ্টিকটু।

ঘরের পরিমাপ

ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ক্রয়ের পূর্বে প্রাথমিক কাজ হলো ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সবকিছুর সঠিক মাপ নিয়ে নেয়া। ঘর বর্গাকার নাকি আয়তাকার, সেটির উপরও নির্ভর করবে আসবাবপত্রের আকার। মেঝে থেকে জানালার উচ্চতা, জানালার অবস্থান, আকার এবং এর দু’পাশে অবশিষ্ট দেয়ালের মাপ, সবকিছুই টুকে ফেলতে হবে, যাতে আসবাবপত্র দ্বারা জানালা ঢেকে না যায়। এসবের পাশাপাশি ঘরের দেয়ালে কোনো পিলার থাকলে তার প্রশ্বস্ততা নির্ণয় করাও জরুরি। আর মাপতে হবে মেঝে থেকে সুইচবোর্ডের উচ্চতা। সুইচবোর্ড দেয়ালের যেখানে থাকবে সেই স্থান ফাঁকা রাখাই বাঞ্ছনীয়। অগত্যা কেউ যদি সেখানেও কোনো ফার্নিচার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেটির উচ্চতা সুইচবোর্ডের চেয়ে কম হওয়া আবশ্যক।

এসব মাপ নিতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যা ভুলে যাই তা হলো দরজার মাপ। আপনার আসবাবের আকার অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয় যা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো কঠিন। শুধু তা-ই নয়, দরজার পাশে রাখার পরিকল্পনা করছেন, এরকম কোনো আসবাবপত্র কিনলে অবশ্যই তার আকৃতি দরজার উচ্চতার মাঝামাঝি বা তার চেয়ে কম হওয়া ভালো। এতে ঘরের ঐ অংশের সৌন্দর্য বজায় থাকে।

ঘরের স্কেচ করুন, ছবি তুলুন

ফার্নিচার ক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রস্তুতিই ঘরে বসে সেরে ফেলতে হয়। আর সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হলো ঘরের মেঝের একটি খসড়া ডিজাইন তৈরি করা। প্রথমেই ঘরের কোথায় সোফা, কোথায় টেবিল আর কোথায় বিছানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র রাখছেন তা ঠিক করে ফেলুন, অনুমান অনুযায়ী মেঝেতে সেই বস্তুটি কতটুকু স্থান দখল করবে তা চক দিয়ে টেনে ফেলুন।

পুরো ঘরের কোথায় কী রাখছেন তার দাগ টানা হয়ে গেলে সেটি কাগজে এঁকে নিন এবং একাধিক স্কেচ করে ফেলুন একই মাপের ফার্নিচারগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দিয়ে। ফার্নিচারের দোকানে পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা মাপের ফার্নিচার না-ও মিলতে পারে। একাধিক স্কেচ করার সুবিধা এখানেই। তখন ভিন্ন মাপের আসবাবপত্রগুলোর জন্য ভিন্ন স্কেচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।

এক্ষেত্রে ঘরের ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণও করা যেতে পারে। ফার্নিচারের শো-রুমে আপনি যে আকার, আকৃতি বা রঙের ফার্নিচার দেখবেন, তার সাথে তৎক্ষণাৎ ঘরের ছবি/ভিডিও দেখে উভয়ের কম্বিনেশন যাচাই করে নিতে পারবেন।

বিছানার পরিমাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বিছানার পরিমাপ। সাধারণ বিছানাই বেডরুমের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে, তাই এর অবস্থানও এরূপ হতে হবে যেন ঘরে অবাধ হাঁটাচলা বিঘ্নিত না হয়। বিছানার আকারও ক’জন মানুষ ঘুমাচ্ছে সেই অনুপাতে যতদূর সম্ভব ছোট রাখাই বাঞ্চনীয়। পাঠকের সুবিধার্থে বিছানার কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড আকার উল্লেখ করা হলো:

