রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।
Continue readingভূমিক্ষয় কেন হয়? জানুন রোধের উপায়
আমাদের বাসার জন্য জমি ঠিকমতো তৈরি করে এরপরেই আমরা বাড়ি নির্মাণ শুরু করি। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে টপসয়েল এবং মাটির ক্ষয় হয়। যা আমাদের স্থাপনাকে করে তোলে দুর্বল এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠে বিপদসঙ্কুল। এজন্য আমাদের বাসাবাড়ির আশেপাশের জমি ক্ষয় রোধ করা খুবই জরুরি।
জমির ক্ষয় রোধ করতে না পারলে ফাউন্ডেশন দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে দেয়ালও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তাই নিরাপদ আবাসস্থানের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই জমির ক্ষয় রোধ করতে হবে। আসুন আমরা জেনে নিই জমি কী কী কারণে ক্ষয় হয়, কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর কী কী উপায়ে আমরা ভূমিক্ষয় রোধ করতে পারি।
ভূমিক্ষয় কেন হয়?
সাধারণত বাড়ি নির্মাণের আগে জমির উপযুক্ত পরিচর্যা করে নিয়ে এর পরে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রাকৃতিক কারণেই মূলত জমির ক্ষয় হয়। যেসব এলাকায় বৃষ্টির প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় জমিতে ভূমিক্ষয়ও বেশি, যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না করা হয়। বৃষ্টির ফোঁটা ক্রমাগত পড়ায় টপসয়েলের উপাদান হাল্কা হয়ে পানির স্রোতে ভেসে যায়। ফলে ভূমিক্ষয় দেখা যায়।
এছাড়া বাতাসের প্রভাবে মাটির উপরের স্তর হাওয়ায় ভেসে সরে যায়। এতে করে মাটির আদি আকৃতি নষ্ট হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়। ক্রমাগতভাবে পানি মাটিতে পড়লেও ভূমিতে আস্তে আস্তে ক্ষতি হতে থাকে। উপরের স্তরের মাটি সরে যেতে থাকে। এই সরে যাওয়ার ফলে মাটির গঠনগত প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে ভূমিক্ষয় হয়।
নদীভাঙন ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীর পাড়ের ক্ষয় হয়, পাড় ভাঙে। এর সাথে সাথে পাড়ে অবস্থিত মাটি নদীগর্ভে ক্ষয় হয়ে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও টেকসই পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার না করা, আগুন ইত্যাদি বহুবিধ কারণেও ভূমির টপসয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়।
কী কী হয় ভূমিক্ষয়ে
টপসয়েল হ্রাস
এটি মাটি ক্ষয়ের বৃহত্তম প্রভাব। কারণ টপসয়েল উর্বর, যদি এটি সরিয়ে ফেলা হয়, এটি উদ্ভিদের ক্ষতি করে বা জমির কার্যকারিতায় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে করে জমির ল্যান্ডস্কেপিং করা দুরূহ হয়ে যায়।
মাটির সংক্ষেপণ
টপসয়েলের নিচে মাটি সংক্রমিত এবং শক্ত হয়ে যায়, এটি পানির গভীরতর স্তরগুলোতে অনুপ্রবেশের ক্ষমতা হ্রাস করে, যা আরও মারাত্মক ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
জৈব এবং উর্বর পদার্থ হ্রাস
জৈব পদার্থের সাথে ভারী টপসয়েল অপসারণের ফলে জমির নতুন উদ্ভিদ বা ফসলের নতুন করে জন্মানোর ক্ষমতা হ্রাস পাবে। যখন নতুন ফসল বা উদ্ভিদগুলো এলাকায় সফলভাবে স্থাপন করা যায় না, এটি জৈব পুষ্টির হ্রাস স্তরের চক্রকে স্থায়ী করে।
দুর্বল নিষ্কাশন
কখনো কখনো বালির সাথে অত্যধিক সংকোচন কার্যকর আলাদা ভূমির ক্রাস্ট তৈরি করে একটি কার্যকর ভূত্বক তৈরি করতে পারে, যেটি গভীর স্তরে পানি প্রবেশ করতে আরও কঠিন করে তোলে।
কিছু উপায়ে, ঘন কাদাযুক্ত মাটির কারণে এটি ক্ষয়কে সহায়তা করতে পারে, তবে এটি যদি বৃষ্টির পানি বা বন্যার ফলে বৃহত্তর স্তরের পানিবায়ু স্থায়ী হয়, তবে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ভূপৃষ্ঠের পানির উপর। ফলে পানি জমে থেকে যায়।
উদ্ভিদের পুনরুৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা
যখন একটি সক্রিয় ফসলি জমিতে মাটি ক্ষয় হয়, বিশেষত বাতাস হালকা মাটির বৈশিষ্ট্য, যেমন- নতুন বীজ এবং চারাগুলো কবর দেওয়া বা ধ্বংস করা হয়। এটি ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।
মাটির অম্লতার মাত্রা
যখন মাটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায়, তখন মাটির অম্লতা বৃদ্ধির উচ্চতর সম্ভাবনা থাকে, যা উদ্ভিদ এবং ফসলের বৃদ্ধির ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে।
দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়
দুর্ভাগ্যক্রমে, যদি কোনো অঞ্চল ক্ষয়প্রবণ হয় বা এর ক্ষয়ের ইতিহাস থাকে তবে ভবিষ্যতে একে সংরক্ষণ করা আরও শক্ত হয়ে যায়। এমন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের মাটির কাঠামো এবং জৈব পদার্থকে হ্রাস করেছে, যার অর্থ এটি দীর্ঘকালীন মেয়াদে পুনরুদ্ধার করা আরও কঠিন হবে।
পানি দূষণ
মাটি থেকে ক্ষয়ের একটি বড় সমস্যা, যেটি বিশেষত কৃষি প্রক্রিয়াগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো সার বা কীটনাশক ব্যবহারের মতো পলল এবং দূষণের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এটি মাছ এবং পানির গুণমানের উপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে।
কীভাবে রোধ করা যায়?
গাটার এবং ডাউনস্প্রাউট
বৃষ্টি পড়ার সময় আপনার ছাদের কার্নিশে জমা বৃষ্টির পানি যেদিকে প্রবাহিত করা দরকার সেদিকে এমনভাবে গাটার ও ডাউনস্প্রাউটগুলো সেট করতে হবে যাতে তারা বেলে বা কমপ্যাক্ট মাটিতে নির্মিত বাড়িগুলোর জন্য ঘর থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে প্রসারিত মাটিতে পানি ফেলে দেয়। নর্দমাগুলো যাতে ঘরের দীর্ঘ প্রান্তে চলে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ
বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারদিকে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ল্যান্ডস্কেপিং বা সজ্জাসংক্রান্ত ব্যবস্থা, যা দুটি উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে। মাটি যেখানে চান সেখানে রাখার জন্য ঘাস বা অন্য কোনো নিচু স্থান থেকে জমিটিতে কভার লাগান।
অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ কাঠ, কংক্রিট পেভারস, লাইনারস, শিলা বা নুড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও গাছের ছাল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ভালো দেখায়, তবে বৃষ্টিপাতের জায়গায় জায়গায় থাকার পক্ষে এটি উপযোগী নয়।
ফ্রেঞ্চ ড্রেন
বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারপাশে একটি ফ্রেঞ্চ ড্রেন সিস্টেম ইনস্টল করুন। যখন আপনার ফাউন্ডেশন মাটির পৃষ্ঠের নিচে কয়েক ফুট প্রসারিত হয়, একটি পরিখা খনন করে, নুড়ি দিয়ে রেখাযুক্ত করুন এবং ঘর থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটিতে পারফোরেশনসহ একটি বিশেষ ড্রেন রাখুন। নুড়ি দিয়ে একে ঢেকে রাখুন এবং তারপরে নুড়ি দিয়ে মাটি যুক্ত করুন। পানির প্রবাহটি ভিত্তি থেকে দূরে সরাতে একটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ডাউনস্লোপ রয়েছে, তা নিশ্চিত করুন।
গ্রেড মেরামত করুন
ফাউন্ডেশনের চারপাশে ঢালটি মেরামত করুন। ফাউন্ডেশনের ১০ ফুটের মধ্যে মাটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে ঢালু হওয়া উচিৎ।
আপনি যদি গ্রেডটি মেরামত করতে না পারেন, তবে খনন করুন এবং যদি সম্ভব হয় তবে ফাউন্ডেশনে একটি আর্দ্র বাধা যুক্ত করুন। অন্যথায়, বাড়ি থেকে দূরে পানি চ্যানেল করার জন্য একটি সামান্য ডাউনস্লোপ দিয়ে একটি সোয়েল তৈরি করুন। আপনি কংক্রিট বা শিলা দিয়ে সোয়েলটি লাইন করতে পারেন। তবে শিলাটি যথেষ্ট পরিমাণে ভারী হওয়া উচিৎ।
নিষ্কাশন নজরদারি করুন
ঝড়ের সময় নিষ্কাশন নজরদারি করুন। আপনার যদি ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে যা পানি প্রবাহিত করে পানি সরিয়ে ফেলে, তাহলে সেই ড্রেনগুলো পাতা এবং ময়লা মুক্ত রাখুন। আপনার ছাদে থাকা পানির ট্র্যাপ এবং ডাউনস্পাউট সিস্টেমের ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রযোজ্য।
বাড়ি বানাবেন? জেনে নিন ব্রিক সোলিং সম্পর্কে
বাড়ি নির্মাণের সময় লক্ষ্য রাখতে হয় খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারে। কিছু কাজ ক্ষেত্রবিশেষে দৃশ্যমান থাকে, আবার কোনো কোনো কাজ দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু এর প্রতিটি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা কঠিন। এরকম একটি কাজই হচ্ছে সোলিং।
সোলিং কী? কোথায় করা হয় সোলিং? কীভাবে হিসাব করা হয় এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ? আসুন জেনে নিই এক নজরে।
ব্রিক সোলিং কী?
