কীভাবে বাড়াবেন ঘরের স্টোরেজ স্পেস

আপনার বসবাসের ঘরখানি, কিংবা সম্পূর্ণ বাসাটিই কি কখনো বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে? শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর- সবগুলোই যথেষ্ট বড় হওয়া সত্ত্বেও কি মনে হয়েছে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না? যদি মনে হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ভাবছেন অতিরিক্ত তৈজসপত্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরের স্থান সঙ্কুলানের ঝামেলা হয় উন্মুক্ত স্থানের সদ্ব্যবহার করতে না পারার কারণে। একটি ঘরের পুরোটা জুড়েই আসবাবপত্র থাকবে না, কিছু অংশ অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। অন্যথায় ঘরে ঢুকলেই দমবদ্ধ মনে হবে।

ঘরের আকৃতি নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বড় আকারের ঘরও যথাযথ উপায়ে না সাজালে ঘিঞ্জি মনে হবে, আবার ছোট ছোট ঘরের ভেতরেও রেখে দেয়া যেতে পারে অনেক মালামাল, যদি সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। কেমন হতে পারে সেই পরিকল্পনা? চলুন জানা যাক।

মাল্টিটাস্কিং আসবাবপত্র

ঘরের সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য সর্বদা এমনসব আসবাবপত্র ক্রয় করুন যা একাধিক কাজে লাগবে। নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধক কোনো আসবাবপত্র না হয়ে থাকলে তা যেন উদ্দিষ্ট কাজের সাথে কিছুটা বাড়তি স্টোরেজের জোগান দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

প্রথমেই বিছানা, যেহেতু এটি শোবার ঘরে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থান দখল করে রাখে। বিছানার নিচে ফাঁকা থাকা ভালো, এতে সেখানে অনেক কিছু রাখা যায়। তবে আদৌ যদি ফাঁকা না রাখতে চান, তাহলে এমন বিছানা ক্রয় করুন যার নিচে ড্রয়ার আছে। এতে অন্দরের সৌন্দর্যে ঘাটতি তো হবেই না, পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় এবং অনেকদিন পর পর প্রয়োজন হয় এমনসব বস্তু সেই ড্রয়ারে রেখে দিতে পারবেন।

ঘরে রাখা টেবিলে ড্রয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়, সাথে টেবিলের একপাশে শেলফ থাকলে আরো ভালো। প্রতিটি ঘরে একটি করে ছোট আকারের ক্লজেট রাখা যেতে পারে, যা কম আয়তনে অনেককিছু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। ক্লজেটের ভেতর এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই চলে যাবে, যেমন – পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টর্চ, খেলনা, কেচি, পারফিউম ইত্যাদি। এতে ঘর অনেক বেশি পরিপাটি হবে।

বাক্স ব্যবহার করুন

সবকিছুর জন্য ক্লজেট, আলমারি বা ওয়ারড্রোব, শেলফ ইত্যাদি কাজে আসবে না। প্রথমত, কিছু প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, যেগুলো নিত্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখান থেকে ড্রয়ার খুলে বের করতে হবে কিংবা প্রতিদিন ঠিকঠাকমতো সাজাতে হবে, যা বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়ও বটে।

দা-বটি, ছুরি, রান্নাঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র, বসার ঘরের রুম স্প্রে, তোয়ালে- বাসাবাড়িতে এরকম অসংখ্য বস্তু রয়েছে যা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। নিত্যদিন শেলফ থেকে নামিয়ে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখা কিংবা কিচেন ক্লজেট খোলা/বন্ধ করা কারোরই ভালো লাগার কথা না। বাক্সের ব্যবহার সব সমস্যার সহজ সমাধান।

ফ্রি স্ট্যান্ডিং কাঠের বা প্লাস্টিকের ধাপ করা বাক্স কিংবা দেয়ালে স্থাপনযোগ্য স্টিলের ঝুড়িসদৃশ বাক্স দেখতেও ভালো দেখায়, নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র রাখতেও সুবিধা হয়। সাজিয়ে রাখবার বালাই নেই বিধায় সময় বেঁচে যায় অনেক।

রান্নাঘরে বা বসার ঘরেই কেবল নয়, স্টোরেজ ঘরেও বাক্সের ব্যবহার জরুরি, অন্যথায় অল্প মালামাল রেখেই ঘর ভর্তি মনে হতে পারে। তাছাড়া বাক্সবন্দি করে মালামাল সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো খুঁজে পাওয়াও সহজ হয়। হালকা পিজবোর্ডের বা শক্ত কাগজের কার্টনবক্সগুলো এক্ষেত্রে উত্তম। প্রতিটি বাক্সে কাগজের লেবেল লাগিয়ে দিলে কোথায় কী রাখা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।

ডেড স্পেসএর সঠিক ব্যবহার

প্রতিটি ঘরেই এমন কিছু স্থান থাকবে যেগুলো আপাতত কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলে মনে হয়। এসব স্থানকে ডেড স্পেস (Dead Space) বলা হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে ডেড স্পেসের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব।

সবচেয়ে কমন ডেড স্পেস হলো জানালা। জানালার সামনে বড় কিছু রাখার উপায় নেই, রাখলে তা কুৎসিত দেখাবে বৈকি। তবে জানালার সামনের স্থানের সঠিক ব্যবহার ঘরের অন্যান্য স্থানের উপর চাপ কমায়। জানালার পাশে সোফা স্থাপন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বড় আকারের জানালা, যেগুলো মেঝের বেশ কাছাকাছি পর্যন্ত থাকে, সেগুলোর সামনে সোফা রাখা বেমানান। এক্ষেত্রে ছোট টেবিল বা শেলফ সেখানে রাখা যেতে পারে, যার ভেতরেও রাখা যাবে আরো অনেক কিছু।

একটি দেয়ালের শেষমাথা থেকে খানিক দূরে অপর দেয়ালে অর্ধেক বেরিয়ে থাকা পিলার থাকলে ঐ স্থানের ব্যবহারিক কোনো মূল্য থাকে না, যদি না আপনি সেখানে সরু আকারের একটি ক্লজেট বা টি টেবিল স্থাপন করেন। ঘরের দরজার একপাশে যদি কিছুটা স্থান অব্যবহৃত পড়ে থাকে, সেখানে স্থাপন করতে পারেন যথাযথ আকারের সুন্দর একটি বুকশেলফ।

প্রাইম রিয়েল এস্টেট (Prime Real Estate)

গৃহসজ্জার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বস্তু তুলে রাখা বা তুলে আনার জন্য আদর্শ উচ্চতা হলো মেঝে থেকে শুরু করে কাঁধের খানিকটা উপরে পর্যন্ত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা একে প্রাইম রিয়েল এস্টেট নামে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ যে অংশ পর্যন্ত বিনা ক্লেশে আপনার হাত পৌঁছুবে। ঘরের শূন্যস্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে এই প্রাইম রিয়েল এস্টেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বড় আসবাবপত্রগুলো বাদে ঘরের যে দেয়ালগুলো উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের বা স্টিলের শেলফ, ক্লজেট স্থাপন করে ফেলুন।

ঘরকে আড়াআড়ি না দেখে উল্লম্বভাবে দেখুন

যেসব বস্তু একটির উপরে আরেকটি রাখা যায়, সেগুলো পাশাপাশি রেখে অতিরিক্ত জায়গা নষ্ট করা অর্থহীন। আড়াআড়ি সজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্লম্ব সজ্জার দিকে মনোযোগ দিন। একটির উপর আরেকটি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ওজন এবং নমনীয়তা বিবেচনা করুন। অধিক ওজন এবং কঠিন বস্তুগুলোকে নীচে রেখে উপরের দিকে নমনীয় ও হালকা বস্তুগুলো রাখতে হবে। যদি বাসায় বুকশেলফ না থাকে এবং বইগুলো দেয়ালের সাথে সারি করে রাখতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন সারিগুলো উপরের দিকে লম্বা করে কম সংখ্যক সারি করার।

এসব তো ঘর সাজানোর কিছু কৌশল মাত্র। এসবের পাশাপাশি মাপমতো আসবাবপত্র কেনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সবশেষে, অপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, অব্যবহৃত বা পুরনো কাপড়, খেলনা, জুতা ইত্যাদি জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, পুরাতন জিনিসপত্রের বাজারে বিক্রি করে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন। এতে ঘরের জঞ্জাল কমবে অনেকটাই, ঘর হবে অধিকতর পরিপাটি, এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।

এই হাউজপ্ল্যান্টগুলো আপনার অন্দরসজ্জাকে ভিন্নমাত্রা দেবে

যারা কিছুটা প্রকৃতিপ্রেমী, নিজ বাড়িতে যাদের বাগান করার শখ, কিন্তু বাসার সামনে উঠোনের অভাবে তা হয়ে উঠছে না, তাদের জন্য ছাদবাগান আদর্শ। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে থাকলে বাড়িওয়ালার ছাদে আপনার শখের ছাদবাগানটি হবে কী করে?

