আপনার বসবাসের ঘরখানি, কিংবা সম্পূর্ণ বাসাটিই কি কখনো বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে? শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর- সবগুলোই যথেষ্ট বড় হওয়া সত্ত্বেও কি মনে হয়েছে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না? যদি মনে হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ভাবছেন অতিরিক্ত তৈজসপত্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে।
ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরের স্থান সঙ্কুলানের ঝামেলা হয় উন্মুক্ত স্থানের সদ্ব্যবহার করতে না পারার কারণে। একটি ঘরের পুরোটা জুড়েই আসবাবপত্র থাকবে না, কিছু অংশ অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। অন্যথায় ঘরে ঢুকলেই দমবদ্ধ মনে হবে।
ঘরের আকৃতি নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বড় আকারের ঘরও যথাযথ উপায়ে না সাজালে ঘিঞ্জি মনে হবে, আবার ছোট ছোট ঘরের ভেতরেও রেখে দেয়া যেতে পারে অনেক মালামাল, যদি সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। কেমন হতে পারে সেই পরিকল্পনা? চলুন জানা যাক।

মাল্টিটাস্কিং আসবাবপত্র
ঘরের সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য সর্বদা এমনসব আসবাবপত্র ক্রয় করুন যা একাধিক কাজে লাগবে। নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধক কোনো আসবাবপত্র না হয়ে থাকলে তা যেন উদ্দিষ্ট কাজের সাথে কিছুটা বাড়তি স্টোরেজের জোগান দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
প্রথমেই বিছানা, যেহেতু এটি শোবার ঘরে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থান দখল করে রাখে। বিছানার নিচে ফাঁকা থাকা ভালো, এতে সেখানে অনেক কিছু রাখা যায়। তবে আদৌ যদি ফাঁকা না রাখতে চান, তাহলে এমন বিছানা ক্রয় করুন যার নিচে ড্রয়ার আছে। এতে অন্দরের সৌন্দর্যে ঘাটতি তো হবেই না, পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় এবং অনেকদিন পর পর প্রয়োজন হয় এমনসব বস্তু সেই ড্রয়ারে রেখে দিতে পারবেন।

ঘরে রাখা টেবিলে ড্রয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়, সাথে টেবিলের একপাশে শেলফ থাকলে আরো ভালো। প্রতিটি ঘরে একটি করে ছোট আকারের ক্লজেট রাখা যেতে পারে, যা কম আয়তনে অনেককিছু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। ক্লজেটের ভেতর এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই চলে যাবে, যেমন – পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টর্চ, খেলনা, কেচি, পারফিউম ইত্যাদি। এতে ঘর অনেক বেশি পরিপাটি হবে।
বাক্স ব্যবহার করুন
সবকিছুর জন্য ক্লজেট, আলমারি বা ওয়ারড্রোব, শেলফ ইত্যাদি কাজে আসবে না। প্রথমত, কিছু প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, যেগুলো নিত্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখান থেকে ড্রয়ার খুলে বের করতে হবে কিংবা প্রতিদিন ঠিকঠাকমতো সাজাতে হবে, যা বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়ও বটে।
দা-বটি, ছুরি, রান্নাঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র, বসার ঘরের রুম স্প্রে, তোয়ালে- বাসাবাড়িতে এরকম অসংখ্য বস্তু রয়েছে যা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। নিত্যদিন শেলফ থেকে নামিয়ে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখা কিংবা কিচেন ক্লজেট খোলা/বন্ধ করা কারোরই ভালো লাগার কথা না। বাক্সের ব্যবহার সব সমস্যার সহজ সমাধান।