ভবনের ভিত্তি বা ফাউন্ডেশনে, মেঝেতে, কলাম/পিলারের নিচে, রাস্তার সাবগ্রেড স্তরের উপরে সাধারণত এক বা দুই স্তরে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর এই ইটের মাঝে যে ফাঁকা স্থান থাকে তা পূর্ণ করা হয় বালি দিয়ে। নির্মাণের পরিভাষায় একেই বলা হয় সোলিং।
ফুটপাথে, রাস্তায়, গ্রাম্যপথে, দালানের মেঝেতে, বাগানের ভিতরে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কংক্রিটের ভিতের নিচে এরকম ইটের সোলিং করা হয়ে থাকে।
কেন করা হয় সোলিং?
সোলিংয়ের উপরে যে ভার থাকে তা সাবগ্রেড স্তরের উপর ছড়িয়ে দিতে মূলত সোলিং করা হয়। সাবগ্রেড স্তরের মাটির ভারবহন ক্ষমতা দরকারের চেয়ে কম হলে সোলিং করে মাটির উপর সাব-বেজ তৈরি করা হয়। সাব-বেজ মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
Rigid বা Flexible Pavement এর চেয়ে অনেক কম খরচে মাটির রাস্তাকে উন্নত করতে সোলিং করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ‘৮০-র দশকের শেষ ভাগে ও ‘৯০ এর দশকে প্রচুর গ্রাম্য রাস্তা সোলিং করে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নত করে কাদামুক্ত করা হয়েছিল।
কংক্রিট বা গাঁথুনির কাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিমেন্ট-বালি-পানির মিশেল বা মর্টার (যাকে স্থানীয় ভাষায় মশলা বলা হয়) থেকে পানি চুঁইয়ে মিশ্রণের শক্তি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি মোকাবেলা করতে ইটের সোলিংয়ের ফাঁকে বালি দিয়ে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে নিশ্ছিদ্র সমতল তৈরি করা হয় ও তা নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হয়।
সোলিংয়ের প্রকারভেদ
সোলিং মূলত ইট বিছানোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মূলত তিন ধরনের সোলিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১. ফ্ল্যাট বা সোজা সোলিং (Flat Soling)
২. হেরিং-বোন বন্ড সোলিং (Herring-Bone Bond Soling)
৩. কোনাকুনি বা ডায়াগোনাল সোলিং (Diagonal Soling)
কোথায় ব্যবহার করা হয় সোলিং?
উপকরণের সহজলভ্যতা, শ্রমের স্বল্পমূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আমাদের দেশে ইট সবচেয়ে সুলভ মূল্যের নির্মাণ উপকরণ। তাই সোলিংয়ের কাজে অনেক আগে থেকেই ইট ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন কাজে সোলিং করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-
– ইমারতের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিতে।
– কলাম/পিলার ইত্যাদির নিচে।
– রাস্তা তৈরির সময় সাবগ্রেড স্তরের নিচে।
– কালভার্ট তৈরির সময় অ্যাবেটমেন্ট এবং উইং দেয়ালের নিচে।
– ঘরের মেঝেতে।
– জমি বা ঘরের সীমানা প্রাচীরের নিচে।
– লন, বাগান বা মহল্লার ভেতরের রাস্তা তৈরিতে।
– রিটেইনিং দেয়ালের নিচে।
সোলিংয়ের খরচের হিসেব
সোলিংয়ের কাজে খরচের হিসেব করতে গেলে দুটি ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।
১। ইটের আকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা
২। গাঁথুনির প্যাটার্ন ও উক্ত প্যাটার্নে ইটের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা।
নিচে একটি উদাহরণ দিয়ে এদের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হলো।
সোলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ইটের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল
= ২৫.৪ সেমি. X ১২.৭ সেমি.
= ০.২৫৪ মি. X ০.১২৭ মি.
= (০.২৫৪ X ০.১২৭) বর্গমিটার
ফ্ল্যাটসোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর ফ্ল্যাটসোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৩১টি। হেরিং-বোন বন্ড সোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর হেরিং-বোন বন্ড সোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৫২টি।
ক্ষেত্রফল অনুসারে এভাবে বের করে নিন আপনার প্রয়োজনীয় সোলিং-এ দরকারি ইটের সংখ্যা। ইটের বাজার মূল্য দিয়ে গুণ করুন। স্থপতি বা প্রকৌশলীর কাছে জেনে নিন প্রয়োজনীয় ইটের সাথে কী পরিমাণ পরিমাণ বালি, সিমেন্ট ও পানি মেশাতে হবে তার অনুপাত। এগুলোর বাজার মূল্য বের করে ইটের দামের সাথে যোগ করলে আপনি নিজেই বের করে ফেলতে পারবেন সোলিংয়ের খরচের আদ্যোপান্ত।
স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: ডার্ট ব্যালান্স কীভাবে করে?
নিজের জায়গায় নিজের বাড়ি করার স্বপ্ন মানুষের পরম আরাধ্য। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে বাড়ি বানানোর জন্য কিছু অত্যাবশ্যকীয় কাজ আমাদের করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো আর্থওয়ার্ক কিংবা জমির মাটির ব্যবস্থাপনা। জমি তৈরি করা যেকোনো নির্মাণকাজের প্রথম ধাপ।
জমির প্রকৃতি, মাটির প্রকরণ, মাটিতে পানির উপস্থিতির পরিমাণ, বালু, কাদা ইত্যাদির অনুপাত সঠিকভাবে পরিমাপ করে এরপরে জমি সঠিকভাবে পরিচর্যা করে তবেই তা বাড়ি তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়। আর বাড়ি তৈরির জন্য জমিতে নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নকে আর্থওয়ার্ক বলে। আর্থওয়ার্ক একটা স্থিতিশীল, দীর্ঘস্থায়ী বাড়ি নির্মাণের জন্য অত্যন্ত আবশ্যক বিষয়।
ডার্ট ব্যালান্স কী?
সাধারণত এক জায়গার মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী জায়গার মাটির উপর ফেলে সে জায়গার মাটি উঁচু করা হয়- এই প্রক্রিয়াটিকেই ডার্ট ব্যালান্স বলে। পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ কমানোর জন্য এবং প্রয়োজনমাফিক জমির বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা কম বেশি করার জন্য জমি থেকেই এক জায়গার মাটি সরিয়ে আরেক জায়গায় দেওয়া হয় এর জন্য।
সাধারণত কাট এবং ফিল পদ্ধতিতে ডার্ট ব্যালান্স করা হয়। ল্যান্ডস্কেপিং-এর অংশ হিসেবে কিংবা মাটি ভরাট করে গ্রাউন্ড ফ্লোর উন্নীত করতে ডার্ট ব্যালান্স করতে হয়।
মাটির বিভিন্ন স্তরের প্রকৃতি এবং অঞ্চলভেদে, একেক জায়গায় একেকভাবে ডার্ট ব্যালান্স করতে হয় নকশাকৃত বাড়ির প্রয়োজনমাফিক। সাধারণত রাস্তার লেভেল থেকে উঁচুতে বাড়ি বানাতে হয়। এজন্য সাইটে মাটি ফেলে এরপরে এতে সঠিক গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে সাইটের স্থান বিশেষ উঁচু করতে হয়। তাই সাইটের মধ্যে যে স্থান নিচু করা উচিত, সেখান থেকে মাটি নিলে বাইরে থেকে মাটি আনার খরচ ও পরিশ্রম দুইটাই কমে যায়, জমির টপ সয়েল সুরক্ষিত হয়।
ডার্ট ব্যালান্স কীভাবে করতে হয়?
কাটা ঢালগুলোর খুব কমই ২:১ অনুপাতে (অনুভূমিক থেকে উল্লম্ব মাত্রাগুলো) তৈরি হয়। রোডওয়ে বা রেলের কাটা অংশগুলো পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর তুলনায় উচ্চতায় কম হয়। অপারেশনাল দৃষ্টিকোণ থেকে রাস্তার কাটা অংশগুলোর সাথে সম্পর্কিত অনন্য পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বায়ু দূষণকারী উপাদানগুলো, কাটা অংশ দ্বারা নির্মিত ‘উপত্যকাগুলোতে’ অবস্থান করতে পারে।
বিপরীতভাবে, শব্দদূষণকারী উপকরণগুলো কাটা বিভাগগুলো দ্বারা হ্রাস করা সম্ভব হয় যেহেতু নিচু রোডওয়ের নকশা দ্বারা শব্দের সঞ্চালনের লাইনের কার্যকর বাধা তৈরি করা সম্ভব হয়। ভরাট সেকশনগুলো কোনো রোডওয়ে বা ট্র্যাকবডের উঁচু সেকশান হিসাবে তৈরি করা হয়।
ভরাট সেকশানের পরিবেশগত প্রভাবগুলো সাধারণত বায়ু দূষণ রোধের ক্ষেত্রে অনুকূল, তবে শব্দ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে, আশেপাশের বাসিন্দাদের এক্সপোজার সাধারণত বৃদ্ধি পায়, কারণ শব্দ জ্যামিতিতে শব্দ প্রাচীর এবং অন্যান্য ধরনের শব্দ পথের বাধা কম কার্যকর হয়।
আর্থ রিটেইনিং স্ট্রাকচার কী?
