কীভাবে বাড়াবেন ঘরের স্টোরেজ স্পেস

আপনার বসবাসের ঘরখানি, কিংবা সম্পূর্ণ বাসাটিই কি কখনো বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে? শোবার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর- সবগুলোই যথেষ্ট বড় হওয়া সত্ত্বেও কি মনে হয়েছে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না? যদি মনে হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ভাবছেন অতিরিক্ত তৈজসপত্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরের স্থান সঙ্কুলানের ঝামেলা হয় উন্মুক্ত স্থানের সদ্ব্যবহার করতে না পারার কারণে। একটি ঘরের পুরোটা জুড়েই আসবাবপত্র থাকবে না, কিছু অংশ অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। অন্যথায় ঘরে ঢুকলেই দমবদ্ধ মনে হবে।

ঘরের আকৃতি নিয়ে হাপিত্যেশ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বড় আকারের ঘরও যথাযথ উপায়ে না সাজালে ঘিঞ্জি মনে হবে, আবার ছোট ছোট ঘরের ভেতরেও রেখে দেয়া যেতে পারে অনেক মালামাল, যদি সঠিক পরিকল্পনা করা যায়। কেমন হতে পারে সেই পরিকল্পনা? চলুন জানা যাক।

মাল্টিটাস্কিং আসবাবপত্র

ঘরের সীমিত স্থানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য সর্বদা এমনসব আসবাবপত্র ক্রয় করুন যা একাধিক কাজে লাগবে। নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধক কোনো আসবাবপত্র না হয়ে থাকলে তা যেন উদ্দিষ্ট কাজের সাথে কিছুটা বাড়তি স্টোরেজের জোগান দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

প্রথমেই বিছানা, যেহেতু এটি শোবার ঘরে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থান দখল করে রাখে। বিছানার নিচে ফাঁকা থাকা ভালো, এতে সেখানে অনেক কিছু রাখা যায়। তবে আদৌ যদি ফাঁকা না রাখতে চান, তাহলে এমন বিছানা ক্রয় করুন যার নিচে ড্রয়ার আছে। এতে অন্দরের সৌন্দর্যে ঘাটতি তো হবেই না, পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় এবং অনেকদিন পর পর প্রয়োজন হয় এমনসব বস্তু সেই ড্রয়ারে রেখে দিতে পারবেন।

ঘরে রাখা টেবিলে ড্রয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়, সাথে টেবিলের একপাশে শেলফ থাকলে আরো ভালো। প্রতিটি ঘরে একটি করে ছোট আকারের ক্লজেট রাখা যেতে পারে, যা কম আয়তনে অনেককিছু রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে। ক্লজেটের ভেতর এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই চলে যাবে, যেমন – পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টর্চ, খেলনা, কেচি, পারফিউম ইত্যাদি। এতে ঘর অনেক বেশি পরিপাটি হবে।

বাক্স ব্যবহার করুন

সবকিছুর জন্য ক্লজেট, আলমারি বা ওয়ারড্রোব, শেলফ ইত্যাদি কাজে আসবে না। প্রথমত, কিছু প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, যেগুলো নিত্য ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখান থেকে ড্রয়ার খুলে বের করতে হবে কিংবা প্রতিদিন ঠিকঠাকমতো সাজাতে হবে, যা বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়ও বটে।

দা-বটি, ছুরি, রান্নাঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র, বসার ঘরের রুম স্প্রে, তোয়ালে- বাসাবাড়িতে এরকম অসংখ্য বস্তু রয়েছে যা প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। নিত্যদিন শেলফ থেকে নামিয়ে আবার শেলফে সাজিয়ে রাখা কিংবা কিচেন ক্লজেট খোলা/বন্ধ করা কারোরই ভালো লাগার কথা না। বাক্সের ব্যবহার সব সমস্যার সহজ সমাধান।

ফ্রি স্ট্যান্ডিং কাঠের বা প্লাস্টিকের ধাপ করা বাক্স কিংবা দেয়ালে স্থাপনযোগ্য স্টিলের ঝুড়িসদৃশ বাক্স দেখতেও ভালো দেখায়, নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র রাখতেও সুবিধা হয়। সাজিয়ে রাখবার বালাই নেই বিধায় সময় বেঁচে যায় অনেক।

রান্নাঘরে বা বসার ঘরেই কেবল নয়, স্টোরেজ ঘরেও বাক্সের ব্যবহার জরুরি, অন্যথায় অল্প মালামাল রেখেই ঘর ভর্তি মনে হতে পারে। তাছাড়া বাক্সবন্দি করে মালামাল সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো খুঁজে পাওয়াও সহজ হয়। হালকা পিজবোর্ডের বা শক্ত কাগজের কার্টনবক্সগুলো এক্ষেত্রে উত্তম। প্রতিটি বাক্সে কাগজের লেবেল লাগিয়ে দিলে কোথায় কী রাখা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।

ডেড স্পেসএর সঠিক ব্যবহার

প্রতিটি ঘরেই এমন কিছু স্থান থাকবে যেগুলো আপাতত কোনো কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলে মনে হয়। এসব স্থানকে ডেড স্পেস (Dead Space) বলা হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে ডেড স্পেসের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব।

সবচেয়ে কমন ডেড স্পেস হলো জানালা। জানালার সামনে বড় কিছু রাখার উপায় নেই, রাখলে তা কুৎসিত দেখাবে বৈকি। তবে জানালার সামনের স্থানের সঠিক ব্যবহার ঘরের অন্যান্য স্থানের উপর চাপ কমায়। জানালার পাশে সোফা স্থাপন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বড় আকারের জানালা, যেগুলো মেঝের বেশ কাছাকাছি পর্যন্ত থাকে, সেগুলোর সামনে সোফা রাখা বেমানান। এক্ষেত্রে ছোট টেবিল বা শেলফ সেখানে রাখা যেতে পারে, যার ভেতরেও রাখা যাবে আরো অনেক কিছু।

একটি দেয়ালের শেষমাথা থেকে খানিক দূরে অপর দেয়ালে অর্ধেক বেরিয়ে থাকা পিলার থাকলে ঐ স্থানের ব্যবহারিক কোনো মূল্য থাকে না, যদি না আপনি সেখানে সরু আকারের একটি ক্লজেট বা টি টেবিল স্থাপন করেন। ঘরের দরজার একপাশে যদি কিছুটা স্থান অব্যবহৃত পড়ে থাকে, সেখানে স্থাপন করতে পারেন যথাযথ আকারের সুন্দর একটি বুকশেলফ।

প্রাইম রিয়েল এস্টেট (Prime Real Estate)

গৃহসজ্জার জন্য এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বস্তু তুলে রাখা বা তুলে আনার জন্য আদর্শ উচ্চতা হলো মেঝে থেকে শুরু করে কাঁধের খানিকটা উপরে পর্যন্ত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা একে প্রাইম রিয়েল এস্টেট নামে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ যে অংশ পর্যন্ত বিনা ক্লেশে আপনার হাত পৌঁছুবে। ঘরের শূন্যস্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে এই প্রাইম রিয়েল এস্টেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বড় আসবাবপত্রগুলো বাদে ঘরের যে দেয়ালগুলো উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে নান্দনিক ডিজাইনের কাঠের বা স্টিলের শেলফ, ক্লজেট স্থাপন করে ফেলুন।

ঘরকে আড়াআড়ি না দেখে উল্লম্বভাবে দেখুন

যেসব বস্তু একটির উপরে আরেকটি রাখা যায়, সেগুলো পাশাপাশি রেখে অতিরিক্ত জায়গা নষ্ট করা অর্থহীন। আড়াআড়ি সজ্জার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্লম্ব সজ্জার দিকে মনোযোগ দিন। একটির উপর আরেকটি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ওজন এবং নমনীয়তা বিবেচনা করুন। অধিক ওজন এবং কঠিন বস্তুগুলোকে নীচে রেখে উপরের দিকে নমনীয় ও হালকা বস্তুগুলো রাখতে হবে। যদি বাসায় বুকশেলফ না থাকে এবং বইগুলো দেয়ালের সাথে সারি করে রাখতে চান, তাহলে চেষ্টা করুন সারিগুলো উপরের দিকে লম্বা করে কম সংখ্যক সারি করার।

এসব তো ঘর সাজানোর কিছু কৌশল মাত্র। এসবের পাশাপাশি মাপমতো আসবাবপত্র কেনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর সবশেষে, অপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, অব্যবহৃত বা পুরনো কাপড়, খেলনা, জুতা ইত্যাদি জমিয়ে না রেখে ফেলে দিন, পুরাতন জিনিসপত্রের বাজারে বিক্রি করে দিন বা কাউকে দিয়ে দিন। এতে ঘরের জঞ্জাল কমবে অনেকটাই, ঘর হবে অধিকতর পরিপাটি, এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।

এই হাউজপ্ল্যান্টগুলো আপনার অন্দরসজ্জাকে ভিন্নমাত্রা দেবে

যারা কিছুটা প্রকৃতিপ্রেমী, নিজ বাড়িতে যাদের বাগান করার শখ, কিন্তু বাসার সামনে উঠোনের অভাবে তা হয়ে উঠছে না, তাদের জন্য ছাদবাগান আদর্শ। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে থাকলে বাড়িওয়ালার ছাদে আপনার শখের ছাদবাগানটি হবে কী করে?

