বাড়ির কাঠামো নিয়ে যা না জানলেই নয়

নিজের বাড়ি করার অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রতিদিন নিরন্তর কাজ করে চলে পেশা-বয়স নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু প্রাথমিক জ্ঞানের অভাবে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে স্বপ্নের বাড়ি করতে গিয়ে হোঁচট খান অনেকেই। বহুতল ইটের দালানই হোক বা পাকা মেঝের টিনশেড হোক, কিংবা ভবিষ্যতের কথা ভেবে ফাউন্ডেশন দিয়ে রাখা একটি ছোট বাড়িই হোক, কাঠামো সবসময়ই সেই বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাড়ির ব্যবহার আর স্থায়িত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলো এর কাঠামো।

বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার আগে তাই কাঠামো নিয়ে কিছু প্রাথমিক জ্ঞান সবারই থাকা প্রয়োজন। এতে যেমন বাড়ি নির্মাণে গুণগত মান বজায় রাখার ব্যাপারে সুবিধা হয়, সেই সাথে ভবিষ্যতে বাড়ির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলাও কম পোহাতে হয়।  

কাঠামোর প্রকারভেদ 

একটি বাড়ির নির্মাণকালীন কাজগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. স্ট্রাকচারাল (ফাউন্ডেশন, ফ্রেম, রুফ)

২. ফাংশনাল (জানালা/দরজা, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল, HVAC)

৩. ফিনিশিং (সাইডিং, ড্রাইওয়াল/পেইন্ট, ইন্টেরিয়র ফিনিশ কার্পেন্ট্রি, ফ্লোর ফিনিশিং)

এগুলোর ভিতর স্ট্রাকচার এবং ফাংশনের দরজা-জানালা বাড়ির কাঠামোগত অংশ। একটি বাড়ি নির্মাণের আগে তাই এসব ব্যপারে ন্যূনতম প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

স্ট্রাকচার 

যেকোনো বাড়ির স্ট্রাকচার বা মূল কাঠামোকে মোটা দাগে তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। এগুলো হলো- ফাউন্ডেশন, ফ্রেম আর রুফ।

ফাউন্ডেশন

যেকোনো বাসা-বাড়ির ভিত্তিই হলো মাটির নিচ থেকে নির্মাণ করা ফাউন্ডেশন। ভবনের অবস্থানের উপর ফাউন্ডেশনের প্রকৃতি নির্ভর করে। বাড়ি যদি এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়, যেখানের মাটি নরম তাহলে নির্মাণের সময় অনেক গভীরে খনন করে কংক্রিট স্ল্যাব ঢেলে ব্লক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেজমেন্ট বানানো হয়। 

ফ্রেম

ফাউন্ডেশনের পর আসুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রেম বিষয়ে। ফ্রেমিং করতে স্থানভেদে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে কাঠ বা স্টিলের ফ্রেমিং জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে এখনও ফ্রেমিং বলতে কলাম-বীম আর ইটের দেয়ালকেই বোঝায়। ভালো বাসস্থানের জন্য ফ্রেমিং গুরুত্বপূর্ণ। এই ফ্রেমিংয়ের মাঝেই ইনস্যুলেশন, ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যারিং, প্লাম্বিংয়ের অবস্থান। আবার এই ফ্রেমিংয়েই পোকামাকড় বা ছত্রাক (মোল্ড) ঠাঁই করে নেয়।  

রুফিং

ফ্রেমিংয়ের পর আসে রুফ বা ছাদ, বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্লোর স্ল্যাব বা মেঝেও বটে। ছাদের প্রধান কাজই হলো রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচানো। ছাদ ঢালাই দেওয়া তাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ নির্মাণের সময়ে। মাঝেমধ্যে ছাদে লিক সৃষ্টি হলে মেরামতের মাধ্যমেই তা ঠিক করে ফেলা যায়।   

ফাংশন

প্রতিদিন বাসায় বসবাস করতে আমাদের যে সুবিধাগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই ফাংশনাল এলিমেন্ট। এই ব্যাপারগুলো এত স্বাভাবিক এবং বহুল পরিচিত যে আপাতদৃষ্টিতে এগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা হয় না।  