রিটেইনিং কাঠামো মাটি এবং/অথবা শিলা ধরে রাখতে প্রস্তুত করা হয়। এগুলো সাধারণত গ্রেডে পরিবর্তনগুলো সামঞ্জস্য করতে, ঢাল আটকে রাখতে কিংবা ঢালের মাটি যাতে খননকৃত গর্তে না আসে সেজন্য ব্যবহৃত হয়। একটি বিস্তৃত অর্থে, আর্থ রিটেইনিং কাঠামোগুলো তাদের ফেসিং অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে, যেমন: এটি যদি ৭০ ডিগ্রির চেয়ে বেশি হয় তবে এগুলো সাধারণত প্রাচীর ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
সাধারণত, জমি খনন করে পাশের মাটি যাতে খননকৃত গর্তে না পড়ে সেজন্য দেওয়া হয়। বিভিন্ন কাজের উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন রকমের আর্থ রিটেইনিং স্ট্রাকচার তৈরি ও ব্যবহার করা হয়, যেমন- অভিকর্ষজ, শীটপাইল, ক্যান্টিলিভার ইত্যাদি। আসুন জেনে নেই কোনটির উপযোগিতা কী।
গ্র্যাভিটি রিটেইনিং ওয়াল
– গ্র্যাভিটি রিটেইনিং ওয়াল কেবলমাত্র পার্শ্বীয় পৃথিবীর চাপ প্রতিরোধ করার জন্য তার নিজের ওজনের উপর নির্ভর করে।
– সাধারণত, এই প্রকারের প্রাচীরটি বিশাল কারণ এটি মাটির চাপকে লড়াই করার জন্য উল্লেখযোগ্য মাধ্যাকর্ষণ বোঝা প্রয়োজন।
– এই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ প্রাচীর কাঠামোটি নকশাকৃত করার সময় স্লাইডিং, ওভারট্রিং এবং ভারবহন বাহিনী বিবেচনা করা হবে।
– এটি বিভিন্ন উপকরণ যেমন কংক্রিট, পাথর এবং রাজমিস্ত্রি ইউনিট থেকে তৈরি করা যেতে পারে।
– এটি ৩ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার জন্য অর্থনৈতিক।
পাইলকৃত রিটেইনিং ওয়াল
– একে অপরের সাথে সংলগ্ন করে কাঠ কিংবা কংক্রিটের পাইলগুলো চালনা করে পাইল ধরে রাখার প্রাচীরটি নির্মিত হয়।
– পাইলকে এমন গভীরতায় বাধ্য করা হয় যা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে যথেষ্ট যা প্রাচীরের উপরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে।
– এটি অস্থায়ী এবং স্থায়ী উভয় কাজে নিযুক্ত করা হয়।
– পাইলড দেয়ালগুলো উচ্চ শক্তিকে ধরে রাখার উপাদান সরবরাহ করে যা পার্শ্ববর্তী কাঠামো বা বৈশিষ্ট্যগুলোতে প্রায় কোনও ঝামেলা ছাড়াই বৃহত খনন গভীরতায় পার্শ্বীয় চাপ ধরে রাখতে সক্ষম।
– স্টিল শীট ব্যবহার করে একটি ঢাল বা খনন করে প্রয়োজনীয় গভীরতা পর্যন্ত তৈরি করা হয় তবে এটি খুব বেশি চাপ সহ্য করতে পারে না।
– শীটের পাইলটি ৬ মিটার উচ্চতা অবধি প্রাচীরটি ধরে রাখে
– সাধারণত শহরে এই রকমের স্ট্রাকচার বেশি ব্যবহৃত হয় যদি ফাউন্ডেশন গভীর হয়।
এছাড়াও আরো কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো বড় বড় সিভিল কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর্থওয়ার্ক যেকোন স্ট্রাকচারের স্থায়িত্ব ও মজবুত করে রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এক্সপার্টের পরামর্শ নিয়ে আমাদের আর্থওয়ার্কের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে। সঠিক নিয়মমাফিক আর্থওয়ার্ক সবার জীবনের নিরাপত্তা দান করে আর আমাদেরকে আমাদের এক টুকরো জমিতে উপহার দেয় স্বপ্নের নীড়।
বাড়ি নির্মাণ: আগুনের হাত থেকে বাঁচবেন কীভাবে?
বহুদিন ধরেই ভবনে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাটি ঢাকা শহরের নাগরিক জীবনের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। ২০১৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ ও নগর পরিকল্পনা না মেনে স্থাপন করা রাসায়নিক গুদামের কারণে চকবাজারে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যাতে মারা যান ৮১ জন মানুষ।
এরপর ধারাবাহিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে, মজুদ সংক্রান্ত স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড চলতে থাকে। এরপর মার্চ মাসে আসে এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এর কিছুদিন পরেই ধানমণ্ডিতে একটি আবাসিক ভবনে আগুন লেগে মারা যান একজন গৃহকর্মী।
ঢাকা শহরে আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে গেলেও অগ্নি নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা এখনো পরিষ্কার। ঢাকা শহর প্রতিদিন বেড়ে চলেছে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে। মানুষের আবাসন ও বাণিজ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। অথচ সেই ভবনের উচ্চতার সাথে তাল রেখে বাড়েনি ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপণ সামর্থ্য।
বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিকাণ্ডের আগে ফায়ার সার্ভিসের ১০ তলার বেশি আগুন নিভানোর কোনো সরঞ্জামই ছিল না। এসকল বিয়োগান্তক ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে তাই ভবনের নকশাকালেই থাকা চাই অগ্নি নির্বাপণ এবং আগুন লেগে গেলে ভবনে অবস্থানকারীদের দ্রুততার সাথে সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা। এ বিষয়ে করণীয় তাহলে কী কী?
ভবন নির্মাণের আগেই নিশ্চিত করুন নিরাপত্তা
প্রথমেই মনে রাখতে হবে (এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) – আপনার বাড়ির নকশা রাজউক অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদনে অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা একটা প্রধান বিষয়, তাই অগ্নি নির্বাপণে মানসম্পন্ন না হলে ভবন অনুমোদন পাওয়া যাবে না।
বাস্তবে যদিও অনেকেই খরচ কমাতে স্থপতির সাহায্য না নিয়ে নিজেরাই হাতুড়ে লোক দিয়ে নকশা আঁকান এবং অবৈধ উপায়ে তা অনুমোদন নিয়ে আসেন অথবা অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে ভবন তৈরি করেন। এ অবস্থায় আগুন সম্পর্কে কোনো সচেতনতা নকশায় থাকে না। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
ভবনের ব্যাপারে যা যা মানতেই হবে
১. ভবনের প্রকৌশলগত অগ্নি নির্বাপণ সিস্টেমকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সিঁড়ি কোথায় হবে বা কতটা চওড়া হবে- এখানে প্রকৌশলীর কথাই শেষকথা।
২. ভবনের আকার অনুসারে সাধারণ সিঁড়ির সাথে যদি ফায়ার এক্সিটের দরকার হয় তখন তা দিতে হবে। এই ফায়ার এক্সিটকে অগ্নি নিরোধক দরজা দিয়ে বন্ধ করতে হবে এবং এটি প্রতি তলায় করতে হবে।
৩. ভবন নির্মাণের আগেই দমকল বাহিনীর অগ্নি বিষয়ক এক্সপার্টের সাথে কথা বলতে হবে। বাসার সামনের রাস্তায় যে উচ্চতায় আগুন নিভাতে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না সেই উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা উচিত নয়।
৪. বর্তমান জীবন যাপন অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। আমরা প্রায় প্রতিটি ঘরেই এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করি, যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তাই বৈদ্যুতিক, গ্যাস সংক্রান্ত এবং তাপ তৈরি করে এমন প্রতিটি উপকরণের সংযোগ এবং আশেপাশের সরঞ্জাম কেমন হবে এর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সর্বোচ্চ পরিমাণে।
৫. ভবন থেকে ভবনের জন্য নির্ধারিত দূরত্ব রয়েছে। এটিও বজায় রাখা দরকারি যেন এক ভবন থেকে আরেক ভবনে আগুন ছড়াতে না পারে।
অগ্নি নির্বাপণ আইন এবং বাস্তবতা
বাংলাদেশে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে ভবনে অগ্নি নির্বাপণে রয়েছে সুষ্পষ্ট বিধিমালা। সেখানে প্রতিটি অবশ্যপালনীয় ও নিরাপদ ভবনচর্চা সম্পর্কে আলাদাভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণের ধারণা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় কারণ, প্রযুক্তি জড়িত এর সাথে সরাসরি।
বাংলাদেশে ২০০৬ সালে যে অগ্নি নির্বাপণ আইন প্রণীত হয়েছিল এটি বারে বারে সংশোধন করার পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা নেয়া হয়নি বিভিন্ন ধরনের চাপের কারণে।
তবে বর্তমান আইনেও বসতবাড়ি, ফ্ল্যাট, মেস বোর্ডিং বা হোস্টেল, আবাসিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ বা রেস্টুরেন্টে অগ্নি নির্বাপণ বিধিমালা রয়েছে যা মেনে চললে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের জন্য আগুন নেভানো সহজ হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিধিমালা নিম্নরূপ-
১. ভবনের উচ্চতা ও প্রধান সড়কের প্রশস্ততা এবং প্লটের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংক্রান্ত: সব প্লট ও ভবনে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথ থাকতে হবে এবং আবাসিক বহুতল ভবনের সামনের প্রধান সড়ক কমপক্ষে ৯ (নয়) মিটার প্রশস্ত হতে হবে।
একই প্লটে একাধিক ভবন থাকলে দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশের সুবিধার জন্য মূল প্রবেশ পথে গেটের উচ্চতা কমপক্ষে ৫(পাঁচ) মিটার হতে হবে।
২. ওয়েট রাইজার স্থাপন: ভবনে ওয়েট রাইজার থাকতে হবে। প্রতি তলার ছয়শো বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে।
৩. স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার স্থাপন: স্বয়ংক্রিয় ভাবে আগুনের ধোয়া বা তাপ সেন্সর করে নিজে নিজেই এক্টিভ হয়ে যায় এমন স্প্রিংকলার সিস্টেম এখন খুবই সহজলভ্য। করিডোর ও কারখানার মতো জায়গায় এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বসানোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
৪. স্থায়ী অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য পানি সরবরাহ: ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থাকতে হবে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে।
৫. ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ: একটি সচল পাম্প হাউজ থাকতে হবে,এটিকে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণ করতে হবে এবং এটি অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
৬. স্মোক ও হিট ডিটেক্টশন সিস্টেম: সব স্মোক ও হিট ডিটেক্টর ও এয়ার ডাম্পারের অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করতে হবে। এটি নিচে ফায়ার ফাইটিং রুমে মজুদ থাকবে এবং আগুন লাগলে সবচেয়ে সহজে বের করে আনার প্রক্রিয়া থাকতে হবে।
৭. ইমার্জেন্সি লাইট: জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়। ভবনে ৫’শ জনের জন্য দুটি, এক হাজার জন পর্যন্ত তিনটি এবং এর বেশি লোক থাকলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। এটা শুধু আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত হবে।
৮. বিকল্প সিঁড়ি: ছয় তলার বড় ভবনে অবশ্যই আলাদা ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকতে হবে এবং তা বেজমেন্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে না।
৯. আলাদা লিফট: একাধিক লিফটের একটি বা চারটির বেশি লিফটের দুটি ফায়ার লিফট হিসেবে নির্মাণ ও নকশায় থাকতে হবে।
১০. রিফিউজ অঞ্চল: রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ এলাকা। আগুন লেগে গেলে ভবন থেকে সরাসরি বের হতে না পারলে মানুষ এসব জায়গায় আশ্রয় নিতে পারে। এটিও নকশায় থাকতে হবে।
১১. রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে, অগ্নি নির্বাপণ বিধিমালা আপনার ভবনে কিছু অতিরিক্ত খরচ যোগ করতে পারে। কিন্তু সেই খরচ বাঁচাতে গিয়ে আপনি যদি বিধিমালা না মানেন বা পেশাদার স্থপতি-প্রকৌশলী দ্বারা নকশা ও স্ট্রাকচার প্রণয়ন না করেন ও অবৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি করেন, পরবর্তীতে আগুনের বিপক্ষে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় যে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তা হবে অপূরণীয়।
ঢাকায় বসবাস: কেমন হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ?
“ঢাকা শহরে একটি বাড়ি”- এই স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার পার্থক্য বাড়তে বাড়তে মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। চারশরও বেশি বছরের পুরাতন রাজধানী এই নগরী সারা বাংলার মানুষের বসবাসের জন্য এর লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, এই অঞ্চলে সভ্যতা যতই এগিয়েছে। পুরাতন ঢাকায় মানুষের বসত শুরু হয়েছিল ঢাকা রাজধানী হবারও অনেক আগে।
বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকা আর মধুপুর ট্র্যাকের লালচে উর্বর মাটি কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছিল ঢাকাকে। এরপর বৃটিশ ভারত, পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর ক্রমেই বেড়েছে শহর হিসাবে ঢাকার গুরুত্ব। এর সাথে সাথে আরো বেশি মানুষ এসেছে ঢাকায় বসবাস করতে।
ঢাকা শহরে আবাসন প্রথমদিকে পরিকল্পিত ছিল না একদমই। পুরাতন ঢাকায় সেই অপরিকল্পিত কিন্তু স্বতস্ফূর্ত আবাসন এখনো দেখা যায়। কিন্তু ঢাকায় যত মানুষ বাড়তে থাকল এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মতো সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকল, ততই পরিকল্পিত আবাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।
এ লক্ষ্যেই ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসাবে প্রথমে ধানমণ্ডি গড়ে ওঠে। তবে মধ্যবিত্তের আবাসনের জন্য বড় আকারে পরিকল্পিত নগরের অংশ হয়ে ওঠে মোহাম্মদপুর। সেকেন্ড ক্যাপিটাল হিসাবে শেরেবাংলা নগরের গোড়াপত্তন এ অঞ্চলে মানুষের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরে ঢাকা শহর বড় হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত।
এই কারণে আবাসনের চাহিদা কয়েক বছরের মাথায় বেড়েছে প্রায় শত গুণ। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতেই নতুন অভিজাত অঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠেছে বনানী, গুলশান ও বারিধারা। এর মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট বিপ্লবের জের ধরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে চলে আসে ধানমণ্ডি। একই সাথে গড়ে ওঠে উত্তরা এবং মিরপুরের পল্লবী। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।
এখন পূর্বাচল ও উত্তরার বিভিন্ন অংশ গড়ে উঠছে নতুন এলাকা হিসাবে। কিন্তু ঢাকার আশেপাশে থাকতে মানুষের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার অঞ্চলের দিকে ঝুঁকে পড়া বা ঢাকার ক্রমেই খারাপ হতে থাকা নাগরিক অবস্থার কারণে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- “ঢাকায় কি এখনো আবাসন সম্ভব?”
ঢাকার আবাসনের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করলে একে খরচের হিসাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেই অঞ্চলগুলোতে দামের তারতম্য সুবিধা অসুবিধায় রয়েছে ভিন্নতা। সেগুলোই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
বাজেট যখন সীমিত নয়
ঢাকায় আবাসনের জন্য মানুষ মূলত পছন্দ করে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অঞ্চলগুলো। এইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগ, ভালো মার্কেট বা বড় সুপারস্টোরের সহজলভ্যতা, লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর উপস্থিতি, ভালো স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাছাকাছি দুরত্ব। এসব সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করলে ঢাকায় এখনো গুলশান, বনানী, বারিধারা উঁচু বাজেটের মানুষজনের জন্য পছন্দের জায়গায় থাকবে উপরেই। এর সাথে রয়েছে ধানমণ্ডি।
এসব জায়গায় নতুন প্লটের পরিমাণ খুবই সীমিত। তবে রেনোভেশান ও ডেভেলপার দ্বারা পুরাতন বাড়ি অধিগ্রহণের কারণে এখনো উঠছে নতুন ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট বাসার আকার বড় চাইলে ও বাজেটগত সমস্যা না থাকলে এই অঞ্চলগুলো এখনো হতে পারে ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবাসন অঞ্চল।
অর্থের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য
ঢাকায় বাসা তৈরি করা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু। অনেকের কাছেই বাজেট তুলনামূলক বেশি থাকলেও পুরাতন একটি বাসার চেয়ে নতুন একটি অঞ্চলে গোছানো আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অর্থের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চান। তাদের জন্য পূর্বাচল, উত্তরা নতুন প্রজেক্ট এবং বসুন্ধরা অঞ্চল হতে পারে আবাসনের জন্য খুবই ভবিষ্যতমুখী কিন্তু গোছানো পছন্দ।
এসব জায়গায় প্লট বরাদ্দ একবার শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু জায়গার বর্তমান মালিক থেকে জায়গা কেনা বা একদম ফ্রেশ জমিতে বাসা নির্মাণের সুযোগ এখনো বর্তমান। এছাড়া এসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ডেভেলপারের পরিকল্পিত আবাসন, যেগুলোতে দাম একটু বেশির দিকে হলেও আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিকল্পিত এবং দুর্দান্ত আবাসন গড়ে ওঠাটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ঢাকার নতুন আসা মেট্রো রেল প্রজেক্ট ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিরপুরের নতুন অঞ্চল, বেড়িবাঁধ ও ক্যান্টনমেন্ট-এর মাটিকাটা অঞ্চলেও জমির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগও হতে পারে বেশ স্মার্ট বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলে এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কম হলেও পলিসিগত কারণে এখানে বসতি ঘন হতে অনেক সময় লাগবে এবং অনেকদিন এলাকা থাকবে খুবই পরিকল্পিত।
বাজেট আবাসনের ঢাকা
