কলাম-বীম স্ট্রাকচার ও শিয়ার ওয়াল: কোনটির কাজ কী?

সবারই স্বপ্ন থাকে একটি সুন্দর বাড়ির। মানুষ তার সমস্ত জীবন পরিশ্রম করে তিল তিল করে গড়ে তোলে তার সাধের বসতবাড়ি। সবারই ইচ্ছা থাকে তার বাসা যাতে হয় মজবুত এবং টেকসই। মাথার উপরে ভরসার একটা প্রতীক হয়ে থেকে এই বাড়িই তাদের জীবনকে করে তোলে শান্তিময়। আর এই বাড়িকে মজবুত করে বানানোর জন্য চাই উপযুক্ত স্ট্রাকচার পদ্ধতি।

প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত দুটি পদ্ধতি হলো, কলাম-বীম স্ট্রাকচার এবং শিয়ার ওয়াল স্ট্রাকচার। আপনার বাসার জন্য কোনটি উপযুক্ত, কোনটি বেছে নিলে আপনার সাধের বাড়িটি সাধ্যের মধ্যে সর্বাধিক মজবুত ও টেকসই হবে- আসুন আজকে আমরা জেনে নিই।

কলাম-বীম কী এবং কীভাবে কাজ করে?

একটি দালানের লোড নিতে কলাম-বীম স্ট্রাকচার সবচেয়ে পরিচিত এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি। সাধারণত, নির্দিষ্ট পরিমাপে লোড ট্রান্সফার করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উপরের তলা থেকে ভার মাটিতে পরিবহন করে নিয়ে যেতে পদ্ধতিটি এরূপ- প্রথমে ওজন দুই ভাগ হয়ে বীম দিয়ে কলামে পৌঁছায়। সেই প্রাপ্ত কম ওজন প্রথমে নিচের কলামে এবং এরপর ফাউন্ডেশনের ফুটিংয়ের মাধ্যমে মাটিতে পৌঁছায়। এতে করে দালান অতিরিক্ত ভারে হেলে পড়া বা ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থেকে সুরক্ষিত থাকে।

প্রয়োজন অনুসারে, কলাম-বীম এর প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে, প্রয়োজনীয় স্প্যান অনুসারে সেটি দালানের সৌন্দর্য ও দরকার অনুসারে নির্ধারিত হবে। সাধারণত নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে নির্দিষ্ট মাপের কলাম দেওয়া হয়, যার মাপ ম্যাটেরিয়ালের উপর নির্ভর করে। এই দূরত্বের সাথে হিসাব অনুসারে সুনির্দিষ্ট চওড়ার বীম স্ল্যাবের সাথে সাথেই বানাতে হয় নির্মাণের সময়।

শিয়ার ওয়াল কী এবং কীভাবে কাজ করে?

সাধারণত অ্যাপার্টমেন্ট বাসার লিফট কোর এবং সিঁড়ির স্ট্রাকচারাল প্রয়োজনে শিয়ার ওয়াল ব্যবহৃত হয়। শিয়ার ওয়াল কার্যকরভাবে একটি একক বড় কলাম হিসেবে কাজ করে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে।

সাধারণত শিয়ার ওয়াল পাশ থেকে আসা ধাক্কা (ভূমিকম্পের সময়ের কম্পন, জোর বাতাসের ধাক্কা) ঠেকিয়ে দালানের স্ট্রাকচারাল সুরক্ষা প্রদান করে। এই পার্শ্বিক ধাক্কার চাপ সামাল দিয়ে সেটি জমির ভিতের মধ্য দিয়ে ভূমিতে পাঠিয়ে দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে শিয়ার ওয়াল। কলামের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের ওজন পরিবহনের ক্ষমতা বেশি হয়।

সাধারণত সাধারণ দেয়ালের চেয়ে শিয়ার ওয়ালের প্রস্থ বেশি হয়, কারণ, সাধারণ দেয়াল লোড ট্রান্সফারের কোনো কাজ করে না। শিয়ার ওয়াল সাধারণত রিইনফোর্সড কংক্রিটের তৈরি হয়, ক্ষেত্রবিশেষে স্টিলের হয়। শিয়ার ওয়াল যেহেতু মোটা হয়, তাই এর নির্মাণ খরচও বেশি। সাধারণত একটি শিয়ার ওয়াল ১৫০-৪০০ মিলিমিটার প্রস্থের হয়ে থাকে।

কোথায় ব্যবহার করবেন?

কলাম সাধারণত দালানের চার কোণায় এবং এরপর ভিতরে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে পরে উপরে এবং নিচের কলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বানানো হয়, যাতে ভর/ওজন সম্পূর্ণভাবে মাটিতে নিতে পারে। লোহার কলাম নিলে দূরত্ব বেশি রাখা যায় কংক্রিট বা ইটের কলামের চেয়ে। আপনার দালান যদি ১-৩ তলা হয় তাহলে আপনি কলাম দিয়েই অনেক ক্ষেত্রে কন্টেক্সট ভেদে বাসা বানানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু এর উপরে গেলে বাসার স্থাপনাগত শক্তির জন্য শুধু কলাম দিয়েই নির্মাণ সম্ভব না।

বাতাসের ধাক্কা কিংবা ভূমিকম্পের সময়ের ধাক্কা প্রতিহত করে দালানের সুরক্ষার জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা লাগতে পারে। সিঁড়ি, লিফটের কোর কিংবা কলামের মতো নকশা অনুযায়ী দালানের যেকোনো স্থানে লোড ট্রান্সফারের জন্য শিয়ার ওয়াল ব্যবহার করা যায়। এটি সাধারণ দেয়ালের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে আলাদা কলাম ছাড়াও সুন্দর নকশা করা সম্ভব।

এখন সাইটে ঢালাই দিয়ে এই কলাম বীম বা শিয়ার ওয়াল কাস্ট করা ছাড়াও প্রি-ফেব্রিকেটেড কারখানায় তৈরি করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেগুলো নকশা করা ছাঁচে বসিয়ে বানানো হয় এবং পরে সাইটে এনে বসিয়ে দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভবপর হয়।

সাইটে ঢালাই দেওয়ার সময় যে জিনিসটি খেয়াল রাখতেই হবে, তা হলো বালি, সুড়কি আর সিমেন্টের সঠিক অনুপাতের মিশ্রণ এবং রডের সঠিক মাপ ও পরিমাণ। নাহলে কলাম, বীম ও শিয়ার ওয়াল হবে দুর্বল, যা আপনার বাসাকেও করবে দুর্বল। আর এর ফলে সহজেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আঘাতে আপনার স্বপ্ন হতে পারে ধুলিসাৎ। কাস্টিং ঠিকমত না হলে ঘটতে পারে রানা প্লাজার মতো ট্র্যাজেডি। এজন্যই নকশা থেকে নির্মাণ- সবকিছুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপযুক্ত এক্সপার্টের সহায়তায় নির্মাণ করুন আপনার স্বপ্নের বাড়ি।