বেজমেন্ট বা সেলার বলতে আমরা বুঝি কোনো এক ভবনের একাধিক ফ্লোর বা তলা যা সম্পূর্ণভাবে অথবা আংশিকভাবে গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচে থাকে। বেজমেন্ট বা সেলার অনেক সময় সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও দুটো ভিন্ন। বেজমেন্ট হলো গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচের জায়গা, যা থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত এবং যেটায় প্রবেশ করার নিজস্ব জায়গা আছে। অপরদিকে সেলার হলো মাটির নিচের বিশাল কোনো একটা ঘর।
বেজমেন্টের ব্যবহার
বেজমেন্ট সাধারণত ইউটিলিটি স্পেস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেখানে বয়লার, ব্রেকার প্যানেল বা ফিউজ বক্স, গাড়ি পার্ক বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি রাখা হয়। অবশ্য ইউটিলিটি স্পেস হিসাবে ব্যবহার বাদেও বিভিন্ন শহরে, যেমন লন্ডনে বেজমেন্টকে থাকার জায়গা হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মূলত বেজমেন্টের ব্যবহার আসলে অনেক কিছুর উপরে নির্ভরশীল। যেমন – আবহাওয়া, মাটির ধরন, বিল্ডিং টেকনোলজি এবং অর্থনীতি। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বেজমেন্ট নির্মাণ সাধারণত কম করা হয়, কেননা এতে ভবনের উপরের তলা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার টর্নেডো প্রবণ এলাকায় শেল্টার স্পেস হিসাবে বেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ শেল্টারিংয়ের ক্ষেত্রেও বেজমেন্ট খুবই কার্যকরী।
প্রকারভেদ
বেজমেন্টের ধরন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে ইংলিশ বেজমেন্টের কথা। এদেরকে ভিন্নভাবে ডে লাইট বেজমেন্টও বলা হয়। এই ধাঁচের বেজমেন্টের কিছু অংশ ভূমির উপরে থাকে, যাতে জানালা নির্মাণ করা যায়। এই ধরনের বেজমেন্ট গ্যারেজ, মেইন্টেনেন্স রুম অথবা থাকার জায়গা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বেজমেন্টের সাথে এর পার্থক্য হল আলো বাতাসের চলাচল।
ওয়াল আউট বেজমেন্ট ও বেশ জনপ্রিয়। এটাও এক ধরনের ডে লাইট বেজমেন্ট। বেজমেন্ট ফ্লোরের নিচেও এক ধরনের বেজমেন্ট থাকে যাকে সাববেজমেন্ট বলা হয়। ক্রল স্পেস (Crawl Space) নামে এক ধরনের স্টোরেজ বেজমেন্ট থাকে, যদিও তা অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে।
বেজমেন্ট নির্মাণ দু’ভাগে ভাগ করা যায়, কংক্রিট ফর্মের মাধ্যমে বা ব্লক ওয়ালের মাধ্যমে। পাথরও ব্যবহার করা হয় কালেভদ্রে। তবে যেভাবেই বেজমেন্ট নির্মাণ করা হোক না কেন, ড্রেইনেজের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা অত্যাবশ্যক।
সেমি বেজমেন্ট বলতে স্থাপত্যবিদ্যায় বোঝায় এমন এক ফ্লোর, যার অর্ধেক মাটির নিচে থাকে। সাধারণত বড় বাড়িতে এ ধরনের বেজমেন্ট নির্মাণ করা হয় যেখানে ওই বাসার সাহায্যকারীরা থাকে। রান্নাঘর বা অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে সে জায়গা। আজকাল অবশ্য লন্ডনে একে গার্ডেন ফ্লোর বলা হয়ে থাকে।
সেমি বেজমেন্টের সুবিধাই হল আলো বাতাসের চলাচল, যেহেতু পুরো জায়গা সাধারণ বেজমেন্টের মত মাটির নিচে অবস্থিত থাকে না। যদিও এতে নির্মিত জানালা ভূমি থেকে বেশ উঁচুতে থাকে যার কারণে স্বাচ্ছন্দ্যে বাইরের কিছু দেখাও খুব একটা সহজ হয় না।
ঐতিহাসিকভাবে একে বিশেষ সুবিধা হিসেবে দেখা হতো, কেননা এরকম জানালা থাকায় একদিকে কাজের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর হলেও কর্মচারীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটারও সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে গ্রাউন্ড ফ্লোর কিছুটা উঁচু হওয়ায় ভবনের অন্যান্য তলা থেকে বাইরে আরো ভালো করে দেখা যেত বলেও এরকম বেজমেন্টের নির্মাণ বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও এধরনের বেজমেন্ট থাকলে স্যাঁতসেঁতে হওয়ার ব্যাপারটাও এড়ানো যেত আগে।
রক্ষণাবেক্ষণ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেজমেন্টের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণই হওয়া উচিৎ। গাড়ি রাখার গ্যারেজ বেজমেন্টে থাকতে পারে। সাথে ওয়াটার ট্যাংক, মেকানিকাল রুম, আর্থেনসহ বিভিন্ন জটিল যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা বেজমেন্টে থাকলে বেশ ভালোভাবে নিরাপত্তাসহ স্থানের যথাযথ ব্যবহারও হয়। অবশ্য এরকম ব্যবহারের জন্য সেখানে অবশ্যই অক্সিজেন, আলোর চলাচল রাখা উচিৎ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে।
বেজমেন্ট যথাযথভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করার কিছু ধাপ নিচে বলা হলো-
– মোল্ড হচ্ছে কিনা দেখতে হবে
– ঠাণ্ডা পানির পাইপ ইন্স্যুলেট করার ব্যবস্থা করতে হবে
– ইন্টেরিয়র ওয়াল এবং ফ্লোর সীল করতে হবে
– ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে হবে
– পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা দেখতে হবে।
বেজমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াটারটাইট বেজমেন্ট নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই ওয়াটার টেবিল এবং জায়গায় সয়েল ক্লাসিফিকেশন যথার্থ কিনা দেখতে হবে। আর বেজমেন্ট নির্মাণে কংক্রিট হলো সবচেয়ে যথার্থ উপাদান।
বেজমেন্ট নির্মাণ বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এটি ভবনের কদর বাড়াতে সাহায্য করে থাকে বিভিন্নভাবে। তাই এর নির্মাণের বেলায় দেওয়া উচিৎ যথাযথ গুরুত্ব।