কংক্রিট ফিনিশিংয়ের রকমফের

প্রাচীনকালে বসতবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো মাটি, চুন, সুড়কি, পাথর ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে রোমানরা প্রথম অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন বস্তুর মিশ্রণে একধরনের মিশ্রণ ব্যবহার শুরু করে। বালু, চুন, সুড়কির সাথে পরিমাণমতো পানি দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণ কংক্রিট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অবকাঠামো নির্মাণে। আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই রোমানদের মাঝে কংক্রিট অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপাদান হিসেবে প্রচলিত হয় এবং কালের পরিক্রমায় কংক্রিটের মিশ্রণে চুনকে প্রতিস্থাপন করে সিমেন্ট।

কংক্রিটের ব্যবহার যেমন সহজ, তেমনই নিরাপদ ও বহুমাত্রিক। অবকাঠামোতে যেকোনো প্রকার ডিজাইন প্রয়োগেই কংক্রিট ব্যবহার করা যায়। কংক্রিটের ফিনিশিংয়ের রকমভেদের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে সৃজনশীল নির্মাণশৈলির নান্দনিকতা।

. ট্রোয়েল ফিনিশ

রাজমিস্ত্রী একপ্রকার হাতলযুক্ত মসৃণ স্টিলের গঠন নিয়ে কংক্রিটের ঢালাইয়ের উপর বারবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছেন- এই দৃশ্য আমাদের সকলের নিকটই সুপরিচিত। এরূপ ফিনিশিংকেই মূলত ট্রোয়েল ফিনিশিং বলা হয়। এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ফিনিশিং। মূলত কংক্রিটের ঢালাইয়ের কাজ হয়ে গেলে পৃষ্ঠতল মসৃণ ও সমতল করে দেয়াই ট্রোয়েল ফিনিশ। রাজমিস্ত্রীদের হাতে সচরাচর দেখা ম্যানুয়াল ট্রোয়েলের পাশাপাশি আজকাল যান্ত্রিক ট্রোয়েলের ব্যবহারও বেড়েছে।

২. ব্রুম ফিনিশ

এ ধরনের কংক্রিট ফিনিশে কংক্রিটের পৃষ্ঠতল মসৃণ রাখা হয় না। অবশ্য অনেকে একে ট্রোয়েলড-ব্রুমও বলে থাকে এজন্য যে ট্রোয়েল দিয়ে প্রথমে কংক্রিট মসৃণ করে সমতল করার পরই এর উপর ব্রুম বা ঝাঁটা দিয়ে টেনে টেনে একে অমসৃণ করা হয়। ব্রুম ফিনিশিংয়ে সময়ের ব্যাপারে বিশেষ সাবাধান হতে হয়। ট্রোয়েলের কাজ শেষ হবার সাথে সাথেই ব্রুমের কাজ শুরু করে দিতে হয়, অন্যথায় সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তা করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ফিনিশিং প্রধানত পৃষ্ঠতল যেন পিচ্ছিল না হয়ে যায় সে উদ্দেশ্যে করা হয়।

. স্ট্যাম্পড ফিনিশ

নাম থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব, কেননা স্ট্যাম্পড কংক্রিট ফিনিশিংয়ে আক্ষরিক অর্থেই কংক্রিটের উপর স্ট্যাম্পিং করা হয়। কংক্রিটের ঢালাই যথাযথভাবে ট্রোয়েল দিয়ে মসৃণ করার পর কংক্রিট নরম থাকতেই তার উপর কোনো নমুনা বস্তু দিয়ে চেপে সেটির আকৃতি ফুটিয়ে তোলার নাম স্ট্যাম্পড ফিনিশ। এটি মূলত সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে। স্ট্যাম্পড করার পর কংক্রিটের মেঝে দেখতে পাথর, স্লেট, ইট কিংবা যথাযথ উপায়ে করতে পারলে কাঠের মতোও হয়। বাসাবাড়িতে সাইডওয়াক কিংবা রাস্তায় ফুটপাতে, গাড়ির গ্যারেজে এ ধরনের ফিনিশিং দেয়া হয়।

. সল্ট ফিনিশ

সদ্য ঢালাই করা কংক্রিটের উপর এবড়োথেবড়ো ক্রিস্টাল আকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথড়ের টুকরো ফেলে তা রোলার দিয়ে চেপে মসৃণ করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে সল্ট ফিনিশিং বলে। কংক্রিট শক্ত হবার পর মেঝেটি ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সল্ট ফিনিশিংয়ের সৌন্দর্য বোঝা যায়। অবশ্য সৌন্দর্য এখানে গৌন ব্যাপার। মুখ্য হলো মেঝে পিচ্ছিলরোধী করা। সাধারণ সুইমিংপুলে এ ধরনের ফিনিশিং ব্যবহার করা হয় যার উপর সহজে শ্যাওলা পড়ে না কিংবা পিচ্ছিল হয়ে যায় না।

৫. এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ

এটাও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। মূলত ট্রোয়েলড ফিনিশের উপর অতিরিক্ত একস্তরের কংক্রিট বা সিমেন্ট যোগ করাই এক্সপোজড এগ্রিগেট ফিনিশ। প্রথমে ট্রোয়েল দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই মসৃণ করা হয়। এরপর তা থেকে কয়েক মিলিমিটারের মতো চিকন একটি আবরণ পাওয়ার ফ্ল্যাটার বা ডায়মন্ড পলিশার দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই আবরণ উঠিয়ে নিলে ভেতরের কংক্রিটের পৃষ্ঠতল আরো মসৃণ হয়। এরপর তার উপর সিমেন্টের মিশ্রণের একটি অতিরিক্ত লেয়ার যোগ করা হয় যা একে অত্যন্ত মসৃণ এবং তকতকে করে তোলে।

. সোয়ার্ল ফিনিশ

কংক্রিটের ফিনিশের নানা রকমভেদের মাঝে এটি সবচেয়ে সৃজনশীলগুলোর একটি। প্রথম কংক্রিটের আবরণ সমতল করার পর তার উপর জ্যামিতিক মাপ ঠিক রেখে অভিন্ন পরিমাণ এবং আকার বজায় রেখে কংক্রিট মিশিয়ে দেয়া হয়। ফলে মেঝের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কংক্রিটের বৃত্তাকার গঠন তৈরি হয় যা মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একইসাথে হাঁটাচলার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়, কেননা এতে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

অবশ্য এটি ঘরের বাইরের মেঝেতেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যেসব স্থানে অধিক হাঁটাচলা হয় এবং মানুষের পায়ের ঘর্ষণে মেঝে খুব দ্রুতই ক্ষয় হয়ে কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেসব স্থানে এই প্রক্রিয়ায় কংক্রিটের ফিনিশিং দেয়া হয়। সোয়ার্ল ফিনিশিংয়ের ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না, কারণ এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।