টুইন বেড- ৩৯″ X ৭৫″

ফুল সাইজ- ৫৪″ X ৭৫″

কুইন সাইজ- ৬০″ X ৭৫″ কিং সাইজ- ৭৬″ X ৭৫″

এছাড়া, বিছানার আকারও নির্ধারণ করতে হবে ঘরের আকার অনুযায়ী। ঘরটি যদি লম্বা হয় তাহলে ছোট আকৃতির টুইন বেডই ভালো। ঘর বর্গাকৃতির হলে বর্গাকৃতির বিছানা যুতসই হতে পারে।

সোফা কিনুন বুঝে-শুনে

ঘরের আকৃতি এবং সজ্জা নির্ধারণ করে যে আসবাবপত্রগুলো, সোফা তার মাঝে একটি। বিছানা বা অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি সোফার জন্য কতটুকু জায়গা থাকছে, তা বুঝে ক্রয় করুন সোফা। একেবারে শূন্যস্থানের মাপ বরাবর সোফা ক্রয় করা মস্ত বড় ভুল। সোফা রাখার পর কফি টেবিল রাখার জায়গা এবং কফি টেবিলের চারপাশে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা বাঞ্চনীয়। পাশাপাশি, সোফার পেছনে রাখতে হবে কিছুটা খালি জায়গা, সাধারণত ১-১.৫ ফুট। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে সোফা রাখা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

চলাফেরার কথা শুরুতেই ভাবুন

আসবাবপত্র কেনা এবং সেসব জায়গামতো বসানোর পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে যা প্রায়ই ভুল হয় সেটি হলো হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, কিংবা থাকলেও তা পরিমিতভাবে বণ্টন না হওয়া। দেয়ালের উচ্চতা, জানালা না ঢেকে ফেলা, দরজা থেকে ঠিকঠাক দূরত্ব রাখা, এসবের মাঝে অনেক সময়ই হারিয়ে যায় ঘরে হাঁটাচলার জায়গা। কখনো বা ঘরে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা থাকলেও পুরো ঘরে বাধাহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো যায় না। কেননা ঘরের একপাশে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তো অন্যপাশে কম হয়। আর এটি হয় ঘরের আসবাবপত্রের আকারের জন্য। হাঁটার জন্য আপনি আপনার ঘরে সোজাসাপ্টা করিডোর রাখতে চান নাকি কিছুটা এলোমেলো পথে হাঁটতে চান, সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচির ওপর। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভাবুন এবং সেই অনুপাতে যুতসই আসবাবপত্র ক্রয় করুন।

ঘরের সিলিংয়ের সৌন্দর্য বাড়াবেন কীভাবে?

আমাদের বাসস্থান কিংবা কর্মস্থল, যেকোনো স্থানের অন্দরমহলের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সচেতন সবসময়ই। নিত্য-নতুন নকশার সব আসবাবপত্র কিংবা রঙের পরিবর্তন, আবার কখনোবা নতুন ধরনের লাইটের সংযোজন- সবকিছু মিলিয়েই বেড়ে উঠে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। 

অন্দরমহলের সজ্জা বললে হয়তো সবার শেষে আমাদের বিবেচনায় আসে সিলিংয়ের নকশার কথা। কারণ, চিরকালই সিলিং বলতে আমরা কেবল মাথার উপর এক খণ্ড সাদা সরল তলকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এটিও যে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করার বিষয়, তা বোঝা যায় আধুনিক সময়ে এই সিলিং নকশার পেছনেও নকশাকারদের বিশদ পড়াশোনা এবং বিচার-বিবেচনা থেকে।

প্রকারভেদ

ব্যবহার ও নকশার উপর ভিত্তি করে কয়েক রকমের সিলিং বেশি দেখা যায়। যেমন-

  • কনভেনশনাল সিলিং
  • সাসপেন্ডেড সিলিং
  • ক্যাথেড্রাল সিলিং
  • শেড সিলিং
  • কোভ সিলিং
  • বীম সিলিং

