বাড়ি নির্মাণ করবেন: কত খরচ পড়বে?

“আমি একটি বাড়ি নির্মাণ করতে চাই। বলতে পারেন কেমন খরচ পড়বে?” এই প্রশ্নটি নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে প্রায় প্রতিদিনই শুনতে হয়। একটি বাড়ি তৈরিতে খরচ কত হবে এ সম্পর্কে সরাসরি একটি উত্তর দেয়া সবসময়ই কঠিন।

কারণ, ভবন নির্মাণ একটি শিল্প যেখানে অনেক বিষয়ই একসাথে কাজ করে। জমির মাপ, ভবনের নকশা, কত বর্গফুট জায়গা, সাইটের অবস্থা ও অবস্থান, উপকরণের সহজলভ্যতা ও পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি নানা কারণে খরচ পরিবর্তন হতে পারে। 

তবে ভবন তৈরি করতে হলে আপনাকে সকল দরকারি জমিসংক্রান্ত কাগজ ও সার্ভেসহ প্রথমে যেতে হবে স্থপতির বা স্থাপত্য ফার্মের কাছে। তারা আপনাকে নকশা ও খরচের প্রাথমিক হিসাব প্রদান করবেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ও সরকার অনুমোদিত নকশা নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা ফার্ম থেকে পুরকৌশল সংক্রান্ত নকশা ও বাজেট নির্ধারণ শেষে আপনি নির্মাণে হাত দিতে পারবেন।

এখন স্থপতি ও প্রকৌশলীর ফি এবং অনুমোদনের ফি প্রদানের পর আপনি নির্মাণ বাজেটকে বিভিন্ন খাতে ভাগ করতে পারেন। এই খাত এর আনুপাতিক হার সম্পর্কে ধারণা দেয়া সম্ভব।

বিভিন্ন খাত অনুসারে আপনার নির্মাণ বাজেট খরচের শতকরা হিসাব

১. ভিত্তি ও কাঠামো = ৩৫%

২. ইটের কাজ = ৬%

৩. ফ্রেম ও কাঠের কাজ = ৫%

৪. ধাতব কাজ = ২%

৫. পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ = ৬%

৬. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি = ৭%

৭. প্লাস্টার = ৪%

৮. টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ = ৬%

৯. স্নানঘর ও টয়লেটের সাজসজ্জা = ৩%

১০. অ্যালুমিনিয়াম ও জানালার ফ্রেমিংয়ের সাজসজ্জা = ৪%

১১. কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি (লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশান)= ১০%

১২. রঙের কাজ = ৩%

১৩. বিবিধ পুরকৌশলজনিত কাজ = ৬%

১৪. নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল = ৩%
___________________________________________________________

মোট খরচ  = ১০০%

এখন যদি আমরা প্রতিটি খাতে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্মাণ সংস্কৃতিতে একটি ছয়তলা বাড়ির কথা চিন্তা করি (যা ৩, ৫ বা ৭ কাঠা জায়গার উপর নির্মিত হবে) তাহলে এর বিভিন্ন খাতকে আরো বিস্তারিতভাবে খরচ সাপেক্ষে নিরুপণ করা যায়। সেটা অনেকটা এরকম-

ভিত্তি ও কাঠামোগত খরচ


– ফুটিং ও কলামের ভিত্তিমূলের কাজ = ২০%

– গ্রেড বীম ও ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংকের উপরের স্ল্যাব = ৫%

– বেজমেন্ট-এর কলাম ও স্ল্যাব = ৪%

– ১ম ফ্লোরের স্ল্যাব = ৯%

– সাধারণ ফ্লোরের কলাম (৫x৩%) = ১৫%

– দ্বিতীয় তলা থেকে বাকি ফ্লোর সহ ছাদের স্ল্যাব (৫x৮) = ৪০%

– ছাদের কাঠামোগত খরচ = ৭%
____________________________________

ভিত্তি ও কাঠামোর জন্য মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৩৫% যেভাবে খরচ হবে।)

ইটের কাজে খরচ

– বেজমেন্ট এ ইটের কাজ = ৬%
– প্রথম ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– দ্বিতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– তৃতীয় ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– চতুর্থ ফ্লোরে ইটের কাজ= ১৮%
– পঞ্চম ফ্লোরে ইটের কাজ = ১৮%
– ছাদে ইটের কাজ= ৪%
____________________________________