শখ মেটাতে অনেকে বারান্দাকে আস্ত বাগানে রূপ দেন। তবে প্রকৃতিপ্রেমের সাথে যদি মনে থাকে সৌখিনতা, আর পরিপাটি গৃহসজ্জার আকাঙ্ক্ষা, তবে একটা ঘরে বাগান না বানিয়ে পুরো বাসাতেই প্রকৃতির সজীবতার নির্যাস দেয়া যেতে পারে। আর তার জন্য চাই চমৎকার কিছু হাউজপ্ল্যান্ট আইডিয়া।

একমনে ভাববেন যেখানটায় বসে

যদি অন্দরের সাজসজ্জা নিয়ে সচেতন হোন, তাহলে আপনার বাসায় একটি সুন্দর ইজিচেয়ার আছে নিশ্চয়ই। এই চেয়ারে হেলান দিয়ে নানা ভাবনায় হারিয়ে যেতে আপনার সঙ্গী হতে পারে সিলিং থেকে মেঝে অবধি ঝুলে যাওয়া কিছু ঝুলন্ত হাউজপ্ল্যান্ট। একাধিক ঝুলন্ত লতাগুল্ম দিয়ে ইজিচেয়ারটা বেষ্টন করে ফেলতে পারেন, এতে ইট-পাথরের দালানে একটুকরো নৈসর্গের অনুভূতি আসবে।

ডাইনিংয়ে কৃত্রিমতা নয়

ডাইনিং ঘরে অনেকেই কৃত্রিম প্লাস্টিকের ফুলদানি রেখে দেয়, কেউ ডাইনিং টেবিলের উপরেও রাখে কৃত্রিম ফুলের তোড়া কিংবা শোপিস। এসবের দারুণ প্রতিস্থাপক হলো একটি চমৎকার হাউজপ্ল্যান্ট। ডাইনিং ঘরের দেয়ালগুলোর মাঝামাঝি, কিংবা বসার স্থানকে বেষ্টন করে ছোট ছোট হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপন করলে খাওয়াদাওয়ার সময়ে গুমোট ভাবটা কেটে যাবে। ডাইনিং টেবিলের উপর ছোট একটি বনসাই নিয়ে আসতে পারে বিশেষত্ব।

আকার নিয়ে ভাবনা নয়

হাউজপ্লান্টের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করে আকারে ছোট ছোট উদ্ভিদই একমাত্র বিকল্প। কিন্তু আধুনিক গৃহসজ্জার ট্রেন্ড বলছে উল্টো। আকার বড় হলে কোনো ঝামেলা নেই, বরং সৌন্দর্যই বাড়বে বেশি। পাম, রাবার, বেহালা পাতা ডুমুরের মতো বড় আকারের বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদও আপনার ঘরে স্থান পেতে পারে। বিশেষ করে বসার ঘরে সোফার পাশে কিংবা ওপেন কিচেন ব্যবস্থায় এরকম বড় বড় উদ্ভিদগুলো বেশ মানানসই।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, শুরুতেই মাঝারি বা মোটামুটি বড় আকারের উদ্ভিদ নিয়ে আসলে পরে তার আকার নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হতে পারে। তাই শুরুতে ছোট আকারের গাছ আনুন, সেগুলোকে সময় নিয়ে পরিচর্যা করে বড় করুন, এবং নিজের পছন্দসই আকারে সীমাবদ্ধ রাখুন।

ওয়ার্কস্পেসে বিশেষ নজর আবশ্যক

ঘর সাজাবেন হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে আর নিজের ওয়ার্কস্পেসকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন না, তা হয় না। কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময়ে যখন ‘হোম-অফিস’ ব্যাপারটি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তখন প্রতিটি চাকরিজীবীর বাসায়ই অফিসের কাজ করবার জন্য থাকে নিজস্ব একটি ওয়ার্কস্টেশন।

যে স্থানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে হয়, যোগ দিতে হয় মিটিংয়ে, সে স্থানটা সবুজ হলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাঁপ ছাড়া যাবে কিছুটা, পাওয়া যাবে সজীব নিঃশ্বাস। তাই ওয়ার্কস্টেশনের হাউজপ্ল্যান্টগুলো হবে ছোট ছোট, ঝরঝরে, আর ভীষণ সবুজ। ড্রেসিনা (Dracaena) এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। উজ্জ্বল সবুজ চিরল চিরল পাতার এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দেখতে কৃষকের ক্ষেতে নবীন ধানগাছের মতো মনে হয়।

ড্রেসিনার মতো, তবে অতটা ঘন নয় এবং পাতাগুলো অধিক সরু, এ উদ্ভিদটি হলো স্পাইডার প্ল্যান্ট। এর পাতাগুলো চারধারে ছড়িয়ে পরে থাকে, লম্বা লম্বা সবুজ ঘাসের একটুকরো আবরণ মনে হয়। এ দুটোর পাশাপাশি সোনালি পথস লতা (Golden Pothos Vine) রেখে দিতে পারেন ওয়ার্কস্টেশনের মাঝামাঝি, কিংবা উপর থেকে ঝুলিয়েও দেয়া যায়।

শাওয়ার প্লান্টে নজর দিন

ঘরের সাজসজ্জায় যে হাউজপ্ল্যান্টগুলো ব্যবহার করছেন, গোসলখানায় সেগুলো মোটেই মানানসই হবে না। গোসলখানার জন্য আলাদা কিছু শাওয়ারপ্লান্টের ব্যবস্থা করুন, যদি গোসলখানায় বাথটাব থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। প্রথমেই নিয়ে নিন মথ অর্কিড (Moth Orchid) যা ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বৃদ্ধি পায়। এর বেগুনি রঙের ফুলের আছে চমৎকার সৌরভ। এর সাথে থাকুক ঘরের ভেতরে রাখা ড্রেসিনার শাওয়ার উপযোগী দুই প্রজাতি- লাকি ব্যাম্বো (Dracaena sanderiana) আর ড্রাগন ট্রি (Dracaena marginata)।

গোল্ডেন পথসেরও একটা পদ (Epipremnum aureum) ঝুলিয়ে দিতে পারেন উপর থেকে। যদি আদৌ এগুলোর পরও আরো বৈচিত্র্যের সন্ধান থাকে, তাহলে এনে ফেলতে পারেন পিস লিলি (Peace Lily) আর বোস্টন ফার্ন (Boston Fern)। এ দুটোর সমন্বয়ে গোসখানার বাথটাবখানি মনে হবে কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে স্নিগ্ধ সবুজ এক জলাধার।

শেলফ যেন বাদ না যায়

ঘরের সর্বত্রই হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপনের দরকার নেই, এতে ঘর কম, জঙ্গল বেশি মনে হবে। কিন্তু ঘরের যেসব জায়গায় হাউজপ্ল্যান্ট না রাখলেই নয়, তার মাঝে একটি হলো শেলফগুলো। সেটা বুকশেলফ কিংবা শোপিস ও অন্যান্য দ্রব্যাদি রাখার শেলফও হতে পারে। শেলফটা হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজানোর মূল শর্ত হলো বড় এবং পর্যাপ্ত স্থান নিয়ে শেলফ তৈরি করা। প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো কিংবা বই রাখার ফাঁকে ফাঁকে যেন ছোট ছোট উদ্ভিদ রাখা যায়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে শেলফ তৈরির সময়েই, যদি আপনার হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজাবার ইচ্ছা থাকে।

শেলফের জন্য কোনো সন্দেহ ছাড়াই ছোট আকারের লতা-গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বাছাই করুন, যেগুলো আকারে খুব বেশি বড় হবে না। শুরু করতে পারেন বার্ডস নেস্ট স্নেক প্ল্যান্ট (Birds Nest Snake Plant) দিয়ে। সাথে স্নেক প্লান্টেরই আরেক পদ সামুরাই স্নেক প্ল্যান্ট বেশ মানানসই হবে বুকশেলফের জন্য।

শোপিসের শেলফে একটা টিলানসিয়া (Tillandsia) রাখলে সেটাকেও আরেকটা শোপিসই মনে হবে। ফার্নের দু-তিনটি প্রজাতি, যেমন- মেইডেনহেয়ার (Maidenhair), লেমন বাটন (Lemon Button), বোস্টন (Boston) ইত্যাদি যেকোনো শেলফেরই শোভা বাড়াবে। শেলফে উদ্ভিদের ভিন্নতার পাশাপাশি রঙের ভিন্নতা আনতে সিলভার স্পার্কেল পিলিয়া (Silver Sparkle pilea) তো আছেই। এর হালকা সবুজ থেকে রূপালি সবুজ অন্যান্য সবকিছুর মাঝে নজর কাড়বে।

আপনার ওপেন কিচেনটি যেভাবে সাজাবেন

গৃহনির্মাণে কারো প্রধান লক্ষ্য হয় কেবলই বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি তৈরি করা, কারো সবটুকু মনোযোগ থাকে বাড়ির সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা বর্ধনে। বিলাসি মনের সৌন্দর্যপ্রিয় ভাবনাগুলো ছুঁয়ে যায় ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিংবা কিচেনে। ঘরখানি দেখে যেন মনে প্রশান্তি আসে, সেটাই তো আসল ভাবনা।

সেই ভাবনায় ঘরের রসুইখানা কিংবা কিচেনের অবস্থান কোথায়? নির্মাণশৈলির তাবৎ কারিকুরি যেন আটকে আছে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমেই। তবে আধুনিক স্থাপত্যকলা সৌখিন মানুষের সেই ভাবনাও দূর করেছে। কিচেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আবির্ভাব হয়েছে ওপেন কিচেন। বন্ধ দেয়ালের রান্নাঘরকে বিদায় বলে খোলা কিচেনে বিস্তর প্রশস্ত পারিপার্শ্বিকতায় রান্না করতে কার না ভালো লাগবে? উপরন্তু, আপনার রন্ধনশৈলির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।

তো এই ওপেন কিচেনখানি কীভাবে আরো একটু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবেন, সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা হয়ে যাক তাহলে।

স্টোরেজ করুন, তবে গোপন

ওপেন কিচেন যেহেতু আপনার বসার ঘরের সাথে মিশে যাবে, তাই সাধারণ রান্নাঘরের মতো এর সাজসজ্জা হলে চলবে না। বিশেষ করে, রান্নাঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী রাখবার শেলফ কিংবা স্টোরেজ ক্যাজুয়াল ঘরোয়া ডিজাইনে করতে হবে যেন পুরোটাই একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করে, কিচেন বলে আলাদা না হয়। এতে করে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে রান্নার মাঝে গল্প করা যাবে, মেহমানরাও ঘরোয়া পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।

লেআউট ঠিক করুন ভেবে-চিন্তে

ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ে লেআউট ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ধরবার পূর্বেই মাপজোখ ঠিক করে নিন এই বিষয়গুলোর– বসার স্থান থেকে চুলার দূরত্ব, হাঁটা-চলা করবার স্থানটুকু বসার ঘরের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, টিভির অবস্থানটা খুব কাছে হলো কিনা যেখানে রান্নার আওয়াজে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটবে ইত্যাদি। এই সবকিছু বিবেচনা করে ঘরের আকৃতি এবং আপনার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য বিষয়বস্তু অনুসারে ওপেন কিচেনটি ইংরেজি ইউ কিংবা এল আকৃতির হতে পারে।

জোন ভাগ করুন

ওপেন কিচেনের মানেই হচ্ছে বসার ঘর আর রান্নাঘরের তফাৎ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে হ-য-ব-র-ল হলে চলবে না। কিচেন আর বসার ঘর মিলিয়ে পুরোটাকে একটি ঘর বিবেচনা করে কয়েকটি জোনে ভাগ করুন– রান্না, ধোয়ামোছা, খাওয়া, বসা (টিভি দেখা) প্রভৃতি। ঘর একটিই, কিন্তু প্রতিটি জোন আলাদা ও স্বতন্ত্র। এবং সব জোনের মাঝে একটি কমন ফাঁকা স্থান থাকবে যেন একটিতে যেতে হলে অন্যটির সীমানা ভেদ না করতে হয়।

কিচেন জোন জানালার পাশে রাখুন

জোন ভাগ করার ক্ষেত্রে কিচেন জোনটি বহিঃস্থ দেয়াল বা জানালার দিকে রাখুন। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে এই কৌশল কাজে দেবে। তাছাড়া রান্নার মাঝে যদি খানিকটা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার ছোঁয়া চান তাহলে কিচেনের সাথের দেয়াল স্বচ্ছ কাচ দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এ দেয়ালটি বাড়ির পাশে থাকা বাগানের সাথে লাগোয়া হলে তো কথাই নেই।

কিচেনে কী কী সংযুক্ত করবেন ঠিক করুন

পানির কল, চুলা, এক্সহস্ট ফ্যান, স্টোরেজের মতো মৌলিক উপাদানগুলো ছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে কিচেনে উন্মুক্ত জায়গা অনুযায়ী বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করুন। যেমন– কিচেন আইল্যান্ড, ব্রেকফাস্ট বার, রেঞ্জ কুকার, স্টাইলিস ফ্রিজার ইত্যাদি।

মার্বেল, গ্লাস, স্টিল না উড?

উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে ঠিক করুন আপনার ওপেন কিচেনটির বিশেষত্ব। সাধারণ নির্মাণশৈলি অনুসরণ করলে কিচেনে আনুষঙ্গিক অংশগুলো তৈরি করা যায় স্টিল দিয়েই। মার্বেল বা কাচ, উভয়ের ব্যবহারই কিচেনকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করবে। মার্বেলের বাহারি ডিজাইন কিংবা কাচের স্বচ্ছতা ও চাকচিক্য, যেকোনো একটি বেছে নিন মর্জিমতো। তবে রাজকীয় ভাব আনতে কাঠই এখনো সবার উপরে। কালচে বা বাদামি রঙয়ের পাইন, মেপল, মেহগনি বা রোজউড হতে পারে আপনার ওপেন কিচেনের আভিজাত্যের প্রতীক।

উন্মুক্ত স্থান রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে

ওপেন কিচেন করলে কিচেন আর বসার ঘর, অর্থাৎ পুরো ঘরে এমন কোনো স্থান থাকা যাবে না যেখানে পৌঁছতে হলে বিশেষ কসরত করতে হয়, কোনো কিছু ডিঙিয়ে যেতে হয় কিংবা কিছুটা ঘুরে যেতে হয়। ওপেন কিচেনের ধারণাই তৈরি হয়েছে খোলামেলা আবহ তৈরি করার জন্য। তাই প্রয়োজনে ‘কিচেন-এলিমেন্টস’ কম রাখুন, তথাপি ঘরকে যথেষ্ট খোলামেলা রাখবার চেষ্টা করুন।

রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন

কিচেনের বিভিন্ন আসবাবের রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন, রং নির্ধারণ করুন বুঝে-শুনে। ঘরের দেয়ালের সাথে সাদৃশ্য আছে এরকম কোনো রং বাছাই করুন। বসার সোফা, টেবিল, ঘরের দেয়াল আর কিচেনের স্টোরেজ কিংবা অন্যান্য উপাদানের রঙের সিংক হলে সেটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। তবে রং নির্ধারণেও একটি নির্দিষ্ট নিশ খুঁজে নিতে হবে। যে রং বাছাই করবেন, পুরো ঘরের নিশ হবে সেটি। এক্ষেত্রে খুব বেশি রঙচঙে কিংবা চোখে লাগছে, এরকম রঙ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাদা, অফ-হোয়াইট, ধূসর, ক্রিমি, ডার্ক ইত্যাদি ওপেন কিচেন ডিজাইনের জনপ্রিয় রঙ।

আলোকসজ্জার কথা ভুলবেন না যেন

কিচেনের জোন ভাগ করার সময়ই আলোকসজ্জা ঠিক করে ফেলতে হবে। রান্নার জোনে যতটা আলো প্রয়োজন, ধোয়ামোছা কিংবা বসার জোনে ততটা নয়। আবার বসার জোনে যেরকম আলো চাই, ডাইনিং জোনে সেরকম নয় নিশ্চয়ই। যদি আপনার ওপেন কিচেনটি যথেষ্ট বড় হয়, তাহলে অন্যসবের সাথে খেয়াল রাখুন এ বিষয়েও, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা প্রাকৃতিক আলোর (জানালা, স্কাইলাইট, ইত্যাদি) ব্যবস্থা করুন যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে।

সর্বোপরি, একটি ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে সৌন্দর্য; অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে হিজিবিজি করে ফেলা নয়। আপনার রুচি ও সাধ্য অনুসারে যে নকশা ধরেই এগোন না কেন, ওপেন কিচেন যেন ওপেনই থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় ওপেন কিচেনের মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে।

কীভাবে মার্বেলের দাগ দূর করবেন?

আদিকাল থেকেই গৃহনির্মাণে মার্বেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গৃহসজ্জায় চাকচিক্য, নান্দনিকতা, সর্বোপরি মসৃণ এক অনুভূতি দেয় মার্বেলের মেঝে, দেয়াল কিংবা অন্যান্য ব্যবহার। অবশ্য সৌন্দর্যের সাথে মার্বেল নিয়ে আসে বাড়তি দায়িত্বও। নিয়মিত যত্ন না নিলে মার্বেলের গায়ে তৈরি হয় অনেকরকম দাগ, যেগুলো মার্বেলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।

কিন্তু নিয়ম করে পরিচর্যার পরও যদি দাগ পড়েই যায়, তাহলে কী করা যায়? ভাবনার কারণ নেই। কীরকম দাগ তার ওপর নির্ভর করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মার্বেলের দাগও দূর করা যায়। কীভাবে দাগ দূর করবেন, সেটি জানবার আগে চলুন দেখে আসি মার্বেলে কত রকমের দাগ হতে পারে।

মার্বেলে যত দাগ

তেলের দাগ – রান্নার তেল থেকে শুরু করে লোশন, দুধ, মাখন, প্রসাধনী তেল, গ্রিজ ইত্যাদি থেকে মার্বেলে তেল চিটচিটে ধূসর হলুদাভ দাগ হতে পারে।

জৈবিক কারণ – কফির কাপ, কাচের বাসনকোসন, বালতি, মগ ইত্যাদির কারণে এই দাগ হতে পারে যা ধূসর বা কালচে হয়।

পানির দাগ – নিয়মিত পানি পড়লে বা পানি জমে থাকলে, দ্রুত না মুছে ফেললে এই দাগ ধীরে ধীরে তৈরি হয়।

চিটি পড়া – এ ধরনের দাগ সবচেয়ে বেশি হয় গোসলখানায়, বিশেষ করে যে অংশে মার্বেল পুরো ভিজে না গেলেও পানির ফোঁটা পড়ে তার উপর।

মরচে পড়া দাগ – লোহা ও ইস্পাতের সামগ্রী থেকে মার্বেলে এই দাগ পড়ে।

এগুলো সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। তবে এগুলো ছাড়াও ঘর্ষণের দাগ, কালির দাগ, চা-কফির দাগ, রঙের দাগ ইত্যাদি উপায়ে মার্বেলে দাগ পড়তে পারে।

দাগ ওঠানোর উপায়

মার্বেল থেকে কঠিন কঠিন দাগ ওঠানোর জন্য পোল্টিস (Poultice) নামক একপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। পোল্টিস বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। এটি নানা প্রকার রাসায়নিক ও পরিষ্কারক দ্রব্যের সংমিশ্রণে তৈরি। কেওলিন ক্লে (Kaolin Clay- একপ্রকার কাদামাটি), ফুলার্স আর্থ (Fuller’s Earth – অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট সমৃদ্ধ একপ্রকার কাদামাটি), ট্যাল্ক, বেকিং সোডা, চকের গুঁড়া ইত্যাদি মিশ্রিত করে চাইলে বাসাতেই প্রস্তুত করা যাবে এই ক্লিনার।

তেল চিটচিটে দাগ

তেলজাতীয় দ্রব্য সাধারণত মার্বেলের ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলোতে প্রবেশ করে স্থায়ী কালচে দাগ তৈরি করে। এ দাগ দূর করার একটাই উপায়- ছিদ্রগুলোতে অবস্থান নেয়া এই তেল অপসারণ, যা সাধারণ ধোয়া-মোছায় সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রথম পদ্ধতি হলো অ্যামোনিয়া বা অ্যাসিটোন মিশ্রিত তরল ক্লিনার দিয়ে দাগ ওঠানোর চেষ্টা করা। এ পদ্ধতি কাজ না করলে পোল্টিস দিয়ে ভালো করে ঘসে ২৪ ঘণ্টা পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে দ্বিতীয় দিনের মতো পোল্টিস দিয়ে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হবে।

জৈবিক দাগ

চা, কফি, লেবুর রস ইত্যাদির জৈবিক দাগ তোলা বেশ সহজ। ১২% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাথে কয়েক ফোঁটা অ্যামোনিয়ার মিশ্রণে তৈরি লিকুইড ক্লিনার দিয়ে এ দাগ সহজেই তোলা যাবে। তবে কালো রঙের মার্বেল পাথরের ক্ষেত্রে এই মিশ্রণ ব্যবহারে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অধিক সময় এর ব্যবহারে কালো রঙের মার্বেলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে।

গোসলখানায় পানির দাগ

গোসলখানার দেয়ালে প্রতিনিয়ত পানির ছিটা কিংবা সাবান/ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানির ছিটা পড়ে, তাতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ তৈরি হয়। তবে এই দাগ দূর করাও বেশ সহজ। একটি মাঝারি আকারের বালতিতে (৬-৮ লিটার পানি) আধা কাপ অ্যামোনিয়া মিশিয়ে দেয়ালে ভালোভাবে ঘষলেই এ দাগ উঠে যাবে। একদিনে না উঠলে ২/৩ দিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যহত রাখতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, অধিক অ্যামোনিয়া মানেই অধিক পরিষ্কার নয়। বরং অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া ব্যবহার করলে দেয়ালের মার্বেলের রঙ ঝলসে যেতে পারে।

মরচে পড়ার দাগ

ধাতব বস্তু থেকে মরচে পড়ার যে দাগ তৈরি হয় মার্বেলে, তা তুলতে গিয়ে অনেকে মার্বেলের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে থাকেন তীক্ষ্ম বা ধারালো কোনো ধাতব বস্তু দিয়ে ঘষে। যদিও মরচে পড়া দাগ দূর করা দুরূহ ব্যাপার, তবে ধাতব বস্তুর ঘর্ষণ একেবারেই করা যাবে না।