সিলিংয়ের নকশার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ছাদের স্ট্রাকচার বহাল রেখে ফলস সিলিং কিংবা সিলিং টাইলসের মাধ্যমে নকশা করা হয়। সিলিংয়ের নকশা রুমের কার্যকারিতা, নির্মাণকাল, লোকেশন ও নকশার বাকি রুমের সাথে সামঞ্জস্যতা এসবের উপরও নির্ভর করে। মুঘল আমলের কোনো স্থাপনার সিলিংয়ের সাথে যেমন এখনকার কোনো সিলিংয়ের মিল খোঁজা ভিত্তিহীন, তেমনি বাসস্থানের বিভিন্ন রুমের সিলিংয়ের সাথে বিপণি-বিতান বা অফিসের সিলিংয়ের সাদৃশ্যও নেই বললেই চলে।

শহর ও গ্রামভেদে সিলিংয়ের পরিবর্তন

কেবলমাত্র কংক্রিটের তৈরি বাড়িতেই নয় বরং গ্রামাঞ্চলে টিনের তৈরি ছাদের ক্ষেত্রেও সিলিং ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। একসময় টিনের তৈরি ঘরের ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই, ছন, খড় এসব দিয়ে সিলিং তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে পিভিসি প্লাস্টিক সিলিংয়ের বহুমাত্রিক ব্যবহারে সিলিংয়ে পরিবর্তন এসেছে। সাশ্রয়ী মূল্যের এই সিলিংয়ের সহজ ব্যবহার, কম খরচে মেরামতযোগ্যতা, সহজলভ্যতাসহ নানাবিধ গুণ রয়েছে। 

ফলস সিলিংয়ের ব্যবহার

আমাদের বাসা কিংবা অফিসে বর্তমানে ফলস সিলিংয়ের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। আসল সিলিংয়ের নিচে জিপসাম বোর্ড, কাঠ কিংবা প্যারিস প্লাস্টারের এক বা একাধিক লেয়ারের সিলিং সংযোজন করা হয় এধরনের সিলিংয়ে। নকশার পরিবর্তন কিংবা দৃষ্টিনান্দনিকতার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কারণে ফলস সিলিং ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ওয়্যারিং ঢাকা, রুমের টিভি, হোম থিয়েটারের একুইস্টিক (শাব্দিক) সামঞ্জস্যতা রক্ষা এবং শীতপ্রধান দেশে ঘরের তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের উপর ভিত্তি করে যে কয়েক রকমের ফলস সিলিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো- 

  • জিপসাম সিলিং
  • উডেন সিলিং
  • প্যারিস প্লাস্টার সিলিং
  • মেটাল সিলিং
  • সিন্থেটিক ফাইবার সিলিং

সিলিংয়ের নকশা এবং রং

বাড়ির কোন রুমের জন্য সিলিং ডিজাইন করা হচ্ছে তা প্রথমে দেখে নিতে হবে। সাধারণত বসার ঘর, শোবার ঘর, শৌচাগার ভেদে সিলিংয়ের নকশায় তারতম্য হয়ে থাকে। রুমভেদে সিলিংয়ের উচ্চতার পার্থক্য হয়। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে যে ফলস সিলিং যোগ করা হয় তার অবকাশ সবসময় থাকে না। 

বিভিন্নভাবে সিলিংয়ের রঙের মাধ্যমে রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণত ছোট রুমকে বড় দেখানোর জন্য হালকা রঙের শেড ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কম উচ্চতার সিলিংয়ে কিছুটা গ্লসি রঙ ব্যবহার করলে উচ্চতার পার্থক্য অনুভূত হয়। 

