বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করবেন যেভাবে

পৃথিবীর কোন প্রাকৃতিক সম্পদ সবচেয়ে বেশি দূষিত? কিংবা কোন প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি? অথবা অন্য একটি প্রশ্ন, কোন প্রাকৃতিক সম্পদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি? অধিকাংশ মানুষই উত্তর জেনে চমকে উঠতে পারে। কেননা সবগুলোর উত্তর একই- পানি।

পানির অপচয়ের কোনো নির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত নেই। গবেষণা বলছে প্রতিবার টয়লেটের ফ্লাশেই খরচ হয় প্রায় ৪ লিটার পানি! অথচ সুপেয় পানির পরিমাণ কমছে প্রতিদিনই। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ তথ্য- ২০২৫ সালের মাঝেই পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ পাবে না ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানি। পানি দূষণের হারও ততদিনে প্রায় দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে বিশ্বে বছরে প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে পানিবাহিত রোগ থেকে। বলা বাহুল্য, সুপেয় পানির সংকট প্রকট হলে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

বিশুদ্ধ পানি সংক্রান্ত এতসব জটিলতার সমাধান হিসেবে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বৃষ্টির পানির কথা। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ‘রেইনওয়াটার হারভেস্টিং’ বলা হয়। সাধারণ ছাদে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি দূষণমুক্তভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পুরো প্রক্রিয়াই হলো রেইনওয়াটার হারভেস্টিং।

সুবিধাসমূহ

প্রকৃতির দান বিশুদ্ধ ও সকল প্রকার খরচমুক্ত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের রয়েছে বহুবিধ সুবিধা। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- সঠিক প্রক্রিয়ায় এই পানি সংরক্ষণ করা গেলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া, সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি বাগানের জন্য বা বাড়ির উঠানে লাগানো গাছের চারার জন্য অধিক উপকারী। কারণ ভূগর্ভস্থ পানিতে অনেকসময় ক্লোরাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা বৃষ্টির পানিতে থাকে না বললেই চলে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি সংরক্ষণ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় হয় না। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। সব মিলিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুবিধা বহুবিধ। এছাড়াও টয়লেটের ফ্লাশ, গাড়ি ধোয়া, সুইমিং পুলের পানি, ইত্যাদি অদরকারি কিংবা কম দরকারি কাজে বৃষ্টির পানি ব্যবহার ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমায়, অপচয় রোধ করে।

প্রক্রিয়া

রেইনওয়াটার হারভেস্টিং অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সুলভ একটি প্রযুক্তি। আধুনিককালে প্রযুক্তির উন্নয়নে পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ এবং নির্ভরযোগ্য হয়েছে। এককালীন খরচের মাধ্যমে একটি রেইনওয়াটার হারভেস্টিং প্ল্যান্ট নিজ বাসায় তৈরি করে নিতে পারলে বছরের পর বছর এর সুফল ভোগ করা সম্ভব।

রেইন ব্যারেল

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের আদিমতম এবং সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ‘রেইন ব্যারেল’। মূলত এ প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ জটিলতা নেই; নামের মতো এখানে কেবল প্রয়োজন একটি ব্যারেল বা পিপা। ছাদ থেকে পানি নামার নালার নীচে একে স্থাপন করলেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো এর জন্য অতিরিক্ত জায়গা, খরচ বা দক্ষতা কোনোটিরই প্রয়োজন নেই। কেবল বাজার থেকে একটি ব্যারেল কিনে আনলেই কাজ শেষ। কিন্তু সমস্যা হলো এর সক্ষমতা অত্যন্ত কম, মাত্র ২০০-২৫০ লিটার। অধিক বৃষ্টির সময় পানি উপচে পড়ে সংরক্ষণের সুযোগও অপচয় হয়।

ড্রাই সিস্টেম

এটি মূলত রেইন ব্যারেলেরই বৃহত্তর সংস্করণ। এই পদ্ধতিতে ছাদ থেকে পাইপ এনে একটি বড় আকৃতির ব্যারেলের সাথে সংযুক্ত করা হয়। বৃষ্টি শেষে পানি পাইপের নীচে থাকায় পাইপটি দ্রুত শুকিয়ে যায়; তাই একে বলা হয় ড্রাই সিস্টেম। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অধিক পানি সংরক্ষণের সুবিধা দিলেও ঠিক বাড়ির পাশেই ট্যাংক স্থাপন করাটা খুব বেশি আকর্ষণীয় নয়।

