প্রয়োজন বুঝে হোক জানালার পছন্দ

একটু বর্ষা, একটু গ্রীষ্ম, একটুখানি শীত

সেই একটুখানি চৌকোছবি আঁকড়ে ধরে রাখি

আমার জানলা দিয়ে আমার পৃথিবী।

অঞ্জন দত্তের এই গান কে না শুনেছে? এ গানের কথার অনেক অর্থ দাঁড় করানো যাবে, তবে তা থেকে জানালা বাদ দেয়ার উপায় নেই। আক্ষরিক অর্থে ধরলে গানের লাইনগুলো তো ঘরের সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় একটি অংশের কথাই বলে, সেটি হলো জানালা। এই জানালা দিয়ে ঘরের বাইরে গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের আগমন টের পাওয়া যায়, চার দেয়ালের মাঝে জানালাই তো বাইরের পৃথিবীর সাথে সংযোগ ঘটায়।

তাই গৃহনির্মাণে নান্দনিকতার বালাই থাকুক বা না থাকুক, জানালা নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতেই হবে। ছোট, বড়, নাকি মাঝারি; কতটুকু উচ্চতায় স্থাপন করলে ভালো হবে, কোন দিকটায় জানালা দিতে হবে, কেমন জানালা দিলে আলো-বাতাসের সাথে সৌন্দর্যও যোগ হবে- কত প্রশ্ন জানালা নিয়ে কড়া নাড়ে মনের দরজায়! দরজা খুলে সেসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে যাওয়া যাক তাহলে।

যা যা ভাবতে হবে

জানালা নির্বাচনের আগে প্রথমেই এর স্থান এবং আকার আকৃতি নিয়ে ভাবতে হবে জরুরি কিছু বিষয়ে। কতটা আলো চাই আপনার ঘরে? আলোর প্রয়োজনীয়তা বুঝে জানালার সংখ্যা নির্বাচন করুন। ভোরের প্রথম আলোকে প্রতিদিন ঘরে আমন্ত্রণ জানাতে চাইলে পূর্বদিকের দেয়ালে দিয়ে দিন একটি জানালা। আবার পূর্বে না হলে পশ্চিমেও দেয়া যেতে পারে। দুপুরের পর থেকে সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করলেই ঘরে আসবে প্রচুর আলো, সাথে গরমও!

এক্ষেত্রে অনেকেই উত্তর বা দক্ষিণ যেকোনো এক বা উভয়দিকে জানালা দিতে চান, পূর্ব-পশ্চিম বাদ রেখে। কেননা, সরাসরি সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না দিনের বেলা ঘর আলোকিত করবার জন্য। তাছাড়া, সরাসরি সূর্যের আলো জানালায় পড়লে শত পর্দার বাধাতেও কাজ হয় না, প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই আলোকিত হয় ঘর। এতে ছুটির দিনে একটু বেশি ঘুমানোর বারোটা বাজবে যে!

সংখ্যা এবং আকারের ভাবনায় আবার বর্তমানে পরিবর্তন এসেছে বেশ। একসময় জানালার সংখ্যায় কিংবা আকারে প্রতিসাম্য বজায় রাখার কোনো বিকল্প ছিল না। অর্থাৎ সব ঘরেই একই আকারের জানালা সমান অনুপাতে (দেয়ালের আকার অনুযায়ী সংখ্যা) বসানো হতো। এখন সময় বদলেছে, বদলেছে রুচি, এবং চাহিদা। শোবার ঘরে মোটামুটি আলোর জন্য মাঝারি আকারের একটি বা দুটি জানালা হলেই চলছে। কিন্তু বসার ঘরে দেয়া হচ্ছে বিশালাকারের জানালা। রান্নাঘরের জানালা আবার বদলে যাচ্ছে চাহিদামতো।

জানালা স্থাপনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। এমন স্থানে জানালা স্থাপন না করাই ভালো যেখানে জানালাটি সর্বদা পর্দায় ঢেকে রাখতে হবে। উদাহরণ হতে পারে জানালার মুখোমুখি রেস্টুরেন্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জানালা, কিংবা এমন কোনো স্থান যেখানে সর্বদাই জনসমাগম থাকে।

তবে বাড়ির পাশে যদি মনোরম পরিবেশ থাকে, সেদিকের দেয়ালে জানালা দিতে ভুলবেন না যেন। সবুজ বৃক্ষরাজি কিংবা নদী, বিল বা জলাশয়, অথবা চমৎকার একটি বাগান যেদিকে, সেদিকে একটি বড় জানালা দিয়ে দিন, আর ঘরে বসে সময়ে সময়ে হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে।

যেসব জানালায় ডিজাইন হতে পারে

বে উইন্ডো (Bay Window)

বে উইন্ডো হলো একপ্রকার জানালা যা ঘরের মূল দেয়ালের সমতলে না থাকে কিছুটা প্রসারিত হয়ে বাইরের দিকে জায়গা করে নেয়। সহজভাবে বললে, বে উইন্ডো একপ্রকার প্রসারিত ঝুল বারান্দাই বটে। পার্থক্য হলো – এটি মূল ঘরের সাথেই থাকে।

বে উইন্ডো আকারে বেশ বড় হয়। এটি ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশে সাহায্য করে, সাথে সৌন্দর্যবৃদ্ধি তো থাকছেই। বাড়ির সামনের দিকের কক্ষগুলোয়, বসার কিংবা শোবার ঘর যেকোনো ঘরই হতে পারে, সাধারণ এই জানালাগুলো স্থাপন করা হয়, যার জন্য অন্দরের সৌন্দর্যের সাথে বাইরে থেকেও বাড়িকে পরিপাটি দেখায়।

কেসমেন্ট উইন্ডো (Casement Window)

এখনও পর্যন্ত এ ধরনের জানালাই সর্বাধিক ব্যবহৃত ও প্রচলিত, যদিও থাই গ্লাস একে প্রতিস্থাপন করে চলেছে। কেসমেন্ট উইন্ডো হলো একপ্রকার জানালা যা ক্র্যাংকের সাহায্যে দেয়ালে আটকে থাকে, এবং একে সম্পূর্ণ বাইরের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে খোলা যায়। এতে জানালার প্রায় পুরোটা দিয়ে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করে। একসময় লোহার বা অস্বচ্ছ কাচের কেসমেন্ট জানালা ব্যবহার করা হলেও এখন সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে স্বচ্ছ কাচ। এ জানালার দুটো অসুবিধা রয়েছে। প্রথমত, একে আকারে খুব বেশি বড় করা যায় না, এবং দ্বিতীয়ত, জানালার বাইরের দিকে কোনোপ্রকার শিল্ড বা ইনসেক্ট নেট (কীটপতঙ্গরোধী ঘন জালবিশেষ) ব্যবহার করা যায় না।

পিকচার উইন্ডো (Picture Window)

মূলত ছবির ফ্রেমের মতো জানালার স্থাপনই এর এরূপ নামকরণের কারণ। সব বাসায় কিংবা যেকোনো স্থানে এই জানালা ব্যবহারযোগ্য নয়। কেবল ঘরের ভেতর থেকে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা থাকলেই এরূপ জানালা দেয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য অনেকে বাড়ির সামনের দেয়ালে পিকচার উইন্ডো ব্যবহার করেন। ছবির ফ্রেমের মতো দেয়ালে স্থির এই জানালা খোলা যাবে না। প্রচুর আলো আসলেও বাতাসের উপায় নেই। আবার খুব একটা নিরাপদ বা টেকসইও বলা যাবে না।

উইন্ডো ওয়াল (Window Wall)

অনেকটা পিকচার উইন্ডোর মতোই, তবে আকারে আরো বড়। বসার ঘর বা হলঘরের পাশে যদি দেখার মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য থাকে, তবে সেই ঘরের বাইরের দেয়ালটি করে ফেলতে পারেন উইন্ডো ওয়াল। অর্থাৎ পুরো দেয়ালই হবে স্বচ্ছ কাচের তৈরি। এটাও পিকচার উইন্ডোর মতো স্থির, এবং খোলার ব্যবস্থা নেই এতে। একেবারে পূর্ব বা পশ্চিমমুখী দেয়ালে এরূপ জানালা করা যাবে না। এতে প্রচুর তাপ আসবে ঘরে।

স্লাইডার (Slider)

স্লাইডার বলার পর আলাদা করে পরিচয়ের প্রয়োজন আছে কি? এককথায়, বর্তমানের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সহজ বিকল্প হলো স্লাইডার জানালা, যা আড়াআড়িভাবে স্লাইড করে বা পিছলে খোলা বা বন্ধ করা যায়। এই জানালা একেবারে ছোট আকার থেকে শুরু করে মাঝারি বা বেশ বড় আকারের পর্যন্ত হয়। তাই বাসাবাড়ি, অফিস বা বাণিজ্যিক ভবন- সর্বত্রই এর ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে থাই গ্লাস নামেই সর্বাধিক পরিচিত স্লাইডার জানালা। দামে সাশ্রয়ী, টেকসই, এবং সহজে পরিষ্কার করা যায় এ জানালা। তবে মূল সমস্যা হতে পারে সম্পূর্ণ বাতাস নিরোধী না হওয়া।

আপনার চাহিদা এবং সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাই সুখের নীড়ের জন্য বেছে নিন কাঙ্ক্ষিত জানালা। কারণ, ‘হোম’কে ‘সুইট হোম’ করে তুলতে যে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন, যে প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রাচুর্যের অবলোকনের প্রয়োজন, ঘরের ভেতরে বসে সেসব উপভোগের প্রধান উপায় যে এই জানালাই!

অত্যধিক গরমের দিনে কংক্রিট কাস্টিংয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয়সমূহ

অবকাঠামোর যেকোনো অংশের ঢালাইয়ের অপরিহার্য উপাদান কংক্রিট। গতানুগতিক ধারণা রয়েছে যে কংক্রিটের ঢালাই দ্রুত রোদে শুকিয়ে গেলে ঘরও প্রস্তুত হয়ে যাবে দ্রুত, এতে অনেক সময় বাঁচবে। আসলে কি ব্যাপারটা তেমন?