শখ মেটাতে অনেকে বারান্দাকে আস্ত বাগানে রূপ দেন। তবে প্রকৃতিপ্রেমের সাথে যদি মনে থাকে সৌখিনতা, আর পরিপাটি গৃহসজ্জার আকাঙ্ক্ষা, তবে একটা ঘরে বাগান না বানিয়ে পুরো বাসাতেই প্রকৃতির সজীবতার নির্যাস দেয়া যেতে পারে। আর তার জন্য চাই চমৎকার কিছু হাউজপ্ল্যান্ট আইডিয়া।

একমনে ভাববেন যেখানটায় বসে

যদি অন্দরের সাজসজ্জা নিয়ে সচেতন হোন, তাহলে আপনার বাসায় একটি সুন্দর ইজিচেয়ার আছে নিশ্চয়ই। এই চেয়ারে হেলান দিয়ে নানা ভাবনায় হারিয়ে যেতে আপনার সঙ্গী হতে পারে সিলিং থেকে মেঝে অবধি ঝুলে যাওয়া কিছু ঝুলন্ত হাউজপ্ল্যান্ট। একাধিক ঝুলন্ত লতাগুল্ম দিয়ে ইজিচেয়ারটা বেষ্টন করে ফেলতে পারেন, এতে ইট-পাথরের দালানে একটুকরো নৈসর্গের অনুভূতি আসবে।

ডাইনিংয়ে কৃত্রিমতা নয়

ডাইনিং ঘরে অনেকেই কৃত্রিম প্লাস্টিকের ফুলদানি রেখে দেয়, কেউ ডাইনিং টেবিলের উপরেও রাখে কৃত্রিম ফুলের তোড়া কিংবা শোপিস। এসবের দারুণ প্রতিস্থাপক হলো একটি চমৎকার হাউজপ্ল্যান্ট। ডাইনিং ঘরের দেয়ালগুলোর মাঝামাঝি, কিংবা বসার স্থানকে বেষ্টন করে ছোট ছোট হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপন করলে খাওয়াদাওয়ার সময়ে গুমোট ভাবটা কেটে যাবে। ডাইনিং টেবিলের উপর ছোট একটি বনসাই নিয়ে আসতে পারে বিশেষত্ব।

আকার নিয়ে ভাবনা নয়

হাউজপ্লান্টের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করে আকারে ছোট ছোট উদ্ভিদই একমাত্র বিকল্প। কিন্তু আধুনিক গৃহসজ্জার ট্রেন্ড বলছে উল্টো। আকার বড় হলে কোনো ঝামেলা নেই, বরং সৌন্দর্যই বাড়বে বেশি। পাম, রাবার, বেহালা পাতা ডুমুরের মতো বড় আকারের বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদও আপনার ঘরে স্থান পেতে পারে। বিশেষ করে বসার ঘরে সোফার পাশে কিংবা ওপেন কিচেন ব্যবস্থায় এরকম বড় বড় উদ্ভিদগুলো বেশ মানানসই।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, শুরুতেই মাঝারি বা মোটামুটি বড় আকারের উদ্ভিদ নিয়ে আসলে পরে তার আকার নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হতে পারে। তাই শুরুতে ছোট আকারের গাছ আনুন, সেগুলোকে সময় নিয়ে পরিচর্যা করে বড় করুন, এবং নিজের পছন্দসই আকারে সীমাবদ্ধ রাখুন।

ওয়ার্কস্পেসে বিশেষ নজর আবশ্যক

ঘর সাজাবেন হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে আর নিজের ওয়ার্কস্পেসকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন না, তা হয় না। কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময়ে যখন ‘হোম-অফিস’ ব্যাপারটি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তখন প্রতিটি চাকরিজীবীর বাসায়ই অফিসের কাজ করবার জন্য থাকে নিজস্ব একটি ওয়ার্কস্টেশন।

যে স্থানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করতে হয়, যোগ দিতে হয় মিটিংয়ে, সে স্থানটা সবুজ হলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাঁপ ছাড়া যাবে কিছুটা, পাওয়া যাবে সজীব নিঃশ্বাস। তাই ওয়ার্কস্টেশনের হাউজপ্ল্যান্টগুলো হবে ছোট ছোট, ঝরঝরে, আর ভীষণ সবুজ। ড্রেসিনা (Dracaena) এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। উজ্জ্বল সবুজ চিরল চিরল পাতার এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দেখতে কৃষকের ক্ষেতে নবীন ধানগাছের মতো মনে হয়।

ড্রেসিনার মতো, তবে অতটা ঘন নয় এবং পাতাগুলো অধিক সরু, এ উদ্ভিদটি হলো স্পাইডার প্ল্যান্ট। এর পাতাগুলো চারধারে ছড়িয়ে পরে থাকে, লম্বা লম্বা সবুজ ঘাসের একটুকরো আবরণ মনে হয়। এ দুটোর পাশাপাশি সোনালি পথস লতা (Golden Pothos Vine) রেখে দিতে পারেন ওয়ার্কস্টেশনের মাঝামাঝি, কিংবা উপর থেকে ঝুলিয়েও দেয়া যায়।

শাওয়ার প্লান্টে নজর দিন

ঘরের সাজসজ্জায় যে হাউজপ্ল্যান্টগুলো ব্যবহার করছেন, গোসলখানায় সেগুলো মোটেই মানানসই হবে না। গোসলখানার জন্য আলাদা কিছু শাওয়ারপ্লান্টের ব্যবস্থা করুন, যদি গোসলখানায় বাথটাব থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। প্রথমেই নিয়ে নিন মথ অর্কিড (Moth Orchid) যা ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বৃদ্ধি পায়। এর বেগুনি রঙের ফুলের আছে চমৎকার সৌরভ। এর সাথে থাকুক ঘরের ভেতরে রাখা ড্রেসিনার শাওয়ার উপযোগী দুই প্রজাতি- লাকি ব্যাম্বো (Dracaena sanderiana) আর ড্রাগন ট্রি (Dracaena marginata)।

গোল্ডেন পথসেরও একটা পদ (Epipremnum aureum) ঝুলিয়ে দিতে পারেন উপর থেকে। যদি আদৌ এগুলোর পরও আরো বৈচিত্র্যের সন্ধান থাকে, তাহলে এনে ফেলতে পারেন পিস লিলি (Peace Lily) আর বোস্টন ফার্ন (Boston Fern)। এ দুটোর সমন্বয়ে গোসখানার বাথটাবখানি মনে হবে কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে স্নিগ্ধ সবুজ এক জলাধার।

শেলফ যেন বাদ না যায়

ঘরের সর্বত্রই হাউজপ্ল্যান্ট স্থাপনের দরকার নেই, এতে ঘর কম, জঙ্গল বেশি মনে হবে। কিন্তু ঘরের যেসব জায়গায় হাউজপ্ল্যান্ট না রাখলেই নয়, তার মাঝে একটি হলো শেলফগুলো। সেটা বুকশেলফ কিংবা শোপিস ও অন্যান্য দ্রব্যাদি রাখার শেলফও হতে পারে। শেলফটা হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজানোর মূল শর্ত হলো বড় এবং পর্যাপ্ত স্থান নিয়ে শেলফ তৈরি করা। প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো কিংবা বই রাখার ফাঁকে ফাঁকে যেন ছোট ছোট উদ্ভিদ রাখা যায়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে শেলফ তৈরির সময়েই, যদি আপনার হাউজপ্ল্যান্ট দিয়ে সাজাবার ইচ্ছা থাকে।

শেলফের জন্য কোনো সন্দেহ ছাড়াই ছোট আকারের লতা-গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বাছাই করুন, যেগুলো আকারে খুব বেশি বড় হবে না। শুরু করতে পারেন বার্ডস নেস্ট স্নেক প্ল্যান্ট (Birds Nest Snake Plant) দিয়ে। সাথে স্নেক প্লান্টেরই আরেক পদ সামুরাই স্নেক প্ল্যান্ট বেশ মানানসই হবে বুকশেলফের জন্য।

শোপিসের শেলফে একটা টিলানসিয়া (Tillandsia) রাখলে সেটাকেও আরেকটা শোপিসই মনে হবে। ফার্নের দু-তিনটি প্রজাতি, যেমন- মেইডেনহেয়ার (Maidenhair), লেমন বাটন (Lemon Button), বোস্টন (Boston) ইত্যাদি যেকোনো শেলফেরই শোভা বাড়াবে। শেলফে উদ্ভিদের ভিন্নতার পাশাপাশি রঙের ভিন্নতা আনতে সিলভার স্পার্কেল পিলিয়া (Silver Sparkle pilea) তো আছেই। এর হালকা সবুজ থেকে রূপালি সবুজ অন্যান্য সবকিছুর মাঝে নজর কাড়বে।

কীভাবে মার্বেলের দাগ দূর করবেন?

