বাড়ি দোতলা করবার পূর্বে মাথায় রাখতে হবে যে বিষয়গুলো

আপনার বাড়িটি যদি হয় একতলা, আর তার ভিত্তিপ্রস্তর যদি দোতলা বা আরো অধিক উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির উর্ধ্বমুখী গমনই শ্রেয়। এতে আপনার সীমিত জমির সদ্ব্যবহার হবে, পাশাপাশি বাসা ভাড়া থেকে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থাও হবে।

তবে একতলা বাড়ির ওপর আরেকটি ছাদ দিয়ে ফেলা অতটা সহজ নয়, অন্তত ঠান্ডা মাথায় ভাবলে তো নয়ই। দীর্ঘস্থায়িত্ব, খরচ আর নির্মাণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একতলা বাড়ির ওপর দ্বিতীয় ফ্লোরের প্রসারণ কাজের জন্য অবশ্যই কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে।

আবহাওয়া

বাড়ির প্রসারণ পরিকল্পনায় সবার আগে ভাবতে হবে আবহাওয়া নিয়ে। নির্মাণকাজের জন্য সর্বদাই শুষ্ক মৌসুম মানানসই। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনা করলে হেমন্তের শেষ থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে ভালো সময়। হঠাৎ ঝড়ো আবহাওয়া সব কাজে তালগোল পাকানো কিংবা টানা বর্ষণে কাজ থমকে থাকার ঝামেলা এ সময়ে হয় না।

বাজারদর কাঁচামাল ক্রয়

আবহাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রেখে যদি দোতলা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, তাহলে পরবর্তী ধাপ হবে বাজার যাচাই করা। ছোটখাট বিষয়গুলো যদি ধর্তব্যের মাঝে না-ও আনা হয়, তথাপি বাড়ি নির্মাণের প্রধানতম কাঁচামালগুলো, অর্থাৎ ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের বাজার অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে।

এসব বাজার সম্পর্কে যেহেতু নিত্যদিন খবর রাখা হয় না, তাই ভুলভাল দামে ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি না আপনি অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করেন। এছাড়া, নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাজার দ্রুত ওঠানামা করে। মাসখানেকের ব্যবধানে আপনার বাড়ি নির্মাণের খরচ কয়েক লক্ষ টাকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। তাই কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন, বাজার অস্থিতিশীল থাকলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।

বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই ক্রয় শুরু করতে পারেন, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রতিটি কাঁচামাল আলাদা আলাদা দিনে একাধিক বিক্রেতার কাছে দেখার পর কিনতে হবে। ভালো কাঁচামাল বাড়ির নির্মাণকে ত্রুটিমুক্ত করে, বাড়ি টেকসই হয়।

বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নকশা প্রণয়ন

একসময় নীচতলার ডিজাইন ধরে রেখেই উপরের দিকে বাড়ানো হতো বাড়ি। তবে এখন আর মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। নীচতলার নকশা হুবহু অনুকরণ না করে ভিন্নতা আনতে পারেন দ্বিতীয় তলায়, বিশেষ করে নীচতলায় বসবাসকালীন যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলোর সমাধান তো আনা যায়ই।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট। নকশা কতটা সৌখিন আর নান্দনিক হবে তা নির্ভর করবে পুরো কাজে আপনি কতটুকু ব্যয় করতে প্রস্তুত তার ওপর। দক্ষ কোনো স্থপতির সাথে পরামর্শ করে তাই নকশা প্রণয়ন করে ফেলুন; পরিচিত হলে আরো ভালো, এতে বাজেটের মাঝে সর্বোচ্চটা পাবার নিশ্চয়তা থাকে।

অপ্রত্যাশিতখরচের বাজেট আলাদা রাখুন

হ্যাঁ, বাড়ি নির্মাণকালে সর্বনিম্ন বাজেটে সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করবার লক্ষ্য যেমন থাকবে, তেমনি মনে রাখতে হবে যে বাড়ির এক্সটেনশন একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ, এবং এ কাজে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক খরচ হবে। তাই মূল বাজেটের একটা অংশ সরিয়ে রাখুন অপ্রত্যাশিত যেকোনো খরচের জন্য, যা পরিকল্পনা তৈরির সময় দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই টাকা বাদে বাড়ির মূল কাঠামোর বাজেট করতে হবে।

নির্মাণআইন মাথায় রাখুন

নির্মাণকাজে সম্ভবত আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত দিকটি হলো নির্মাণ-আইন। নির্মাণ-আইন মেনে চলা আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। পাশাপাশি আইন মেনে নির্মাণকাজ করলে কোনোপ্রকার আইনি জটিলতার সম্ভাবনাও থাকে না।

নিরাপত্তা সবার আগে

নির্মাণকাজ শুরুর আগেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে হবে। প্রথমত, যেহেতু আপনার বসবাসরত বাসার উপরেই প্রসারণ কাজ হবে, এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা। তাছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কখনো কখনো প্রাণহানিও হয়। একদিকে প্রাণহানি কাম্য নয়, অন্যদিকে আইনি জটিলতায় পড়ে আটকে যেতে পারে পুরো নির্মাণকাজ। তাই প্রচলিত নিরাপত্তা আইন মেনে সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেই নির্মাণকাজ শুরু করুন।

বিশ্বস্ত বিল্ডার (নির্মাতা)

বেশ কিছু কারণে বিল্ডার নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই বাজেটের সাথে সঙ্গতি রেখে সুনাম আছে এরকম বিল্ডার কিংবা আপনার বা আপনার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরিচিত বিল্ডারের কাছেই যান। এক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয়ে সঠিক পরামর্শ বিল্ডারদের নিকটই পাবেন, বাড়ির নকশায় কোনো ত্রুটি থাকলে, কিংবা উন্নতির সুযোগ থাকলে সেই বিষয়টিও তারা আপনার দৃষ্টিগোচর করতে পারবে। আদৌ যদি পরিচিত বিল্ডার না থাকে, তাহলে একাধিক বিল্ডারের সাথে কথা বলুন, আপনার বাজেট এবং পরিকল্পনা জানিয়ে তাদের নির্মাণপ্রক্রিয়া, কাল (নির্মাণকাজের একটি টাইমলাইন) এবং বাজেট জানাতে বলুন। এরপর তাদের পরিকল্পনা তুলনা করে নিজেই ধারণা করতে পারবেন কোনটি ভালো হবে।

একটি ইনস্যুরেন্স করে ফেলুন

সবকিছু ঠিকঠাক হবার পর একটি ইনস্যুরেন্স করিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিন। নির্মাণকাজ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পূর্বের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। তথাপি সাবধানতার মার নেই। যেকোনো নির্মাণকাজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্মাণ শুরুর পূর্বেই করে ফেলুন একটি ইনস্যুরেন্স, যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতি সামাল দেয়া যায়।

ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমে ব্যবহৃত পাইপের রকমফের: কোনটি কেন ব্যবহৃত হয়, সুবিধা-অসুবিধা

ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম বা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। পানি সরবরাহের পাইপ যদি টেকসই ও চাপ সহনক্ষম না হয়, তাহলে পুরো নির্মাণকাজই নস্যাৎ হতে পারে। পাইপ ফেটে চুইয়ে পানি পড়া ঘরের দেয়ালের রঙ নষ্ট করা থেকে শুরু করে পলেস্তারা খসানো, শেওলা জমানো, এমনকি দেয়াল-ছাদের গাঁথুনি পর্যন্ত দুর্বল করে দিতে পারে। তাই বাসাবাড়ি, অফিস ও শিল্পকারখানা- যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণে পাইপ নিয়ে যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।

অবকাঠামো নির্মাণে পানি সরবরাহের পাইপের রয়েছে রকমফের। সবকাজে সবরকম পাইপ মানানসই না। পানি সরবরাহের জন্য সবচেয়ে মানানসই পাইপগুলো কোনটি কী কাজে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যাপারে জানা যাক চলুন।

কাস্ট আয়রন (Cast Iron) বা ঢালাই লোহার পাইপ

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বাধিক ব্যবহৃত পাইপের নাম কাস্ট আয়রন পাইপ বা ঢালাই লোহার পাইপ। এই পাইপ এর ক্ষয়রোধী ক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়িত্ব আর অন্যান্য পাইপের তুলনায় সাশ্রয়ী হবার জন্য এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ঢালাই লোহার পাইপ ৫ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১২০ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি ব্যাসের হতে পারে, লম্বায় ১২ ফুট থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত। বিশেষ কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে ঢালাই লোহার পাইপ ১০০ বছর বা তারও বেশি টিকে থাকতে পারে। ব্যবহারবিধি অনুযায়ী এই পাইপের ঘনত্বও ভিন্ন হয়।

ঢালাই লোহার পাইপের আরেকটি বড় সুবিধা হলো সহজ সংযুক্তি। এই পাইপ একটির সাথে আরেকটি সহজে সংযুক্ত করে বা প্রয়োজন অনুযায়ী আকৃতিতে কেটে নেয়া যায়।

এটি ব্যবহারের প্রধান অসুবিধা হলো মরিচা পড়া। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে এই পাইপের উপর সহজেই মরিচা ধরে, শৈবাল জমে এবং পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপ (Galvanised Iron Pipe)

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপকে সংক্ষেপে জিআই পাইপ বলা হয়। এটি সাধারণ স্টিল বা ইস্পাতের পাতের উপর গ্যালভানাইজ করে তৈরি করা হয়। সহজ ভাষায় বললে, ইস্পাতের পাইপ তৈরি করে তা জিংকের মিশ্রণে ডোবানো হয় নতুন আস্তরণের জন্য। এ প্রক্রিয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। জিআই পাইপ বৃহৎ পরিসরের কোনো কাজে ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত ১২ মিলিমিটারের সরু পাইপ থেকে শুরু করে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ব্যাসের জিআই পাইপ তৈরি করা হয়। লম্বায় এসব পাইপ ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জিআই পাইপও তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের। বাসা-বাড়িতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের লাইনের জন্য এই পাইপ ব্যবহার করা হয়। ব্যাস কম হওয়ায় এটি সহজেই দেয়ালের ভেতর দিয়ে স্থাপন করা যায়। এছাড়াও এটি পাতলা এবং সহজে কাটা ও জোড়া দেয়া যায়।

জিআই পাইপ ব্যবহারের অসুবিধা হলো এর স্থায়িত্ব। এটি ১০ বছরের বেশি স্থায়ী হয় না। আবার পানি কিছুটা অম্লীয় বা ক্ষারীয় হলে এই পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

রট আয়রন (Wrought Iron) বা পেটা লোহার পাইপ

জিআই পাইপের সাথে রট আয়রন বা পেটা লোহার পাইপের একমাত্র পার্থক্য হলো এতে গ্যালভানাইজিং করা হয় না, পেটা লোহার পাত ওয়েল্ডিং (ঝালাই) করে এই পাইপ তৈরি করা হয়।

পেটা লোহার ব্যবহারবিধিও অনেকটা জিআই পাইপের মতো- পানি, গ্যাস, ইত্যাদি পরিবহনে ব্যবহার করা হয় এটি। তবে পার্থক্য এর প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবহারবিধির বৈচিত্র্যে।

পেটা লোহার পাইপ জিআই পাইপের তুলনায় হালকা, সহজে কাটা যায়, জোড়া লাগানো যায় এবং যেকোনো আকৃতিতে বাঁকিয়ে ব্যবহার করা যায়। ১২ মিলিমিটার থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের পেটা লোহার পাইপ মূলত যেসব কাজে পাইপ অধিক পরিমাণ কাটা বা জোড়া লাগানোর প্রয়োজন হয়, সেসব কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পাইপ জোড়া লাগানোর তিনটি উপায় আছে- সকেট সংযোজন (Socket joint), ফ্ল্যাংড সংযোজন (Flanged joint) এবং ওয়েল্ডেড সংযোজন (Welded joint)।

স্টিল (Steel) বা ইস্পাতের পাইপ

জিআই পাইপ আর পেটা লোহার পাইপের সাথে স্টিলের পাইপের পার্থক্য হলো ব্যবহারবিধিতে। এই পাইপ সাধারণত অ

ধিক চাপে পানি, গ্যাস বা যেকোনো তরল সরবরাহের জন্য সংক্ষিপ্ত পরিসরের লাইনে ব্যবহার করা হয়। স্টিলের শিট ব্যবহার করে তৈরি করা এ পাইপেও জিআই পাইপের মতো জিংক সল্যুশন ব্যবহার করে অতিরিক্ত একটি আবরণ বা গ্যালভানাইজিং ব্যবহার করা হয়। স্টিলের পাইপ আকারে ছোট, পাতলা এবং অত্যন্ত মসৃণ। এসিড বা ক্ষারের সংস্পর্শে না এলে এ পাইপ সহজেই ২০-২৫ বছর টিকে যায়, মরিচাও পড়ে না।

কপারের পাইপ (Copper)

লোহা ও ইস্পাতের তুলনায় কপার বা তামা বেশ দামী। তাই কপারের পাইপ সাধারণত সীমিত পরিসরে বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যখন পানি সরবরাহের অংশের সাথে শ্রী-বৃদ্ধির ব্যাপার যুক্ত থাকে, তখন এই পাইপ ব্যবহার করা হয়।

কপারে মরিচা ধরে না, তাই এর পাইপ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। গরম পানি পরিবহনে এই পাইপ সবচেয়ে বেশি উপযোগী। অত্যধিক তাপেও কপারের পাইপের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অসুবিধা ঘটে চাপে। নরম ধাতু হওয়ায় অধিক চাপে এই পাইপ ক্ষয় হয়ে যেতে পারে বা ভেঙে যেতে পারে।