দরজা-জানালা

ফাংশনাল ব্যপারগুলোর ভেতরে কেবলমাত্র দরজা-জানালাই সরাসরি বাড়ির কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত। ভারবাহী দেয়ালে জানালা দেয়ার ক্ষেত্রে এর লোড ট্রান্সফার সম্পর্কে খেয়াল না রাখলে দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। বড় বড় জানালা আছে এমন বাড়িঘর আমাদের সবারই কম-বেশি পছন্দ। আলো বাতাসের চলাচলের জন্য জানালা খুবই প্রয়োজনীয়। ফ্রেমের মাঝে জানালা নির্মাণ করা হয়, তাতে ট্রিম থাকে বিভিন্নরকম যা নান্দনিক চাহিদাও মেটায়, আবার বৃষ্টি থেকেও রক্ষা করে।

জানালার ক্ষেত্রে যা লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো জানালার ফ্রেম বসানোর সময় কোনোরকম লিক যাতে না থাকে। লিক থাকলেই বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করবে যা দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে করে ফেলে আর ফ্রেমের পচনে ভূমিকা রাখে। দরজার ক্ষেত্রেও নষ্ট হওয়ার কালপ্রিট সেই বৃষ্টির পানি। এছাড়া কাঠের দরজায় পোকামাকড় সংক্রমণের ব্যাপার তো আছেই।  

বাড়ি নির্মাণের আগে বাড়ির কাঠামোগত উপাদানগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকলে একদিকে যেমন বাড়ির দৃঢ়তা ঝুঁকির মুখে পড়ে, তেমনি সাইটে কাজ করা ইঞ্জিনিয়ার বা মিস্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ অনেকাংশেই বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, অল্প একটু সাধারণ জ্ঞানই কিন্তু পারে আমাদের স্বপ্নের বাড়িকে আরও স্বস্তিময় করে তুলতে। 

কলাম বীম স্ট্রাকচার: আপনার বাড়ির ভার নিচ্ছে যারা

স্বপ্নের বাড়ি, উঁচু দালান কিংবা যেকোনো কাঠামোকে সোজা, স্থিতিশীল করে সুরক্ষিত রাখতে, মাথার উপর ছাদকে সু-উন্নত রাখতে ঘরের খুঁটি, কড়িকাঠ অথবা ইংরেজিতে যাকে কলাম-বীম বলে, তার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।

ঐতিহাসিক কাল থেকে সভ্যতার উচ্চতার জন্য এর ব্যবহার চলে আসছে, যা হয়ে উঠেছে আমাদের স্বপ্নের বসতবাড়ির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। আসুন আজ আমরা জেনে নিই কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী, কীভাবে এর উৎপত্তি হলো এবং কেন আপনার বাড়িতে এর প্রয়োজন।

কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী?

একটি দালানের ভার নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত নির্মাণ পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে ভার পরিবহন করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এভাবে কাজ করে- প্রথমে ভর দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ভর/ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এর পরে ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান সুরক্ষিত থাকে এবং অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীমের প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয় যেটির মাপ উপাদানের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসেব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

আবিষ্কার এবং ব্যবহার

মানুষ স্বভাবতই একঘেঁয়েমি অপছন্দ করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণের অংশ হিসেবে কলাম, বীমের নীতি এবং নকশায় এসেছে নতুনত্ব, মানুষ বের করতে পেরেছে অনেক অভিনব পন্থা। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় প্রাথমিকভাবে গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হতো বড় বড় কলাম, যেগুলো ছাদের ভার নিতে পারত। পরবর্তীতে পাথর ব্যবহার করে আরো শক্ত মজবুত কলাম বানানো শুরু করা হয়। এর ফলে স্ট্রাকচার হয়ে উঠে আরও মজবুত ও অভিজাত।

এরপরে এই সভ্যতার পরে অন্য সভ্যতাগুলোতে কলাম এবং বীমের সুস্পষ্ট বিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এর পরে প্রাচীন গ্রীক, রোমান সভ্যতার কলামযুক্ত স্পেসগুলো প্রমাণ বহন করে কলাম-বীমের মাহাত্ম্য। তখনও অবশ্য মূলত পাথর ছিল শক্ত এবং মজবুত কলামের মূল উপকরণ।