ওয়েট সিস্টেম

ড্রাই সিস্টেমের তুলনায় এ প্রক্রিয়াটি অধিক সুবিধাজনক কেননা এখানে সংরক্ষণ ট্যাংকটি বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাখারও সুযোগ রয়েছে। অসুবিধা কেবল একটিই- খরচ। এ প্রক্রিয়ায় মূলত ছাদের বা অন্য কোনো প্ল্যান্টের উপর পতিত বৃষ্টির পানি পাইপের মাধ্যমে মাটির নীচে দিয়ে স্থাপন করা পাইপে দূরবর্তী ট্যাংকে পৌঁছানো হয়। ফলে বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলেও পাইপের মাঝে সবসময় কিছু পানি রয়ে যায়।

যেভাবে করতে হবে

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো ধাপে ধাপে করতে হবে।

  • ওয়াটার-হারভেস্টিং শুরু হয় বাড়ির ছাদ থেকে। তাই বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখাই প্রথম কাজ।
  • পানি প্রবাহের পাইপ বা নালার মুখে অবশ্যই ছাঁকনি বা অনুরূপ কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম লাগাতে হবে যেন ঝড়ের সময় উড়ে আসা বড় কোনো আবর্জনা নালায় প্রবেশ করতে না পারে।
  • অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে পানি প্রবাহের নালার মুখে ছাঁকনির পাশাপাশি নালায় একটি ফিল্টারও স্থাপন করা যেতে পারে।
  • মশা-মাছি আর অন্যান্য কীটপতঙ্গ দূরে রাখতে ট্যাংক স্ক্রিন বা অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • ট্যাংকের ওভারফ্লো পাইপ (যে পাইপ দিয়ে ট্যাংক পানিতে ভরে গেলে পানি উপচে পড়ে) এর মুখেও লাগাতে হবে কীটপতঙ্গনাশক ছাঁকনি বা অনুরূপ কিছু।
  • পানি বিতরণের জন্য ট্যাংকের সাথে সংযুক্ত করতে হবে একটি পাম্প।

ওয়াটার লেভেল মনিটরিং নামক একপ্রকার মিটার পাওয়া যায় যা ট্যাংকে উপস্থিত পানির পরিমাণ বলে দিতে পারে। এরকম মিটার তারবিহীন কিংবা তারসহ, উভয়ই বাজারে বিদ্যমান।

মোদ্দাকথা এই যে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত সহজ এবং সুলভ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া স্থাপনে যেমন অধিক খরচ নেই, তেমনি এর রক্ষণাবেক্ষণেও বিশেষ কোনো মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি অপচয় রোধের ব্যাপার তো রয়েছেই। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রতিটি উন্মুক্ত বাড়ির ছাদেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

বর্ষাকালে নির্মাণসাইটে সতর্কতা

অনেক ক্ষেত্রেই বসন্ত আর শরৎকালকে বড় কোনো নির্মাণ প্রজেক্টের সূচনার জন্য খুব ভালো সময় মনে করা হয়। যেকোনো নির্মাণ প্রজেক্টে বাজেট প্রাপ্তি, জনবলের সুলভ সরবরাহ এবং কন্ট্রাক্টর ও সাব কন্ট্রাক্টরদের জন্য আমদানি-রপ্তানির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারার সুযোগ থাকায় মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে প্রচুর কাজ শুরু হতে দেখা যায়। তাই যখন কাজ শুরু হয়, তখন পরিবেশ সাধারণত সুন্দর ও সহনশীল থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। আর বাংলাদেশে নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় জুড়ে চলার প্রবণতায় প্রায় প্রতিটি নির্মাণ প্রজেক্টকেই বৃষ্টি মোকাবেলা করতে হয় একাধিকবার। 

প্রজেক্টের কয়েকটি ধাপের কাজের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি কিছু সুবিধা নিয়ে আসে। মাটি নরম থাকলে ফাউন্ডেশনের জন্য মাটি খোঁড়া সুবিধাজনক হয়। এছাড়া নির্মাণকাজে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বৃষ্টির কিছু সুবিধাজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অসুবিধার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বৃষ্টি নির্মাণকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরকম কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