প্লাস্টিকের পাইপ (Plastic pipe)

প্লাস্টিকের পাইপ সাধারণ রাবার বা পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) দিয়ে তৈরি। পিভিসি পাইপ আজকাল বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। কেননা, এই পাইপ চাপ সহনীয়, ক্ষয়রোধী, মরিচা ধরার কোনো সম্ভাবনাই নেই, সহজে শেওলাও জমে না। এতে পানি, গ্যাস ছাড়াও অম্ল বা ক্ষার পরিবহন করলেও ক্ষয় হয় না।

প্লাস্টিকের পাইপও সহজেই কাটা যায়, আর যেকোনো মাপ অনুযায়ী জোড়া লাগানো যায়। ইউনিয়ন বা রিভেট ব্যবহার করে এই পাইপ জোড়া দেয়া হয়। প্লাস্টিকের পাইপের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো তাপ অসহনশীলতা। অধিক তাপে এই পাইপ অকার্যকর হয়ে পড়ে, ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

এসব পাইপ ছাড়াও অধিক পরিমাণ পানি সরবরাহের জন্য, বিশেষ করে শিল্প কারখানায় অ্যাসবেস্টসের পাইপ (Asbestos Pipe), কংক্রিট পাইপ (Concrete Pipe) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অবশ্য পয়ঃনিষ্কাশনেই এ পাইপগুলো অধিক ব্যবহারোপযোগী।

প্লাস্টার ফিনিশিং-এর প্রকারভেদ

প্লাস্টার (পলেস্তারা) ফিনিশিং কী? সহজ ভাষায়- দেয়াল নির্মাণের পর তার মসৃণ বহিরাবরণ করার নামই প্লাস্টার ফিনিশিং। অবশ্য প্লাস্টার ফিনিশিং সর্বদাই মসৃণ হবে- এমন ভাবলে ভুল করবেন। দেয়ালের সুরক্ষা আর স্থায়িত্বের পাশাপাশি প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য দেয়ালকে নান্দনিক করে তোলা। আর নান্দনিকতার স্বার্থে প্লাস্টার সবসময় মসৃণ না-ও হতে পারে।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের কথা, যার নান্দনিক দর্শন ছাড়িয়ে যায় ব্যবহারিক গুণকেও।

পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ (Peeble Dash Plaster Finish)

নামের মতো প্লাস্টার ফিনিশের এ ধরনটি তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ মজার। সদ্য বসানো মসৃণ করা সিমেন্ট/কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর ছোট ছোট নুড়ি পাথরের টুকরো কিংবা অন্যান্য পাথরের টুকরো পরিমাণ মতো ফেলে পিবল ড্যাশ প্লাস্টার ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক সিমেন্টের ঢালাই অন্তত ১ মিলিমিটার পুরু হতে হবে, অন্যথায় পাথরের গুঁড়ো তাতে স্থায়ী হবে না। প্রস্তুতি থেকেই অনুধাবনযোগ্য যে এই ফিনিশিং মসৃণ নয়, বরং রুক্ষ হয়। সাধারণ বাড়ির সীমানা দেয়ালের বহিরাবরণে এই ফিনিশিং দেয়া হয়, যা একইসাথে সৌন্দর্যবর্ধন করে এবং দেয়ালকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে।

স্ক্র্যাপড প্লাস্টার ফিনিশ (Scrapped Plaster Finish)

প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের এই ধরনের জন্য অন্তত ৬ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ১২ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরুত্বের কংক্রিট/সিমেন্টের ঢালাই প্রয়োজন। প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। প্রথমে সিমেন্টের ঢালাই যথাযথভাবে মসৃণ করে কয়েক ঘন্টা শুকাতে হবে। ঢালাই মোটামুটি শক্ত হয়ে এলে তার বহিরাবরণ ধারালো লোহার যন্ত্র বা অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে চেঁছে তুলে ফেলা হয়। এ কারণেই একে বলা হয় স্ক্র্যাপড প্লাস্টার (ছাঁটা প্লাস্টার)। এটি সৌন্দর্যবর্ধনে তেমন উপযোগী না হলেও দেয়াল বা মেঝেকে পিচ্ছিলরোধী করতে যথেষ্ট উপযোগী। অবশ্য স্ক্র্যাপ করবার উপকরণভেদে এই প্লাস্টার দেখতে একেকরকম হয়।

স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ (Stucco Plaster Finish)

স্টাকো প্লাস্টার ফিনিশ ঘরের বহির্ভাগ কিংবা অভ্যন্তর, উভয় ক্ষেত্রেই মানানসই। এটি মূলত তিন স্তরের প্লাস্টার, যে কারণে বেশ পুরু হয়ে থাকে, প্রায় ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। প্রথম আবরণকে বলা হয় স্ক্র্যাচ কোট (Scratch Coat), দ্বিতীয়টিকে ফাইনার কোট (Finer Coat), এবং সবার শেষে ফিনিশিং কোট (Finishing Coat) বা হোয়াইট কোট (White Coat)। এটি সম্পূর্ণ মসৃণ না হলেও এবড়োথেবড়োও নয় বটে।

স্মুদ কোট ফিনিশ (Smooth Coat Finish)

প্লাস্টার ফিনিশিংয়ের মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হলো স্মুদ কোট ফিনিশ। এটি দেয়ালের মসৃণ, সমতল ফিনিশ যা ১ ভাগ বালু আর ৩ ভাগ সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে সমতল করে দেয়ালে বসানো হয়।

স্যান্ড ফিনিশ প্লাস্টার (Sand Finish Plaster)

এটাও প্লাস্টার করার একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় দেয়ালে দুবার প্লাস্টার করা হয়। প্রথমবার ১২ মিলিমিটার পুরু অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টার করা হয় যাতে সিমেন্ট-বালুর অনুপাত থাকে ১:৪। প্রথম আবরণ সপ্তাহখানেক শুকানোর পর শুরু হয় দ্বিতীয় আবরণের কাজ। এই আবরণের জন্য সমান অনুপাতে বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করা হয় এবং অমসৃণ প্রাথমিক প্লাস্টারের উপর ৬ মিলিমিটার পুরু প্লাস্টার দিয়ে তা মসৃণ করা হয়।

টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ (Textured Plaster Finish)

বালু, সিমেন্ট, চুন আর পানির পর্যাপ্ত মিশ্রণে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন প্রকার তন্তু ও রঞ্জক মিশ্রিত করে টেক্সচারড প্লাস্টার ফিনিশ তৈরি করা হয়। এটি মূলত স্টাকো প্লাস্টারিংয়েরই একটি প্রকারভেদ। ভিন্নতা কেবল এতটুকু যে এটি স্টাকোর তুলনায় অধিক মসৃণ, কেননা, এতে বারংবার প্লাস্টার করা হয় কম পুরু আবরণের। এছাড়াও এটি কিছুটা রঙিনও হয় যা দেয়ালকে দেখতে আকর্ষণীয় করে।

