কীভাবে বাড়ি হবে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব?

ঢাকা শহরে নতুন যারাই বাসা তৈরি করছেন বা ফ্ল্যাট বুঝে নিচ্ছেন, তারা অনেকেই অবগত যে তিতাস ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নতুন গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছেন না। আর অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নতুন গ্যাসের সংযোগ দেবার তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই।

দ্রুত শেষ হয়ে আসছে বাংলাদেশের গ্যাস মজুদ। সরকারকে বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পারমাণবিক ও কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলে সেটা আপাতত সামাল দেয়া গেলেও ভবিষ্যতে আরও বাড়বে শক্তির চাহিদা। কিন্তু পৃথিবীর জ্বালানি সম্পদ সীমিত। এছাড়া ফসিল ফুয়েলের অত্যধিক ব্যবহার আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে অপূরণীয় পরিবেশগত ক্ষতির মধ্যে ফেলছে প্রতিনিয়তই।

এক্ষেত্রে সব দায়-দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। বরং নাগরিক ও বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবেও নিজেদের স্বার্থেই আমাদের উচিৎ জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বাড়ি তৈরি করা। আসুন একনজরে দেখে নিই একটি জ্বালানি ও পরিবেশ বান্ধব বাড়ি নির্মাণে আলাদা করে কী কী বিষয় চিন্তা করা যেতে পারে।

নির্মাণ উপকরণ

বাড়ি নির্মাণের সময় উপকরণ বাছাই করতে আমদের মাথায় রাখতে হবে বাড়িটি কোথায় তৈরি হচ্ছে, তার আশেপাশের বাড়ির সাথে সম্পর্ক এবং সংযোগের বিষয়গুলো। উপকরণও তাই এসব মেনেই বাছাই করা উচিৎ। ইট ও কংক্রিট দুটোই পরিবেশের জন্য এক ধরনের হুমকি। তাই শহরে অন্য কোনো উপায় না থাকলেও উপশহর বা গ্রামে বাড়ি করার সময় এর বিকল্প ভেবে দেখা উচিৎ।

গ্রামে পাকা ও টাইলস ঢাকা বাড়ি করাটা গত ১০ বছর ধরে তুমুল জনপ্রিয়। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক উপাদানের চাহিদা বাড়িয়ে রাখছে। এছাড়া জানালা বা দরজায় কাঁচ ব্যবহার করে এয়ার কন্ডিশনের ওপরে নির্ভরতা বাড়ানোও বর্জন করা উচিৎ। বাসা নির্মাণের আগে স্থপতির সাথে কথা বলুন উপকরণ নিয়ে। বাজেটের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন উপকরণ বাছাইয়ে একজন প্রশিক্ষিত স্থপতি আপনাকে সহায়তা করবেন।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

ঘরে আরামদায়ক তাপমাত্রা ধরে রাখা বসবাসের অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রকৃতপক্ষে সারাবিশ্বেই এজন্য প্রচুর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানি খরচ হয়। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ হওয়ায় মূলত গরমের সময় তাপমাত্রা কমিয়ে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। এজন্য অনেকেই এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করেন। তবে প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশনের উপর নির্ভরশীল করে বাসা ডিজাইন করা হলে এর চাহিদা কমে আসতে পারে অনেকাংশে।

মনে রাখুন, আপনার আরামদায়ক বসবাসের জন্য ক্রমাগত ১৯-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দরকারি নয়। ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেই আপনি আরামে থাকতে পারেন। এজন্য সুইং করে খুলতে পারা দরজা ও জানালা ব্যবহার করুন। কাঁচের যেকোনো কিছুই প্রচুর তাপ ধরে রাখে। এছাড়া ঘরের ইন্টেরিয়র করার সময় ও প্রাথমিক দেয়ালের উপরে প্রচুর প্লাইউড ব্যবহার করবেন না। এটিও জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেয় প্রচুর পরিমাণে।

বিকল্প শক্তির যোগান

সৌরশক্তি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সৌরশক্তির সাথে সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি দামী হলেও তার পরবর্তী উৎপাদনে খরচ অনেক কম। এছাড়া সৌরশক্তি কোনো দূষণ তৈরি করে না এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই বাসা তৈরিতে সরকারি নির্দেশনা থাকুক বা না থাকুক, লাগিয়ে নিন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সোলার প্যানেল, এতে করে সরকারি গ্রিডের উপরে বাসার নির্ভরশীলতা কমবে এবং কিছু বিদ্যুৎ আপনি বাসায় নিজেই তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এছাড়া নতুন আসা Algae Facade বা Responsive OPV প্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী হলে সেগুলোও বাসায় লাগানোর কথা চিন্তা করতে পারেন। তবে পেট্রোল-বেজড জেনারেটর বা সীসা-নির্ভর বিদ্যুৎ চার্জ দেয়া ব্যাটারি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। এগুলো প্রচুর দূষণ ঘটায়। 