উত্তর- “না”। অত্যধিক গরমে দ্রুত কংক্রিট শুকিয়ে যাওয়ায় ভালোর চেয়ে মন্দের সম্ভাবনাই বেশি, এবং এতে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি। অধিক গরমে কিংবা শুষ্ক আবহাওয়ায় দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া কংক্রিটে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে।

কংক্রিট স্ট্রেংথ কমে যায়

দ্রুতগতির খরগোশ আর ধীরগতির কচ্ছপের গল্প আমাদের সবারই জানা। বাস্তবজীবনে এ গল্পের বহু প্রয়োগের মাঝে একটি এই কংক্রিটের শুষ্ককরণ প্রক্রিয়া। অধিক তাপমাত্রায় কংক্রিট যত দ্রুত শুকিয়ে যায়, এর শক্তিবৃদ্ধিও তত কম হয়। অন্যদিকে, অল্প তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে শুকানো কংক্রিট বেশ শক্তিশালী হয়, এবং টেকেও দীর্ঘদিন।

ফাটল ধরার ঝুঁকি

দ্রুত কংক্রিট শুকিয়ে গেলে তাতে কয়েকটি কারণে ফাটল ধরার ঝুঁকি দেখা দেয়। এর একটি হলো সংকোচন। অত্যধিক গরমে দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া কংক্রিট বেশি মাত্রায় সংকুচিত হয়ে যায়, এবং প্রাথমিকভাবে উপরিতলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাটল দেখা দেয়। প্রথমে সেগুলো উপেক্ষণীয় মনে হলেও পরে তা দিয়ে পানি বা অন্য কোনো রাসায়নিক প্রবেশ শুরু হয়।

তবে উপরিতলের সংকোচনের চেয়ে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে কেন্দ্রের প্রসারণ। কংক্রিট যখন শুকোতে থাকে তখন এর কেন্দ্রে তাপ সঞ্চিত হয়। উপরিতলে বায়ু প্রবাহের কারণে ও তাপমাত্রা নিঃসরণ করতে পারায় ঠাণ্ডা এবং শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু ঢালাইয়ের কেন্দ্রে কংক্রিট অধিক তাপে প্রসারিত হতে পারে। ফলে ওপরের জমে যাওয়া কংক্রিটে ফাটল সৃষ্টি হয়।

স্পষ্টতই অধিক তাপে কংক্রিটের দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া অবকাঠামোর দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ক্ষতিকর। তাই অত্যধিক গরম আবহাওয়া এড়ানোর সুযোগ থাকলে সেটি গ্রহণ করতে হবে। যদি অবকাঠামো গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়াতেই নির্মাণ করতে হয়, তবে জেনে নিতে হবে কীভাবে ফাটল ধরার ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

দ্রুত ঢালাই

কাঠফাটা রোদে এবং গ্রীষ্মের শুষ্ক আবহাওয়ায় কংক্রিট ঢালাই করলে প্রথমেই যেদিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হলো কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরির পর সেটি দ্রুত ঢালাই করে ফেলা। তাই শুরুতেই সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরি ঢালাইয়ের যথাসম্ভব নিকটে করতে হবে, এবং দ্রুত ঢালাই করে ফেলতে হবে।

ঢালাইয়ের পূর্বে পানি ঢালা

গরম আবহাওয়ায় এবং প্রখর সূর্যের তাপে ঢালাইয়ের স্থানটুকু অর্থাৎ স্টিলের কাঠামো কিংবা কোনো বেজমেন্ট যদি হয়, তা ভীষণ গরম হয়ে থাকে। এর ওপর কংক্রিট ঢালা শুরুর আগপর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর পানি ঢেলে একে ঠাণ্ডা রাখতে হবে। উল্লেখ্য, পানি বাষ্পীকরণে ঢালাইয়ের পৃষ্ঠতল তাপ নিঃসরণ করে ঠাণ্ডা হয়।

তাপ ও বাতাস আটকানোর ব্যবস্থা

আবহাওয়া পরিবর্তন করা সম্ভব না হলেও আবহাওয়ার প্রভাব কমানো সম্ভব পর্যাপ্ত প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে। অনেক কনস্ট্রাকশন সাইটেই এখন ঢালাইয়ের পৃষ্ঠতলের ওপর পাল টেনে সূর্যতাপের প্রভাব কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে গ্রীষ্মকালে অত্যধিক সূর্যতাপ যতটা ক্ষতিকর কংক্রিটের জন্য, শুষ্ক বাতাসও ঠিক ততটাই। কারণ এটি দ্রুত কংক্রিটের উপরিতলের আর্দ্রতা শুষে নেয়, এবং সংকোচন ঘটায়। তাই পুরো ঢালাইয়ের কাজের অংশকে বড় তাঁবু দিয়ে ঘিরে ফেলা আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর সর্বোত্তম উপায়।

শীতল কংক্রিট

কংক্রিট শীতল করার উপায় কি বেশি করে পানি মেশানো? না। প্রয়োজনীয় অনুপাতের চেয়ে অধিক পানি মেশালে কংক্রিট শক্ত হবার পর তা যতটা শক্তিশালী হবার কথা ততটা হতে পারে না। তাই অধিক পানি মেশানো নয়, বরং পর্যাপ্ত পানিতেই কংক্রিট শীতল রাখতে হবে।

আর এর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কংক্রিটের মিশ্রণে হিমশীতল পানি ব্যবহার করা। যদি কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরির স্থানটি ঢালাইয়ের স্থানের কাছাকাছি না হয়, এবং তা কংক্রিট বহনকারী ট্রাকে করে আনতে হয়, সেক্ষেত্রে মিশ্রণে বরফ মেশানো উত্তম। তবে বরফ মেশাতে হবে এমন অনুপাতে যেন তা ঢালাইয়ের স্থানে পৌঁছানোর আগেই ট্রাকের ভেতরে গলে যায়। কোনো অবস্থাতেই বরফের টুকরোসমেত কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করা যাবে না।

এয়ার ফগিং

এয়ার ফগিং (Air Fogging) হলো পানিকে ক্ষুদ্র ছিদ্রের মধ্য দিয়ে দ্রুত নির্গত করে একপ্রকার ধোঁয়াশার মতো তৈরি করা। ঢালাই হয়ে গেলে উপরিতলে এয়ার ফগিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে সদ্য ঢালাই হওয়া কংক্রিটের উপরের বাতাস আর্দ্র থাকবে, এবং তা কংক্রিট থেকে পানির দ্রুত বাষ্পীভবন রোধ করবে।

হাইড্রেশন স্টাবিলাইজার

কংক্রিটের সাথে অধিক পানি ধরে রাখতে পারে এমন বস্তু মেশানোকে হাইড্রেশন স্টাবিলাইজার (Hydration Stabilizer) বলে। সাধারণত ছাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে এক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, এর ব্যবহার কংক্রিটের শক্তি ক্ষয় বা বৃদ্ধি কোনোটিই করে না। তবে পানি ধরে রেখে দ্রুত শুষ্ক হওয়া রোধ করে।

বাষ্প নিরোধক আবরণ

এটি সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর একটি। ঢালাইয়ের কিছুক্ষণ পর যখন পৃষ্ঠতল খানিকটা শুকিয়ে আসে, তখন এর আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য প্লাস্টিকের পলিথিন, শিট কিংবা সাদা সূর্যালোক প্রতিফলক আবরণ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, ভেজা চট ব্যবহারও জনপ্রিয় পদ্ধতি।

সন্ধ্যা কিংবা রাতে ঢালাই

ঋতুবদলের জন্য অপেক্ষা না করলেও অন্তত সন্ধ্যা বা রাত হবার জন্য অপেক্ষা করাই যায়। সারাদিনে ঢালাইয়ের সব আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ফেলে রাতে অপেক্ষাকৃত কম তাপে ঢালাই করা শ্রেয়। তথাপি, পরদিন সকালের সূর্য থেকে বাঁচতে বাষ্প নিরোধক আবরণ জরুরি।

রুফ টাইলসের রকমফের

বাড়ির ছাদে টাইলস ব্যবহারের ইতিহাস স্থাপত্যশৈলীর বহু পুরনো এক অধ্যায়। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে চীনে সর্বপ্রথম রুফ টাইলস ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। যুগে যুগে এই ব্যবহারের বিকাশ ঘটেছে। মূলত, সরকারি ভবন, রাজপ্রসাদ, এবং অন্যান্য জনসমাগমস্থলের অবকাঠামোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রুফ টাইলস ব্যবহার করা হতো। তবে নির্মাণশিল্পে টাইলসের ব্যবহার যত বৃদ্ধি পেল, ততই রুফ টাইলসের ব্যবহার সর্বসাধারণের মাঝে পৌঁছে যেতে লাগল।

বর্তমানে অধিকাংশ অভিজাত বাড়ির ছাদেই রুফ টাইলস ব্যবহার করা হয়। ছাদে টাইলসের ব্যবহার রুচিশীলতার প্রকাশ। তাছাড়া বর্তমানে টাইলস শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ঘরের দেয়াল বা মেঝের মতো ছাদে ব্যবহারের জন্যও রয়েছে বাহারি সব টাইলস। এসবের মাঝে সর্বাধিক ব্যবহৃত কিছু টাইলসের পরিচিতি থাকবে এই লেখায়।

ক্লে রুফ টাইলস (Clay Roof Tiles)

রুফ টাইলসের মাঝে সবচেয়ে পুরনো নাম ক্লে রুফ টাইলস, অর্থাৎ কাদামাটি থেকে তৈরি টাইলস। কারণটাও সহজেই অনুমেয়। গৃহনির্মাণের আদিম উপাদান পাথরের সাথে মাটিই ছিল সবচেয়ে সহজলভ্য। কাদামাটিকে ইচ্ছেমতো আকৃতি দিয়ে রোদে শুকিয়ে এবং আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় ক্লে টাইলস। বর্তমানে এগুলো আর হাতে তৈরি হয় না। মাটি প্রস্তুত থেকে শুরু করে টাইলস পোড়ানো পর্যন্ত পুরোটাই হয়ে যায় মেশিনে।

ক্লে রুফ টাইলস আমরা সবাই কম-বেশি দেখেছি। ব্যারেল আকৃতির কিংবা সমতল- এই দুই প্রকার ক্লে টাইলসই সর্বাধিক ব্যবহৃত। তবে, আরো বিভিন্ন আকৃতির ক্লে টাইলসও পাওয়া যায়। আজকাল রঞ্জকের ব্যবহারে ক্লে রুফ টাইলসে দেয়া হচ্ছে বাহারি রঙের ছোঁয়া।

মেটাল রুফ টাইলস (Metal Roof Tiles)

মেটাল বা ধাতব রুফ টাইলসের ব্যবহার সচরাচর দেখা যায় না। সাধারণত শিল্পকারখানাতেই এর ব্যবহার হয়ে থাকে। মেটাল রুফ টাইলস তৈরি হয় মূলত লোহা, তামা, দস্তা কিংবা অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। তবে এসব ধাতু ব্যবহারের কারণে এই টাইলস অন্যগুলোর তুলনায় বেশ হালকা, ফলে ব্যবহার সহজ হয়। এছাড়াও এর স্থায়িত্ব অন্যান্য টাইলসের তুলনায় অনেক বেশি। এটি ভঙ্গুরও নয়।