এর উপকরণ বাছাই হতো মূলত অঞ্চলভেদে প্রাপ্ত বিভিন্ন কিছু থেকে। যেমন- এই কাজে অঞ্চলভেদে এখনও কাঠ, বাঁশ, লোহা কিংবা ইটের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। ইউরোপীয় সভ্যতার ক্রমাগত উন্নতি এবং শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে লোহার ব্যবহার ও কারখানায় প্রস্তুতকৃত বস্তুর চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

মানুষ আরো অধিক শক্তিশালী কলামের আবিষ্কারের জন্য মেধা ও শ্রম নিয়োগ করে। আবিষ্কার হয় সিমেন্ট ও রডের। মানুষ এই দুটো উপকরণ দিয়ে তার অবাস্তব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করে। তৈরি করতে শুরু করে সুউচ্চ দালানকোঠা, ইমারত। এরপরে কলাম-বীমের বিভিন্ন রকমফের উদ্ভাবিত হয় ব্যবহার ও প্রয়োজনমাফিক।

আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম কোনটি?

সাধারণত, আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

প্রথমত, স্ট্রাকচারাল শক্তি, ভার বহনের ক্ষমতা সুনিশ্চিত করতে সঠিক মাপের এবং আকৃতির কলাম ও বীম। এর মধ্যে কতটা রড লাগবে, কত দূর পরপর কলাম বসবে এসবের হিসাব ঠিক করবেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার।

কলাম বা বীমের আকৃতি, এর ফিনিশিং ও কীসে তৈরি হবে এসব বিষয়ে উপযুক্ত দিকনির্দেশনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাথে স্থপতিকেও নিতে হয়। রুমের ব্যবহারযোগ্য স্পেস যাতে নষ্ট না হয় এবং আপনার স্বপ্নের দালান যাতে মজবুত ও টেকসই হয়, এজন্য ভালো নকশা নির্ধারণ করা একান্ত আবশ্যক। এর জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে উপযুক্ত ও পেশাদার স্থপতি ও প্রকৌশলীদের।

সুন্দর বাড়ি চান? মনোযোগ দিন দেয়াল, লিন্টেল ও সানশেডে!

একটি ভবনের স্থাপনা নির্মাণে কাঠামোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মোটা দাগে নির্মাণ কাঠামো বলতে মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রের মতো বীম, কলাম ও ফাউন্ডেশনকেই বুঝে থাকি। কিন্তু কাঠামো তৈরি হলেই ভবন প্রস্তুত হয় না। একে ব্যবহার উপযোগী করতে আরো বেশ কিছু উপাদান রয়েছে।

প্রাত্যহিক ব্যবহারের জন্য দরজা, জানালা বা ফিনিশিং ফিক্সচার হিসাবে টাইলস, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, প্লাম্বিং এবং স্যানিটারি সামগ্রীর সাথে আমরা কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু এর সাথে কিছু অপরিচিত বা কম পরিচিত বিষয়ও রয়েছে যা ভবন নির্মাণে হাত দেওয়ার আগে চেনা ও এদের সম্পর্কে জানা অত্যন্ত দরকারি।

দেয়াল

সাধারণভাবে আমরা যে চারটি দ্বিমাত্রিক তল দিয়ে একটি ঘরে আবদ্ধ থাকি তাকেই আমরা দেয়াল বলি। কিন্তু ব্যক্তিগত জায়গা তৈরিই দেয়ালের একমাত্র কাজ নয়। কাজ বা উদ্দেশ্যভেদে দেয়ালকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

ভার বহনের ক্ষমতা অনুসারে দেয়াল দুই প্রকার-

১. ভারবাহী দেয়াল (একে শিয়ার ওয়াল বলে ও এটি কাঠামোর অংশ)

২. অভারবাহী দেয়াল (একে নর্মাল ওয়াল বলে, এটি কাঠামোর অংশ নয়)

ভারবাহী দেয়াল একবার তৈরি হয়ে গেলে, কখনোই ভবনের ক্ষতি সাধন না করে একে ভাঙা বা স্থানান্তর প্রায় অসম্ভব। তবে অভারবাহী দেয়াল খুব সহজে ও অল্প খরচে ভেঙে স্থান পরিবর্তন করা যায়। ভারবাহী দেয়ালে সাধারণত দরজা-জানালা বা কোন ধরনের বিরতি থাকে না।