প্রযুক্তির ব্যবহার

আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে আমাদের জীবন প্রতিদিনই সহজ হচ্ছে। এখন প্রায় সব নতুন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসেই রয়েছে বিশেষ সেন্সর। যেমন- নতুন কিছু এসিতে ঘর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তা সাথে সাথে বন্ধ করে দেয়া ও প্রয়োজনে আবার চালু করার প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন, রান্নার চুলা এমনকি পানির মোটর ও কলেও অপচয় রোধ করতে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে সব জায়গায়। এছাড়া বর্তমানে গোসলের পানি টয়লেটের ফ্লাশে পুনরায় ব্যবহার করার ব্যাপারটিও হয়ে উঠছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করুন নির্মাণের সময় থেকেই। এতে আপনার জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে থাকবে মাসিক বিলও। 

সঞ্চয় করুন প্রাকৃতিক উপাদান

ছাদে বাগান করা ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখাও আপনার জ্বালানি সঞ্চয়ে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাগান করা যেমন আপনাকে সাহায্য করবে ওপরের দিকের তলাগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে, তেমনি ছাদে বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা আপনার মোটরের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে বহুলাংশে। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাতের হিসেবে দেখা যায়, আপনার পাঁচ কাঠার প্লটের উপর নির্মিত বাড়ির ছাদে সংগৃহীত পানি সঞ্চয় করা হলে ৬ তলা বাসার সকল সদস্যের ২০-২২ দিনের ব্যবহৃত পানি শুধু ছাদ থেকেই পাওয়া সম্ভব। 

সচেতনতা

সকল প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করলেও সচেতনতাই আসলে একটি পরিবেশ বান্ধব বাড়ির সবচেয়ে দরকারি উপাদান। রান্না শেষে চুলা বন্ধ রাখুন, রান্না বাদে অন্য কাজে গ্যাসের চুলা ব্যবহার করবেন না। কাপড় শুকাতে ব্যবহার করুন সুর্যের আলো। অদরকারে সকল ইলেকট্রনিক ও স্যানিটারি ফিক্সচার বন্ধ রাখুন। প্রয়োজন না হলে এসি ছাড়বেন না। ঘরে স্থপতির দেয়া জানালার প্রভিশন নষ্ট করবেন না। এতে করে আপনার প্রাথমিক প্রয়োজন মিটলেও ব্যাঘাত ঘটবে ভেন্টিলেশনের, যাতে করে আপনার এসির উপরে বাড়বে চাপ। 

মনে রাখবেন, ঘর বা বাড়ির নকশা ততটাই সুন্দর থাকবে, যতটা সুন্দর হবে তা ব্যবহার করার অভ্যাসগুলো। আপনার অভ্যাসই একটি বাড়িকে পরিবেশ বান্ধব ও আরামদায়ক করে তুলতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে, তাই নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি পরিবেশ বান্ধবতার চর্চা করলে অনাগত বছরগুলোতে এর সুফল পাবেন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রত্যেকে। 

ক্লে-ব্রিক ও গ্রিন কনস্ট্রাকশনের আদ্যোপান্ত

মানুষ সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মাটি ব্যবহার করে বাসা তৈরি করে থাকে। সভ্যতার ক্রমোন্নতির সাথে সাথে এবং মানুষের বাসা বাড়ি নির্মাণের সুবিধার জন্য মাটিকে রূপান্তর করে সেটাকে ব্যবহারযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে সহজে ব্যবহারযোগ্য উপকরণের সন্ধান পায় তারা। সেটা হলো ইট, যা আজকে নির্মাণের পরিভাষায় ক্লে-ব্রিক নামে সর্বাধিক পরিচিত।

ইটের মড্যুলারিটি, ব্যবহারের সুবিধা, কম খরচ, টেকসই ধরন এবং আকৃতি সব কিছু মিলিয়ে একে করে তুলেছে সর্বাধিক পরিচিত এবং ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী। টেকসই হবার প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন প্রথমে যে কথাটা মাথায় আসে তা হলো, গ্রিন বিল্ডিং। গ্রিন বিল্ডিং কী কী গুণাগুণের জন্য গ্রিন হয় তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমরা আজকে গ্রিন বিল্ডিং বানানোর একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট- গ্রিন কনস্ট্রাকশন নিয়েও আলোচনা করব।

ক্লে-ব্রিক কী? 

ক্লে-ব্রিক হলো একপ্রকারের ইট, যা মাটি কেটে কম্প্রেস করে সেটাকে ছাঁচে রেখে উপযুক্ত আকৃতি প্রদান করে তৈরি করা হয়। এটা মানুষের তৈরি করা অন্যতম প্রাচীন নির্মাণসামগ্রী। নির্মাণ ও ব্যবহারের সহজতা, সহজলভ্যতা, টেকসই প্রকৃতি, আবহাওয়া ও দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা ইত্যাদি গুণাগুণের জন্য এটি সর্বাধিক প্রচলিত ও পরিচিত একটি নির্মাণ সামগ্রী। দালানের ভেতরে-বাইরে থেকে শুরু করে এমনকি রাস্তার পেভিং ম্যাটেরিয়ালেও ক্লে-ব্রিক ব্যবহার করা হয়। এর ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা একে আলাদা একটা পরিচিতি দিয়েছে।  

কীভাবে তৈরি হয়?

