আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়ির বিভিন্ন অংশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওভারহেড ট্যাংকের কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। ওভারহেড ট্যাংক ধ্বসে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু সাবির্ক স্ট্রাকচার ও গুরুত্বের বিবেচনায় ওভারহেড ট্যাংকের ভূমিকা অতুলনীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওভারহেড ট্যাংক কী ও এটি কীভাবে স্থাপিত হয়।

ওভারহেড ট্যাংকের প্রকারভেদ
সাধারণত ভবনে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য বাড়ির ছাদে যে জলাধার স্থাপন করা হয়, তাকেই প্রচলিত ভাষায় ওভারহেড ট্যাংক বলে। গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী দুই ধরনের ওভারহেড ট্যাংকের ব্যবহার দেখা যায় –
১. প্লাস্টিক ট্যাংক
২. কংক্রিট নির্মিত ট্যাংক
প্লাস্টিক ট্যাংক পলিইথিলিন নির্মিত এবং কংক্রিটের ট্যাংক কংক্রিট ও ক্ষেত্রবিশেষে ফেরোসিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়। সুবিধা অসুবিধা এবং বহনযোগ্যতার কথা বিবেচনায় এখন প্লাস্টিকের ট্যাংকের প্রয়োগ বেশি দেখা গেলেও স্থায়িত্ব বিবেচনায় কংক্রিটের ট্যাংকের ব্যবহার এখনও বহুল প্রচলিত। কিন্তু কংক্রিট ট্যাংক নির্মাণের সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন স্ট্রাকচারের খুঁটিনাটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কংক্রিট ট্যাংকের বিস্তারিত।

ট্যাংকের আকার কেমন হবে?
প্রথমেই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় ট্যাংকের আকার নির্ধারণ নিয়ে। ট্যাংকের আকার সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ব্যবহারের প্রকৃতি এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর। একজন ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি প্রতিদিন ১৫০ লিটার এবং পানযোগ্য পানি ৪ লিটার বিবেচনা করে মোট প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ বের করা হয়।
যেমন- ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ, (১৫০+৪) x ৫ = ৭৭০ লিটার, অর্থাৎ পানির আয়তন হলো ০.৭৭ কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১.২ মিটার দৈর্ঘ্যের, ০.২ মিটার প্রস্থের ও ০.৭৭ মিটার উচ্চতার ট্যাংক নির্মাণ করা যেতে পারে। উপরে ফাঁকা অংশের পরিমাণ হবে ০.১ মিটার। এভাবে সকল সদস্যের পানির প্রয়োজনীয়তার হিসাব করে ট্যাংকের আকার নির্ধারণ করা হয়।

নির্মাণ করবেন কীভাবে?
এবারে আসা যাক ট্যাংক নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে। ট্যাংকের আকারের উপর নির্ভর করে এর স্ট্রাকচার ডিজাইন করা হয়। বাংলাদেশে আয়তাকার ও বর্গাকার আকৃতির কংক্রিট ট্যাংক হয়ে থাকে। পানির আধার হওয়ার কারণে সাধারণত ছাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে কিছুটা উপরে এই ট্যাংক স্থাপনের কাজ করা হয়। ট্যাংকটির নির্দিষ্ট একটি লোড থাকার কারণে নিচের ফ্লোরগুলোর স্ট্রাকচারের উপর ভিত্তি করে এটি স্থাপন করা হয়।
হাইরাইজের ক্ষেত্রে তা সাধারণত কোরের (core) ওপর স্থাপন করা হয়। এতে লোড সমভাবে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। লোডকে সমভাবে বণ্টন না করলে পানির চাপে স্ট্রাকচার ফেইল করে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। তাই স্ট্রাকচার ডিজাইন অনুযায়ী নির্দেশিত পরিমাণ রড এবং বন্ডিং সঠিকভাবে মেনে চলে এবং বিল্ডিংয়ের প্রধান বীম-কলাম লেআউটের উপর নির্ভর করে এই ট্যাংক নির্মাণ করলে সম্ভাব্য সকল বিপত্তি এড়ানো সম্ভব।

পানির লিকেজ বন্ধ করাও ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে কংক্রিটের সাথে ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টারের ক্ষেত্রেও ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়াল মেশানো হয়। এছাড়া নির্মাণের সময়ই সঠিকভাবে ইনলেট ও আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে।
কংক্রিট ওভারহেড ট্যাংকের ক্ষেত্রে নির্মাণের পরও নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। ট্যাংকের ঢালাই কাজের সময় ও লিকেজ বন্ধের প্রক্রিয়াতে চাই বাড়তি সচেতনতা। বিভিন্ন বড় দুর্যোগ এবং পানির চাপে ট্যাংক ধ্বসে পড়া থেকে রক্ষা করতে বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারের বিবেচনায় লোড ও বেন্ডিং মোমেন্ট হিসাব রেখে নির্মাণ করা অতীব জরুরি। ভবন নির্মাণের সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিৎ সবার নিরাপত্তার কথা ভেবেই।