. পলিশড ফিনিশ

পলিশড ফিনিশ মূলত এরূপ যে মেঝে টাইলসের মতো মসৃণ ও আরামদায়ক হবে এবং তা এতটাই চকচকে হবে যে তাতে বিভিন্ন বস্তুর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণ বড় হলঘরে, প্রদর্শনীর মেঝেতে এ ধরনের ফিনিশ ব্যবহার করা হয়। পলিশড ফিনিশ যান্ত্রিকভাবেই করা হয়।

. কালারড ফিনিশ

কালারড বা রঙিন ফিনিশ মূলত মেঝেকে রঙিন করার জন্যই করা হয়। মেঝেকে রঙিন করতে দুটি উপায় ব্যবহার করে থাকেন রাজমিস্ত্রীরা। পিগমেন্ট বা একপ্রকার বিশেষ রঞ্জক পদার্থ প্রথমেই কংক্রিটের সাথে মিশিয়ে নেয়া হয় এবং তা ফিনিশিং করলে রঙ ফুটে ওঠে। অথবা কংক্রিট ফিনিশিং সম্পন্ন করে তা শুকিয়ে যাবার পূর্বেই তার উপর পছন্দমতো রঙের স্ট্রেইন প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখকৃত কংক্রিট ফিনিশিংগুলো হলো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও ব্যবহৃত কংক্রিটের ফিনিশিং। এগুলো ছাড়াও ডাইড, মার্বেলড, ফ্ল্যাশড, মাইক্রো টপিং, স্যান্ড ব্লাস্টারসহ নানা প্রকারের কংক্রিট ফিনিশিং রয়েছে।

বাড়ি নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের প্রচলন

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বাড়িঘর নির্মাণের পদ্ধতিতে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। অন্যান্য যান্ত্রিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে সাথে চোখে পড়ার মতো একটি পরিবর্তন হলো অবকাঠামো নির্মাণে ক্রমবর্ধমান সিমেন্টের ব্লক ব্যবহার। ইটের পর ইট সাজিয়ে রাজমিস্ত্রির হাতে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ানো ভবনগুলোর পাশেই আজকাল দাঁড়াচ্ছে সিমেন্ট ব্লক আর ‘হলো’ (ফাঁপা) ব্লকের তৈরি দালানকোঠা। দেখতেও মন্দ নয় ব্লকের তৈরি কাঠামো, বরং নির্মাণশৈলী ভালো হলে ব্লকের তৈরি বাড়িঘরেই আধুনিকতার ছাপ ফুটে ওঠে বেশি।

ইট নাকি ব্লক- বাড়ি তৈরির সময় তাই দ্বিধান্বিত হয়ে যান অনেকেই। দুটোরই রয়েছে নিজস্ব ধাঁচ, সৌন্দর্য আর সুবিধাদি। উভয়েই মজবুত, বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাপ ও চাপ সহনীয়। বাড়ির নকশা অনুযায়ী যেকোনোটিই বেছে নেয়া যেতে পারে নির্দ্বিধায়। তারপরও, দুটোর ব্যবহারের সুবিধাগুলো জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

সিমেন্ট ব্লক বনাম ইট

সিমেন্ট ব্লক সাধারণত ২০০ X ৪০০ X ২০০ মি.মি. (৭.৮৭ X ১৫.৭৫ X ৭.৮৭ ইঞ্চি) আকারের হয়ে থাকে, যেগুলো ২০০ মি.মি.-এর (৭.৮৭ ইঞ্চি) পুরু দেয়াল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। চিকন দেয়ালের জন্য ব্যবহার করা হয় ১০০ X ৪০০ X ২০০ মি.মি. (৩.৯৪ X ১৫.৭৫ X ৭.৮৭ ইঞ্চি) আকারের ব্লক। ইট সাধারণত ২৩০ X ১১০ X ৭৫ মি.মি. (৯.০৬ X ৪.৩৩ X ২.৯৫ ইঞ্চি) আকারের হয়ে থাকে।

ব্লকের তুলনায় ইটের ওজন কম হওয়ায় কাজ করার ক্ষেত্রে এটি সুবিধাজনক। সলিড (নিরেট) ব্লকগুলো আকারে বড় ও ভারী হলেও ‘হলো’ (ফাঁপা) ব্লকগুলো বেশ হালকা এবং কাজ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। ‘হলো’ ব্লকের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এর ভেতরে ফাঁকা স্থান থাকায় এটি ইট এবং সলিড ব্লক উভয়ের তুলনায় অধিক তাপনিরোধী। চাপ সহনশীলতাও ইটের চেয়ে ব্লকের বেশি।

অন্যদিকে, বর্ষাকালে পানি অধিক পানি শোষণ করায় ইটের দেয়ালে ছত্রাক গজায়, ব্লকের দেয়ালে যা অত সহজে জন্মাতে পারে না। আবার ব্লকের স্থায়িত্বও ইটের চেয়ে কিছু বেশি। নির্মাণকাল বিবেচনায় উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। ব্লকের আকার ইটের তুলনায় বড় হওয়ায় ব্লক দিয়ে দেয়াল নির্মাণ দ্রুত হয়। আবার ব্লকের চেয়ে ইট ছোট ও হালকা হওয়ায় ইট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ অপেক্ষাকৃত সহজ।

ইটের কিছু বিশেষ সুবিধা

১. ব্লকের চেয়ে ইটের তাপ শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি। ইটের কাঠামো ও গঠন এমন যে এটি অধিক তাপ ধারণ করতে পারে, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘থারমাল ম্যাস’। দিনভর তাপ ধারণ করলেও রাতের বেলা দ্রুত তাপ ছেড়ে দিতে সক্ষম ইট।

২. ‘হলো’ ব্লকের তুলনায় ইটের স্থায়িত্ব বেশি। ইটের তৈরি বাড়ি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হবার কারণেই বাড়ি নির্মাণে এটি এখনও সর্বাধিক জনপ্রিয় উপকরণ।

৩. ইটের একটি মৌলিক গুণ হলো ‘কম্প্রেসন’ বা সংনমন। ইট তৈরিতে এর উপকরণ অর্থাৎ মাটি এতটা কমপ্রেস করা হয় যে ইটের ঘনত্ব সহজেই ব্লকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হয়। ফলে ইটের তৈরি দেয়ালে কোনোরূপ দাহ্য বিস্ফোরণ বা দহনের সম্ভাবনা থাকে না।

৪. রক্ষণাবেক্ষণে ইটের দেয়ালের চেয়ে সুবিধাজনক আর কিছুই নেই। ইটের দেয়ালে নির্মাণ চলাকালে কিছু রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া পরবর্তীতে আর তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। যদিও ব্লকের দেয়াল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্লকের কিছু বিশেষ সুবিধা

১. ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খরচ কমে আসা। নির্মাতারা অনুমান করে থাকেন যে ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ ইটের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম খরচে হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৪টি ইটের সমান একটি ব্লক বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫-৪০ টাকায়। ইটের ব্যবহারে যেখানে অধিক সিমেন্ট, অধিক সময়, এবং ফলস্বরূপ রাজমিস্ত্রির পেছনে অধিক ব্যয় হয়, ব্লকের ব্যবহারে সাশ্রয় হয় সবগুলোই।

২. ব্লকের একটি বড় গুণ হলো এটি পরিবেশবান্ধব। ব্লক তৈরি করা হয় ফ্লাই অ্যাশ থেকে। আর ফ্লাই অ্যাশ হলো তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার একটি অবশেষ মাত্র, যা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত হয়। এখানে ব্লকের কল্যাণে দ্বিমুখী লাভ পরিবেশের। প্রথমত, ব্লক উৎপাদনে মাটি পোড়াতে হচ্ছে না, ফলে চাষযোগ্য জমি বা পাহাড় খনন করতে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ফ্লাই অ্যাশ একটি বায়ু দূষণকারী উপাদান যা ব্লক নির্মাণে ব্যবহৃত হলে পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়। এছাড়াও, ফ্লাই অ্যাশের দাম কম হওয়ায় ব্লক নির্মাণে খরচও কম হয়।

৩. ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে হালকা হলো ‘অটোক্লেভড এরিয়েটেড কনক্রিট’ ব্লক বা এএসি ব্লক। এই ব্লক দিয়ে দেয়াল নির্মাণ অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ বলে এটি নির্মাতাদের পছন্দের উপকরণ হয়ে উঠছে।

৪. বর্তমানে বাড়ি নির্মাণের সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় যে বিষয়ে তা হলো বাড়ির ভূমিকম্প সহনশীলতা। নানা কারণে বেড়েছে ভূমিকম্প আর টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই অবকাঠামো নির্মাণের একটি প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হলো একে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা। আর এখানে বেশ এগিয়েই থাকে ব্লক। যেকোনো প্রকার কম্পন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইটের চেয়ে ব্লকের কার্যকারিতা অনেকাংশেই বেশি।

৫. শহুরে বাড়িঘর, বিশেষ করে ব্যস্ত সড়কের পাশে কিংবা শিল্প-কারখানাবেষ্টিত অঞ্চলে বাসা বাড়ি নির্মাণে ব্লক হতে পারে দারুণ উপযোগী। একটি ইট এককভাবে অধিক ঘন হলেও ইটের গাঁথুনিতে তুলনামূলকভাবে অধিক সংখ্যক সংযোগস্থল থাকে যা ব্লকের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম। ফলে ব্লকের তৈরি বাসাবাড়ি ইটের তৈরি বাসাবাড়ির তুলনায় অধিক শব্দনিরোধী। তাই শব্দবহুল এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ব্লকই শ্রেয়।

ইট এবং ব্লক, উভয়ের গুণাগুণ এবং বিশেষ সুবিধাদি জানবার পর কোনোটিকেই ব্যবহারের অনুপযোগী বলার সুযোগ নেই। বরং সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী। কেউ কেউ চান নির্মাণকাজ শেষে আর কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে। তাদের প্রথম পছন্দ হবে ইট। আবার যারা খরচ বাঁচিয়ে বাড়ি নির্মাণ এবং পরবর্তীতে নিয়মিত এর পরিচর্যা, পরিবর্তন আর পরিবর্ধনের ব্যাপারে আগ্রহী, তাদের জন্য ব্লকই যুতসই।

রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল ধরার কারণ ও এর প্রতিকার

কংক্রিট স্ল্যাবের ব্যবহার ছাড়া নির্মাণ কাজ প্রায় অকল্পনীয়। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ দালানের স্ল্যাবই রিইনফোর্সড কংক্রিট স্ল্যাব। কংক্রিট স্ল্যাবে ফাটল দেখা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির কারণে এই ফাটল দেখা দিতে পারে। জেনে নেয়া যাক কংক্রিট স্ল্যাবের ফাটল-বৃত্তান্ত।

Continue reading

ইটের কাজের নানা উপায়

আমাদের দেশে পাকা দালান বলতে ইটের ব্যবহার সবক্ষেত্রে দেখা যায়। সেই ইটের গাঁথুনিতেও আছে নানা উপায় এবং নিয়ম কানুন।

গাঁথুনিতে ইট সাজানো বা জোড়া দেয়ার কৌশলকে বন্ড বলে। এতে ইটকে এভাবে জোড়া দেওয়া হয় যাতে উপরের বা নিচের দুই স্তরের খাড়া জোড়া একই খাড়া লাইনে না থাকে।

কারিগরি নিয়ম-কানুন না মেনে ইট বা পাথর গাঁথুনি করলে তা দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য হয় না। স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য, আর্থিক দিক, ভারবহন ক্ষমতাসহ নানাদিক বিবেচনায় দেয়াল গাঁথুনিতে বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইটের কাজে বন্ডের প্রয়োজনীয়তা  

1. কাঠামো স্থায়ী ও শক্তিশালী করা।

2. ইটের মধ্যকার বন্ধন সুদৃঢ় করা।

3. গাঁথুনিতে উল্লম্ব বা খাড়া জোড়া পরিহার করা।

4. নির্মাণ কাজ দ্রুত করা।

5. দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।

6. শিয়ার ফোর্স প্রতিরোধ করা।

7. দেয়ালের উপর আসা ভার সমানভাবে ও নিরাপদে বণ্টন করা।

ইটের বন্ডের প্রকারভেদ

গাঁথুনিতে ব্যবহৃত বন্ডকে নানাভাগে ভাগ করা যায়

  1. ইংলিশ বন্ড (English bond)
  1. ফ্লেমিশ বন্ড (Flemish bond)
  1. স্ট্রেচার বন্ড বা রানিং বন্ড (Stretcher bond)
  1. হেডার বন্ড (Header bond)
  1. গার্ডেন ওয়াল বন্ড (Garden wall bond)
  1. রেকিং বন্ড (Raking bond)
  1. ডাচ বন্ড (Dutch bond)

৪. ফেসিং বন্ড (Facing bond)

9. ইংলিশ ক্রস বন্ড (English cross bond)

10. ব্রিক-অন-এজ বন্ড (Brick on edge bond)

প্রচলিত ইটের বন্ড এবং এদের ব্যবহার

আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটি বন্ডে ইট গাঁথুনি পদ্ধতি এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো নিম্নে দেওয়া হল:

ইংলিশ বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে এক স্তর হেডারের উপর অপর স্তর স্ট্রেচার ইট স্থাপন করা হয় অর্থাৎ এক স্তরে  ইটগুলো লম্বালম্বিভাবে এবং অপর স্তরে ইটগুলো আড়াআড়িভাবে স্থাপন করা হয়। এ বন্ড খুবই শক্তিশালী এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। খাড়া জোড়াগুলো যাতে একই উলম্ব রেখায় না পড়ে সেজন্য হেডার স্তরের প্রথম হেডার ইটের পর একটি কুইন ক্লোজার বসাতে হয়।

হাফ ইটের মোটা পুরুত্বের যেকোনো দেয়াল নির্মাণে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা হয়।

ফ্লেমিশ বন্ড :

এই বন্ডে একই স্তরে একটি ইট লম্বালম্বি ও পরেরটি আড়াআড়ি করে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়। ফ্লেমিশ বন্ডে প্রতিটি স্তরে হেডার ইটের কেন্দ্র বরাবর এর উপরের এবং নিচের স্তরের স্ট্রেচার ইটের কেন্দ্র থাকবে। প্রতিটি হেডারের দুই পাশে একটি করে স্ট্রেচার ইট থাকবে। ইংলিশ বন্ড থেকে এটি দেখতে সুন্দর হলেও অধিক সংখ্যক ক্লোজার ব্যবহার করার কারণে এই বন্ড দূর্বল হয়।

দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং কারুকার্যের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ নান্দনিক ফ্লেমিশ বন্ড।

স্ট্রেচার বন্ড : 

এই প্রকার বন্ডে প্রতিটি স্তরে দেয়ালের দৈর্ঘ্য বরাবর ইটকে স্ট্রেচার হিসেবে স্থাপন করা হয়। কেবলমাত্র অর্ধ ইট বা ১২.৫ সে.মি পুরুত্বের দেয়ালে নির্মাণে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের বন্ডে গাঁথুনিতে যথাযথ বন্ড সৃষ্টি হয় না। অর্ধ ইটের বেশি পুরুত্বের দেয়ালে এ বন্ড ব্যবহার করা যায় না। একে রানিং বন্ডও বলে।

চিমনির দেয়াল, পার্টিশন এবং ডিভিশন ওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে স্ট্রেচার বন্ড ব্যবহৃত হয়। 

হেডার বন্ড :

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি স্তরের প্রতিটি ইটকে হেডার হিসেবে স্থাপন করা হয়। এক ইটের দৈর্ঘ্যের সমান বা ২৫ সে.মি. পুরুত্বের দেয়াল বা বাঁকা দেয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বন্ড বেশি উপযোগী।

বাঁকা দেয়াল এবং ফুটিং নির্মাণের সময় হেডার বন্ড ব্যবহার করা হয়। 

গার্ডেন ওয়াল বন্ড :

গার্ডেন ওয়াল, কম্পাউন্ড ওয়াল ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য যে বন্ড ব্যবহৃত হয় তাকে গার্ডেন ওয়াল বন্ড বলে। সাধারণত ২৫ সে.মি বা এক ইট পুরু দেয়ালের ক্ষেত্রে এ বন্ড ব্যবহার করা হয়। ইংলিশ বা ফ্লেমিশ উভয় বন্ডে এ দেয়াল গাঁথা যায়।

সীমানার দেয়াল, বাগানের দেয়াল এই ধরনের হালকা নির্মাণে গার্ডেন ওয়াল বন্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাড়ি নির্মাণে ইট বহুল প্রচলিত একটি উপাদান। সেক্ষেত্রে বাড়ির স্থায়িত্ব এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিজের কষ্টের অর্থ পরিশ্রম ব্যয়ে গড়ে তোলা বাড়িটি বাসযোগ্য এবং স্থায়ী হওয়া জরুরি। সবকিছুর সাথে ইটের দালানে বন্ডের বিষয়টিও লক্ষ্য রেখে বানালে নির্মাণ হবে সমৃদ্ধ এবং স্থায়ী।

মেঝের একাল সেকাল

ঘরের মাঝে আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি সংস্পর্শে থাকে মেঝে, সারাক্ষণ মেঝের ওপর দিয়েই চলাচল হয় সবার। তাই ফ্লোর ফিনিশিংয়ের বিষয়টি বাড়ি নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

Continue reading

নির্মাণশিল্পের আধুনিক সদস্য: রঙিন কংক্রিট

রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।

Continue reading

সিমেন্ট ব্যবহারের আদ্যোপান্ত: কীভাবে বুঝবেন সিমেন্ট ভালো না খারাপ?

নির্মাণশিল্পের একদম সূচনালগ্নে মানুষ তার কাজে ব্যবহার করেছে মাটির মতো প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য মালামাল। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে আমাদের কাছে এসেছে নানান রকমের নির্মাণ উপকরণ। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতেই এখন বহু ধরনের উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনই একটি উপাদান হলো সিমেন্ট।

যেকোনো দালান নির্মাণে বালি, কংক্রিটের মিশ্রণের বাইন্ডার হিসেবে ধরে রাখা থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাত- সব ক্ষেত্রেই সিমেন্ট অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে এর উৎপাদন আর বাজারজাতকরণ। এর প্রমাণ মেলে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন মানের এবং দামের  সিমেন্টের সমাহার থেকে। নিজের নির্মাণাধীন বাড়িটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন।

নানা রকমের সিমেন্ট

নির্মাণকাজের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের বিভিন্ন রকমের সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন উপাদানের অনুপাতে মিশ্রণ ও অন্যান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব ভিন্নতা আনা যায় সিমেন্টে। 

বিভিন্ন সিমেন্টের নানা ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

দ্রুত শক্তি প্রদানকারী সিমেন্ট

সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতোই এই সিমেন্টের গুণাগুণ। অতিরিক্ত মসৃণ ও মিহি উপকরণ এবং বেশি ট্রাইক্যালসিয়াম সিলিকেটের জন্য এর সাধারণ শক্তিমান পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট থেকে বেশি হয়ে থাকে। বলা হয় যে, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহারের ৭ম দিনে যে সুরক্ষা থাকে তা এই সিমেন্টে ৩য় দিনেই অর্জন সম্ভব। এই দ্রুততার জন্য প্রিফ্যাব্রিকেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে এর ব্যবহার বহুল।

কম তাপমাত্রার সিমেন্ট

ডাইক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে ট্রাইক্যালসিয়াম হ্রাস করে এই সিমেন্ট তৈরি হয়, যার প্রাথমিকভাবে সেটিংয়ের সময় অন্যান্য সিমেন্ট থেকে বেশি।