 ক্লে ব্রিক খুব সহজেই মাটি ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এরপরে মিশ্রণটিকে পছন্দসই মাপের ছাঁচে ঢেলে সেটাকে শক্ত করে আকৃতি প্রদান করতে হয়। এই মাটি যাতে আগাছা বা কংকরমুক্ত হয় সেদিকে খুব সচেতনভাবে খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে এই ইটের অর্গানিক কম্পোনেন্ট বাসা-বাড়ির ক্ষতি করবে। এই মিশ্রণ তৈরির জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি হতে হবে। সাধারণত মিহি দানার টপসয়েল ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। একে ছাঁচে ঢেলে আকৃতি প্রদান করে এরপরে সেটাকে সাধারণভাবে রোদে শুকাতে হয়। আজকাল ইন্ডাস্ট্রিতে রোদে শুকানো হয় না, আগে চুল্লিতে উত্তপ্ত করে সেটাকে শুকিয়ে এর পরে সেটা রোদে রাখা হয়। চুল্লীতে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে অতি দ্রুত পোড়ানো না হয়। সেক্ষেত্রে যেই সমস্যাটা হয় তা হলো, দ্রুত সংকোচন ঘটে। ফলে তা ফেটে যেতে পারে। এই জন্য কারখানায় চুল্লী পরিমিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে।

 

 ক্লে-ব্রিকের সুবিধা 

  – সাশ্রয়ী 

 – সহজে উৎপাদনযোগ্য

 – দীর্ঘস্থায়ী

 – নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক ব্যবহার

 – মডুলার নির্মাণ সামগ্রী, তাই অধিকাংশ স্ট্রাকচারের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যায়

 – বিভিন্ন আকৃতিতে তৈরি করা যায়

 – বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন- দালানের অভ্যন্তরের দেয়াল, বাইরের দেয়াল, পেভমেন্ট, জলাশয়ের ঘাট ইত্যাদি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়। 

অসুবিধা

 – জলীয়বাষ্প বাতাস থেকে শোষন করে নেয় ফলে সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে যায়

 – ভঙ্গুর

 – মাটি ও পানির সাথে অর্গানিক উপকরণ জমে স্ট্রাকচার দুর্বল করে দিতে পারে

 – সঠিক ব্যবহার না জানলে ভুল প্রয়োগবিধির জন্য ক্ষতি হতে পারে দালানের

 এবার আসুন আমরা গ্রিন কনস্ট্রাকশন সম্পর্কে জেনে নিই।

 

গ্রিন কনস্ট্রাকশন কী?

 একটি দালানের জীবদ্দশার সম্পূর্ণ সময়কাল ধরে রিসোর্স এফিসিয়েন্ট, এনার্জি এফিসিয়েন্ট এবং পরিবেশ-বান্ধব কিনা তার ভিত্তিতে দালানটিকে গ্রিন বিল্ডিং হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। প্ল্যানিং পর্যায় থেকে শুরু করে নির্মাণ, অপারেশন, মেইন্টেনেন্স এবং সবশেষে ডেমোলিশন পর্যন্ত যদি একটি দালান রিসোর্স এফিসিয়েন্ট, পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই হয় তাহলেই তাকে আমরা গ্রিন বিল্ডিং বলে আখ্যায়িত করে থাকি। এই জন্য নির্মাণ পর্যায়ে যাতে একেবারেই কম কার্বন নিঃসরণ হয় এবং সর্বনিম্ন ওয়েস্ট ম্যাটেরিয়াল বের হয় সেজন্য গ্রিন কনস্ট্রাকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 এর জন্য প্রয়োজন-

 – স্মার্ট, আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার, যাতে সময় ও লোকবলে সাশ্রয় হয়

 – গ্রিন তথা পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা

 – কনস্ট্রাকশন সিস্টেমকে প্ল্যানিং এর আওতায় আনা

 – অপ্রয়োজনীয় কোন ভাংচুর না করা যাতে ম্যাটেরিয়াল পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব হয়

 – যথাসম্ভব ম্যাটেরিয়াল পুনরায় ব্যবহার করা

 – পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডে অপচয় না করা

 – দালানের ভেতর পর্যাপ্ত আলো বাতাস সুনিশ্চিত করা যাতে করে এনার্জি সাশ্রয় হয়

 – কনস্ট্রাকশন ওয়েস্ট যথাযথভাবে ডিসপোজ করা

 – কনস্ট্রাকশন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা

 – কনস্ট্রাকশন সাইটের আশেপাশের লোকালয়ে মানুষের যাতে সমস্যা না হয় সেটির প্রতি যত্নশীল হওয়া 

 – নন-টক্সিক, নন-ভোলাটাইল অর্গানিক ও লোকাল ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা

 – ইন্টারন্যাশনাল কোড, LEED-এর নিয়মকানুন মেনে সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা উপযুক্ত এক্সপার্টের সহায়তায়

 – বিল্ডিং যাতে সহজে মেইন্টেনেন্স এর যোগ্য হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা

 – দালানের নির্মাণ যাতে এনার্জি এফিসিয়েন্ট হয় সেজন্য সোলার প্যানেল, ফ্লো কন্ট্রোলিং ট্যাপ ইত্যাদি আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা

গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি ও কনস্ট্রাকশন পদ্ধতি কেবল পরিবেশবান্ধব নয়, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বিশ্বের বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা এটি গ্রহণ করছে। এটি আধুনিক উন্নয়নের একটি প্রধান উদাহরণ যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের প্রয়োজনের সাথে আপস না করে বর্তমানের চাহিদা পূরণ করে। সেইসাথে এই পদ্ধতি বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে, যা পরে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আশীর্বাদ হিসাবে প্রমাণিত হবে, কারণ এটি শক্তি খরচ সীমাবদ্ধ করতে এবং টেকসই উন্নয়নের প্রচারে সহায়তা করে।

ভূমিক্ষয় কেন হয়? জানুন রোধের উপায়

আমাদের বাসার জন্য জমি ঠিকমতো তৈরি করে এরপরেই আমরা বাড়ি নির্মাণ শুরু করি। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে টপসয়েল এবং মাটির ক্ষয় হয়। যা আমাদের স্থাপনাকে করে তোলে দুর্বল এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠে বিপদসঙ্কুল। এজন্য আমাদের বাসাবাড়ির আশেপাশের জমি ক্ষয় রোধ করা খুবই জরুরি।

জমির ক্ষয় রোধ করতে না পারলে ফাউন্ডেশন দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে দেয়ালও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তাই নিরাপদ আবাসস্থানের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই জমির ক্ষয় রোধ করতে হবে। আসুন আমরা জেনে নিই জমি কী কী কারণে ক্ষয় হয়, কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর কী কী উপায়ে আমরা ভূমিক্ষয় রোধ করতে পারি।

ভূমিক্ষয় কেন হয়?

সাধারণত বাড়ি নির্মাণের আগে জমির উপযুক্ত পরিচর্যা করে নিয়ে এর পরে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রাকৃতিক কারণেই মূলত জমির ক্ষয় হয়। যেসব এলাকায় বৃষ্টির প্রবণতা বেশি, সেসব এলাকায় জমিতে ভূমিক্ষয়ও বেশি, যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না করা হয়। বৃষ্টির ফোঁটা ক্রমাগত পড়ায় টপসয়েলের উপাদান হাল্কা হয়ে পানির স্রোতে ভেসে যায়। ফলে ভূমিক্ষয় দেখা যায়।

এছাড়া বাতাসের প্রভাবে মাটির উপরের স্তর হাওয়ায় ভেসে সরে যায়। এতে করে মাটির আদি আকৃতি নষ্ট হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়। ক্রমাগতভাবে পানি মাটিতে পড়লেও ভূমিতে আস্তে আস্তে ক্ষতি হতে থাকে। উপরের স্তরের মাটি সরে যেতে থাকে। এই সরে যাওয়ার ফলে মাটির গঠনগত প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে ভূমিক্ষয় হয়।

নদীভাঙন ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীর পাড়ের ক্ষয় হয়, পাড় ভাঙে। এর সাথে সাথে পাড়ে অবস্থিত মাটি নদীগর্ভে ক্ষয় হয়ে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও টেকসই পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার না করা, আগুন ইত্যাদি বহুবিধ কারণেও ভূমির টপসয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ভূমিক্ষয় হয়।

কী কী হয় ভূমিক্ষয়ে

টপসয়েল হ্রাস

এটি মাটি ক্ষয়ের বৃহত্তম প্রভাব। কারণ টপসয়েল উর্বর, যদি এটি সরিয়ে ফেলা হয়, এটি উদ্ভিদের ক্ষতি করে বা জমির কার্যকারিতায় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে করে জমির ল্যান্ডস্কেপিং করা দুরূহ হয়ে যায়।

মাটির সংক্ষেপণ

টপসয়েলের নিচে মাটি সংক্রমিত এবং শক্ত হয়ে যায়, এটি পানির গভীরতর স্তরগুলোতে অনুপ্রবেশের ক্ষমতা হ্রাস করে, যা আরও মারাত্মক ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।

জৈব এবং উর্বর পদার্থ হ্রাস

জৈব পদার্থের সাথে ভারী টপসয়েল অপসারণের ফলে জমির নতুন উদ্ভিদ বা ফসলের নতুন করে জন্মানোর ক্ষমতা হ্রাস পাবে। যখন নতুন ফসল বা উদ্ভিদগুলো এলাকায় সফলভাবে স্থাপন করা যায় না, এটি জৈব পুষ্টির হ্রাস স্তরের চক্রকে স্থায়ী করে।

দুর্বল নিষ্কাশন

কখনো কখনো বালির সাথে অত্যধিক সংকোচন কার্যকর আলাদা ভূমির ক্রাস্ট তৈরি করে একটি কার্যকর ভূত্বক তৈরি করতে পারে, যেটি গভীর স্তরে পানি প্রবেশ করতে আরও কঠিন করে তোলে।