আদিকাল থেকেই গৃহনির্মাণে মার্বেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গৃহসজ্জায় চাকচিক্য, নান্দনিকতা, সর্বোপরি মসৃণ এক অনুভূতি দেয় মার্বেলের মেঝে, দেয়াল কিংবা অন্যান্য ব্যবহার। অবশ্য সৌন্দর্যের সাথে মার্বেল নিয়ে আসে বাড়তি দায়িত্বও। নিয়মিত যত্ন না নিলে মার্বেলের গায়ে তৈরি হয় অনেকরকম দাগ, যেগুলো মার্বেলের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।

কিন্তু নিয়ম করে পরিচর্যার পরও যদি দাগ পড়েই যায়, তাহলে কী করা যায়? ভাবনার কারণ নেই। কীরকম দাগ তার ওপর নির্ভর করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মার্বেলের দাগও দূর করা যায়। কীভাবে দাগ দূর করবেন, সেটি জানবার আগে চলুন দেখে আসি মার্বেলে কত রকমের দাগ হতে পারে।

মার্বেলে যত দাগ

তেলের দাগ – রান্নার তেল থেকে শুরু করে লোশন, দুধ, মাখন, প্রসাধনী তেল, গ্রিজ ইত্যাদি থেকে মার্বেলে তেল চিটচিটে ধূসর হলুদাভ দাগ হতে পারে।

জৈবিক কারণ – কফির কাপ, কাচের বাসনকোসন, বালতি, মগ ইত্যাদির কারণে এই দাগ হতে পারে যা ধূসর বা কালচে হয়।

পানির দাগ – নিয়মিত পানি পড়লে বা পানি জমে থাকলে, দ্রুত না মুছে ফেললে এই দাগ ধীরে ধীরে তৈরি হয়।

চিটি পড়া – এ ধরনের দাগ সবচেয়ে বেশি হয় গোসলখানায়, বিশেষ করে যে অংশে মার্বেল পুরো ভিজে না গেলেও পানির ফোঁটা পড়ে তার উপর।

মরচে পড়া দাগ – লোহা ও ইস্পাতের সামগ্রী থেকে মার্বেলে এই দাগ পড়ে।

এগুলো সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। তবে এগুলো ছাড়াও ঘর্ষণের দাগ, কালির দাগ, চা-কফির দাগ, রঙের দাগ ইত্যাদি উপায়ে মার্বেলে দাগ পড়তে পারে।

দাগ ওঠানোর উপায়

মার্বেল থেকে কঠিন কঠিন দাগ ওঠানোর জন্য পোল্টিস (Poultice) নামক একপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। পোল্টিস বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। এটি নানা প্রকার রাসায়নিক ও পরিষ্কারক দ্রব্যের সংমিশ্রণে তৈরি। কেওলিন ক্লে (Kaolin Clay- একপ্রকার কাদামাটি), ফুলার্স আর্থ (Fuller’s Earth – অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট সমৃদ্ধ একপ্রকার কাদামাটি), ট্যাল্ক, বেকিং সোডা, চকের গুঁড়া ইত্যাদি মিশ্রিত করে চাইলে বাসাতেই প্রস্তুত করা যাবে এই ক্লিনার।

তেল চিটচিটে দাগ

তেলজাতীয় দ্রব্য সাধারণত মার্বেলের ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলোতে প্রবেশ করে স্থায়ী কালচে দাগ তৈরি করে। এ দাগ দূর করার একটাই উপায়- ছিদ্রগুলোতে অবস্থান নেয়া এই তেল অপসারণ, যা সাধারণ ধোয়া-মোছায় সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রথম পদ্ধতি হলো অ্যামোনিয়া বা অ্যাসিটোন মিশ্রিত তরল ক্লিনার দিয়ে দাগ ওঠানোর চেষ্টা করা। এ পদ্ধতি কাজ না করলে পোল্টিস দিয়ে ভালো করে ঘসে ২৪ ঘণ্টা পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে দ্বিতীয় দিনের মতো পোল্টিস দিয়ে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হবে।

জৈবিক দাগ

চা, কফি, লেবুর রস ইত্যাদির জৈবিক দাগ তোলা বেশ সহজ। ১২% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাথে কয়েক ফোঁটা অ্যামোনিয়ার মিশ্রণে তৈরি লিকুইড ক্লিনার দিয়ে এ দাগ সহজেই তোলা যাবে। তবে কালো রঙের মার্বেল পাথরের ক্ষেত্রে এই মিশ্রণ ব্যবহারে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অধিক সময় এর ব্যবহারে কালো রঙের মার্বেলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে।

গোসলখানায় পানির দাগ

গোসলখানার দেয়ালে প্রতিনিয়ত পানির ছিটা কিংবা সাবান/ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানির ছিটা পড়ে, তাতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ তৈরি হয়। তবে এই দাগ দূর করাও বেশ সহজ। একটি মাঝারি আকারের বালতিতে (৬-৮ লিটার পানি) আধা কাপ অ্যামোনিয়া মিশিয়ে দেয়ালে ভালোভাবে ঘষলেই এ দাগ উঠে যাবে। একদিনে না উঠলে ২/৩ দিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যহত রাখতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, অধিক অ্যামোনিয়া মানেই অধিক পরিষ্কার নয়। বরং অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া ব্যবহার করলে দেয়ালের মার্বেলের রঙ ঝলসে যেতে পারে।

মরচে পড়ার দাগ

ধাতব বস্তু থেকে মরচে পড়ার যে দাগ তৈরি হয় মার্বেলে, তা তুলতে গিয়ে অনেকে মার্বেলের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে থাকেন তীক্ষ্ম বা ধারালো কোনো ধাতব বস্তু দিয়ে ঘষে। যদিও মরচে পড়া দাগ দূর করা দুরূহ ব্যাপার, তবে ধাতব বস্তুর ঘর্ষণ একেবারেই করা যাবে না।

প্রথমত, মোলায়েম ব্রাশ দিয়ে ভালো করে দাগ পড়া অংশগুলো ঘষতে হবে যেন মরচের অতিরিক্ত আবরণই কেবল উঠে যায়, নতুন কোনো দাগ সৃষ্টি না হয়। এরপর পোল্টিস প্রয়োগ করে ঘষতে হবে। টানা কয়েকদিন পোল্টিস প্রয়োগ করলেই কেবল মার্বেলের সূক্ষ্ম ছিদ্রের ভেতর প্রবেশ করা মরচে বের করে আনা সম্ভব হবে। এতেও না হলে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা পেশাদার কাউকে দিয়ে করানো উত্তম।

কালির দাগ

যেসব কালির দাগ পানিতে ধুয়ে দিলে যায় না, সেগুলোর জন্য পোল্টিসই যথেষ্ট। তবে অত্যধিক পরিমাণে কালি পড়লে কিংবা আঠালো এবং স্থায়ী কোনো কালচে দাগ তুলবার জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত অধিক শক্তিশালী লিকুইড ক্লিনার প্রয়োজন। তবে এই লিকুইড ক্লিনার নিজে ব্যবহার না করে পেশাদার কাউকে দিয়ে করানোই যুক্তিযুক্ত। কারণ সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে না পারলে এতে দু’রকম ঝামেলা হতে পারে– মার্বেলের চাকচিক্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, এবং হাতে চুলকানির সৃষ্টি হওয়া।

ধোঁয়া কিংবা আগুনে পোড়া দাগ

দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়ায় থাকলে কিংবা আগুনের সংস্পর্শে মার্বেলে গভীর কালো দাগ হতে পারে যা ওঠানোর জন্য বেশ কসরত করতে হবে। পোল্টিসের প্রলেপ দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর ভালো করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং সেটি শুকিয়ে এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এভাবে কয়েকবার করার পর মার্বেল প্রাথমিক রূপে ফিরে আসতে পারে।

দেয়ালে কী লাগাবেন- মিরর নাকি পেইন্টিং?

