বাড়ি বানানোর বেসিক: কেমন হবে বাড়ির ফ্রেমিং?

অধিক জনসংখ্যার এই দেশে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এবং সঠিক জ্ঞান না থাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন অনেকেই। সঠিক ধারণা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের বাড়ি কাঠামোগতভাবে হয়ে পড়ে দুর্বল আর বিপদজনক। অথচ বাড়ির কাঠামো নিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য জানা থাকলে সহজেই আপনি আপনার কষ্টে নির্মাণ করা বাড়ির গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারবেন। নির্মাণ সংক্রান্ত বেসিক তথ্যগুলো জানার ধারাবাহিকতায় এই আর্টিকেলে বাসার কাঠামো বা ফ্রেমিং কেমন হওয়া উচিৎ বা কত প্রকারের হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

ফ্রেমিংয়ের বৈশিষ্ট্য

স্থাপত্যের কাজে ফ্রেমিং (Framing) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেমিং এর মাধ্যমে ভবনের সাপোর্ট এবং আকার পাওয়া যায়। ভালো ফ্রেমিং এর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ। 

বৈশিষ্ট্যগুলো হলো – 

১। উপকরণের সহজলভ্যতা।

২। স্বল্পমেয়াদে স্থাপনার কাজ শেষ করার নিশ্চায়ক হবে।

৩। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভবনের ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস হয় কীনা দেখা।

৪। পরিবেশ দূষণ যতোটা সম্ভব কম করবে। 

৫। স্থাপনা যাতে দীর্ঘমেয়াদে মজবুত থাকে সেই দিকটা নিশ্চিত করবে।

ফ্রেমিং এর প্রকারভেদ

নির্মানশিল্পে বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং এর প্রচলন রয়েছে। বাড়ির নকশা ও ভারবহনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রেমিং ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং গুলো হচ্ছে – 

কাঠের ফ্রেমিং (Wood Framing) 

নির্মাণের জগতে সবচেয়ে পুরাতন এবং বহুল ব্যবহৃত ফ্রেমিং খুব সম্ভবত এই উড ফ্রেম। সহজলভ্য, বারবার ব্যবহার করা যায় এবং সাশ্রয়ী বলে বহু বছর ধরে ফ্রেমিং এর কাজে কাঠ জনপ্রিয়তার আসনে আছে। বড় বড় কাঠের গুড়ি প্রয়োজন মতো কেটে নিয়ে প্লেট, জয়েন্ট, র‍্যাফটার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই উপকরণের সুবিধা হল হাতেই যেমন বহন করা যায় তেমনি সাইটেই একে প্রস্তুত করে নেওয়া যায় প্রয়োজন মতো। কাঠের ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র দেয়ালে ড্রাইওয়াল, প্যানেলিং ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। অবশ্য আজকাল কাঠের ফ্রেমিং এর পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনার জন্য অন্য উপকরণের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এই ধরনের ফ্রেমিং এর স্থাপনার কাজে সময় কম লাগলেও এর কিছু অপকারী দিক ও আছে। কাঠ অগ্নি নিরোধ করতে পারেনা, সেই সাথে দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও খুব বেশি টেকসই না বলে আস্তে আস্তে এর ব্যবহার কমছে।

লাইট গজ স্টীল ফ্রেমিং (Light Gauge Steel Framing)

এই ধরনের ফ্রেমিং কাঠের ফ্রেমিং এর মতোই। পার্থক্য হল কাঠের পরিবর্তে লাইট গজ স্টীল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফ্রেমিং এ গ্যালভানাইজড কোটিং করা হয়ে থাকে ক্ষয়রোধের জন্য। মেটাল কাটিং যন্ত্রের সাহায্যে এই ধরনের স্টীলকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হয়। সাশ্রয়ী, অগ্নি নিরোধক এবং শক্তিশালী গুণাবলীর জন্য এই ফ্রেমিং এর ধরণ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে এই ফ্রেমিং বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Construction site background. Hoisting cranes and new multi-storey buildings. tower crane and unfinished high-rise building. many cranes. construction of a new district of the city

কংক্রিট ব্লক/ইটের ফ্রেমিং (Concrete Block/Brick Framing)

নাম থেকেই বুঝতে পারছি এই ফ্রেমিং এর উপকরণ হল কংক্রিটের ব্লক/ইট। ভারী স্থাপনার জন্য বহুল প্রচলিত এই ফ্রেমিং অবশ্য ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার জন্য উপযুক্ত নয়। তৈরি উপাদান থেকে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত হলেও এই ফ্রেমিং এ শ্রম অনেকটাই বেশি দিতে হয়। কংক্রিট /সিন্ডার ব্লক, ইট ইত্যাদি হাতে করে বসিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে তাই বলা যায় বেশ কষ্ট। এছাড়া শীতকালে মেসোনারি জয়েন্টের কিছুটা সমস্যা দেখা যায়। 

স্টীল ফ্রেমিং (Steel Framing)

বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মানে স্টীল ফ্রেমিং খুবই জনপ্রিয়। স্টীল কলাম এবং স্টীল ট্রাসের মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন তলা এবং ছাদ নির্মাণ করে ফেলা যায়। মেইন স্ট্রাকচার স্টীল এবং নন সাপোর্ট স্ট্রাকচারের কাজে লাইন্ট গজ স্টীল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাতে স্টীলের স্থাপনা বেশ কার্যকরী কেননা এর স্থিতিস্থাপক গুণ থাকায় কাঠামোর ক্ষতি বেশি হয় না। তবে এই ধরনের স্থাপনা খুব উচ্চ তাপমাত্রার জন্য উপযোগী না। সেই সাথে অধিক হিউমিডিটির জায়গায় দ্রুত করোসনের আশংকা থাকে।

কংক্রিটের ফ্রেমিং (Concrete Framing)

কংক্রিটের তৈরি বীম,কলাম,স্ল্যাব দিয়ে এই ফ্রেমের ভবন নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বহুতল ভবনের পাশাপাশি পার্কিং গ্যারেজ, এলিভেটেড রোডওয়ে নির্মানেও ব্যবহার করা হয় এই ফ্রেমিং। ভবন নির্মাণের কাজে কংক্রিট সাইটেই প্রয়োজন মতো প্রস্তুত করা হয় বলে কিউরিং অনেক সময় ঠিকমতো হয় না। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে খুব বেশি কার্যকর না হলেও বাতাস এবং আবহাওয়াতে এই ফ্রেমিং বেশ কার্যকরী। 

আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাঁশ, তালপাতা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাসার কথা ভুললেও বা চলবে কেন? যদিও খুব বেশি স্থায়ী নয় ওই উপকরণ নির্মিত ফ্রেমিং, তবুও স্বল্প আয়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নির্মাণে এইসব প্রাকৃতিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার আগে ভবনের ভৌগোলিক অবস্থান, কার্যকারিতা, উপকরণের সহজলভ্যতার দিক নজর রেখে ফ্রেমিং বাছাই করে নিলে মজবুত ভবনের নিশ্চয়তা শতভাগ। 

বাড়ির কাঠামো নিয়ে যা না জানলেই নয়

নিজের বাড়ি করার অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রতিদিন নিরন্তর কাজ করে চলে পেশা-বয়স নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু প্রাথমিক জ্ঞানের অভাবে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে স্বপ্নের বাড়ি করতে গিয়ে হোঁচট খান অনেকেই। বহুতল ইটের দালানই হোক বা পাকা মেঝের টিনশেড হোক, কিংবা ভবিষ্যতের কথা ভেবে ফাউন্ডেশন দিয়ে রাখা একটি ছোট বাড়িই হোক, কাঠামো সবসময়ই সেই বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাড়ির ব্যবহার আর স্থায়িত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হলো এর কাঠামো।

বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার আগে তাই কাঠামো নিয়ে কিছু প্রাথমিক জ্ঞান সবারই থাকা প্রয়োজন। এতে যেমন বাড়ি নির্মাণে গুণগত মান বজায় রাখার ব্যাপারে সুবিধা হয়, সেই সাথে ভবিষ্যতে বাড়ির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলাও কম পোহাতে হয়।  

কাঠামোর প্রকারভেদ 

একটি বাড়ির নির্মাণকালীন কাজগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. স্ট্রাকচারাল (ফাউন্ডেশন, ফ্রেম, রুফ)

২. ফাংশনাল (জানালা/দরজা, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল, HVAC)

৩. ফিনিশিং (সাইডিং, ড্রাইওয়াল/পেইন্ট, ইন্টেরিয়র ফিনিশ কার্পেন্ট্রি, ফ্লোর ফিনিশিং)

এগুলোর ভিতর স্ট্রাকচার এবং ফাংশনের দরজা-জানালা বাড়ির কাঠামোগত অংশ। একটি বাড়ি নির্মাণের আগে তাই এসব ব্যপারে ন্যূনতম প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

স্ট্রাকচার 

যেকোনো বাড়ির স্ট্রাকচার বা মূল কাঠামোকে মোটা দাগে তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। এগুলো হলো- ফাউন্ডেশন, ফ্রেম আর রুফ।

ফাউন্ডেশন

যেকোনো বাসা-বাড়ির ভিত্তিই হলো মাটির নিচ থেকে নির্মাণ করা ফাউন্ডেশন। ভবনের অবস্থানের উপর ফাউন্ডেশনের প্রকৃতি নির্ভর করে। বাড়ি যদি এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়, যেখানের মাটি নরম তাহলে নির্মাণের সময় অনেক গভীরে খনন করে কংক্রিট স্ল্যাব ঢেলে ব্লক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেজমেন্ট বানানো হয়। 

ফ্রেম

ফাউন্ডেশনের পর আসুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রেম বিষয়ে। ফ্রেমিং করতে স্থানভেদে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে কাঠ বা স্টিলের ফ্রেমিং জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে এখনও ফ্রেমিং বলতে কলাম-বীম আর ইটের দেয়ালকেই বোঝায়। ভালো বাসস্থানের জন্য ফ্রেমিং গুরুত্বপূর্ণ। এই ফ্রেমিংয়ের মাঝেই ইনস্যুলেশন, ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যারিং, প্লাম্বিংয়ের অবস্থান। আবার এই ফ্রেমিংয়েই পোকামাকড় বা ছত্রাক (মোল্ড) ঠাঁই করে নেয়।  

রুফিং

ফ্রেমিংয়ের পর আসে রুফ বা ছাদ, বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্লোর স্ল্যাব বা মেঝেও বটে। ছাদের প্রধান কাজই হলো রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচানো। ছাদ ঢালাই দেওয়া তাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ নির্মাণের সময়ে। মাঝেমধ্যে ছাদে লিক সৃষ্টি হলে মেরামতের মাধ্যমেই তা ঠিক করে ফেলা যায়।   

ফাংশন

প্রতিদিন বাসায় বসবাস করতে আমাদের যে সুবিধাগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই ফাংশনাল এলিমেন্ট। এই ব্যাপারগুলো এত স্বাভাবিক এবং বহুল পরিচিত যে আপাতদৃষ্টিতে এগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা হয় না।  

দরজা-জানালা

ফাংশনাল ব্যপারগুলোর ভেতরে কেবলমাত্র দরজা-জানালাই সরাসরি বাড়ির কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত। ভারবাহী দেয়ালে জানালা দেয়ার ক্ষেত্রে এর লোড ট্রান্সফার সম্পর্কে খেয়াল না রাখলে দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। বড় বড় জানালা আছে এমন বাড়িঘর আমাদের সবারই কম-বেশি পছন্দ। আলো বাতাসের চলাচলের জন্য জানালা খুবই প্রয়োজনীয়। ফ্রেমের মাঝে জানালা নির্মাণ করা হয়, তাতে ট্রিম থাকে বিভিন্নরকম যা নান্দনিক চাহিদাও মেটায়, আবার বৃষ্টি থেকেও রক্ষা করে।

জানালার ক্ষেত্রে যা লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো জানালার ফ্রেম বসানোর সময় কোনোরকম লিক যাতে না থাকে। লিক থাকলেই বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করবে যা দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে করে ফেলে আর ফ্রেমের পচনে ভূমিকা রাখে। দরজার ক্ষেত্রেও নষ্ট হওয়ার কালপ্রিট সেই বৃষ্টির পানি। এছাড়া কাঠের দরজায় পোকামাকড় সংক্রমণের ব্যাপার তো আছেই।  

বাড়ি নির্মাণের আগে বাড়ির কাঠামোগত উপাদানগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকলে একদিকে যেমন বাড়ির দৃঢ়তা ঝুঁকির মুখে পড়ে, তেমনি সাইটে কাজ করা ইঞ্জিনিয়ার বা মিস্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ অনেকাংশেই বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, অল্প একটু সাধারণ জ্ঞানই কিন্তু পারে আমাদের স্বপ্নের বাড়িকে আরও স্বস্তিময় করে তুলতে। 

বেজমেন্ট নিয়ে ভাবনা

বেজমেন্ট বা সেলার বলতে আমরা বুঝি কোনো এক ভবনের একাধিক ফ্লোর বা তলা যা সম্পূর্ণভাবে অথবা আংশিকভাবে গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচে থাকে। বেজমেন্ট বা সেলার অনেক সময় সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও দুটো ভিন্ন। বেজমেন্ট হলো গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচের জায়গা, যা থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত এবং যেটায় প্রবেশ করার নিজস্ব জায়গা আছে। অপরদিকে সেলার হলো মাটির নিচের বিশাল কোনো একটা ঘর। 

বেজমেন্টের ব্যবহার

বেজমেন্ট সাধারণত ইউটিলিটি স্পেস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেখানে বয়লার, ব্রেকার প্যানেল বা ফিউজ বক্স, গাড়ি পার্ক বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি রাখা হয়। অবশ্য ইউটিলিটি স্পেস হিসাবে ব্যবহার বাদেও বিভিন্ন শহরে, যেমন লন্ডনে বেজমেন্টকে থাকার জায়গা হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মূলত বেজমেন্টের ব্যবহার আসলে অনেক কিছুর উপরে নির্ভরশীল। যেমন – আবহাওয়া, মাটির ধরন, বিল্ডিং টেকনোলজি এবং অর্থনীতি। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বেজমেন্ট নির্মাণ সাধারণত কম করা হয়, কেননা এতে ভবনের উপরের তলা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার টর্নেডো প্রবণ এলাকায় শেল্টার স্পেস হিসাবে বেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ শেল্টারিংয়ের ক্ষেত্রেও বেজমেন্ট খুবই কার্যকরী।  

প্রকারভেদ

বেজমেন্টের ধরন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে ইংলিশ বেজমেন্টের কথা। এদেরকে ভিন্নভাবে ডে লাইট বেজমেন্টও বলা হয়। এই ধাঁচের বেজমেন্টের কিছু অংশ ভূমির উপরে থাকে, যাতে জানালা নির্মাণ করা যায়। এই ধরনের বেজমেন্ট গ্যারেজ, মেইন্টেনেন্স রুম অথবা থাকার জায়গা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বেজমেন্টের সাথে এর পার্থক্য হল আলো বাতাসের চলাচল।