কিছু উপায়ে, ঘন কাদাযুক্ত মাটির কারণে এটি ক্ষয়কে সহায়তা করতে পারে, তবে এটি যদি বৃষ্টির পানি বা বন্যার ফলে বৃহত্তর স্তরের পানিবায়ু স্থায়ী হয়, তবে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ভূপৃষ্ঠের পানির উপর। ফলে পানি জমে থেকে যায়।

উদ্ভিদের পুনরুৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা

যখন একটি সক্রিয় ফসলি জমিতে মাটি ক্ষয় হয়, বিশেষত বাতাস হালকা মাটির বৈশিষ্ট্য, যেমন- নতুন বীজ এবং চারাগুলো কবর দেওয়া বা ধ্বংস করা হয়। এটি ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।

মাটির অম্লতার মাত্রা

যখন মাটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায়, তখন মাটির অম্লতা বৃদ্ধির উচ্চতর সম্ভাবনা থাকে, যা উদ্ভিদ এবং ফসলের বৃদ্ধির ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে।

দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়

দুর্ভাগ্যক্রমে, যদি কোনো অঞ্চল ক্ষয়প্রবণ হয় বা এর ক্ষয়ের ইতিহাস থাকে তবে ভবিষ্যতে একে সংরক্ষণ করা আরও শক্ত হয়ে যায়। এমন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের মাটির কাঠামো এবং জৈব পদার্থকে হ্রাস করেছে, যার অর্থ এটি দীর্ঘকালীন মেয়াদে পুনরুদ্ধার করা আরও কঠিন হবে।

পানি দূষণ

মাটি থেকে ক্ষয়ের একটি বড় সমস্যা, যেটি বিশেষত কৃষি প্রক্রিয়াগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো সার বা কীটনাশক ব্যবহারের মতো পলল এবং দূষণের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এটি মাছ এবং পানির গুণমানের উপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে।

কীভাবে রোধ করা যায়?

গাটার এবং ডাউনস্প্রাউট

বৃষ্টি পড়ার সময় আপনার ছাদের কার্নিশে জমা বৃষ্টির পানি যেদিকে প্রবাহিত করা দরকার সেদিকে এমনভাবে গাটার ও ডাউনস্প্রাউটগুলো সেট করতে হবে যাতে তারা বেলে বা কমপ্যাক্ট মাটিতে নির্মিত বাড়িগুলোর জন্য ঘর থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে প্রসারিত মাটিতে পানি ফেলে দেয়। নর্দমাগুলো যাতে ঘরের দীর্ঘ প্রান্তে চলে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ

বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারদিকে ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে ল্যান্ডস্কেপিং বা সজ্জাসংক্রান্ত ব্যবস্থা, যা দুটি উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে। মাটি যেখানে চান সেখানে রাখার জন্য ঘাস বা অন্য কোনো নিচু স্থান থেকে জমিটিতে কভার লাগান।

অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ কাঠ, কংক্রিট পেভারস, লাইনারস, শিলা বা নুড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও গাছের ছাল ফাউন্ডেশনের বিপরীতে ভালো দেখায়, তবে বৃষ্টিপাতের জায়গায় জায়গায় থাকার পক্ষে এটি উপযোগী নয়।

ফ্রেঞ্চ ড্রেন

বাড়ির ফাউন্ডেশনের চারপাশে একটি ফ্রেঞ্চ ড্রেন সিস্টেম ইনস্টল করুন। যখন আপনার ফাউন্ডেশন মাটির পৃষ্ঠের নিচে কয়েক ফুট প্রসারিত হয়, একটি পরিখা খনন করে, নুড়ি দিয়ে রেখাযুক্ত করুন এবং ঘর থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটিতে পারফোরেশনসহ একটি বিশেষ ড্রেন রাখুন। নুড়ি দিয়ে একে ঢেকে রাখুন এবং তারপরে নুড়ি দিয়ে মাটি যুক্ত করুন। পানির প্রবাহটি ভিত্তি থেকে দূরে সরাতে একটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ডাউনস্লোপ রয়েছে, তা নিশ্চিত করুন।

গ্রেড মেরামত করুন

ফাউন্ডেশনের চারপাশে ঢালটি মেরামত করুন। ফাউন্ডেশনের ১০ ফুটের মধ্যে মাটি ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে ঢালু হওয়া উচিৎ।

আপনি যদি গ্রেডটি মেরামত করতে না পারেন, তবে খনন করুন এবং যদি সম্ভব হয় তবে ফাউন্ডেশনে একটি আর্দ্র বাধা যুক্ত করুন। অন্যথায়, বাড়ি থেকে দূরে পানি চ্যানেল করার জন্য একটি সামান্য ডাউনস্লোপ দিয়ে একটি সোয়েল তৈরি করুন। আপনি কংক্রিট বা শিলা দিয়ে সোয়েলটি লাইন করতে পারেন। তবে শিলাটি যথেষ্ট পরিমাণে ভারী হওয়া উচিৎ।

নিষ্কাশন নজরদারি করুন

ঝড়ের সময় নিষ্কাশন নজরদারি করুন। আপনার যদি ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে যা পানি প্রবাহিত করে পানি সরিয়ে ফেলে, তাহলে সেই ড্রেনগুলো পাতা এবং ময়লা মুক্ত রাখুন। আপনার ছাদে থাকা পানির ট্র্যাপ এবং ডাউনস্পাউট সিস্টেমের ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রযোজ্য।

বাড়িতে ফুরফুরে বাতাস: কেমন ভেন্টিলেশন দরকার?