এক্সপোজড এগ্রিগেট প্লাস্টার ফিনিশ (Exposed Aggregate Plaster Finish)

এটি মূলত পিবল ড্যাশ ফিনিশিংয়ের একটি প্রকারভেদ, তবে এটি অধিকতর মসৃণ এবং নান্দনিক। এর প্রক্রিয়ায় অনেকটা একইরকম। এটি ১:১ সিমেন্ট ও সাদা পাথরের কুচির আবরণ। প্রাথমিকভাবে মসৃণ করে ঢালাই বা প্লাস্টার করা কংক্রিটের আবরণ (অন্তত ২০ মিলিমিটার পুরু) নরম থাকতে থাকতে এর উপর সিমেন্ট আর পাথর কুচির দ্বিতীয় আবরণ স্থাপন করা হয় এবং মোটামুটি মসৃণ করা হয়। ফলে পাথরের কুচি দৃশ্যমান থাকে, প্লাস্টারটি দেখতে অমসৃণ, কিন্তু সুন্দর হয়।

স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ (Spatter Dash Finish)

একভাগ বালু আর একভাগ সিমেন্টের মিশ্রণের উপর তিনভাগ পাথরের মিশ্রণ দিয়ে স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ দেয়ালে ৩-১২ মিলিমিটার (প্রয়োজনমতো আরো বেশি হতে পারে) পর্যন্ত পুরু করে একটি আবরণ দেয়া হয়। এই আবরণের উপর পাথরের মিশ্রণ সর্বত্র সমান অনুপাতে দিয়ে কর্ণিক (Trowel) ব্যবহার করে মোটামুটি সমতল করা হয়। মূলত বহিরাবরণের পাথরগুলোর একাংশ বাইরে বেরিয়ে থাকে, সেগুলোকে সমতল করতে পারলেই দারুণ একটি স্প্যাটার ড্যাশ ফিনিশ হয়ে যায়। এই ফিনিশ পানিরোধক, টেকসই এবং সহজে ফাটে না।

আরো কয়েক প্রকার প্লাস্টার

উপরোক্ত প্লাস্টার ফিনিশগুলো সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজলভ্য। এসবের বাইরেও ভবনের নকশা ও প্রয়োজনভেদে আরো কিছু প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন– অ্যাকাউস্টিক (Acoustic) প্লাস্টারে জিপসামের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টার হয়ে গেলে একে মৌচাকের মতো দেখতে দেখায়; অ্যাসবেস্টস (Asbestos) মার্বেল প্লাস্টারে সিমেন্টের মিশ্রণের সাথে অ্যাসবেস্টস আর পাথরের গুঁড়া মেশানো হয় যা বেশ দর্শনীয়। সাধারণ কর্পোরেট অফিসে এরকম প্লাস্টার ফিনিশ ব্যবহার করা হয়; এক্সরে কক্ষের তেজস্ক্রিয়তা যেন বাইরে ছড়াতে না পারে সেজন্য সেখানে বেরিয়াম (Barium) যুক্ত সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করে বেরিয়াম প্লাস্টার ফিনিশ করা হয়; গ্রানাইট আর বালুর মিশ্রণে গ্রানাইট-সিলিকন (Granite-Silicon) প্লাস্টার সাধারণ অফিস কক্ষে দেখা যায়। এটি দেখতে সুন্দর এবং ফাটলরোধী।

নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথরের প্রকারভেদ

নির্মাণকাজে পাথরের ব্যবহার কতকাল আগে শুরু হয়েছে তা বলা মুশকিল। কেননা, পশু শিকার করতে পাথরের হাতিয়ার বানানো মানুষেরা যখন বসতবাড়ি নির্মাণ শিখলো, তা পাথর দিয়েই নির্মাণ করতো, এটি অনুমেয়। ধরে নেয়া যায়, নির্মাণকাজের সবচেয়ে আদিম উপাদান পাথর। দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের জন্য পাথর নির্মাণকাজে বহুল প্রচলিত। বিশেষ করে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ, ছাদ ঢালাই, হাইওয়ে কিংবা ব্রিজের ভায়াডাক্ট তৈরিতে পাথরের বিকল্প নেই। কেননা, এসব স্থাপনা দীর্ঘ সময়ের জন্যই নির্মাণ করা হয়। তবে স্থায়িত্ব ছাড়াও পাথরের ব্যবহার সৌন্দর্যের সাথেও সম্পৃক্ত। দেয়াল বা মেঝের নান্দনিকতা বৃদ্ধিতেও ব্যবহার করা হয় নানা রকমের পাথর।

চলুন, দেখে নেয়া যাক নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু পাথর ও সেসবের ব্যবহারবিধি।

ব্যাসল্ট (Basalt)

নির্মাণকাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাথরগুলোর একটি ব্যাসল্ট। এটি একপ্রকার আগ্নেয় শিলা যা ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পাথর চাপে জমে কঠিন পাথরে পরিণত হয়। এরূপ প্রক্রিয়ার কারণে এর গঠন অত্যন্ত ঘন ও মজবুত, এবং নির্মাণকাজে এর ব্যবহার স্থাপনাকে দৃঢ়তা দেয়। সাধারণ রাজমিস্ত্রীর কাজ থেকে শুরু করে ব্রিজের পিলার নির্মাণ, নদীতে বাঁধ নির্মাণ, কিংবা বৃহৎ স্থাপনায় ব্যাসল্টের কংক্রিটের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।

ব্যাসল্ট সাধারণত ধূসর এবং কালো বর্ণের হয়। এটি অত্যন্ত দৃঢ় হওয়ায় ইচ্ছেমতো আকৃতি প্রদান করা কঠিন। এর দৃঢ়তা ২০০-৩০০ মেগাপ্যাসকেল (Megapascal) প্রেসার ইউনিট বা এমপিএ। আর্দ্রতা ও প্রতিকূল পরিবেশে ব্যাসল্টের সহনশীলতা বেশ ভালো।

গ্রানাইট (Granite)

বড় নির্মাণকাজে, যেমন- ব্রিজের পিলার, বাঁধরক্ষা দেয়াল থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির দেয়ালে আর্দ্রতারোধী আস্তরণ, রেললাইনের স্লিপার, ছাদের বহিরাবরণ ইত্যাদি নির্মাণে গ্রানাইট ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাসল্টের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বেশ দৃঢ় এবং টেকসই একটি পাথর। এর ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এর ভেতরে দীর্ঘদিনেও পানি প্রবেশ করতে পারে না।

গ্রানাইটের দৃঢ়তা ২৫০ মেগাপ্যাসকেল। হালকা ধূসর থেকে কিছুটা গোলাপী রঙেরও হয়ে থাকে গ্রানাইট। এর শোষণক্ষমতা অত্যন্ত কম হওয়ায় যেসব স্থানে অধিক আর্দ্রতা থাকে সেখানে এটি ব্যবহার করা হয়, যেমন- রেস্টুরেন্টের খাবার টেবিলের ওপর কিংবা পিলারের আবরণ হিসেবে।