  • আর্দ্রতার জন্য কাঠের ফ্রেম বেঁকে বা ফেটে যাওয়া।
  • মাপমতো বানানো উপকরণ সংকুচিত হয়ে বা ফুলে গিয়ে জায়গামতো ফিট না হওয়া। 
  • ধাতব উপকরণে মরিচা ধরে যাওয়া।
  • সাইটের মাটি সরে গিয়ে ফাউন্ডেশন বা স্ট্রাকচারকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া।

এসব কারণে অনেক সময় বর্ষাকালে নির্মাণকাজ বন্ধও করে দিতে হয়। কিন্তু তাতে নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়িক দিকগুলোতে নেমে আসে ক্ষতি এবং মালিক বা ডেভেলপারের জন্যও এমন সময়ক্ষেপণ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললে বর্ষাকালেও নির্মাণ নিরাপদ ও সচল রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নিই সেই বিষয়গুলো।

নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিন

নির্মাণে সংশ্লিষ্ট লোকবলই আপনার নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি। সকলে সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকাটা যেমন আপনার নির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সেরকম আপনার নির্মাণের টাইমলাইন থাকা চাই দুর্ঘটনামুক্ত। যেকোনো ঋতুতেই তাই নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। কিন্তু বর্ষাকালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি বলে চিন্তাও করতে হবে বেশি। কাজের জন্য গামবুটসহ সকল নিরাপত্তা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এর সাথে অস্থায়ী রেলিং বা সেফটি নেট ব্যবহার করতে কনট্রাক্টরকে তাগাদা দিন। সাথে সাথে শ্রমিকদের বৃষ্টিতে বাইরে কাজ করতে হলে তাদের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী গিয়ারও নিশ্চিত করুন যেন তারা সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আপনার কাজটি শেষ করতে পারেন।  

আগে থেকে পরিকল্পনা করুন

ছাদ ঢালাইয়ের মতো কিছু বিশেষ কাজ বৃষ্টি চলাকালীন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঢালাইয়ের পর যখন কিউরিং দরকার হয়, তখন বৃষ্টির পানি আপনার পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে একটি সময় নির্ধারণ করে আগেই প্ল্যান করে নিন। স্থপতি থেকে ভবনের নকশা ও ইঞ্জিনিয়ার থেকে স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং নেবার পরই নির্মাণের টাইমলাইন নিয়ে নির্মাতার সাথে কথা বলুন। বর্ষা শুরুর আগে সংবেদনশীল অংশ, যেগুলোর পানি বা আর্দ্রতায় ক্ষতি হতে পারে, পলিথিনে সেগুলো মুড়িয়ে নিন এবং স্ক্যাফোল্ডিংসহ আলগা ভারী নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ করে ফেলুন।

বৃষ্টি নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ

ধাতব ও কাঠের তৈরি সামগ্রীর পানিতে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই বর্ষার আগেই এগুলোকে পানি থেকে নিরাপদে রাখতে অস্থায়ী শেড জাতীয় কাঠামো তৈরি করা উচিৎ। এছাড়া নির্মাণে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও এই শেডের নিরাপত্তায় আনা উচিৎ এবং নিশ্চিত করা উচিৎ যেন পানি জমে থাকে এরকম কোনো অংশে আলগা বৈদ্যুতিক তার বা সংযোগ না থাকে। কম খরচে পানিরোধী ট্র্যাপ তৈরি করাও একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। বর্তমানে খুব সহজে নির্মাণ করা যায় এরকম অস্থায়ী কাঠামো উপকরণ কিনতেও পাওয়া যায়।

সঠিক উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার

আধুনিক সময়ে অনেক নির্মাণ উপকরণ ও যন্ত্রাংশই পানিরোধী। যেমন- বর্তমানে পানিরোধী রুফশিট পাওয়া যায়। যেটি দিয়ে চাল নির্মাণ করলে অনেক কম খরচে শ্রমিকদের থাকা ও বাইরে কাজ করার স্থানগুলোকে পানি থেকে নিরাপদ করা যায়। এছাড়া কাঠের উপরে বিশেষ কোটিংয়ের ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে, যেগুলো সিজন করা বা না করা দুই ধরনের কাঠকেই পানি থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই একটু বেশি বিনিয়োগ করে এধরনের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কিনলেই বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখতে হয় না।