সুবিধার সাথে বহুমুখী অসুবিধাও আছে এর। অন্যান্য টাইলসের তুলনায় এটি প্রচুর শব্দ সৃষ্টি করে। আবার ধাতু হওয়ায় বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়, এবং বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া, বর্ষাকালে যখন মেটাল রুফ টাইলস প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির পানিতে ভেজে, তখন এতে সহজেই শ্যাওলা পড়ে, পিচ্ছিল হয়ে যায়।

মেটাল রুফ টাইলস নানা আকৃতিতে আসে; স্লেট, ব্যারেল, নুড়ি, কাঠের পাতের আকৃতি- সব রকম আকৃতিতেই পাওয়া যায়।

স্লেট রুফ টাইলস (Slate Roof Tiles)

ছাদে ব্যবহৃত টাইলসগুলোর মাঝে সবচেয়ে সৌখিন হলো স্লেট টাইলস। প্রথমত, এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, একপ্রকার পাথর, যা কারখানায় উৎপাদিত নয়। ফলে এই টাইলসের ব্যবহার অনেক বেশি অকৃত্রিম মনে হয়। আর স্লেট রুফ টাইলসের রঙ অতুলনীয়। এর নানারূপ নান্দনিক প্রাকৃতিক রঙ কোনো রাসায়নিক রঞ্জক দিয়েই আনা যাবে না।

স্লেট টাইলস ক্ষয় হয় না সহজে। তবে ঝামেলা এর ওজনে। বেশ ভারী হওয়ায় স্লেট টাইলসের নির্মাণকালীন ব্যবহারে অতিরিক্ত লোকবল এবং যন্ত্রের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এতে নির্মাণব্যয় বাড়ে। স্লেট টাইলস ব্যয়বহুল, এবং কোনোভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এর মেরামতও ব্যয়বহুল।

কংক্রিট রুফ টাইলস (Concrete Roof Tiles)

কংক্রিট রুফ টাইলসের ব্যবহার শুরু হয় উনিশ শতকে, শীতপ্রধান অঞ্চলে। কারণ, এই টাইলস অন্যান্য টাইলসের তুলনায় অধিক তাপরোধী। তাছাড়া কংক্রিট টাইলস তৈরি করাও সহজ। একে ইচ্ছেমতো যেকোনো আকৃতি দেয়া যায়, দামেও কম। এসবের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়িত্ব, শ্যাওলা না পড়া, সহজে ক্ষয় না হওয়ার মতো সুবিধাগুলো কংক্রিট টাইলসকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

তবে স্লেট টাইলসের মতো কংক্রিট টাইলসেরও প্রধান সমস্যা এর ওজন। ভারী হবার কারণে এর ব্যবহার কষ্টসাধ্য।

সিনথেটিক স্প্যানিশ ব্যারেল রুফ টাইলস (Synthetic Spanish Barrel Roof Tiles)

নাম থেকেই অনুমেয় যে এই রুফ টাইলস স্পেনে সর্বাধিক প্রচলিত। এটি ওজনে হালকা, আগুন নিরোধক, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো- এটি যেকোনো রঙে পাওয়া যায়। মূলত, সিনথেটিক ব্যবহার করে ব্যারেল আকৃতির টাইলসে সৌখিন রূপ দেয়া হলে সেটি স্প্যানিশ ব্যারেল রুফ টাইলস হয়ে যায়।

কম্পোজিট রুফ টাইলস (Composite Roof Tiles)

কম্পোজিট রুফ টাইলস এককথায় সবরকম টাইলসের মিশ্রণ! এটি পাথর, কাদামাটির মতো প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে কংক্রিট ও অন্যান্য কৃত্রিম উপাদানের মিশ্রণে তৈরি করা হয়।

কম্পোজিট রুফ টাইলস উৎপাদনের এরূপ প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো একে অন্য সকল টাইলসের গুণে গুণান্বিত করা। এটি প্রায় সবরকম আকার এবং রঙেই পাওয়া যায়। নির্মাণে ব্যবহারের পর কেউ বলে না দিলে বোঝা যাবে না এটি কম্পোজিট, নাকি সাধারণ স্লেট, কিংবা ক্লে টাইলস। স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় এর দামও খুব বেশি নয়।

উডেন রুফ টাইলস (Wooden Roof Tiles)

নানারকম স্থায়ী এবং মজবুত কাঠ থেকে এই টাইলস তৈরি করা হয়। কাঠের বলে ভয় পাবার কিছু নেই, কাঠের গুণগত মান ভেদে এই টাইলস ১৫-৫০ বছরও স্থায়ী হয়। যেকোনো রুফ টাইলসের তুলনায় উডেন রুফ টাইলস হালকা, খুব সহজেই ব্যবহার কিংবা মেরামত করা যায়। কেনার সময় অবশ্যই ভালো ফিনিশিং দেখে কিনতে হবে, অন্যথায় বর্ষাকালে বা আর্দ্র আবহাওয়ায় স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে। তেমন কোনো অসুবিধা না থাকলেও এই টাইলস এর বিকল্পগুলোর তুলনায় বেশ দামী।

রাবার রুফ টাইলস (Rubber Roof Tiles)

বর্তমানে রুফ টাইলসের এই প্রকরণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর মূল কারণ- এটি দেখতে চমৎকার, হালকা এবং স্থাপন করা সহজ। রাবার সম্পূর্ণ তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। ভীষণ আর্দ্র আবহাওয়াতেও এই টাইলস পিচ্ছিল হয় না।

তবে রাবার রুফ টাইলস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি ব্যয়বহুল তো বটেই, এর সমান বা কম মূল্যের টাইলসগুলোর তুলনায়ও এর স্থায়িত্ব কম। তাছাড়া অগ্নিজনিত দুর্ঘটনায় রাবার টাইলস নষ্ট হয়ে যায়।

কীভাবে বাড়াবেন ঘরের স্টোরেজ স্পেস

আপনার বসবাসের ঘরখানি, কিংবা সম্পূর্ণ বাসাটিই কি কখনো বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে? শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর- সবগুলোই যথেষ্ট বড় হওয়া সত্ত্বেও কি মনে হয়েছে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না? যদি মনে হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ভাবছেন অতিরিক্ত তৈজসপত্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরের স্থান সঙ্কুলানের ঝামেলা হয় উন্মুক্ত স্থানের সদ্ব্যবহার করতে না পারার কারণে। একটি ঘরের পুরোটা জুড়েই আসবাবপত্র থাকবে না, কিছু অংশ অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। অন্যথায় ঘরে ঢুকলেই দমবদ্ধ মনে হবে।

ঘরের আকৃতি নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বড় আকারের ঘরও যথাযথ উপায়ে না সাজালে ঘিঞ্জি মনে হবে, আবার ছোট ছোট ঘরের ভেতরেও রেখে দেয়া যেতে পারে অনেক মালামাল, যদি সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। কেমন হতে পারে সেই পরিকল্পনা? চলুন জানা যাক।

মাল্টিটাস্কিং আসবাবপত্র

ঘরের সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য সর্বদা এমনসব আসবাবপত্র ক্রয় করুন যা একাধিক কাজে লাগবে। নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধক কোনো আসবাবপত্র না হয়ে থাকলে তা যেন উদ্দিষ্ট কাজের সাথে কিছুটা বাড়তি স্টোরেজের জোগান দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

প্রথমেই বিছানা, যেহেতু এটি শোবার ঘরে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থান দখল করে রাখে। বিছানার নিচে ফাঁকা থাকা ভালো, এতে সেখানে অনেক কিছু রাখা যায়। তবে আদৌ যদি ফাঁকা না রাখতে চান, তাহলে এমন বিছানা ক্রয় করুন যার নিচে ড্রয়ার আছে। এতে অন্দরের সৌন্দর্যে ঘাটতি তো হবেই না, পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় এবং অনেকদিন পর পর প্রয়োজন হয় এমনসব বস্তু সেই ড্রয়ারে রেখে দিতে পারবেন।

ঘরে রাখা টেবিলে ড্রয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়, সাথে টেবিলের একপাশে শেলফ থাকলে আরো ভালো। প্রতিটি ঘরে একটি করে ছোট আকারের ক্লজেট রাখা যেতে পারে, যা কম আয়তনে অনেককিছু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। ক্লজেটের ভেতর এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই চলে যাবে, যেমন – পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টর্চ, খেলনা, কেচি, পারফিউম ইত্যাদি। এতে ঘর অনেক বেশি পরিপাটি হবে।

বাক্স ব্যবহার করুন

সবকিছুর জন্য ক্লজেট, আলমারি বা ওয়ারড্রোব, শেলফ ইত্যাদি কাজে আসবে না। প্রথমত, কিছু প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, যেগুলো নিত্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখান থেকে ড্রয়ার খুলে বের করতে হবে কিংবা প্রতিদিন ঠিকঠাকমতো সাজাতে হবে, যা বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়ও বটে।

দা-বটি, ছুরি, রান্নাঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র, বসার ঘরের রুম স্প্রে, তোয়ালে- বাসাবাড়িতে এরকম অসংখ্য বস্তু রয়েছে যা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। নিত্যদিন শেলফ থেকে নামিয়ে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখা কিংবা কিচেন ক্লজেট খোলা/বন্ধ করা কারোরই ভালো লাগার কথা না। বাক্সের ব্যবহার সব সমস্যার সহজ সমাধান।

ফ্রি স্ট্যান্ডিং কাঠের বা প্লাস্টিকের ধাপ করা বাক্স কিংবা দেয়ালে স্থাপনযোগ্য স্টিলের ঝুড়িসদৃশ বাক্স দেখতেও ভালো দেখায়, নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র রাখতেও সুবিধা হয়। সাজিয়ে রাখবার বালাই নেই বিধায় সময় বেঁচে যায় অনেক।

রান্নাঘরে বা বসার ঘরেই কেবল নয়, স্টোরেজ ঘরেও বাক্সের ব্যবহার জরুরি, অন্যথায় অল্প মালামাল রেখেই ঘর ভর্তি মনে হতে পারে। তাছাড়া বাক্সবন্দি করে মালামাল সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো খুঁজে পাওয়াও সহজ হয়। হালকা পিজবোর্ডের বা শক্ত কাগজের কার্টনবক্সগুলো এক্ষেত্রে উত্তম। প্রতিটি বাক্সে কাগজের লেবেল লাগিয়ে দিলে কোথায় কী রাখা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।

ডেড স্পেসএর সঠিক ব্যবহার

প্রতিটি ঘরেই এমন কিছু স্থান থাকবে যেগুলো আপাতত কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলে মনে হয়। এসব স্থানকে ডেড স্পেস (Dead Space) বলা হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে ডেড স্পেসের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব।