স্যান্ডস্টোন (Sandstone)

ভাবছেন স্যান্ড বা বালুর আবার পাথর হয় কী করে? স্যান্ডস্টোন আসলেই বালুর পাথর, তবে এর গঠন প্রক্রিয়া দীর্ঘ। অন্যান্য পাথরের ক্ষয় হয়ে যাওয়া ধূলিকণা আর স্ফটিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজের সাথে মিশ্রিত হয়ে সময়ের আবর্তে জমাট বেঁধে শক্ত পাথরের রূপ নিলে তাকে আমরা স্যান্ডস্টোন বলি।

স্যান্ডস্টোন মূলত নির্মাণকাজে সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। লাল, সাদা, হলুদ, ধূসর, কালচে, পীত বর্ণসহ স্যান্ডস্টোন এর বৈচিত্র্যময় রঙের জন্য দেয়াল, সিঁড়ি বা অন্যান্য নির্মাণে সৌখিন উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য বড় বড় নির্মাণকাজেও প্রয়োজনভেদে এই পাথরের ব্যবহার হয়ে থাকে।

চুনাপাথর (Limestone)

চুনাপাথর সকল প্রকার নির্মাণকাজে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এর ঘনত্ব সাধারণত কম হয়, ফাটল থাকে এবং কাদামাটিতে তৈরি হওয়ায় নমনীয় ও ভঙ্গুর হয়। অবশ্য ফাটলহীন, ঘন ও মজবুত চুনাপাথর ঘরের মেঝে, ছাদ কিংবা ফুটপাতের আবরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর একটি অসুবিধা হলো- শিল্পকারখানার দূষিত বাতাসে এবং সমুদ্র তীরবর্তী লবণাক্ত বাতাসে এর ক্ষয় হয়।

মার্বেলপাথর (Marbel)

মাত্র ৭০-৭৫ এমপিএ চাপ সহনশক্তির মার্বেলপাথরের ব্যবহার অনুমিতভাবেই নির্মাণকাজে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না। এটি মূলত নির্মাণশৈলির নান্দনিকতার অংশ। এর সবচেয়ে বড় গুণ হলো একে চমৎকারভাবে পালিশ (Polish) করে ইচ্ছেমতো আকার দেয়া যায় এবং আরামদায়ক, চকচকে ও মসৃণ করা যায়।

মার্বেলপাথর টাইলস নামেই সর্বাধিক পরিচিত। বাসাবাড়ির মেঝে, রান্নাঘর আর গোসলখানায় মার্বেলপাথরের ব্যবহার এখন অবশ্যম্ভাবী। দেয়াল কিংবা পিলারের সৌন্দর্য বাড়াতে মার্বেলের ব্যবহারের বিকল্প নেই। মার্বেলের ওপর নানারকম ডিজাইন করিয়ে কিংবা নাম লিখিয়েও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণকাজে।

স্লেট (Slate)

স্লেট হলো পাললিক শিলাজাত একপ্রকার রূপান্তরিত শিলা যা ভূগর্ভের উচ্চচাপে গঠিত হয়। গঠন ঘন হওয়ায় এই পাথর সমান্তরালে কাটা যায় এবং পালিশ করে মসৃণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। অত্যধিক ভার বহনে অক্ষম হওয়ায় ভবন বা বড় কোনো অবকাঠামো নির্মাণে স্লেট ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত বাড়ির ছাদের ক্ষয়রোধী আস্তরণ, স্ল্যাব, ফুটপাতের কার্পেটিং, মেঝেতে স্লেট ব্যবহার করা হয়।

কোয়ার্টজাইট (Quartzite)

কোয়ার্টজাইটের দৃঢ়তা ৫০-২০০ এমপিএ। এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থাকায় সাধারণ নির্মাণকাজে এর ব্যবহার কম। তবে অধিক মজবুত কোয়ার্টজাইট বিল্ডিং ব্লক, স্ল্যাব, কার্পেটিং, কিংবা কখনো কখনো কংক্রিটের মিশ্রণেও ব্যবহৃত হয়।

কোয়ার্টজাইটের সবচেয়ে উপযোগী ব্যবহার হলো রেলওয়ে ব্যালাস্ট (রেললাইনে বিছিয়ে রাখা পাথর) হিসেবে। তাছাড়া শিল্পজাত সিলিকা বালু প্রস্তুত করার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কোয়ার্টজাইট। মেঝেতে টাইলস হিসেবে, দেয়ালে বা সিঁড়িতে কোয়ার্টজাইটের মসৃণ আকৃতি ব্যবহার করা হয়। হলুদ, ধূসর, সাদাসহ নানা রঙের কারণে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কোয়ার্টজাইটের ব্যবহার জনপ্রিয়। কোয়ার্টজাইটের আরেকটি বড় গুণ হলো- এতে সহজে দাগ পড়ে না, আঁচড় লাগে না, চিটচিটে হয় না। তাই কিচেন কাউন্টারটপ (রান্নাঘরে যে পৃষ্ঠের ওপর খাদ্যদ্রব্য কাটা হয় বা রান্নার উপকরণ প্রস্তুত করা হয়) তৈরিতে কোয়ার্টজাইট একটি আদর্শ উপাদান।

বাড়িকে তাপ-নিরোধক করার কিছু উপায়

বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ শহরগুলোর তালিকায় সম্প্রতি শুরুর দিকে নাম এসেছে ঢাকার। এতে অবশ্য কারো চোখ কপালে ওঠেনি, বরং এটা না হলেই অবাক হতে হতো। ভীষণ ভ্যাপসা গরমের কারণ ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাড়িতেই এখন এয়ার কন্ডিশনিং ও ঘর ঠান্ডা রাখার অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ, সাথে শারীরিক ক্ষতিও হচ্ছে সমানভাবে।

কিন্তু এসি বা অন্যান্য যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেগুলো অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষক, সেগুলো ছাড়াই যদি আপনার বসবাসের ঘরখানি ঠান্ডা রাখা যায়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? না, বিস্ময়সূচক কোনো ব্যাপার নয় এটি। অত্যন্ত সাধারণ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনি আপনার বাড়িকে তাপ নিরোধক করতে পারেন, আর যান্ত্রিকতা ছাড়াই মৌসুমভেদে ঘরের ভেতর আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারেন।

ব্লক ইনসুলেশন

এই ব্লকগুলো সাধারণ উল, কর্কবোর্ড, রাবার, গ্লাস, তুষ, ইত্যাদি উপাদানে তৈরি করা হয়ে থাকে। এগুলো বাড়ির দেয়ালে ও ছাদে লাগানো হয় বাড়িকে তাপ নিরোধক করতে। একটি কার্যকর ব্লক ইনসুলেশন সাধারণত আড়াই সেন্টিমিটার বা তার অধিক পুরু হয়। ব্লক ইনসুলেশন কেবল গরমই ঠেকায় না, বরং শীতকালে ঘরের তাপ ঘরেই আটকে রেখে আরামদায়ক উষ্ণতাও ধরে রাখে।