অল্প বাজেটে ঢাকায় ভালো বাসা করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বসিলাকে। আশেপাশে মোহাম্মাদপুর ও মিরপুরের অবস্থান হওয়ায় এখানে পলিসিগত বাধ্যবাধকতা একটু কম এবং অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই। এর বাইরে উত্তরায় রেল লাইনের অন্য পাশে উত্তর ও দক্ষিণখানে, এয়ারপোর্ট এর আশেপাশের অঞ্চলে অনেকদিন ধরেই বাজেট ভিত্তিক আবাসন খুবই জনপ্রিয়।
১,০০০ বর্গফুটের আশেপাশে আদাবর এবং শেখেরটেক অঞ্চলেও এখনো ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। একই অবস্থা রাজারবাগ ও ধানমণ্ডির পেছনে থাকা জিগাতলা এলাকারও। এসব অঞ্চল একটু ঘনবসতিপূর্ণ হলেও যারা ঢাকা শহরের জনসমাগমকে উপভোগ করেন তারা এসব জায়গায় থাকতে অপছন্দ করবেন না।
এর বাইরে টঙ্গীসহ চেরাগ আলী হয়ে প্রায় সমগ্র গাজীপুর শহরাঞ্চল, নারায়ণগঞ্জ, কেরাণিগঞ্জ এবং সাভার অঞ্চল বেশ জনপ্রিয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে অনেকে এসব জায়গা থেকেও যাওয়া আসা করে থাকেন প্রায় নিয়মিতই। সুযোগ বা যাতায়াতের সুবিধা থাকলে এ অঞ্চলগুলোও ঢাকার অনেক অঞ্চল থেকে ভালো বসবাসের সুবিধা নিয়ে হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনার অংশ, কারণ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে জমির দামে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
আবাসন সমস্যাকে ঠিকভাবে সমাধান করতে ঢাকাকে আমাদের বিকেন্দ্রিকরণ ও পরিকল্পিত আবাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুবই দরকারি। তাই জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের বুঝে শুনে। বাজেটের সাথে বা জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই মানুষের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিজের ও সামাজিক চাহিদার মধ্যে পর্যাপ্ত ভারসাম্যই পারে আপনার বাড়ির জন্য সবচেয়ে উপযোগী অঞ্চল সম্পর্কে আপনাকে নিশ্চিত করতে।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা: জেনে নিন একনজরে
গতবছর ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় জনগণের জানমালের। বহু মানুষ আহত ও নিহত হন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অগ্নিনিরাপত্তা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। আগুন সংক্রান্ত সমস্যায় এর আগে বসুন্ধরা সিটি বা নিমতলীর মতো ট্রাজিক ঘটনার সাক্ষীও ঢাকা। এর বাইরে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়া বা বেগুনবাড়িতে ভবন ধ্বসে ২৫ জনের মৃত্যুর মতো ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেছে নিয়মিতই।
বাংলাদেশে ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা ও ভবনের বাসিন্দাদের জন্য মানসম্পন্ন অবস্থানের কথা চিন্তা করে করা রয়েছে গেজেটেড আইন, রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিধিমালা না মানাই এধরনের দুর্ঘটনাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং ভবনে অবস্থানকারী ও আশেপাশের মানুষের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।
ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা কী এ সম্পর্কে প্রত্যেকেরই জানা উচিত। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে তা তুলে ধরা হলো।
ইমারত নির্মাণ সংক্রান্ত আইনের ইতিহাস
ইমারত নির্মাণ আইন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে ১৯৫১ সালে ‘পূর্ববঙ্গ ইমারত নির্মাণ অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের পর ১৯৫২ সালে ‘ইমারত নির্মাণ আইন’ করা হয়, যা ১৯৫৩ সালে কার্যকর হয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর এই আইন সংশোধন করা হয়। মূলত দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে এমন এলোমেলো ইমারত নির্মাণ ও জলাধার খনন নিবারণের জন্য বিধান করতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
ইমারত নির্মাণ, জলাধার খনন ও পাহাড় কাটায় বিধিনিষেধ
যেহেতু জলাধার, পাহাড় ও বনভূমি সংরক্ষণের জন্যই এই বিধিমালার প্রচলন হয়, এই আইনগুলো ছিল ইমারত নির্মাণ বিধিমালার প্রাথমিক ভিত্তি। এই আইনগুলো এখনো বলবৎ রয়েছে। এই আইন অনুসারে, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির পূর্ব অনুমতি ব্যতীত কেউ ইমারত নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ কিংবা এতে সংযোজন বা পরিবর্তন করতে পারবেন না।
কোনো জলাধার খনন বা পুনঃখনন, পাহাড় কাটা বা ভূমিসাৎ করতে পারবে না বলে ইমারত নির্মাণ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে DAP ও জলাধার সংরক্ষণ আইন দ্বারা ভবন নির্মাণ এর অবস্থানকে আরো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি দেয়া হয়েছে।
৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে ইমারত নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইমারত ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আবাসিক বাড়ির জন্য ইমারত নির্মাণের অনুমতি নিলে ওই ভবনকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
এই আইনে আরও বলা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ ইমারত নির্মাণ করলে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ওই ইমারত ভেঙে ফেলার বা অপসারণের নির্দেশ দিতে পারবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আবাসিক ভবনের নিচতলায় দোকান বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অফিস করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি আইন অনুসারে বৈধ নয় এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিধিতেও মামলাযোগ্য অপরাধ।
আবার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে অবৈধ ইমারত ভেঙে ফেলতে বা অপসারণ করতে পারবে। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করে ইমারত নির্মাণ করলে তাও ভেঙে ফেলতে পারবে কর্তৃপক্ষ। ভোগদখলকারীকে উচ্ছেদও করতে পারবে। আইন অমান্যকারীকে কোনো রকম পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করতে পারবে।
আধুনিক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা
ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ সালে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সরকার ১৯৯৬ সালে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আধুনিকায়ন করে। এই নতুন বিধিমালায়,
– ইমারত নির্মাণের অনুমোদন,
– জলাধার খননের অনুমোদন ও পাহাড় কাটার অনুমোদনের আবেদন,
– অনুমোদন ফি,
– ইমারত নির্মাণের নকশা,
– ইমারত প্রণয়নকারীর যোগ্যতা,
– ইমারত নির্মাণের অনুমোদনের জন্য করা আবেদনের নিষ্পত্তি ইত্যাদির প্রক্রিয়া বলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কীভাবে নির্মাণ করতে হবে তারও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইমারত নির্মাণের বিধিগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ আলোচনা করা হলো।
পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও দূরত্ব
ইমারতের প্লট এর অবস্থান, ব্যবহার প্রকৃতির পাশাপাশি পাশ্ববর্তী রাস্তা
(ক) ইমারত বা বিল্ডিংসংলগ্ন রাস্তা বা এর সঙ্গে সংযোগকারী অনূ্ন্য ৩.৬৫ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন রাস্তার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে।
(খ) কোনো পাশে লম্বাভাবে রাস্তা শেষ হলে এর প্রস্থ পার্শ্বরাস্তার প্রস্থ বলে গণ্য হবে।
(গ) মালিকানা অনুল্লিখিত রাস্তা সর্বসাধারণের রাস্তা বলে গণ্য হবে।
(ঘ) দুই রাস্তার সংযোগ স্থলের কোণে এক মিটার জায়গা রাস্তা সরলীকরণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
(ঙ) কোনো ইমারতের নিকটবর্তী কোনো রাস্তার কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে সাড়ে চার মিটার অথবা রাস্তাসংলগ্ন সীমানা থেকে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরে নির্মাণ করতে হবে।
চ) পার্শ্ববর্তী রাস্তার অভিমুখী দিককে ইমারতের সামনের দিক এবং এর বিপরীত দিককে পশ্চাৎ দিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ইমারতের দূরত্ব
কোনো ইমারত খোলা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড অথবা ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষের নিয়ম মোতাবেক নিরাপদ দূরত্বে নির্মাণ করতে হবে।
ভূমি ব্যবহারের নীতিমালা
(ক) সব রকম ইমারত নির্মাণ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংশ্লিষ্ট শহর, নগর বা মহানগরীর মহাপরিকল্পনায় নির্দেশিত ভূমি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