ওয়াল আউট বেজমেন্ট ও বেশ জনপ্রিয়। এটাও এক ধরনের ডে লাইট বেজমেন্ট। বেজমেন্ট ফ্লোরের নিচেও এক ধরনের বেজমেন্ট থাকে যাকে সাববেজমেন্ট বলা হয়। ক্রল স্পেস (Crawl Space) নামে এক ধরনের স্টোরেজ বেজমেন্ট থাকে, যদিও তা অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে।

বেজমেন্ট নির্মাণ দু’ভাগে ভাগ করা যায়, কংক্রিট ফর্মের মাধ্যমে বা ব্লক ওয়ালের মাধ্যমে। পাথরও ব্যবহার করা হয় কালেভদ্রে। তবে যেভাবেই বেজমেন্ট নির্মাণ করা হোক না কেন, ড্রেইনেজের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা অত্যাবশ্যক।

সেমি বেজমেন্ট বলতে স্থাপত্যবিদ্যায় বোঝায় এমন এক ফ্লোর, যার অর্ধেক মাটির নিচে থাকে। সাধারণত বড় বাড়িতে এ ধরনের বেজমেন্ট নির্মাণ করা হয় যেখানে ওই বাসার সাহায্যকারীরা থাকে। রান্নাঘর বা অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে সে জায়গা। আজকাল অবশ্য লন্ডনে একে গার্ডেন ফ্লোর বলা হয়ে থাকে।     

সেমি বেজমেন্টের সুবিধাই হল আলো বাতাসের চলাচল, যেহেতু পুরো জায়গা সাধারণ বেজমেন্টের মত মাটির নিচে অবস্থিত থাকে না। যদিও এতে নির্মিত জানালা ভূমি থেকে বেশ উঁচুতে থাকে যার কারণে স্বাচ্ছন্দ্যে বাইরের কিছু দেখাও খুব একটা সহজ হয় না। 

ঐতিহাসিকভাবে একে বিশেষ সুবিধা হিসেবে দেখা হতো, কেননা এরকম জানালা থাকায় একদিকে কাজের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর হলেও কর্মচারীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটারও সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে গ্রাউন্ড ফ্লোর কিছুটা উঁচু হওয়ায় ভবনের অন্যান্য তলা থেকে বাইরে আরো ভালো করে দেখা যেত বলেও এরকম বেজমেন্টের নির্মাণ বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও এধরনের বেজমেন্ট থাকলে স্যাঁতসেঁতে হওয়ার ব্যাপারটাও এড়ানো যেত আগে।        

রক্ষণাবেক্ষণ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেজমেন্টের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণই হওয়া উচিৎ। গাড়ি রাখার গ্যারেজ বেজমেন্টে থাকতে পারে। সাথে ওয়াটার ট্যাংক, মেকানিকাল রুম, আর্থেনসহ বিভিন্ন জটিল যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা বেজমেন্টে থাকলে বেশ ভালোভাবে নিরাপত্তাসহ স্থানের যথাযথ ব্যবহারও হয়। অবশ্য এরকম ব্যবহারের জন্য সেখানে অবশ্যই অক্সিজেন, আলোর চলাচল রাখা উচিৎ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে।

বেজমেন্ট যথাযথভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করার কিছু ধাপ নিচে বলা হলো-  

– মোল্ড হচ্ছে কিনা দেখতে হবে

– ঠাণ্ডা পানির পাইপ ইন্স্যুলেট করার ব্যবস্থা করতে হবে

– ইন্টেরিয়র ওয়াল এবং ফ্লোর সীল করতে হবে

– ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে হবে

– পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা দেখতে হবে।

বেজমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াটারটাইট বেজমেন্ট নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই ওয়াটার টেবিল এবং জায়গায় সয়েল ক্লাসিফিকেশন যথার্থ কিনা দেখতে হবে। আর বেজমেন্ট নির্মাণে কংক্রিট হলো সবচেয়ে যথার্থ উপাদান। 

বেজমেন্ট নির্মাণ বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এটি ভবনের কদর বাড়াতে সাহায্য করে থাকে বিভিন্নভাবে। তাই এর নির্মাণের বেলায় দেওয়া উচিৎ যথাযথ গুরুত্ব। 

বাড়ির নকশায় স্থপতি ও প্রকৌশলীর ভূমিকা

আমাদের সারাজীবনের স্বপ্নের বাড়ির বাস্তবায়নের কাজ যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে এবং যাদের সুযোগ্য জ্ঞানে একটি সাধারণ বাসা হয়ে ওঠে স্বপ্নের আবাস তারা হলেন স্থপতি ও প্রকৌশলী। আপনার বাসা যাতে আলো-বাতাসে ভরপুর হয়ে খোলামেলা সুন্দর ও মনের মত হয়ে উঠে সেজন্য তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন।

সাধারণত বাড়ির নকশা করার সময় থেকে নির্মাণের পুরোটা সময় এবং ক্ষেত্রবিশেষে মেইন্টেনেন্স ও এই সংক্রান্ত বিশেষ পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে তারা আমাদের জীবনকে করে তুলেন স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। আসুন আমরা জেনে নিই কী তাদের ভূমিকা এবং কেন একজন বিশেষজ্ঞ স্থপতি ও প্রকৌশলী আমাদের বাসা নির্মাণের সময় নিয়োগ করতে হবে।

স্থপতির প্রয়োজনীয়তা 

দালান নির্মাণের নকশা পর্যায়ে প্রথমেই একজন স্থপতি নিয়োগ করা আবশ্যক। একজন স্থপতির অবশ্যই দালান নির্মাণ এবং নির্মাণ বিধিমালান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান এবং দালান নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে ক্লায়েন্ট ও অন্যান্য এক্সপার্টদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা উচিৎ। একজন স্থপতিই আপনার সাধ ও সাধ্যের সম্পূর্ণ সমন্বয় ঘটিয়ে আপনার বাড়িকে করে তোলে কাব্যিক। স্থপতিরা এমন নকশা তৈরি করেন যা হয় নান্দনিক, সৃজনশীল এবং বাসায় বসবাসকারীদের দৈনন্দিন কাজগুলো হয়ে উঠে স্বচ্ছল, নির্ভেজাল।

 কাজ শুরুর আগে স্থপতির কাজ ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তা বোঝা, তার উদ্দেশ্য এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে একটি যত্নশীল নোট নেওয়া, প্রকল্পটির আকার নির্ধারণ ও এর অনুপাতে প্রত্যাশিত বাজেট, সাইটের বৈশিষ্ট্য এবং সাইটের আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা। 

বাড়ির ডিজাইন শুরু করার আগে একজন স্থপতি যা করেন তা হচ্ছে –

– সাইটের সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্যতা বোঝা

– আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা করা

– যদি কাজটি সংস্কার বা পুনর্বাসন বা কোনও নতুন নির্মাণ হয় তবে সম্ভাব্য সকল সমাধানের পরামর্শ ও অধ্যয়ন

– সম্ভাব্যতা সমীক্ষা আনা এবং উপস্থাপন করা

– প্রয়োজনের ভিত্তিতে সাইট বা বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন পছন্দ

– বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ্ধতিগুলি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন বিকল্পের বিধান

– প্রক্রিয়া পরিকল্পনা

ড্রয়িং সংক্রান্ত দায়িত্ব

একটি প্রজেক্ট শুরু করার আগে প্রচুর ড্রয়িংয়ের প্রয়োজন হয়। সাধারণ জায়গাগুলোর অবস্থান থেকে শুরু করে সূক্ষ্মতম ডিটেইল ড্রইং সবকিছুই একজন স্থপতির করতে হয়। ড্রইং এর ভুলগুলি কাজ শুরু করার আগেই যাচাই করে নিতে হয়, কেননা ড্রইংয়ে সামান্য ভুলের জন্য ক্লায়েন্টের যেমন খরচ বেড়ে যায়, তেমনি বাড়ে সেই বাড়িতে বসবাসের সময়ের অস্বস্তিও। প্রাথমিক এই ড্রয়িং সঠিক সময়ে প্রজেক্টের কাজ নিশ্চিত করে। 