ইটের কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

কাঠের কাজ বাবদ খরচ

– দরজার ফ্রেম = ৪০%
– মূল দরজার শাটার = ১৫%
– পারটেক্সের দরজার শাটার= ৩৫%
– পোষ্য দরজা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি = ১০%
____________________________________

দরজার কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ৫% যেভাবে হবে।)

ধাতব কাজ বাবদ খরচ

– জানালার গ্রিল = ৫৫%
– বারান্দার রেলিং = ২০%
– সিঁড়ির রেলিং = ১০%
– মূল ফটক ও সকল ধরনের সেফটি গ্রিল = ১৫%
____________________________________

ধাতব কাজে পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেট এর ২% যেভাবে খরচ হবে।)

পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ

– উলম্ব পিভিসি লাইন ও সকল ডাক্ট এর খরচ = ২৫%
– জি আই লাইনের কাজ = ৩০%
– ফিক্সচার ও ফিটিং = ৪০%
– নিচতলার ফ্লোর এর পয়ঃনিষ্কাশনের আলাদা খরচ = ৫%
____________________________________

পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের খরচ = ১০০% ( পুরো নির্মাণ কাজের ৬% যেভাবে হবে।)

বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ

– স্ল্যাবের ভেতর দিয়ে লাইন বহনের খরচ = ১০%
– দেয়াল ও বৈদ্যুতিক বক্সের ভেতর লাইন বহনের খরচ = ১৫%
– তার সংক্রান্ত কাজ = ৫৫%
– সুইচ ও সকেট বাবদ খরচ = ২০%
____________________________________

বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৭% যেভাবে খরচ হবে।)

প্লাস্টার বাবদ খরচ

– সিলিং-এর প্লাস্টার = ২০%
– ভেতরের দেয়ালের প্লাস্টার = ৫০%
– বাইরের দেয়ালের প্লাস্টার বা ইটের ফেসিং ও পয়েন্টিং = ৩০%
____________________________________

প্লাস্টার বাবদ পুরো খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)

টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজ

– সাধারণ ফ্লোর ও বারান্দার টাইলস = ৭৫%
– সিড়ি, লিফটকোর এর দেয়াল ও লবির টাইলস = ২০%
– বেজমেন্ট এর লিফটের লবি, দেয়াল এবং লবির টাইলস = ৫%

____________________________________

টাইলস ও ফ্লোর সংক্রান্ত কাজে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

স্নানঘর ও টয়লেট এর সাজসজ্জা সংক্রান্ত খরচ

– স্নানঘরের দেয়াল = ৬০%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ২০%
– স্নানঘরের মেঝে = ৯%
– স্নানঘরের কাউন্টার টপ= ৪%
– রান্নাঘরের দেয়াল = ৩%
– কিচেন কাউন্টারের টপ =৪%

____________________________________

সাজসজ্জা বিষয়ে মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত কাজ বাবদ খরচ

– স্লাইডিং জানালার বাইরের দিকের ফ্রেম = ৪০%
– গ্লাসের শাটার ও স্লাইড করার ফ্রেম = ৩০%
– বারান্দার স্লাইডিং উপকরণ = ২০%
– টয়লেটের উঁচু জানালা = ৫%
– সাধারণ এরিয়া এর উপকরণ = ৫%
____________________________________

অ্যালুমিনিয়াম সংক্রান্ত মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৪% যেভাবে খরচ হবে।)

কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ

– লিফট = ৫০%
– জেনারেটর =২৫%
– বৈদ্যুতিক সাবস্টেশান = ২০%
– অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি ও ইন্টারকম সংযোগ = ৫%
____________________________________

কেন্দ্রীয় সরঞ্জামাদি বাবদ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ১০% যেভাবে খরচ হবে।)

রঙের কাজ বাবদ খরচ

– পুটি লাগানো পর্যন্ত খরচ = ৪০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ প্রথম আস্তর = ২০%
– ভেতরের দেয়াল ও সিলিং এ পরের আস্তর= ১৫%
– বাইরের রঙ ও মোমের কোটিং = ২৫%
____________________________________