(খ) আবাসিক বা অন্যান্য ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আবাসিক ছাড়াও অনধিক ১০ শয্যাবিশিষ্ট ক্লিনিক, ব্যাংক, ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ, দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রীর দোকান, সেলুন, চিকিৎসকের চেম্বার, ঔষধালয়, সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, ফুলের দোকান, লাইব্রেরি, ভিডিও ক্লাব, নার্সারি স্কুল, লন্ড্রি ও টেইলারিং শপের জন্য ইমারত নির্মাণ করা যাবে। তবে এ রকম ইমারত কেবল দুটি রাস্তার সংযোগস্থলে নির্মাণ করা যাবে। যার মধ্যে একটি রাস্তা কমপক্ষে ছয় মিটার প্রশস্ত হতে হবে এবং ওই ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে আবাসিক ইমারত নির্মাণসংক্রান্ত বিধান প্রযোজ্য হবে।
(গ) আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আবাসিক, বাণিজ্যিক, অথবা উভয় উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে। তবে এসব ভবন ব্যবহারে গাড়ি পার্কিং, মালামাল রাখার গুদাম থাকতে হবে। থাকতে হবে প্রশস্ত রাস্তাও। রাস্তা হতে হবে কমপক্ষে ২৩ মিটার প্রশস্ত।
সীমানা দেয়াল
ইমারত পাশের সীমানা দেয়ালের উচ্চতা হতে হবে ১.৭৫ মিটার বা তার কম। ২.৭৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন দেয়াল করা যাবে। তবে উপরের এক মিটার গ্রিল বা জালি হতে হবে।
ইমারতের উচ্চতা
সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে এলাকাভিত্তিক ইমারতের উচ্চতা নির্ধারণ করতে পারবে। ইমারতের উচ্চতা সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে সাধারণত ইমারতের সামনের রাস্তার প্রস্থ এবং ইমারত ও রাস্তার মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানের যোগফলের দুই গুণের বেশি উচ্চতাসম্পন্ন কোনো ভবন নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় FAR ও MGC এর নির্ধারিত তালিকা রয়েছে।
গাড়ি পার্কিং
ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য প্রত্যেকটি ভবনে কমপক্ষে ২৩ বর্গমিটার জায়গা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখতে হবে। আর বণিজ্যিক স্থানে সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখতে হবে।
আলো-বাতাস চলাচল
(ক) ইমারতের সব কক্ষে দরজা জানালা, ফ্যান, লাইট ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচলের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
(খ) রান্নাঘরের অবস্থান ইমারতের এক পাশে (বহির্দেয়ালে) হতে হবে।
ছাদ, কার্নিশ ও সানশেড নির্মাণ
(ক) ইমারতের ছাদ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে করে ওই ছাদের পানি রাস্তায় বা অন্যের জমিতে কিংবা ইমারতের কাঠামোতে পানি নিষ্কাশিত না হয়।
(খ) ইমারতের ছাদ বা কার্নিশ উন্মুক্ত স্থানের ওপর এক মিটারের অর্ধেকের বেশি বর্ধিত করা যাবে না।
(গ) ইমারতের দরজা ও জানালার ওপর ১/২ মিটার প্রস্থের বেশি সানশেড নির্মাণ করা যাবে না।
জরুরি নির্গমন পথ
ইমারতের মেঝের যেকোনো অবস্থান থেকে অনধিক ২৫ মিটারের মধ্যে জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। জরুরি ইমারত ত্যাগের নির্দেশিত ফায়ার অ্যালার্মও থাকতে হবে।
বিবিধ
– ইমারতে বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– আবর্জনা অপসারণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– ইমারতের প্রবেশ পথে চিঠির বাক্স থাকতে হবে।
সাধারণ বাড়ি নির্মাণে এসব বিধান মেনে চলতে হবে। এর বাইরেও হাসপাতাল, বড় মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধানাবলি রয়েছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অত্যন্ত বিস্তারিত ও প্রায় সব বিষয়েই বিস্তারিত বিধিমালা রয়েছে। তাই এই সম্পর্কে অজ্ঞ কাউকে কখনো ভবনের নকশা করার দায়িত্ব দেবেন না। আপনার বাড়ির জন্য অবশ্যই ডিগ্রীধারী ও লাইসেন্সড স্থপতির সাহায্য নিন।
ইমারত নির্মাণ আইন ও এ বিষয়ে নির্ধারিত বিধিমালা না মেনে ভবন তৈরি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সকলে এইসব আইন মেনে চলছে কী না তা দেখার জন্য রাজউক এবং সিটি করপোরেশন বা আঞ্চলিক পৌরসভার রয়েছে আলাদা কমিটি এবং মনিটরিং সেল। কমিটির কাজ হচ্ছে স্থপতি দ্বারা প্রণীত নকশার প্রাথমিক পর্যায়েই জমা নেয়া এবং সার্বিক পর্যালোচনা করে তবেই ভবন নির্মাণ এর অনুমতি প্রদান করা।
আর মনিটরিং সেল এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারী করেন। নির্মাণকালে খেয়াল রাখেন সকল নিয়ম মানা হচ্ছে কী না। কখনো কখনো ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর তা ভাঙতে নির্দেশ দেওয়া হয় বা ভাঙা হয়। যদি কোন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব দুর্ঘটনার জন্য ভবন মালিকরাও যেমন দায়ী, তেমনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও মনিটরিং কাজ পালন না করার জন্য দায়ী থাকেন।
নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রত্যেককেই ভবনের বিধিমালা মেনে চলতে হবে কড়াকড়িভাবে। প্রত্যেকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বা বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বা ভবন নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ও ঘটলেও তাতে হতাহতের ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
রেডিমিক্স কংক্রিট: কীভাবে ও কেন?
রেডিমিক্স কংক্রিট হলো ব্যাচে বানানো সাইট সুনির্দিষ্ট এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত কংক্রিট। সাধারণত পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, পানি, পাথর বা খোয়া এবং বালি পরিমাণমতো জমির মাটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভালোভাবে মিশিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় সেটা সাইটে ব্যবহার করা হয়।
আধুনিক নির্মাণ কাজে রেডিমিক্স সিমেন্ট অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। এটি নির্মাণ কাজকে করেছে সহজ, দ্রুত এবং আরও নিখুঁত। যদিও এর দাম তুলনামূলক বেশি বাজারের খোলা সিমেন্টের চেয়ে, তবুও নির্মাণ কাজে এখন সর্বাধিক ব্যবহার করা হয় এই রেডিমিক্স কংক্রিটের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে।
সাধারণত রেডিমিক্স কংক্রিট বড় বড় প্রজেক্ট এবং সুউচ্চ দালানকোঠা নির্মাণকাজে ব্যবহার বেশি হয়। আসুন জেনে নেই রেডিমিক্স কংক্রিট নিয়ে অতি আবশ্যকীয় কিছু তথ্য।
কীভাবে মিক্সচার তৈরি করা হয়
মিক্সিং প্ল্যান্টে কী গ্রেডের কংক্রিট লাগবে এবং স্ট্রাকচারাল কনসাল্টেন্টের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ব্যাচ প্ল্যান্টে সূক্ষ্ম পরিমাপে খোয়া, বালু, পানি ও সিমেন্ট ওজন অনুপাতে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এর ফলে সাইটের প্রয়োজনমাফিক এবং নির্মাণ ধরনের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত মিশ্রণের কংক্রিট পাওয়া যায়। প্রথম রেডিমিক্স কংক্রিটের কারখানা ১৯৩০ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯৬০ সাল থেকে বড় পরিসরে এর চাহিদা বাড়তে থাকে।
রেডিমিক্স কংক্রিটের প্রকারভেদ
মিশ্রণের উপকরণ এবং এর ভিন্নতার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মূলত ৩ প্রকার।
১. ট্রানজিট মিক্স কংক্রিট – এই প্রকারের কংক্রিট বেশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দুই উপায়ে ট্রানজিট রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কারখানায় উপযুক্ত মিশ্রণ তৈরি করে সেটা ব্যারেল ট্রাক বা ইন-ট্রানজিট মিক্সিং ট্রাকের মাধ্যমে সাইটে পাঠানো হয়। এইসব ট্রাক যাত্রা পথেও মিক্স করতে থাকে যাতে করে সব উপকরণ শক্ত না হয়ে লেগে যায়। আরেকটি যে উপায়ে রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহারের পূর্বে পাঠানো হয় তা হলো, কাঁচামালগুলো শুকনা অবস্থায় পাঠানো হয় এবং অভিজ্ঞ লোকের নজরদারিতে উপযুক্ত পরিমাণে সেগুলো নিয়ে সাইটে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
২. শ্রিংক মিক্স কংক্রিট – এই পদ্ধতিতে কংক্রিট আংশিকভাবে প্ল্যান্ট মিক্সারে মিশ্রিত হয় এবং তারপরে ট্রানজিটের সময় ট্র্যাক মাউন্টেড ড্রাম মিক্সারে ব্যালেন্স মিক্সিং করা হয়। ট্রানজিট মিক্সারের মিশ্রণের পরিমাণ কেন্দ্রীয় মিক্সিং প্লান্টে মিশ্রণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ড্রাম মিক্সার মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা স্থাপনের জন্য পরীক্ষা করা উচিত যাতে এই স্থান পরিবর্তনের জন্য মিশ্রণের অনুপাত যাতে সঠিক থাকে।