ব্লাংকেট ইনসুলেশন

পশুর চামড়া, লোম, তুলা কিংবা কাঠের তন্তু দিয়ে তৈরি এই ব্লাংকেট ইনসুলেশনগুলো বড়জোর ৮০ মিলিমিটারের মতো পুরু হয়। ফলে এগুলো ব্যবহার করা সহজ। ব্লক ইনসুলেশনের মতো এটাও সরাসরি দেয়ালে বা ছাদে সেঁটে দেয়া হয়।

লুজ ফিল

নাম থেকে যা অনুধাবন করা যাচ্ছে ঠিক তা-ই। এই প্রক্রিয়ায় দেয়াল তৈরির সময় তাতে ছোট ছোট শূন্যস্থান রাখা হয়। এসব শূন্যস্থানে বিভিন্ন প্রকার তাপ নিরোধক দ্রব্য দিয়ে ওপরে পলেস্তারা দিয়ে দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দেয়াল নির্মাণ করলে সূর্যের তাপ অনেকাংশেই আটকা পড়ে এবং ঘর ঠান্ডা থাকে। একইভাবে শীতকালে বাইরের ঠান্ডা ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।

রিফ্লেক্টিভ শিট

আজকাল বাসাবাড়ি তাপ নিরোধক করতে আরেক প্রকার প্রযুক্তির উদ্ভব হয়েছে যাকে বলা হয় রিফ্লেক্টিভ শিট। অ্যালুমিনিয়াম শিট, জিপসাম বোর্ড, স্টেইনলেস স্টিল- অনেক রকমের রিফ্লেক্টিভ শিট বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো মূলত সূর্যালোকের একটি বড় অংশই প্রতিফলিত করতে সক্ষম। ফলে বাসা থাকে ঠান্ডা। তবে এই শিট শীতকালে কার্যকর না।

জলছাদ

ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় উপকরণ হলো ছাদ। সারাদিনের তাপে গরম হয়ে থাকা ছাদ রাতে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হতেও অনেকটা সময় নেয়, আর ঘরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তির একটি সহজ উপায় হলো জলছাদ। ছাদের উপর অন্তত ৩ সেন্টিমিটার পুরু করে ইট, সুরকি, চুন আর অন্যান্য উপাদানের যে পুরু ও মসৃণ আস্তরণ দেয়া হয়, তাকে বলে জলছাদ। এটি একে তো ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে, পাশাপাশি ছাদ ও শেওলা পড়া থেকে রক্ষা করে।

ভবনের দিক নির্ধারণ

আপনার বাড়ির তাপমাত্রা কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি বাড়ি কোনদিকে মুখ করে তৈরি করছেন। পূর্ব কিংবা পশ্চিমমুখী হলে সারাদিন সূর্যালোক জানালা দিয়ে সরাসরি প্রবেশ করবে। আবার উত্তরমুখী করলে শীতকালে প্রচুর ঠান্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশের সুযোগ থাকে। সবদিক বিবেচনায় তাই দক্ষিণমুখী করা সবচেয়ে সুবিধাজনক।

ভেন্টিলেশন

আগেকার সময়ে ঘরের দেয়ালে ভেন্টিলেটর দেয়া হতো যা বর্তমানে নেই বললেই চলে। এয়ার কুলার আর এসির বাজারে ভেন্টিলেটর এখন অচল। তবে যারা এসিতে স্বাচ্ছন্দ্য নন, তারা অবশ্য প্রাকৃতিক বাতাসেই ঘর ঠান্ডা রাখতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজন একটু কৌশলী হওয়া। মূলত ঘরের জানালা বিপরীতমুখী দেয়ালে থাকলে ক্রস ভেন্টিলেশন করা যায়। মুখোমুখি দুই জানালা খুলে দিলে ঘরে অবাধে বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে করে ঘরের তাপমাত্রা কমে।

রঙ

ঘরের দেয়াল রাঙানো নান্দনিকতা আর মানসিক প্রশান্তির জন্য যেমন জরুরি, তেমন জরুরি ঘর ঠান্ডা রাখার জন্যও। কিছুদিন আগেই আমেরিকার পার্ড্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর পৃথিবীর সবচেয়ে সাদা রঙ তৈরি করে গিনেজ রেকর্ডসে নাম লেখান। তার এই রঙে বাড়ির বহিরাবরণ রঙ করলে শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে যাবে। ফলে যান্ত্রিকতা ছাড়া প্রাকৃতিকভাবেই ঘর থাকবে শীতল।

বহিরাবরণ নয়, ঘরের ভেতরের রঙও গুরুত্বপূর্ণ। কালো বা খুব ভারী কোনো রঙ প্রথমেই বাদ। ঘরের ভেতরটা রঙ করতে হবে হালকা, উজ্জ্বল কোনো রঙে যা একই সাথে সুন্দর এবং তাপ প্রতিফলনে সক্ষম। এক্ষেত্রে অধিকাংশের পছন্দ পেস্টেল হলুদ, জলরঙ কিংবা হালকা গোলাপি।

রুফগার্ড

রুফগার্ড, ওয়েদার কোট, রুফকোট, কিংবা অন্য যেকোনো নাম- ছাদকে তাপ নিরোধক এবং সূর্যালোক প্রতিফলনক্ষম করতে এর উপর একপ্রকার বিশেষ রঙ দিয়ে পুরু কোটিং করা হয়। এতে একসাথে দুই কাজ হয়ে যায়। একদিকে এই আস্তরণ ছাদের ওয়াটারপ্রুফিংয়ে সহায়তা করে, ছাদকে রাখে শেওলামুক্ত; অন্যদিকে এর কারণে ছাদ অপেক্ষাকৃত কম তাপ শোষণ করে এবং রাতের বেলা তা দ্রুত বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে যায়।

সবুজায়ন

বাড়িকে তাপ নিরোধক করার সবচেয়ে ভালো উপায় সম্ভবত গাছ লাগানো। বাড়ির ছাদে টব কিংবা জলছাদ করে তার উপর টবের মতো বেষ্টনি তৈরি করে তাতে সরাসরি মাটি দিয়ে গাছ লাগানো বাড়ি তাপ নিরোধক করার দারুণ উপযোগী একটি উপায়। ছাদে গাছ লাগালে একে তো মন ভালো করার মতো একটি পরিবেশ তৈরি হবে, পাশাপাশি গাছের ছায়ায় ছাদও ঠান্ডা থাকবে। পাম গাছ, এলোভেরা, নানা প্রকারের ফার্ন আর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কিছু ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে ছাদে। মূলত যেসব গাছের পাতা বড় এবং প্রসারণশীল, সেগুলোই ছাদের জন্য উপযোগী যেন তা অধিক ছায়া দিতে পারে। এছাড়াও গাছের গোড়ার মাটি প্রচুর পরিমাণ পানি ধরে রাখে যা স্বাভাবিকভাবেই ছাদকে ঠান্ডা রাখে। চূড়ান্ত গরমের দিনেও এসির বাতাস ছাড়াই ঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব, কনকনে শীতে রুম হিটার ছাড়াই ঘরে উষ্ণ আবহাওয়া তৈরি করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন বাড়ির আকার, অবস্থান এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক তাপ নিরোধক ব্যবস্থা।