রুচিশীল মানুষের বাড়ি নির্মাণে যতখানি ভাবনা, বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন আর সাজসজ্জায়ও ঠিক ততখানিই। ঘরের দেয়াল যদি হয় আকর্ষণীয় পেইন্টিং কিংবা দর্শনীয় সব মিররের সমাহার, তা সৌন্দর্যই বাড়ায় না কেবল, দেয় মানসিক প্রশান্তিও। ঘরের দেয়ালসজ্জায় মিরর ব্যবহার করবেন নাকি পেইন্টিং- সেটা ঠিক করুন নানারূপ ঘরসজ্জার মিরর আর পেইন্টিংয়ের সাথে পরিচিত হয়েই।

হরেক রকম মিরর ভাবনা

ঝকঝকে গ্যালারি (Glimmering Gallery)– ঘরের দেয়াল সাজানোর একটি সহজ কিন্তু চমৎকার উপায় হলো নানা আকৃতির মিররের ব্যবহার। একই দেয়ালে পাশাপাশি ভিন্ন রঙ, আকার, আকৃতি আর ফ্রেমের মিরর স্থাপন করে দেয়ালকে দিতে পারেন নান্দনিকতার ছোঁয়া।

অফ সেন্টার মিরর (Off Center Mirror)- ঘরের যেকোনো দেয়ালে মিরর লাগানোর প্রচলিত নিয়ম হলো মাঝখান বরাবর স্থাপন করা। টেবিল, শো-কেস অন্য কোনো আসবাবপত্রের উপরে ঠিক মাঝ বরাবর মিরর স্থাপন করার রীতিতে ভুল নেই কোনো। তবে আজকাল মধ্যরেখা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মিরর সাঁটানো হচ্ছে দেয়ালে, যা দেখতে বরং অধিকতর সুন্দর।

মিররড অবজেক্ট (Mirrored Object)– সাধারণ বড় আকারের অর্ধবৃত্তাকার মিরর একটি আয়তাকার বা বার্গাকার মিররের তুলনায় দেয়ালের চেহারাই পাল্টে দেয়, প্রচলিত সজ্জার বাইরে গিয়ে নতুনত্ব আনে। অর্ধবৃত্তের ব্যাস বরাবর সমান দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তু (ওয়ালম্যাট) দেয়ালে টাঙালে সেটি মিররকেও পূর্ণতা পাইয়ে দেয়।

মিররড ডোর (Mirrored Door)– মিররড ডোরের প্রচলন আজকাল বেশ বেড়েছে, কেবল এর নান্দনিক কদরের জন্যই নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এখানে। সাতসকালে অফিসে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে যেতে হয় যাদের, প্রায়ই সময়ের কারণে নিজের সাজসজ্জার দিকে লক্ষ্য করা হয় না। পুরো দরজা জুড়ে একটি বড় আকারের মিরর থাকলে তাই ঘর থেকে বেরোনোর পূর্বে একনজর নিজেকে দেখে নিলে সহজেই পোশাকের বা অঙ্গসজ্জার ত্রুটি ঠিক করে ফেলা যায়।

হ্যাংয়িং উইন্ডো (Hanging Window)– মিররড ডোরের মতো মিররড উইন্ডোর কদরও বাড়ছে। ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো আর স্বচ্ছ কাচের সতেজকারক আবহের জন্য জানালায় মিররের ব্যবহারই এখন স্বাভাবিক। তবে মিররড উইন্ডোর মধ্যে সর্বশেষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উদ্ভাবন হলো হ্যাংয়িং উইন্ডো। দেয়ালে লাগানো গোলাকার মিরর দেখতে সাধারণত ভালোই লাগে। তবে সেটিকে নান্দনিক করে তোলে এই হ্যাংয়িং উইন্ডো। চিকন আর কালো ফ্রেমের গোলাকার একটি মিররকে মাঝামাঝি উচ্চতায় স্থায়ীভাবে না লাগিয়ে বরং ঝোলানো হয় কোনোকিছু থেকে। আর এই ঝুলে থাকা মিররটি যেন কাজ করে একটুকরো ঝুলন্ত জানালা হিসেবে।

ইনভিজিবল মিরর (Invisible Mirror)– ইনভিজিবল বা অদৃশ্য মিরর বলতে মূলত অত্যন্ত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল মিররের কথা বোঝা হয়েছে। ঘরে কোনো ফায়ারপ্লেস থাকলে, কিংবা অন্য কোনো মাঝারি উচ্চতার আসবাবের ওপরে, বিশেষ করে টেবিলের উপরে এই মিরর স্থাপন করা হয়। এটি এতটা স্বচ্ছ থাকে যে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে জানালা দিয়ে পাশের ঘরে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

পেইন্টিংয়ের রকমফের

ওম্বার ওয়াল (Ombre Wall)– ওম্বার ওয়াল পেইন্টিংয়ের মূল উপজীব্য হলো ঘরের সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক আবহ আনা। এই পেইন্টিংয়ে ঘরের দেয়ালকে মনে হতে পারে স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি, পশুর লোম, মসৃণ সবুজ ঘাসের মাঠ, নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো মেঘের দল, কিংবা সকালবেলা সূর্যাস্তের কাঁচা আলো। এই পেইন্টিংয়ের মূল উপকরণ  গ্রেডিয়েন্ট (Gradiant) রঙ, যার মাধ্যমে রঙের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাবল্য বাড়িয়ে কমিয়ে এসব ফুটিয়ে তোলা হয়।

পোলকা ডট ওয়াল (Polka Dot Wall)– হলিউড সিনেমা সুইসাইড স্কোয়াড দেখে থাকলে আপনার পোলকা ডটের সাথে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই। এ সিনেমায় রহস্যময় পোলকা ডট ম্যান তার শরীর থেকে নির্ধারিত সময় পরপর পোলকা ডট ছাড়ে যা দেখতে রঙিন ও চোখধাঁধানো। ঘরের দেয়ালেও সেই পোলকা ডটগুলো পেইন্টিং আকারে বসিয়ে দিতে পারেন। একটু নিগূঢ় ডিজাইনের জন্য ছোট আকৃতির ডট আঁকা যেতে পারে একই রঙের উপর। আবার আপনি যদি চান রঙের খেলা, তাহলে বড় বড় পোলকা ডট ভিন্ন ভিন্ন রঙে পেইন্ট করাই শ্রেয়।

জলরঙ (Water Color)– দেয়ালে জলরঙের ব্যবহার একসময় মানুষের ভাবনার বাইরে থাকলেও এখন তা বেশ প্রচলিত। বিশেষ করে শোবার ঘরে বিছানা বরাবর দেয়ালকে জলরঙে রাঙিয়ে ফেললে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়বে মন ভালো করে দেয়া এক দৃশ্য।

ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ (Vertical Stripe)– ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ বা উল্লম্ব ডোরা সাধারণত বসার ঘরের জন্য উপযোগী একটি পেইন্টিং ডিজাইন। উজ্জ্বল মনোক্রোম্যাটিক (Monochromatic) কোনো রঙের উপর হালকা, প্রশান্তিদায়ক কোনো রঙ ব্যবহার করে লম্বালম্বি স্ট্রাইপ এঁকে এই পেইন্টিং সম্পন্ন করা হয়। বসার ঘরের সাজসজ্জায় এটি ভিন্নতা আনে।

সলিড কালার ব্লক (Solid Colour Block)– একটি ঘরের দেয়ালের রঙ সাধারণত একই রঙে করা হয়। তার উপর নানা ডিজাইন করা হয়ে থাকে। অবশ্য আপনি যদি চান সলিড কালার রেখেই দেয়ালে নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘরের মাঝামাঝি, বিশেষ করে শোবার ঘর হলে বিছানা বরাবর, বিছানার আকার অনুযায়ী একটি সলিড কালার ব্লক পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন ঘরের দেয়ালে। এতে একই রঙের একঘেয়েমি কাটে, এবং এক রঙের মাঝে অন্য রঙের সলিড ব্লকের উপস্থিতি ঘরের অ্যাম্বিয়েন্ট বদলে দেয়।

রেইনবো স্ট্রাইপ (Rainbow Stripe)– একটি-দুটি রঙ বাছাই করতে পারছেন না? চাইলে ঘরের দেয়ালে নিয়ে আসতে পারেন রংধনুর সাতটি রঙই। রেইনবো স্ট্রাইপ নামে পরিচিত এই পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে ঘরের দেয়ালের পরতে পরতে রংধনুর সাতটি রঙ দিয়ে এঁকে ফেলতে পারেন। কেউ কেউ একে রংধনুর মতো অর্ধচন্দ্রাকার করে আঁকেন, অনেকে আবার সমান্তরালেই ডিজাইন করে ফেলেন। রুচি ও রঙের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে স্ট্রাইপগুলোর প্রস্থ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

মিরর কিংবা পেইন্টিং, দুটিই ঘরের দেয়ালের সজ্জায় সমান উপযোগী, যদি আপনি তা ঘরের আসবাবপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করতে পারেন। যেহেতু দুটো সম্পর্কেই জেনে গেলেন, কোনটি আপনার ঘরের জন্য যুতসই হবে সেই সিদ্ধান্ত এখন আপনিই নিতে পারবেন।

আসবাবপত্র ক্রয়ের আগে ভাবতে হবে যে বিষয়গুলো

কিংবদন্তি ব্রিটিশ কবি জন কিটস বলেছেন, “এক টুকরো সৌন্দর্য আমৃত্যু আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।” সেই সৌন্দর্য যেকোনো কিছুর মাঝেই খুঁজে নেয়া যেতে পারে, আপনার বসবাসের ঘরখানিও থাকবে সেই তালিকায়। যেসব জিনিস প্রতিদিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, ঘর সাজানো তার মাঝে একটি। অভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে অনেকে কিছুদিন পর পর ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থান অদলবদল করে থাকেন, তাতে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আসবাবপত্র বদলে ফেলা খুব নিয়মিত কোনো ব্যাপার নয়। আর তাই আসবাবপত্র কেনার সময় সবদিক বিবেচনায় রেখে কিনতে হবে, মাথায় রাখতে হবে তার আকার-আকৃতি। কেননা ঘরের আকারের চেয়ে বড় কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ছোট, দুটোই হবে দৃষ্টিকটু।

ঘরের পরিমাপ

ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ক্রয়ের পূর্বে প্রাথমিক কাজ হলো ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সবকিছুর সঠিক মাপ নিয়ে নেয়া। ঘর বর্গাকার নাকি আয়তাকার, সেটির উপরও নির্ভর করবে আসবাবপত্রের আকার। মেঝে থেকে জানালার উচ্চতা, জানালার অবস্থান, আকার এবং এর দু’পাশে অবশিষ্ট দেয়ালের মাপ, সবকিছুই টুকে ফেলতে হবে, যাতে আসবাবপত্র দ্বারা জানালা ঢেকে না যায়। এসবের পাশাপাশি ঘরের দেয়ালে কোনো পিলার থাকলে তার প্রশ্বস্ততা নির্ণয় করাও জরুরি। আর মাপতে হবে মেঝে থেকে সুইচবোর্ডের উচ্চতা। সুইচবোর্ড দেয়ালের যেখানে থাকবে সেই স্থান ফাঁকা রাখাই বাঞ্ছনীয়। অগত্যা কেউ যদি সেখানেও কোনো ফার্নিচার স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেটির উচ্চতা সুইচবোর্ডের চেয়ে কম হওয়া আবশ্যক।

এসব মাপ নিতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যা ভুলে যাই তা হলো দরজার মাপ। আপনার আসবাবের আকার অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয় যা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো কঠিন। শুধু তা-ই নয়, দরজার পাশে রাখার পরিকল্পনা করছেন, এরকম কোনো আসবাবপত্র কিনলে অবশ্যই তার আকৃতি দরজার উচ্চতার মাঝামাঝি বা তার চেয়ে কম হওয়া ভালো। এতে ঘরের ঐ অংশের সৌন্দর্য বজায় থাকে।

ঘরের স্কেচ করুন, ছবি তুলুন

ফার্নিচার ক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রস্তুতিই ঘরে বসে সেরে ফেলতে হয়। আর সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হলো ঘরের মেঝের একটি খসড়া ডিজাইন তৈরি করা। প্রথমেই ঘরের কোথায় সোফা, কোথায় টেবিল আর কোথায় বিছানা বা অন্যান্য আসবাবপত্র রাখছেন তা ঠিক করে ফেলুন, অনুমান অনুযায়ী মেঝেতে সেই বস্তুটি কতটুকু স্থান দখল করবে তা চক দিয়ে টেনে ফেলুন।

পুরো ঘরের কোথায় কী রাখছেন তার দাগ টানা হয়ে গেলে সেটি কাগজে এঁকে নিন এবং একাধিক স্কেচ করে ফেলুন একই মাপের ফার্নিচারগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে দিয়ে। ফার্নিচারের দোকানে পূর্বে থেকে ঠিক করে রাখা মাপের ফার্নিচার না-ও মিলতে পারে। একাধিক স্কেচ করার সুবিধা এখানেই। তখন ভিন্ন মাপের আসবাবপত্রগুলোর জন্য ভিন্ন স্কেচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।

এক্ষেত্রে ঘরের ছবি তোলা কিংবা ভিডিও ধারণও করা যেতে পারে। ফার্নিচারের শো-রুমে আপনি যে আকার, আকৃতি বা রঙের ফার্নিচার দেখবেন, তার সাথে তৎক্ষণাৎ ঘরের ছবি/ভিডিও দেখে উভয়ের কম্বিনেশন যাচাই করে নিতে পারবেন।

বিছানার পরিমাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

বিভিন্ন আসবাবপত্রে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে তা হলো বিছানার পরিমাপ। সাধারণ বিছানাই বেডরুমের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে, তাই এর অবস্থানও এরূপ হতে হবে যেন ঘরে অবাধ হাঁটাচলা বিঘ্নিত না হয়। বিছানার আকারও ক’জন মানুষ ঘুমাচ্ছে সেই অনুপাতে যতদূর সম্ভব ছোট রাখাই বাঞ্চনীয়। পাঠকের সুবিধার্থে বিছানার কয়েকটি স্ট্যান্ডার্ড আকার উল্লেখ করা হলো:

টুইন বেড- ৩৯″ X ৭৫″

ফুল সাইজ- ৫৪″ X ৭৫″

কুইন সাইজ- ৬০″ X ৭৫″ কিং সাইজ- ৭৬″ X ৭৫″

এছাড়া, বিছানার আকারও নির্ধারণ করতে হবে ঘরের আকার অনুযায়ী। ঘরটি যদি লম্বা হয় তাহলে ছোট আকৃতির টুইন বেডই ভালো। ঘর বর্গাকৃতির হলে বর্গাকৃতির বিছানা যুতসই হতে পারে।

সোফা কিনুন বুঝে-শুনে

ঘরের আকৃতি এবং সজ্জা নির্ধারণ করে যে আসবাবপত্রগুলো, সোফা তার মাঝে একটি। বিছানা বা অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি সোফার জন্য কতটুকু জায়গা থাকছে, তা বুঝে ক্রয় করুন সোফা। একেবারে শূন্যস্থানের মাপ বরাবর সোফা ক্রয় করা মস্ত বড় ভুল। সোফা রাখার পর কফি টেবিল রাখার জায়গা এবং কফি টেবিলের চারপাশে হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা বাঞ্চনীয়। পাশাপাশি, সোফার পেছনে রাখতে হবে কিছুটা খালি জায়গা, সাধারণত ১-১.৫ ফুট। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে সোফা রাখা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

চলাফেরার কথা শুরুতেই ভাবুন

আসবাবপত্র কেনা এবং সেসব জায়গামতো বসানোর পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে যা প্রায়ই ভুল হয় সেটি হলো হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকা, কিংবা থাকলেও তা পরিমিতভাবে বণ্টন না হওয়া। দেয়ালের উচ্চতা, জানালা না ঢেকে ফেলা, দরজা থেকে ঠিকঠাক দূরত্ব রাখা, এসবের মাঝে অনেক সময়ই হারিয়ে যায় ঘরে হাঁটাচলার জায়গা। কখনো বা ঘরে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা থাকলেও পুরো ঘরে বাধাহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো যায় না। কেননা ঘরের একপাশে ফাঁকা জায়গার পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তো অন্যপাশে কম হয়। আর এটি হয় ঘরের আসবাবপত্রের আকারের জন্য। হাঁটার জন্য আপনি আপনার ঘরে সোজাসাপ্টা করিডোর রাখতে চান নাকি কিছুটা এলোমেলো পথে হাঁটতে চান, সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচির ওপর। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভাবুন এবং সেই অনুপাতে যুতসই আসবাবপত্র ক্রয় করুন।

যেভাবে স্থাপত্যে মিশে গেল গ্লাস

আধুনিককালের অবকাঠামো নির্মাণশৈলীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে থাই গ্লাস বা আর্কিটেকচারাল গ্লাস। বসত-বাড়ি থেকে শুরু করে অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা শিল্প-কারখানা— সর্বত্রই এই গ্লাস ব্যবহারের ছড়াছড়ি। সৌন্দর্যের দিকটা তো রয়েছেই, আছে আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেবার ব্যাপারও। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নতুন যেসব বাড়িঘর বা অফিস ভবন গড়ে উঠেছে, সেসবের কোনোটিই গ্লাসের ব্যবহার ব্যতিরেকে নয়। শহরের ধুলো-ময়লা আর অত্যধিক শব্দদূষণ থেকে বাঁচিয়ে রাখে থাই গ্লাস। পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণে গ্লাসের বিকল্প নেই। গ্লাস বা কাঁচ হলো এমন একটি বস্তু যা আবিষ্কারের পর থেকে অদ্যাবধি খুব বেশি পরিবর্তন ছাড়াই নিত্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও গ্লাস আবিষ্কারের সঠিক ইতিহাস জানা দুষ্কর, তবে গ্লাসের ইতিহাস খুঁজতে গেলে খ্রিস্টের জন্মেরও ৭০০০ বছর পূর্বে, নিওলিথিক যুগে, এর হদিস পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে মিশরীয়দের মাঝে গ্লাসের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। অবশ্য বসতবাড়ি নির্মাণে গ্লাসের নান্দনিকতার ছোঁয়া এসেছে এর ঢের পরে।

আর্কিটেকচারাল গ্লাসের সবচেয়ে পুরাতন রূপটি হলো কাস্ট গ্লাস। পাটা লোহার মতো এই পাটা গ্লাস রেনেসাঁপূর্ব ইংল্যান্ডে ব্যবহার করা হতো। মধ্যযুগে ক্রাউন গ্লাসের আবির্ভাব এর ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দেয়। ক্রাউন গ্লাস মূলত বিলাসবহুল জাহাজের অঙ্গসজ্জায় ব্যবহার করা হলেও দ্রুতই এটি ধনাঢ্যদের বাড়ির জানালায় স্থান করে নেয়। সিলিন্ডার গ্লাস, ড্রন শিট, কাস্ট প্লেট গ্লাস- সবই একে একে অবকাঠামো নির্মাণের সাথে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে। প্রাথমিকভাবে এসব গ্লাস মূলত গবেষণাগার, প্রাসাদ আর ধনী ব্যক্তিদের বাড়িঘরে শোভা পেত।

এরপর রোলড প্লেট গ্লাস নামে আরেক প্রকার অমসৃণ গ্লাসের উদ্ভব হয় যা মূলত বড় আকারের জানালায় ব্যবহার করা হতো। প্রিজম গ্লাসের আগমন গ্লাসের ব্যবহারে বিলাসিতার মাত্রা আরেকটু চড়িয়ে দিলেও গ্লাস ব্লকের আগমন তা মধ্যবিত্তের নাগালের মাঝে নিয়ে আসে।

এরপর ১৭ শতকে ইউরোপে লেড গ্লাস উৎপাদনের প্রযুক্তি তৈরি হলে স্থাপত্যের সাথে গ্লাসের সম্পর্ক অটুট হয়ে যায়। শুরুর দিকে যদিও কৃষি ও গবেষণার জন্য গ্রিন হাউজ এবং কনজারভেটরি নির্মাণে গ্লাস ব্যবহৃত হতো। ১৮ শতকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাড়িঘরের জানালায় গ্লাসের ব্যবহার শুরু হয় এর সৌন্দর্যের জন্য। শুরুতে যদিও একে বিলাসিতা মনে করা হতো, শিল্পবিপ্লবের সাথে সাথে দ্রুতই ধারণা বদলে যেতে থাকে এবং বড় এক্সিবিশন হল, টাউন হলের পাশাপাশি রেলওয়ে স্টেশন আর সরকারি দালানকোঠায়ও গ্লাস উঁকি দিতে শুরু করে। দ্রুতই গ্লাসের দরজা-জানালাকে আরও টেকসই করতে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য ধাতব বস্তুর ফ্রেমিংয়ে আবদ্ধ করা শুরু হয়।

অবশ্য অবকাঠামো নির্মাণে গ্লাসের ব্যবহারে বিপ্লব ঘটায় কিছু যুগান্তকারী ভবনের নির্মাণ। ১৮৫১ সালে স্থপতি জোসেফ প্যাক্সটন লন্ডনে ক্রিস্টাল প্যালেস নির্মাণ করে স্থাপত্যশিল্পে গ্লাস ব্যবহারের ধারণা চিরতরে বদলে দেন। তিনি সেসময় প্রচলিত অস্বচ্ছ লেড গ্লাসের পরিবর্তে স্বচ্ছ এবং ঝকঝকে (গ্লেজি) গ্লাস দিয়ে চোখ ধাঁধানো এক দালান নির্মাণ করেন। তার এই ভবন নির্মাণই আর্কিটেকচারাল গ্লাসের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। যদিও তিনি এরূপ গ্লাস সৌন্দর্য নয় বরং ইন্টেরিয়রে সূর্যালোক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। তথাপি নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ক্রিস্টাল প্যালেস সার্বজনীন প্রশংসা পায় এর সৌন্দর্যের জন্য।

ক্রিস্টাল প্যালেসের হাত ধরে স্বচ্ছ গ্লাসের ব্যবহার শুরু হয়ে গেলেও প্রখর সূর্যালোক কিছুটা ঝামেলারও হয়ে দাঁড়ায়। এর কয়েকবছর পর লিভারপুলে ওরিয়েল চেম্বার নামে একটি ভবন নির্মাণে রঙিন গ্লাসের পরীক্ষা চালান স্থপতি পিটার এলিস। তিনি প্রথমবারের মতো গ্লাস কার্টেইন ওয়ালের ব্যবহার করেন যা ছিল স্থাপত্যে গ্লাস ব্যবহারের আরেকটি যুগান্তকারী অধ্যায়। তার এই পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে গ্লাস নির্মিত কার্টেইন ওয়ালের ব্যবহার বেড়ে যায়।

এরপর ১৯ শতকের শেষভাগে এবং ২০ শতকের শুরুর সময়ে আমেরিকায় ‘অল-গ্লাস বিল্ডিং’ ব্যাপক প্রচলন হয়। এরূপ ভবনগুলোয় মূলত ভবনের পুরো বহিরাবরণটাই গ্লাস দ্বারা নির্মাণ করা হতো। স্বচ্ছতা আর উজ্জ্বলতাই ছিল তখন মুখ্য। ভবনের বহিরাবরণে ধীরে ধীরে কনক্রিটের জায়গা নিয়ে নিল গ্লাস, এবং সময়ের সাথে ঝকঝকে-চকচকে স্বচ্ছ গ্লাসকে প্রতিস্থাপন করলো অনুজ্জ্বল, মসৃণ ও আধা-স্বচ্ছ গ্লাস।

প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে হাজারো রঙের, ডিজাইনের আর ভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৈরি গ্লাস। এনিলিড গ্লাস, হিট স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, কেমিক্যালি স্ট্রেংদেন্ড গ্লাস, হিটেবল গ্লাস, ইনসুলেটিং গ্লাস, টাফেন্ড গ্লাস, ইত্যাদি। এমনকি ভূমিকম্পের কম্পন এবং উচ্চমাত্রা কম্পন বিশিষ্ট শব্দতরঙ্গ সহনশীল সাইজমিক গ্লাসও তৈরি হচ্ছে আজকাল।

বর্তমান সময়ে আর্কিটেকচারাল গ্লাস তথা রঙ-বেরঙের থাই গ্লাস ভবন নির্মাণের একটি অপরিহার্য উপাদান। বিশ্বজুড়ে এই গ্লাস শিল্পের বাজার এখন কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের। এই বাজারে ফ্রেঞ্চ বহুজাতিক কোম্পানি সেইন্ট গোবেন সর্বোচ্চ মুনাফা নিয়ে রাজত্ব করছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি (২০২০ সালের হিসেব)। এছাড়াও পিপিজি ইন্ডাস্ট্রি, নিপ্পন শিট গ্লাস কোম্পানি, কর্নিং ইন্টারন্যাশনালের মতো বড় বড় বৈশ্বিক গ্লাস রপ্তানিকারক রয়েছে বাজারে।

Home Painting Solution

পেইন্টিংয়ের সাত সতেরো

আপনার ঘরে কেমন পেইন্টিং রাখবেন এটা জানার আগে জানতে হবে কেন পেইন্টিং রাখবেন।

আপনার ঘরে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এই বস্তুটি রাখার দরকার কী? কারণ, আপনি একজন রুচিশীল মানুষ এবং আপনার রুচির পরিচয় বহন করে আপনার ঘরের সৌন্দর্য। আর যখন কেউ দু’লাখ টাকা দামের ক্ষুদ্র একটা পেইন্টিং নিয়ে এসে নিজের ঘরে টাঙায়, তখন সেই পেইন্টিংযের সামনে অন্য যেকোন শো-পিস বা দেয়াল একেবারেই ম্লান হয়ে যায়। আপনি হয়তো খুব দামী রঙ করেছেন একটা দেয়ালে কিন্তু সেই দেয়াল ততক্ষণ পর্যন্ত সুন্দর না যতক্ষণ না আপনি একটা শো-পিস বানাচ্ছেন। এ কারণেই পেইন্টিং খুবই জরুরী। আপনি হয়তো ভাবছেন দেয়ালে একটা ঘড়ি টাঙাবেন কারণ সেই ঘড়িটি প্রয়োজন। অথচ পেইন্টিংযের প্রয়োজনীয়তা তার থেকেও বেশি! একটু ভেবে দেখুন, একটা ঘড়ি কেবল সময় দেবে। আর একটা পেইন্টিং আপনাকে দেবে মনের খোরাক! আর এই মনের খোরাক পেইন্টিং নিয়েই আমাদের আলোচনা।

Painting At Home

পেইন্টিংযের প্রকারভেদঃ

পেইন্টিং অনেক ধরণের হয়। যেমনঃ জল রঙ, তেল রঙ, এক্রেলিক অথবা মিক্স মিডিয়া। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী পেইন্টিং রাখতে পারেন ঘরে। এক্ষেত্রে জল রঙের চাইতে এক্রেলিক বা মিক্স মিডিয়া একটু বেশিই দামী। কিন্তু একটা জলরঙের পেইন্টিং জয়নুল আবেদীন আঁকলে যা দাম, সাধারণ কোন আর্টিস্ট আঁকলে তেমন দাম হবে না। এটা আসলে শিল্পীর অংকনশৈলী ও পরিচিতির ওপর নির্ভর করে। পৃথিবীতে এমনও অনেক পেইন্টিং আছে যেগুলো বাংলাদেশের মোট বাৎসরিক বাজেটের চেয়েও বেশি দামী! তার মানে এই নয় যে, এমন পেইন্টিং দুনিয়াতে একটিই আছে, বরং এর এন্টিক গুণ বিচার করে এমন দাম নির্ধারিত হয়। জল ও তেল রঙের পেইন্টিং সাধারণত কম মূল্যের হয় কারণ এর রঙের দাম কম। এক্রেলিক সেই তুলনায় বেশ দামী রঙ। আবার ক্যানভাস বিচার করেও পেইন্টিংযের দাম নির্ধারিত হয়। নিজ নিজ পছন্দ ও সামর্থ্য বিচার করে পেইন্টিং নির্ধারণ করবেন।

পেইন্টিং ফ্রেমঃ

পেইন্টিং ফ্রেম কেমন হবে এটার একটা ধারণা পাবেন পেইন্টিংযের ধরণ বিচার করে। পেইন্টিং যদি অনেক রঙ্গিন হয়, তাহলে এর ফ্রেমও জমকালো হওয়া চাই। ধরুন, আপনার বাসায় যদি একটি সাধারণ ফ্রেমে বেশ দামী একটি পেইন্টিং রাখেন, তাহলে কিন্তু সেটা মোটেও ভাল দেখাবে না। মোটকথা পেইন্টিংযের জবরজং রুপের সাথে এর ফ্রেমটিও হওয়া চাই মানানসই। এক্ষেত্রে বাজারে নানা পদের বেশ কিছু ফ্রেম পাওয়া যায়। কোনটা সোনালী, কোনটা রুপালী, কোনটা আবার কালো! সবগুলোতেই দেখবেন নানা রকমের কারুকাজ থাকে। কোনটা বেশ জটিল ফুলের, কোনটা চায়নিজ, কোনটা আবার ইসলামিক আর্টভিত্তিক। এক্ষেত্রে একটা গ্রামের দৃশ্যকে নিশ্চয় আপনি ইসলামিক ছাঁচের কোন ফ্রেম উপহার দেবেন না! আবার ইসলামিক কোন ক্যালিওগ্রাফিতে নিশ্চয় আপনি চায়নিজ কোন ডিজাইনের ফ্রেম দেবেন না! তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এজন্যে ফ্রেম বুঝে নিতে হবে। ফ্রেমের কিছু ম্যাটেরিয়েল ভিন্নতা আছে। সেগুলো হলঃ এমডিএফ এর তৈরি ফ্রেম, কাঠের ফ্রেম, পিভিসি ফ্রেম, এলুমিনিয়াম ফ্রেম।

এমডিএফ হল কম্প্রেসড ম্যাটেরিয়েল যা দিয়ে প্রায় সব ধরণের ফার্নিচার বানানো যায়। এটিকে যেমন খুশি তেমন আকৃতি দেয়া যায়। ফলে এর ব্যবহার বহুলভাবে প্রচলিত। বিভিন্ন ডুকো পেইন্টের মাধ্যমে সুন্দর রঙিন আবহে ফুটিয়ে তোলা যায় যে কোন পেইন্টিং। তবে এমডিএফ এর যম হল পানি! পানির বিন্দু পরিমান স্পর্শ পেলেই এটি ফুলে যায় ও কদিন পরেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই ধরণের ফ্রেম ব্যবহার করলে অবশ্যই পানি থেকে দূরে রাখতে হবে ফ্রেমটি।

কাঠের ফ্রেমে ছবি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। বিভিন্ন রকমের কাঠ আছে। তবে গর্জন ফ্রেম ব্যবহার সবচেয়ে লাভজনক কারণ এটি অনেকদিন টিকে থাকে। কাঠের ফ্রেমে নানা রকমের বার্ণিশ দেয়া হয়। কেউ আবার কাঠের রঙেই রেখে দেন। কেউ ডার্ক ওয়ালনাট রঙটা পছন্দ করেন। কেউ বা আবার একটু লালচে বার্ণিশ পছন্দ করেন। আপনার পছন্দসই রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন যেকোন কাঠের ফ্রেম। এই কাঠের ফ্রেমগুলো ব্রিটিশ আমলে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত ছিল। তখন ছবি মানেই ছিল কাঠের ফ্রেম।এতে নানা রকমের কারুকাজ করা হত। বর্তমানে কাঠের ফ্রেমে কারুকাজে অত্যাধুনিক সিএনসি রাউটার ও লেজার ব্যবহার করা হয়। ফলে আরো অনেক সহজে তৈরি করা যায় বিভিন্ন রকমের ফ্রেম। তবে কাঠের ফ্রেমের সবচেয়ে বড় শত্রু হল পোকা। একবার কোনভাবে এতে পোকা ধরলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায় এই ফ্রেম। ভেতরে থাকা মূল্যবান ছবিটির অবস্থাও একই হয়। তাই প্রতিদিন এই ফ্রেমের নিচে কাঠের গুঁড়ো পড়ে আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। নইলে একদিন দেখবেন লাখ টাকা দামের পেইন্টিং কেটে নষ্ট করে ফেলেছে কাঠের পোকা! কাঠের ফ্রেমে পানিতেও বেশ ক্ষতি সাধিত হয়। তাই যতটা সম্ভব আলো-বাতাসপূর্ণ এলাকায় একে রাখা উত্তম। নইলে সহজেই এতে পচন ধরবে।

Wall Painting at Home

পিভিসি হল পলিভিনাইলক্লোরাইড ম্যাটেরিয়েল। এটি প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। অনেকেই একে প্লাস্টিক উড বলেই চেনেন। এটি এমনই এক ম্যাটেরিয়েল যাকে যেকোন আদলে কেটে ফেলা যায়, কারণ এটি যেমন নমনীয়, তেমনই টেকসই। আগুনে না পুড়লে এই পিভিসি দিয়ে তৈরি করা ফ্রেম কয়েকশো বছরেও কিছুই হবে না! শুধু রঙটা একটু চটে যেতে পারে। এছাড়া একেবারেই নতুনের মতই থাকবে। সাধারণত আঠারো মিলিমিটার পুরুত্বের পিভিসি দিয়ে ফ্রেম বানানো হয়। এরপর একে এমডিএফ ম্যাটেরিয়েলের মতো করেই রঙ করা হয়। ভাল মতো পুটিং দিয়ে স্প্রে রং করে দিতে পারলে এর কোন জয়েন্টই দেখা যায় না। এবং এটি অনেক বছর অটুট থাকে। এটি পানিতে নষ্ট হয় না। একে পোকায় ও কাটে না। বাজারেও সহজলভ্য। তবে সাধারণত একে আপনি ফ্রেম আকারে পাবেন না। একে ফ্রেমের আকার দিয়ে নিতে হবে। একবার তৈরি হয়ে গেলে চলে যাবে বছরের পর বছর।

এলুমিনিয়াম ফ্রেম একটু দামী অথচ এটিই বর্তমানে সবচেয়ে সহজলভ্য ও প্রচলিত (যদিও বাংলাদেশে এখনো তেমন দেখা যায় না)। এলুমিনিয়াম ফ্রেমের কয়েকটা রঙ নির্দিষ্ট তাই এর ভেতর তেমন ব্যাতিক্রম চোখে পড়ে না। বড় আকারে ছবি হলে তখন এলুমিনিয়াম দিয়ে ফ্রেমিং করা হয় যেন ছবিটি টিকে যায় অনেক বছর।

 

ফ্রেমের এতো কিছু জানালাম অথচ ফ্রেমের পেছনের অংশ নিয়ে কোন কথা বলব না তা কি হয়? সাধারণত পেইন্টিং দেয়ালে ঝোলানো হয় তাই এটি দেয়ালে ঝোলানোর জন্যে বিভিন্ন ধরনের আংটা ব্যবহার করা হয় পেছনদিকে। অনেক সময় দু’দিকে দু’টো পেরেক লাগিয়ে মাঝে সুতো দিয়েও ঝুলিয়ে দেয়ার চল দেখা যায়, যদিও এটা বেশ পুরোনো পদ্ধতি। এতে পেইন্টিংটা একটু নিচের দিকে নামানো থাকে। দেখতে সুবিধে হয়। কিন্তু বর্তমানে এটা দেখা যায় না তেমন। এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে।

Ancient Way of Installing Paintings

পেইন্টিং শুধু ফ্রেম আর ছবিই নয়, পেইন্টিংযের আরো কিছু প্রয়োজনীয় অংশ থাকে। এর মাঝে একটি হল পেইন্টিংযের চারপাশের সাদা অংশ যা তৈরিতে সাধারণত পিভিসি ব্যবহার করা হয়। এটি পাতলা পলিভিনাইল ক্লোরাইড বোর্ড কেটে বানানো হয়। এর প্রতিটি কোন পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে কাটা হয় যা ছবির সাথে মিলে যায় এবং দেখতে খুবই সুন্দর দেখায় ছবিটা। অনেক ক্ষেত্রে এটি কালো মাউন্ট বোর্ড (কালো বোর্ড) দিয়েও করা হয়। এর মূল কাজ হল আয়না থেকে ছবিকে দূরে রাখা যেন আয়নার সংস্পর্শে এসে ছবি নষ্ট না হয়ে যায়।

Wall Painting Frame

 

এবার আসি আয়নার কথায়। ছবির আয়না ছবিটিকে নষ্ট হওয়া বা দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করেছেন যে, বাজারে যে সব আয়না আছে এগুলোতে আলো পড়লে আপনার ছবি এতে প্রতিবিম্ব তৈরি করে? যদি এটা খেয়াল করে থাকেন, তবে দেখতে পাবেন বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোন আয়না নেই যাতে আমাদের রিফ্লেকশন পড়ে না। কিন্তু এই রিফ্লেকশন পড়ে না এমন কাঁচও পাওয়া যায়। একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। এই সব কাঁচের মধ্য দিয়ে আপনাকে নয়, ছবিটিকেই দেখা যাবে। একটু সাদাটে হয়ে যায় কিছু ক্ষেত্রে। তবে ছবিটি বোঝা যায় ভালোমত। বাইরের আলো এতে প্রতিফলিত হতে পারে না। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন গ্লাস হাউজে এমন এন্টি-রিফ্লেক্টিভ কাঁচ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মূল্য আকাশ ছোঁয়া! এসব কাঁচের মধ্যে দিয়ে যে ছবি দেখা যায়, সেটি কোন আলো প্রতিফলিত করে না বলেই এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

লেমিনেশনঃ

অনেক সময় ছবি ফ্রেমের ভেতর অনেক কৌশল করে রাখার পরও নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছবিটি লেমিনেশন করে নেয়া যেতে পারে। বাজারে অনেক রকমের ম্যাট লেমিনেশন আছে যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার ছবির স্থায়ীত্ব বেড়ে যাবে অনেক বছর। সাধারণত বড় ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এটি বেশি করা হয়। বড় ছবিগুলোর লেমিনেশন পদ্ধতি একটু আলাদা। ছবিতে দেখলেই বুঝতে পারবেন। এই লেমিনেশন ব্যবহার করলে এটি বাতাসের আর্দ্রতা থেকে মুক্ত থাকবে অনেক দিন ধরে।

Lamination Process

কীভাবে ছবি বসাবেন?

Painting position

ছবি সব সময় চোখে দেখা যায় এমন উচ্চতায় বসানো হয়। এটি চোখের জন্য আরামদায়ক। পুরো ছবিটা দেখা যায়। কিন্তু এই নিয়ম সব সময় মেনে চলা যায় না। সাধারণত এটা ছোট ছবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু একটা হল ঘরে যদি ছবি ঝোলাতে হয়, তাহলে অনেক সময় ছোট ছবিকে মানুষের উচ্চতার সমান বা তারও বড় স্থান নির্বাচন করতে হয়। তখন ছবি দেখার জন্যে আগের দূরত্বের চাইতে বেশি দূরত্ব রাখতে হয়।

painting size

অনেক সময় ডাবল হাইট স্পেস হলে রেলিং এ দাঁড়িয়ে বড় ছবি উপভোগ করার ব্যবস্থাও করতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ছবি যত বড়, ব্যক্তিকে ততটাই দূরে দাঁড়িয়ে ছবিটিকে দেখতে হবে। তাই ছোট ঘরের ভেতর বড় আকারের ছবি না রাখাই উত্তম।

 

ছবির ওপর আলো কেমন হবে?

painting and reflection

ছবির ওপর সাধারণত সাদা আলো দেয়া উচিৎ; বেশি হলুদাভও নয়, আবার নীলচে সাদাও নয়। এই দুই আলোতে ছবির আসল রঙ বোঝা যায় না। তাই সাদাটে আলো বা যাকে আমরা বলি সূর্যালোকের মত, আলোতে পেইন্টিং ভাল থাকে। দেখতেও ভাল লাগে। ওপর থেকে স্পট লাইট ব্যবহার করতে পারেন। আবার হ্যাঙ্গিং স্পটও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রুচিশীলতার পরিচয় দেয়া আবশ্যক।

প্রতিটি ছবিই এক একটি মূল্যবান শিল্প যা মানব মনের ওপর দারুন প্রভাব বিস্তার করে। একে কেমন করে উপস্থাপন করবেন, কেমন করে একে সাজিয়ে তুলবেন সেটার ওপর নির্ভর করে আপনার ঘরের ইন্টেরিয়র দেখতে কেমন হবে। বলা যায়, একটি পেইন্টিং একটি ঘরকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই একে অবহেলা করার কোন অবকাশ নেই।

 

সিঁড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য

সিঁড়ি বিল্ডিং এর এমন অংশ যা ফ্লোর বা ছাদ পরিবর্তনের মাধ্যম। অনেকেই ভেবে থাকেন যে একটা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সিঁড়ি নির্মাণ সম্ভবত সহজ কাজগুলোর মধ্যে একটি। আসলে তা নয়। ভবনের সিঁড়ি নির্মাণ সবচেয়ে ঝমেলাপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি। তাই সিঁড়ি নির্মাণের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এর বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হয়েছে। তবে শুরুতেই আসুন জেনে নেওয়া যাক, সিঁড়ির বিভিন্ন অংশ কি কিঃ

সিঁড়ির বিভিন্ন অংশ-
  • ট্রেড
  • রাইজ
  • ল্যান্ডিং
  • নোজিং
  • ফ্লাইট
  • হ্যান্ড রেইল
  • ওয়েন্ট স্ল্যাব
  • ল্যান্ডিং বীম
  • ফ্লোর বীম
  • নিউওয়েল পোস্ট
  • সেফটি
  • ওয়ান্ডার
  • কাটেইল স্টেপ
  • ফ্লায়ার
সিঁড়ির প্রকারভেদ-
  • কাঠের
  • স্টিলের
  • কংক্রিটের
সিঁড়ির  অবস্থান-
  • পাবলিক বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে প্রধান প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি।
  • বাড়ির ক্ষেত্রে সিঁড়ি এমন অবস্থানে হতে হবে যেন সবগুলো ঘর বা কক্ষ থেকে সহজে বের হওয়া যায়।
  • বাড়িতে গোপনীয়তা বজায় থাকে।
  • পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে।
সিঁড়ির প্রশস্ততা-
  • ফ্লাইট দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩ স্টেপ থেকে ১২ স্টেপ পর্যন্ত হতে পারে
  • পিচ কোন সর্বনিম্ন ২৫০-সর্বোচ্চ ৪০০
  • রাইজ ৬-৭ ইঞ্চি
  • ট্রেড ১০-১২ ইঞ্চি