রং বাবদ মোট খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

বিবিধ পুরকৌশল সংক্রান্ত কাজ

– সীমানার দেয়াল সংক্রান্ত খরচ = ৩০%
– টেরাস ও ছাদের পেভিং সংক্রান্ত খরচ= ১৫%
– ছাদে বাগান, ডেভেলপারের ব্যবসায়িক অলংকরন = ৪%
– বেজমেন্ট লেভেলের বিবিসি = ১৪%
– বেজমেন্ট এর পেভমেন্ট ও জমির ভেতর ফুটপাথ সংক্রান্ত কাজ = ১০%
– লিন্টেল, ড্রপ স্ল্যাব, এফ স্ল্যাব ইত্যাদি= ২০%
– তারের ট্রে = ১%
– ডাক্ট ও সিলিং এ তারের উপরে কাভার ও তার লুকানোর খরচ= ৪%
– অভ্যর্থনা ডেস্ক ও চিঠির বাক্স = ২%
____________________________________

বিবিধ খরচ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৬% যেভাবে খরচ হবে।)

নির্মাণকালীন সব ধরনের সংযোগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল

– বিদ্যুৎ বিল (ডেসা ও ডেসকোর রেট অনুসারে) = ৩৫%
– গ্যাসের বিল (তিতাস এর রেট অনুসার) = ২০%
– পানির বিল (ওয়াসা এর রেট অনুসারে) = ১৫%
– অন্যান্য বিল = ৩০%
____________________________________

সম্পূর্ণ = ১০০% (পুরো নির্মাণ বাজেটের ৩% যেভাবে খরচ হবে।)

সাধারণত ঢাকায় অঞ্চলভেদে প্রতি স্কয়ার ফুট নির্মাণ কাজে আবাসিক ভবনে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে নকশা ও এর খুঁটিনাটি অনুসারে এটি অনেক ওঠানামা করতে পারে।

বাড়ি নির্মাণ একটি দীর্ঘ ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এজন্য খরচের হিসাব সম্পর্কে শুরুতেই পরিষ্কার ধারণা নিন। আপনার স্থপতিকে শুরুতেই আপনার বাজেট সম্পর্কে ধারণা দিন ও চাহিদার কথা পরিষ্কারভাবে জানান। শুধুমাত্র এভাবেই আপনি নির্ধারিত বাজেটে আপনার পছন্দের বাড়ি পেতে পারেন।

বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার মাপজোক: কীভাবে করবেন?

আমরা শহরে-মফস্বলে কিংবা গ্রামে যেখানেই বাসা বানাই না কেন, সবাই কোনো না কোনো সড়কের পাশে বাস করি। সেটা ছোট গলি হোক কিংবা মহাসড়কই হোক- রাস্তার পাশে বাড়ির অবস্থান এমন হয়, যাতে উপযুক্ত প্রাইভেসি রক্ষা করে সড়ক থেকে আমরা নিজ নিজ বাসায় প্রবেশ করতে পারি। রাস্তার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আবার বাসার ও প্লটের দামও নির্ভর করে।

এজন্য সরকার এবং নগর-পরিকল্পনাবিদরা বাড়ি তৈরির সময় পাশের রাস্তার মাপজোক ও প্রধান প্রবেশপথের উপর নির্ভর করে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে কিছু নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে থাকেন, যাতে মানুষ যথেচ্ছভাবে বাসা না বানায়, নিজের ও তার পরিপার্শ্বের সবার কথা ভেবে বানায় এবং সব রাস্তাই চলাচলের উপযোগী থাকে।

এতে করে আশেপাশের সব জায়গায় সুন্দর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে এবং পরিবেশ ভালো হয়। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তাঘাটের মাপজোক বাড়ি তৈরির আগেই পরিকল্পনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক বাড়ি সংলগ্ন রাস্তাঘাট ও এর জন্য প্রয়োজনীয় মাপ কীরকম হবে।

কোথা থেকে জানতে পারবেন?

বাংলাদেশের ছোট-বড় সব রাস্তা আলাদা আলাদা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের অধীন। সেসব রাস্তার মেরামত, এ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে এর পাশে কী গড়ে উঠবে এবং কত দূরে হবে ইত্যাদি সবকিছুই ঠিক করেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। সাধারণত এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সেতু বিভাগ ইত্যাদি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রাস্তাঘাট, সেতু নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ করে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে থাকে। এগুলোই মূলত আইন বা নীতি হিসেবে মেনে চলা হয়। এজন্য বাড়ি তৈরির আগে প্লট বা বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার জন্য প্রযোজ্য নীতি গেজেট বা বিএনবিসি নীতিমালা অনুসারে জেনে নিতে হবে যাতে বাড়ি ও রাস্তার মধ্যে মাপজোক সঠিক থাকে।

কী কী খেয়াল রাখতে হবে?