সবচেয়ে কমন ডেড স্পেস হলো জানালা। জানালার সামনে বড় কিছু রাখার উপায় নেই, রাখলে তা কুৎসিত দেখাবে বৈকি। তবে জানালার সামনের স্থানের সঠিক ব্যবহার ঘরের অন্যান্য স্থানের উপর চাপ কমায়। জানালার পাশে সোফা স্থাপন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বড় আকারের জানালা, যেগুলো মেঝের বেশ কাছাকাছি পর্যন্ত থাকে, সেগুলোর সামনে সোফা রাখা বেমানান। এক্ষেত্রে ছোট টেবিল বা শেলফ সেখানে রাখা যেতে পারে, যার ভেতরেও রাখা যাবে আরো অনেক কিছু।

একটি দেয়ালের শেষমাথা থেকে খানিক দূরে অপর দেয়ালে অর্ধেক বেরিয়ে থাকা পিলার থাকলে ঐ স্থানের ব্যবহারিক কোনো মূল্য থাকে না, যদি না আপনি সেখানে সরু আকারের একটি ক্লজেট বা টি টেবিল স্থাপন করেন। ঘরের দরজার একপাশে যদি কিছুটা স্থান অব্যবহৃত পড়ে থাকে, সেখানে স্থাপন করতে পারেন যথাযথ আকারের সুন্দর একটি বুকশেলফ।

প্রাইম রিয়েল এস্টেট (Prime Real Estate)

গৃহসজ্জার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বস্তু তুলে রাখা বা তুলে আনার জন্য আদর্শ উচ্চতা হলো মেঝে থেকে শুরু করে কাঁধের খানিকটা উপরে পর্যন্ত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা একে প্রাইম রিয়েল এস্টেট নামে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ যে অংশ পর্যন্ত বিনা ক্লেশে আপনার হাত পৌঁছুবে। ঘরের শূন্যস্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে এই প্রাইম রিয়েল এস্টেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বড় আসবাবপত্রগুলো বাদে ঘরের যে দেয়ালগুলো উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের বা স্টিলের শেলফ, ক্লজেট স্থাপন করে ফেলুন।

ঘরকে আড়াআড়ি না দেখে উল্লম্বভাবে দেখুন

যেসব বস্তু একটির উপরে আরেকটি রাখা যায়, সেগুলো পাশাপাশি রেখে অতিরিক্ত জায়গা নষ্ট করা অর্থহীন। আড়াআড়ি সজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্লম্ব সজ্জার দিকে মনোযোগ দিন। একটির উপর আরেকটি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ওজন এবং নমনীয়তা বিবেচনা করুন। অধিক ওজন এবং কঠিন বস্তুগুলোকে নীচে রেখে উপরের দিকে নমনীয় ও হালকা বস্তুগুলো রাখতে হবে। যদি বাসায় বুকশেলফ না থাকে এবং বইগুলো দেয়ালের সাথে সারি করে রাখতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন সারিগুলো উপরের দিকে লম্বা করে কম সংখ্যক সারি করার।

এসব তো ঘর সাজানোর কিছু কৌশল মাত্র। এসবের পাশাপাশি মাপমতো আসবাবপত্র কেনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সবশেষে, অপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, অব্যবহৃত বা পুরনো কাপড়, খেলনা, জুতা ইত্যাদি জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, পুরাতন জিনিসপত্রের বাজারে বিক্রি করে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন। এতে ঘরের জঞ্জাল কমবে অনেকটাই, ঘর হবে অধিকতর পরিপাটি, এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।

বাড়ি দোতলা করবার পূর্বে মাথায় রাখতে হবে যে বিষয়গুলো

আপনার বাড়িটি যদি হয় একতলা, আর তার ভিত্তিপ্রস্তর যদি দোতলা বা আরো অধিক উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির উর্ধ্বমুখী গমনই শ্রেয়। এতে আপনার সীমিত জমির সদ্ব্যবহার হবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া থেকে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হবে।

তবে একতলা বাড়ির ওপর আরেকটি ছাদ দিয়ে ফেলা অতটা সহজ নয়, অন্তত ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তো নয়ই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, খরচ আর নির্মাণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একতলা বাড়ির ওপর দ্বিতীয় ফ্লোরের প্রসারণ কাজের জন্য অবশ্যই কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে।

আবহাওয়া

বাড়ির প্রসারণ পরিকল্পনায় সবার আগে ভাবতে হবে আবহাওয়া নিয়ে। নির্মাণকাজের জন্য সর্বদাই শুষ্ক মৌসুম মানানসই। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে হেমন্তের শেষ থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে ভালো সময়। হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়া সব কাজে তালগোল পাকানো কিংবা টানা বর্ষণে কাজ থমকে থাকার ঝামেলা এ সময়ে হয় না।

বাজারদর কাঁচামাল ক্রয়

আবহাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রেখে যদি দোতলা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপ হবে বাজার যাচাই করা। ছোটখাট বিষয়গুলো যদি ধর্তব্যের মাঝে না-ও আনা হয়, তথাপি বাড়ি নির্মাণের প্রধানতম কাঁচামালগুলো, অর্থাৎ ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের বাজার অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে।

এসব বাজার সম্পর্কে যেহেতু নিত্যদিন খবর রাখা হয় না, তাই ভুলভাল দামে ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি না আপনি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাজার দ্রুত ওঠানামা করে। মাসখানেকের ব্যবধানে আপনার বাড়ি নির্মাণের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন, বাজার অস্থিতিশীল থাকলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।

বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই ক্রয় শুরু করতে পারেন, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রতিটি কাঁচামাল আলাদা আলাদা দিনে একাধিক বিক্রেতার কাছে দেখার পর কিনতে হবে। ভালো কাঁচামাল বাড়ির নির্মাণকে ত্রুটিমুক্ত করে, বাড়ি টেকসই হয়।

বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা প্রণয়ন

একসময় নীচতলার ডিজাইন ধরে রেখেই উপরের দিকে বাড়ানো হতো বাড়ি। তবে এখন আর মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। নীচতলার নকশা হুবহু অনুকরণ না করে ভিন্নতা আনতে পারেন দ্বিতীয় তলায়, বিশেষ করে নীচতলায় বসবাসকালীন যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোর সমাধান তো আনা যায়ই।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। নকশা কতটা সৌখিন আর নান্দনিক হবে তা নির্ভর করবে পুরো কাজে আপনি কতটুকু ব্যয় করতে প্রস্তুত তার ওপর। দক্ষ কোনো স্থপতির সাথে পরামর্শ করে তাই নকশা প্রণয়ন করে ফেলুন; পরিচিত হলে আরো ভালো, এতে বাজেটের মাঝে সর্বোচ্চটা পাবার নিশ্চয়তা থাকে।

অপ্রত্যাশিতখরচের বাজেট আলাদা রাখুন

হ্যাঁ, বাড়ি নির্মাণকালে সর্বনিম্ন বাজেটে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করবার লক্ষ্য যেমন থাকবে, তেমনি মনে রাখতে হবে যে বাড়ির এক্সটেনশন একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ, এবং এ কাজে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক খরচ হবে। তাই মূল বাজেটের একটা অংশ সরিয়ে রাখুন অপ্রত্যাশিত যেকোনো খরচের জন্য, যা পরিকল্পনা তৈরির সময় দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই টাকা বাদে বাড়ির মূল কাঠামোর বাজেট করতে হবে।

নির্মাণআইন মাথায় রাখুন

নির্মাণকাজে সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত দিকটি হলো নির্মাণ-আইন। নির্মাণ-আইন মেনে চলা আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি আইন মেনে নির্মাণকাজ করলে কোনোপ্রকার আইনি জটিলতার সম্ভাবনাও থাকে না।

নিরাপত্তা সবার আগে

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে হবে। প্রথমত, যেহেতু আপনার বসবাসরত বাসার উপরেই প্রসারণ কাজ হবে, এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা। তাছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়। একদিকে প্রাণহানি কাম্য নয়, অন্যদিকে আইনি জটিলতায় পড়ে আটকে যেতে পারে পুরো নির্মাণকাজ। তাই প্রচলিত নিরাপত্তা আইন মেনে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেই নির্মাণকাজ শুরু করুন।

বিশ্বস্ত বিল্ডার (নির্মাতা)

বেশ কিছু কারণে বিল্ডার নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে সুনাম আছে এরকম বিল্ডার কিংবা আপনার বা আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরিচিত বিল্ডারের কাছেই যান। এক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয়ে সঠিক পরামর্শ বিল্ডারদের নিকটই পাবেন, বাড়ির নকশায় কোনো ত্রুটি থাকলে, কিংবা উন্নতির সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টিও তারা আপনার দৃষ্টিগোচর করতে পারবে। আদৌ যদি পরিচিত বিল্ডার না থাকে, তাহলে একাধিক বিল্ডারের সাথে কথা বলুন, আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা জানিয়ে তাদের নির্মাণপ্রক্রিয়া, কাল (নির্মাণকাজের একটি টাইমলাইন) এবং বাজেট জানাতে বলুন। এরপর তাদের পরিকল্পনা তুলনা করে নিজেই ধারণা করতে পারবেন কোনটি ভালো হবে।

একটি ইনস্যুরেন্স করে ফেলুন

সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর একটি ইনস্যুরেন্স করিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিন। নির্মাণকাজ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পূর্বের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। তথাপি সাবধানতার মার নেই। যেকোনো নির্মাণকাজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্মাণ শুরুর পূর্বেই করে ফেলুন একটি ইনস্যুরেন্স, যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতি সামাল দেয়া যায়।

এই হাউজপ্ল্যান্টগুলো আপনার অন্দরসজ্জাকে ভিন্নমাত্রা দেবে

যারা কিছুটা প্রকৃতিপ্রেমী, নিজ বাড়িতে যাদের বাগান করার শখ, কিন্তু বাসার সামনে উঠোনের অভাবে তা হয়ে উঠছে না, তাদের জন্য ছাদবাগান আদর্শ। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে থাকলে বাড়িওয়ালার ছাদে আপনার শখের ছাদবাগানটি হবে কী করে?