রঙের সাথে সাথে সিলিং ও ফলস সিলিংয়ের বিভিন্ন নকশা নিয়েও কাজ করা যায়। বর্তমান সময়ে সিলিং-সাইড ধরে চারকোনা নকশা কিংবা মাঝে গোল নকশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দিকে ও জায়গায় স্পট লাইট, রিসেসড লাইট কিংবা পেন্ডেন্ট লাইটের সংযোজন করা যেতে পারে। কিন্তু সিলিং যে কাঁচামালেই তৈরি হোক না কেন, পানিরোধক না হলে অচিরেই সিলিং অকেজো হয়ে পড়ে। সাধারণত সিলিংয়ের পানিরোধন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভেতরের দিকে পলিইউরেথিন সিলার ব্যবহার করা হয়। বাথরুমের সিলিংয়ের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব কমানোর জন্য সেমি গ্লসি কিংবা অয়েল বেসড রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিলিং তৈরির সময় আগুনের বিষয়ে সতর্কতার কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত রান্নাঘর কিংবা আগুনের সংস্পর্শে আসা সিলিংসমূহের ক্ষেত্রে এটি বিবেচ্য। এক্ষেত্রে প্লাস্টারবোর্ড সিলিং, ফাইবারড সিলিং ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলিং যে ম্যাটেরিয়াল কিংবা নকশাতেই তৈরি হোক না কেন, সিলিংয়ের পরিচর্যার অভাবে অনেক সময়েই সিলিংয়ের কাঠামো কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে সিলিং পরিষ্কার, ভালো মানের রং ব্যবহার ও যেকোনো সমস্যা অচিরেই মেরামত করা বাঞ্ছনীয়। সেইসাথে সিলিং বিষয়ক যেকোনো প্রশ্নের উত্তর ও নির্মাণ বিষয়ক খুঁটিনাটি জানাতে আপনাদের সাথে আছে হোম বিল্ডার্স ক্লাব। 

প্রাথমিক নকশায় পরিবর্তন: যা যা জানতে হবে

একটা সময় ছিল যখন ঢাকা শহরের আবাসন চিত্র নিয়ন্ত্রিত ছিল নিজের বাড়ির স্বপ্ন দিয়ে। ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া বা গুলশানে একসময় নির্মাতারা তৈরি করেছেন সারিবদ্ধ উঠানসমৃদ্ধ একতলা বা দোতলা বাড়ি। ঢাকার সেই সোনালি দিন গত হয়েছে তাও কয়েক দশক হতে চলল। অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতি তাই শৈশব কৈশোর ছাড়িয়ে বলা যায় যৌবনে পা দিয়ে ফেলেছে।

কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই যেমনই হোক না কেন প্রতিটি পরিবারের চাহিদা হয় আলাদা আলাদা। এই চাহিদা মেটাতে স্থপতিরা সবকিছু মাথায় রেখে প্ল্যান লে-আউট তৈরি করেন ঠিকই, কিন্তু গণ-আবাসনের চাহিদার চাপে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোতে বাড়ির মালিককে নিজের হাত দেবার দরকার হয়। এজন্য প্রায় প্রতিদিনই স্থপতির সাইট অফিসে দেখা মেলে লেআউটে পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আসা বাড়ির নির্মাণকারী।

অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণকারীগণ তাদের খরচ করা অর্থের সর্বোচ্চ পরিমাণ জায়গা বা সুবিধা বের করে নিতেই পরিবর্তন বা উন্নয়নের প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। অবশ্যই পরিবর্তনের সুযোগ দিতে প্রতিটি নির্মাতারই উদারমনা এবং নির্মাণকারীবান্ধব হওয়া জরুরি। কিন্তু একইসাথে নির্মাণকারী হিসেবেও সম্ভব এবং অসম্ভবের খেরোখাতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাড়ির প্ল্যান (Plan) লেআউটে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় জানতে হবে।

কাঠামো অপরিবর্তনীয়

বাড়ির কাঠামো বলতে বুঝানো হয় ফাউন্ডেশন এবং সাধারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কলাম ও বীমকে। একজন বাড়ির মালিক বা নির্মাণকারী ভেতরের পার্টিশন দেয়াল পরিবর্তনের স্বাধীনতা রাখলেও কলাম ও বীমের অবস্থান পরিবর্তন কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণ কাঠামোর অংশ হিসাবে শিয়ার ওয়াল (Shear wall) নির্মাণ করা হয়। এই দেয়ালগুলো কলামের মতোই ছাদের ভার বহন করে। তাই দেখতে দেয়ালের মতো হলেও এগুলোর অবস্থান পরিবর্তন, এগুলোতে জানালা স্থাপন এবং আকারে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না। সাধারণত শিয়ার ওয়াল ৮-১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তবে কাঠামোর কারণে ক্ষেত্রবিশেষে আরও মোটাও হতে পারে।