সাদা সিমেন্ট

সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতো এই সিমেন্ট সাদা রংয়ের হয়ে থাকে এবং এর জন্য এর সাথে লাইমস্টোন ও চায়না ক্লে ব্যবহার করা হয়। রঙের জন্য সাধারণত বাসা-বাড়ির ভেতরে এই সিমেন্টের কাজ করা হয়।

নির্মাণকাজে এই সিমেন্টগুলা ব্যবহারের পাশাপাশি কাজের ভিন্নতার দরুণ আরও কিছু সিমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। 

যেমন-

  • সালফেটরোধক সিমেন্ট
  • পানিরোধক সিমেন্ট
  • রঙিন সিমেন্ট
  • পোর্টল্যান্ড পোজোলানা সিমেন্ট
  • হাই অ্যালুমিনা সিমেন্ট
  • বায়ুশোষক সিমেন্ট

সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই 

সাইটে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত সিমেন্টের সব ধরনের গুণাগুণ যাচাই করা সম্ভবপর না হলেও কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সাহায্যে সহজে সিমেন্টের সার্বিক মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

প্যাকেজিংয়ের সময়

সিমেন্টের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনের তারিখ আছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিৎ। সিমেন্ট অতিরিক্ত পুরাতন হয়ে গেলে তা না ব্যবহারই শ্রেয়। 

সিমেন্টের রং

সাধারণত সিমেন্ট হাল্কা ধূসর থেকে ধূসর হয়ে থাকে। 

রাবিং টেস্ট

সামান্য সিমেন্ট হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে মসৃণতা পরীক্ষা করা যায়। 

তাপমাত্রার পরীক্ষা

সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে তার তাপমাত্রা যাচাই করে নিতে হয়। সাধারণত সিমেন্টের তাপমাত্রা কম হয় এবং হাতে ঠাণ্ডা অনুভূতির অর্থ হলো প্যাকেটের ভেতর কোনো প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের ক্ষতিসাধন হয়নি।

ফ্লোটিং টেস্ট

ভালো মানের সিমেন্ট পানিতে ডুবে যায়, ভেসে থাকে না। এক বালতি পানিতে সিমেন্ট নিয়ে পরীক্ষা করেও এর এই গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

প্রাথমিক রং, গন্ধ কিংবা মসৃণতা যাচাইয়ের সাথে সাথে আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে আমরা বিশদভাবে সিমেন্টের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি। 

ক্লে-ব্রিক ও গ্রিন কনস্ট্রাকশনের আদ্যোপান্ত

মানুষ সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মাটি ব্যবহার করে বাসা তৈরি করে থাকে। সভ্যতার ক্রমোন্নতির সাথে সাথে এবং মানুষের বাসা বাড়ি নির্মাণের সুবিধার জন্য মাটিকে রূপান্তর করে সেটাকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে সহজে ব্যবহারযোগ্য উপকরণের সন্ধান পায় তারা। সেটা হলো ইট, যা আজকে নির্মাণের পরিভাষায় ক্লে-ব্রিক নামে সর্বাধিক পরিচিত।

ইটের মড্যুলারিটি, ব্যবহারের সুবিধা, কম খরচ, টেকসই ধরন এবং আকৃতি সব কিছু মিলিয়ে একে করে তুলেছে সর্বাধিক পরিচিত এবং ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী। টেকসই হবার প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন প্রথমে যে কথাটা মাথায় আসে তা হলো, গ্রিন বিল্ডিং। গ্রিন বিল্ডিং কী কী গুণাগুণের জন্য গ্রিন হয় তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমরা আজকে গ্রিন বিল্ডিং বানানোর একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট- গ্রিন কনস্ট্রাকশন নিয়েও আলোচনা করব।

ক্লে-ব্রিক কী? 

ক্লে-ব্রিক হলো একপ্রকারের ইট, যা মাটি কেটে কম্প্রেস করে সেটাকে ছাঁচে রেখে উপযুক্ত আকৃতি প্রদান করে তৈরি করা হয়। এটা মানুষের তৈরি করা অন্যতম প্রাচীন নির্মাণসামগ্রী। নির্মাণ ও ব্যবহারের সহজতা, সহজলভ্যতা, টেকসই প্রকৃতি, আবহাওয়া ও দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা ইত্যাদি গুণাগুণের জন্য এটি সর্বাধিক প্রচলিত ও পরিচিত একটি নির্মাণ সামগ্রী। দালানের ভেতরে-বাইরে থেকে শুরু করে এমনকি রাস্তার পেভিং ম্যাটেরিয়ালেও ক্লে-ব্রিক ব্যবহার করা হয়। এর ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা একে আলাদা একটা পরিচিতি দিয়েছে।  

কীভাবে তৈরি হয়?

 ক্লে ব্রিক খুব সহজেই মাটি ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এরপরে মিশ্রণটিকে পছন্দসই মাপের ছাঁচে ঢেলে সেটাকে শক্ত করে আকৃতি প্রদান করতে হয়। এই মাটি যাতে আগাছা বা কংকরমুক্ত হয় সেদিকে খুব সচেতনভাবে খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে এই ইটের অর্গানিক কম্পোনেন্ট বাসা-বাড়ির ক্ষতি করবে। এই মিশ্রণ তৈরির জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি হতে হবে। সাধারণত মিহি দানার টপসয়েল ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। একে ছাঁচে ঢেলে আকৃতি প্রদান করে এরপরে সেটাকে সাধারণভাবে রোদে শুকাতে হয়। আজকাল ইন্ডাস্ট্রিতে রোদে শুকানো হয় না, আগে চুল্লিতে উত্তপ্ত করে সেটাকে শুকিয়ে এর পরে সেটা রোদে রাখা হয়। চুল্লীতে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতি দ্রুত পোড়ানো না হয়। সেক্ষেত্রে যেই সমস্যাটা হয় তা হলো, দ্রুত সংকোচন ঘটে। ফলে তা ফেটে যেতে পারে। এই জন্য কারখানায় চুল্লী পরিমিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে।

 

 ক্লে-ব্রিকের সুবিধা 

  – সাশ্রয়ী 

 – সহজে উৎপাদনযোগ্য

 – দীর্ঘস্থায়ী

 – নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক ব্যবহার

 – মডুলার নির্মাণ সামগ্রী, তাই অধিকাংশ স্ট্রাকচারের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যায়

 – বিভিন্ন আকৃতিতে তৈরি করা যায়

 – বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন- দালানের অভ্যন্তরের দেয়াল, বাইরের দেয়াল, পেভমেন্ট, জলাশয়ের ঘাট ইত্যাদি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়। 

অসুবিধা

 – জলীয়বাষ্প বাতাস থেকে শোষন করে নেয় ফলে সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে যায়

 – ভঙ্গুর

 – মাটি ও পানির সাথে অর্গানিক উপকরণ জমে স্ট্রাকচার দুর্বল করে দিতে পারে

 – সঠিক ব্যবহার না জানলে ভুল প্রয়োগবিধির জন্য ক্ষতি হতে পারে দালানের

 এবার আসুন আমরা গ্রিন কনস্ট্রাকশন সম্পর্কে জেনে নিই।

 

গ্রিন কনস্ট্রাকশন কী?