কার্যভেদে দেয়াল আবার দুই ধরনের হতে পারে।

১. প্রধান দেয়াল (Main wall/Exterior Wall)

২. অপ্রধান দেয়াল (Partition wall)

প্রধান দেয়াল

প্রধান দেয়াল ভবনের চেহারা ও ভবনের সাফল্যের ক্ষেত্রে খুবই দরকারি উপাদান। এটি তৈরির সময় যা যা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো-

  • প্রস্থের হিসাবে প্রধান দেয়ালকে অবশ্যই লিন্টেল, জানালা ও ভার বহনকারী হলে ভবনের ভারও বহন করতে পারতে হবে।
  • প্রধান দেয়াল প্রাকৃতিক (যেমন- ঝড়, বন্যা বা সাইক্লোন) ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ (যেমন- হামলা ও চুরি) থেকে অভ্যন্তরের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে পাড়ার মতো যথেষ্ট মজবুত হতে হবে।
  • কলাম হিসেবে না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেয়াল মজবুত করতে ইটের দেয়ালে ১০ ফুট বা ১২ ফুট পর পর পিলার তৈরি করা হয়।
  • সাধারণত গ্রেড বীমের উপর প্রধান দেয়াল তৈরি করতে হয় এবং এর নিচে দেয়ালের ফুটিং অবশ্যই দিতে হয়।

নির্মাণপদ্ধতি

প্রধান দেয়াল তৈরিতে প্রথমেই দেয়ালের কেন্দ্ররেখা বের করতে হবে। এরপর গ্রেড বীমের উপর গ্রাউটিং করতে হবে। এর উপরে মর্টার বসিয়ে সমান করে দিতে হবে। দেয়ালের দুই প্রান্তে দুটি ইট রেখে তাতে একটু সুতা এমনভাবে টান টান করে বাঁধতে হবে যেন তা দেয়ালের একপাশে থাকে। সুতার গা ঘেঁষে সোজাসুজি এক স্তর ইট গেঁথে দেয়াল সোজা করতে হবে।

সব ইটের মাপ সমান থাকে না, কারণ, হাতেই তৈরি করা হয় অধিকাংশ ইট। ইটের সাইজ মতো মিলিয়ে মর্টার বেশি বা কম দিয়ে মাপ ঠিক রাখতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর থেকে কিউরিং শুরু করতে হবে এবং কিউরিং শেষ হবার আগে প্লাস্টার করা যাবে না। প্রধান দেয়ালের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বন্ড ব্যবহার করা যায়। তবে বাংলাদেশে স্ট্রেচার বন্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

অপ্রধান দেয়াল

অপ্রধান দেয়ালকে সাধারণ নির্মাণ পরিভাষায় পার্টিশান দেয়াল বলা হয়ে থাকে। এটি অনেক ধরনের উপাদান বা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। ইট, কাঠ, গ্লাস, কমার্শিয়াল বোর্ড ইত্যাদি নানা ধরনের পার্টিশান দেয়াল দেখা যায়। এটি সাধারণত ভারবাহী হয় না। তবে কলাম বা শিয়ার ওয়াল ধরনের পার্টিশান দেয়ালও মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয়। এর নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রধান দেয়ালের মতোই। তবে সাধারণত তা ৫ ইঞ্চি পুরু হয় ও এক স্তর ইট দিয়ে সাধারণভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে।

এই প্রকারভেদের বাইরেও এক ধরনের দেয়াল রয়েছে যাকে বলা হয় প্যারাপেট।

প্যারাপেট

প্যারাপেট সম্পর্কে মূল্যবান তথ্যগুলো এরকম-

  • সমতল ছাদ হলে ছাদের সীমানা বরাবর সীমানার চারপাশের দেয়ালের উপর প্যারাপেট তৈরি করা হয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে রেলিং এর মতোও কাজ করে।
  • ১২.৫ সেমি পুরুত্ব ও ১২.৫ সেমি উচ্চতা হচ্ছে প্যারাপেট তৈরির সর্বনিম্ন মাপ। প্রয়োজনে উচ্চতা আরো বাড়ানো যায়।