পার্টিশন দেয়ালে পরিবর্তন

ঘরের পার্টিশন দেয়াল সাধারণত প্লাস্টারসহ ছয় ইঞ্চির মতো চওড়া হয়। প্লাস্টারের আবরণের আগে ৫ ইঞ্চির যে দেয়াল তোলা হয়, এর ভেতরে সাধারণত কোনো কাঠামোগত সমর্থন (Reinforcement) থাকে না। তাই এগুলো চাইলেই পরিবর্তন করা যায়। তবে এই পরিবর্তন করতে হবে দেয়ালগুলো তৈরি হবার আগেই। এই পরিবর্তনের জন্য আগে থেকে স্থপতি ও প্রকৌশলীকে জানাতে হয় এবং তাদের হাত দিয়ে সংশোধিত করতে হবে। জানানোর এবং সংশোধনের পর সংশোধিত ড্রয়িং সংগ্রহ করুন এবং নিশ্চিত হোন আপনার পরিবর্তিত ড্রয়িংই নির্মাণে অনুসরণ করা হচ্ছে। এই ধরনের পরিবর্তনে সাধারণত কোনো খরচ যোগ হয় না। 

অত্যন্ত জরুরি বিবেচনায় বানানো দেয়াল ও পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্লাস্টার এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ নির্মাণের আগেই করতে হবে। এসকল ক্ষেত্রে আগের ইট ও মর্টার নষ্ট হয়। তাই খরচ বাড়তে পারে।

ভবনের বহিঃঅংশে পরিবর্তন

ভবনের যেসব নকশা নির্মাণের আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মধ্যে থাকে তার মধ্যে ভবনের এলিভেশনও (Elevation) থাকে। এছাড়া বারান্দার পরিমাণ ও মাপও থাকে নির্দিষ্ট। তাই চাইলেই ভবনের বাইরের দেয়ালে কোনো পরিবর্তন করা যায় না। এসব স্থানে পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে (যেমন- অতিরিক্ত বারান্দা বা জানালা স্থাপন) নকশা অনুমোদনের আগেই স্থপতির সাথে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করুন ও আপনার ইচ্ছার কথা জানান।

নিয়মের মধ্যে থেকে করা সম্ভব হলে অনুমোদনের আগেই স্থপতি আপনার চাহিদা আমলে নেবেন এবং পরিবর্তন করে দেবেন। তবে ডেভেলপারের উপস্থিতির ক্ষেত্রে যেহেতু ক্রয় বা বুকিংয়ের আগেই অনুমোদন হয়ে যায় তাই এক্সটেরিয়রে কোনো পরিবর্তন অনুমোদন করা হয় না। 

সার্ভিস অংশের অবস্থান পরিবর্তন

মূলত টয়লেট, রান্নাঘর বা কিচেনেটের মতো জায়গাগুলোকে বলা হয় বাড়ির অভ্যন্তরীণ সার্ভিস অংশ। এর বাইরে সিঁড়ি এবং লিফটকে বলা হয় মূল সার্ভিস অংশ। সার্ভিস অংশগুলো লম্বালম্বিভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সিঁড়ি বা লিফট যেখান দিয়ে উঠতে শুরু করে প্রত্যেক তলাতেই সিঁড়ি সাধারণত সেই বরাবরই উঠাতে হয়।

elevator in building

কাঠামো, জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার, ভবনের চলাফেরার পদ্ধতি ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনায় এগুলো অত্যাবশ্যকীয়। একইভাবে টয়লেট বা কিচেনের মতো কক্ষগুলোও প্রত্যেক তলায় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যেমন- ভবনে স্যানিটেশন ও পানির লাইন সাধারণত দুটি আলাদা দেয়াল দিয়ে সঞ্চালিত হয়। এগুলোতে ডাক্ট সংযুক্ত থাকে। তাই টয়লেট ও কিচেন সে দুটি দেয়ালের সন্নিকটে হতে হয়, যেন ডাক্টের সাথে সরাসরি এদের সংযোগ থাকে। একারণে ক্ষেত্রবিশেষে দিক (Orientation) পরিবর্তন সম্ভব হলেও, কিচেন বা টয়লেট সরিয়ে সাধারণত অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই কাঠামোর মতো এগুলোকেও মোটামুটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখেই পরিবর্তন করতে হবে।

