ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমে ব্যবহৃত পাইপের রকমফের: কোনটি কেন ব্যবহৃত হয়, সুবিধা-অসুবিধা

ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম বা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। পানি সরবরাহের পাইপ যদি টেকসই ও চাপ সহনক্ষম না হয়, তাহলে পুরো নির্মাণকাজই নস্যাৎ হতে পারে। পাইপ ফেটে চুইয়ে পানি পড়া ঘরের দেয়ালের রঙ নষ্ট করা থেকে শুরু করে পলেস্তারা খসানো, শেওলা জমানো, এমনকি দেয়াল-ছাদের গাঁথুনি পর্যন্ত দুর্বল করে দিতে পারে। তাই বাসাবাড়ি, অফিস ও শিল্পকারখানা- যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণে পাইপ নিয়ে যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।

অবকাঠামো নির্মাণে পানি সরবরাহের পাইপের রয়েছে রকমফের। সবকাজে সবরকম পাইপ মানানসই না। পানি সরবরাহের জন্য সবচেয়ে মানানসই পাইপগুলো কোনটি কী কাজে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যাপারে জানা যাক চলুন।

কাস্ট আয়রন (Cast Iron) বা ঢালাই লোহার পাইপ

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বাধিক ব্যবহৃত পাইপের নাম কাস্ট আয়রন পাইপ বা ঢালাই লোহার পাইপ। এই পাইপ এর ক্ষয়রোধী ক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়িত্ব আর অন্যান্য পাইপের তুলনায় সাশ্রয়ী হবার জন্য এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ঢালাই লোহার পাইপ ৫ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১২০ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি ব্যাসের হতে পারে, লম্বায় ১২ ফুট থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত। বিশেষ কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে ঢালাই লোহার পাইপ ১০০ বছর বা তারও বেশি টিকে থাকতে পারে। ব্যবহারবিধি অনুযায়ী এই পাইপের ঘনত্বও ভিন্ন হয়।

ঢালাই লোহার পাইপের আরেকটি বড় সুবিধা হলো সহজ সংযুক্তি। এই পাইপ একটির সাথে আরেকটি সহজে সংযুক্ত করে বা প্রয়োজন অনুযায়ী আকৃতিতে কেটে নেয়া যায়।

এটি ব্যবহারের প্রধান অসুবিধা হলো মরিচা পড়া। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে এই পাইপের উপর সহজেই মরিচা ধরে, শৈবাল জমে এবং পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপ (Galvanised Iron Pipe)

গ্যালভানাইজড আয়রন পাইপকে সংক্ষেপে জিআই পাইপ বলা হয়। এটি সাধারণ স্টিল বা ইস্পাতের পাতের উপর গ্যালভানাইজ করে তৈরি করা হয়। সহজ ভাষায় বললে, ইস্পাতের পাইপ তৈরি করে তা জিংকের মিশ্রণে ডোবানো হয় নতুন আস্তরণের জন্য। এ প্রক্রিয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। জিআই পাইপ বৃহৎ পরিসরের কোনো কাজে ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত ১২ মিলিমিটারের সরু পাইপ থেকে শুরু করে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ব্যাসের জিআই পাইপ তৈরি করা হয়। লম্বায় এসব পাইপ ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জিআই পাইপও তুলনামূলকভাবে স্বল্পমূল্যের। বাসা-বাড়িতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের লাইনের জন্য এই পাইপ ব্যবহার করা হয়। ব্যাস কম হওয়ায় এটি সহজেই দেয়ালের ভেতর দিয়ে স্থাপন করা যায়। এছাড়াও এটি পাতলা এবং সহজে কাটা ও জোড়া দেয়া যায়।

জিআই পাইপ ব্যবহারের অসুবিধা হলো এর স্থায়িত্ব। এটি ১০ বছরের বেশি স্থায়ী হয় না। আবার পানি কিছুটা অম্লীয় বা ক্ষারীয় হলে এই পাইপ ক্ষয় হতে শুরু করে।

রট আয়রন (Wrought Iron) বা পেটা লোহার পাইপ

জিআই পাইপের সাথে রট আয়রন বা পেটা লোহার পাইপের একমাত্র পার্থক্য হলো এতে গ্যালভানাইজিং করা হয় না, পেটা লোহার পাত ওয়েল্ডিং (ঝালাই) করে এই পাইপ তৈরি করা হয়।