শখ মেটাতে অনেকে বারান্দাকে আস্ত বাগানে রূপ দেন। তবে প্রকৃতিপ্রেমের সাথে যদি মনে থাকে সৌখিনতা, আর পরিপাটি গৃহসজ্জার আকাঙ্ক্ষা, তবে একটা ঘরে বাগান না বানিয়ে পুরো বাসাতেই প্রকৃতির সজীবতার নির্যাস দেয়া যেতে পারে। আর তার জন্য চাই চমৎকার কিছু হাউজপ্ল্যান্ট আইডিয়া।

একমনে ভাববেন যেখানটায় বসে

যদি অন্দরের সাজসজ্জা নিয়ে সচেতন হোন, তাহলে আপনার বাসায় একটি সুন্দর ইজিচেয়ার আছে নিশ্চয়ই। এই চেয়ারে হেলান দিয়ে নানা ভাবনায় হারিয়ে যেতে আপনার সঙ্গী হতে পারে সিলিং থেকে মেঝে অবধি ঝুলে যাওয়া কিছু ঝুলন্ত হাউজপ্ল্যান্ট। একাধিক ঝুলন্ত লতাগুল্ম দিয়ে ইজিচেয়ারটা বেষ্টন করে ফেলতে পারেন, এতে ইট-পাথরের দালানে একটুকরো নৈসর্গের অনুভূতি আসবে।

ডাইনিংয়ে কৃত্রিমতা নয়

ডাইনিং ঘরে অনেকেই কৃত্রিম প্লাস্টিকের ফুলদানি রেখে দেয়, কেউ ডাইনিং টেবিলের উপরেও রাখে কৃত্রিম ফুলের তোড়া কিংবা শোপিস। এসবের দারুণ প্রতিস্থাপক হলো একটি চমৎকার হাউজপ্ল্যান্ট। ডাইনিং ঘরের দেয়ালগুলোর মাঝামাঝি, কিংবা বসার স্থানকে বেষ্টন করে ছোট ছোট হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপন করলে খাওয়াদাওয়ার সময়ে গুমোট ভাবটা কেটে যাবে। ডাইনিং টেবিলের উপর ছোট একটি বনসাই নিয়ে আসতে পারে বিশেষত্ব।

আকার নিয়ে ভাবনা নয়

হাউজপ্লান্টের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করে আকারে ছোট ছোট উদ্ভিদই একমাত্র বিকল্প। কিন্তু আধুনিক গৃহসজ্জার ট্রেন্ড বলছে উল্টো। আকার বড় হলে কোনো ঝামেলা নেই, বরং সৌন্দর্যই বাড়বে বেশি। পাম, রাবার, বেহালা পাতা ডুমুরের মতো বড় আকারের বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদও আপনার ঘরে স্থান পেতে পারে। বিশেষ করে বসার ঘরে সোফার পাশে কিংবা ওপেন কিচেন ব্যবস্থায় এরকম বড় বড় উদ্ভিদগুলো বেশ মানানসই।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, শুরুতেই মাঝারি বা মোটামুটি বড় আকারের উদ্ভিদ নিয়ে আসলে পরে তার আকার নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হতে পারে। তাই শুরুতে ছোট আকারের গাছ আনুন, সেগুলোকে সময় নিয়ে পরিচর্যা করে বড় করুন, এবং নিজের পছন্দসই আকারে সীমাবদ্ধ রাখুন।

ওয়ার্কস্পেসে বিশেষ নজর আবশ্যক

ঘর সাজাবেন হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে আর নিজের ওয়ার্কস্পেসকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন না, তা হয় না। কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময়ে যখন ‘হোম-অফিস’ ব্যাপারটি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তখন প্রতিটি চাকরিজীবীর বাসায়ই অফিসের কাজ করবার জন্য থাকে নিজস্ব একটি ওয়ার্কস্টেশন।

যে স্থানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে হয়, যোগ দিতে হয় মিটিংয়ে, সে স্থানটা সবুজ হলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাঁপ ছাড়া যাবে কিছুটা, পাওয়া যাবে সজীব নিঃশ্বাস। তাই ওয়ার্কস্টেশনের হাউজপ্ল্যান্টগুলো হবে ছোট ছোট, ঝরঝরে, আর ভীষণ সবুজ। ড্রেসিনা (Dracaena) এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। উজ্জ্বল সবুজ চিরল চিরল পাতার এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দেখতে কৃষকের ক্ষেতে নবীন ধানগাছের মতো মনে হয়।

ড্রেসিনার মতো, তবে অতটা ঘন নয় এবং পাতাগুলো অধিক সরু, এ উদ্ভিদটি হলো স্পাইডার প্ল্যান্ট। এর পাতাগুলো চারধারে ছড়িয়ে পরে থাকে, লম্বা লম্বা সবুজ ঘাসের একটুকরো আবরণ মনে হয়। এ দুটোর পাশাপাশি সোনালি পথস লতা (Golden Pothos Vine) রেখে দিতে পারেন ওয়ার্কস্টেশনের মাঝামাঝি, কিংবা উপর থেকে ঝুলিয়েও দেয়া যায়।

শাওয়ার প্লান্টে নজর দিন

ঘরের সাজসজ্জায় যে হাউজপ্ল্যান্টগুলো ব্যবহার করছেন, গোসলখানায় সেগুলো মোটেই মানানসই হবে না। গোসলখানার জন্য আলাদা কিছু শাওয়ারপ্লান্টের ব্যবস্থা করুন, যদি গোসলখানায় বাথটাব থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। প্রথমেই নিয়ে নিন মথ অর্কিড (Moth Orchid) যা ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বৃদ্ধি পায়। এর বেগুনি রঙের ফুলের আছে চমৎকার সৌরভ। এর সাথে থাকুক ঘরের ভেতরে রাখা ড্রেসিনার শাওয়ার উপযোগী দুই প্রজাতি- লাকি ব্যাম্বো (Dracaena sanderiana) আর ড্রাগন ট্রি (Dracaena marginata)।

গোল্ডেন পথসেরও একটা পদ (Epipremnum aureum) ঝুলিয়ে দিতে পারেন উপর থেকে। যদি আদৌ এগুলোর পরও আরো বৈচিত্র্যের সন্ধান থাকে, তাহলে এনে ফেলতে পারেন পিস লিলি (Peace Lily) আর বোস্টন ফার্ন (Boston Fern)। এ দুটোর সমন্বয়ে গোসখানার বাথটাবখানি মনে হবে কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে স্নিগ্ধ সবুজ এক জলাধার।

শেলফ যেন বাদ না যায়

ঘরের সর্বত্রই হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপনের দরকার নেই, এতে ঘর কম, জঙ্গল বেশি মনে হবে। কিন্তু ঘরের যেসব জায়গায় হাউজপ্ল্যান্ট না রাখলেই নয়, তার মাঝে একটি হলো শেলফগুলো। সেটা বুকশেলফ কিংবা শোপিস ও অন্যান্য দ্রব্যাদি রাখার শেলফও হতে পারে। শেলফটা হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজানোর মূল শর্ত হলো বড় এবং পর্যাপ্ত স্থান নিয়ে শেলফ তৈরি করা। প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো কিংবা বই রাখার ফাঁকে ফাঁকে যেন ছোট ছোট উদ্ভিদ রাখা যায়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে শেলফ তৈরির সময়েই, যদি আপনার হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজাবার ইচ্ছা থাকে।

শেলফের জন্য কোনো সন্দেহ ছাড়াই ছোট আকারের লতা-গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বাছাই করুন, যেগুলো আকারে খুব বেশি বড় হবে না। শুরু করতে পারেন বার্ডস নেস্ট স্নেক প্ল্যান্ট (Birds Nest Snake Plant) দিয়ে। সাথে স্নেক প্লান্টেরই আরেক পদ সামুরাই স্নেক প্ল্যান্ট বেশ মানানসই হবে বুকশেলফের জন্য।

শোপিসের শেলফে একটা টিলানসিয়া (Tillandsia) রাখলে সেটাকেও আরেকটা শোপিসই মনে হবে। ফার্নের দু-তিনটি প্রজাতি, যেমন- মেইডেনহেয়ার (Maidenhair), লেমন বাটন (Lemon Button), বোস্টন (Boston) ইত্যাদি যেকোনো শেলফেরই শোভা বাড়াবে। শেলফে উদ্ভিদের ভিন্নতার পাশাপাশি রঙের ভিন্নতা আনতে সিলভার স্পার্কেল পিলিয়া (Silver Sparkle pilea) তো আছেই। এর হালকা সবুজ থেকে রূপালি সবুজ অন্যান্য সবকিছুর মাঝে নজর কাড়বে।

সিলিং ডিজাইন করুন পরিকল্পনামাফিক

একসময় বাড়ি নির্মাণে অন্দরের সাজসজ্জার মূল বিষয় ছিল ঘরের আসবাবপত্র। এরপর দেয়ালকে সুন্দর করে সাজানো, নিত্যনতুন নকশায় দৃষ্টিনন্দন করার ট্রেন্ড এলো, সাথে শুরু হলো সিলিংয়ের নকশায় সৃজনশীলতা আনা। গৃহসজ্জায় নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে সিলিং ডিজাইনিং হয়ে উঠলো গৃহসজ্জার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বর্তমানে কর্পোরেট অফিস ভবন, অডিটোরিয়াম কিংবা বড় বড় হলঘরেই সিলিং নান্দনিক সব ডিজাইনের ব্যবহার বেশি হলেও বাসাবাড়িতেও সিলিং ডিজাইন করতে ভোলেন না সৌখিন মানুষেরা। আর সিলিংয়ের নকশা বাড়ি নির্মাণের পর নয়, করলে নির্মাণকালেই করে ফেলতে হবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে। চলুন, সেসব জেনে নেয়া যাক।

১. ঘরের আকৃতি

নকশা বাছাইয়ের পূর্বশর্ত হলো ঘরের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা বাছাই করা। লম্বা, আয়তাকার কিংবা বর্গাকার ঘরে একরকম, গোলাকার ডাইনিং রুম হলে একরকম, বড় হলঘর হলে একরকম, আর বাথরুমের মতো সংক্ষিপ্ত পরিসরে একরকম নকশা।

২. যেমন ইন্টেরিয়র তেমন সিলিং

সিলিংয়ের ডিজাইন ঠিক করার আগে অবশ্যই ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ঠিক করতে হবে। ইন্টারিয়রের রং, প্রধান উপাদান (কাঠ, গ্লাস, মার্বেল কিংবা স্টিল), অ্যাম্বিয়েন্স- সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ঠিক করতে হবে সিলিংয়ের নকশা।

৩. আলোকসজ্জা

সিলিংয়ে আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থানের ওপর। ঘরের প্রধান আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক উপাদানগুলো যদি দেয়াল বরাবর হয়, তাহলে আলোকসজ্জাও ঘরের দেয়ালগুলোর নিকটবর্তী হতে পারে। এতে দেয়ালের রংও ফুটে ওঠে। আবার লক্ষ্য যদি থাকে পুরো ঘরে আলোর সুষম বন্টন, তাহলে সিলিংয়ের কেন্দ্র বরাবর আলোকসজ্জাই মানানসই হবে।

৪. উচ্চতা মাথায় রাখা জরুরি

সিলিংয়ের যেকোনো নকশা নির্ধারণ করার পূর্বে অবশ্যই উচ্চতা বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে ড্রপ সিলিংয়ের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যেসব সিলিং প্রধান সিলিংয়ের সাথে অতিরিক্ত একটি সিলিং হিসেবে সংযুক্ত থাকে। তাছাড়া সিলিং থেকে ক্রিস্টাল লাইট, ফ্ল্যাশ লাইট বা নানারকম ঝাড়বাতি ঝোলানোর জন্য সিলিংয়ের উচ্চতা যথেষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৫. রং নির্বাচন