 একটি দালানের জীবদ্দশার সম্পূর্ণ সময়কাল ধরে রিসোর্স এফিসিয়েন্ট, এনার্জি এফিসিয়েন্ট এবং পরিবেশ-বান্ধব কিনা তার ভিত্তিতে দালানটিকে গ্রিন বিল্ডিং হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। প্ল্যানিং পর্যায় থেকে শুরু করে নির্মাণ, অপারেশন, মেইন্টেনেন্স এবং সবশেষে ডেমোলিশন পর্যন্ত যদি একটি দালান রিসোর্স এফিসিয়েন্ট, পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই হয় তাহলেই তাকে আমরা গ্রিন বিল্ডিং বলে আখ্যায়িত করে থাকি। এই জন্য নির্মাণ পর্যায়ে যাতে একেবারেই কম কার্বন নিঃসরণ হয় এবং সর্বনিম্ন ওয়েস্ট ম্যাটেরিয়াল বের হয় সেজন্য গ্রিন কনস্ট্রাকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 এর জন্য প্রয়োজন-

 – স্মার্ট, আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার, যাতে সময় ও লোকবলে সাশ্রয় হয়

 – গ্রিন তথা পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা

 – কনস্ট্রাকশন সিস্টেমকে প্ল্যানিং এর আওতায় আনা

 – অপ্রয়োজনীয় কোন ভাংচুর না করা যাতে ম্যাটেরিয়াল পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব হয়

 – যথাসম্ভব ম্যাটেরিয়াল পুনরায় ব্যবহার করা

 – পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডে অপচয় না করা

 – দালানের ভেতর পর্যাপ্ত আলো বাতাস সুনিশ্চিত করা যাতে করে এনার্জি সাশ্রয় হয়

 – কনস্ট্রাকশন ওয়েস্ট যথাযথভাবে ডিসপোজ করা

 – কনস্ট্রাকশন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা

 – কনস্ট্রাকশন সাইটের আশেপাশের লোকালয়ে মানুষের যাতে সমস্যা না হয় সেটির প্রতি যত্নশীল হওয়া 

 – নন-টক্সিক, নন-ভোলাটাইল অর্গানিক ও লোকাল ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা

 – ইন্টারন্যাশনাল কোড, LEED-এর নিয়মকানুন মেনে সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা উপযুক্ত এক্সপার্টের সহায়তায়

 – বিল্ডিং যাতে সহজে মেইন্টেনেন্স এর যোগ্য হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা

 – দালানের নির্মাণ যাতে এনার্জি এফিসিয়েন্ট হয় সেজন্য সোলার প্যানেল, ফ্লো কন্ট্রোলিং ট্যাপ ইত্যাদি আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা

গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি ও কনস্ট্রাকশন পদ্ধতি কেবল পরিবেশবান্ধব নয়, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বিশ্বের বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা এটি গ্রহণ করছে। এটি আধুনিক উন্নয়নের একটি প্রধান উদাহরণ যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের প্রয়োজনের সাথে আপস না করে বর্তমানের চাহিদা পূরণ করে। সেইসাথে এই পদ্ধতি বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে, যা পরে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আশীর্বাদ হিসাবে প্রমাণিত হবে, কারণ এটি শক্তি খরচ সীমাবদ্ধ করতে এবং টেকসই উন্নয়নের প্রচারে সহায়তা করে।

রেডিমিক্স কংক্রিট: কীভাবে ও কেন?

রেডিমিক্স কংক্রিট হলো ব্যাচে বানানো সাইট সুনির্দিষ্ট এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত কংক্রিট। সাধারণত পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, পানি, পাথর বা খোয়া এবং বালি পরিমাণমতো জমির মাটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভালোভাবে মিশিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় সেটা সাইটে ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক নির্মাণ কাজে রেডিমিক্স সিমেন্ট অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। এটি নির্মাণ কাজকে করেছে সহজ, দ্রুত এবং আরও নিখুঁত। যদিও এর দাম তুলনামূলক বেশি বাজারের খোলা সিমেন্টের চেয়ে, তবুও নির্মাণ কাজে এখন সর্বাধিক ব্যবহার করা হয় এই রেডিমিক্স কংক্রিটের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে।

সাধারণত রেডিমিক্স কংক্রিট বড় বড় প্রজেক্ট এবং সুউচ্চ দালানকোঠা নির্মাণকাজে ব্যবহার বেশি হয়। আসুন জেনে নেই রেডিমিক্স কংক্রিট নিয়ে অতি আবশ্যকীয় কিছু তথ্য।

কীভাবে মিক্সচার তৈরি করা হয়

মিক্সিং প্ল্যান্টে কী গ্রেডের কংক্রিট লাগবে এবং স্ট্রাকচারাল কনসাল্টেন্টের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ব্যাচ প্ল্যান্টে সূক্ষ্ম পরিমাপে খোয়া, বালু, পানি ও সিমেন্ট ওজন অনুপাতে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এর ফলে সাইটের প্রয়োজনমাফিক এবং নির্মাণ ধরনের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত মিশ্রণের কংক্রিট পাওয়া যায়। প্রথম রেডিমিক্স কংক্রিটের কারখানা ১৯৩০ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯৬০ সাল থেকে বড় পরিসরে এর চাহিদা বাড়তে থাকে।

রেডিমিক্স কংক্রিটের প্রকারভেদ

মিশ্রণের উপকরণ এবং এর ভিন্নতার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মূলত ৩ প্রকার।

১. ট্রানজিট মিক্স কংক্রিট – এই প্রকারের কংক্রিট বেশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দুই উপায়ে ট্রানজিট রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কারখানায় উপযুক্ত মিশ্রণ তৈরি করে সেটা ব্যারেল ট্রাক বা ইন-ট্রানজিট মিক্সিং ট্রাকের মাধ্যমে সাইটে পাঠানো হয়। এইসব ট্রাক যাত্রা পথেও মিক্স করতে থাকে যাতে করে সব উপকরণ শক্ত না হয়ে লেগে যায়। আরেকটি যে উপায়ে রেডিমিক্স সিমেন্ট ব্যবহারের পূর্বে পাঠানো হয় তা হলো, কাঁচামালগুলো শুকনা অবস্থায় পাঠানো হয় এবং অভিজ্ঞ লোকের নজরদারিতে উপযুক্ত পরিমাণে সেগুলো নিয়ে সাইটে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।