৩. কেন্দ্রীয় মিক্স কংক্রিট – একে সেন্ট্রাল ব্যাচিং প্লান্টও বলা হয় যেখানে ট্রাক মিক্সারে লোড করার আগে কংক্রিটটি পুরোপুরি মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও প্ল্যান্টকে ভিজা-ব্যাচ বা প্রাক-মিশ্রণ প্ল্যান্ট হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। কংক্রিট পরিবহনের সময়, ট্রাক মিক্সার কেবল নাড়াচাড়ার (এজিটেটর) যন্ত্র হিসাবে কাজ করে। কখনো কখনো, যখন কর্মক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা কম হয় বা সীসা কম হয়, স্থির রাখার (নন-এজিটেটর) ইউনিট বা ডাম্প ট্রাকগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যবহারবিধি
রেডিমিক্স কংক্রিট ভলিউমের ভিত্তিতে কেনা বেচা হয়। সাধারণত কিউবিক মিটার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিউবিক ইয়ার্ড) দ্বারা প্রকাশিত হয়। ব্যাচিং এবং মিক্সিং নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে করা হয়।
যুক্তরাজ্যে, প্রস্তুত-মিশ্রিত কংক্রিটটি অনানুষ্ঠানিকভাবে, উপাদান ওজন বা ভলিউম দ্বারা (১-২-২ বা ১-৩-৬-৬ সাধারণ মিশ্রণ) বা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড EN 206+ A1 এর আনুষ্ঠানিক স্পেসিফিকেশন মান ব্যবহার করে নির্দিষ্ট করা হয়, যা বিএস ৮৫০০ দ্বারা যুক্তরাজ্যে পরিপূরক করা হয়েছে এটি গ্রাহককে ভূমির অবস্থা, এক্সপোজার এবং শক্তির ক্ষেত্রে কংক্রিটটি কী সহ্য করতে সক্ষম হবে তা নির্দিষ্ট করা হয় এবং নির্মাতাকে এমন একটি মিশ্রণ ডিজাইন করতে দেয়, যা ব্যবহারের সাথে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এবং যা স্থানীয়ভাবে একটি ব্যাচিং প্ল্যান্টে উপকরণ উপলব্ধ।
রেডিমিক্স কংক্রিটের সুবিধাসমূহ
আসুন জেনে নেওয়া যাক রেডিমিক্স কংক্রিট ব্যবহারের সুবিধাগুলো। রেডিমেড কংক্রিট একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা মেনে নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশিনে উপযুক্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়। এতে ভুলের সুযোগ কম থাকে এবং প্রস্তুতির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে বেশি।
সাইটে মিশ্রণের ফলে অনেক ভুল ত্রুটির সুযোগ থাকে যা প্ল্যান্টে করলে অনেক কমে যায়। ফলে উপযুক্ত মিশ্রণ দালানের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং নির্মাণ করে সহজতর ও বিশ্বাসযোগ্য।
- বিল্ডিংয়ে ব্যয় এবং বিস্তৃত ব্যবহারের কারণে রেডিমিক্স কংক্রিট প্রায়শই অন্যান্য উপকরণগুলোর উপরে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে যেমন- সুউচ্চ বিল্ডিং এবং সেতুর মতো বড় প্রকল্পগুলোতে এবং রাস্তাপথ নির্মাণের কাজে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একই ট্র্যাফিকের পরিমাণের সাথে এস্ফাল্ট কংক্রিটের ১০ থেকে ১২ বছরের জীবনের তুলনায় উচ্চ ট্র্যাফিক অঞ্চলে রেডিমিক্স কংক্রিটের গড় আয়ু ৩০ বছর হয়। - যেহেতু মেশিনে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা হয়, তাই স্বল্প সময়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা যায়। এতে করে নির্মাণের জন্য সময় সাশ্রয় হয় এবং নির্মাণ খরচও কমে আসে।
- হ্যান্ডলিং এর সুবিধার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মিশ্রণে ১০-১২% কম সিমেন্ট লাগে। এতে করে সিমেন্ট খরচ কম হয়। এডমিক্সচার এবং অন্যান্য সিমেন্টিং উপকরণ ব্যবহারে সিমেন্ট এর ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
- অধিক দৃঢ় ও মজবুত স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয় যাতে করে পরবর্তীতে খরচ অনেক কমে যায়। দালানের স্থায়িত্ব বাড়ে, মানুষ নিরাপদে সুস্থভাবে জীবন নির্বাহ করতে পারে।
রেডিমিক্স কংক্রিট একটি পরিবেশ বান্ধব এবং সাস্টেইনেবল প্রযুক্তি যা আমাদেরকে সহজেই এবং দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে।
বাড়ি নির্মাণ করবেন: কত খরচ পড়বে?
“আমি একটি বাড়ি নির্মাণ করতে চাই। বলতে পারেন কেমন খরচ পড়বে?” এই প্রশ্নটি নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে প্রায় প্রতিদিনই শুনতে হয়। একটি বাড়ি তৈরিতে খরচ কত হবে এ সম্পর্কে সরাসরি একটি উত্তর দেয়া সবসময়ই কঠিন।
কারণ, ভবন নির্মাণ একটি শিল্প যেখানে অনেক বিষয়ই একসাথে কাজ করে। জমির মাপ, ভবনের নকশা, কত বর্গফুট জায়গা, সাইটের অবস্থা ও অবস্থান, উপকরণের সহজলভ্যতা ও পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি নানা কারণে খরচ পরিবর্তন হতে পারে।
তবে ভবন তৈরি করতে হলে আপনাকে সকল দরকারি জমিসংক্রান্ত কাগজ ও সার্ভেসহ প্রথমে যেতে হবে স্থপতির বা স্থাপত্য ফার্মের কাছে। তারা আপনাকে নকশা ও খরচের প্রাথমিক হিসাব প্রদান করবেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ও সরকার অনুমোদিত নকশা নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা ফার্ম থেকে পুরকৌশল সংক্রান্ত নকশা ও বাজেট নির্ধারণ শেষে আপনি নির্মাণে হাত দিতে পারবেন।
এখন স্থপতি ও প্রকৌশলীর ফি এবং অনুমোদনের ফি প্রদানের পর আপনি নির্মাণ বাজেটকে বিভিন্ন খাতে ভাগ করতে পারেন। এই খাত এর আনুপাতিক হার সম্পর্কে ধারণা দেয়া সম্ভব।
বিভিন্ন খাত অনুসারে আপনার নির্মাণ বাজেট খরচের শতকরা হিসাব
১. ভিত্তি ও কাঠামো = ৩৫%
২. ইটের কাজ = ৬%
৩. ফ্রেম ও কাঠের কাজ = ৫%
৪. ধাতব কাজ = ২%
৫. পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ = ৬%
৬. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি = ৭%
৭. প্লাস্টার = ৪%
৮. টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ = ৬%
৯. স্নানঘর ও টয়লেটের সাজসজ্জা = ৩%
১০. অ্যালুমিনিয়াম ও জানালার ফ্রেমিংয়ের সাজসজ্জা = ৪%
১১. কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি (লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশান)= ১০%
১২. রঙের কাজ = ৩%
১৩. বিবিধ পুরকৌশলজনিত কাজ = ৬%
১৪. নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল = ৩%
___________________________________________________________
মোট খরচ = ১০০%
এখন যদি আমরা প্রতিটি খাতে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্মাণ সংস্কৃতিতে একটি ছয়তলা বাড়ির কথা চিন্তা করি (যা ৩, ৫ বা ৭ কাঠা জায়গার উপর নির্মিত হবে) তাহলে এর বিভিন্ন খাতকে আরো বিস্তারিতভাবে খরচ সাপেক্ষে নিরুপণ করা যায়। সেটা অনেকটা এরকম-
ভিত্তি ও কাঠামোগত খরচ
– ফুটিং ও কলামের ভিত্তিমূলের কাজ = ২০%
– গ্রেড বীম ও ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংকের উপরের স্ল্যাব = ৫%
– বেজমেন্ট-এর কলাম ও স্ল্যাব = ৪%
– ১ম ফ্লোরের স্ল্যাব = ৯%
– সাধারণ ফ্লোরের কলাম (৫x৩%) = ১৫%
– দ্বিতীয় তলা থেকে বাকি ফ্লোর সহ ছাদের স্ল্যাব (৫x৮) = ৪০%
– ছাদের কাঠামোগত খরচ = ৭%
____________________________________
ভিত্তি ও কাঠামোর জন্য মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৩৫% যেভাবে খরচ হবে।)
ইটের কাজে খরচ
– বেজমেন্ট এ ইটের কাজ = ৬%
– প্রথম ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– দ্বিতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– তৃতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– চতুর্থ ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– পঞ্চম ফ্লোরে ইটের কাজ = ১৮%
– ছাদে ইটের কাজ= ৪%
____________________________________
ইটের কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৬% যেভাবে খরচ হবে।)
কাঠের কাজ বাবদ খরচ
– দরজার ফ্রেম = ৪০%
– মূল দরজার শাটার = ১৫%
– পারটেক্সের দরজার শাটার= ৩৫%
– পোষ্য দরজা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি = ১০%
____________________________________
দরজার কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৫% যেভাবে হবে।)
ধাতব কাজ বাবদ খরচ
– জানালার গ্রিল = ৫৫%
– বারান্দার রেলিং = ২০%
– সিঁড়ির রেলিং = ১০%
– মূল ফটক ও সকল ধরনের সেফটি গ্রিল = ১৫%
____________________________________
ধাতব কাজে পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ২% যেভাবে খরচ হবে।)
পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ
– উলম্ব পিভিসি লাইন ও সকল ডাক্ট এর খরচ = ২৫%
– জি আই লাইনের কাজ = ৩০%
– ফিক্সচার ও ফিটিং = ৪০%
– নিচতলার ফ্লোর এর পয়ঃনিষ্কাশনের আলাদা খরচ = ৫%
____________________________________
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের খরচ = ১০০% ( পুরো নির্মাণ কাজের ৬% যেভাবে হবে।)
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ
– স্ল্যাবের ভেতর দিয়ে লাইন বহনের খরচ = ১০%
– দেয়াল ও বৈদ্যুতিক বক্সের ভেতর লাইন বহনের খরচ = ১৫%
– তার সংক্রান্ত কাজ = ৫৫%
– সুইচ ও সকেট বাবদ খরচ = ২০%