আমরা যখনই আমাদের স্বপ্নের বাড়ির কথা কল্পনা করি, তখনই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে আলো-বাতাসযুক্ত পরিষ্কার ঝকঝকে বাসা। বাসায় আলো-বাতাসের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকলে বাসাবাড়ির পরিবেশ থাকে সুস্থ এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠে স্বাচ্ছন্দ্যময়। এই আলো-বাতাসের পরিমাণ নিশ্চিত করার নামই ভেন্টিলেশন।

আমাদের জানালা, দরজা, ঘুলঘুলি এসব কিছুই ব্যবহার করা হয় বাসার সঠিক ভেন্টিলেশনের জন্য। এছাড়াও এসব প্রাকৃতিক পদ্ধতি ছাড়াও অনেক কৃত্রিম পদ্ধতিতেও বদ্ধ জায়গায় বা ঘরে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। আসুন জেনে নিই ভেন্টিলেশন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় তথ্যগুলো।

ভেন্টিলেশন কী?

ভেন্টিলেশন হলো কোনো ঘরে বা অন্দর স্থানে বাতাসপ্রবাহ নিশ্চিত করা। আমাদের সারাদিন বাসায় থাকা এবং কাজ করার ফলে বাসার ভেতরে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ফলে বাতাস ভারী ও জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ হয়ে যায়। এই বাতাসের স্থানে অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিষ্কার বাতাস বাসার ভেতরে আনার প্রক্রিয়াকে বলে ভেন্টিলেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি দুই ঘণ্টায় একবার পুরো বাসার বাতাস পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন করে ফ্রেশ বাতাস আনতে হবে। এতে করে বাসায় দুর্গন্ধ কিংবা দূষিত পদার্থ ও রোগজীবাণু পুরাতন বাতাসের সাথে বের হয়ে যায়। এজন্য বাসায় উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের গুরুত্ব অপরিসীম।

ভেন্টিলেশনের প্রকারভেদ

আমাদের দেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বাতাস আসে, যা মূলত দক্ষিণ পশ্চিম থেকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অংশের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই ঘরে বাতাসের প্রাকৃতিক প্রবাহের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখা হয় অথবা জানালা দেওয়া হয়।

সাধারণত আমাদের বাসাবাড়িতে বাইরের বাতাস উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আনার জন্য তিন প্রকার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো মেকানিক্যাল, প্রাকৃতিক এবং মিক্সড পদ্ধতির ভেন্টিলেশন নামে পরিচিত। সাধারণত বাসাবাড়িতে আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিক্সড পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা হয়। আসুন দেখে নিই, এই ভেন্টিলেশন পদ্ধতির প্রকারভেদগুলো।

যান্ত্রিক বায়ুচলাচল হলো ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে বাইরের বায়ু প্রবাহিত করার পদ্ধতি। যান্ত্রিক বায়ুচলাচল সিস্টেমগুলোর মধ্যে সরবরাহের ফ্যান (যা বাইরের দিকে বাতাসকে কোনো বিল্ডিংয়ের দিকে ঠেলে দেয়), নিষ্ক্রিয় ফ্যান (যা বিল্ডিংয়ের বাইরে বায়ু টেনে নেওয়া এবং এর ফলে কোনো বিল্ডিংয়ে সমান বায়ুচলাচল প্রবাহ ঘটায়) বা উভয়ের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যান্ত্রিক বায়ুচলাচল প্রায়শই এমন সরঞ্জাম দ্বারা সরবরাহ করা হয় যা কোনো স্থান গরম এবং শীতল করার জন্যও ব্যবহৃত হয়।

প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল হলো পরিকল্পিত ওপেনিং এর (যেমন লুভ্যর, দরজা এবং উইন্ডো) মাধ্যমে কোন বিল্ডিংয়ের মধ্যে বাইরের বাতাসের উদ্দেশ্যমূলক প্যাসিভ প্রবাহ। প্রাকৃতিক বায়ুচলাচলে বাইরের বায়ু সরানোর জন্য যান্ত্রিক সিস্টেমগুলোর প্রয়োজন হয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক ঘটনা যা বাতাসের চাপ বা স্ট্যাক এফেক্টের উপর নির্ভর করে।

মিক্সড-মোড বায়ুচলাচল সিস্টেমগুলো যান্ত্রিক এবং প্রাকৃতিক উভয় প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। যান্ত্রিক এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলো একই সময়ে বা দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বছরের বিভিন্ন ঋতুতে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল প্রবাহ যেহেতু পরিবেশের অবস্থার উপর নির্ভরশীল, তাই এটি সর্বদা উপযুক্ত পরিমাণে বায়ুচলাচল সরবরাহ করতে পারে না। এক্ষেত্রে, যান্ত্রিক সিস্টেমগুলো প্রাকৃতিকভাবে চালিত প্রবাহকে পরিপূরক বা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হতে পারে।

কেন পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন দরকার?