২. শ্রিংক মিক্স কংক্রিট – এই পদ্ধতিতে কংক্রিট আংশিকভাবে প্ল্যান্ট মিক্সারে মিশ্রিত হয় এবং তারপরে ট্রানজিটের সময় ট্র্যাক মাউন্টেড ড্রাম মিক্সারে ব্যালেন্স মিক্সিং করা হয়। ট্রানজিট মিক্সারের মিশ্রণের পরিমাণ কেন্দ্রীয় মিক্সিং প্লান্টে মিশ্রণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ড্রাম মিক্সার মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা স্থাপনের জন্য পরীক্ষা করা উচিত যাতে এই স্থান পরিবর্তনের জন্য মিশ্রণের অনুপাত যাতে সঠিক থাকে।

৩. কেন্দ্রীয় মিক্স কংক্রিট – একে সেন্ট্রাল ব্যাচিং প্লান্টও বলা হয় যেখানে ট্রাক মিক্সারে লোড করার আগে কংক্রিটটি পুরোপুরি মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও প্ল্যান্টকে ভিজা-ব্যাচ বা প্রাক-মিশ্রণ প্ল্যান্ট হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। কংক্রিট পরিবহনের সময়, ট্রাক মিক্সার কেবল নাড়াচাড়ার (এজিটেটর) যন্ত্র হিসাবে কাজ করে। কখনো কখনো, যখন কর্মক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা কম হয় বা সীসা কম হয়, স্থির রাখার (নন-এজিটেটর) ইউনিট বা ডাম্প ট্রাকগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যবহারবিধি

রেডিমিক্স কংক্রিট ভলিউমের ভিত্তিতে কেনা বেচা হয়। সাধারণত কিউবিক মিটার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিউবিক ইয়ার্ড) দ্বারা প্রকাশিত হয়। ব্যাচিং এবং মিক্সিং নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে করা হয়।

যুক্তরাজ্যে, প্রস্তুত-মিশ্রিত কংক্রিটটি অনানুষ্ঠানিকভাবে, উপাদান ওজন বা ভলিউম দ্বারা (১-২-২ বা ১-৩-৬-৬ সাধারণ মিশ্রণ) বা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড EN 206+ A1 এর আনুষ্ঠানিক স্পেসিফিকেশন মান ব্যবহার করে নির্দিষ্ট করা হয়, যা বিএস ৮৫০০ দ্বারা যুক্তরাজ্যে পরিপূরক করা হয়েছে এটি গ্রাহককে ভূমির অবস্থা, এক্সপোজার এবং শক্তির ক্ষেত্রে কংক্রিটটি কী সহ্য করতে সক্ষম হবে তা নির্দিষ্ট করা হয় এবং নির্মাতাকে এমন একটি মিশ্রণ ডিজাইন করতে দেয়, যা ব্যবহারের সাথে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এবং যা স্থানীয়ভাবে একটি ব্যাচিং প্ল্যান্টে উপকরণ উপলব্ধ।

রেডিমিক্স কংক্রিটের সুবিধাসমূহ

আসুন জেনে নেওয়া যাক রেডিমিক্স কংক্রিট ব্যবহারের সুবিধাগুলো। রেডিমেড কংক্রিট একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা মেনে নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশিনে উপযুক্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়। এতে ভুলের সুযোগ কম থাকে এবং প্রস্তুতির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে বেশি।

সাইটে মিশ্রণের ফলে অনেক ভুল ত্রুটির সুযোগ থাকে যা প্ল্যান্টে করলে অনেক কমে যায়। ফলে উপযুক্ত মিশ্রণ দালানের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং নির্মাণ করে সহজতর ও বিশ্বাসযোগ্য।

  • বিল্ডিংয়ে ব্যয় এবং বিস্তৃত ব্যবহারের কারণে রেডিমিক্স কংক্রিট প্রায়শই অন্যান্য উপকরণগুলোর উপরে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে যেমন- সুউচ্চ বিল্ডিং এবং সেতুর মতো বড় প্রকল্পগুলোতে এবং রাস্তাপথ নির্মাণের কাজে।
    গবেষণায় দেখা গেছে, একই ট্র্যাফিকের পরিমাণের সাথে এস্ফাল্ট কংক্রিটের ১০ থেকে ১২ বছরের জীবনের তুলনায় উচ্চ ট্র্যাফিক অঞ্চলে রেডিমিক্স কংক্রিটের গড় আয়ু ৩০ বছর হয়।
  • যেহেতু মেশিনে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা হয়, তাই স্বল্প সময়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মিশ্রণটি প্রস্তুত করা যায়। এতে করে নির্মাণের জন্য সময় সাশ্রয় হয় এবং নির্মাণ খরচও কমে আসে।
  • হ্যান্ডলিং এর সুবিধার জন্য রেডিমিক্স কংক্রিট মিশ্রণে ১০-১২% কম সিমেন্ট লাগে। এতে করে সিমেন্ট খরচ কম হয়। এডমিক্সচার এবং অন্যান্য সিমেন্টিং উপকরণ ব্যবহারে সিমেন্ট এর ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
  • অধিক দৃঢ় ও মজবুত স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয় যাতে করে পরবর্তীতে খরচ অনেক কমে যায়। দালানের স্থায়িত্ব বাড়ে, মানুষ নিরাপদে সুস্থভাবে জীবন নির্বাহ করতে পারে।

রেডিমিক্স কংক্রিট একটি পরিবেশ বান্ধব এবং সাস্টেইনেবল প্রযুক্তি যা আমাদেরকে সহজেই এবং দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: শাটারিং কী ও কীভাবে

আমাদের বাসা-বাড়ি নির্মাণের কাজে কংক্রিট এক অতি পরিচিত সুলভ উপকরণ। কংক্রিট সাধারণত সিমেন্ট, বালি, খোয়া, মশলার মিশ্রণকে পানির সাথে মিশিয়ে তরল করে ছাঁচে ঢালা হয়।

সাইটে এই ছাঁচ বা বক্স, যাতে তরল কংক্রিট ঢেলে তাকে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে এই তরল কংক্রিট পড়ে, প্রবাহিত হয়ে শক্ত হতে পারে, এরকম ছাঁচ ও এ সংক্রান্ত কাজকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় ফর্মওয়ার্ক বা শাটারিং বলা হয়।

এই ছাঁচ বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা যায় এবং অভ্যন্তরীণ টেক্সচারের উপর ভিত্তি করে কংক্রিটের গায়ে এই টেক্সচারও দেয়া যায়। আসুন আমরা জেনে নেই শাটারিং কী ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত।