সিলিংয়ের রং নির্বাচনে দেয়ালের রঙের চেয়ে এখন অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় ঘরের আসবাবপত্রকে। পুরো ঘরটি যদি একটি বিশেষ থিমের রঙ দিয়ে সাজানো হয়, সিলিংও সেই রঙেই সাজিয়ে ফেলতে হবে। আবার ঘরে কেমন আলো চান, তার উপরও নির্ভর করবে সিলিংয়ের রং। কারণ আলোকসজ্জা করবার পর সিলিং থেকে আলো প্রতিফলিত হবে পুরো ঘরেই।

৬. প্রতিধ্বনি এড়াতে চাইলে

সিলিংয়ের নকশা নির্বাচনে প্রতিধ্বনি হতে পারে বড় মাথাব্যথার কারণ, বিশেষত বড় হলঘর, কিংবা বসার ঘরে। ড্রপ সিলিং ব্যবহারে সিলিংয়ের উচ্চতা কমে আসে এবং লম্বা ঘরে কথার প্রতিধ্বনি হয়। এ থেকে মুক্তির উপায় অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) সিলিং, যা শব্দ প্রতিধ্বনিত না করে শুষে নেয়।

নকশা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর উপর নজর রাখতে হবে, তা তো জানা হলো। এবার কিছু নান্দনিক সিলিং ডিজাইন সম্পর্কে জানা যাক।

হাই গ্লস সিলিং (High gloss)

এটি সিলিং ডিজাইনে একটি সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। ড্রপ সিলিং বা ভারী আলোকসজ্জা ছাড়াই ঘরে আলোর সুষম বণ্টন এবং আরামদায়ক এম্বিয়েন্স তৈরির জন্য এ ধরনের সিলিং ব্যবহার করা হয়। মূলত সিলিং সর্বোচ্চ পরিমাণ মসৃণ করাই হাই গ্লস সিলিংয়ের মূল আকর্ষণ। মসৃণ সিলিংয়ে হালকা উজ্জ্বল রঙের মসৃণ প্রলেপ স্বচ্ছ হয় এবং আলোর প্রতিফলনও করে। পাশাপাশি এরূপ সিলিং ডিজাইন ব্যবহারে মনে হয় সিলিংয়ের উচ্চতা বেড়ে গেছে। এরূপ সিলিং অনেক সময় স্বচ্ছ কাচের মতোও হয় এবং ঘরের মেঝে এতে প্রতিফলিত হয়।

প্ল্যান্ট (Plant) সিলিং

শিল্পায়ন, নগরায়ন, সবকিছুতেই এখন সবুজায়নের উপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়। বড় বড় অবকাঠামোতে চলছে সবুজের আত্মীকরণ। বাসাবাড়ির ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয় ব্যাপারটা। অনেকেই ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক আবহ তৈরির জন্য গাছগাছালি ব্যবহার করেন। তবে গাছ/ঘাস লতাপাতা যদি টবে না থেকে সিলিং থেকে ঝুলে যায়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? সহজ ভাষায় বললে- প্ল্যান্ট সিলিং হলো সিলিং থেকে বেশ কয়েক প্রকারের সৌন্দর্যবর্ধক লতা-গুল্ম ঝুলিয়ে দেয়ার পদ্ধতি। এগুলো ঝোলাবার জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহারই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

কাঠের নকশা

পাথুরে যুগের পর মানুষ বসতবাড়ি নির্মাণে কাঠের ব্যবহারই করেছে সবচেয়ে বেশি। সময়ের সাথে বাড়িগুলো কলেবরে বড় হয়েছে, আকাশপানে যাত্রা করে উঠেছে অনেক উপরে। এসব বাড়ি কাঠে নির্মাণ হয় না এখন আর। তবে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঠিকই কাঠের কাছে ফিরেছে মানুষ।

মসৃণ গ্লসি সিলিংয়ে অসম আকৃতির মসৃণ কাঠ ব্যবহারে চমৎকার সিলিং তৈরি হয়। আবার ড্রপ সিলিংটি কাঠের হলে তা অন্যান্য ড্রপ সিলিংয়ের চেয়ে অভিজাত মনে হয়। সিলিং কাঠের নানা কারুকাজও স্থাপন করে থাকেন অনেকে।

আর্ট

সিলিংয়ে অতিরিক্ত কোনোকিছু যোগ না করে কেবল দস্তুরমতো রং করে ফেললেও সিলিং হতে পারে সাধারণ সিলিংয়ের চেয়ে সুন্দর। তবে যেনতেন রং নয়, সাধারণ ত্রিমাত্রিক আবহ ফুটিয়ে তোলা ডিজাইনই সিলিংয়ে সাধারণ একটি চিত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারে।

ভাস্কর্য

সিলিংয়ে খোদাই করার মতো ভাস্কর্যের গড়ন গড়ে তোলার চল এখনো রয়েছে। মসৃণ সিলিংয়ে উপর গৃহে বসবাসকারীর রুচি অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলা হয় নানা আকৃতি। ভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলা হলে সিলিং সাধারণত সাদা রাখা হয়, তবে অনেকেই রং করতে ভালোবাসেন ভাস্কর্যসমেত।

স্কাইলাইট

যদিও স্কাইলাইট সিলিং সাধারণত বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহৃত হয়, যেমন- রেস্টুরেন্ট, অফিসের মিটিং কক্ষে কিংবা শিল্প কারখানায়, তবে সৌখিন মানুষজন বসতবাড়িতেও স্কাইলাইট ব্যবহার করে থাকেন। স্কাইলাইট হলো গ্লাসনির্মিত বাহারি ডিজাইনের সিলিং যা দিনে সূর্যের আলোয় ঘরকে আলোকিত রাখে। এর একটাই অসুবিধা, চাইলেও টপ ফ্লোর ব্যতীত অন্য কোনো ফ্লোরে স্কাইলাইট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এছাড়াও রুচিশীল মানুষজন অসংখ্য রঙের, ধরনের সিলিং ডিজাইন ব্যবহার করেন। যেমন – ঘরে ক্লাসিক লুক আনবার জন্য ‘ব্রিক অ্যান্ড স্টোন’-এর ব্যবহার, মেটাল সিলিং, ফেব্রিক সিলিং, স্টেনসিল, গ্লাস সিলিং ইত্যাদি।

প্লাম্বিং পাইপের রকমফের

প্রাচীনকালে, যখন মানুষ সবে প্লাম্বিং করতে শিখলো, ক্লে আর লেড (সীসা) পাইপই ছিল প্লাম্বিংয়ের জন্য একমাত্র বিকল্প। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে, বাসাবাড়ি নির্মাণশিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া আসবার পর প্লাম্বিংয়ের পরিধি বেড়েছে। পানি সরবরাহ আর পয়োঃনিষ্কাশন ছাড়াও বাসাবাড়ির ফিটিং কিংবা উষ্ণ পানি পরিবহনের জন্য ভিন্ন পাইপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে লাগলো। তাছাড়া সীসার পাইপের দীর্ঘকাল ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট বিষাক্ততার ব্যাপারও মানুষকে ভাবিয়ে তোলে।

ফলে প্লাম্বিংয়ের জন্য এক-দুটি পাইপের ব্যবহার ছেড়ে নানারকম পাইপের ব্যবহার শুরু হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক সর্বাধিক প্রচলিত প্লাম্বিং পাইপগুলো সম্পর্কে।

কপার (Copper) বা তামার পাইপ

প্লাম্বিংয়ের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত পাইপগুলোর একটি হলো কপার পাইপ। সাধারণত দুই ধরনের কপার পাইপ প্লাম্বিংয়ে ব্যবহৃত হয়– কঠিন ও নমনীয়। পানি সরবরাহের জন্য কঠিন কপার পাইপের ব্যবহার আর সংযুক্তিতে নমনীয় কপারের রিভেট বা সংযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তবে পানির কল তৈরিতেই নমনীয় কপারের ব্যবহার সর্বাধিক। উভয় প্রকার পাইপ ১৫, ১৮ আর ২২ মিলিমিটার ব্যাসে পাওয়া যায়। তবে বৃহৎ পরিসরে কাজের জন্য ১০৮ মিলিমিটার ব্যাসের কপার পাইপও হয়।

কপার পাইপের সবচেয়ে বড় সুবিধা এর দীর্ঘস্থায়িত্ব। ৫০ বছর পর্যন্ত টেকসই হতে পারে ক্ষয়নিরোধক এই পাইপগুলো। এদের ভেতর কোনোপ্রকার শেওলা বা ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না, তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। পাশাপাশি এই পাইপ অত্যধিক তাপ সহনশীল।

অসুবিধা বলতে কপারের পাইপ তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। এছাড়াও পরিবেশবিদরা অতিরিক্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ কপার উত্তোলনের বিরোধিতা করেন, কেননা এটি পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

গ্যালভানাইজড (Galvanised) লোহার পাইপ

বাসাবাড়িতে ফিটিং, পয়োঃনিষ্কাশন কিংবা পানি সরবরাহের জন্য পেটা লোহার পাইপের তুলনায় গ্যালভানাইজড লোহার পাইপ অধিক জনপ্রিয় ছিল একসময়। এই পাইপে জিংকের আস্তরণ থাকায় এতে মরিচা ধরে না সহজে, সময়ের সাথে উজ্জ্বলতাও কমে যায় না।

তবে এই পাইপের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই যেন বেশি। প্রথমত, এর স্থায়িত্ব কম, ২০-২৫ বছর সাধারণত। সীসার গ্যালভানাইজেশন হলে সেই পাইপের পানিতে সীসার বিষাক্ততা ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। কোনো কারণে জিংকের আস্তরণ চলে গেলে সহজেই মরিচা পড়ে। ভীষণ ভারি হওয়ায় নির্মাণকাজে এর ব্যবহারও কষ্টসাধ্য। আবার জিংকের সাথে পানিতে উপস্থিত খনিজ পদার্থের বিক্রিয়ায় ক্রমে গাদ জমা হয় পাইপের ভেতর, এবং একসময় তা সম্পূর্ণ পাইপও বন্ধ করে দিতে পারে।

পিভিসি (Polyvinyle Chloride) পাইপ

পিভিসি পাইপ এখনকার সময়ে প্লাম্বিংয়ের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় নামগুলোর একটি। বাসাবাড়ির পানি সরবরাহ কিংবা ফিটিংয়ে সমানভাবে ব্যবহৃত হয় এই পাইপ। তুলনামূলক স্বল্পমূল্যের পিভিসি পাইপ চাপ সহনশীল, মরচে পড়ে না, তাই ক্ষয়ে যায় না। ওজনে কম এবং সহজে কাটা যায় বলে ব্যবহারও সহজ।