  • ইটের প্যারাপেট হলে মূল দেয়ালের সাথে একই বন্ড বজায় রেখে গাঁথুনি তৈরি করা হয়। প্রতি ১০ ফুট বা তিন মিটার পর পর ২৫ সেমি X ২৫ সেমি মাপের পিলার স্থাপন করে দেয়াল মজবুত করা যায়।
  • ছাদ ঢালাই শেষ হলে প্যারাপেট নির্মাণ করা হয়। উল্লেখ্য যে, কংক্রিটের ঢালাই লোহা বা স্টিলের প্যারাপেটও তৈরি করা যায়।

লিন্টেল

দরজা বা জানালা টিকিয়ে রাখতে ও শুন্যস্থানের উপরের ভর বহন করতে যে আনুভূমিক সমর্থন তৈরি করা হয় তাকে বলে লিন্টেল। দেয়াল ইট বা পাথরের তৈরি হলেও লিন্টেল তৈরি হতে হয় কাঠামোর উপাদান থেকেই। সাধারণত কাঠ, স্টিল বা কংক্রিট ব্যবহার করা হয় লিন্টেল তৈরিতে। সাধারণ বাংলাদেশি নির্মাণে কংক্রিটের তৈরি লিন্টেলই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

সানশেড ও লিন্টেল

সানশেড হচ্ছে সূর্যের সরাসরি আলো থেকে রক্ষা পেতে নকশায় স্থাপন করা অংশ। আমাদের দেশের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য সানশেড প্রায় অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি শুধু আমাদের সূর্যের তাপ থেকেই রক্ষা করে না, বরং ঘরে বৃষ্টি ঢুকতেও প্রাথমিক পর্যায়ে বাধা দেয় ও জানালা থেকে বৃষ্টিকে দূরে রাখে।

এক্ষেত্রে একটি মজার বিষয় হচ্ছে, সানশেড ও লিন্টেল অনেক ক্ষেত্রে একই সাথে তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে সানশেড একটি স্বাধীন ক্যান্টিলিভার হিসেবে কাজ করে, যার রিইনফোর্সমেন্টগুলো লিন্টেলের ভেতরে প্রবেশ করানো থাকে। একারণে সানশেডের ফর্মওয়ার্ক অনেক সময়ই লিন্টেলের সাথেই তৈরি করা হয় এবং ঢালাইও একবারেই করে ফেলতে হয়। কংক্রিট জমাট বেঁধে গেলে সাধারণভাবেই কিউরিং করে এর মান উন্নত করতে হয়।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: ভবনের কাঠামোর গুরুত্ব কী?

সৃষ্টিজগতে আমরা চোখের সামনে যা দেখি, সবকিছুর জন্যই একটি সুন্দর ও দৃঢ় কাঠামো অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কাঠামো ছাড়া কোনো কিছু দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। মানবদেহের জন্য যেমন আমাদের ২০৬টি অস্থি নিয়ে গঠিত অস্থিকাঠামো রয়েছে, ভবনের জন্যও এধরনের একটি কাঠামো প্রয়োজন হয়। সাধারণত এই কাঠামোগত প্রশ্নের সমাধান করা হয় বীম ও কলাম দ্বারা।

বীম কলাম কী?

বীম ও কলাম হচ্ছে ভবনের ভারবাহী কাঠামো উপাদান। ভূমির সাথে আনুভূমিক যেসব নির্মাণ কাঠামো ফ্লোর স্ল্যাব ও ভবনে অবস্থান ও বসবাসকারী সব জীবিত ও জড় পদার্থের ভার বহন করে কলাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয় তাদের বলা হয় বীম। আর যেসকল ভারবাহী উপাদান ভূমির সাথে লম্বভাবে অবস্থান করে ও বীম থেকে প্রাপ্ত লোড ফাউন্ডেশন হয়ে ভূমিতে প্রবাহিত করে ভবনকে দণ্ডায়মান রাখে, তাদের বলা হয় কলাম।

বীম কলাম সম্পর্কে যা জানা জরুরি

১. বীম ও কলাম ভবনের প্রাথমিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো ছাড়া ভবন নির্মাণ অসম্ভব। স্থপতি ভবনের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের সময়ই বীম ও কলামের অবস্থান নকশায় উল্লেখ করবেন।