নির্মাণশিল্পের আধুনিক সদস্য: রঙিন কংক্রিট

রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।

Continue reading

ঢালাইয়ের পর কিউরিং করার সঠিক উপায়

বাড়িঘর নির্মাণের সময় আমাদের নানান অসুবিধা এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই সকল বিষয়ে তাই আগে থেকে ধারণা থাকলে স্বপ্নের আবাসস্থল হবে নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের উপমহাদেশে বাড়ির ছাদ ঢালাই করা উৎসবের উপলক্ষ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এ বাড়ি ঢালাইয়ের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে কিউরিং।  

কিউরিং কী? 

কংক্রিট স্থাপন ও কম্পেকশন (জমে শক্ত হয়ে যাওয়া) করার পর কিছু দিন অবিরামভাবে কংক্রিটকে আর্দ্র রাখার পদ্ধতিকে কিউরিং বলে। 

কিউরিংয়ের পদ্ধতি

কিউরিংয়ের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা হয়:

১. পানি ছিটিয়ে (Sprinkling of Water)

২. মাটি দ্বারা ঘের তৈরি করে (Ponding)

৩. ছায়াময় করে (Shading)

৪. পৃষ্ঠদেশ আচ্ছাদিত করে (Covering the Surface) 

সময়কাল

কংক্রিটের মান এবং ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ২৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ২১-২৮ দিন অবধি কিউরিং করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে কংক্রিট জমাট বেঁধে চূড়ান্ত শক্ত অবস্থায় আসলে অর্থাৎ ৮-১০ ঘণ্টা পর কিউরিং প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। তবে আবহাওয়া এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিউরিংয়ের যথাযথ কার্যকারিতার জন্য কংক্রিট ফিনিশিংয়ের পরপরই কিউরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে ছাদ বা ফ্লোর ঢালাইয়ের পর প্রখর রোদ বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য ফিনিশিংয়ের পরপরই প্লাস্টিক কাভার দিয়ে ঢালাই স্থান ঢেকে রাখতে হবে। এ সময় কংক্রিটের উপরিভাগে শতভাগ প্লাস্টিক কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্লাস্টিক যেন সরে না যায় এজন্য কাঠের ব্লক অথবা ইটের সাহায্যে আটকে রাখতে হবে। শুষ্ক অবস্থা পর্যবেক্ষণে কভার সরিয়ে পানি স্প্রে করে আবার প্লাস্টিক বিছিয়ে দিতে হবে। 

কিউরিং করার সময়সূচি

কিউরিং করার সময়সূচি বেশ কয়েকটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো:

১. মিশ্রণের অনুপাত

২. কংক্রিটের স্ট্রেংথ

৩. কনক্রিটের আকার ও আকৃতি

৪. আবহাওয়া ও পরিবেশ

৫. ভবিষ্যতে ব্যবহারের প্রকৃতি

সাধারণভাবে, আমাদের দেশে কিউরিং করার সময় নিম্নোক্ত হিসাব অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

কাজের বিবরণকিউরিং শুরু করার সময়যতদিন কিউরিং করতে হবে
মাস কংক্রিটের কাজে (১:৩:৬)   (ফাউন্ডেশন)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ইটের গাঁথুনির কাজ (সকল)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ড্যাম্পপ্রুফ কোর্স সিমেন্ট কংক্রিট কাজে (১:২:৪)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
লিনটেল, সানশেডের কাজে২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
ছাদ ঢালাইয়ের কাজে২০ ঘণ্টা পর২১ দিন পর্যন্ত
ফ্লোর ঢালাই সিমেন্ট কংক্রিটের কাজে   (১:৩:৬)২০ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত
১ ইঞ্চি পেটেন্ট স্টোন সিমেন্ট কংক্রিটের (১:২:৪) কাজে১৫ ঘণ্টা পর৭ দিন পর্যন্ত

নির্মাণ কাজের সেন্টারিং বা সাটারিং খোলার সময়সূচি:

কাজের বিবরণসেন্টারিং (সাটারিং) খোলার সময়
কলাম ও বীমের পার্শ্বদিক৩  দিন পর
বীমের তলা২১  দিন পর
ছাদের স্ল্যাবের তলা (১৫‘ স্প্যান পর্যন্ত)১৫  দিন পর
ছাদের স্ল্যাবের তলা  (১৫‘ স্প্যানের  চেয়ে  বড় পর্যন্ত)২১  দিন পর

  মোজাইক এবং জলছাদের মিশ্রণ পদ্ধতির ছক:

কাজের বিবরণমিশ্রণ সামগ্রীমিশ্রণ  অনুপাত
গ্রে-মোজাইক (০.৫ ইঞ্চি পুরু)সিমেন্ট : মার্বেল১ : ১
জলছাদ (৪ ইঞ্চি পুরু) কাজেচুন : সুরকী : খোয়া২ : ২ : ৭

কংক্রিট মিশ্রণ পদ্ধতির ছক (নমুনা)

কাজের বিবরণকাজের বিবরণ        মিশ্রণ  অনুপাত
মাস-কংক্রিট (ফাউন্ডেশনের তলায়)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
ড্যাম্প-প্রুফ কোর্স (D.P.C)সিমেন্ট : বালি :খোয়া(১ : ১.৫ : ৩)
বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোর (কংক্রিট)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
১” থেকে ১.৫” পুরু (পেটেন্ট স্টোন)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
১” পুরু মোজাইক বেস (তলা)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
আর.সি.সি. (কংক্রিট) [২৬০০ পি.এস.আই]সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
আর.সি.সি. (কংক্রিট) [২৯০০ পি.এস.আই]সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ১.৫: ৩)
দরজা-জানালা ফ্রেম দেওয়ালে আটকানোর মশলাসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
গ্রীলের ফ্রেম আটকানো মশলাসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
স্যানিটারি পাইপ কংক্রিটসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
ড্রেন-পিটের কংক্রিট বেস (তলা)সিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ৩ : ৬)
সেপটিক ট্যাংকের কংক্রিটসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)
সেপটিক ট্যাংকের ছাদসিমেন্ট : বালি : খোয়া(১ : ২ : ৪)

(তথ্যসূত্র: বাড়ি নির্মাণ গাইড, লেখক: পুরকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী) 