____________________________________
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৭% যেভাবে খরচ হবে।)
প্লাস্টার বাবদ খরচ
– সিলিং-এর প্লাস্টার = ২০%
– ভেতরের দেয়ালের প্লাস্টার = ৫০%
– বাইরের দেয়ালের প্লাস্টার বা ইটের ফেসিং ও পয়েন্টিং = ৩০%
____________________________________
প্লাস্টার বাবদ পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)
টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ
– সাধারণ ফ্লোর ও বারান্দার টাইলস = ৭৫%
– সিড়ি, লিফটকোর এর দেয়াল ও লবির টাইলস = ২০%
– বেজমেন্ট এর লিফটের লবি, দেয়াল এবং লবির টাইলস = ৫%
____________________________________
টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)
স্নানঘর ও টয়লেট এর সাজসজ্জা সংক্রান্ত খরচ
– স্নানঘরের দেয়াল = ৬০%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ২০%
– স্নানঘরের মেঝে = ৯%
– স্নানঘরের কাউন্টার টপ= ৪%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ৩%
– কিচেন কাউন্টারের টপ =৪%
____________________________________
সাজসজ্জা বিষয়ে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)
অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ
– স্লাইডিং জানালার বাইরের দিকের ফ্রেম = ৪০%
– গ্লাসের শাটার ও স্লাইড করার ফ্রেম = ৩০%
– বারান্দার স্লাইডিং উপকরণ = ২০%
– টয়লেটের উঁচু জানালা = ৫%
– সাধারণ এরিয়া এর উপকরণ = ৫%
____________________________________
অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)
কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ
– লিফট = ৫০%
– জেনারেটর =২৫%
– বৈদ্যুতিক সাবস্টেশান = ২০%
– অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি ও ইন্টারকম সংযোগ = ৫%
____________________________________
কেন্দ্রীয় সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ১০% যেভাবে খরচ হবে।)
রঙের কাজ বাবদ খরচ
– পুটি লাগানো পর্যন্ত খরচ = ৪০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ প্রথম আস্তর = ২০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ পরের আস্তর= ১৫%
– বাইরের রঙ ও মোমের কোটিং = ২৫%
____________________________________
রং বাবদ মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)
বিবিধ পুরকৌশল সংক্রান্ত কাজ
– সীমানার দেয়াল সংক্রান্ত খরচ = ৩০%
– টেরাস ও ছাদের পেভিং সংক্রান্ত খরচ= ১৫%
– ছাদে বাগান, ডেভেলপারের ব্যবসায়িক অলংকরন = ৪%
– বেজমেন্ট লেভেলের বিবিসি = ১৪%
– বেজমেন্ট এর পেভমেন্ট ও জমির ভেতর ফুটপাথ সংক্রান্ত কাজ = ১০%
– লিন্টেল, ড্রপ স্ল্যাব, এফ স্ল্যাব ইত্যাদি= ২০%
– তারের ট্রে = ১%
– ডাক্ট ও সিলিং এ তারের উপরে কাভার ও তার লুকানোর খরচ= ৪%
– অভ্যর্থনা ডেস্ক ও চিঠির বাক্স = ২%
____________________________________
বিবিধ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)
নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল
– বিদ্যুৎ বিল (ডেসা ও ডেসকোর রেট অনুসারে) = ৩৫%
– গ্যাসের বিল (তিতাস এর রেট অনুসার) = ২০%
– পানির বিল (ওয়াসা এর রেট অনুসারে) = ১৫%
– অন্যান্য বিল = ৩০%
____________________________________
সম্পূর্ণ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)
সাধারণত ঢাকায় অঞ্চলভেদে প্রতি স্কয়ার ফুট নির্মাণ কাজে আবাসিক ভবনে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে নকশা ও এর খুঁটিনাটি অনুসারে এটি অনেক ওঠানামা করতে পারে।
বাড়ি নির্মাণ একটি দীর্ঘ ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এজন্য খরচের হিসাব সম্পর্কে শুরুতেই পরিষ্কার ধারণা নিন। আপনার স্থপতিকে শুরুতেই আপনার বাজেট সম্পর্কে ধারণা দিন ও চাহিদার কথা পরিষ্কারভাবে জানান। শুধুমাত্র এভাবেই আপনি নির্ধারিত বাজেটে আপনার পছন্দের বাড়ি পেতে পারেন।
নির্মাণ শ্রমিক: কেমন কাটছে তাদের দিন?
আমাদের দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ নতুন ভবন তৈরি হয় এ নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা পাওয়া খুবই কঠিন। তবে দেশের ক্রম উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে নির্মাণ শিল্প কলেবরে বড় হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। সাথে যোগ হচ্ছে নতুন মানুষ। বাড়ছে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা।
নির্মাণকাজ সারা বিশ্বে প্রতিদিন আধুনিকায়নের মধ্যে দিয়ে গেলেও আমাদের দেশে এটি এখনো অনেকাংশেই শ্রমিক নির্ভর। সস্তা শ্রম এবং বিভিন্ন দক্ষতার লোক নিয়োগের সুযোগ থাকায় মেশিনের চেয়ে নির্মাণশ্রমিকের উপরে এই নির্ভরতা নিকট ভবিষ্যতে কমে যাবার সম্ভাবনাও খুবই কম।
কিন্তু বাংলাদেশে নির্মাণশ্রমিকদের জীবন সহজ নয়। নানা সমস্যায় নির্মাণ শিল্প এবং এর কারিগরেরা জর্জরিত। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করা হলো সংক্ষেপে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা
নির্মাণশিল্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি শিল্প। এখানে প্রতিদিনই কাজ করতে হয় অসম্পূর্ণ ভবন ও ঝুঁকিপূর্ণ মেশিনারির মধ্যে। অথচ বাংলাদেশে নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তার যে গাইডলাইন রয়েছে তা মানা হয় না প্রায়ই। শ্রমিকদের জন্য বেশিরভাগ সাইটেই দেখা যায় না কোনো ধরনের নিরাপত্তা পোশাক, হেলমেট এবং গামবুট।
এর বাইরে ইট তোলা, রড বহন করা সহ বিভিন্ন ভারী উপকরণ ব্যবহারেও রয়েছে নিরাপত্তার ঘাটতি। সেইসাথে অনেক সাইটেই সেফটি নেটও ব্যবহার করা হয় না। যেটার কারণে পড়ে গিয়েও অনেক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়।
অর্থনৈতিক অবস্থান
বাংলাদেশে শ্রমিক নিয়োগে এখনো কোনো লিখিত বিধিমালা নেই। এই কারণে কোনো নির্ধারিত বেতন তালিকা এবং কোনো ধরনের সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য বেতনের নিয়মকানুন এখানে ভয়াবহভাবে অনুপস্থিত। এছাড়া সরাসরি কোনো ইউনিয়নের অধীনে না থাকায় স্বাভাবিক সুযোগ সুবিধাও তাদের নাগালের অনেক বাইরে।
ঢাকায় দক্ষ নির্মাণ শ্রমিকদের বেতন হিসাবে দিনে ৫০০ টাকা এবং তুলনামূলক অদক্ষ শ্রমিকদের ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেতন দেয়া হয়। এই বেতন অনেক সময় দিনের পর দিন বাকি থাকে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও কোনো ধরনের জীবনবীমা বা ওয়ার্ক ইনস্যুরেন্সেরও ব্যবস্থা নেই।
আবাসন
ঢাকায় বেশিরভাগ নির্মাণ সাইটের শ্রমিকেরা নির্মাণ সাইটেই বসবাস করেন। স্বল্প বেতনে আবাসনের সুযোগ ঢাকায় না থাকাই মূলত এই কাজে তাদের বাধ্য করে। ফাউন্ডেশনের সময় তারা থাকেন সেই খুঁড়তে থাকা মাটিতেই। ভবনের ফ্লোর ঢালাই হয়ে গেলে তারা ভবনে শিফট করেন। এসব ভবনে নিরাপদ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে শুরু করে, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই থাকে না। এসব কারণে তারা প্রায় মানবেতর জীবনযাপন করেন।
আর এই জীবন কখনোই শেষ হয় না, কারণ একটি ভবন শেষ করতে গড়ে আড়াই বছর সময় লাগে এবং তারপর তারা তাদের পরবর্তী কাজের জায়গায় চলে যান। নির্ধারিত বেতন, বীমা ও কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়া এভাবে বছরের পর বছর বসবাস তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রচণ্ড খারাপ প্রভাব রেখে যায়।
দক্ষতা ও শিক্ষা
আবাসন সমস্যা ও অর্থনৈতিক কারণে অনেক নির্মাণশ্রমিকই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারেন না। তাই প্রজন্মান্তরে একই পেশাতেই রয়ে যায়ে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এই একই কারণে নতুন নির্মাণ কৌশল বা মেশিন পরিচালনার নতুন কোনো জ্ঞান যোগ হয় খুবই ধীরে।
নির্মাণশিল্পে সামনের দিনগুলোতে আমাদের মেশিন ও বিদেশী কন্ট্রাকটরদের সাথে কাজ করার সম্ভাবনা থাকায় এই শিল্পের শ্রমিকরা কাজ হারাতে পারেন বা পড়তে পারেন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়, যা তাদের অত্যন্ত নিম্ন সুযোগ সুবিধার পেশাটিকে ফেলতে পারে আরো বড় হুমকির মুখে।
এসব মাথায় রেখেই, নির্মাণ শ্রমিকদের আবাসন, অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে ভবন মালিক, স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ার এবং কন্ট্রাকটরসহ সকলকেই। কারণ শ্রমিকের হাতেই ভবন তার স্বপ্ন, নকশা, অংক আর অর্থনৈতিক ধাপগুলো পার হয়ে বাস্তবে চেহারা পায়। তাদের দক্ষতা, মনোযোগ এবং সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা হতে পারে আমাদের সকল নির্মাণের পেছনের সবচেয়ে বড় শক্তি!