প্রথমত, মোলায়েম ব্রাশ দিয়ে ভালো করে দাগ পড়া অংশগুলো ঘষতে হবে যেন মরচের অতিরিক্ত আবরণই কেবল উঠে যায়, নতুন কোনো দাগ সৃষ্টি না হয়। এরপর পোল্টিস প্রয়োগ করে ঘষতে হবে। টানা কয়েকদিন পোল্টিস প্রয়োগ করলেই কেবল মার্বেলের সূক্ষ্ম ছিদ্রের ভেতর প্রবেশ করা মরচে বের করে আনা সম্ভব হবে। এতেও না হলে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা পেশাদার কাউকে দিয়ে করানো উত্তম।

কালির দাগ

যেসব কালির দাগ পানিতে ধুয়ে দিলে যায় না, সেগুলোর জন্য পোল্টিসই যথেষ্ট। তবে অত্যধিক পরিমাণে কালি পড়লে কিংবা আঠালো এবং স্থায়ী কোনো কালচে দাগ তুলবার জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত অধিক শক্তিশালী লিকুইড ক্লিনার প্রয়োজন। তবে এই লিকুইড ক্লিনার নিজে ব্যবহার না করে পেশাদার কাউকে দিয়ে করানোই যুক্তিযুক্ত। কারণ সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে না পারলে এতে দু’রকম ঝামেলা হতে পারে– মার্বেলের চাকচিক্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, এবং হাতে চুলকানির সৃষ্টি হওয়া।

ধোঁয়া কিংবা আগুনে পোড়া দাগ

দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়ায় থাকলে কিংবা আগুনের সংস্পর্শে মার্বেলে গভীর কালো দাগ হতে পারে যা ওঠানোর জন্য বেশ কসরত করতে হবে। পোল্টিসের প্রলেপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর ভালো করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং সেটি শুকিয়ে এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এভাবে কয়েকবার করার পর মার্বেল প্রাথমিক রূপে ফিরে আসতে পারে।

কংক্রিট ফিনিশিংয়ের রকমফের

প্রাচীনকালে বসতবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো মাটি, চুন, সুড়কি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে রোমানরা প্রথম অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন বস্তুর মিশ্রণে একধরনের মিশ্রণ ব্যবহার শুরু করে। বালু, চুন, সুড়কির সাথে পরিমাণমতো পানি দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণ কংক্রিট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অবকাঠামো নির্মাণে। আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই রোমানদের মাঝে কংক্রিট অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান হিসেবে প্রচলিত হয় এবং কালের পরিক্রমায় কংক্রিটের মিশ্রণে চুনকে প্রতিস্থাপন করে সিমেন্ট।

কংক্রিটের ব্যবহার যেমন সহজ, তেমনই নিরাপদ ও বহুমাত্রিক। অবকাঠামোতে যেকোনো প্রকার ডিজাইন প্রয়োগেই কংক্রিট ব্যবহার করা যায়। কংক্রিটের ফিনিশিংয়ের রকমভেদের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে সৃজনশীল নির্মাণশৈলির নান্দনিকতা।

. ট্রোয়েল ফিনিশ

রাজমিস্ত্রী একপ্রকার হাতলযুক্ত মসৃণ স্টিলের গঠন নিয়ে কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর বারবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছেন- এই দৃশ্য আমাদের সকলের নিকটই সুপরিচিত। এরূপ ফিনিশিংকেই মূলত ট্রোয়েল ফিনিশিং বলা হয়। এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ফিনিশিং। মূলত কংক্রিটের ঢালাইয়ের কাজ হয়ে গেলে পৃষ্ঠতল মসৃণ ও সমতল করে দেয়াই ট্রোয়েল ফিনিশ। রাজমিস্ত্রীদের হাতে সচরাচর দেখা ম্যানুয়াল ট্রোয়েলের পাশাপাশি আজকাল যান্ত্রিক ট্রোয়েলের ব্যবহারও বেড়েছে।

২. ব্রুম ফিনিশ

এ ধরনের কংক্রিট ফিনিশে কংক্রিটের পৃষ্ঠতল মসৃণ রাখা হয় না। অবশ্য অনেকে একে ট্রোয়েলড-ব্রুমও বলে থাকে এজন্য যে ট্রোয়েল দিয়ে প্রথমে কংক্রিট মসৃণ করে সমতল করার পরই এর উপর ব্রুম বা ঝাঁটা দিয়ে টেনে টেনে একে অমসৃণ করা হয়। ব্রুম ফিনিশিংয়ে সময়ের ব্যাপারে বিশেষ সাবাধান হতে হয়। ট্রোয়েলের কাজ শেষ হবার সাথে সাথেই ব্রুমের কাজ শুরু করে দিতে হয়, অন্যথায় সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তা করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ফিনিশিং প্রধানত পৃষ্ঠতল যেন পিচ্ছিল না হয়ে যায় সে উদ্দেশ্যে করা হয়।

. স্ট্যাম্পড ফিনিশ

নাম থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব, কেননা স্ট্যাম্পড কংক্রিট ফিনিশিংয়ে আক্ষরিক অর্থেই কংক্রিটের উপর স্ট্যাম্পিং করা হয়। কংক্রিটের ঢালাই যথাযথভাবে ট্রোয়েল দিয়ে মসৃণ করার পর কংক্রিট নরম থাকতেই তার উপর কোনো নমুনা বস্তু দিয়ে চেপে সেটির আকৃতি ফুটিয়ে তোলার নাম স্ট্যাম্পড ফিনিশ। এটি মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে। স্ট্যাম্পড করার পর কংক্রিটের মেঝে দেখতে পাথর, স্লেট, ইট কিংবা যথাযথ উপায়ে করতে পারলে কাঠের মতোও হয়। বাসাবাড়িতে সাইডওয়াক কিংবা রাস্তায় ফুটপাতে, গাড়ির গ্যারেজে এ ধরনের ফিনিশিং দেয়া হয়।

. সল্ট ফিনিশ

সদ্য ঢালাই করা কংক্রিটের উপর এবড়োথেবড়ো ক্রিস্টাল আকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথড়ের টুকরো ফেলে তা রোলার দিয়ে চেপে মসৃণ করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে সল্ট ফিনিশিং বলে। কংক্রিট শক্ত হবার পর মেঝেটি ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সল্ট ফিনিশিংয়ের সৌন্দর্য বোঝা যায়। অবশ্য সৌন্দর্য এখানে গৌন ব্যাপার। মুখ্য হলো মেঝে পিচ্ছিলরোধী করা। সাধারণ সুইমিংপুলে এ ধরনের ফিনিশিং ব্যবহার করা হয় যার উপর সহজে শ্যাওলা পড়ে না কিংবা পিচ্ছিল হয়ে যায় না।

৫. এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ

এটাও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। মূলত ট্রোয়েলড ফিনিশের উপর অতিরিক্ত একস্তরের কংক্রিট বা সিমেন্ট যোগ করাই এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ। প্রথমে ট্রোয়েল দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই মসৃণ করা হয়। এরপর তা থেকে কয়েক মিলিমিটারের মতো চিকন একটি আবরণ পাওয়ার ফ্ল্যাটার বা ডায়মন্ড পলিশার দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই আবরণ উঠিয়ে নিলে ভেতরের কংক্রিটের পৃষ্ঠতল আরো মসৃণ হয়। এরপর তার উপর সিমেন্টের মিশ্রণের একটি অতিরিক্ত লেয়ার যোগ করা হয় যা একে অত্যন্ত মসৃণ এবং তকতকে করে তোলে।

. সোয়ার্ল ফিনিশ

কংক্রিটের ফিনিশের নানা রকমভেদের মাঝে এটি সবচেয়ে সৃজনশীলগুলোর একটি। প্রথম কংক্রিটের আবরণ সমতল করার পর তার উপর জ্যামিতিক মাপ ঠিক রেখে অভিন্ন পরিমাণ এবং আকার বজায় রেখে কংক্রিট মিশিয়ে দেয়া হয়। ফলে মেঝের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কংক্রিটের বৃত্তাকার গঠন তৈরি হয় যা মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একইসাথে হাঁটাচলার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়, কেননা এতে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

অবশ্য এটি ঘরের বাইরের মেঝেতেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যেসব স্থানে অধিক হাঁটাচলা হয় এবং মানুষের পায়ের ঘর্ষণে মেঝে খুব দ্রুতই ক্ষয় হয়ে কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেসব স্থানে এই প্রক্রিয়ায় কংক্রিটের ফিনিশিং দেয়া হয়। সোয়ার্ল ফিনিশিংয়ের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না, কারণ এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।

. পলিশড ফিনিশ

পলিশড ফিনিশ মূলত এরূপ যে মেঝে টাইলসের মতো মসৃণ ও আরামদায়ক হবে এবং তা এতটাই চকচকে হবে যে তাতে বিভিন্ন বস্তুর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণ বড় হলঘরে, প্রদর্শনীর মেঝেতে এ ধরনের ফিনিশ ব্যবহার করা হয়। পলিশড ফিনিশ যান্ত্রিকভাবেই করা হয়।

. কালারড ফিনিশ

কালারড বা রঙিন ফিনিশ মূলত মেঝেকে রঙিন করার জন্যই করা হয়। মেঝেকে রঙিন করতে দুটি উপায় ব্যবহার করে থাকেন রাজমিস্ত্রীরা। পিগমেন্ট বা একপ্রকার বিশেষ রঞ্জক পদার্থ প্রথমেই কংক্রিটের সাথে মিশিয়ে নেয়া হয় এবং তা ফিনিশিং করলে রঙ ফুটে ওঠে। অথবা কংক্রিট ফিনিশিং সম্পন্ন করে তা শুকিয়ে যাবার পূর্বেই তার উপর পছন্দমতো রঙের স্ট্রেইন প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখকৃত কংক্রিট ফিনিশিংগুলো হলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত কংক্রিটের ফিনিশিং। এগুলো ছাড়াও ডাইড, মার্বেলড, ফ্ল্যাশড, মাইক্রো টপিং, স্যান্ড ব্লাস্টারসহ নানা প্রকারের কংক্রিট ফিনিশিং রয়েছে।

দেয়ালে কী লাগাবেন- মিরর নাকি পেইন্টিং?