নিয়ম-নীতিগুলো পালন করার জন্য এবং সে অনুযায়ী নকশা নির্ধারণ করতে হলে উপযুক্ত গেজেটের সহায়তা নিতে হবে। এই গেজেটের নিয়ম-কানুন অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হবে। তবে মৌলিক কিছু বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। আসুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

বাড়িতে মূল প্রবেশপথ কোনটি হবে সেটি নির্ধারণ করতে হবে। মূল প্রবেশপথের দিকটি দালানের সম্মুখ বলে বিবেচিত হবে। সেটি থেকে দালানের সেটব্যাক, এম.জি.সি., ফার এসব থেকে নির্ধারিত হবে। সেটব্যাকের বাইরে দালানের কোনো অংশ বর্ধিত হতে পারবে না। ফুটপাথ দখল করে এর উপরে যাতে কেউ দালান তুলে না দেয় এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এবং নিজের জমি থেকে সেটব্যাকের অংশ ছাড়তে হবে।

বাড়ি বা দালানের সামনের বা পাশের রাস্তায় ইমার্জেন্সি এক্সেস থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স যাতে করে নির্ঝঞ্ঝাটে প্রবেশ করতে পারে সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য রেসিডেন্সিয়াল, শিল্প বা কমার্শিয়াল এলাকার ভিন্নতার জন্য রাস্তার মাপ ও বাড়ি থেকে দূরত্ব সংশ্লিষ্ট এলাকার নিয়ম মেনে বানাতে হবে।

সাধারণত কোনো রাস্তার মাপ ঠিক করা হয় সেটি কতগুলো বাসাবাড়িতে প্রবেশপথ নিশ্চিত করছে তার উপর ভিত্তি করে। সেজন্য হাউজিং কমপ্লেক্স বা সাধারণ বাড়ির জন্য যাতে বাড়ির আশেপাশে পরিমিত পরিমাপের রাস্তা থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনো রাস্তা বা রাস্তার প্রস্থ তার বিপরীতে যেকোনো প্লট আকারে পরিমাপ করা হয় অথবা মুখোমুখি প্লটের দূরত্ব থেকে পরিমাপ করা হয়। রাস্তার প্রস্থ নির্ধারণের ক্ষেত্রে, যেকোনো প্লট থেকে সরকারি বিধিনিষেধ অনুসারে রেল ট্র্যাক ছাড়া অন্য যেকোনো যাতায়াত ব্যবস্থার ন্যূনতম প্রস্থটি রাস্তার প্রস্থ হতে হবে।

রাস্তার ও বাড়ির মাঝখানে ফুটপাথ থাকলে প্রয়োজনীয় মাপে তা বানাতে হবে। বাড়ি বা দালান নির্মাণের সময় যদি কোনো কারণে সেটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে তা মেরামত করে দিতে হবে।

যেসব স্থানে অ্যাভিয়েশন রুল কার্যকর, সেসব স্থানে অনুমোদিত মাপের চেয়ে উঁচু দালান নির্মাণ করা যাবে না, এবং কর্তৃপক্ষের দেওয়া আইন কানুন মেনে চলতে হবে।

জেনে নিই মাপজোক

আসুন এবার আমরা জেনে নিই, বাড়ি ও রাস্তা এবং এদের সংশ্লিষ্ট অতি আবশ্যক কিছু মাপজোক। রাস্তার স্তরটির উচ্চতা, কোনো অঞ্চলের যেই এলাকায় লোকের বসবাস বেশি সেই এলাকার স্তরের চেয়ে কম হবে। যখন একটি রাস্তা জাতীয় বিপর্যয় পরিচালন ব্যবস্থার অংশ হিসাবে নকশা করা হয় এবং মনোনীত করা হয়, তখন তার গঠনের স্তরটি এখতিয়ারযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্লটের গঠনের স্তরের ঢালের চেয়ে কম হবে না রাস্তার স্তর।

প্লট সংলগ্ন রাস্তা ৬ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে, যে সকল দিকের জন্য জমি প্রতি ০.৩ মিটার করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ০.০৫ করে ০.২ পর্যন্ত ফার পাওয়া যাবে, সেই ফার মূল ফারের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে যোগ করা যাবে। ৬ মিটারের অধিক প্রশস্ততার জন্যও সমপরিমাণ ফার অতিরিক্ত হিসেবে ফারের হিসাব থেকে পাওয়া যাবে। এসব সুবিধা পাওয়ার জন্য বাড়ি নির্মাতাকে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের দেওয়া গেজেট বা বিধানমালা অনুসরণ করতে হবে।