সাধারণ কিছু ত্রুটি

অনেক ক্ষেত্রে শয়নকক্ষে অতিরিক্ত এক বা দেড় ফুট জায়গা বের করতে অনেকে বারান্দা অত্যধিক সরু করে ফেলেন। প্রশিক্ষিত স্থপতি নকশা করলে ফার্নিচারের স্বাভাবিক সকল মাপ বিবেচনা করেই সাধারণত নকশা করা হয়। শুধু জায়গা বাড়ানোর খাতিরে এরপরও বেডরুমে অতিরিক্ত এক ফুট জায়গা বের করার প্রবণতা অপ্রয়োজনীয়। এতে করে বারান্দা ছোট হয়ে গেলে ঘরের ভেন্টিলেশন যেমন বাধাগ্রস্থ হয়, তেমনি ভবনের ভেতর ও বাইরে সংযোগে সমস্যা তৈরি হওয়ায় বাসায় জীবনধারণের মানও কমে যায়। 

এছাড়া স্থপতিরা ভবনের নকশা করার সময় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সঞ্চালন মাথায় রেখেই ভবনের নকশা তৈরি করেন। অনেক সময় অতিরিক্ত পার্টিশন দেয়াল নিয়ে নাড়াচাড়ার কারণে বদ্ধ করিডোর তৈরি হয়, যে জায়গাগুলো আসলে কোন কাজে আসে না। তাই পরিবর্তনের আগে সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে স্থপতির মতামত না নিলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা হবার সম্ভাবনাই বেশি। 

এছাড়া বীম লাইন থেকে পার্টিশন দেয়াল সরিয়ে ঘর অতিরিক্ত নাড়াচাড়ায় ঘরের মাঝ দিয়ে বীম চলে যাওয়াও খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি ফ্যানসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাঠামো উপকরণের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে। এটিও বাধ্য না হলে করা উচিৎ নয়।

সবশেষে, স্কয়ার ফিটের পাশাপাশি নকশার ব্যপারেও ফ্ল্যাট কেনার আগেই সচেতন হওয়াটা দরকারী। কেনার আগে অবশ্যই প্ল্যান দেখে নিন। যদি প্ল্যান আপনার পছন্দ না হয় এবং মনে হয় প্রচুর পরিবর্তন করতে হবে তাহলে শুধু স্কয়ার ফিট বা দাম বিবেচনায় সেই ফ্ল্যাট না কেনাই শ্রেয়। মনে রাখবেন আপনি আপনার কষ্টার্জিত যে অর্থ ব্যয় করছেন তাতে ইট-কাঠের সাথে নকশার মান এবং প্রযোজ্যতাও জরুরি। একজন সচেতন ক্রেতাই পারেন পরিবর্তনের ঝামেলা কমিয়ে অথবা স্মার্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটকে নিজের বসবাস-উপযোগী করতে। 

নিজের বাড়ির স্বপ্নপূরণ: হোম লোনের খুঁটিনাটি

সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে মানুষ বানায় তার স্বপ্নের বাড়ি। যে বাড়ির অন্দরে বাহিরে লুকিয়ে থাকে শত স্বপ্ন, সাধ, আহ্লাদ। এই বাড়ি বানানোর জন্য মানুষ সঞ্চয় করে, তার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলে আপন মনের ঠিকানা- একান্ত নিজের একটি বাসা। কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যেটার জন্য মানুষ ব্যাংক বা এরকম ঋণপ্রদায়ী সংস্থা থেকে সহায়তা নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চুক্তি আর কিস্তিতে সাজানো স্কিমে আপনাকে ঋণ দেবে- যা ‘হোম লোন’ বা গৃহঋণ স্কিম নামে পরিচিত। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য জানা প্রয়োজন এই লোন কী, কেন নিবেন, কীভাবে নিবেন এবং কী কী ভাবনার পরে আপনি পছন্দ করবেন আপনার হোমলোন স্কিম। আসুন আজকে এই বিষয়গুলোই দেখে নেই এই লেখা থেকে।

হোমলোন কী?