পিভিসির বড় শত্রু হলো তাপ। অধিক তাপে পিভিসি পাইপের আকার বিকৃতি ঘটতে পারে, এমনকি ফেটেও যায়। আবার আকারে বৈচিত্র্য না থাকায় জটিল নির্মাণকাজে এই পাইপ ব্যবহার করলে বারবার কাটা এবং জোড়া দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

সিপিভিসি (Chlorinated PVC) পাইপ

পিভিসি পাইপের সাথে পার্থক্য এর নাম থেকে অনুমান করা যায়। পিভিসি পাইপের সাথেই ক্লোরিন মিশ্রিত করে তৈরি করা হয় সিপিভিসি। কারণটাও অনুমেয়। অতিরিক্তি এই ক্লোরিন সিপিভিসি পাইপকে তাপ সহনশীল করে তোলে।

সিপিভিসি পাইপ প্রায় ২০০º সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহনশীল, দামে কম, ক্ষয়কারী পদার্থ পরিবহনে সক্ষম, দীর্ঘস্থায়ী এবং চাপ সহনশীল। ঝামেলা বলতে ভঙ্গুরতা। ক্লোরাইড থাকায় এই পাইপ দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকলে ফেটে যেতে পারে। তাই এই পাইপ সাধারণত গৃহাভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য কাজে লাগান হয়।

ক্রস লিংক পলিইথিলিন (Cross Linked Polyethelyne) বা পেক্স পাইপ

পেক্স পাইপের বিশেষত্ব হলো এটি নমনীয় এবং বাঁকানো যায়। পিভিসির মতো এটিও একটি প্লাস্টিক পাইপ। তাছাড়া এই পাইপ কাটা এবং জোড়া লাগানো অত্যন্ত সহজ। রাবারের বার্ব ব্যবহার করে কিংবা অল্প আঁচে এক মুখ প্রসারিত করে দুটি পাইপকে সংযুক্ত করা যায়। নমনীয়তার পাশাপাশি তাপ সহনশীলতা এবং টেকসই হওয়াও পেক্স পাইপের গুণ। তবে ঝামেলা হলো এতে পানি দূষণের সম্ভাবনা থাকে। কিছু পেক্স পাইপে পানি সরবরাহ করলে তাতে গন্ধ হয়ে যায়।

সবচেয়ে জনপ্রিয় এই পাইপগুলো ছাড়াও আরো অনেক প্রকার প্লাম্বিং পাইপ রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কেও সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

স্টেইনলেস স্টিল পাইপ

এগুলো দামে অধিক, মানেও উন্নত। অত্যধিক চাপ ও তাপ সহনশীল, ক্ষয়রোধী। তবে ক্ষয়কারক তরল পরিবহনযোগ্য নয়। দীর্ঘস্থায়ী এসব পাইপ কঠিন ও নমনীয় উভয় প্রকারের পাওয়া যায়।

পলিবিউটিলিন (Polybutylyne) পাইপ

এ পাইপগুলোকে একসময় পেটা লোহার পাইপের বিকল্প ভাবা হতো। পিভিসির মতো একপ্রকার প্লাস্টিকের পাইপ। পলিবিউটিলিন পাইপের বাজারে নতুন দিনের সূচনা করেছিল গত শতকের ‘৮০র দশকে। তবে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার কমে আসে সংযুক্তির সমস্যার কারণে। দামে কম এই পাইপের সমস্যা একটাই, সংযোজন স্থানে সহজে লিক হয়, ফেটে যায়।

এবিএস পাইপ

অল্প দামে অধিক কর্মসম্পাদনের জন্য এবিএস পাইপ উপযোগী। এ পাইপ ক্ষয়কারী রাসায়নিক সহনশীল এবং মোটামুটি মাত্রায় তাপ সহনীয়। এবিএস পাইপ সাধারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থায়, ছোট খাল বা নালায় ব্যবহার করা হয়।

ব্রাস (Brass) বা পিতলের পাইপ

পিতলের পাইপ যেকোনো দিক বিবেচনায় অন্য অনেক পাইপের তুলনায় অত্যন্ত কর্ম-উপযোগী। কারণ এ পাইপের চাপ ও তাপ সহনক্ষমতা বেশি, ক্ষয়রোধী, মরচে ধরে না, এবং দীর্ঘদিন টেকে। কিন্তু বড় পরিসরের কাজে এই পাইপ সাধারণত ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিচেন সিংকে, পানির কলে বা বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক অভ্যন্তরীণ কাজে পিতলের পাইপ ব্যবহার করা হয়।

হাই ডেনসিটি পলিইথিলিন (High-Density Polyethylene) বা এইচডিপিই পাইপ

এইচডিপিই পাইপগুলো বাজারে পিভিসি শ্রেণীর পাইপের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের। এ পাইপগুলো অনেক বেশি চাপ সহনশীল। যেকোনো ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো ৯০° কোণ পর্যন্ত বাঁকানো যায়। ৫০ বছর অনায়াসেই টিকে যেতে পারে এগুলো, যদি না চরম পরিস্থিতির শিকার হয়। দাম সহনশীল হওয়ায় এ পাইপের ব্যবহারও জনপ্রিয়, বিশেষ করে শিল্প-কারখানার পানি সরবরাহে।

ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমে ব্যবহৃত পাইপের রকমফের: কোনটি কেন ব্যবহৃত হয়, সুবিধা-অসুবিধা

ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম বা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। পানি সরবরাহের পাইপ যদি টেকসই ও চাপ সহনক্ষম না হয়, তাহলে পুরো নির্মাণকাজই নস্যাৎ হতে পারে। পাইপ ফেটে চুইয়ে পানি পড়া ঘরের দেয়ালের রঙ নষ্ট করা থেকে শুরু করে পলেস্তারা খসানো, শেওলা জমানো, এমনকি দেয়াল-ছাদের গাঁথুনি পর্যন্ত দুর্বল করে দিতে পারে। তাই বাসাবাড়ি, অফিস ও শিল্পকারখানা- যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণে পাইপ নিয়ে যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।

অবকাঠামো নির্মাণে পানি সরবরাহের পাইপের রয়েছে রকমফের। সবকাজে সবরকম পাইপ মানানসই না। পানি সরবরাহের জন্য সবচেয়ে মানানসই পাইপগুলো কোনটি কী কাজে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যাপারে জানা যাক চলুন।

কাস্ট আয়রন (Cast Iron) বা ঢালাই লোহার পাইপ

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বাধিক ব্যবহৃত পাইপের নাম কাস্ট আয়রন পাইপ বা ঢালাই লোহার পাইপ। এই পাইপ এর ক্ষয়রোধী ক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়িত্ব আর অন্যান্য পাইপের তুলনায় সাশ্রয়ী হবার জন্য এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ঢালাই লোহার পাইপ ৫ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১২০ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি ব্যাসের হতে পারে, লম্বায় ১২ ফুট থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত। বিশেষ কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে ঢালাই লোহার পাইপ ১০০ বছর বা তারও বেশি টিকে থাকতে পারে। ব্যবহারবিধি অনুযায়ী এই পাইপের ঘনত্বও ভিন্ন হয়।

ঢালাই লোহার পাইপের আরেকটি বড় সুবিধা হলো সহজ সংযুক্তি। এই পাইপ একটির সাথে আরেকটি সহজে সংযুক্ত করে বা প্রয়োজন অনুযায়ী আকৃতিতে কেটে নেয়া যায়।

এটি ব্যবহারের প্রধান অসুবিধা হলো মরিচা পড়া। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে এই পাইপের উপর সহজেই মরিচা ধরে, শৈবাল জমে এবং পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপ (Galvanised Iron Pipe)

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপকে সংক্ষেপে জিআই পাইপ বলা হয়। এটি সাধারণ স্টিল বা ইস্পাতের পাতের উপর গ্যালভানাইজ করে তৈরি করা হয়। সহজ ভাষায় বললে, ইস্পাতের পাইপ তৈরি করে তা জিংকের মিশ্রণে ডোবানো হয় নতুন আস্তরণের জন্য। এ প্রক্রিয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। জিআই পাইপ বৃহৎ পরিসরের কোনো কাজে ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত ১২ মিলিমিটারের সরু পাইপ থেকে শুরু করে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ব্যাসের জিআই পাইপ তৈরি করা হয়। লম্বায় এসব পাইপ ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জিআই পাইপও তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের। বাসা-বাড়িতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের লাইনের জন্য এই পাইপ ব্যবহার করা হয়। ব্যাস কম হওয়ায় এটি সহজেই দেয়ালের ভেতর দিয়ে স্থাপন করা যায়। এছাড়াও এটি পাতলা এবং সহজে কাটা ও জোড়া দেয়া যায়।

জিআই পাইপ ব্যবহারের অসুবিধা হলো এর স্থায়িত্ব। এটি ১০ বছরের বেশি স্থায়ী হয় না। আবার পানি কিছুটা অম্লীয় বা ক্ষারীয় হলে এই পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

রট আয়রন (Wrought Iron) বা পেটা লোহার পাইপ

জিআই পাইপের সাথে রট আয়রন বা পেটা লোহার পাইপের একমাত্র পার্থক্য হলো এতে গ্যালভানাইজিং করা হয় না, পেটা লোহার পাত ওয়েল্ডিং (ঝালাই) করে এই পাইপ তৈরি করা হয়।

পেটা লোহার ব্যবহারবিধিও অনেকটা জিআই পাইপের মতো- পানি, গ্যাস, ইত্যাদি পরিবহনে ব্যবহার করা হয় এটি। তবে পার্থক্য এর প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবহারবিধির বৈচিত্র্যে।

পেটা লোহার পাইপ জিআই পাইপের তুলনায় হালকা, সহজে কাটা যায়, জোড়া লাগানো যায় এবং যেকোনো আকৃতিতে বাঁকিয়ে ব্যবহার করা যায়। ১২ মিলিমিটার থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের পেটা লোহার পাইপ মূলত যেসব কাজে পাইপ অধিক পরিমাণ কাটা বা জোড়া লাগানোর প্রয়োজন হয়, সেসব কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পাইপ জোড়া লাগানোর তিনটি উপায় আছে- সকেট সংযোজন (Socket joint), ফ্ল্যাংড সংযোজন (Flanged joint) এবং ওয়েল্ডেড সংযোজন (Welded joint)।

স্টিল (Steel) বা ইস্পাতের পাইপ

জিআই পাইপ আর পেটা লোহার পাইপের সাথে স্টিলের পাইপের পার্থক্য হলো ব্যবহারবিধিতে। এই পাইপ সাধারণত অ