রুচিশীল মানুষের বাড়ি নির্মাণে যতখানি ভাবনা, বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন আর সাজসজ্জায়ও ঠিক ততখানিই। ঘরের দেয়াল যদি হয় আকর্ষণীয় পেইন্টিং কিংবা দর্শনীয় সব মিররের সমাহার, তা সৌন্দর্যই বাড়ায় না কেবল, দেয় মানসিক প্রশান্তিও। ঘরের দেয়ালসজ্জায় মিরর ব্যবহার করবেন নাকি পেইন্টিং- সেটা ঠিক করুন নানারূপ ঘরসজ্জার মিরর আর পেইন্টিংয়ের সাথে পরিচিত হয়েই।

হরেক রকম মিরর ভাবনা

ঝকঝকে গ্যালারি (Glimmering Gallery)– ঘরের দেয়াল সাজানোর একটি সহজ কিন্তু চমৎকার উপায় হলো নানা আকৃতির মিররের ব্যবহার। একই দেয়ালে পাশাপাশি ভিন্ন রঙ, আকার, আকৃতি আর ফ্রেমের মিরর স্থাপন করে দেয়ালকে দিতে পারেন নান্দনিকতার ছোঁয়া।

অফ সেন্টার মিরর (Off Center Mirror)- ঘরের যেকোনো দেয়ালে মিরর লাগানোর প্রচলিত নিয়ম হলো মাঝখান বরাবর স্থাপন করা। টেবিল, শো-কেস অন্য কোনো আসবাবপত্রের উপরে ঠিক মাঝ বরাবর মিরর স্থাপন করার রীতিতে ভুল নেই কোনো। তবে আজকাল মধ্যরেখা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মিরর সাঁটানো হচ্ছে দেয়ালে, যা দেখতে বরং অধিকতর সুন্দর।

মিররড অবজেক্ট (Mirrored Object)– সাধারণ বড় আকারের অর্ধবৃত্তাকার মিরর একটি আয়তাকার বা বার্গাকার মিররের তুলনায় দেয়ালের চেহারাই পাল্টে দেয়, প্রচলিত সজ্জার বাইরে গিয়ে নতুনত্ব আনে। অর্ধবৃত্তের ব্যাস বরাবর সমান দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তু (ওয়ালম্যাট) দেয়ালে টাঙালে সেটি মিররকেও পূর্ণতা পাইয়ে দেয়।

মিররড ডোর (Mirrored Door)– মিররড ডোরের প্রচলন আজকাল বেশ বেড়েছে, কেবল এর নান্দনিক কদরের জন্যই নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এখানে। সাতসকালে অফিসে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে যেতে হয় যাদের, প্রায়ই সময়ের কারণে নিজের সাজসজ্জার দিকে লক্ষ্য করা হয় না। পুরো দরজা জুড়ে একটি বড় আকারের মিরর থাকলে তাই ঘর থেকে বেরোনোর পূর্বে একনজর নিজেকে দেখে নিলে সহজেই পোশাকের বা অঙ্গসজ্জার ত্রুটি ঠিক করে ফেলা যায়।

হ্যাংয়িং উইন্ডো (Hanging Window)– মিররড ডোরের মতো মিররড উইন্ডোর কদরও বাড়ছে। ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো আর স্বচ্ছ কাচের সতেজকারক আবহের জন্য জানালায় মিররের ব্যবহারই এখন স্বাভাবিক। তবে মিররড উইন্ডোর মধ্যে সর্বশেষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উদ্ভাবন হলো হ্যাংয়িং উইন্ডো। দেয়ালে লাগানো গোলাকার মিরর দেখতে সাধারণত ভালোই লাগে। তবে সেটিকে নান্দনিক করে তোলে এই হ্যাংয়িং উইন্ডো। চিকন আর কালো ফ্রেমের গোলাকার একটি মিররকে মাঝামাঝি উচ্চতায় স্থায়ীভাবে না লাগিয়ে বরং ঝোলানো হয় কোনোকিছু থেকে। আর এই ঝুলে থাকা মিররটি যেন কাজ করে একটুকরো ঝুলন্ত জানালা হিসেবে।

ইনভিজিবল মিরর (Invisible Mirror)– ইনভিজিবল বা অদৃশ্য মিরর বলতে মূলত অত্যন্ত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল মিররের কথা বোঝা হয়েছে। ঘরে কোনো ফায়ারপ্লেস থাকলে, কিংবা অন্য কোনো মাঝারি উচ্চতার আসবাবের ওপরে, বিশেষ করে টেবিলের উপরে এই মিরর স্থাপন করা হয়। এটি এতটা স্বচ্ছ থাকে যে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে জানালা দিয়ে পাশের ঘরে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

পেইন্টিংয়ের রকমফের

ওম্বার ওয়াল (Ombre Wall)– ওম্বার ওয়াল পেইন্টিংয়ের মূল উপজীব্য হলো ঘরের সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক আবহ আনা। এই পেইন্টিংয়ে ঘরের দেয়ালকে মনে হতে পারে স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি, পশুর লোম, মসৃণ সবুজ ঘাসের মাঠ, নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো মেঘের দল, কিংবা সকালবেলা সূর্যাস্তের কাঁচা আলো। এই পেইন্টিংয়ের মূল উপকরণ  গ্রেডিয়েন্ট (Gradiant) রঙ, যার মাধ্যমে রঙের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাবল্য বাড়িয়ে কমিয়ে এসব ফুটিয়ে তোলা হয়।

পোলকা ডট ওয়াল (Polka Dot Wall)– হলিউড সিনেমা সুইসাইড স্কোয়াড দেখে থাকলে আপনার পোলকা ডটের সাথে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই। এ সিনেমায় রহস্যময় পোলকা ডট ম্যান তার শরীর থেকে নির্ধারিত সময় পরপর পোলকা ডট ছাড়ে যা দেখতে রঙিন ও চোখধাঁধানো। ঘরের দেয়ালেও সেই পোলকা ডটগুলো পেইন্টিং আকারে বসিয়ে দিতে পারেন। একটু নিগূঢ় ডিজাইনের জন্য ছোট আকৃতির ডট আঁকা যেতে পারে একই রঙের উপর। আবার আপনি যদি চান রঙের খেলা, তাহলে বড় বড় পোলকা ডট ভিন্ন ভিন্ন রঙে পেইন্ট করাই শ্রেয়।

জলরঙ (Water Color)– দেয়ালে জলরঙের ব্যবহার একসময় মানুষের ভাবনার বাইরে থাকলেও এখন তা বেশ প্রচলিত। বিশেষ করে শোবার ঘরে বিছানা বরাবর দেয়ালকে জলরঙে রাঙিয়ে ফেললে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়বে মন ভালো করে দেয়া এক দৃশ্য।

ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ (Vertical Stripe)– ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ বা উল্লম্ব ডোরা সাধারণত বসার ঘরের জন্য উপযোগী একটি পেইন্টিং ডিজাইন। উজ্জ্বল মনোক্রোম্যাটিক (Monochromatic) কোনো রঙের উপর হালকা, প্রশান্তিদায়ক কোনো রঙ ব্যবহার করে লম্বালম্বি স্ট্রাইপ এঁকে এই পেইন্টিং সম্পন্ন করা হয়। বসার ঘরের সাজসজ্জায় এটি ভিন্নতা আনে।

সলিড কালার ব্লক (Solid Colour Block)– একটি ঘরের দেয়ালের রঙ সাধারণত একই রঙে করা হয়। তার উপর নানা ডিজাইন করা হয়ে থাকে। অবশ্য আপনি যদি চান সলিড কালার রেখেই দেয়ালে নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘরের মাঝামাঝি, বিশেষ করে শোবার ঘর হলে বিছানা বরাবর, বিছানার আকার অনুযায়ী একটি সলিড কালার ব্লক পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন ঘরের দেয়ালে। এতে একই রঙের একঘেয়েমি কাটে, এবং এক রঙের মাঝে অন্য রঙের সলিড ব্লকের উপস্থিতি ঘরের অ্যাম্বিয়েন্ট বদলে দেয়।

রেইনবো স্ট্রাইপ (Rainbow Stripe)– একটি-দুটি রঙ বাছাই করতে পারছেন না? চাইলে ঘরের দেয়ালে নিয়ে আসতে পারেন রংধনুর সাতটি রঙই। রেইনবো স্ট্রাইপ নামে পরিচিত এই পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে ঘরের দেয়ালের পরতে পরতে রংধনুর সাতটি রঙ দিয়ে এঁকে ফেলতে পারেন। কেউ কেউ একে রংধনুর মতো অর্ধচন্দ্রাকার করে আঁকেন, অনেকে আবার সমান্তরালেই ডিজাইন করে ফেলেন। রুচি ও রঙের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে স্ট্রাইপগুলোর প্রস্থ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

মিরর কিংবা পেইন্টিং, দুটিই ঘরের দেয়ালের সজ্জায় সমান উপযোগী, যদি আপনি তা ঘরের আসবাবপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করতে পারেন। যেহেতু দুটো সম্পর্কেই জেনে গেলেন, কোনটি আপনার ঘরের জন্য যুতসই হবে সেই সিদ্ধান্ত এখন আপনিই নিতে পারবেন।

আসবাবপত্র ক্রয়ের আগে ভাবতে হবে যে বিষয়গুলো

কিংবদন্তি ব্রিটিশ কবি জন কিটস বলেছেন, “এক টুকরো সৌন্দর্য আমৃত্যু আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।” সেই সৌন্দর্য যেকোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে নেয়া যেতে পারে, আপনার বসবাসের ঘরখানিও থাকবে সেই তালিকায়। যেসব জিনিস প্রতিদিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, ঘর সাজানো তার মাঝে একটি। অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে অনেকে কিছুদিন পর পর ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থান অদলবদল করে থাকেন, তাতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আসবাবপত্র বদলে ফেলা খুব নিয়মিত কোনো ব্যাপার নয়। আর তাই আসবাবপত্র কেনার সময় সবদিক বিবেচনায় রেখে কিনতে হবে, মাথায় রাখতে হবে তার আকার-আকৃতি। কেননা ঘরের আকারের চেয়ে বড় কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ছোট, দুটোই হবে দৃষ্টিকটু।