২. বীম ও কলামের অবস্থান ভবন নির্মাণের আগে থেকেই ঠিক করে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ন্যূনতম ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমেই এই ডিজাইন সম্পন্ন হতে হবে।

৩. কলামের অবস্থান ভবনের তলা ভেদে পরিবর্তনযোগ্য নয়। তাই কোনোভাবেই একবার তৈরি হয়ে গেলে কলামের অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না।

৪. বীম বা কলাম সাধারণত কংক্রিট ও রডের সমন্বয়ে তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে কেবল প্রকৌশলীর ড্রয়িং অবলম্বন করলেই চলবে না, সাথে মিক্সচার, ঢালাইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে কিউরিং এর সময়কালও হতে হবে লাইসেন্সড প্রকৌশলী অনুমোদিত।

ক্ষেত্রবিশেষে এই কলাম ও বীম সম্পূর্ণ স্টিলের তৈরিও হতে পারে। এটি কিছুটা ব্যয়বহুল। তবে সেক্ষেত্রেও স্টিলের মাপ, জোড়ার প্রকৃতি ইত্যাদি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পেশাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকাটা অত্যন্ত দরকারি।

৫. অনেক সময় ভবনের প্রকৃতি অনুসারে কলাম চওড়া হতে হতে ছোট দেয়ালের আকার নেয়। এটিকে বলা হয় ভারবাহী দেয়াল বা শিয়ার ওয়াল। এই শিয়ার ওয়াল তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটা কলাম তৈরির মতোই। তবে হিসেব কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে।

বীম ও কলাম যে শুধু ভবনের ভার রক্ষা করে তা-ই নয়, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, টাইফুন এসবের বিরুদ্ধে ভবনের শক্তির উৎসও এই কাঠামোই। সুতরাং ভবন নির্মাণের এই পর্যায়টিতে প্রকৌশলীরা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি তৈরিতে জোর দেন।

এই অতিরিক্ত শক্তি কত গুণ হবে তা হিসেবের সময় Factor of Safety বা নিরাপত্তা অনুপাত দিয়ে নির্ধারিত হয়। যেমন- নিরাপত্তার অনুপাত ২- এই কথাটির অর্থ হলো, আপনার ভবনের জন্য সর্বোচ্চ যা ক্ষমতা প্রয়োজন, তার দ্বিগুণ শক্তি ভবনের কাঠামোতে তৈরি করা হচ্ছে যেন কোনো অপ্রস্তুত অবস্থায় বা কঠিন পরিস্থিতিতেও ভবন টিকে থাকতে পারে।

সবসময় ভবন নির্মাণের আগেই প্রকৌশলীর কাছ থেকে Factor of Safety সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন। মনে রাখবেন Factor of Safety কমপক্ষে ১.৫ হওয়া অত্যাবশ্যক।

ক্র্যাক বা ফাটল

ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা গেলে তা খুব সহজেই মেরামতযোগ্য। কিন্তু কোনো কারণে মূল কাঠামোতে ফাটল দেখা গেলে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীম ও কলাম ভবনের স্থায়িত্ব কতদিন হবে তার জন্য দায়ী। তাই ক্র্যাক বা ফাটল দেখা যাওয়া মাত্রই এটি কোন ধরনের ফাটল তা নির্ণয় করা ও তা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

ফাটল সাধারণভাবে দুই ধরনের হতে পারে।

১. কাঠামোগত ফাটল (Structural Crack)

২. অবকাঠামোগত ফাটল (Infrastructural Crack)

কাঠামোগত ফাটল বলতেই বীম, কলাম, ছাদ ইত্যাদির ফাটলকে বুঝায়। এটি এড়িয়ে চলতে ভবনের নকশার আগে ভবনের ব্যবহার সম্পর্কে স্থপতি ও প্রকৌশলীকে সত্য ও পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। যেমন- বসবাসের জন্য তৈরি ভবনকে ছোট কারখানা বা অফিসের কাজে ভাড়া দিলে ভবনকে অতিরিক্ত ভর বহন করতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময়েই কাঠামোর ডিজাইন এই ভর বহনে প্রস্তুত থাকে না। এছাড়া রড ও কংক্রিটের কোনো হিসেবও এদিক-ওদিক করা যাবে না।