ড্রয়িংগুলোর ভিত্তিতে বিশদ অনুমান, উপাদান সংগ্রহ এবং সাইটে কাজ করা হয়। প্রাথমিকভাবে, স্কেচ ডিজাইনগুলি প্রস্তুত করা হয় যা বিল্ডিংয়ের অবস্থানটি দেখায়। এটি অভ্যন্তরের ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গার বিন্যাসের পাশাপাশি, পাশাপাশি বসার বিভিন্ন কানেকশন সম্পর্কে ধারণা দেয়। স্কেচ ডিজাইনের ভিত্তিতে ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট নীতি এবং চুক্তিতে সম্মত হন। 

বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণের কাজটি এখন স্থপতি এবং একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার উভয়েরই দ্বারা সম্পাদিত হয় যদি তাদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকে। একজন আর্কিটেক্টের যে বিভিন্ন ড্রয়িং করতে হয় তার মধ্যে ফ্লোর প্ল্যান, সাইট প্ল্যান, উচ্চতা এবং আইসোমেট্রিক ভিউ, অন্যান্য বিস্তারিত স্ট্রাকচারাল অঙ্কন, থ্রিডি মডেল এবং থ্রিডি ভিউ অন্তর্ভুক্ত।

মূলত এই কাজগুলো বা স্থপতি দ্বারা প্রদত্ত বিবরণগুলো তাকে দেয়া ক্লায়েন্টের চাহিদা ও কাজের ওপর নির্ভর করবে। কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে আমাদের পরিকল্পনা এবং কাঠামোগত বিল্ডিংয়ের নকশা করার জন্য একজন স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার থাকেন।

প্রদত্ত প্ল্যানিঙের জন্য আমাদের একটি ভাল এলিভেশন থাকা দরকার। আমরা সামনের উচ্চতা এবং ল্যান্ডস্কেপিংয়ের টেকনিক্যাল সমস্যা মোকাবেলায় যখন স্থপতির কাছে যাব তখন তা প্রকৌশলী এবং স্থপতি এর মধ্যে সহযোগিতা এবং আলোচনার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করবে।

এসব ছাড়াও একজন স্থপতি কস্ট এস্টিমেশন প্রদান করেন এবং তিনি যদি কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তাহলে তাদের মার্কেটিংয়ের স্বার্থে পরামর্শ প্রদান করতে পারেন।

এছাড়াও দালান কনস্ট্রাকশনের সময়কালে প্রকৌশলীর সাথে সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে কিনা এবং সাইটে সময়ে সময়ে তদারকি করতে চুক্তিবদ্ধ করা যেতে পারে। এত সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাসা নির্মাণের আগে আমাদেরকে অবশ্যই একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত সুযোগ্য স্থপতিকে দালানের নকশার কাজে নিয়োগ করতে হবে।

প্রকৌশলীর ভূমিকা কী?

একটি দালান বা বাড়ি ঠিকমত নির্মাণ করতে সবচেয়ে বেশি যাকে প্রতিটি পদক্ষেপে দরকার হয়, তিনি হলেন প্রকৌশলী। একটি দালানের নির্মাণ কাজে বিভিন্ন এক্সপার্ট প্রকৌশলীর সাহায্য প্রয়োজন হয়ে থাকে, যেমন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। এদের সকলের সহায়তায় একটি বাড়ি হয়ে উঠে বসবাসযোগ্য, আরামদায়ক এবং আমাদের স্বপ্নের রঙ-এ রঙিন। তারা স্থপতির সাথে কোলাবোরেশন করে দালানের নকশা কাজ থেকে শুরু করে নির্মাণের শেষ পর্যায় এবং পরে প্রয়োজনমত মেইন্টেনেন্সের কাজের জন্য সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসুন আমরা জেনে নেই তারা কী কী ভূমিকা পালন করে থাকেন।

স্ট্রাকচারাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা

স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রের অধীনে একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র। এটি সীমাহীন তত্ত্ব এবং অনুশীলন সহ একটি বিস্তৃত বিষয়। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যা এখনও বিশাল উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং কন্সেপ্ট নিয়ে বিকাশ করছে। কাঠামোগত প্রকৌশল (স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং) কাঠামোর নকশা এবং দালানের কাঠামোগত অখণ্ডতার সাথে বেশি জড়িত। এই কাঠামোগুলি বিল্ডিং, বাঁধ, টানেল, ব্রিজ ইত্যাদি হতে পারে। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের প্রধান দায়িত্ব হল এমন কাঠামো নির্মাণ করা, যা দালানের দীর্ঘদিন সুরক্ষা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

স্থপতিরা কেবলমাত্র বিল্ডিংয়ের আকার, আকার এবং ব্যবহারের ভিত্তিতে বিল্ডিং নকশা করেন। তবে এগুলির নির্মাণের সময় এবং পরে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে যা কেবল কাঠামোগত প্রকৌশলীরা খুঁজে পেতে এবং সমাধান করতে পারেন। কাঠামোগত প্রকৌশলীরা স্থপতিদের পরিকল্পনার জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সহায়তা করে।

পদার্থবিদ্যার গভীর জ্ঞান, সৃজনশীল সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা এবং সফটওয়্যারে ত্রিমাত্রিক ধারণাগত দক্ষতা অবশ্যই কাঠামোগত প্রকৌশলী দ্বারা অর্জন করতে হবে। এগুলি ব্যতীত স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা এবং দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে-

 কাঠামোর নকশাগত দায়িত্ব

কাঠামোগত প্রকৌশলীরা কাঠামোগত ডিটেইলস এবং তাদের বিশ্লেষণের জন্য পড়াশুনা করেন। সুতরাং, তারা কাঠামোগত ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি জ্ঞানী ও দক্ষ। কাঠামোগত প্রকৌশলীরা সম্পূর্ণ স্ট্রাকচারাল ডিজাইনিং পদ্ধতির জন্য ভার এবং বিল্ডিংয়ের উপর এক্টিং স্ট্রেসগুলি গণনা করা, ভর বিশ্লেষণ, কাঠামোর অংশগুলির নকশা ভার বজায় রাখার জন্য অন্তর্ভুক্ত; যাতে নকশা করা কাঠামো নিরাপদে পূর্বাভাস দেয়া ভারগুলি সহ্য করতে পারে।

কাঠামোগত প্রকৌশলীরা কাঠামোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উপকরণ নির্বাচনের সাথেও জড়িত। বিভিন্ন বিল্ডিং উপকরণের গুণমানের কারণগুলি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা বিম, কলাম বা ভিত্তিগুলির নকশায় তাদের উপযুক্ততা চূড়ান্ত করতে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এইসব হিসাব নিকাশ তারা সফটওয়্যার ব্যবহার করে সিমুলেট করে নকশা করে থাকেন।

সাইট সংক্রান্ত কাজ

সাইট তদন্তের সাথে কাজ করার সময়, কাঠামোগত প্রকৌশলীরা প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য মাটির অবস্থা যাচাইয়ের সাথে জড়িত। ডিজাইনার দ্বারা গণনা করা লোডগুলোর ওপর ভিত্তি করে, এটি গণনা করে ভার বহন করার জন্য মাটি উপযুক্ত কিনা তা অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত। এই তদন্তটি কাঠামোর জন্য অবশ্যই ব্যবহার করা যায় এমন ফাউন্ডেশন সিস্টেমের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবেন এই প্রকৌশলীরা। মাটির জন্য যেকোনো ধরনের পরামর্শ, প্রয়োজনীয় তদন্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই তদন্তটি মাটি, যা ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশলীর অংশ, তা পরীক্ষা করে পরিচালিত হয়।