সঠিক বায়ুচলাচল আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং আরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার বাড়িকে আর্দ্রতা, ধোঁয়া, রান্নার গন্ধ এবং অন্দরের দূষণকারী পদার্থগুলো থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। স্ট্রাকচারাল বায়ুচলাচল অ্যাটিকের তাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ক্রলস্পেস এবং বেসমেন্টে স্যাঁতসেঁতে পরিমিত করে এবং ননইন্সুলেটেড দেয়ালকে আর্দ্রতা থেকে মুক্ত রাখে।

সঠিক বায়ুচলাচল হলে বায়ু দূষণকারী জীবাণুরা আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, আপনার বাড়িতে বায়ুপ্রবাহ থাকলে রান্না করা বা পোষা প্রাণী হিসাবে কোন অযাচিত গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

বায়ুচলাচল এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরো একটি কারণ হলো, এটি আপনার বাড়িতে আর্দ্রতা কতটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করে।

একটি ভালো বায়ুচলাচল ব্যবস্থা দূষণকারী পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া এবং আর্দ্রতা ঘরের ভেতর থেকে বের করতে সহায়তা করবে। কিন্তু আমাদের প্রায়ই দুর্বল বায়ুচলাচলের স্থানে থাকতে হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বাড়িতে এবং কর্মক্ষেত্রে ভালো বায়ুচলাচল ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এতসব গুরুত্বপূর্ণ কারণে আমাদের ঘরে সুস্থ আলো এবং সর্বোপরি বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমাদের বাড়ি হয়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের মতো আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর।

বাড়ির ড্রেনেজ পদ্ধতি: সবকিছু ভেবেছেন তো?

আমাদের বাসাবাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা নিশ্চিত করে এবং বর্জ্য পদার্থের যথাযথ ব্যবস্থা করে আমাদের জীবনকে সুন্দর, সহজ ও সাবলীল করে তোলে তা হলো বাসা-বাড়ির ড্রেনেজ সিস্টেম। এটি বাসার বাথরুম, রান্নাঘর থেকে আমাদের আবর্জনা, ময়লা রাষ্ট্রীয় ওয়েস্ট ডিস্পোজাল সিস্টেমের মাধ্যমে সরিয়ে দিয়ে আমাদের আশেপাশের স্থানকে করে তোলে পরিষ্কার ও আমাদেরকে রাখে ক্ষতিকারক প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে নিরাপদ।

এভাবে চিন্তা করলে আমাদের বাসাবাড়ির ড্রেনেজ সিস্টেম শুধু আমাদের বাড়িই না, সাথে সাথে বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ এবং সামগ্রিকভাবে দেশের পরিবেশ ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেকোনো একটি ছোট স্থানের যেকোনো সমস্যা আমাদের সামগ্রিক ড্রেনেজ সিস্টেমের সমস্যা হিসেবেই পরিগণিত হয়।

এজন্য বাসার নকশার সময় আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেম খুব ভালোভাবে নকশা করতে হবে। আসুন জেনে নিই ড্রেনেজ সিস্টেম কীভাবে নকশা করতে হবে, কী কী জিনিস আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এবং আমাদের জীবনে কীভাবে এ থেকে সুফল পাব।

কী কী খেয়াল রাখতে হবে?

কোন বাসার ড্রেনেজ সিস্টেম বলতে এর প্লাম্বিং এবং এর সাথে জড়িত পাইপের লেআউটকে বোঝায়। বাসা নকশা করার সময় এই প্লাম্বিং ডিজাইন করাটা অনেক জরুরি। প্লাম্বিং লেআউট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় মাপের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক কিংবা পাইপের ব্যাসার্ধ এসব কিছু প্রয়োজনমাফিকভাবে নির্ধারণ করা এবং সঠিকভাবে দালানে বা বাসায় ইনস্টল করা খুব জরুরি। নাহলে বাসায় বসবাস করা রীতিমতো দুর্বিষহ থেকে অসম্ভব হয়ে পড়বে। আসুন জেনে নিই আমাদের শুরুতেই কী কী জেনে নিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে।

“কী পরিমাণ বর্জ্য নিঃসরণ হতে পারে” সে বিষয়টি ভবনে কত জন থাকবে এবং সরকারি নিয়ম ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর টেকনিক্যাল জ্ঞান প্রয়োগ করে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে দালানের নকশা করার আগেই নির্ধারণ করে নিতে হবে।

দালানের নকশার সময় পাইপ দালানের গা বেয়ে নেমে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে কিনা তা নকশা অনুমোদনের সময়ই খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে দালানের গা বেয়ে এক্সপোসডভাবে পাইপ নামবে, যা দালানের সৌন্দর্য নষ্ট করবে এবং দালানের প্লাম্বিং ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলবে।