ফায়ার ট্রাক অ্যাক্সেসের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাগুলোর অবিচ্ছিন্ন প্রস্থ হবে ৪.৫ মিটার এবং সর্বনিম্ন ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ৫ মিটার। যেসব রাস্তার উচ্চতা ও প্রস্থে এরকম ক্লিয়ারেন্স নেই তাদের প্রস্থ এবং ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের মতামত অনুসারে বাড়ানো যেতে পারে। আগেই বলা হয়েছে, যেকোনো এক্সেস রোডের মাপ ঠিক হয় এটি কতগুলো বিল্ডিংকে সেবা দেয় তার উপর নির্ভর করে। আসুন এরকম একটি হিসাব আমরা জেনে নিই।

নন রেসিডেন্সিয়াল প্লটে অভ্যন্তরীণ এক্সেস রাস্তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সম্পর্ক

চওড়া (মিটার)সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য (মিটার)
৮০
১৫০
৩০০
৯ বা বেশিঅনির্ধারিত

ফুটপাথের সর্বনিম্ন প্রস্থ প্রবেশ বা প্রস্থান করার জন্য সংযুক্ত করিডোর বা কোনো বিল্ডিংয়ের ওয়াকিং র‍্যাম্প গণনা করা প্রস্থের চেয়ে কম হবে না, যদি এর উভয় পক্ষের সংলগ্ন দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ না হয়; অন্যথায় সর্বনিম্ন প্রস্থ হবে ১.২৫ মিটার।

এসব নিয়ম মেনে আমরা যদি বাসা বানাই, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা হবে সুস্থ, স্বপ্নীল, শান্তিময় এবং আমাদের জীবন হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়, সাবলীল ও সুরক্ষিত। তাই বাড়ি বানানোর আগে আমাদের অবশ্যই এই মাপজোক সুন্দর করে জেনে নিয়ে এরপর মেনে চলতে হবে।

স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ: পাইলিং এর ইতিবৃত্ত

ভবন নির্মাণ করতে গেলে প্রারম্ভিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি হচ্ছে পাইলিং। বহুতল ভবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা এবং কাঠামোগত স্থিতির জন্য পাইলিং একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। কিন্তু কোথায় পাইলিং প্রয়োজন হবে, কতটুকু পাইলিং করতে হবে অথবা পাইলিং করার ক্ষেত্রে খরচের হিসেবটাই বা কীভাবে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে নির্মাণ কাজে হাত দেবার আগেই।

পাইলিং কী?

পাইলিং মূলত ভবন বা স্থাপনার জন্য এক ধরনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি, যা মাটিতে দণ্ডায়মান স্থাপনার ভর একটি স্ট্রাকচারাল পদ্ধতি থেকে মাটির নিচে স্থানান্তর করে ও স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখে।

ভবনের ভার বহন ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে কোনো ভবনে পাইলিং করার প্রয়োজন আছে কিনা। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে তলার সংখ্যাও এক্ষেত্রে একটি নিয়ামক। অনেক সময় একে মাটির গভীরে প্রবেশ করা কলামের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে।

কেন করা হয় পাইলিং?

যেকোনো স্থাপনাকে সুদৃঢ় করাই মূলত পাইলিং-এর কাজ। এছাড়া এর কাজগুলো হলো মূলত-

১. ভবনের ভার বহন করা।

২. ভবনের চাপে বা অবস্থানের কারণে যেন মাটি সরে না যায় বা ক্ষয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।

৩. ভবনের দ্বারা তৈরি হওয়া ঘূর্ণন মোমেন্ট বা তীর্যক বলকে প্রতিরোধ করা।

৪. অনেক ক্ষেত্রে জমিতে বালি দিয়ে জমি ভরাট করা হয়। পাইলিং এই বালি-মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৫. ভবনের ভারকে নরম বা সংকোচনশীল পদার্থের মধ্যে দিয়ে মাটির শক্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়া।

কী কী ধরনের পাইলিং হয়?

