আপনার বাড়ি জীবাণুমুক্ত আছে তো? জেনে নিন উপায়গুলো

মানুষ সবসময়ই চায় নিজের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও টিপটপ রাখতে। এজন্য ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আমরা করে থাকি। এতে করে আমাদের বাসার পরিবেশ থাকে সুস্থ, সুন্দর, পরিপাটি এবং আমাদের মন মানসিকতা থাকে শান্তিপূর্ণ। সাথে সাথে আমাদের শরীরও থাকে সুস্থ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা উচিৎ। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আমাদের বাড়িঘর এবং এর আশেপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা যায়।

কেন পরিষ্কার রাখতে হবে?

বাতাসে চোখে দেখা যায় না এমন অনেক কিছু যেমন- ধুলাবালি, রোগজীবাণু ভেসে বেড়ায়। অসতর্ক মুহূর্তে সেগুলো আমাদের দেহে ঘরবাড়ির বিভিন্ন কিছু থেকেও প্রবেশ করতে পারে, যদি তা ঠিকমতো পরিষ্কার না করা হয়। আমাদের খাদ্যদ্রব্য আমরা কাঁচাবাজার থেকে কিনে আনি, এর সাথে চলে আসতে পারে অনেক মারাত্মক জীবাণু।

বাসার বাথরুমে, রান্নাঘরের খাবারের পাশে রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে পারে জীবাণু বহনকারী পোকামাকড় যেমন- তেলাপোকা, ইঁদুর ইত্যাদি। এসব জীব বহন করে অনেক মারাত্মক জীবাণু। এসব জীবাণুর হাত থেকে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের ঘরবাড়ি ও এর আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে?

সাধারণত বাসার মেঝে সবাই ঝাড়ু দিয়ে ধুলা সাফ করে। আর আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে ধুলা ঝেড়ে সাফ করা হয়। এরপরে পানি দিয়ে মুছে শুকিয়ে যাওয়ার পরে অনেকটাই ঘর পরিষ্কার হয়ে যায়। আরও জীবাণুমুক্ত করতে পানি দিয়ে মোছার সময়, স্যাভলন বা ডেটল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সাধারণত সারা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে একে জীবাণুমুক্ত করে ফেলা উচিৎ।

কিন্তু কিছু কিছু ঘরে শুধু এতটুকু করলেই সব হয়ে যায় না। আপনার ঘরের মেঝেতে কার্পেট থাকলে কার্পেট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যদিও আমাদের দেশে সাধারণত কার্পেট পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো হয় ভালমতো পরিষ্কার করার জন্য। রোদের কথা আসার সাথে একটি ছোট্ট জিনিস জেনে রাখা যাক- রোদ খুব ভালো জীবাণুনাশক, তাই ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস আসার সুযোগ থাকা উচিৎ যাতে করে অনেক জীবাণু রোদের আলোতে ধ্বংস হতে পারে। এবার ঘরের কিছু বিশেষ বিশেষ জায়গা কীভাবে পরিষ্কার করা যায় সেরকম কিছু বিষয় আসুন জেনে নিই।

রান্নাঘর

কাঁচাবাজার থেকে মাছ, মাংস, শাকসবজি কাঁচা অবস্থায় এনে প্রথমে রান্নাঘরে রাখা হয়। কাঁচা অবস্থায় এবং বাজার থেকে এসবের সাথে অনেক জীবাণু আসে যেগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এজন্য রান্নাঘরকে রাখতে হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত।

কাঁচা খাদ্যসামগ্রী কাটাকুটির পরে সে জায়গাটি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এসময় হাতে রাবার বা ওয়ান টাইম ল্যাটেক্স গ্লাভস ব্যবহার করা উচিৎ। সাধারণত ওয়াইপ্স বা পাতলা পরিষ্কার শুকনা কাপড় ব্যবহার করা উচিৎ এর জন্য। ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, ফ্রিজের হাতল, কাউন্টার টপ, চুলার পাশের জায়গা, চুলা, বেসিন এসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা অবশ্যই দরকার। সম্ভব হলে মাসে একবার ব্লিচিং পাউডার পরিমাণমতো পানিতে দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

বাথরুম

বাসার সবচেয়ে জীবাণুযুক্ত স্থান হলো আমাদের বাথরুম। বাথরুমের পানির ট্যাপ, বেসিন, কমোড কিংবা প্যানে থাকে হাজারো জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া। এই জায়গাগুলো খুব সচেতনভাবে আমাদের পরিষ্কার করতে হবে।

টয়লেটের ফ্লাশের ঢাকনা, হ্যান্ডেল, কমোডে বসার স্থান এবং এর ঢাকনা, বেসিন এবং শাওয়ারের হ্যান্ডেল, লাইট সুইচ (অবশ্যই অফ থাকা অবস্থায়), বাথরুমের সব উপকরণ- এসব কিছুই উপযুক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন- বেসিন, কমোড, প্যান মাঝেমধ্যে হারপিক বা সোডা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও নিশ্চিত করতে হবে যাতে তা স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যাতে আসতে পারে।

এসব পরিচ্ছন্নতার কাজের পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালমতো হাত ধুতে হবে, যাতে আপনার হাতে জীবাণু লেগে না থাকতে পারে। ঘর পরিষ্কার করার সাথে সাথে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আবর্জনা বাড়ির পাশে ফেলে পরিবেশ ময়লা করা যাতে না হয়। আবর্জনা ফেলতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে।

ভাঙা টব, পাত্র, পানি জমতে পারে এমন বস্তু ভালমতো ফেলতে হবে ডাস্টবিনে, যাতে মশা না হতে পারে। এভাবে নিয়মমতো নিয়মিত ঘর এবং ঘরের আশেপাশে সচেতনভাবে পরিষ্কার করে রাখলে স্বাস্থ্য থাকবে ভালো, মন থাকবে প্রফুল্ল। আসুন সবাই নিজেদের বাড়িঘর এবং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার করে রাখি এবং সুস্থ থাকি।