কংক্রিট ও বৃষ্টির সম্পর্ক

অবশ্যই নির্মাণের টাইমলাইন এমন হওয়া উচিৎ যেন বর্ষা আসার আগেই কংক্রিট কাস্ট করে ফাউন্ডেশন তৈরি করে নির্মাণ গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়। এই কাজ বর্ষার সময় করা যায় না। কংক্রিটের ফুটিং বসানোর আগেও পানি জমে নেই- এটা নিশ্চিত করাটা আবশ্যক। নির্মাণের অন্য অংশেও কাস্টিংয়ের জন্য কংক্রিট প্রস্তুত করা ও ঢালাই করা উচিৎ নয় বৃষ্টি চলমান অবস্থায়। এতে করে পানি ঢুকে মিক্সচারের অনুপাত পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আলাদাভাবে। চলুন দেখে নিই সেগুলো-

১. আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বালি ও সিমেন্ট পানি শোষণ করে আর্দ্র হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায় এদের সাথে পর্যাপ্ত অনুপাতে পানি মেশালেও পানি বেশি হয়ে যেতে পারে ও মিশ্রণকে দুর্বল করে ফেলতে পারে।

২. অনেক মিক্সচার তৈরিতে অ্যাডমিক্সচার ব্যবহার করে বন্ধন বাড়ানো হয় কংক্রিটের। এগুলো কংক্রিট বা ব্লকে ফাঁপা জায়গা ও ফাটল কমাতে সাহায্য করে। মূলত কংক্রিটের ভেতর পানির কণা জমে থাকা প্রতিরোধ করে এই উপাদান, যাতে পরে পানি বের হয়ে এসে ফাটল তৈরি করতে না পারে। এই উপাদানটি বর্ষায় কাজ করতে বাধ্য হলে ব্যবহার করা উচিৎ।

৩. যখন কনক্রিট ঢালাই করা হবে সেসময় পরিবেশ আর্দ্র বা বাতাস বেশি থাকা কোনোভাবেই কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নয়। টানা ১২ ঘণ্টা শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে এই নিশ্চয়তা না থাকলে সেটা বন্ধ রাখাই নিরাপদ।

৪. বর্ষাকালে অনেক সময় প্রচণ্ড বাতাস বা ঝড় হতে পারে। এ সময়েও ঢালাই করা উচিৎ নয়। ঝড় বা বাতাসের কারণে শাটারিংয়ের বাইরে চুইয়ে আসতে পারে কনক্রিট। যেটি পরবর্তীতে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে বা ফাটল তৈরি করতে পারে।

৫. প্লাস্টিকের তারপুলিন বা অন্য যেকোনো ধরনের বৃষ্টিরোধী ক্যানভাস ঢালাইয়ের সময় তৈরি রাখা উচিৎ। আর বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও ঢালাইয়ের স্থান ঢেকে ফেলা উচিৎ আগেই। কংক্রিটের সাথে খোয়াও ঢেকে রাখা দরকারি।

৬. বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক সময় কংক্রিটের সারফেসের মান নষ্ট করে দিতে পারে। সামান্য একটি স্ক্র্যাচ টেস্টের মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এটি বুঝতে পারবেন। এরকম কোনো সমস্যা হলে বৃষ্টি থামার সাথে সাথে একই কংক্রিট বা সিমেন্ট স্প্রে দিয়ে এটিকে মেরামত করা উচিৎ। তবে চিকন স্ল্যাবের বড় ক্ষতি হলে সেটি সরিয়ে নতুন করে কাস্ট করাটাই নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। 

নির্মাণে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সতর্কতার অভাব নির্মাণের অংশবিশেষ বা গোটা প্রজেক্টকেই অনেকক্ষেত্রে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা, স্মার্ট প্ল্যানিং ও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে আপনাকে এই সময় নির্মাণ কাজ চালাতে হবে। ছোট ছোট স্মার্ট পদক্ষেপই পারে কঠিন আবহাওয়াতেও আপনার নির্মাণকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে। 

বাড়ির ড্রেনেজ পদ্ধতি: সবকিছু ভেবেছেন তো?