ঘরের পরিমাপ

ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ক্রয়ের পূর্বে প্রাথমিক কাজ হলো ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সবকিছুর সঠিক মাপ নিয়ে নেয়া। ঘর বর্গাকার নাকি আয়তাকার, সেটির উপরও নির্ভর করবে আসবাবপত্রের আকার। মেঝে থেকে জানালার উচ্চতা, জানালার অবস্থান, আকার এবং এর দু’পাশে অবশিষ্ট দেয়ালের মাপ, সবকিছুই টুকে ফেলতে হবে, যাতে আসবাবপত্র দ্বারা জানালা ঢেকে না যায়। এসবের পাশাপাশি ঘরের দেয়ালে কোনো পিলার থাকলে তার প্রশ্বস্ততা নির্ণয় করাও জরুরি। আর মাপতে হবে মেঝে থেকে সুইচবোর্ডের উচ্চতা। সুইচবোর্ড দেয়ালের যেখানে থাকবে সেই স্থান ফাঁকা রাখাই বাঞ্ছনীয়। অগত্যা কেউ যদি সেখানেও কোনো ফার্নিচার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেটির উচ্চতা সুইচবোর্ডের চেয়ে কম হওয়া আবশ্যক।

এসব মাপ নিতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যা ভুলে যাই তা হলো দরজার মাপ। আপনার আসবাবের আকার অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয় যা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো কঠিন। শুধু তা-ই নয়, দরজার পাশে রাখার পরিকল্পনা করছেন, এরকম কোনো আসবাবপত্র কিনলে অবশ্যই তার আকৃতি দরজার উচ্চতার মাঝামাঝি বা তার চেয়ে কম হওয়া ভালো। এতে ঘরের ঐ অংশের সৌন্দর্য বজায় থাকে।

ঘরের স্কেচ করুন, ছবি তুলুন

ফার্নিচার ক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রস্তুতিই ঘরে বসে সেরে ফেলতে হয়। আর সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হলো ঘরের মেঝের একটি খসড়া ডিজাইন তৈরি করা। প্রথমেই ঘরের কোথায় সোফা, কোথায় টেবিল আর কোথায় বিছানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র রাখছেন তা ঠিক করে ফেলুন, অনুমান অনুযায়ী মেঝেতে সেই বস্তুটি কতটুকু স্থান দখল করবে তা চক দিয়ে টেনে ফেলুন।

পুরো ঘরের কোথায় কী রাখছেন তার দাগ টানা হয়ে গেলে সেটি কাগজে এঁকে নিন এবং একাধিক স্কেচ করে ফেলুন একই মাপের ফার্নিচারগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দিয়ে। ফার্নিচারের দোকানে পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা মাপের ফার্নিচার না-ও মিলতে পারে। একাধিক স্কেচ করার সুবিধা এখানেই। তখন ভিন্ন মাপের আসবাবপত্রগুলোর জন্য ভিন্ন স্কেচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।

এক্ষেত্রে ঘরের ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণও করা যেতে পারে। ফার্নিচারের শো-রুমে আপনি যে আকার, আকৃতি বা রঙের ফার্নিচার দেখবেন, তার সাথে তৎক্ষণাৎ ঘরের ছবি/ভিডিও দেখে উভয়ের কম্বিনেশন যাচাই করে নিতে পারবেন।

বিছানার পরিমাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বিছানার পরিমাপ। সাধারণ বিছানাই বেডরুমের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে, তাই এর অবস্থানও এরূপ হতে হবে যেন ঘরে অবাধ হাঁটাচলা বিঘ্নিত না হয়। বিছানার আকারও ক’জন মানুষ ঘুমাচ্ছে সেই অনুপাতে যতদূর সম্ভব ছোট রাখাই বাঞ্চনীয়। পাঠকের সুবিধার্থে বিছানার কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড আকার উল্লেখ করা হলো:

টুইন বেড- ৩৯″ X ৭৫″

ফুল সাইজ- ৫৪″ X ৭৫″

কুইন সাইজ- ৬০″ X ৭৫″ কিং সাইজ- ৭৬″ X ৭৫″

এছাড়া, বিছানার আকারও নির্ধারণ করতে হবে ঘরের আকার অনুযায়ী। ঘরটি যদি লম্বা হয় তাহলে ছোট আকৃতির টুইন বেডই ভালো। ঘর বর্গাকৃতির হলে বর্গাকৃতির বিছানা যুতসই হতে পারে।

সোফা কিনুন বুঝে-শুনে

ঘরের আকৃতি এবং সজ্জা নির্ধারণ করে যে আসবাবপত্রগুলো, সোফা তার মাঝে একটি। বিছানা বা অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি সোফার জন্য কতটুকু জায়গা থাকছে, তা বুঝে ক্রয় করুন সোফা। একেবারে শূন্যস্থানের মাপ বরাবর সোফা ক্রয় করা মস্ত বড় ভুল। সোফা রাখার পর কফি টেবিল রাখার জায়গা এবং কফি টেবিলের চারপাশে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা বাঞ্চনীয়। পাশাপাশি, সোফার পেছনে রাখতে হবে কিছুটা খালি জায়গা, সাধারণত ১-১.৫ ফুট। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে সোফা রাখা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

চলাফেরার কথা শুরুতেই ভাবুন

আসবাবপত্র কেনা এবং সেসব জায়গামতো বসানোর পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে যা প্রায়ই ভুল হয় সেটি হলো হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, কিংবা থাকলেও তা পরিমিতভাবে বণ্টন না হওয়া। দেয়ালের উচ্চতা, জানালা না ঢেকে ফেলা, দরজা থেকে ঠিকঠাক দূরত্ব রাখা, এসবের মাঝে অনেক সময়ই হারিয়ে যায় ঘরে হাঁটাচলার জায়গা। কখনো বা ঘরে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা থাকলেও পুরো ঘরে বাধাহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো যায় না। কেননা ঘরের একপাশে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তো অন্যপাশে কম হয়। আর এটি হয় ঘরের আসবাবপত্রের আকারের জন্য। হাঁটার জন্য আপনি আপনার ঘরে সোজাসাপ্টা করিডোর রাখতে চান নাকি কিছুটা এলোমেলো পথে হাঁটতে চান, সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচির ওপর। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভাবুন এবং সেই অনুপাতে যুতসই আসবাবপত্র ক্রয় করুন।

প্রাথমিক নকশায় পরিবর্তন: যা যা জানতে হবে

একটা সময় ছিল যখন ঢাকা শহরের আবাসন চিত্র নিয়ন্ত্রিত ছিল নিজের বাড়ির স্বপ্ন দিয়ে। ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া বা গুলশানে একসময় নির্মাতারা তৈরি করেছেন সারিবদ্ধ উঠানসমৃদ্ধ একতলা বা দোতলা বাড়ি। ঢাকার সেই সোনালি দিন গত হয়েছে তাও কয়েক দশক হতে চলল। অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতি তাই শৈশব কৈশোর ছাড়িয়ে বলা যায় যৌবনে পা দিয়ে ফেলেছে।

কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই যেমনই হোক না কেন প্রতিটি পরিবারের চাহিদা হয় আলাদা আলাদা। এই চাহিদা মেটাতে স্থপতিরা সবকিছু মাথায় রেখে প্ল্যান লে-আউট তৈরি করেন ঠিকই, কিন্তু গণ-আবাসনের চাহিদার চাপে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোতে বাড়ির মালিককে নিজের হাত দেবার দরকার হয়। এজন্য প্রায় প্রতিদিনই স্থপতির সাইট অফিসে দেখা মেলে লেআউটে পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আসা বাড়ির নির্মাণকারী।

অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণকারীগণ তাদের খরচ করা অর্থের সর্বোচ্চ পরিমাণ জায়গা বা সুবিধা বের করে নিতেই পরিবর্তন বা উন্নয়নের প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। অবশ্যই পরিবর্তনের সুযোগ দিতে প্রতিটি নির্মাতারই উদারমনা এবং নির্মাণকারীবান্ধব হওয়া জরুরি। কিন্তু একইসাথে নির্মাণকারী হিসেবেও সম্ভব এবং অসম্ভবের খেরোখাতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাড়ির প্ল্যান (Plan) লেআউটে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় জানতে হবে।

কাঠামো অপরিবর্তনীয়

বাড়ির কাঠামো বলতে বুঝানো হয় ফাউন্ডেশন এবং সাধারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কলাম ও বীমকে। একজন বাড়ির মালিক বা নির্মাণকারী ভেতরের পার্টিশন দেয়াল পরিবর্তনের স্বাধীনতা রাখলেও কলাম ও বীমের অবস্থান পরিবর্তন কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণ কাঠামোর অংশ হিসাবে শিয়ার ওয়াল (Shear wall) নির্মাণ করা হয়। এই দেয়ালগুলো কলামের মতোই ছাদের ভার বহন করে। তাই দেখতে দেয়ালের মতো হলেও এগুলোর অবস্থান পরিবর্তন, এগুলোতে জানালা স্থাপন এবং আকারে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না। সাধারণত শিয়ার ওয়াল ৮-১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তবে কাঠামোর কারণে ক্ষেত্রবিশেষে আরও মোটাও হতে পারে।

পার্টিশন দেয়ালে পরিবর্তন

ঘরের পার্টিশন দেয়াল সাধারণত প্লাস্টারসহ ছয় ইঞ্চির মতো চওড়া হয়। প্লাস্টারের আবরণের আগে ৫ ইঞ্চির যে দেয়াল তোলা হয়, এর ভেতরে সাধারণত কোনো কাঠামোগত সমর্থন (Reinforcement) থাকে না। তাই এগুলো চাইলেই পরিবর্তন করা যায়। তবে এই পরিবর্তন করতে হবে দেয়ালগুলো তৈরি হবার আগেই। এই পরিবর্তনের জন্য আগে থেকে স্থপতি ও প্রকৌশলীকে জানাতে হয় এবং তাদের হাত দিয়ে সংশোধিত করতে হবে। জানানোর এবং সংশোধনের পর সংশোধিত ড্রয়িং সংগ্রহ করুন এবং নিশ্চিত হোন আপনার পরিবর্তিত ড্রয়িংই নির্মাণে অনুসরণ করা হচ্ছে। এই ধরনের পরিবর্তনে সাধারণত কোনো খরচ যোগ হয় না। 

অত্যন্ত জরুরি বিবেচনায় বানানো দেয়াল ও পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্লাস্টার এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ নির্মাণের আগেই করতে হবে। এসকল ক্ষেত্রে আগের ইট ও মর্টার নষ্ট হয়। তাই খরচ বাড়তে পারে।