এছাড়া কিছু নির্মাণজনিত ত্রুটিও মাথায় রাখতে হবে। যেমন-

১. বীম ও কলামের সংযোগস্থলে দরকারের চেয়ে বেশি রড দেওয়া অনেক সময় হিতে-বিপরীত হতে পারে। এ অবস্থায় সংযোগে কংক্রিট প্রবেশ করতে পারে না।

২. মিক্সচারে পানির পরিমাণ বেশি হলে জলকণা ভেতরে জমা হয়ে থাকে। পরে জলীয়বাষ্প আকারে দুর্বল পথ পাওয়া মাত্র সেটি বের হয়ে আসে। এভাবেই ক্র্যাক বা ফাটল হতে পারে।

৩. কোনো ভবনের ঠিক পাশে যদি ভিত্তি তলের নিচ পর্যন্ত বেজমেন্ট নির্মাণের জন্য মাটি কাটা হয়, তাহলে ওই ভবনের ভিত্তি তলের নিচ হতে মাটি সহ পানি চুঁইয়ে চুঁইয়ে বের হয়ে বেজমেন্টের জন্য নির্মিত গর্তের ভিতর চলে আসে। এতে অনেকসময় ডিফারেনশিয়াল সেটেলমেন্টের কারণে বীম/ কলামে অতিরিক্ত মোমেন্ট/ সিয়ারের সৃষ্টি হয় ফলে ভবনে ফাটল দেখা দেয়।

৪. ভবনের আশেপাশে কোনো বড় আকারের গাছপালা থাকলে বা ছোট গাছ অনেক বড় হয়ে উঠলে তার শিকড়ের বৃদ্ধির কারণে মাঠির প্রকৃতির পরিবর্তন হতে পারে। এটিও হতে পারে ফাটলের কারণ।

এসব কারণে মিক্সচারের সাথে ১২০০ PSI অতিরিক্ত ধরে সবসময় কাঠামোগত ডিজাইন করা হয়। আর তা করতে অবশ্যই প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ প্রকৌশলীর সাহায্য। একটি বিষয় জেনে রাখা খুবই দরকারি তা হলো- নতুন ও পুরাতন ভবনের কাঠামো অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ছাড়া এক কথায় করা অসম্ভব। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতে এই ধরনের পদক্ষেপ চিন্তা করা খুবই বিপজ্জনক।

তাই নতুন ভবন করার সময় সুচিন্তিতভাবে নিতে হবে সব পদক্ষেপ। হতে হবে সংবেদনশীল ও সতর্ক। তাহলেই ভবন আপনাকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দেবে যুগের পর যুগ।

কলাম-বীম স্ট্রাকচার ও শিয়ার ওয়াল: কোনটির কাজ কী?

সবারই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর বাড়ির। মানুষ তার সমস্ত জীবন পরিশ্রম করে তিল তিল করে গড়ে তোলে তার সাধের বসতবাড়ি। সবারই ইচ্ছা থাকে তার বাসা যাতে হয় মজবুত এবং টেকসই। মাথার উপরে ভরসার একটা প্রতীক হয়ে থেকে এই বাড়িই তাদের জীবনকে করে তোলে শান্তিময়। আর এই বাড়িকে মজবুত করে বানানোর জন্য চাই উপযুক্ত স্ট্রাকচার পদ্ধতি।

প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত দুটি পদ্ধতি হলো, কলাম-বীম স্ট্রাকচার এবং শিয়ার ওয়াল স্ট্রাকচার। আপনার বাসার জন্য কোনটি উপযুক্ত, কোনটি বেছে নিলে আপনার সাধের বাড়িটি সাধ্যের মধ্যে সর্বাধিক মজবুত ও টেকসই হবে- আসুন আজকে আমরা জেনে নিই।

কলাম-বীম কী এবং কীভাবে কাজ করে?

একটি দালানের লোড নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে লোড ট্রান্সফার করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এরূপ- প্রথমে ওজন দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এরপর ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থেকে সুরক্ষিত থাকে।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীম এর প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয়, যার মাপ ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসাব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

শিয়ার ওয়াল কী এবং কীভাবে কাজ করে?

