প্লাস্টার (পলেস্তারা) ফিনিশিং কী? সহজ ভাষায়- দেয়াল নির্মাণের পর তার মসৃণ বহিরাবরণ করার নামই প্লাস্টার ফিনিশিং। অবশ্য প্লাস্টার ফিনিশিং সর্বদাই মসৃণ হবে- এমন ভাবলে ভুল করবেন। দেয়ালের সুরক্ষা আর স্থায়িত্বের পাশাপাশি প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য দেয়ালকে নান্দনিক করে তোলা। আর নান্দনিকতার স্বার্থে প্লাস্টার সবসময় মসৃণ না-ও হতে পারে।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের কথা, যার নান্দনিক দর্শন ছাড়িয়ে যায় ব্যবহারিক গুণকেও।
পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ (Peeble Dash Plaster Finish)
নামের মতো প্লাস্টার ফিনিশের এ ধরনটি তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ মজার। সদ্য বসানো মসৃণ করা সিমেন্ট/কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর ছোট ছোট নুড়ি পাথরের টুকরো কিংবা অন্যান্য পাথরের টুকরো পরিমাণ মতো ফেলে পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক সিমেন্টের ঢালাই অন্তত ১ মিলিমিটার পুরু হতে হবে, অন্যথায় পাথরের গুঁড়ো তাতে স্থায়ী হবে না। প্রস্তুতি থেকেই অনুধাবনযোগ্য যে এই ফিনিশিং মসৃণ নয়, বরং রুক্ষ হয়। সাধারণ বাড়ির সীমানা দেয়ালের বহিরাবরণে এই ফিনিশিং দেয়া হয়, যা একইসাথে সৌন্দর্যবর্ধন করে এবং দেয়ালকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে।
স্ক্র্যাপড প্লাস্টার ফিনিশ (Scrapped Plaster Finish)
প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের এই ধরনের জন্য অন্তত ৬ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ১২ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরুত্বের কংক্রিট/সিমেন্টের ঢালাই প্রয়োজন। প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। প্রথমে সিমেন্টের ঢালাই যথাযথভাবে মসৃণ করে কয়েক ঘন্টা শুকাতে হবে। ঢালাই মোটামুটি শক্ত হয়ে এলে তার বহিরাবরণ ধারালো লোহার যন্ত্র বা অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে চেঁছে তুলে ফেলা হয়। এ কারণেই একে বলা হয় স্ক্র্যাপড প্লাস্টার (ছাঁটা প্লাস্টার)। এটি সৌন্দর্যবর্ধনে তেমন উপযোগী না হলেও দেয়াল বা মেঝেকে পিচ্ছিলরোধী করতে যথেষ্ট উপযোগী। অবশ্য স্ক্র্যাপ করবার উপকরণভেদে এই প্লাস্টার দেখতে একেকরকম হয়।

স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ (Stucco Plaster Finish)
স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ ঘরের বহির্ভাগ কিংবা অভ্যন্তর, উভয় ক্ষেত্রেই মানানসই। এটি মূলত তিন স্তরের প্লাস্টার, যে কারণে বেশ পুরু হয়ে থাকে, প্রায় ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। প্রথম আবরণকে বলা হয় স্ক্র্যাচ কোট (Scratch Coat), দ্বিতীয়টিকে ফাইনার কোট (Finer Coat), এবং সবার শেষে ফিনিশিং কোট (Finishing Coat) বা হোয়াইট কোট (White Coat)। এটি সম্পূর্ণ মসৃণ না হলেও এবড়োথেবড়োও নয় বটে।
স্মুদ কোট ফিনিশ (Smooth Coat Finish)
প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হলো স্মুদ কোট ফিনিশ। এটি দেয়ালের মসৃণ, সমতল ফিনিশ যা ১ ভাগ বালু আর ৩ ভাগ সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে সমতল করে দেয়ালে বসানো হয়।
স্যান্ড ফিনিশ প্লাস্টার (Sand Finish Plaster)
এটাও প্লাস্টার করার একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় দেয়ালে দুবার প্লাস্টার করা হয়। প্রথমবার ১২ মিলিমিটার পুরু অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টার করা হয় যাতে সিমেন্ট-বালুর অনুপাত থাকে ১:৪। প্রথম আবরণ সপ্তাহখানেক শুকানোর পর শুরু হয় দ্বিতীয় আবরণের কাজ। এই আবরণের জন্য সমান অনুপাতে বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করা হয় এবং অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টারের উপর ৬ মিলিমিটার পুরু প্লাস্টার দিয়ে তা মসৃণ করা হয়।

টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ (Textured Plaster Finish)
বালু, সিমেন্ট, চুন আর পানির পর্যাপ্ত মিশ্রণে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন প্রকার তন্তু ও রঞ্জক মিশ্রিত করে টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ তৈরি করা হয়। এটি মূলত স্টাকো প্লাস্টারিংয়েরই একটি প্রকারভেদ। ভিন্নতা কেবল এতটুকু যে এটি স্টাকোর তুলনায় অধিক মসৃণ, কেননা, এতে বারংবার প্লাস্টার করা হয় কম পুরু আবরণের। এছাড়াও এটি কিছুটা রঙিনও হয় যা দেয়ালকে দেখতে আকর্ষণীয় করে।
এক্সপোজড এগ্রিগেট প্লাস্টার ফিনিশ (Exposed Aggregate Plaster Finish)
এটি মূলত পিবল ড্যাশ ফিনিশিংয়ের একটি প্রকারভেদ, তবে এটি অধিকতর মসৃণ এবং নান্দনিক। এর প্রক্রিয়ায় অনেকটা একইরকম। এটি ১:১ সিমেন্ট ও সাদা পাথরের কুচির আবরণ। প্রাথমিকভাবে মসৃণ করে ঢালাই বা প্লাস্টার করা কংক্রিটের আবরণ (অন্তত ২০ মিলিমিটার পুরু) নরম থাকতে থাকতে এর উপর সিমেন্ট আর পাথর কুচির দ্বিতীয় আবরণ স্থাপন করা হয় এবং মোটামুটি মসৃণ করা হয়। ফলে পাথরের কুচি দৃশ্যমান থাকে, প্লাস্টারটি দেখতে অমসৃণ, কিন্তু সুন্দর হয়।
স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ (Spatter Dash Finish)
একভাগ বালু আর একভাগ সিমেন্টের মিশ্রণের উপর তিনভাগ পাথরের মিশ্রণ দিয়ে স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ দেয়ালে ৩-১২ মিলিমিটার (প্রয়োজনমতো আরো বেশি হতে পারে) পর্যন্ত পুরু করে একটি আবরণ দেয়া হয়। এই আবরণের উপর পাথরের মিশ্রণ সর্বত্র সমান অনুপাতে দিয়ে কর্ণিক (Trowel) ব্যবহার করে মোটামুটি সমতল করা হয়। মূলত বহিরাবরণের পাথরগুলোর একাংশ বাইরে বেরিয়ে থাকে, সেগুলোকে সমতল করতে পারলেই দারুণ একটি স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ হয়ে যায়। এই ফিনিশ পানিরোধক, টেকসই এবং সহজে ফাটে না।

আরো কয়েক প্রকার প্লাস্টার
উপরোক্ত প্লাস্টার ফিনিশগুলো সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজলভ্য। এসবের বাইরেও ভবনের নকশা ও প্রয়োজনভেদে আরো কিছু প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন– অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) প্লাস্টারে জিপসামের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টার হয়ে গেলে একে মৌচাকের মতো দেখতে দেখায়; অ্যাসবেস্টস (Asbestos) মার্বেল প্লাস্টারে সিমেন্টের মিশ্রণের সাথে অ্যাসবেস্টস আর পাথরের গুঁড়া মেশানো হয় যা বেশ দর্শনীয়। সাধারণ কর্পোরেট অফিসে এরকম প্লাস্টার ফিনিশ ব্যবহার করা হয়; এক্সরে কক্ষের তেজস্ক্রিয়তা যেন বাইরে ছড়াতে না পারে সেজন্য সেখানে বেরিয়াম (Barium) যুক্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করে বেরিয়াম প্লাস্টার ফিনিশ করা হয়; গ্রানাইট আর বালুর মিশ্রণে গ্রানাইট-সিলিকন (Granite-Silicon) প্লাস্টার সাধারণ অফিস কক্ষে দেখা যায়। এটি দেখতে সুন্দর এবং ফাটলরোধী।