ভবনের বহিঃঅংশে পরিবর্তন

ভবনের যেসব নকশা নির্মাণের আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মধ্যে থাকে তার মধ্যে ভবনের এলিভেশনও (Elevation) থাকে। এছাড়া বারান্দার পরিমাণ ও মাপও থাকে নির্দিষ্ট। তাই চাইলেই ভবনের বাইরের দেয়ালে কোনো পরিবর্তন করা যায় না। এসব স্থানে পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে (যেমন- অতিরিক্ত বারান্দা বা জানালা স্থাপন) নকশা অনুমোদনের আগেই স্থপতির সাথে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করুন ও আপনার ইচ্ছার কথা জানান।

নিয়মের মধ্যে থেকে করা সম্ভব হলে অনুমোদনের আগেই স্থপতি আপনার চাহিদা আমলে নেবেন এবং পরিবর্তন করে দেবেন। তবে ডেভেলপারের উপস্থিতির ক্ষেত্রে যেহেতু ক্রয় বা বুকিংয়ের আগেই অনুমোদন হয়ে যায় তাই এক্সটেরিয়রে কোনো পরিবর্তন অনুমোদন করা হয় না। 

সার্ভিস অংশের অবস্থান পরিবর্তন

মূলত টয়লেট, রান্নাঘর বা কিচেনেটের মতো জায়গাগুলোকে বলা হয় বাড়ির অভ্যন্তরীণ সার্ভিস অংশ। এর বাইরে সিঁড়ি এবং লিফটকে বলা হয় মূল সার্ভিস অংশ। সার্ভিস অংশগুলো লম্বালম্বিভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সিঁড়ি বা লিফট যেখান দিয়ে উঠতে শুরু করে প্রত্যেক তলাতেই সিঁড়ি সাধারণত সেই বরাবরই উঠাতে হয়।

elevator in building

কাঠামো, জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার, ভবনের চলাফেরার পদ্ধতি ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনায় এগুলো অত্যাবশ্যকীয়। একইভাবে টয়লেট বা কিচেনের মতো কক্ষগুলোও প্রত্যেক তলায় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যেমন- ভবনে স্যানিটেশন ও পানির লাইন সাধারণত দুটি আলাদা দেয়াল দিয়ে সঞ্চালিত হয়। এগুলোতে ডাক্ট সংযুক্ত থাকে। তাই টয়লেট ও কিচেন সে দুটি দেয়ালের সন্নিকটে হতে হয়, যেন ডাক্টের সাথে সরাসরি এদের সংযোগ থাকে। একারণে ক্ষেত্রবিশেষে দিক (Orientation) পরিবর্তন সম্ভব হলেও, কিচেন বা টয়লেট সরিয়ে সাধারণত অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই কাঠামোর মতো এগুলোকেও মোটামুটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখেই পরিবর্তন করতে হবে।

সাধারণ কিছু ত্রুটি

অনেক ক্ষেত্রে শয়নকক্ষে অতিরিক্ত এক বা দেড় ফুট জায়গা বের করতে অনেকে বারান্দা অত্যধিক সরু করে ফেলেন। প্রশিক্ষিত স্থপতি নকশা করলে ফার্নিচারের স্বাভাবিক সকল মাপ বিবেচনা করেই সাধারণত নকশা করা হয়। শুধু জায়গা বাড়ানোর খাতিরে এরপরও বেডরুমে অতিরিক্ত এক ফুট জায়গা বের করার প্রবণতা অপ্রয়োজনীয়। এতে করে বারান্দা ছোট হয়ে গেলে ঘরের ভেন্টিলেশন যেমন বাধাগ্রস্থ হয়, তেমনি ভবনের ভেতর ও বাইরে সংযোগে সমস্যা তৈরি হওয়ায় বাসায় জীবনধারণের মানও কমে যায়। 

এছাড়া স্থপতিরা ভবনের নকশা করার সময় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সঞ্চালন মাথায় রেখেই ভবনের নকশা তৈরি করেন। অনেক সময় অতিরিক্ত পার্টিশন দেয়াল নিয়ে নাড়াচাড়ার কারণে বদ্ধ করিডোর তৈরি হয়, যে জায়গাগুলো আসলে কোন কাজে আসে না। তাই পরিবর্তনের আগে সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে স্থপতির মতামত না নিলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা হবার সম্ভাবনাই বেশি। 

এছাড়া বীম লাইন থেকে পার্টিশন দেয়াল সরিয়ে ঘর অতিরিক্ত নাড়াচাড়ায় ঘরের মাঝ দিয়ে বীম চলে যাওয়াও খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি ফ্যানসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাঠামো উপকরণের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে। এটিও বাধ্য না হলে করা উচিৎ নয়।

সবশেষে, স্কয়ার ফিটের পাশাপাশি নকশার ব্যপারেও ফ্ল্যাট কেনার আগেই সচেতন হওয়াটা দরকারী। কেনার আগে অবশ্যই প্ল্যান দেখে নিন। যদি প্ল্যান আপনার পছন্দ না হয় এবং মনে হয় প্রচুর পরিবর্তন করতে হবে তাহলে শুধু স্কয়ার ফিট বা দাম বিবেচনায় সেই ফ্ল্যাট না কেনাই শ্রেয়। মনে রাখবেন আপনি আপনার কষ্টার্জিত যে অর্থ ব্যয় করছেন তাতে ইট-কাঠের সাথে নকশার মান এবং প্রযোজ্যতাও জরুরি। একজন সচেতন ক্রেতাই পারেন পরিবর্তনের ঝামেলা কমিয়ে অথবা স্মার্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটকে নিজের বসবাস-উপযোগী করতে। 

ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেমন হবে: ক্লাসিক নাকি আধুনিক?

বর্তমান সময়ে আভিজাত্যপূর্ন ক্লাসিক ডিজাইনের সাথে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয়তায় সমান তালে এগিয়ে আছে সারল্যপূর্ণ আধুনিক ডিজাইন।

Continue reading

কোভিড পরবর্তী আবাসন- সতর্কতা ও সচেতনতা

কোভিড১৯ মহামারি ২০২০ সালে আমাদের জীবনধারাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে স্থান, কাল, পাত্র, শ্রেণী, বর্ণ নির্বিশেষে। আমরা সবাই একটি পর্যায়ে ঘরবন্দী হতে বাধ্য হয়েছি এবং বর্তমানে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধানের আগেই আমাদের বের হয়ে আসতে হচ্ছে ঘর থেকে। কিন্তু এর মধ্যেই নিজের আবাসস্থল থেকে কাজ করা, শিক্ষাগ্রহণ হোম ডেলিভারিসহ অনেক বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বিশ্ববাসী। সাথে সাথে আমাদের মতো নগরবাসীর সামনে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবাসন বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনাটা আবশ্যক।

বর্তমানে আবাসন বিষয়ে ঢাকা শহরের একমাত্র পছন্দের বা বিলাসের নিয়ামক হচ্ছে স্কয়ার ফুট। এর সাথে টাইলস করা বাসা কিংবা খুব প্রাথমিক কিছু চাহিদার বিনিময়ে আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়ে কিনে নিচ্ছি বিভিন্ন মাপের বাক্স। সেই বাক্সগুলোতে আমাদের স্বপ্ন আমাদের প্রতিদিনের অবসর এবং পরিবারের সাথে কাটানো সেরা সময়গুলোকে করছি বাক্সবন্দী। এই জীবনধারাকে খুব বেশি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই বলা যায়। কিন্তু সানন্দে বসবাস করা বা একটি বিপর্যয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ থাকার জন্য এই ব্যবস্থা কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়। আমাদের এই জীবনধারার কারণে ঢাকা শহর শুধু কংক্রিটের জঞ্জালই হয়ে যায়নি বরং আবাসনের স্বাভাবিক সব সুযোগসুবিধার দামও হয়ে গিয়েছে আকাশচুম্বী। আমাদেরকে তাই অবশ্যই বদলাতে হবে।

স্থাপত্যে যেকোনো ভবনের নকশা শুরু হয় একজন মানুষের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দূরত্বের হিসাবনিকাশের নিরিখে। সেখানে মানুষসংক্রান্ত ব্যাপারে পরিবর্তন না এনে প্রকৌশলীগণ স্ট্রাকচারাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল প্লাম্বিংয়ের মতো কাজগুলো যোগ করেন। এতদিন এখানে সামাজিক দূরত্ব বা দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকার মতো হিসাব যেমন ছিল না, তেমনি পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হত না।

কোভিডের কারণে স্থাপত্য প্রকৌশলবিদ্যায় যারা শিক্ষিত তারা অবশ্যই ডিজাইন বা ভবন নকশায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। এমনকি যারা ভবন নির্মাণ আইন অনুমোদনের সাথে সংশ্লিষ্টতারাও মানুষের বসবাসের জন্য ন্যূনতম সুযোগসুবিধা এবং নিরাপত্তা বিধিমালায় মাথায় রাখবেন এই বিষয়গুলো। তাই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ইমারত সংক্রান্ত বিধিমালাতেও আমরা বিশ্বজুড়ে পরিবর্তন দেখব। 

কিন্তু ভবনের নকশা নির্মাণ করা হয় সেই ভবনে যারা বসবাস করবেন তাদের জন্য। এই কারণেই তাদের চাহিদাও ভবন নির্মাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই ভবনের নকশা কোভিডের মতো মহামারি প্রতিরোধী কিংবা সুরক্ষাবান্ধব হবে কিনা ব্যাপারে আপনাকেও হতে হবে সতর্ক সাবধান। 

কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন মহামারি থেকে নিরাপদ থাকতে? চলুন জেনে নেয়া যাক-

. নজর থাকুক স্কয়ার ফুটের বাইরেও

বেঁচে থাকতে হলে শুধু বেশি স্কয়ার ফুট যথেষ্ট নয়। এর সাথে চাই পর্যাপ্ত আলো বাতাস, চাই ঘরের ভেতর বাহিরের সাথে সুসম্পর্ক, চাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা। শুধু ঘরের স্কয়ার ফিট বাড়াতে গিয়ে বারান্দা বা টেরেসের মতো জায়গা ছোট করে ফেলবেন না। বেডরুমের একঘেয়েমি ঘরবন্দী অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে মানুষকে। সরকারি নিয়ম মেনে সেটব্যাক এবং প্লটের ৪০% জায়গা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি বানান। এতে মুক্ত বাতাস বা মাটির যোগান হবে। বারান্দাগুলোর গ্রিল অত্যধিক ঘন করে ফেলতে নিরুৎসাহিত করুন। শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতটুকু দরকার ততটুকুই নিন।