এভাবে দালানের ভার বহন করা ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অন্য এক্সপার্টিজের প্রকৌশলীর সহায়তা নিতে হবে। যেমন – দালানের তড়িৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক লোড বহনের জন্য সঠিক মাপের তার ও কন্ডুইট ডিজাইনের জন্য তড়িৎ প্রকৌশলীর দরকার হয়। এরকম খুঁটিনাটি নানাবিধ কাজে নানা এক্সপার্টিজের ইঞ্জিনিয়ারের সহায়তা লাগে। একটি সুন্দর দালান শুধুই খোলস, প্রকৌশলীর সহায়তা ছাড়া। তারা তাদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বাড়িকে করে তুলেন বসবাসযোগ্য ও কার্যকর। স্থপতিদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমরা বানাতে পারি আমাদের স্বপ্নের বাড়ি, যাতে আমরা জীবনযাপন করতে পারি স্বচ্ছন্দে। 

বাড়ি বানাবেন? জেনে নিন ব্রিক সোলিং সম্পর্কে

বাড়ি নির্মাণের সময় লক্ষ্য রাখতে হয় খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারে। কিছু কাজ ক্ষেত্রবিশেষে দৃশ্যমান থাকে, আবার কোনো কোনো কাজ দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু এর প্রতিটি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা কঠিন। এরকম একটি কাজই হচ্ছে সোলিং।

সোলিং কী? কোথায় করা হয় সোলিং? কীভাবে হিসাব করা হয় এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ? আসুন জেনে নিই এক নজরে।

ব্রিক সোলিং কী?

ভবনের ভিত্তি বা ফাউন্ডেশনে, মেঝেতে, কলাম/পিলারের নিচে, রাস্তার সাবগ্রেড স্তরের উপরে সাধারণত এক বা দুই স্তরে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর এই ইটের মাঝে যে ফাঁকা স্থান থাকে তা পূর্ণ করা হয় বালি দিয়ে। নির্মাণের পরিভাষায় একেই বলা হয় সোলিং। 

ফুটপাথে, রাস্তায়, গ্রাম্যপথে, দালানের মেঝেতে, বাগানের ভিতরে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কংক্রিটের ভিতের নিচে এরকম ইটের সোলিং করা হয়ে থাকে। 

কেন করা হয় সোলিং?

সোলিংয়ের উপরে যে ভার থাকে তা সাবগ্রেড স্তরের উপর ছড়িয়ে দিতে মূলত সোলিং করা হয়। সাবগ্রেড স্তরের মাটির ভারবহন ক্ষমতা দরকারের চেয়ে কম হলে সোলিং করে মাটির উপর সাব-বেজ তৈরি করা হয়। সাব-বেজ মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

Rigid বা Flexible Pavement এর চেয়ে অনেক কম খরচে মাটির রাস্তাকে উন্নত করতে সোলিং করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ‘৮০-র দশকের শেষ ভাগে ও ‘৯০ এর দশকে প্রচুর গ্রাম্য রাস্তা সোলিং করে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নত করে কাদামুক্ত করা হয়েছিল।

কংক্রিট বা গাঁথুনির কাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিমেন্ট-বালি-পানির মিশেল বা মর্টার (যাকে স্থানীয় ভাষায় মশলা বলা হয়) থেকে পানি চুঁইয়ে মিশ্রণের শক্তি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি মোকাবেলা করতে ইটের সোলিংয়ের ফাঁকে বালি দিয়ে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে নিশ্ছিদ্র সমতল তৈরি করা হয় ও তা নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হয়। 

সোলিংয়ের প্রকারভেদ

সোলিং মূলত ইট বিছানোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মূলত তিন ধরনের সোলিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

১. ফ্ল্যাট বা সোজা সোলিং  (Flat Soling)

২. হেরিং-বোন বন্ড সোলিং (Herring-Bone Bond Soling)

৩. কোনাকুনি বা ডায়াগোনাল সোলিং (Diagonal Soling) 

কোথায় ব্যবহার করা হয় সোলিং?

উপকরণের সহজলভ্যতা, শ্রমের স্বল্পমূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আমাদের দেশে ইট সবচেয়ে সুলভ মূল্যের নির্মাণ উপকরণ। তাই সোলিংয়ের কাজে অনেক আগে থেকেই ইট ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন কাজে সোলিং করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-

– ইমারতের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিতে।

– কলাম/পিলার ইত্যাদির নিচে।

– রাস্তা তৈরির সময় সাবগ্রেড স্তরের নিচে।

– কালভার্ট তৈরির সময় অ্যাবেটমেন্ট এবং উইং দেয়ালের নিচে।

– ঘরের মেঝেতে। 

– জমি বা ঘরের সীমানা প্রাচীরের নিচে।

– লন, বাগান বা মহল্লার ভেতরের রাস্তা তৈরিতে।

– রিটেইনিং দেয়ালের নিচে।

সোলিংয়ের খরচের হিসেব

সোলিংয়ের কাজে খরচের হিসেব করতে গেলে দুটি ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।

১। ইটের আকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা

২। গাঁথুনির প্যাটার্ন ও উক্ত প্যাটার্নে ইটের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা।

নিচে একটি উদাহরণ দিয়ে এদের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হলো।

সোলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ইটের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল

= ২৫.৪ সেমি. X ১২.৭ সেমি.
= ০.২৫৪ মি. X ০.১২৭ মি.
= (০.২৫৪ X ০.১২৭) বর্গমিটার

ফ্ল্যাটসোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর ফ্ল্যাটসোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৩১টি। হেরিং-বোন বন্ড সোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর হেরিং-বোন বন্ড সোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৫২টি।

ক্ষেত্রফল অনুসারে এভাবে বের করে নিন আপনার প্রয়োজনীয় সোলিং-এ দরকারি ইটের সংখ্যা। ইটের বাজার মূল্য দিয়ে গুণ করুন। স্থপতি বা প্রকৌশলীর কাছে জেনে নিন প্রয়োজনীয় ইটের সাথে কী পরিমাণ পরিমাণ বালি, সিমেন্ট ও পানি মেশাতে হবে তার অনুপাত। এগুলোর বাজার মূল্য বের করে ইটের দামের সাথে যোগ করলে আপনি নিজেই বের করে ফেলতে পারবেন সোলিংয়ের খরচের আদ্যোপান্ত। 

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: শাটারিং কী ও কীভাবে

আমাদের বাসা-বাড়ি নির্মাণের কাজে কংক্রিট এক অতি পরিচিত সুলভ উপকরণ। কংক্রিট সাধারণত সিমেন্ট, বালি, খোয়া, মশলার মিশ্রণকে পানির সাথে মিশিয়ে তরল করে ছাঁচে ঢালা হয়।

সাইটে এই ছাঁচ বা বক্স, যাতে তরল কংক্রিট ঢেলে তাকে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে এই তরল কংক্রিট পড়ে, প্রবাহিত হয়ে শক্ত হতে পারে, এরকম ছাঁচ ও এ সংক্রান্ত কাজকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় ফর্মওয়ার্ক বা শাটারিং বলা হয়।

এই ছাঁচ বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা যায় এবং অভ্যন্তরীণ টেক্সচারের উপর ভিত্তি করে কংক্রিটের গায়ে এই টেক্সচারও দেয়া যায়। আসুন আমরা জেনে নেই শাটারিং কী ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত।

কী কাজে লাগে

ফর্মওয়ার্ক কংক্রিটটিকে কাঙ্ক্ষিত আকার এবং আকৃতিতে রূপ দেয় এবং এর অবস্থান ও অ্যালাইনমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে।ফর্মওয়ার্কগুলো অস্থায়ী কাঠামো হিসেবেও কাজ করে যা ভার বহন করে এসব কিছুর: এটির নিজস্ব ওজন + ফ্রেশ মিশ্রিত কংক্রিট + কনস্ট্রাকশন লাইভ লোড (উপাদান, মানুষের ভার, লজিস্টিকাল উপকরণ)।