  • কাস্ট ইন সিটু (CAST IN-SITU) পাইল

বাংলাদেশে প্রচলিত পাইলিং পদ্ধতির মধ্যে কাস্ট-ইন-সিটু পাইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়এটি মূলত সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে, যার ব্যাস ১৮ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারেবিশেষ প্রয়োজনে এটি আরো বাড়ানো যায়। আর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে মাটির স্তরের উপর, যা সয়েল টেস্ট রিপোর্টে পাওয়া যায়।

  • স্যান্ড (SAND) পাইল

স্যান্ড পাইলের ধারণাটি অপেক্ষাকৃত নতুন। সাধারণত কম তলা বিশিষ্ট স্থাপনা, যেখানে মাটির ভারবহন ক্ষমতা কম, সেখানে স্যান্ড পাইল করে সেটি বৃদ্ধি করা যায় এবং এধরনের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরতবে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভবপর নয়।

  • প্রি-কাস্ট (PRE-CAST) পাইল

প্রি-কাস্ট পাইলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাইল আগে কাস্টিং বা ঢালাই করে নেয়া হয় সুবিধামতো স্থানে (অবশ্যই মাটির অভ্যন্তরে নয়)তারপর এটি আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বা হাতুড়ি পেটা করে জমির ভুমিতে যথাস্থানে প্রবেশ করানো হয়।

  • শোর (SHORE) পাইল

যে সমস্ত স্থাপনায় বেসমেন্ট থাকে, কিংবা অন্য কোনো কারণে মাটি কাটতে হয়, সেখানে পাশের মাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেখানে শোর পাইল করা হয়। এটি করা হয় মূলত, মাটির পার্শ্বচাপ প্রতিরোধ করার জন্য। এর সাথে শিয়ার ওয়ালের তুলনা করা যায়। এটা প্রিকাস্ট বা কাস্ট ইন সিটু বা টিম্বার পাইল হতে পারে।

  • টিম্বার (TIMBER) পাইল

টিম্বার পাইল হলো গাছকে (সাধারণত শাল গাছের কাণ্ড) পাইল হিসেবে ব্যবহার করা। এটি ব্যবহার করা হয় কম তলা বিশিষ্ট ভবনে।

পাইলিং-এর হিসেব

পাইলিং-এর ক্ষেত্রে রড, রিইনফোর্স করা কনক্রিট এবং বোরিং এই তিনটি জিনিসের হিসেব করা হয়। একটি সাধারণ পাইলিং (যা কাস্ট ইন সিটু ধরনের) এর হিসাব নিম্নরূপ:

কাস্ট ইন সিটু পাইলের হিসেব (1:1.5:3)

  • পাইলটির ব্যাস 18″
  • গভীরতা 60′-0″
  • পাইলটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মোট 8টি 16mm ব্যাসের রড ব্যবহার করা হয়েছে
  • কাট অফ লেভেল আরো 2′-0″ ধরা আছে
  • 10mm রড দিয়ে স্পাইরালের কাজ করা আছে

প্রথম L/4 এবং শেষ L/4 এ স্পাইরালের স্পেসিং 4″C/C, বাকিটা 6″C/C ধরতে হবে। কভারিং আদর্শ পরিমাণ ধরে নিতে হবে।

Estimate for 18″Dia Boring = 1×62′-0″ = 62.00 Rft.

Estimate for RCC (1:1.5:3) = 1x{(πx1′-6″x1′-6″)/4}x62′-0″ = 109.56 Cft.

Estimate for Reinforcement:

For 16mm Dia Main Rod. = 8×62′-0″ = 496.00 Rft.

= 238.57 Kg. Lap = 8×2′-0″ = 16.00 Rft. = 7.69 Kg. For 10mm Dia Spiral

= Nπ{(D+d)+8d}

= 152π{(1′-0″+0.032)+(8×0.032)}

= 152π(1.032+0.256) = 615.04 Rft.

= 115.01 Kg. Lap

= 15×1′-0″

= 15.00 Rft = 2.80 Kg.

Total Rod = 364.00 Kg. = 3.64 qntl.

মনে রাখবেন, প্রত্যেক ভবনের পাইলিং-এর হিসেব একইরকম হবে না। তবে এই ধাপ ও ফর্মুলাতে বসিয়েই হিসেব করা হয়। এভাবে হিসেব করে আপনি পাইলিং-এর আগেই আপনার ভবনের পাইলিং-এর জন্য দরকারি রড, সিমেন্ট, বোরিং-এর হিসেব বের করতে পারেন। এরপর বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে মিলিয়ে নিলেই পেয়ে যাবেন আপনার ভবনের পাইলিং-এর খরচের হিসাবটি।