ফ্রি স্ট্যান্ডিং কাঠের বা প্লাস্টিকের ধাপ করা বাক্স কিংবা দেয়ালে স্থাপনযোগ্য স্টিলের ঝুড়িসদৃশ বাক্স দেখতেও ভালো দেখায়, নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র রাখতেও সুবিধা হয়। সাজিয়ে রাখবার বালাই নেই বিধায় সময় বেঁচে যায় অনেক।
রান্নাঘরে বা বসার ঘরেই কেবল নয়, স্টোরেজ ঘরেও বাক্সের ব্যবহার জরুরি, অন্যথায় অল্প মালামাল রেখেই ঘর ভর্তি মনে হতে পারে। তাছাড়া বাক্সবন্দি করে মালামাল সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো খুঁজে পাওয়াও সহজ হয়। হালকা পিজবোর্ডের বা শক্ত কাগজের কার্টনবক্সগুলো এক্ষেত্রে উত্তম। প্রতিটি বাক্সে কাগজের লেবেল লাগিয়ে দিলে কোথায় কী রাখা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।
‘ডেড স্পেস’ এর সঠিক ব্যবহার
প্রতিটি ঘরেই এমন কিছু স্থান থাকবে যেগুলো আপাতত কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলে মনে হয়। এসব স্থানকে ডেড স্পেস (Dead Space) বলা হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে ডেড স্পেসের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব।
সবচেয়ে কমন ডেড স্পেস হলো জানালা। জানালার সামনে বড় কিছু রাখার উপায় নেই, রাখলে তা কুৎসিত দেখাবে বৈকি। তবে জানালার সামনের স্থানের সঠিক ব্যবহার ঘরের অন্যান্য স্থানের উপর চাপ কমায়। জানালার পাশে সোফা স্থাপন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বড় আকারের জানালা, যেগুলো মেঝের বেশ কাছাকাছি পর্যন্ত থাকে, সেগুলোর সামনে সোফা রাখা বেমানান। এক্ষেত্রে ছোট টেবিল বা শেলফ সেখানে রাখা যেতে পারে, যার ভেতরেও রাখা যাবে আরো অনেক কিছু।

একটি দেয়ালের শেষমাথা থেকে খানিক দূরে অপর দেয়ালে অর্ধেক বেরিয়ে থাকা পিলার থাকলে ঐ স্থানের ব্যবহারিক কোনো মূল্য থাকে না, যদি না আপনি সেখানে সরু আকারের একটি ক্লজেট বা টি টেবিল স্থাপন করেন। ঘরের দরজার একপাশে যদি কিছুটা স্থান অব্যবহৃত পড়ে থাকে, সেখানে স্থাপন করতে পারেন যথাযথ আকারের সুন্দর একটি বুকশেলফ।
প্রাইম রিয়েল এস্টেট (Prime Real Estate)
গৃহসজ্জার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বস্তু তুলে রাখা বা তুলে আনার জন্য আদর্শ উচ্চতা হলো মেঝে থেকে শুরু করে কাঁধের খানিকটা উপরে পর্যন্ত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা একে প্রাইম রিয়েল এস্টেট নামে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ যে অংশ পর্যন্ত বিনা ক্লেশে আপনার হাত পৌঁছুবে। ঘরের শূন্যস্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে এই প্রাইম রিয়েল এস্টেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বড় আসবাবপত্রগুলো বাদে ঘরের যে দেয়ালগুলো উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের বা স্টিলের শেলফ, ক্লজেট স্থাপন করে ফেলুন।
ঘরকে আড়াআড়ি না দেখে উল্লম্বভাবে দেখুন
যেসব বস্তু একটির উপরে আরেকটি রাখা যায়, সেগুলো পাশাপাশি রেখে অতিরিক্ত জায়গা নষ্ট করা অর্থহীন। আড়াআড়ি সজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্লম্ব সজ্জার দিকে মনোযোগ দিন। একটির উপর আরেকটি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ওজন এবং নমনীয়তা বিবেচনা করুন। অধিক ওজন এবং কঠিন বস্তুগুলোকে নীচে রেখে উপরের দিকে নমনীয় ও হালকা বস্তুগুলো রাখতে হবে। যদি বাসায় বুকশেলফ না থাকে এবং বইগুলো দেয়ালের সাথে সারি করে রাখতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন সারিগুলো উপরের দিকে লম্বা করে কম সংখ্যক সারি করার।

এসব তো ঘর সাজানোর কিছু কৌশল মাত্র। এসবের পাশাপাশি মাপমতো আসবাবপত্র কেনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সবশেষে, অপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, অব্যবহৃত বা পুরনো কাপড়, খেলনা, জুতা ইত্যাদি জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, পুরাতন জিনিসপত্রের বাজারে বিক্রি করে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন। এতে ঘরের জঞ্জাল কমবে অনেকটাই, ঘর হবে অধিকতর পরিপাটি, এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।