পেটা লোহার ব্যবহারবিধিও অনেকটা জিআই পাইপের মতো- পানি, গ্যাস, ইত্যাদি পরিবহনে ব্যবহার করা হয় এটি। তবে পার্থক্য এর প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবহারবিধির বৈচিত্র্যে।

পেটা লোহার পাইপ জিআই পাইপের তুলনায় হালকা, সহজে কাটা যায়, জোড়া লাগানো যায় এবং যেকোনো আকৃতিতে বাঁকিয়ে ব্যবহার করা যায়। ১২ মিলিমিটার থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের পেটা লোহার পাইপ মূলত যেসব কাজে পাইপ অধিক পরিমাণ কাটা বা জোড়া লাগানোর প্রয়োজন হয়, সেসব কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পাইপ জোড়া লাগানোর তিনটি উপায় আছে- সকেট সংযোজন (Socket joint), ফ্ল্যাংড সংযোজন (Flanged joint) এবং ওয়েল্ডেড সংযোজন (Welded joint)।

স্টিল (Steel) বা ইস্পাতের পাইপ

জিআই পাইপ আর পেটা লোহার পাইপের সাথে স্টিলের পাইপের পার্থক্য হলো ব্যবহারবিধিতে। এই পাইপ সাধারণত অ

ধিক চাপে পানি, গ্যাস বা যেকোনো তরল সরবরাহের জন্য সংক্ষিপ্ত পরিসরের লাইনে ব্যবহার করা হয়। স্টিলের শিট ব্যবহার করে তৈরি করা এ পাইপেও জিআই পাইপের মতো জিংক সল্যুশন ব্যবহার করে অতিরিক্ত একটি আবরণ বা গ্যালভানাইজিং ব্যবহার করা হয়। স্টিলের পাইপ আকারে ছোট, পাতলা এবং অত্যন্ত মসৃণ। এসিড বা ক্ষারের সংস্পর্শে না এলে এ পাইপ সহজেই ২০-২৫ বছর টিকে যায়, মরিচাও পড়ে না।

কপারের পাইপ (Copper)

লোহা ও ইস্পাতের তুলনায় কপার বা তামা বেশ দামী। তাই কপারের পাইপ সাধারণত সীমিত পরিসরে বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যখন পানি সরবরাহের অংশের সাথে শ্রী-বৃদ্ধির ব্যাপার যুক্ত থাকে, তখন এই পাইপ ব্যবহার করা হয়।

কপারে মরিচা ধরে না, তাই এর পাইপ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। গরম পানি পরিবহনে এই পাইপ সবচেয়ে বেশি উপযোগী। অত্যধিক তাপেও কপারের পাইপের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অসুবিধা ঘটে চাপে। নরম ধাতু হওয়ায় অধিক চাপে এই পাইপ ক্ষয় হয়ে যেতে পারে বা ভেঙে যেতে পারে।

প্লাস্টিকের পাইপ (Plastic pipe)

প্লাস্টিকের পাইপ সাধারণ রাবার বা পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) দিয়ে তৈরি। পিভিসি পাইপ আজকাল বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। কেননা, এই পাইপ চাপ সহনীয়, ক্ষয়রোধী, মরিচা ধরার কোনো সম্ভাবনাই নেই, সহজে শেওলাও জমে না। এতে পানি, গ্যাস ছাড়াও অম্ল বা ক্ষার পরিবহন করলেও ক্ষয় হয় না।

প্লাস্টিকের পাইপও সহজেই কাটা যায়, আর যেকোনো মাপ অনুযায়ী জোড়া লাগানো যায়। ইউনিয়ন বা রিভেট ব্যবহার করে এই পাইপ জোড়া দেয়া হয়। প্লাস্টিকের পাইপের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো তাপ অসহনশীলতা। অধিক তাপে এই পাইপ অকার্যকর হয়ে পড়ে, ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

এসব পাইপ ছাড়াও অধিক পরিমাণ পানি সরবরাহের জন্য, বিশেষ করে শিল্প কারখানায় অ্যাসবেস্টসের পাইপ (Asbestos Pipe), কংক্রিট পাইপ (Concrete Pipe) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অবশ্য পয়ঃনিষ্কাশনেই এ পাইপগুলো অধিক ব্যবহারোপযোগী।

নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথরের প্রকারভেদ

নির্মাণকাজে পাথরের ব্যবহার কতকাল আগে শুরু হয়েছে তা বলা মুশকিল। কেননা, পশু শিকার করতে পাথরের হাতিয়ার বানানো মানুষেরা যখন বসতবাড়ি নির্মাণ শিখলো, তা পাথর দিয়েই নির্মাণ করতো, এটি অনুমেয়। ধরে নেয়া যায়, নির্মাণকাজের সবচেয়ে আদিম উপাদান পাথর। দৃঢ়তা ও স্থায়িত্বের জন্য পাথর নির্মাণকাজে বহুল প্রচলিত। বিশেষ করে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ, ছাদ ঢালাই, হাইওয়ে কিংবা ব্রিজের ভায়াডাক্ট তৈরিতে পাথরের বিকল্প নেই। কেননা, এসব স্থাপনা দীর্ঘ সময়ের জন্যই নির্মাণ করা হয়। তবে স্থায়িত্ব ছাড়াও পাথরের ব্যবহার সৌন্দর্যের সাথেও সম্পৃক্ত। দেয়াল বা মেঝের নান্দনিকতা বৃদ্ধিতেও ব্যবহার করা হয় নানা রকমের পাথর।

চলুন, দেখে নেয়া যাক নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু পাথর ও সেসবের ব্যবহারবিধি।

ব্যাসল্ট (Basalt)

নির্মাণকাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাথরগুলোর একটি ব্যাসল্ট। এটি একপ্রকার আগ্নেয় শিলা যা ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পাথর চাপে জমে কঠিন পাথরে পরিণত হয়। এরূপ প্রক্রিয়ার কারণে এর গঠন অত্যন্ত ঘন ও মজবুত, এবং নির্মাণকাজে এর ব্যবহার স্থাপনাকে দৃঢ়তা দেয়। সাধারণ রাজমিস্ত্রীর কাজ থেকে শুরু করে ব্রিজের পিলার নির্মাণ, নদীতে বাঁধ নির্মাণ, কিংবা বৃহৎ স্থাপনায় ব্যাসল্টের কংক্রিটের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।

ব্যাসল্ট সাধারণত ধূসর এবং কালো বর্ণের হয়। এটি অত্যন্ত দৃঢ় হওয়ায় ইচ্ছেমতো আকৃতি প্রদান করা কঠিন। এর দৃঢ়তা ২০০-৩০০ মেগাপ্যাসকেল (Megapascal) প্রেসার ইউনিট বা এমপিএ। আর্দ্রতা ও প্রতিকূল পরিবেশে ব্যাসল্টের সহনশীলতা বেশ ভালো।

গ্রানাইট (Granite)

বড় নির্মাণকাজে, যেমন- ব্রিজের পিলার, বাঁধরক্ষা দেয়াল থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির দেয়ালে আর্দ্রতারোধী আস্তরণ, রেললাইনের স্লিপার, ছাদের বহিরাবরণ ইত্যাদি নির্মাণে গ্রানাইট ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাসল্টের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বেশ দৃঢ় এবং টেকসই একটি পাথর। এর ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এর ভেতরে দীর্ঘদিনেও পানি প্রবেশ করতে পারে না।

গ্রানাইটের দৃঢ়তা ২৫০ মেগাপ্যাসকেল। হালকা ধূসর থেকে কিছুটা গোলাপী রঙেরও হয়ে থাকে গ্রানাইট। এর শোষণক্ষমতা অত্যন্ত কম হওয়ায় যেসব স্থানে অধিক আর্দ্রতা থাকে সেখানে এটি ব্যবহার করা হয়, যেমন- রেস্টুরেন্টের খাবার টেবিলের ওপর কিংবা পিলারের আবরণ হিসেবে।

স্যান্ডস্টোন (Sandstone)

ভাবছেন স্যান্ড বা বালুর আবার পাথর হয় কী করে? স্যান্ডস্টোন আসলেই বালুর পাথর, তবে এর গঠন প্রক্রিয়া দীর্ঘ। অন্যান্য পাথরের ক্ষয় হয়ে যাওয়া ধূলিকণা আর স্ফটিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজের সাথে মিশ্রিত হয়ে সময়ের আবর্তে জমাট বেঁধে শক্ত পাথরের রূপ নিলে তাকে আমরা স্যান্ডস্টোন বলি।

স্যান্ডস্টোন মূলত নির্মাণকাজে সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। লাল, সাদা, হলুদ, ধূসর, কালচে, পীত বর্ণসহ স্যান্ডস্টোন এর বৈচিত্র্যময় রঙের জন্য দেয়াল, সিঁড়ি বা অন্যান্য নির্মাণে সৌখিন উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য বড় বড় নির্মাণকাজেও প্রয়োজনভেদে এই পাথরের ব্যবহার হয়ে থাকে।

চুনাপাথর (Limestone)

চুনাপাথর সকল প্রকার নির্মাণকাজে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এর ঘনত্ব সাধারণত কম হয়, ফাটল থাকে এবং কাদামাটিতে তৈরি হওয়ায় নমনীয় ও ভঙ্গুর হয়। অবশ্য ফাটলহীন, ঘন ও মজবুত চুনাপাথর ঘরের মেঝে, ছাদ কিংবা ফুটপাতের আবরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর একটি অসুবিধা হলো- শিল্পকারখানার দূষিত বাতাসে এবং সমুদ্র তীরবর্তী লবণাক্ত বাতাসে এর ক্ষয় হয়।

মার্বেলপাথর (Marbel)

মাত্র ৭০-৭৫ এমপিএ চাপ সহনশক্তির মার্বেলপাথরের ব্যবহার অনুমিতভাবেই নির্মাণকাজে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না। এটি মূলত নির্মাণশৈলির নান্দনিকতার অংশ। এর সবচেয়ে বড় গুণ হলো একে চমৎকারভাবে পালিশ (Polish) করে ইচ্ছেমতো আকার দেয়া যায় এবং আরামদায়ক, চকচকে ও মসৃণ করা যায়।

মার্বেলপাথর টাইলস নামেই সর্বাধিক পরিচিত। বাসাবাড়ির মেঝে, রান্নাঘর আর গোসলখানায় মার্বেলপাথরের ব্যবহার এখন অবশ্যম্ভাবী। দেয়াল কিংবা পিলারের সৌন্দর্য বাড়াতে মার্বেলের ব্যবহারের বিকল্প নেই। মার্বেলের ওপর নানারকম ডিজাইন করিয়ে কিংবা নাম লিখিয়েও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণকাজে।

স্লেট (Slate)

স্লেট হলো পাললিক শিলাজাত একপ্রকার রূপান্তরিত শিলা যা ভূগর্ভের উচ্চচাপে গঠিত হয়। গঠন ঘন হওয়ায় এই পাথর সমান্তরালে কাটা যায় এবং পালিশ করে মসৃণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। অত্যধিক ভার বহনে অক্ষম হওয়ায় ভবন বা বড় কোনো অবকাঠামো নির্মাণে স্লেট ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত বাড়ির ছাদের ক্ষয়রোধী আস্তরণ, স্ল্যাব, ফুটপাতের কার্পেটিং, মেঝেতে স্লেট ব্যবহার করা হয়।

কোয়ার্টজাইট (Quartzite)

কোয়ার্টজাইটের দৃঢ়তা ৫০-২০০ এমপিএ। এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থাকায় সাধারণ নির্মাণকাজে এর ব্যবহার কম। তবে অধিক মজবুত কোয়ার্টজাইট বিল্ডিং ব্লক, স্ল্যাব, কার্পেটিং, কিংবা কখনো কখনো কংক্রিটের মিশ্রণেও ব্যবহৃত হয়।

কোয়ার্টজাইটের সবচেয়ে উপযোগী ব্যবহার হলো রেলওয়ে ব্যালাস্ট (রেললাইনে বিছিয়ে রাখা পাথর) হিসেবে। তাছাড়া শিল্পজাত সিলিকা বালু প্রস্তুত করার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কোয়ার্টজাইট। মেঝেতে টাইলস হিসেবে, দেয়ালে বা সিঁড়িতে কোয়ার্টজাইটের মসৃণ আকৃতি ব্যবহার করা হয়। হলুদ, ধূসর, সাদাসহ নানা রঙের কারণে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কোয়ার্টজাইটের ব্যবহার জনপ্রিয়। কোয়ার্টজাইটের আরেকটি বড় গুণ হলো- এতে সহজে দাগ পড়ে না, আঁচড় লাগে না, চিটচিটে হয় না। তাই কিচেন কাউন্টারটপ (রান্নাঘরে যে পৃষ্ঠের ওপর খাদ্যদ্রব্য কাটা হয় বা রান্নার উপকরণ প্রস্তুত করা হয়) তৈরিতে কোয়ার্টজাইট একটি আদর্শ উপাদান।

ঘরের দেয়াল ড্রিলিংয়ে যত্নবান হোন

পোস্টার টাঙানো, ছবির ফ্রেম ঝোলানো, ওয়ালম্যাট বসানো কিংবা ফ্ল্যাট মনিটর টিভি সেট পছন্দসই উচ্চতায় মাপমতো বসানো- সবকিছুর জন্যই ঘরের দেয়ালে করতে হয় একাধিক ড্রিলিং। এমনকি সৌখিন প্রয়োজনীয়তার বাইরে, কাপড় শুকানোর দড়ি ঝোলানোর মতো প্রতিদিনকার সাধারণ দরকারেও করতে হয় ড্রিলিং। চকচকে, তকতকে আর মসৃণ দেয়ালখানির বুক চিড়ে ড্রিল বিটের নির্মম খনন পছন্দ না অনেকেরই। কিন্তু প্রয়োজন মানে না পছন্দ-অপছন্দের বালাই। শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেয়ালে ড্রিল করতেই হয়। আর সেই ড্রিলিং যদি যুতসই না হয়, কিংবা ভুলভাল ড্রিল করার কারণে যদি খসে যায় দেয়ালের পলেস্তারা, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?

ড্রিলিংকে আপাতদৃষ্টিতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আদতে ততটাও সহজ নয় এ কাজ। বরং কিছু বিষয় মাথায় না রাখলে পুরো দেয়ালের সৌন্দর্যই নষ্ট হতে পারে, ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও।

দেয়াল ভেদে খেয়াল

ড্রিল করার প্রথম শর্ত দেয়ালের ধরন বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ড্রিল মেশিনের বিট নির্ধারণ করা। ভুল বিটের ড্রিলিংয়ে হতে পারে বিস্তর ক্ষতি। প্লাস্টার বা পলেস্তারা করা দেয়ালে ‘ড্রাইওয়াল’ বিট ব্যবহার করতে হবে। কাঠের দেয়ালের জন্য রয়েছে ‘স্পার পয়েন্ট’ বিট। অন্যদিকে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ‘ম্যাসনারি’ বিট ইট/পাথরের দেয়াল ড্রিল করার জন্য উপযোগী। আবার মোজাইক করা দেয়াল ড্রিল করার জন্য রয়েছে বিশেষভাবে তৈরি ‘টাইল’ বিট।

জানা থাকা চাই দেয়ালের ভেতরকার পাইপ/বৈদ্যুতিক তারের অবস্থান ঘরের দেয়াল ড্রিল করার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেয়ালের মধ্য দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তার এবং পানির পাইপের অবস্থান নির্ধারণ। ভুলক্রমেও যদি ড্রিল করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারের ক্ষতি হয়ে যায়, কিংবা পানির বা গ্যাসের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা ডেকে আনবে বহুবিধ বিপত্তি। দেয়াল খুড়ে সেই ক্ষতিগ্রস্ত তার বা পাইপ মেরামত একদিকে যেমন শ্রমসাধ্য, অন্যদিকে রয়েছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। তাই ড্রিল করার পূর্বে দেয়ালের ভেতরে পাইপ বা বৈদ্যুতিক তার রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি তৈরির প্রাথমিক নকশা দেখে নেয়া যেতে পারে।

এক্ষেত্রে পূর্বসচেতনতার কয়েকটি সহজ উপায় আছে। প্রথমেই ভেবে নিতে হবে বাসার কোথায় কোথায় সবচেয়ে বেশি পাইপ এবং বৈদ্যুতিক তার থাকতে পারে। সহজ উত্তর- রান্নাঘর, গোসলখানা এবং বাসার যে অংশে বৈদ্যুতিক মিটার থাকে। তাই রান্নাঘর বা গোসলখানার পাশের ঘরের দেয়ালে ড্রিল করার সময় অবশ্যই অধিক সচেতন হতে হবে। এই দেয়ালগুলো খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

দেয়ালের ভেতরে পাইপ ও তারের অবস্থান নির্ধারণে আজকাল স্টাড সেন্সর নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি সহজলভ্য না হলে দেশীয় পন্থায় চক দিয়ে দেয়ালে দাগ কেটে পাইপ ও তারের অবস্থান চিহ্নিত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পাইপের মুখ থেকে শুরু করে অনুমান নির্ভর দাগ কাটা হয় যা শতভাগ সঠিক হবার নিশ্চয়তা দেয় না।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছোট-বড় যেকোনো কাজেরই প্রথম শর্ত ‘সেফটি ফার্স্ট’। মনে রাখতে হবে, পাইপ বা তারের ক্ষতিসাধন না করার ব্যাপারে যতটা সাবধানতা অবলম্বন করছি, ততটাই সাবধান হতে হবে ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যাপার। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই আসবে সুরক্ষাপ্রদানকারী চশমা। ড্রিলের সময় ধুলোময়লার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট-পাথরের কণা ছিটকে এসে চোখের অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই চশমা পরিধান করা আবশ্যক।

পোশাকের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে; ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করে ড্রিলিং করা যাবে না। সম্ভব হলে ‘প্রোটেকটিভ ক্লোদিং’ বা বিশেষ সুরক্ষাপ্রদানকারী পোশাক পরে কাজ করতে হবে। অবশ্যই গ্লাভস পরে নিতে হবে। গ্লাভস ব্যবহারে অপ্রত্যাশিত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার ভয় থাকে না। এছাড়াও চুল বেঁধে রাখতে হবে, অলংকারজাতীয় কোনো কিছু পরিধান করা থাকলে তা ড্রিলিংয়ের সময় খুলে রাখতে হবে। ড্রিল করার পর সাথে সাথেই বিট ধরা যাবে না, কেননা ঘর্ষণের কারণে প্রচণ্ড তাপ উৎপাদিত হয়ে বিট ভীষণ গরম হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিট যথাযথভাবে লাগানো হয় না এবং ড্রিলিং চলাকালীন তা খুলে যায় ও ছিটকে বেরিয়ে আসে। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাই ড্রিলিং শুরুর পূর্বে অবশ্যই বিট সঠিকভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।

অন্যান্য ড্রিলিংয়ে চক বা মার্কার ব্যবহার করা ভুলত্রুটি এড়ানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি। যেহেতু যত কম ড্রিল করা যায়, দেয়ালের সৌন্দর্য ঠিক রাখার জন্য তা তত ভালো। তাই ভুল এড়ানোর জন্য প্রথমেই পুরো দেয়ালের কোথায় কোথায় ড্রিল করতে হবে তা চক দিয়ে চিহ্নিত করে ফেলতে হবে।

আরেকটি সাধারণ ভুল যা অনেকেই করে থাকে তা হলো ড্রিল মেশনটি সঠিকভাবে ধরতে না পারা। যেসকল ড্রিলের একটি হাতল থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এক হাতে হাতল ধরার পাশাপাশি অন্য হাতটি থাকবে মেশিনের উপরের দিকটায় যেন ভারসাম্য তৈরি হয়। এছাড়াও মেশিনটি যথেষ্ট শক্ত করে ধরতে হবে কেননা ড্রিলিং শুরু হলে যদি হাতের অবস্থান পরিবর্তন হয় তাহলে দেয়ালের ছিদ্রটি বেশি প্রশস্ত হয়ে যেতে পারে। তাই ড্রিল শুরু করবার পূর্বে যথাযথ অবস্থানে পূর্ণ ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়িয়ে কাজ শুরু করতে হবে। সবশেষ, দেয়ালে ছিদ্র অতিরিক্ত বড় না হওয়া নিশ্চিত করতে ড্রিল বিটে ‘মেজারমেন্ট ফ্ল্যাগ’ লাগানো যেতে পারে কিংবা মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা যেতে পারে। দেয়ালে ড্রিল করাকে ছোট কাজ ভেবে অবজ্ঞা না করে বরং কিছু বিষয়ে একটু সচেতন হলেই সহজে কাজ সমাধা হবে, দেয়ালের মুখশ্রীও পরিবর্তন হবে না খুব বেশি, আর ঘটবে না কোনোরূপ দুর্ঘটনা।

নির্মাণশিল্পের আধুনিক সদস্য: রঙিন কংক্রিট

রঙিন কংক্রিটের ব্যবহার ধূসর রঙের কংক্রিটের ধারণা পাল্টে নতুন করে সৌন্দর্যের ধারণার সূচনা করছে। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও বর্তমানে লোকালয় কিংবা বাড়িঘরের নানা কাজে এই কংক্রিটের ব্যবহার এর বহুমুখিতারই পরিচায়ক।

Continue reading