হোমলোন হলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিশোধযোগ্য, নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তিতে পরিশোধ করার উপযোগী (ইএমআই ভিত্তিক) ঋণ প্রদানের পলিসি, যেই ঋণ উপযুক্ত ব্যক্তিকে ব্যাংক বা নির্ধারিত সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ক্রয়ের জন্য দেওয়া হয় ব্যক্তির মাসিক আয় এবং স্বক্ষমতার ভিত্তিতে।

কেন নেবেন হোম লোন?

আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে প্রধান যে বাধা তা হলো, সময় এবং অর্থ। আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সেটা আপনার হাতে না-ও থাকতে পারে। এছাড়াও এই বাস্তবায়নের জন্য লাগবে সুদীর্ঘ একটি সময়, যেখানে সর্বদা অর্থের যোগান থাকতেই হবে। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য ব্যাংক এবং বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় রেটে দেয় হোম লোন। হয়তো বাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা প্রয়োজন, সেই টাকা একসাথে যোগাড় করা আপনার পক্ষে সম্ভব না, আর এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে আপনার স্বপ্ন পূরণও সম্ভব নয়। একারণেই হোম লোন নিয়ে বাড়ির কাজ করে ধীরে ধীরে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার পদ্ধতিটির উদ্ভাবন। সেইসাথে বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুসারে, হোম লোনের ইন্টারেস্টের কারণে আয়করেও ছাড় রয়েছে।

কতটুকু লোন নেয়ার জন্য আপনি উপযুক্ত?

হোম লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে আগে ভাবতে হবে আপনি কতটুকু ঋণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত, কতটুকু আপনার সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করবে। এই ক্ষমতা নির্ভর করবে আপনার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা কতখানি তার উপর। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনার আয় এবং আনুষঙ্গিক খরচের পরে আপনার কতটা উদ্বৃত্ত থাকে তার উপর। ব্যাংক বা এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার উপযুক্ততা নির্ধারণ করবে আপনার বা আপনার স্বামী/স্ত্রীর আয়-উদ্বৃত্ত, সম্পত্তি, দেনা, আয়ের সুস্থিতিশীলতা ইত্যাদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভিত্তিতে।

ব্যাংকের আসল বিবেচনার বিষয় হচ্ছে আপনি আপনার ঋণ সঠিক সময়ের মধ্যে শোধ করতে পারবেন কিনা। আপনার আয়-উদ্বৃত্ত যত বেশি হবে, আপনি তত বেশি পরিমাণ ঋণের জন্য উপযুক্ত। আয়-উদ্বৃত্ত মানে হলো সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স বাদ দিয়ে আপনার আয়। ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানভেদে এই পরিমাণের হেরফের হয়, কিন্তু গড়পড়তায় ব্যাংক ধরে নেয় আপনার আয়- উদ্বৃত্তের ৫০ শতাংশ ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ। কত সময়ের জন্য ঋণ নিচ্ছেন আর কত শতাংশ ইন্টেরেস্টে ঋণ নিচ্ছেন এটিও লোন নেয়ার পরিমাণকে ঠিক করতে সহায়তা করে। এইসব কিছু বিবেচনা করে ব্যাংক আপনাকে একটি লিমিট ঠিক করে দেবে, যা আপনি কতটুকু ঋণ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত তা ঠিক করতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন পেশার উপর একটা নির্ধারিত হারে ইন্টারেস্ট রেট আরোপ করে। সাধারণত আমাদের দেশে এই হার ৮.৫-১১% এর মধ্যে স্থির করা হয়।

সর্বোচ্চ কতটুকু লোন আপনি নিতে পারবেন?