ফর্মওয়ার্ক হলো একটি ক্লাসিক অস্থায়ী কাঠামো এই অর্থে যে, এটি দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে এবং এটি কংক্রিট স্থাপনের সময় কয়েক ঘণ্টা উচ্চভাবে লোড করা হয়। কিছুদিনের মধ্যে এটি অন্যান্য অস্থায়ী কাঠামোর মতো ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য ডিসম্যান্টেল করা সম্ভব।

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্য

ভাল শাটারিংয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

১. সাশ্রয়ী ও নিরাপদ

২. ডেড ও লাইভ লোড নিতে পারার ক্ষমতা

৩. উপযুক্ত সাপোর্ট দেওয়া সাপেক্ষে কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা

৪. জয়েন্টগুলো লিকপ্রুফ হতে হবে

৫. যদি শাটার সরাতে হয়, তাহলে তা যেন কংক্রিটের ক্ষতি না করে

৬. শাটারিং এর উপকরণ যাতে বার বার ব্যবহার করা যায়

৭. ওজনে যাতে কম ভারী হয়

৮. ফর্মওয়ার্কের সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনরকম ভাজ বা কুঁচকানো না থাকে

৯. সহজে নির্মাণযোগ্য এবং সহজে বহন করে সরানো যায়

শাটারিংয়ে কী কী ব্যবহার করা যায়?

বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে শাটারিং করা যায়। আসুন জেনে নিই কী কী দিয়ে আমরা শাটারিং করতে পারি।

১. কাঠ

সর্বাধিক পরিচিত শাটারিং উপকরণ হলো কাঠ। স্টিলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাটার ব্যবহার করার আগে কাঠ ব্যবহার হতো সবচেয়ে বেশি। কাঠের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো, এটি অতি সহজেই তৈরি করা যায় এবং সরিয়ে ফেলা যায়। লোকাল কাঠ দিয়ে বানানো সম্ভব হয়। স্টিলের ফ্রেমের চেয়ে সস্তা, ও কাজের জন্য অধিক ফ্লেক্সিবল।

এছাড়া কাঠের গায়ে সুন্দর প্রাকৃতিক টেক্সচার থাকে যা অনেক সময় দালানের এস্থেটিক্স বাড়াতে ব্যবহার করা যায়। কাঠ দিয়ে সুবিধামতো মডিউল তৈরি করে সুবিধাজনকভাবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এছাড়া কাঠের ফ্রেমিং ছোট প্রজেক্টের জন্য বেশি সুবিধাজনক।

এখানে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কাঠের মান ভাল থাকে এবং এতে উইপোকা বা অনাকাঙ্ক্ষিত উপকরণের উপস্থিতি যেমন- ছত্রাক, আর্দ্রতা ইত্যাদি না থাকে।

২. প্লাইউড

সাধারণত কাঠের পাশাপাশি প্লাইউড ব্যবহার করা হয়। মসৃণ তল পেতে প্লাইউডের ব্যবহার সুবিধাজনক। এর ব্যবহার মূলত শিথিং, ডেকিং ও ফর্ম লাইনিংয়ের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। কাঠের মতো প্লাইউডও সস্তা, ওজনে হাল্কা এবং সুবিধামতোভাবে ব্যবহার করা সহজ।

৩. স্টিল ফ্রেমওয়ার্ক

ইস্পাতের ফর্মগুলো কাঠের ফর্মওয়ার্কের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং তাদের পুনঃব্যবহার করা যায় বেশি। ইস্পাতের ফর্মগুলো আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং দ্রুততার সাথে ইনস্টল করা এবং তা ভেঙে ফেলা যায়।

ইস্পাত ফর্ম ব্যবহার করে এক্সপোসড কংক্রিট পৃষ্ঠের গুণমান ভালো এবং এ জাতীয় পৃষ্ঠগুলোর জন্য আর পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্কটি কংক্রিট থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে না। ইস্পাত ফর্মওয়ার্ক সঙ্কুচিত বা মুড়িয়ে যায় না।

৪. অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক

প্রায়শই প্রিকাস্ট ফর্মওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়, যেটি সাইটে ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম শক্তিশালী এবং হালকা এবং ফলস্বরূপ কম সাপোর্ট এবং বন্ধন প্রয়োজন। হাল্কা অংশগুলো ডিফ্লেকশন বেশি করে, তবে কেবল নির্মাতাদের সুপারিশ অনুসরণ করে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

৫. গ্লাস ফ্রেমওয়ার্ক

এই ধরনের ফর্মওয়ার্কটি ইন্টারলকিং প্যানেল বা হালকা প্লাস্টিকের তৈরি মডিউলার সিস্টেম থেকে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক ছোট প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে ভাল কাজ করে যেমন- স্বল্প ব্যয়যুক্ত আবাসন সংস্থাগুলোর পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলোতে।

প্লাস্টিকের ফর্মওয়ার্ক হালকা এবং পানি দিয়েই এর বড় অংশ একাধিকবার পুনঃব্যবহারের জন্য উপযুক্ত থাকার সময়, পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। এর মূল দূর্বলতা হলো এটি কাঠের তুলনায় কম নমনীয়তা রয়েছে, যেহেতু অনেকগুলো উপাদান পূর্বনির্দিষ্ট।

কাঠামোগত প্রকারভেদ

উপাদান দ্বারা শ্রেণিবদ্ধ করা ছাড়াও, কাঠামো সমর্থিত বিল্ডিং উপাদানগুলো অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:

  • ওয়াল ফর্মওয়ার্ক
  • বীম ফর্মওয়ার্ক
  • ফাউন্ডেশন ফর্মওয়ার্ক
  • কলাম ফর্মওয়ার্ক

সমস্ত ফর্মওয়ার্ক ধরনের কাঠামো তাদের সমর্থন করা কাঠামো অনুযায়ী ডিজাইন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট নির্মাণ পরিকল্পনাগুলো উপকরণ এবং প্রয়োজনীয় বেধ ধরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ফর্মওয়ার্ক নির্মাণে সময় লাগে, এবং এটি কাঠামোগত ব্যয়ের ২০ এবং ২৫% এর মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

ফর্মওয়ার্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ দালানের সঠিক নির্মাণের জন্য। উপযুক্ত এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদেরকে শাটারিং ও ফর্মওয়ার্ক করতে হবে যাতে করে আমাদের স্বপ্নের দালান হয়ে উঠে সুন্দর, টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: পাইলিং এর ইতিবৃত্ত

ভবন নির্মাণ করতে গেলে প্রারম্ভিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি হচ্ছে পাইলিং। বহুতল ভবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা এবং কাঠামোগত স্থিতির জন্য পাইলিং একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। কিন্তু কোথায় পাইলিং প্রয়োজন হবে, কতটুকু পাইলিং করতে হবে অথবা পাইলিং করার ক্ষেত্রে খরচের হিসেবটাই বা কীভাবে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে নির্মাণ কাজে হাত দেবার আগেই।

পাইলিং কী?

পাইলিং মূলত ভবন বা স্থাপনার জন্য এক ধরনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি, যা মাটিতে দণ্ডায়মান স্থাপনার ভর একটি স্ট্রাকচারাল পদ্ধতি থেকে মাটির নিচে স্থানান্তর করে ও স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখে।

ভবনের ভার বহন ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে কোনো ভবনে পাইলিং করার প্রয়োজন আছে কিনা। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে তলার সংখ্যাও এক্ষেত্রে একটি নিয়ামক। অনেক সময় একে মাটির গভীরে প্রবেশ করা কলামের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে।

কেন করা হয় পাইলিং?