প্রত্যেক ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণায় আলো আসছে কিনা তা দেখে নিন। ভবনের পেছনের দিকে ফ্ল্যাটের অবস্থান হলে সেদিকে অন্য ফ্ল্যাট থেকে যথেষ্ট দূরত্ব না থাকলে সেই ফ্ল্যাট কেনা বা নির্মাণ অনুমোদন থেকে বিরত থাকুন। ছাদে বাগানসহ কম্যুনিটি স্পেস এখন সরকারি আইনের অংশ। এগুলো আপনার ক্রেতা হিসাবে অধিকারও। এই ব্যাপারগুলোতে তাই জোর দিন। 

. ফ্ল্যাটের ক্রমধারার গুরুত্ব

একটি ভালো ডিজাইনের ফ্ল্যাটে সাধারণত দুটো দরজা থাকে। একটিকে বলা হয় মূল প্রবেশপথ, আরেকটির নাম সার্ভিস প্রবেশপথ। ফার্নিচারের জায়গা বাঁচাতে গিয়ে অনেকে সার্ভিস সংক্রান্ত পথগুলো বন্ধ করে ফেলেন। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে সুস্থ থাকতে। সার্ভিস ফটকের কাছে কমন ওয়াশরুম একটি বেসিন থাকাটা বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের সময় হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্ত হওয়া এবং বাইরে থেকে কেনা বাজারসদাইসহ অন্যান্য সামগ্রী ঘরে আনার আগেই নিরাপদ করতে সাহায্য করে। এছাড়া ময়লা নিষ্কাশন ম্যানেজমেন্টেও এই ক্রমধারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই চিন্তাগুলো একজন প্রশিক্ষণবিহীন মানুষের জন্য আগে থেকে করা খুবই কঠিন। মনে রাখবেন এই পর্যায়কে বলা হয় Spatial Design যা আপনি নিজে এমনকি একজন প্রশিক্ষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও আপনাকে দিতে পারবেন না। এজন্য অবশ্যই IAB এর সদস্যপদপ্রাপ্ত স্থপতির নকশা গ্রহণ করুন। এরকম ছোট ছোট অনেক বিষয়ে একজন স্থপতির নকশা আপনাকে রোগব্যাধি থেকেও নিরাপদ রাখতে পারে।

. কমিয়ে আনুন গ্যারেজ এলাকা   

অনেকেই নিজের গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও গ্যারেজ স্পেস কিনে ভাড়া দেন বা একটি গাড়ি থাকলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে একাধিক গ্যারেজ কিনে রাখতে চেষ্টা করেন। এতে করে অল্প কিছু অর্থনৈতিক লাভ হয়তো হয়। কিন্তু ডেভেলপার স্থপতির উপর অতিরিক্ত গ্যারেজ নকশায় অন্তর্ভুক্ত করার চাপ তৈরি হয়। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায়, ওপরে জায়গা ছেড়ে দিলেও নিচে গ্যারেজের জন্য অনেক জায়গা পাকা করে ফেলতে হয়। এছাড়া গ্যারেজের বাইরে সেটব্যাকও অনেকে পাকা করে ফেলেন। এতে করে ভবনের বসবাসে তাপ বৃদ্ধি হয় এবং শহরজুড়ে মাটি পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে কেন্দ্রীয় পানির সাপ্লাইয়ের উপরে নির্ভরতা বাড়ে। ফলনশীল গাছ পানি শোষনের জন্য এসব জায়গা ফাঁকা রাখুন। গ্যারেজ এলাকায় বরং একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র (যেখানে ডাক্তার এসে ভবনের অসুস্থ রোগীদের প্রাথমিকভাবে দেখতে পারবেন), একটি ফায়ার ফাইটিং কক্ষ (বাধ্যতামূলক), চাকুরিরত গার্ডের জন্য নিজস্ব থাকার ঘর ইত্যাদি নির্মাণে মনোযোগী হোন। এগুলি আপনাকে মহামারির সময় সাহায্য করবে। 

. ল্যান্ডস্কেপিং হোক স্মার্ট

নগরে সামান্য সবুজের সন্ধানে আমরা আধুনিক ভবনে সামান্য জায়গায় কিছু গাছপালা লাগাতে চেষ্টা করি। ছাদে বাগানের পাশাপাশি নিচে ভবনের সামনেও বর্ণিল গাছপালা লাগানো হয়। এর সাথে অনেক ভবনে সুইমিং পুল কিংবা বাহারী পাতাবাহার গাছের সজ্জাও আজকাল দেখা যায়। কিন্তু এই ধরনের খরচগুলোর জন্য পরে মেইনটেনেন্স খরচও দিতে হয়। শহরে সবুজ এবং নিসর্গ খুবই দরকারি এবং প্লটে গাছের পরিমাণ বাড়ানোও খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু কী গাছ লাগাচ্ছেন সে ব্যাপারে সচেতন হওয়াটা আরো বেশি জরুরি। এই ফাঁকা জায়গাগুলিতে পাতাবাহার বা সজ্জাকর গাছ না লাগিয়ে ফলনশীল দেশী গাছ লাগানোটা মহামারির সময় বাইরের বাজার উপকরণের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারা যায়। এছাড়া ভবনে যারা চাকরি করেন তাদের খাদ্য সংস্থানেও এগুলো হতে পারে দরকারি জায়গা। নগর কৃষি দিনে দিনে বিশ্বজুড়ে একটি বড় আন্দোলন হয়ে উঠছে নিজেরা এক হয়ে। Urban Farming-এর জন্য আপনার ভবন প্রস্তুত হলে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যগতভাবে লাভবান হতে পারেন সকল ভবনমালিকই। সাথে সাথে কৃত্রিম এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দিতে পারে স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপিং। 

. সামাজিকতা হোক নিজেদের মাঝেই 

নগরে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সামাজিক একটি জীবন সবাই আশা করেন। অনেকেই অভিযোগ করেন, ঢাকা শহরে সামাজিক বন্ধন কমে যাচ্ছে অনেকদিন ধরেই। রোবট হয়ে পড়ছি আমরা। আমাদের ভবনের নকশাগুলি এমনভাবেই করা যাতে খুব বেশি সামাজিকতার সুযোগ থাকে না। আমরা যেটুকু সামাজিক কর্মকাণ্ড করি তাও হয়ে পড়ে পার্ক, কম্যুনিটি সেন্টার বা শপিং মল কেন্দ্রিক। অথচ এই কোভিডের সময়ে আপনি বাইরে যেতে পারছেন না আপনার সামাজিক কাজগুলোর জন্য। এটিরও নেতিবাচক প্রভাব অনেক। ভবনের একটি ইউনিট কম নির্মাণ করে কিংবা ছাদকে ব্যবহার করে গড়ে তুলুন নিজস্ব সামাজিক স্পেস। এসব জায়গায় নিজেদের অনুষ্ঠান করার সুযোগ যেমন থাকবে, প্রতিদিন বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং বৈকালিক অবসর কাটাতেও আপনাকে জনারণ্য জায়গায় যেতে হবে না। 

. হোন শক্তি স্বনির্ভর

আধুনিক ভবনে বসবাসকারী আধুনিক নাগরিক হিসাবে আপনি নিঃসন্দেহে চান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। আপনার ভবনকে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন শক্তির ব্যাপারে স্বনির্ভর করতে। বেরিয়ে আসুন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অতি নির্ভরতা থেকে। ব্যবহার করুন সৌরশক্তি। প্রকৌশলীর পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সোলার প্যানেল লাগিয়ে নিলে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি কমে যাবে গ্রীষ্মের তাপমাত্রাও। নকশায় প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে স্থপতিকে উৎসাহ দিন। সঞ্চয় করার ব্যবস্থা করতে বলুন বৃষ্টির পানিনকশার কারিগরির মাধ্যমেই। আপনার বেসিনে বা গোসলে খরচ হওয়া পানি টয়লেটের ফ্ল্যাশে পুনঃব্যবহার করতে নির্দেশনা দিন প্রকৌশলীকে। আরেকটু সচেতন হলে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া পানিও খুব সহজে টয়লেটের ফ্ল্যাশে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পানি বিশুদ্ধকরণে যেমন খরচ কমবে সকলের, তেমনি আপনার পানির বিলও কমে যাবে অনেকভাবে। এই কাজগুলো করলে আপনার ভবন হবে স্বনির্ভর। তাই যেকোনো মহামারি বা দুর্যোগ অবস্থাতেও আপনি নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন সহজেই। 

. নকশার আওতায় আসুক এলাকাও 

আবাসিক এলাকার নকশার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায়, দুই বা তিন রাস্তা জুড়ে শুধুই বাড়ি তৈরি করা হয়। এতে মুদি দোকান, সেলুন বা বাজারের মতো সুবিধা পেতে যেতে হয় বহুদূর এবং অনেক মানুষ অল্প ব্যবসার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। ফলে ভীড় বাড়ে। 

কিন্তু এখন থেকেই এলাকাভিত্তিক নকশার অধীনে প্রতি ৩০ ভবনের জন্য একটি Amenity shop এর ব্যবস্থা চিন্তা করা উচিৎ। এতে করেই তৈরি হবে এলাকাভিত্তিক নিজস্ব অর্থনীতি। এই দোকানগুলি হতে পারে ভবনের ঠিক নিচেই। এমনকি স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপ বা সামনে ছেড়ে দেয়া জায়গায় ফলনশীল গাছ লাগিয়ে, সবজির চাষ করে সেগুলো নিজেদের মধ্যে বেচাকেনা হতে পারে এসব দোকানেই। এতে করে বাজারের উপর নির্ভরতা কমবে। মানুষ নিজের এলাকার সাথে সংযুক্ত হবে আরো গভীরভাবে এবং পণ্যের দাম বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াও হবে অনেক সহজ।

কোভিড মহামারির ফলশ্রুতিতে কোনো পরিবর্তন হঠাৎ করে চলে আসবে না। তবে শুরু করতে হবে আজই। কারণ, এই মহামারি কবে নির্মূল হবে সেটা বলা যেমন কঠিন, সেরকম আরো একবার এরকম মহামারি আসলে আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আপনারই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভবনের নকশায় নান্দনিকতা বা ডেকোরেশনের চেয়ে প্রযুক্তি নকশাগত উৎকর্ষ এখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাপারে আপনি, আপনার স্থপতি, প্রকৌশলী, নির্মাতা এবং সরকারের একীভূত মনোযোগই পারে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।