আমাদের বাসাবাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা নিশ্চিত করে এবং বর্জ্য পদার্থের যথাযথ ব্যবস্থা করে আমাদের জীবনকে সুন্দর, সহজ ও সাবলীল করে তোলে তা হলো বাসা-বাড়ির ড্রেনেজ সিস্টেম। এটি বাসার বাথরুম, রান্নাঘর থেকে আমাদের আবর্জনা, ময়লা রাষ্ট্রীয় ওয়েস্ট ডিস্পোজাল সিস্টেমের মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে আমাদের আশেপাশের স্থানকে করে তোলে পরিষ্কার ও আমাদেরকে রাখে ক্ষতিকারক প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে নিরাপদ।

এভাবে চিন্তা করলে আমাদের বাসাবাড়ির ড্রেনেজ সিস্টেম শুধু আমাদের বাড়িই না, সাথে সাথে বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ এবং সামগ্রিকভাবে দেশের পরিবেশ ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেকোনো একটি ছোট স্থানের যেকোনো সমস্যা আমাদের সামগ্রিক ড্রেনেজ সিস্টেমের সমস্যা হিসেবেই পরিগণিত হয়।

এজন্য বাসার নকশার সময় আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেম খুব ভালোভাবে নকশা করতে হবে। আসুন জেনে নিই ড্রেনেজ সিস্টেম কীভাবে নকশা করতে হবে, কী কী জিনিস আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এবং আমাদের জীবনে কীভাবে এ থেকে সুফল পাব।

কী কী খেয়াল রাখতে হবে?

কোন বাসার ড্রেনেজ সিস্টেম বলতে এর প্লাম্বিং এবং এর সাথে জড়িত পাইপের লেআউটকে বোঝায়। বাসা নকশা করার সময় এই প্লাম্বিং ডিজাইন করাটা অনেক জরুরি। প্লাম্বিং লেআউট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় মাপের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক কিংবা পাইপের ব্যাসার্ধ এসব কিছু প্রয়োজনমাফিকভাবে নির্ধারণ করা এবং সঠিকভাবে দালানে বা বাসায় ইনস্টল করা খুব জরুরি। নাহলে বাসায় বসবাস করা রীতিমতো দুর্বিষহ থেকে অসম্ভব হয়ে পড়বে। আসুন জেনে নিই আমাদের শুরুতেই কী কী জেনে নিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে।

“কী পরিমাণ বর্জ্য নিঃসরণ হতে পারে” সে বিষয়টি ভবনে কত জন থাকবে এবং সরকারি নিয়ম ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর টেকনিক্যাল জ্ঞান প্রয়োগ করে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে দালানের নকশা করার আগেই নির্ধারণ করে নিতে হবে।

দালানের নকশার সময় পাইপ দালানের গা বেয়ে নেমে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে কিনা তা নকশা অনুমোদনের সময়ই খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে দালানের গা বেয়ে এক্সপোসডভাবে পাইপ নামবে, যা দালানের সৌন্দর্য নষ্ট করবে এবং দালানের প্লাম্বিং ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলবে।

বাথরুম ও রান্নাঘরের পাইপের মাপ এক রকম হয় না, কারণ এদের কাজও ভিন্নরকম। তাই পাইপের মাপ, ব্যাসার্ধ ইত্যাদি সঠিকভাবে পরিমাপ করতে হবে। এবং নিয়মমতো ইনস্টল করতে হবে।

সবচেয়ে কম পরিমাণ পাইপ ব্যবহার করা দালান সবসময়ই ভবন ব্যবস্থাপনার জন্য সুবিধাজনক। কারণ এতে করে পাইপে ক্লগ কম হবে, সাস্পেন্ডেড বা ফলস সিলিংয়ের পিছনে খরচ কম হবে। তাই ডাক্টিং খুব খেয়াল করে দিতে হবে যাতে একটি সহজ সরলরৈখিক পথে সেটা নামানো সম্ভব হয়।