যেকোনো স্থাপনাকে সুদৃঢ় করাই মূলত পাইলিং-এর কাজ। এছাড়া এর কাজগুলো হলো মূলত-

১. ভবনের ভার বহন করা।

২. ভবনের চাপে বা অবস্থানের কারণে যেন মাটি সরে না যায় বা ক্ষয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।

৩. ভবনের দ্বারা তৈরি হওয়া ঘূর্ণন মোমেন্ট বা তীর্যক বলকে প্রতিরোধ করা।

৪. অনেক ক্ষেত্রে জমিতে বালি দিয়ে জমি ভরাট করা হয়। পাইলিং এই বালি-মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৫. ভবনের ভারকে নরম বা সংকোচনশীল পদার্থের মধ্যে দিয়ে মাটির শক্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়া।

কী কী ধরনের পাইলিং হয়?

  • কাস্ট ইন সিটু (CAST IN-SITU) পাইল

বাংলাদেশে প্রচলিত পাইলিং পদ্ধতির মধ্যে কাস্ট-ইন-সিটু পাইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়এটি মূলত সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে, যার ব্যাস ১৮ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারেবিশেষ প্রয়োজনে এটি আরো বাড়ানো যায়। আর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে মাটির স্তরের উপর, যা সয়েল টেস্ট রিপোর্টে পাওয়া যায়।

  • স্যান্ড (SAND) পাইল

স্যান্ড পাইলের ধারণাটি অপেক্ষাকৃত নতুন। সাধারণত কম তলা বিশিষ্ট স্থাপনা, যেখানে মাটির ভারবহন ক্ষমতা কম, সেখানে স্যান্ড পাইল করে সেটি বৃদ্ধি করা যায় এবং এধরনের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরতবে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভবপর নয়।

  • প্রি-কাস্ট (PRE-CAST) পাইল

প্রি-কাস্ট পাইলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাইল আগে কাস্টিং বা ঢালাই করে নেয়া হয় সুবিধামতো স্থানে (অবশ্যই মাটির অভ্যন্তরে নয়)তারপর এটি আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বা হাতুড়ি পেটা করে জমির ভুমিতে যথাস্থানে প্রবেশ করানো হয়।

  • শোর (SHORE) পাইল

যে সমস্ত স্থাপনায় বেসমেন্ট থাকে, কিংবা অন্য কোনো কারণে মাটি কাটতে হয়, সেখানে পাশের মাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেখানে শোর পাইল করা হয়। এটি করা হয় মূলত, মাটির পার্শ্বচাপ প্রতিরোধ করার জন্য। এর সাথে শিয়ার ওয়ালের তুলনা করা যায়। এটা প্রিকাস্ট বা কাস্ট ইন সিটু বা টিম্বার পাইল হতে পারে।

  • টিম্বার (TIMBER) পাইল

টিম্বার পাইল হলো গাছকে (সাধারণত শাল গাছের কাণ্ড) পাইল হিসেবে ব্যবহার করা। এটি ব্যবহার করা হয় কম তলা বিশিষ্ট ভবনে।

পাইলিং-এর হিসেব

পাইলিং-এর ক্ষেত্রে রড, রিইনফোর্স করা কনক্রিট এবং বোরিং এই তিনটি জিনিসের হিসেব করা হয়। একটি সাধারণ পাইলিং (যা কাস্ট ইন সিটু ধরনের) এর হিসাব নিম্নরূপ:

কাস্ট ইন সিটু পাইলের হিসেব (1:1.5:3)

  • পাইলটির ব্যাস 18″
  • গভীরতা 60′-0″
  • পাইলটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মোট 8টি 16mm ব্যাসের রড ব্যবহার করা হয়েছে
  • কাট অফ লেভেল আরো 2′-0″ ধরা আছে
  • 10mm রড দিয়ে স্পাইরালের কাজ করা আছে

প্রথম L/4 এবং শেষ L/4 এ স্পাইরালের স্পেসিং 4″C/C, বাকিটা 6″C/C ধরতে হবে। কভারিং আদর্শ পরিমাণ ধরে নিতে হবে।

Estimate for 18″Dia Boring = 1×62′-0″ = 62.00 Rft.

Estimate for RCC (1:1.5:3) = 1x{(πx1′-6″x1′-6″)/4}x62′-0″ = 109.56 Cft.

Estimate for Reinforcement:

For 16mm Dia Main Rod. = 8×62′-0″ = 496.00 Rft.

= 238.57 Kg. Lap = 8×2′-0″ = 16.00 Rft. = 7.69 Kg. For 10mm Dia Spiral

= Nπ{(D+d)+8d}

= 152π{(1′-0″+0.032)+(8×0.032)}

= 152π(1.032+0.256) = 615.04 Rft.

= 115.01 Kg. Lap

= 15×1′-0″

= 15.00 Rft = 2.80 Kg.

Total Rod = 364.00 Kg. = 3.64 qntl.

মনে রাখবেন, প্রত্যেক ভবনের পাইলিং-এর হিসেব একইরকম হবে না। তবে এই ধাপ ও ফর্মুলাতে বসিয়েই হিসেব করা হয়। এভাবে হিসেব করে আপনি পাইলিং-এর আগেই আপনার ভবনের পাইলিং-এর জন্য দরকারি রড, সিমেন্ট, বোরিং-এর হিসেব বের করতে পারেন। এরপর বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে মিলিয়ে নিলেই পেয়ে যাবেন আপনার ভবনের পাইলিং-এর খরচের হিসাবটি।

কলাম বীম স্ট্রাকচার: আপনার বাড়ির ভার নিচ্ছে যারা

স্বপ্নের বাড়ি, উঁচু দালান কিংবা যেকোনো কাঠামোকে সোজা, স্থিতিশীল করে সুরক্ষিত রাখতে, মাথার উপর ছাদকে সু-উন্নত রাখতে ঘরের খুঁটি, কড়িকাঠ অথবা ইংরেজিতে যাকে কলাম-বীম বলে, তার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।

ঐতিহাসিক কাল থেকে সভ্যতার উচ্চতার জন্য এর ব্যবহার চলে আসছে, যা হয়ে উঠেছে আমাদের স্বপ্নের বসতবাড়ির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। আসুন আজ আমরা জেনে নিই কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী, কীভাবে এর উৎপত্তি হলো এবং কেন আপনার বাড়িতে এর প্রয়োজন।

কলাম-বীম স্ট্রাকচার কী?

একটি দালানের ভার নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত নির্মাণ পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে ভার পরিবহন করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এভাবে কাজ করে- প্রথমে ভর দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ভর/ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এর পরে ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান সুরক্ষিত থাকে এবং অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীমের প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয় যেটির মাপ উপাদানের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসেব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

আবিষ্কার এবং ব্যবহার

মানুষ স্বভাবতই একঘেঁয়েমি অপছন্দ করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণের অংশ হিসেবে কলাম, বীমের নীতি এবং নকশায় এসেছে নতুনত্ব, মানুষ বের করতে পেরেছে অনেক অভিনব পন্থা। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় প্রাথমিকভাবে গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হতো বড় বড় কলাম, যেগুলো ছাদের ভার নিতে পারত। পরবর্তীতে পাথর ব্যবহার করে আরো শক্ত মজবুত কলাম বানানো শুরু করা হয়। এর ফলে স্ট্রাকচার হয়ে উঠে আরও মজবুত ও অভিজাত।

এরপরে এই সভ্যতার পরে অন্য সভ্যতাগুলোতে কলাম এবং বীমের সুস্পষ্ট বিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এর পরে প্রাচীন গ্রীক, রোমান সভ্যতার কলামযুক্ত স্পেসগুলো প্রমাণ বহন করে কলাম-বীমের মাহাত্ম্য। তখনও অবশ্য মূলত পাথর ছিল শক্ত এবং মজবুত কলামের মূল উপকরণ।