বাথরুম ও রান্নাঘরের পাইপের মাপ এক রকম হয় না, কারণ এদের কাজও ভিন্নরকম। তাই পাইপের মাপ, ব্যাসার্ধ ইত্যাদি সঠিকভাবে পরিমাপ করতে হবে। এবং নিয়মমতো ইনস্টল করতে হবে।

সবচেয়ে কম পরিমাণ পাইপ ব্যবহার করা দালান সবসময়ই ভবন ব্যবস্থাপনার জন্য সুবিধাজনক। কারণ এতে করে পাইপে ক্লগ কম হবে, সাস্পেন্ডেড বা ফলস সিলিংয়ের পিছনে খরচ কম হবে। তাই ডাক্টিং খুব খেয়াল করে দিতে হবে যাতে একটি সহজ সরলরৈখিক পথে সেটা নামানো সম্ভব হয়।

প্লাম্বিং-এর পাইপের মান ভালো দিতে হবে যাতে তা থেকে লিক না হয় এবং ফেটে না যায়। এরপরে যাতে ভালোভাবে পাইপের দেখভাল করা যায় সেজন্য উপযুক্ত জায়গা দিতে হবে। এছাড়া বাসা-বাড়ির ভিতরে যাতে লিক না হয় সেজন্য ড্যাম্প-প্রুফিং করতে হবে।

নিয়মকানুন

প্রতিটি আবাসনের ইউনিটে থাকতে হবে কমপক্ষে একটি ওয়াটার ক্লজেট এবং একটি রান্নাঘর সিঙ্ক বা ওয়াশিং সুবিধা। কমপক্ষে একটি বাথরুম রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে স্যানিটেশন এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সেক্ষেত্রে, স্নানের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে বাথটাব বা ঝরনার পৃথকভাবে ব্যবস্থা করা হবে।

বিভিন্ন ভবনের ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন সিস্টেম ডিজাইনের উদ্দেশ্য হলো দুর্গন্ধ দূরীকরণ, সলিড ওয়েস্ট জমা এবং জমাট বাঁধানো, পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং পরিদর্শন চেম্বারগুলো এমনভাবে সাজানো যাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই ড্রেনগুলো সহজে পরিষ্কার করা যায়।

প্লাম্বিং সিস্টেমটিতে ন্যূনতম পরিমাণে পানি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন এবং সমন্বয় করা হবে, যাতে এর সঠিক কর্মক্ষমতা এবং সহজেই পরিষ্কারের ক্ষমতা সুনিশ্চিত হয়। প্লাম্বিং সিস্টেম, ডিভাইস এবং সংযুক্তিগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানির সরবরাহ করা হবে এগুলোকে যথাযথভাবে কাজ করতে সক্ষম করার জন্য। পর্যাপ্ত চাপ এবং সাধারণ অবস্থার অধীনে অযৌক্তিক গোলমাল ছাড়াই যাতে ব্যবহার করা যায় সেভাবে এগুলোর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যখনই সম্ভব হবে, সমস্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পাব্লিক নর্দমা বা বেসরকারি বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ফেলে দেওয়া হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে।

দালানে প্লাম্বিং সিস্টেমের প্রকারভেদ

দালানে ড্রেনেজ সিস্টেম নকশা করার জন্য সাধারণত ৩ প্রকারের সিস্টেম ব্যবহার করার নিয়ম আছে। এখান থেকে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নকশা করতে হয়। সেগুলো হলো-

১. সিঙ্গেল স্ট্যাক সিস্টেম- সাধারণত ৫ তলা পর্যন্ত উঁচু দালানে ব্যবহার করা হয়।

২. একক পাইপ সিস্টেম- যেসব দালানে সবরকমের বর্জ্য পদার্থ একটিমাত্র পথে নিষ্কাশিত হয়, সেসব দালানে এই সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।

৩. ডাবল পাইপ সিস্টেম- যেসব বাসায় রান্নাঘর এবং বাথরুম থেকে স্লাজ আলাদাভাবে নিষ্কাশন করা হবে, যা মাটিতে সেপটিক ট্যাঙ্ক বা ইমহফ ট্যাঙ্কে বর্জ্য হিসেবে নিষ্কাশিত হবে, সেসব ক্ষেত্রে দুটি পাইপ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে।

এসব সিস্টেম উপযুক্ত এক্সপার্টের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে বা দালানের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় ব্যবহৃত পানি ও স্লাজের লোডের কারণে তা ব্যর্থ হবে। এছাড়াও পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত মাপের এবং স্পেসিফিকেশনসহ পাইপ ব্যবহার করতে হবে, যাতে পাইপ স্লাজ ও পানির আভিকর্ষজ চাপের কারণে ফেটে না পড়ে। এজন্য অভিজ্ঞ প্লাম্বার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শক্রমে আমাদেরকে আমাদের বাসার ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করতে হবে।

এতে করে আমাদের বাসার পরিবেশ যেমন ভালো থাকবে, ঠিক তেমনিভাবে সঠিক স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করার আমাদের বাসার সামনের ও আশেপাশের পরিবেশ ভালো ও পরিষ্কার থাকবে।