সাধারণভাবে ছাদ বা ফ্লোর কিউরিং এর ক্ষেত্রে ঢালাইয়ের ১০ ঘণ্টা পর পুরো কাস্টিং এরিয়াতে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে কিউরিং করা হয়ে থাকে। কলাম এবং বীমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী কিউরিং পেতে ফর্ম ওয়ার্ক বা সাটার ধরে রাখতে হবে। কলামের ক্ষেত্রে সাটারিং উঠিয়ে ফেলার পরেও ভেজা চট দিয়ে জড়িয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কাঠের সাটারিং ব্যবহারের পূর্বে তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া উচিৎ। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি ঢালাইয়ের স্থান নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দিনে ৫ থেকে ৭ বার কিউরিং করতে হবে।  

নিয়মমাফিক কিউরিং না করা হলে ঢালাইয়ের গুণগত মান কমে আসে, ফলে সম্পূর্ণ কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া ক্ষয় আর আর্দ্রতাজনিত কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মনে রাখতে হবে, ভালো মানের কংক্রিট পেতে ঢালাইয়ের পর কিউরিং যথাযথ হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। 

বাড়ির নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ

প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে তার জীবনের কষ্টার্জিত সকল সঞ্চয় দিয়ে তার কল্পলোকের বাড়িটি নির্মাণ করা। আর এ বাড়ি নির্মাণের প্রথম এবং অন্যতম প্রধান ধাপ হলো নকশা অনুমোদন। ঢাকায় এই অনুমোদন প্রদানের কাজটি করে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেককেই পোহাতে হয় নানাবিধ ঝক্কি-ঝামেলা।

প্লটের প্রকারভেদ

প্রথমেই ধারণা নেয়া  প্রয়োজন প্লটের প্রকারভেদ সম্পর্কে। রাজউকে সাধারণত তিন ধরনের প্লটের শ্রেণীবিভাগ করা হয়-

  • রাজউকের প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।
  • রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের প্লটঃ এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা শাখার প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
  • ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র নিতে হবে। রাজউক এলাকাভিত্তিক ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদান করে। সেই ছাড়পত্র নিয়ে নির্মাণ অনুমোদনের জন্য নকশা রাজউকের ‘ইমারত নির্মাণ কমিটি’-তে দাখিল করতে হয়।

 

নকশা অনুমোদন

ইতোমধ্যে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী  শ ম রেজাউল করিমের প্রশংসনীয় ডিজিটাল উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে । এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ৭-৫৩ দিনের মধ্যে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। 

এবারে জেনে নেয়া যাক রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ- 

  •  প্রথমেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার জমির দাগ ও মৌজা নম্বর সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর এটি ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) এর কোন শ্রেণিভুক্ত তা দেখে নিতে হবে। আপনার নির্ধারিত জমিটি আবাসিক শ্রেণিভুক্ত হলেই কেবল সেক্ষেত্রে আবাসিক বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে। 
  • জমি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই যা করতে হবে তা হল ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র সংগ্রহ। এজন্য রাজউকের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে।
  • ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হল – জমি রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, খাজনা, জমা, খারিজ, সিএস (CS), আরএস (RS), মৌজা, থানা নাম, অঙ্গীকার নামা, নির্ধারিত আবেদনপত্রে আবেদন, আবেদনপত্র অনুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি এবং ব্যাংকে নির্ধারিত ফি প্রদান।
  • প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হলো- প্রাতিষ্ঠানিক নকশা অনুমোদনের জন্য বরাদ্দপত্র, কিস্তি পরিশোধের রিসিট, ভূমি জরিপের নকশা, লিজ দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (তৃতীয় ব্যক্তিকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে), ছাড়পত্রের আবেদনপত্র এবং তদানুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি।
  • নকশা প্রণয়নে উভয় ধরনের মালিকানার ক্ষেত্রে জমি সংলগ্ন রাস্তার ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ অনুযায়ী ফার (FAR) প্রযোজ্য হবে।
  • জমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের সাথে রাজউকের নির্ধারিত ফি প্রদানসহ জমির কাগজপত্র এবং সাইটপ্ল্যানের প্রিন্টকপি জমা দিতে হবে।
  • আবেদনের পর রাজউকের জরিপ কর্মকর্তাদের দ্বারা জমি পরিদর্শন শেষে, রিপোর্ট পজিটিভ হলে, খুব দ্রুত জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
  • জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ হল মাটি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্ট। এই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে পরের ধাপগুলোতে অগ্রসর হতে হবে।
  • এরপর সুদক্ষ স্থপতি এবং প্রকৌশলী কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের নকশা (প্ল্যান, লে আউট, স্ট্রাকচারাল লে আউট, প্লাম্বিং ইত্যাদি) প্রস্তুত করাতে হবে। নকশা অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও দলিলাদির মধ্যে যা যা থাকবে-
  • ৮ প্রস্থ নকশাসহ আবেদন ছক সম্পূর্ণরূপে পূরণ ও স্বাক্ষর
  • নকশা-প্রণেতা কারিগরি ব্যক্তির পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য নম্বরসহ স্বাক্ষর
  • বৈধ মালিকানার হালনাগাদ সকল দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান
  • A4 সাইজের কাগজে FAR-এর হিসাব 
  • গভীর ভিত্তি, পাইলিং এবং বেজমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ছকে (ইন্ডেমনিটি বন্ড ফর্ম ৩০১) এবং প্রযোজ্য হলে ক্ষতিপূরণ মুচলেকা প্রদান
  • A0-A4 সাইজে মেট্রিক ম্যাপে নকশা প্রণয়ন এবং দাখিলকরণ 
  • নকশাতে অবশ্যই আবেদনকারী (মালিক/ আম মোক্তারের) নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকা জরুরি
  • ছাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানির লে-আউট প্রদর্শনপূর্বক ছাদের নকশা প্রদান
  • প্রবেশ, নির্গমন এবং ড্রাইভওয়ে প্রদর্শনপূর্বক ড্রাইভিং প্ল্যান
  • লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি দুটি সেকশন এবং সকল দিকের উন্নতি ড্রয়িং (এলিভেশন)
  • প্লটের সীমানারেখা হতে প্রযোজ্য ন্যূনতম সেটব্যাক
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রাস্তার জন্য জমি হস্তান্তরের অঙ্গীকারনামা
  • বাসযোগ্য রুম, রান্নাঘর ও গোসলখানা বা টয়লেটের ন্যূনতম ক্ষেত্রফল ও প্রস্থ
  • প্রস্তুতকৃত সকল নকশা চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য পুনরায় রাজউকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ পূর্বক নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
  • পরিশেষে রাজউকের দায়িত্ত্বরত প্রকৌশলীবৃন্দ জমাকৃত নকশা যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে আপনার চাহিদা মোতাবেক অনুমোদন প্রদান করবেন।

সম্পন্ন হয়ে গেলো আপনার বাড়িটির জন্য জমি ও নকশার অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। এবার নির্বিঘ্নে কাজে নামতে পারেন সুদক্ষ কারিগরি ব্যাক্তিদের সহায়তায় আপনার স্বপ্নের বাড়িটিকে বাস্তবরূপ দিতে।