এর উপকরণ বাছাই হতো মূলত অঞ্চলভেদে প্রাপ্ত বিভিন্ন কিছু থেকে। যেমন- এই কাজে অঞ্চলভেদে এখনও কাঠ, বাঁশ, লোহা কিংবা ইটের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। ইউরোপীয় সভ্যতার ক্রমাগত উন্নতি এবং শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে লোহার ব্যবহার ও কারখানায় প্রস্তুতকৃত বস্তুর চাহিদা বাড়তে শুরু করে।

মানুষ আরো অধিক শক্তিশালী কলামের আবিষ্কারের জন্য মেধা ও শ্রম নিয়োগ করে। আবিষ্কার হয় সিমেন্ট ও রডের। মানুষ এই দুটো উপকরণ দিয়ে তার অবাস্তব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করে। তৈরি করতে শুরু করে সুউচ্চ দালানকোঠা, ইমারত। এরপরে কলাম-বীমের বিভিন্ন রকমফের উদ্ভাবিত হয় ব্যবহার ও প্রয়োজনমাফিক।

আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম কোনটি?

সাধারণত, আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত কলাম-বীম বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

প্রথমত, স্ট্রাকচারাল শক্তি, ভার বহনের ক্ষমতা সুনিশ্চিত করতে সঠিক মাপের এবং আকৃতির কলাম ও বীম। এর মধ্যে কতটা রড লাগবে, কত দূর পরপর কলাম বসবে এসবের হিসাব ঠিক করবেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার।

কলাম বা বীমের আকৃতি, এর ফিনিশিং ও কীসে তৈরি হবে এসব বিষয়ে উপযুক্ত দিকনির্দেশনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাথে স্থপতিকেও নিতে হয়। রুমের ব্যবহারযোগ্য স্পেস যাতে নষ্ট না হয় এবং আপনার স্বপ্নের দালান যাতে মজবুত ও টেকসই হয়, এজন্য ভালো নকশা নির্ধারণ করা একান্ত আবশ্যক। এর জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে উপযুক্ত ও পেশাদার স্থপতি ও প্রকৌশলীদের।

কলাম-বীম স্ট্রাকচার ও শিয়ার ওয়াল: কোনটির কাজ কী?

সবারই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর বাড়ির। মানুষ তার সমস্ত জীবন পরিশ্রম করে তিল তিল করে গড়ে তোলে তার সাধের বসতবাড়ি। সবারই ইচ্ছা থাকে তার বাসা যাতে হয় মজবুত এবং টেকসই। মাথার উপরে ভরসার একটা প্রতীক হয়ে থেকে এই বাড়িই তাদের জীবনকে করে তোলে শান্তিময়। আর এই বাড়িকে মজবুত করে বানানোর জন্য চাই উপযুক্ত স্ট্রাকচার পদ্ধতি।

প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত দুটি পদ্ধতি হলো, কলাম-বীম স্ট্রাকচার এবং শিয়ার ওয়াল স্ট্রাকচার। আপনার বাসার জন্য কোনটি উপযুক্ত, কোনটি বেছে নিলে আপনার সাধের বাড়িটি সাধ্যের মধ্যে সর্বাধিক মজবুত ও টেকসই হবে- আসুন আজকে আমরা জেনে নিই।

কলাম-বীম কী এবং কীভাবে কাজ করে?

একটি দালানের লোড নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে লোড ট্রান্সফার করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এরূপ- প্রথমে ওজন দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এরপর ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থেকে সুরক্ষিত থাকে।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীম এর প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয়, যার মাপ ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসাব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

শিয়ার ওয়াল কী এবং কীভাবে কাজ করে?

সাধারণত অ্যাপার্টমেন্ট বাসার লিফট কোর এবং সিঁড়ির স্ট্রাকচারাল প্রয়োজনে শিয়ার ওয়াল ব্যবহৃত হয়। শিয়ার ওয়াল কার্যকরভাবে একটি একক বড় কলাম হিসেবে কাজ করে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে।

সাধারণত শিয়ার ওয়াল পাশ থেকে আসা ধাক্কা (ভূমিকম্পের সময়ের কম্পন, জোর বাতাসের ধাক্কা) ঠেকিয়ে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে। এই পার্শ্বিক ধাক্কার চাপ সামাল দিয়ে সেটি জমির ভিতের মধ্য দিয়ে ভূমিতে পাঠিয়ে দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে শিয়ার ওয়াল। কলামের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের ওজন পরিবহনের ক্ষমতা বেশি হয়।

সাধারণত সাধারণ দেয়ালের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের প্রস্থ বেশি হয়, কারণ, সাধারণ দেয়াল লোড ট্রান্সফারের কোনো কাজ করে না। শিয়ার ওয়াল সাধারণত রিইনফোর্সড কংক্রিটের তৈরি হয়, ক্ষেত্রবিশেষে স্টিলের হয়। শিয়ার ওয়াল যেহেতু মোটা হয়, তাই এর নির্মাণ খরচও বেশি। সাধারণত একটি শিয়ার ওয়াল ১৫০-৪০০ মিলিমিটার প্রস্থের হয়ে থাকে।

কোথায় ব্যবহার করবেন?

কলাম সাধারণত দালানের চার কোণায় এবং এরপর ভিতরে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে উপরে এবং নিচের কলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বানানো হয়, যাতে ভর/ওজন সম্পূর্ণভাবে মাটিতে নিতে পারে। লোহার কলাম নিলে দূরত্ব বেশি রাখা যায় কংক্রিট বা ইটের কলামের চেয়ে। আপনার দালান যদি ১-৩ তলা হয় তাহলে আপনি কলাম দিয়েই অনেক ক্ষেত্রে কন্টেক্সট ভেদে বাসা বানানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু এর উপরে গেলে বাসার স্থাপনাগত শক্তির জন্য শুধু কলাম দিয়েই নির্মাণ সম্ভব না।

বাতাসের ধাক্কা কিংবা ভূমিকম্পের সময়ের ধাক্কা প্রতিহত করে দালানের সুরক্ষার জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা লাগতে পারে। সিঁড়ি, লিফটের কোর কিংবা কলামের মতো নকশা অনুযায়ী দালানের যেকোনো স্থানে লোড ট্রান্সফারের জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা যায়। এটি সাধারণ দেয়ালের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে আলাদা কলাম ছাড়াও সুন্দর নকশা করা সম্ভব।

এখন সাইটে ঢালাই দিয়ে এই কলাম বীম বা শিয়ার ওয়াল কাস্ট করা ছাড়াও প্রি-ফেব্রিকেটেড কারখানায় তৈরি করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেগুলো নকশা করা ছাঁচে বসিয়ে বানানো হয় এবং পরে সাইটে এনে বসিয়ে দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভবপর হয়।

সাইটে ঢালাই দেওয়ার সময় যে জিনিসটি খেয়াল রাখতেই হবে, তা হলো বালি, সুড়কি আর সিমেন্টের সঠিক অনুপাতের মিশ্রণ এবং রডের সঠিক মাপ ও পরিমাণ। নাহলে কলাম, বীম ও শিয়ার ওয়াল হবে দুর্বল, যা আপনার বাসাকেও করবে দুর্বল। আর এর ফলে সহজেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আঘাতে আপনার স্বপ্ন হতে পারে ধুলিসাৎ। কাস্টিং ঠিকমত না হলে ঘটতে পারে রানা প্লাজার মতো ট্র্যাজেডি। এজন্যই নকশা থেকে নির্মাণ- সবকিছুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপযুক্ত এক্সপার্টের সহায়তায় নির্মাণ করুন আপনার স্বপ্নের বাড়ি।