আপনি লোন গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হলে, অধিকাংশ ব্যাংক কিংবা লোন প্রদায়ী সংস্থাগুকে তাদের নীতিমালা অনুসারে আপনার ফ্ল্যাট বা বাড়ির দামের ১০-২০% টাকা এককালীন ডাউন পেমেন্ট হিসেবে দিতে হবে। বাকি ৮০-৯০% টাকা আপনাকে ঋণপ্রদায়ী সংস্থা কিংবা ব্যাংক দেবে। আপনার রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা হস্তান্তরের ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি ফি ইত্যাদি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মোট প্রদানকৃত অংকের অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সাধারণত ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাধিক কত ঋণ পাবেন সেটার ভিত্তিতে আপনাকে লোনের পরিমাণ দেখায়, কিন্তু এটি আপনাকে পুরাটাই নিতে হবে এমন নয়। আপনি আপনার সুবিধামতন এই পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে কম পরিমাণ ঋণ নিতে পারেন। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, ডাউন পেমেন্ট বেশি হলে এবং লোনের পরিমাণ কম হলে, আপনার ইন্টারেস্টের পরিমাণও কমে যাবে। যেটা আপনার জন্য পরবর্তীতে স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কী কী লাগবে?

আপনি যদি লোন নিতে চান আপনার সাথে আইন ও নীতিমালা অনুসারে কিছু দরকারি কাগজপত্র এবং তথ্য সাথে থাকতে হবে। আপনি প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পরে আপনি সে প্রতিষ্ঠানের হোম লোন সেকশনের মানদণ্ড এবং চাহিদা মোতাবেক আপনাকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এরজন্য মূলত যেসব তথ্য অবশ্যই লাগবে তা হলো:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র

২. ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

৩. ট্যাক্স পরিশোধের সার্টিফিকেট

৪. বায়না, মালিকানার দলিল

৫. মূল্যমানের যথাযথ দলিল

৬. ইন্স্যুরেন্স এর কাগজপত্র

৭. মোক্তারনামা বা যথাযথ লিখিত অনুমোদনপত্র

এসব ছাড়াও আপনাকে আপনার অবস্থা বুঝে আরো কিছু তথ্য দিতে হতে পারে। আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে আপনাকে ১ বছরের বেতনের স্টেটমেন্ট এবং এর সাথে যেই প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিচ্ছেন সেখানে একজন ইন্ট্রোডাক্টর লাগবে যার সূত্রে আপনাকে ব্যাংক ঋণ দেবে। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির সার্টিফিকেট ও পার্টনারশিপের কাগজপত্র দেখাতে হবে, সাথে আপনার বিগত বছরের ইনকাম স্টেটমেন্ট দিতে হবে।

আপনি যদি সেলফ এমপ্লয়েড বা উদ্যোক্তা হন তাহলে আপনাকে নিজস্ব প্যাডে, দলিলকৃত সই, সিল সহ পেশাগত সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে। আর আপনি যদি নিজে জমির মালিক হন তাহলে আপনাকে  বিলের কাগজপত্র দেখাতে হবে।

কোথায় পাবেন হোমলোন?

বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল কোম্পানি আর ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব কিংবা সরকারি পূর্ব-নির্ধারিত হারে আপনাকে ব্যাংকের স্কিম অনুযায়ী লোন দেয়। সাধারণত ব্যাংকে নিজস্ব একাউন্ট থাকলে বা লেনদেন থাকলে হোম লোন পাওয়া সুবিধাজনক হয়। বিভিন্ন বেসরকারি কিংবা সরকারি ব্যাংক, বীমা কিংবা ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর হোম লোন স্কিম তাদের সাইটেই পাওয়া যায়, যেখান থেকে তুলনা করার পরে আপনার জন্য কোনটি সুবিধাজনক সেটি পছন্দ অনুসারে বেছে নিতে পারেন। সরকার এবং ব্যাংক অনুমোদিত যেকোন পদ্ধতিতে আপনি এই হোমলোন পরিশোধ করতে পারেন।