সাধারণত অ্যাপার্টমেন্ট বাসার লিফট কোর এবং সিঁড়ির স্ট্রাকচারাল প্রয়োজনে শিয়ার ওয়াল ব্যবহৃত হয়। শিয়ার ওয়াল কার্যকরভাবে একটি একক বড় কলাম হিসেবে কাজ করে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে।

সাধারণত শিয়ার ওয়াল পাশ থেকে আসা ধাক্কা (ভূমিকম্পের সময়ের কম্পন, জোর বাতাসের ধাক্কা) ঠেকিয়ে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে। এই পার্শ্বিক ধাক্কার চাপ সামাল দিয়ে সেটি জমির ভিতের মধ্য দিয়ে ভূমিতে পাঠিয়ে দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে শিয়ার ওয়াল। কলামের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের ওজন পরিবহনের ক্ষমতা বেশি হয়।

সাধারণত সাধারণ দেয়ালের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের প্রস্থ বেশি হয়, কারণ, সাধারণ দেয়াল লোড ট্রান্সফারের কোনো কাজ করে না। শিয়ার ওয়াল সাধারণত রিইনফোর্সড কংক্রিটের তৈরি হয়, ক্ষেত্রবিশেষে স্টিলের হয়। শিয়ার ওয়াল যেহেতু মোটা হয়, তাই এর নির্মাণ খরচও বেশি। সাধারণত একটি শিয়ার ওয়াল ১৫০-৪০০ মিলিমিটার প্রস্থের হয়ে থাকে।

কোথায় ব্যবহার করবেন?

কলাম সাধারণত দালানের চার কোণায় এবং এরপর ভিতরে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে উপরে এবং নিচের কলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বানানো হয়, যাতে ভর/ওজন সম্পূর্ণভাবে মাটিতে নিতে পারে। লোহার কলাম নিলে দূরত্ব বেশি রাখা যায় কংক্রিট বা ইটের কলামের চেয়ে। আপনার দালান যদি ১-৩ তলা হয় তাহলে আপনি কলাম দিয়েই অনেক ক্ষেত্রে কন্টেক্সট ভেদে বাসা বানানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু এর উপরে গেলে বাসার স্থাপনাগত শক্তির জন্য শুধু কলাম দিয়েই নির্মাণ সম্ভব না।

বাতাসের ধাক্কা কিংবা ভূমিকম্পের সময়ের ধাক্কা প্রতিহত করে দালানের সুরক্ষার জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা লাগতে পারে। সিঁড়ি, লিফটের কোর কিংবা কলামের মতো নকশা অনুযায়ী দালানের যেকোনো স্থানে লোড ট্রান্সফারের জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা যায়। এটি সাধারণ দেয়ালের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে আলাদা কলাম ছাড়াও সুন্দর নকশা করা সম্ভব।

এখন সাইটে ঢালাই দিয়ে এই কলাম বীম বা শিয়ার ওয়াল কাস্ট করা ছাড়াও প্রি-ফেব্রিকেটেড কারখানায় তৈরি করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেগুলো নকশা করা ছাঁচে বসিয়ে বানানো হয় এবং পরে সাইটে এনে বসিয়ে দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভবপর হয়।

সাইটে ঢালাই দেওয়ার সময় যে জিনিসটি খেয়াল রাখতেই হবে, তা হলো বালি, সুড়কি আর সিমেন্টের সঠিক অনুপাতের মিশ্রণ এবং রডের সঠিক মাপ ও পরিমাণ। নাহলে কলাম, বীম ও শিয়ার ওয়াল হবে দুর্বল, যা আপনার বাসাকেও করবে দুর্বল। আর এর ফলে সহজেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আঘাতে আপনার স্বপ্ন হতে পারে ধুলিসাৎ। কাস্টিং ঠিকমত না হলে ঘটতে পারে রানা প্লাজার মতো ট্র্যাজেডি। এজন্যই নকশা থেকে নির্মাণ- সবকিছুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপযুক্ত এক্সপার্টের সহায়তায় নির্মাণ করুন আপনার স্বপ্নের বাড়ি।