প্লাম্বিং-এর পাইপের মান ভালো দিতে হবে যাতে তা থেকে লিক না হয় এবং ফেটে না যায়। এরপরে যাতে ভালোভাবে পাইপের দেখভাল করা যায় সেজন্য উপযুক্ত জায়গা দিতে হবে। এছাড়া বাসা-বাড়ির ভিতরে যাতে লিক না হয় সেজন্য ড্যাম্প-প্রুফিং করতে হবে।

নিয়মকানুন

প্রতিটি আবাসনের ইউনিটে থাকতে হবে কমপক্ষে একটি ওয়াটার ক্লজেট এবং একটি রান্নাঘর সিঙ্ক বা ওয়াশিং সুবিধা। কমপক্ষে একটি বাথরুম রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে স্যানিটেশন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সেক্ষেত্রে, স্নানের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে বাথটাব বা ঝরনার পৃথকভাবে ব্যবস্থা করা হবে।

বিভিন্ন ভবনের ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন সিস্টেম ডিজাইনের উদ্দেশ্য হলো দুর্গন্ধ দূরীকরণ, সলিড ওয়েস্ট জমা এবং জমাট বাঁধানো, পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং পরিদর্শন চেম্বারগুলো এমনভাবে সাজানো যাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই ড্রেনগুলো সহজে পরিষ্কার করা যায়।

প্লাম্বিং সিস্টেমটিতে ন্যূনতম পরিমাণে পানি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন এবং সমন্বয় করা হবে, যাতে এর সঠিক কর্মক্ষমতা এবং সহজেই পরিষ্কারের ক্ষমতা সুনিশ্চিত হয়। প্লাম্বিং সিস্টেম, ডিভাইস এবং সংযুক্তিগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানির সরবরাহ করা হবে এগুলোকে যথাযথভাবে কাজ করতে সক্ষম করার জন্য। পর্যাপ্ত চাপ এবং সাধারণ অবস্থার অধীনে অযৌক্তিক গোলমাল ছাড়াই যাতে ব্যবহার করা যায় সেভাবে এগুলোর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যখনই সম্ভব হবে, সমস্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পাব্লিক নর্দমা বা বেসরকারি বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ফেলে দেওয়া হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে।

দালানে প্লাম্বিং সিস্টেমের প্রকারভেদ

দালানে ড্রেনেজ সিস্টেম নকশা করার জন্য সাধারণত ৩ প্রকারের সিস্টেম ব্যবহার করার নিয়ম আছে। এখান থেকে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নকশা করতে হয়। সেগুলো হলো-

১. সিঙ্গেল স্ট্যাক সিস্টেম- সাধারণত ৫ তলা পর্যন্ত উঁচু দালানে ব্যবহার করা হয়।

২. একক পাইপ সিস্টেম- যেসব দালানে সবরকমের বর্জ্য পদার্থ একটিমাত্র পথে নিষ্কাশিত হয়, সেসব দালানে এই সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।

৩. ডাবল পাইপ সিস্টেম- যেসব বাসায় রান্নাঘর এবং বাথরুম থেকে স্লাজ আলাদাভাবে নিষ্কাশন করা হবে, যা মাটিতে সেপটিক ট্যাঙ্ক বা ইমহফ ট্যাঙ্কে বর্জ্য হিসেবে নিষ্কাশিত হবে, সেসব ক্ষেত্রে দুটি পাইপ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে।

এসব সিস্টেম উপযুক্ত এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে বা দালানের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় ব্যবহৃত পানি ও স্লাজের লোডের কারণে তা ব্যর্থ হবে। এছাড়াও পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত মাপের এবং স্পেসিফিকেশনসহ পাইপ ব্যবহার করতে হবে, যাতে পাইপ স্লাজ ও পানির আভিকর্ষজ চাপের কারণে ফেটে না পড়ে। এজন্য অভিজ্ঞ প্লাম্বার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শক্রমে আমাদেরকে আমাদের বাসার ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে হবে।

এতে করে আমাদের বাসার পরিবেশ যেমন ভালো থাকবে, ঠিক তেমনিভাবে সঠিক স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করার আমাদের বাসার সামনের ও আশেপাশের পরিবেশ ভালো ও পরিষ্কার থাকবে।