ধিক চাপে পানি, গ্যাস বা যেকোনো তরল সরবরাহের জন্য সংক্ষিপ্ত পরিসরের লাইনে ব্যবহার করা হয়। স্টিলের শিট ব্যবহার করে তৈরি করা এ পাইপেও জিআই পাইপের মতো জিংক সল্যুশন ব্যবহার করে অতিরিক্ত একটি আবরণ বা গ্যালভানাইজিং ব্যবহার করা হয়। স্টিলের পাইপ আকারে ছোট, পাতলা এবং অত্যন্ত মসৃণ। এসিড বা ক্ষারের সংস্পর্শে না এলে এ পাইপ সহজেই ২০-২৫ বছর টিকে যায়, মরিচাও পড়ে না।

কপারের পাইপ (Copper)

লোহা ও ইস্পাতের তুলনায় কপার বা তামা বেশ দামী। তাই কপারের পাইপ সাধারণত সীমিত পরিসরে বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যখন পানি সরবরাহের অংশের সাথে শ্রী-বৃদ্ধির ব্যাপার যুক্ত থাকে, তখন এই পাইপ ব্যবহার করা হয়।

কপারে মরিচা ধরে না, তাই এর পাইপ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। গরম পানি পরিবহনে এই পাইপ সবচেয়ে বেশি উপযোগী। অত্যধিক তাপেও কপারের পাইপের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অসুবিধা ঘটে চাপে। নরম ধাতু হওয়ায় অধিক চাপে এই পাইপ ক্ষয় হয়ে যেতে পারে বা ভেঙে যেতে পারে।

প্লাস্টিকের পাইপ (Plastic pipe)

প্লাস্টিকের পাইপ সাধারণ রাবার বা পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) দিয়ে তৈরি। পিভিসি পাইপ আজকাল বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। কেননা, এই পাইপ চাপ সহনীয়, ক্ষয়রোধী, মরিচা ধরার কোনো সম্ভাবনাই নেই, সহজে শেওলাও জমে না। এতে পানি, গ্যাস ছাড়াও অম্ল বা ক্ষার পরিবহন করলেও ক্ষয় হয় না।

প্লাস্টিকের পাইপও সহজেই কাটা যায়, আর যেকোনো মাপ অনুযায়ী জোড়া লাগানো যায়। ইউনিয়ন বা রিভেট ব্যবহার করে এই পাইপ জোড়া দেয়া হয়। প্লাস্টিকের পাইপের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো তাপ অসহনশীলতা। অধিক তাপে এই পাইপ অকার্যকর হয়ে পড়ে, ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

এসব পাইপ ছাড়াও অধিক পরিমাণ পানি সরবরাহের জন্য, বিশেষ করে শিল্প কারখানায় অ্যাসবেস্টসের পাইপ (Asbestos Pipe), কংক্রিট পাইপ (Concrete Pipe) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অবশ্য পয়ঃনিষ্কাশনেই এ পাইপগুলো অধিক ব্যবহারোপযোগী।

কংক্রিট ফিনিশিংয়ের রকমফের

প্রাচীনকালে বসতবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো মাটি, চুন, সুড়কি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে রোমানরা প্রথম অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন বস্তুর মিশ্রণে একধরনের মিশ্রণ ব্যবহার শুরু করে। বালু, চুন, সুড়কির সাথে পরিমাণমতো পানি দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণ কংক্রিট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অবকাঠামো নির্মাণে। আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই রোমানদের মাঝে কংক্রিট অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান হিসেবে প্রচলিত হয় এবং কালের পরিক্রমায় কংক্রিটের মিশ্রণে চুনকে প্রতিস্থাপন করে সিমেন্ট।

কংক্রিটের ব্যবহার যেমন সহজ, তেমনই নিরাপদ ও বহুমাত্রিক। অবকাঠামোতে যেকোনো প্রকার ডিজাইন প্রয়োগেই কংক্রিট ব্যবহার করা যায়। কংক্রিটের ফিনিশিংয়ের রকমভেদের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে সৃজনশীল নির্মাণশৈলির নান্দনিকতা।

. ট্রোয়েল ফিনিশ

রাজমিস্ত্রী একপ্রকার হাতলযুক্ত মসৃণ স্টিলের গঠন নিয়ে কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর বারবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছেন- এই দৃশ্য আমাদের সকলের নিকটই সুপরিচিত। এরূপ ফিনিশিংকেই মূলত ট্রোয়েল ফিনিশিং বলা হয়। এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ফিনিশিং। মূলত কংক্রিটের ঢালাইয়ের কাজ হয়ে গেলে পৃষ্ঠতল মসৃণ ও সমতল করে দেয়াই ট্রোয়েল ফিনিশ। রাজমিস্ত্রীদের হাতে সচরাচর দেখা ম্যানুয়াল ট্রোয়েলের পাশাপাশি আজকাল যান্ত্রিক ট্রোয়েলের ব্যবহারও বেড়েছে।

২. ব্রুম ফিনিশ

এ ধরনের কংক্রিট ফিনিশে কংক্রিটের পৃষ্ঠতল মসৃণ রাখা হয় না। অবশ্য অনেকে একে ট্রোয়েলড-ব্রুমও বলে থাকে এজন্য যে ট্রোয়েল দিয়ে প্রথমে কংক্রিট মসৃণ করে সমতল করার পরই এর উপর ব্রুম বা ঝাঁটা দিয়ে টেনে টেনে একে অমসৃণ করা হয়। ব্রুম ফিনিশিংয়ে সময়ের ব্যাপারে বিশেষ সাবাধান হতে হয়। ট্রোয়েলের কাজ শেষ হবার সাথে সাথেই ব্রুমের কাজ শুরু করে দিতে হয়, অন্যথায় সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তা করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ফিনিশিং প্রধানত পৃষ্ঠতল যেন পিচ্ছিল না হয়ে যায় সে উদ্দেশ্যে করা হয়।

. স্ট্যাম্পড ফিনিশ

নাম থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব, কেননা স্ট্যাম্পড কংক্রিট ফিনিশিংয়ে আক্ষরিক অর্থেই কংক্রিটের উপর স্ট্যাম্পিং করা হয়। কংক্রিটের ঢালাই যথাযথভাবে ট্রোয়েল দিয়ে মসৃণ করার পর কংক্রিট নরম থাকতেই তার উপর কোনো নমুনা বস্তু দিয়ে চেপে সেটির আকৃতি ফুটিয়ে তোলার নাম স্ট্যাম্পড ফিনিশ। এটি মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে। স্ট্যাম্পড করার পর কংক্রিটের মেঝে দেখতে পাথর, স্লেট, ইট কিংবা যথাযথ উপায়ে করতে পারলে কাঠের মতোও হয়। বাসাবাড়িতে সাইডওয়াক কিংবা রাস্তায় ফুটপাতে, গাড়ির গ্যারেজে এ ধরনের ফিনিশিং দেয়া হয়।

. সল্ট ফিনিশ

সদ্য ঢালাই করা কংক্রিটের উপর এবড়োথেবড়ো ক্রিস্টাল আকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথড়ের টুকরো ফেলে তা রোলার দিয়ে চেপে মসৃণ করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে সল্ট ফিনিশিং বলে। কংক্রিট শক্ত হবার পর মেঝেটি ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সল্ট ফিনিশিংয়ের সৌন্দর্য বোঝা যায়। অবশ্য সৌন্দর্য এখানে গৌন ব্যাপার। মুখ্য হলো মেঝে পিচ্ছিলরোধী করা। সাধারণ সুইমিংপুলে এ ধরনের ফিনিশিং ব্যবহার করা হয় যার উপর সহজে শ্যাওলা পড়ে না কিংবা পিচ্ছিল হয়ে যায় না।

৫. এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ

এটাও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। মূলত ট্রোয়েলড ফিনিশের উপর অতিরিক্ত একস্তরের কংক্রিট বা সিমেন্ট যোগ করাই এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ। প্রথমে ট্রোয়েল দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই মসৃণ করা হয়। এরপর তা থেকে কয়েক মিলিমিটারের মতো চিকন একটি আবরণ পাওয়ার ফ্ল্যাটার বা ডায়মন্ড পলিশার দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই আবরণ উঠিয়ে নিলে ভেতরের কংক্রিটের পৃষ্ঠতল আরো মসৃণ হয়। এরপর তার উপর সিমেন্টের মিশ্রণের একটি অতিরিক্ত লেয়ার যোগ করা হয় যা একে অত্যন্ত মসৃণ এবং তকতকে করে তোলে।

. সোয়ার্ল ফিনিশ

কংক্রিটের ফিনিশের নানা রকমভেদের মাঝে এটি সবচেয়ে সৃজনশীলগুলোর একটি। প্রথম কংক্রিটের আবরণ সমতল করার পর তার উপর জ্যামিতিক মাপ ঠিক রেখে অভিন্ন পরিমাণ এবং আকার বজায় রেখে কংক্রিট মিশিয়ে দেয়া হয়। ফলে মেঝের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কংক্রিটের বৃত্তাকার গঠন তৈরি হয় যা মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একইসাথে হাঁটাচলার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়, কেননা এতে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

অবশ্য এটি ঘরের বাইরের মেঝেতেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যেসব স্থানে অধিক হাঁটাচলা হয় এবং মানুষের পায়ের ঘর্ষণে মেঝে খুব দ্রুতই ক্ষয় হয়ে কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেসব স্থানে এই প্রক্রিয়ায় কংক্রিটের ফিনিশিং দেয়া হয়। সোয়ার্ল ফিনিশিংয়ের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না, কারণ এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।

. পলিশড ফিনিশ

পলিশড ফিনিশ মূলত এরূপ যে মেঝে টাইলসের মতো মসৃণ ও আরামদায়ক হবে এবং তা এতটাই চকচকে হবে যে তাতে বিভিন্ন বস্তুর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণ বড় হলঘরে, প্রদর্শনীর মেঝেতে এ ধরনের ফিনিশ ব্যবহার করা হয়। পলিশড ফিনিশ যান্ত্রিকভাবেই করা হয়।

. কালারড ফিনিশ

কালারড বা রঙিন ফিনিশ মূলত মেঝেকে রঙিন করার জন্যই করা হয়। মেঝেকে রঙিন করতে দুটি উপায় ব্যবহার করে থাকেন রাজমিস্ত্রীরা। পিগমেন্ট বা একপ্রকার বিশেষ রঞ্জক পদার্থ প্রথমেই কংক্রিটের সাথে মিশিয়ে নেয়া হয় এবং তা ফিনিশিং করলে রঙ ফুটে ওঠে। অথবা কংক্রিট ফিনিশিং সম্পন্ন করে তা শুকিয়ে যাবার পূর্বেই তার উপর পছন্দমতো রঙের স্ট্রেইন প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখকৃত কংক্রিট ফিনিশিংগুলো হলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত কংক্রিটের ফিনিশিং। এগুলো ছাড়াও ডাইড, মার্বেলড, ফ্ল্যাশড, মাইক্রো টপিং, স্যান্ড ব্লাস্টারসহ নানা প্রকারের কংক্রিট ফিনিশিং রয়েছে।