সিমেন্ট ব্যবহারের আদ্যোপান্ত: কীভাবে বুঝবেন সিমেন্ট ভালো না খারাপ?

নির্মাণশিল্পের একদম সূচনালগ্নে মানুষ তার কাজে ব্যবহার করেছে মাটির মতো প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য মালামাল। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে আমাদের কাছে এসেছে নানান রকমের নির্মাণ উপকরণ। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতেই এখন বহু ধরনের উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনই একটি উপাদান হলো সিমেন্ট।

যেকোনো দালান নির্মাণে বালি, কংক্রিটের মিশ্রণের বাইন্ডার হিসেবে ধরে রাখা থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাত- সব ক্ষেত্রেই সিমেন্ট অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে এর উৎপাদন আর বাজারজাতকরণ। এর প্রমাণ মেলে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন মানের এবং দামের  সিমেন্টের সমাহার থেকে। নিজের নির্মাণাধীন বাড়িটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন।

নানা রকমের সিমেন্ট

নির্মাণকাজের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের বিভিন্ন রকমের সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন উপাদানের অনুপাতে মিশ্রণ ও অন্যান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব ভিন্নতা আনা যায় সিমেন্টে। 

বিভিন্ন সিমেন্টের নানা ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

দ্রুত শক্তি প্রদানকারী সিমেন্ট

সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতোই এই সিমেন্টের গুণাগুণ। অতিরিক্ত মসৃণ ও মিহি উপকরণ এবং বেশি ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেটের জন্য এর সাধারণ শক্তিমান পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট থেকে বেশি হয়ে থাকে। বলা হয় যে, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহারের ৭ম দিনে যে সুরক্ষা থাকে তা এই সিমেন্টে ৩য় দিনেই অর্জন সম্ভব। এই দ্রুততার জন্য প্রিফ্যাব্রিকেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে এর ব্যবহার বহুল।

কম তাপমাত্রার সিমেন্ট

ডাইক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ট্রাইক্যালসিয়াম হ্রাস করে এই সিমেন্ট তৈরি হয়, যার প্রাথমিকভাবে সেটিংয়ের সময় অন্যান্য সিমেন্ট থেকে বেশি।

সাদা সিমেন্ট

সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতো এই সিমেন্ট সাদা রংয়ের হয়ে থাকে এবং এর জন্য এর সাথে লাইমস্টোন ও চায়না ক্লে ব্যবহার করা হয়। রঙের জন্য সাধারণত বাসা-বাড়ির ভেতরে এই সিমেন্টের কাজ করা হয়।

নির্মাণকাজে এই সিমেন্টগুলা ব্যবহারের পাশাপাশি কাজের ভিন্নতার দরুণ আরও কিছু সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। 

যেমন-

  • সালফেটরোধক সিমেন্ট
  • পানিরোধক সিমেন্ট
  • রঙিন সিমেন্ট
  • পোর্টল্যান্ড পোজোলানা সিমেন্ট
  • হাই অ্যালুমিনা সিমেন্ট
  • বায়ুশোষক সিমেন্ট

সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই 

সাইটে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত সিমেন্টের সব ধরনের গুণাগুণ যাচাই করা সম্ভবপর না হলেও কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সাহায্যে সহজে সিমেন্টের সার্বিক মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

প্যাকেজিংয়ের সময়

সিমেন্টের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনের তারিখ আছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিৎ। সিমেন্ট অতিরিক্ত পুরাতন হয়ে গেলে তা না ব্যবহারই শ্রেয়। 

সিমেন্টের রং

সাধারণত সিমেন্ট হাল্কা ধূসর থেকে ধূসর হয়ে থাকে। 

রাবিং টেস্ট

সামান্য সিমেন্ট হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে মসৃণতা পরীক্ষা করা যায়। 

তাপমাত্রার পরীক্ষা

সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে তার তাপমাত্রা যাচাই করে নিতে হয়। সাধারণত সিমেন্টের তাপমাত্রা কম হয় এবং হাতে ঠাণ্ডা অনুভূতির অর্থ হলো প্যাকেটের ভেতর কোনো প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের ক্ষতিসাধন হয়নি।

ফ্লোটিং টেস্ট

ভালো মানের সিমেন্ট পানিতে ডুবে যায়, ভেসে থাকে না। এক বালতি পানিতে সিমেন্ট নিয়ে পরীক্ষা করেও এর এই গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

প্রাথমিক রং, গন্ধ কিংবা মসৃণতা যাচাইয়ের সাথে সাথে আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে আমরা বিশদভাবে সিমেন্টের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি।