ইটের কাজের নানা উপায়

আমাদের দেশে পাকা দালান বলতে ইটের ব্যবহার সবক্ষেত্রে দেখা যায়। সেই ইটের গাঁথুনিতেও আছে নানা উপায় এবং নিয়ম কানুন।

গাঁথুনিতে ইট সাজানো বা জোড়া দেয়ার কৌশলকে বন্ড বলে। এতে ইটকে এভাবে জোড়া দেওয়া হয় যাতে উপরের বা নিচের দুই স্তরের খাড়া জোড়া একই খাড়া লাইনে না থাকে।

কারিগরি নিয়ম-কানুন না মেনে ইট বা পাথর গাঁথুনি করলে তা দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য হয় না। স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য, আর্থিক দিক, ভারবহন ক্ষমতাসহ নানাদিক বিবেচনায় দেয়াল গাঁথুনিতে বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইটের কাজে বন্ডের প্রয়োজনীয়তা  

1. কাঠামো স্থায়ী ও শক্তিশালী করা।

2. ইটের মধ্যকার বন্ধন সুদৃঢ় করা।

3. গাঁথুনিতে উল্লম্ব বা খাড়া জোড়া পরিহার করা।

4. নির্মাণ কাজ দ্রুত করা।

5. দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।

6. শিয়ার ফোর্স প্রতিরোধ করা।

7. দেয়ালের উপর আসা ভার সমানভাবে ও নিরাপদে বণ্টন করা।

ইটের বন্ডের প্রকারভেদ

গাঁথুনিতে ব্যবহৃত বন্ডকে নানাভাগে ভাগ করা যায়

  1. ইংলিশ বন্ড (English bond)
  1. ফ্লেমিশ বন্ড (Flemish bond)
  1. স্ট্রেচার বন্ড বা রানিং বন্ড (Stretcher bond)
  1. হেডার বন্ড (Header bond)
  1. গার্ডেন ওয়াল বন্ড (Garden wall bond)
  1. রেকিং বন্ড (Raking bond)
  1. ডাচ বন্ড (Dutch bond)

৪. ফেসিং বন্ড (Facing bond)

9. ইংলিশ ক্রস বন্ড (English cross bond)

10. ব্রিক-অন-এজ বন্ড (Brick on edge bond)

প্রচলিত ইটের বন্ড এবং এদের ব্যবহার

আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটি বন্ডে ইট গাঁথুনি পদ্ধতি এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো নিম্নে দেওয়া হল:

ইংলিশ বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে এক স্তর হেডারের উপর অপর স্তর স্ট্রেচার ইট স্থাপন করা হয় অর্থাৎ এক স্তরে  ইটগুলো লম্বালম্বিভাবে এবং অপর স্তরে ইটগুলো আড়াআড়িভাবে স্থাপন করা হয়। এ বন্ড খুবই শক্তিশালী এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। খাড়া জোড়াগুলো যাতে একই উলম্ব রেখায় না পড়ে সেজন্য হেডার স্তরের প্রথম হেডার ইটের পর একটি কুইন ক্লোজার বসাতে হয়।

হাফ ইটের মোটা পুরুত্বের যেকোনো দেয়াল নির্মাণে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা হয়।

ফ্লেমিশ বন্ড :

এই বন্ডে একই স্তরে একটি ইট লম্বালম্বি ও পরেরটি আড়াআড়ি করে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়। ফ্লেমিশ বন্ডে প্রতিটি স্তরে হেডার ইটের কেন্দ্র বরাবর এর উপরের এবং নিচের স্তরের স্ট্রেচার ইটের কেন্দ্র থাকবে। প্রতিটি হেডারের দুই পাশে একটি করে স্ট্রেচার ইট থাকবে। ইংলিশ বন্ড থেকে এটি দেখতে সুন্দর হলেও অধিক সংখ্যক ক্লোজার ব্যবহার করার কারণে এই বন্ড দূর্বল হয়।

দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং কারুকার্যের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ নান্দনিক ফ্লেমিশ বন্ড।

স্ট্রেচার বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে প্রতিটি স্তরে দেয়ালের দৈর্ঘ্য বরাবর ইটকে স্ট্রেচার হিসেবে স্থাপন করা হয়। কেবলমাত্র অর্ধ ইট বা ১২.৫ সে.মি পুরুত্বের দেয়ালে নির্মাণে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের বন্ডে গাঁথুনিতে যথাযথ বন্ড সৃষ্টি হয় না। অর্ধ ইটের বেশি পুরুত্বের দেয়ালে এ বন্ড ব্যবহার করা যায় না। একে রানিং বন্ডও বলে।

চিমনির দেয়াল, পার্টিশন এবং ডিভিশন ওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে স্ট্রেচার বন্ড ব্যবহৃত হয়। 

হেডার বন্ড :

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি স্তরের প্রতিটি ইটকে হেডার হিসেবে স্থাপন করা হয়। এক ইটের দৈর্ঘ্যের সমান বা ২৫ সে.মি. পুরুত্বের দেয়াল বা বাঁকা দেয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বন্ড বেশি উপযোগী।

বাঁকা দেয়াল এবং ফুটিং নির্মাণের সময় হেডার বন্ড ব্যবহার করা হয়। 

গার্ডেন ওয়াল বন্ড :

গার্ডেন ওয়াল, কম্পাউন্ড ওয়াল ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য যে বন্ড ব্যবহৃত হয় তাকে গার্ডেন ওয়াল বন্ড বলে। সাধারণত ২৫ সে.মি বা এক ইট পুরু দেয়ালের ক্ষেত্রে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। ইংলিশ বা ফ্লেমিশ উভয় বন্ডে এ দেয়াল গাঁথা যায়।

সীমানার দেয়াল, বাগানের দেয়াল এই ধরনের হালকা নির্মাণে গার্ডেন ওয়াল বন্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাড়ি নির্মাণে ইট বহুল প্রচলিত একটি উপাদান। সেক্ষেত্রে বাড়ির স্থায়িত্ব এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিজের কষ্টের অর্থ পরিশ্রম ব্যয়ে গড়ে তোলা বাড়িটি বাসযোগ্য এবং স্থায়ী হওয়া জরুরি। সবকিছুর সাথে ইটের দালানে বন্ডের বিষয়টিও লক্ষ্য রেখে বানালে নির্মাণ হবে সমৃদ্ধ এবং স্থায়ী।

ইট-মসলার ভালো গাঁথুনি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য উপকরণ হলো ইট। ইটের মডিউলার প্রকৃতির কারণে এটি অনেক স্থপতি আর প্রকৌশলীর কাছেই প্রিয়। তাই যুগ যুগ ধরে ইট ও মশলার মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে আমাদের স্বপ্নের বাড়িগুলো।

বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ইট ও মশলা ঠিক পরিমাণে থাকার বিষয়টি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভাষায় যাকে বলে ব্রিকওয়ার্ক। আজকে এই ব্রিকওয়ার্ক নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলা যাক।

প্রকারভেদ

আমাদের দেশে ব্রিক ওয়ার্ক দুই রকমের হয়ে থাকে।

 ১. অর্ডিনারি ব্রিক ওয়ার্ক   

 ২. পয়েন্টিং ব্রিক ওয়ার্ক

অর্ডিনারি ব্রিক ওয়ার্ক 

আমাদের দেশে সাধারণত এই ব্রিকওয়ার্কই বহুলভাবে প্রচলিত। ইট দিয়ে গাঁথুনি নির্মাণের পর সেই পৃষ্ঠ বা সারফেসকে এদেশের মৌসুমী ঝড় বা বিরূপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে প্লাস্টার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এই প্লাস্টার সৌন্দর্য বর্ধনেও কাজে দেয় বেশ চমৎকারভাবেই।     

পয়েন্টিং ব্রিক ওয়ার্ক

এই ব্রিকওয়ার্কে জয়েন্টের উপর প্লাস্টার দেওয়া হয় না। গাঁথুনি পরবর্তী জয়েন্টগুলোকে পয়েন্টিং করে দেওয়া হয়, যা সাধারণত ১০ ইঞ্চির হয়। এক্ষেত্রে মর্টার বা মশলা খুব হালকা লেয়ারে শক্তভাবে থাকে এবং বাইরে মসৃণ সারফেসের রূপ দেওয়া হয়ে থাকে।

নিয়মাবলী

ইটের গাঁথুনির কাজ শুরু করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, যা গাঁথুনিকে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।  চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক গাঁথুনির কাজ শুরু হওয়ার আগে আমাদের যা যা করতে হবে।

ব্রিকওয়ার্কের ব্রিক বা ইটকে অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে। অর্থাৎ শক্ত, মজবুত আর সেইসাথে সুষমভাবে পোড়ানো, সঠিক আকার-আকৃতি এবং রং বিশিষ্ট ইট ব্যবহার করতে হবে। ইটকে প্রথমেই ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ইটের কাজ শুরু হওয়ার একদিন আগে পানি থেকে ইটকে তুলে ফেলতে হবে। এই কাজটি করা হয় যাতে শুষ্ক ইট সিমেন্ট মসলার পানি শোষণ না করতে পারে। কেননা পানি শোষণ করা হলে সিমেন্টের হাইড্রেশন বন্ধ হয়ে যায় যার ফলাফল দূর্বল গাঁথুনি। 

এছাড়াও ইটের মাঝে বেশি পানি থাকায় সিমেন্ট মশলা নরম হয়ে জয়েন্ট থেকে ইটের গা বেয়ে পড়ে যেতে পারে। মসলার পুরুত্ব কম হলে এর ফলে গাঁথুনিও দূর্বল হবে, গাঁথুনি ভার্টিক্যালি শল আউটের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এমনকি এই অবস্থায় মিস্ত্রিও কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করবে কেননা এতে হাতের ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বেশিই থাকে।    

ইট ভিজানোর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বালি চালা এবং ভেজানো। যদিও আর্থিক ও সময়ের ব্যাপার বিবেচনায় এই কাজ এদেশে কম করা হয়, কিন্তু কাজের মান ভালো চাইলে বালিকেও ইটের মতো ভিজিয়ে রাখার পর চেলেও নিতে হবে। এরপর আসবে চিপিং। ব্রিকওয়ার্ক শুরু করার আগে সকল ধরনের সারফেস ভালোভাবে চিপিং করা খুবই জরুরি। চিপিং এর পর ফ্লোরকে ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করার পরেই গাঁথুনির কাজে হাত দেওয়া যাবে। ইট বিছানোর আগে ফ্রগ মার্ক যাতে উপরে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক দিনে গাঁথুনি ১.৫ মিটারের বেশি হওয়া উচিত না। তবে ভবিষ্যতে দেয়াল বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে দেয়াল টুথিং করে কাজ বন্ধ রাখা যেতে পারে।   

এবার আসা যাক মশলার ব্যাপারটিতে। পানি দেওয়ার আগে ড্রাই সিমেন্ট এবং বালির ভালোভাবে মিক্সিং করাটা ভীষণ জরুরি। মনে রাখতে হবে ভালো মিশ্রণেই ভালো গাঁথুনি নিশ্চিত হবে। সাধারণত ৫ ইঞ্চি গাঁথুনিতে ১:৪ অথবা ১:৫ এবং ১০” গাঁথুনিতে ১:৬ অথবা ১:৫ মশলা প্রস্তুত করতে হয়। মশলা নরম থাকা অবস্থায় ১২ মিলিমিটার গভীরে রেকিং করা হয়, এতে প্লাস্টারিং বা পয়েন্টিং এ সুবিধা হয়। যদি দেয়াল দুই বা ততোধিক ইটের পুরু হয়,  তবে মশলা প্রত্যেক কোর্সে বেডিং এবং ফ্লাশিং ছাড়াও গ্রাউটিং করতে হবে।

গাঁথুনির কাজ শেষ হলে চুন মশলার ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ এবং সিমেন্ট মশলার ক্ষেত্রে এক-দুই সপ্তাহ কিউরিং করা লাগবে। 

সতর্কতা 

গাঁথুনির কাজে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

১. সম্পূর্ণ বেডে ভালো করে মশলা বিছিয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে ইট বসাতে হবে যাতে ভালো করে মশলার সাথে ইট লেগে যায়।

২. ইটের গাঁথুনির কাজে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা ভালো। 

৩. ইটের গাঁথুনির পর প্লাস্টারিং এর কাজ কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পর শুরু করা উচিৎ।

৪. প্রথমে দেয়ালের দুই প্রান্তের ইট বসানোর পর সুতা ধরে মাঝের দেয়ালের ইট বসাতে হবে। সুতা টেনে অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখা হয়, যাতে সব সমান থাকে।  

লোড বহনকারী সাপোর্ট হিসেবে কাজ করা ছাড়াও গাঁথুনির কারণে বড় জায়গার লোড ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়। সেই সাথে আগুন বা আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব থেকেও ইন্টেরিয়রকে অনেক ক্ষেত্রে রক্ষা করে। সঠিকভাবে গাঁথুনি সম্পন্ন হওয়া ইটের দেয়াল তাপ এবং শব্দ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও রক্ষা করে৷ কাজেই গাঁথুনি ভালো হওয়া খুবই জরুরি৷ এজন্য উপযুক্ত গাঁথুনি নিশ্চিতকরণে উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে ভবিষ্যতে বাড়ির কাজে হাত দেওয়া সকলকেই।          

বাড়ি বানাচ্ছেন? জেনে নিন ঢালাইয়ের খুঁটিনাটি!

“যেকোনো ভবন তৈরির সবচেয়ে কঠিন অংশ কী?” 

আমাদের উপমহাদেশে এই প্রশ্নের উত্তরগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবার উপরে থাকবে ছাদ ঢালাইয়ের ব্যাপারটি। যখন থেকেই পাকা বাড়ি বা বহুতল বাড়ি তৈরির চর্চা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অনেক আগে বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে ছাদ ঢালাইয়ের দৃশ্য ছিল এদেশে নির্মাণের সমার্থক। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। জেনে রাখা ভালো, ছাদ ঢালাইয়ের ব্যাপারটি খুবই টেকনিক্যাল এবং এর প্রতিটি ব্যাপারে নির্মাতার নজর হতে হবে সূক্ষ্ম।  

কী কী বিষয় খেয়াল রাখা উচিত ছাদ ঢালাইয়ের সময়?

  • ছাদ বা ফ্লোরের শাটারিং কোনোভাবেই ধাপে ধাপে করা যাবে না। একটি ফ্লোর বা ছাদ ঢালাই করার সময় পুরো ছাদের শাটারিং একবারে করা অত্যাবশ্যক। এর সাথে সম্পূর্ণ ফর্মা সমতল হয়েছে কিনা তা-ও একবারেই যাচাই করে নিতে হবে। 
  • ছাদ ও বীম ঢালাইয়ের কাজও করতে হবে একসাথেই। যদিও ছাদের লোড বীমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবুও তৈরির ক্ষেত্রে এদের একসাথে তৈরি করা অত্যাবশ্যক। ছাদ ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি পুরু হতে পারে।

  • সাধারণত ২১ দিন পর ফর্মা খোলা হয়। তবে ঢালাইয়ের একদিন পরই ছাদের উপরিভাগে পানি ধরে রেখে কিউরিং করতে হবে।
  • ঢালাইয়ের জন্য যে কাঠের কাজ করা হয়, তাকে বলা হয় সেন্টারিং। এর জন্য যে তক্তা বা প্লেট ব্যবহার করা হয়, তাতে ছিদ্র থাকা চলবে না এবং তক্তার উপরে কোনো তৈলাক্ত পদার্থ (যেমন- ডিজেল বা গ্রিজ) লাগানো থাকলে তা সুন্দর হয়। তবে বর্তমানে পাতলা পলিথিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব প্রক্রিয়া মেনে চললে সর্বনিম্ন সময়ে শাটার খোলা সম্ভব।
  • মর্টার মেশাতে যদি মেশিন ব্যবহার করা হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে দুটি ব্যাপারে-
    ১. কমপক্ষে ২ মিনিট ধরে মেশাতে হবে।
    ২. মেশানোর সময় সম্পূর্ণ পানির সাথে মিক্সচার গুলে যাওয়া যাবে না।
  • হাতে মিক্সচার তৈরি না করাই উচিত। এতে করে গুণগত মানের ধারাবাহিকতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। মানসম্পন্ন কংক্রিট অনেকদিন স্থায়ী ছাদ তৈরিতে খুবই দরকারি।
  • ছাদ ঢালাইয়ের সময় সেটিং শুরু হবার আগেই প্রক্রিয়া শেষ করা উচিত। আধা ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা সময় নেওয়াটা ভালো মানের পরিচায়ক। দেরি হয়ে গেলে ঢালাই আবার নতুন করে তৈরি করা উচিত। অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
  • পিলারের শাটার তৈরির পরে তার মধ্যে ঢালাই ঢালার নিয়ম হচ্ছে, ঢালাই ১.৫ মিটারের বেশি উপর থেকে না ঢালা। এতে মিক্সচারের উপাদান আলাদা হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে।
  • ঢালাই করার পর যাচাই করে দেখতে হবে ঢালাই যেন নিরেট হয় ও তাতে কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। এক্ষেত্রে নিডল ভাইব্রেটর বা লোহার রড দিয়ে ঠাসাই করা উচিত।

ছাদ ঢালাই করার নিয়ম

উপাদান – সিমেন্ট, বালি এবং নুড়ি/খোয়া।

উপাদানের অনুপাত – সিমেন্টঃ বালিঃ খোয়া – ১ঃ২ঃ৪।

এই মিশ্রণ প্রতি ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তার ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে এবং পানির পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ২৫ লিটার।

২ মিনিট ধরে এই মিশ্রণ মেশিনে প্রস্তুত করতে হবে। যদি হাতে তৈরি করতে হয় তাহলে পাকা মেঝেতে সিমেন্ট-বালুর মিশ্রণ তৈরি করে দক্ষ হাতে মর্টার তৈরি করতে হবে। ১ ফুট পরপর মোটা বাঁশ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে বা ধাতব ফ্রেম ব্যবহার করতে হবে, যাতে ছাদ ও বীমের ফর্মা যথেষ্ট মজবুত হয়। আগের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে সেন্টারিং, শাটারিং, ঢালাই, জমাট বাঁধা ও কিউরিং ইত্যাদি ধাপ মেনে ঢালাই সম্পন্ন করতে হবে।

মেঝে ঢালাই করার নিয়ম

মেঝে ঢালাই দেবার নিয়ম অনেকটা ছাদ ঢালাইয়ের মতোই। তবে মেঝে ঢালাই তুলনামূলক সহজ, কারণ, এটি ভেঙে গিয়ে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। তবে এখানেও মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সবক্ষেত্রেই। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা করতে হবে তা হলো-

  • মেঝে ভিটে বালি দিয়ে ভরাট করতে হবে।
  • ভালোভাবে মুগুর দিয়ে দুরমুজ করে সমান করে নিতে হবে।
  • পানি ঢালতে হবে।
  • ঢালাইয়ের আগে ইট বিছাতে হবে।
  • ঢালাইয়ের পুরুত্ব হতে হবে তিন ইঞ্চি।

ঢালাইয়ের উপর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব দুইই নির্ভরশীল। তাই ঢালাইয়ের আগে নকশা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। অভিজ্ঞ মিস্ত্রির সাহায্য তো প্রয়োজন হবেই, তবে পুরো প্রক্রিয়াতে মিস্ত্রির উপর নির্ভর না করে অবশ্যই দক্ষ প্রকৌশলীর সাহায্য নেওয়া উচিৎ।

কারণ, শুধু অভিজ্ঞতা থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মাণকাজ পরিচালনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অসম্ভব। এজন্যই ঢালাইয়ের খুঁটিনাটি সম্পর্কে নিজে সম্যক ধারণা রাখুন ও পেশাদার নির্মাণ নিশ্চিতকরণে হয়ে উঠুন সতর্ক।