আমাদের বাসস্থান কিংবা কর্মস্থল, যেকোনো স্থানের অন্দরমহলের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সচেতন সবসময়ই। নিত্য-নতুন নকশার সব আসবাবপত্র কিংবা রঙের পরিবর্তন, আবার কখনোবা নতুন ধরনের লাইটের সংযোজন- সবকিছু মিলিয়েই বেড়ে উঠে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য।
অন্দরমহলের সজ্জা বললে হয়তো সবার শেষে আমাদের বিবেচনায় আসে সিলিংয়ের নকশার কথা। কারণ, চিরকালই সিলিং বলতে আমরা কেবল মাথার উপর এক খণ্ড সাদা সরল তলকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এটিও যে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করার বিষয়, তা বোঝা যায় আধুনিক সময়ে এই সিলিং নকশার পেছনেও নকশাকারদের বিশদ পড়াশোনা এবং বিচার-বিবেচনা থেকে।

প্রকারভেদ
ব্যবহার ও নকশার উপর ভিত্তি করে কয়েক রকমের সিলিং বেশি দেখা যায়। যেমন-
- কনভেনশনাল সিলিং
- সাসপেন্ডেড সিলিং
- ক্যাথেড্রাল সিলিং
- শেড সিলিং
- কোভ সিলিং
- বীম সিলিং
সিলিংয়ের নকশার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ছাদের স্ট্রাকচার বহাল রেখে ফলস সিলিং কিংবা সিলিং টাইলসের মাধ্যমে নকশা করা হয়। সিলিংয়ের নকশা রুমের কার্যকারিতা, নির্মাণকাল, লোকেশন ও নকশার বাকি রুমের সাথে সামঞ্জস্যতা এসবের উপরও নির্ভর করে। মুঘল আমলের কোনো স্থাপনার সিলিংয়ের সাথে যেমন এখনকার কোনো সিলিংয়ের মিল খোঁজা ভিত্তিহীন, তেমনি বাসস্থানের বিভিন্ন রুমের সিলিংয়ের সাথে বিপণি-বিতান বা অফিসের সিলিংয়ের সাদৃশ্যও নেই বললেই চলে।

শহর ও গ্রামভেদে সিলিংয়ের পরিবর্তন
কেবলমাত্র কংক্রিটের তৈরি বাড়িতেই নয় বরং গ্রামাঞ্চলে টিনের তৈরি ছাদের ক্ষেত্রেও সিলিং ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। একসময় টিনের তৈরি ঘরের ছাদের নিচে বাঁশের চাটাই, ছন, খড় এসব দিয়ে সিলিং তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে পিভিসি প্লাস্টিক সিলিংয়ের বহুমাত্রিক ব্যবহারে সিলিংয়ে পরিবর্তন এসেছে। সাশ্রয়ী মূল্যের এই সিলিংয়ের সহজ ব্যবহার, কম খরচে মেরামতযোগ্যতা, সহজলভ্যতাসহ নানাবিধ গুণ রয়েছে।

ফলস সিলিংয়ের ব্যবহার
আমাদের বাসা কিংবা অফিসে বর্তমানে ফলস সিলিংয়ের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। আসল সিলিংয়ের নিচে জিপসাম বোর্ড, কাঠ কিংবা প্যারিস প্লাস্টারের এক বা একাধিক লেয়ারের সিলিং সংযোজন করা হয় এধরনের সিলিংয়ে। নকশার পরিবর্তন কিংবা দৃষ্টিনান্দনিকতার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কারণে ফলস সিলিং ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে ওয়্যারিং ঢাকা, রুমের টিভি, হোম থিয়েটারের একুইস্টিক (শাব্দিক) সামঞ্জস্যতা রক্ষা এবং শীতপ্রধান দেশে ঘরের তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের উপর ভিত্তি করে যে কয়েক রকমের ফলস সিলিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো-
- জিপসাম সিলিং
- উডেন সিলিং
- প্যারিস প্লাস্টার সিলিং
- মেটাল সিলিং
- সিন্থেটিক ফাইবার সিলিং

সিলিংয়ের নকশা এবং রং
বাড়ির কোন রুমের জন্য সিলিং ডিজাইন করা হচ্ছে তা প্রথমে দেখে নিতে হবে। সাধারণত বসার ঘর, শোবার ঘর, শৌচাগার ভেদে সিলিংয়ের নকশায় তারতম্য হয়ে থাকে। রুমভেদে সিলিংয়ের উচ্চতার পার্থক্য হয়। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে যে ফলস সিলিং যোগ করা হয় তার অবকাশ সবসময় থাকে না।
বিভিন্নভাবে সিলিংয়ের রঙের মাধ্যমে রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণত ছোট রুমকে বড় দেখানোর জন্য হালকা রঙের শেড ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কম উচ্চতার সিলিংয়ে কিছুটা গ্লসি রঙ ব্যবহার করলে উচ্চতার পার্থক্য অনুভূত হয়।
রঙের সাথে সাথে সিলিং ও ফলস সিলিংয়ের বিভিন্ন নকশা নিয়েও কাজ করা যায়। বর্তমান সময়ে সিলিং-সাইড ধরে চারকোনা নকশা কিংবা মাঝে গোল নকশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দিকে ও জায়গায় স্পট লাইট, রিসেসড লাইট কিংবা পেন্ডেন্ট লাইটের সংযোজন করা যেতে পারে। কিন্তু সিলিং যে কাঁচামালেই তৈরি হোক না কেন, পানিরোধক না হলে অচিরেই সিলিং অকেজো হয়ে পড়ে। সাধারণত সিলিংয়ের পানিরোধন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভেতরের দিকে পলিইউরেথিন সিলার ব্যবহার করা হয়। বাথরুমের সিলিংয়ের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব কমানোর জন্য সেমি গ্লসি কিংবা অয়েল বেসড রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিলিং তৈরির সময় আগুনের বিষয়ে সতর্কতার কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত রান্নাঘর কিংবা আগুনের সংস্পর্শে আসা সিলিংসমূহের ক্ষেত্রে এটি বিবেচ্য। এক্ষেত্রে প্লাস্টারবোর্ড সিলিং, ফাইবারড সিলিং ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
সিলিং যে ম্যাটেরিয়াল কিংবা নকশাতেই তৈরি হোক না কেন, সিলিংয়ের পরিচর্যার অভাবে অনেক সময়েই সিলিংয়ের কাঠামো কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে সিলিং পরিষ্কার, ভালো মানের রং ব্যবহার ও যেকোনো সমস্যা অচিরেই মেরামত করা বাঞ্ছনীয়। সেইসাথে সিলিং বিষয়ক যেকোনো প্রশ্নের উত্তর ও নির্মাণ বিষয়ক খুঁটিনাটি জানাতে আপনাদের সাথে আছে হোম বিল্ডার্স ক্লাব।