কী কাজে লাগে

ফর্মওয়ার্ক কংক্রিটটিকে কাঙ্ক্ষিত আকার এবং আকৃতিতে রূপ দেয় এবং এর অবস্থান ও অ্যালাইনমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে।ফর্মওয়ার্কগুলো অস্থায়ী কাঠামো হিসেবেও কাজ করে যা ভার বহন করে এসব কিছুর: এটির নিজস্ব ওজন + ফ্রেশ মিশ্রিত কংক্রিট + কনস্ট্রাকশন লাইভ লোড (উপাদান, মানুষের ভার, লজিস্টিকাল উপকরণ)।

ফর্মওয়ার্ক হলো একটি ক্লাসিক অস্থায়ী কাঠামো এই অর্থে যে, এটি দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে এবং এটি কংক্রিট স্থাপনের সময় কয়েক ঘণ্টা উচ্চভাবে লোড করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে এটি অন্যান্য অস্থায়ী কাঠামোর মতো ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য ডিসম্যান্টেল করা সম্ভব।

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্য

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

১. সাশ্রয়ী ও নিরাপদ

২. ডেড ও লাইভ লোড নিতে পারার ক্ষমতা

৩. উপযুক্ত সাপোর্ট দেওয়া সাপেক্ষে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা

৪. জয়েন্টগুলো লিকপ্রুফ হতে হবে

৫. যদি শাটার সরাতে হয়, তাহলে তা যেন কংক্রিটের ক্ষতি না করে

৬. শাটারিং এর উপকরণ যাতে বার বার ব্যবহার করা যায়

৭. ওজনে যাতে কম ভারী হয়

৮. ফর্মওয়ার্কের সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনরকম ভাজ বা কুঁচকানো না থাকে

৯. সহজে নির্মাণযোগ্য এবং সহজে বহন করে সরানো যায়

শাটারিংয়ে কী কী ব্যবহার করা যায়?

বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে শাটারিং করা যায়। আসুন জেনে নিই কী কী দিয়ে আমরা শাটারিং করতে পারি।

১. কাঠ

সর্বাধিক পরিচিত শাটারিং উপকরণ হলো কাঠ। স্টিলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাটার ব্যবহার করার আগে কাঠ ব্যবহার হতো সবচেয়ে বেশি। কাঠের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো, এটি অতি সহজেই তৈরি করা যায় এবং সরিয়ে ফেলা যায়। লোকাল কাঠ দিয়ে বানানো সম্ভব হয়। স্টিলের ফ্রেমের চেয়ে সস্তা, ও কাজের জন্য অধিক ফ্লেক্সিবল।

এছাড়া কাঠের গায়ে সুন্দর প্রাকৃতিক টেক্সচার থাকে যা অনেক সময় দালানের এস্থেটিক্স বাড়াতে ব্যবহার করা যায়। কাঠ দিয়ে সুবিধামতো মডিউল তৈরি করে সুবিধাজনকভাবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এছাড়া কাঠের ফ্রেমিং ছোট প্রজেক্টের জন্য বেশি সুবিধাজনক।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কাঠের মান ভাল থাকে এবং এতে উইপোকা বা অনাকাঙ্ক্ষিত উপকরণের উপস্থিতি যেমন- ছত্রাক, আর্দ্রতা ইত্যাদি না থাকে।

২. প্লাইউড

সাধারণত কাঠের পাশাপাশি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়। মসৃণ তল পেতে প্লাইউডের ব্যবহার সুবিধাজনক। এর ব্যবহার মূলত শিথিং, ডেকিং ও ফর্ম লাইনিংয়ের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। কাঠের মতো প্লাইউডও সস্তা, ওজনে হাল্কা এবং সুবিধামতোভাবে ব্যবহার করা সহজ।

৩. স্টিল ফ্রেমওয়ার্ক

ইস্পাতের ফর্মগুলো কাঠের ফর্মওয়ার্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং তাদের পুনঃব্যবহার করা যায় বেশি। ইস্পাতের ফর্মগুলো আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং দ্রুততার সাথে ইনস্টল করা এবং তা ভেঙে ফেলা যায়।

ইস্পাত ফর্ম ব্যবহার করে এক্সপোসড কংক্রিট পৃষ্ঠের গুণমান ভালো এবং এ জাতীয় পৃষ্ঠগুলোর জন্য আর পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্কটি কংক্রিট থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্ক সঙ্কুচিত বা মুড়িয়ে যায় না।

৪. অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক

প্রায়শই প্রিকাস্ট ফর্মওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যেটি সাইটে ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম শক্তিশালী এবং হালকা এবং ফলস্বরূপ কম সাপোর্ট এবং বন্ধন প্রয়োজন। হাল্কা অংশগুলো ডিফ্লেকশন বেশি করে, তবে কেবল নির্মাতাদের সুপারিশ অনুসরণ করে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

৫. গ্লাস ফ্রেমওয়ার্ক

এই ধরনের ফর্মওয়ার্কটি ইন্টারলকিং প্যানেল বা হালকা প্লাস্টিকের তৈরি মডিউলার সিস্টেম থেকে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক ছোট প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে ভাল কাজ করে যেমন- স্বল্প ব্যয়যুক্ত আবাসন সংস্থাগুলোর পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোতে।

প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক হালকা এবং পানি দিয়েই এর বড় অংশ একাধিকবার পুনঃব্যবহারের জন্য উপযুক্ত থাকার সময়, পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। এর মূল দূর্বলতা হলো এটি কাঠের তুলনায় কম নমনীয়তা রয়েছে, যেহেতু অনেকগুলো উপাদান পূর্বনির্দিষ্ট।

কাঠামোগত প্রকারভেদ

উপাদান দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা ছাড়াও, কাঠামো সমর্থিত বিল্ডিং উপাদানগুলো অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:

  • ওয়াল ফর্মওয়ার্ক
  • বীম ফর্মওয়ার্ক
  • ফাউন্ডেশন ফর্মওয়ার্ক
  • কলাম ফর্মওয়ার্ক

সমস্ত ফর্মওয়ার্ক ধরনের কাঠামো তাদের সমর্থন করা কাঠামো অনুযায়ী ডিজাইন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট নির্মাণ পরিকল্পনাগুলো উপকরণ এবং প্রয়োজনীয় বেধ ধরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ফর্মওয়ার্ক নির্মাণে সময় লাগে, এবং এটি কাঠামোগত ব্যয়ের ২০ এবং ২৫% এর মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

ফর্মওয়ার্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ দালানের সঠিক নির্মাণের জন্য। উপযুক্ত এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদেরকে শাটারিং ও ফর্মওয়ার্ক করতে হবে যাতে করে আমাদের স্বপ্নের দালান হয়ে উঠে সুন্দর, টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।