আপনার ওপেন কিচেনটি যেভাবে সাজাবেন

গৃহনির্মাণে কারো প্রধান লক্ষ্য হয় কেবলই বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি তৈরি করা, কারো সবটুকু মনোযোগ থাকে বাড়ির সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা বর্ধনে। বিলাসি মনের সৌন্দর্যপ্রিয় ভাবনাগুলো ছুঁয়ে যায় ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিংবা কিচেনে। ঘরখানি দেখে যেন মনে প্রশান্তি আসে, সেটাই তো আসল ভাবনা।

সেই ভাবনায় ঘরের রসুইখানা কিংবা কিচেনের অবস্থান কোথায়? নির্মাণশৈলির তাবৎ কারিকুরি যেন আটকে আছে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমেই। তবে আধুনিক স্থাপত্যকলা সৌখিন মানুষের সেই ভাবনাও দূর করেছে। কিচেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আবির্ভাব হয়েছে ওপেন কিচেন। বন্ধ দেয়ালের রান্নাঘরকে বিদায় বলে খোলা কিচেনে বিস্তর প্রশস্ত পারিপার্শ্বিকতায় রান্না করতে কার না ভালো লাগবে? উপরন্তু, আপনার রন্ধনশৈলির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।

তো এই ওপেন কিচেনখানি কীভাবে আরো একটু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবেন, সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা হয়ে যাক তাহলে।

স্টোরেজ করুন, তবে গোপন

ওপেন কিচেন যেহেতু আপনার বসার ঘরের সাথে মিশে যাবে, তাই সাধারণ রান্নাঘরের মতো এর সাজসজ্জা হলে চলবে না। বিশেষ করে, রান্নাঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী রাখবার শেলফ কিংবা স্টোরেজ ক্যাজুয়াল ঘরোয়া ডিজাইনে করতে হবে যেন পুরোটাই একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করে, কিচেন বলে আলাদা না হয়। এতে করে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে রান্নার মাঝে গল্প করা যাবে, মেহমানরাও ঘরোয়া পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।

লেআউট ঠিক করুন ভেবে-চিন্তে

ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ে লেআউট ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ধরবার পূর্বেই মাপজোখ ঠিক করে নিন এই বিষয়গুলোর– বসার স্থান থেকে চুলার দূরত্ব, হাঁটা-চলা করবার স্থানটুকু বসার ঘরের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, টিভির অবস্থানটা খুব কাছে হলো কিনা যেখানে রান্নার আওয়াজে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটবে ইত্যাদি। এই সবকিছু বিবেচনা করে ঘরের আকৃতি এবং আপনার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য বিষয়বস্তু অনুসারে ওপেন কিচেনটি ইংরেজি ইউ কিংবা এল আকৃতির হতে পারে।

জোন ভাগ করুন

ওপেন কিচেনের মানেই হচ্ছে বসার ঘর আর রান্নাঘরের তফাৎ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে হ-য-ব-র-ল হলে চলবে না। কিচেন আর বসার ঘর মিলিয়ে পুরোটাকে একটি ঘর বিবেচনা করে কয়েকটি জোনে ভাগ করুন– রান্না, ধোয়ামোছা, খাওয়া, বসা (টিভি দেখা) প্রভৃতি। ঘর একটিই, কিন্তু প্রতিটি জোন আলাদা ও স্বতন্ত্র। এবং সব জোনের মাঝে একটি কমন ফাঁকা স্থান থাকবে যেন একটিতে যেতে হলে অন্যটির সীমানা ভেদ না করতে হয়।

কিচেন জোন জানালার পাশে রাখুন

জোন ভাগ করার ক্ষেত্রে কিচেন জোনটি বহিঃস্থ দেয়াল বা জানালার দিকে রাখুন। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে এই কৌশল কাজে দেবে। তাছাড়া রান্নার মাঝে যদি খানিকটা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার ছোঁয়া চান তাহলে কিচেনের সাথের দেয়াল স্বচ্ছ কাচ দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এ দেয়ালটি বাড়ির পাশে থাকা বাগানের সাথে লাগোয়া হলে তো কথাই নেই।

কিচেনে কী কী সংযুক্ত করবেন ঠিক করুন

পানির কল, চুলা, এক্সহস্ট ফ্যান, স্টোরেজের মতো মৌলিক উপাদানগুলো ছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে কিচেনে উন্মুক্ত জায়গা অনুযায়ী বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করুন। যেমন– কিচেন আইল্যান্ড, ব্রেকফাস্ট বার, রেঞ্জ কুকার, স্টাইলিস ফ্রিজার ইত্যাদি।

মার্বেল, গ্লাস, স্টিল না উড?

উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে ঠিক করুন আপনার ওপেন কিচেনটির বিশেষত্ব। সাধারণ নির্মাণশৈলি অনুসরণ করলে কিচেনে আনুষঙ্গিক অংশগুলো তৈরি করা যায় স্টিল দিয়েই। মার্বেল বা কাচ, উভয়ের ব্যবহারই কিচেনকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করবে। মার্বেলের বাহারি ডিজাইন কিংবা কাচের স্বচ্ছতা ও চাকচিক্য, যেকোনো একটি বেছে নিন মর্জিমতো। তবে রাজকীয় ভাব আনতে কাঠই এখনো সবার উপরে। কালচে বা বাদামি রঙয়ের পাইন, মেপল, মেহগনি বা রোজউড হতে পারে আপনার ওপেন কিচেনের আভিজাত্যের প্রতীক।

উন্মুক্ত স্থান রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে

ওপেন কিচেন করলে কিচেন আর বসার ঘর, অর্থাৎ পুরো ঘরে এমন কোনো স্থান থাকা যাবে না যেখানে পৌঁছতে হলে বিশেষ কসরত করতে হয়, কোনো কিছু ডিঙিয়ে যেতে হয় কিংবা কিছুটা ঘুরে যেতে হয়। ওপেন কিচেনের ধারণাই তৈরি হয়েছে খোলামেলা আবহ তৈরি করার জন্য। তাই প্রয়োজনে ‘কিচেন-এলিমেন্টস’ কম রাখুন, তথাপি ঘরকে যথেষ্ট খোলামেলা রাখবার চেষ্টা করুন।

রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন

কিচেনের বিভিন্ন আসবাবের রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন, রং নির্ধারণ করুন বুঝে-শুনে। ঘরের দেয়ালের সাথে সাদৃশ্য আছে এরকম কোনো রং বাছাই করুন। বসার সোফা, টেবিল, ঘরের দেয়াল আর কিচেনের স্টোরেজ কিংবা অন্যান্য উপাদানের রঙের সিংক হলে সেটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। তবে রং নির্ধারণেও একটি নির্দিষ্ট নিশ খুঁজে নিতে হবে। যে রং বাছাই করবেন, পুরো ঘরের নিশ হবে সেটি। এক্ষেত্রে খুব বেশি রঙচঙে কিংবা চোখে লাগছে, এরকম রঙ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাদা, অফ-হোয়াইট, ধূসর, ক্রিমি, ডার্ক ইত্যাদি ওপেন কিচেন ডিজাইনের জনপ্রিয় রঙ।

আলোকসজ্জার কথা ভুলবেন না যেন

কিচেনের জোন ভাগ করার সময়ই আলোকসজ্জা ঠিক করে ফেলতে হবে। রান্নার জোনে যতটা আলো প্রয়োজন, ধোয়ামোছা কিংবা বসার জোনে ততটা নয়। আবার বসার জোনে যেরকম আলো চাই, ডাইনিং জোনে সেরকম নয় নিশ্চয়ই। যদি আপনার ওপেন কিচেনটি যথেষ্ট বড় হয়, তাহলে অন্যসবের সাথে খেয়াল রাখুন এ বিষয়েও, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা প্রাকৃতিক আলোর (জানালা, স্কাইলাইট, ইত্যাদি) ব্যবস্থা করুন যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে।

সর্বোপরি, একটি ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে সৌন্দর্য; অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে হিজিবিজি করে ফেলা নয়। আপনার রুচি ও সাধ্য অনুসারে যে নকশা ধরেই এগোন না কেন, ওপেন কিচেন যেন ওপেনই থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় ওপেন কিচেনের মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে।

আধুনিক কেবিনেট নকশায় নান্দনিক হেঁশেল

বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ত ঘর কোনটি, এমনটা প্রশ্ন করলে প্রথম উত্তরে হয়তো রান্নাঘরের কথাই আসবে মাথায়। আগেকার দিনের বাড়ির বাইরের রান্নাঘরগুলোর খোঁজ গ্রামাঞ্চলে যা-ও মেলে, শহরে তা বিলুপ্ত। শহরগুলোর বহুতল আবাসগুলোয় রান্নাঘর হয়েছে আরো ছোট, অনেকাংশেই বদ্ধ। বাড়ির সবচেয়ে ব্যস্ত ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের প্রতিই অবহেলা যেন আরো বেশি। তাই ভ্যাপসা, স্যাঁতস্যাঁতে, বদ্ধ রান্নাঘরে কাজ করে করে রাঁধুনির অস্থিরতার সূচক বাড়তি থাকাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আধুনিক সময়ে মানুষ এখন এই বিষয়কে দেখছে বেশ গুরুত্ব দিয়ে। রান্নাঘরের নকশায় তাই আসছে নতুনত্ব, যোগ হচ্ছে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

রান্নাঘর মানেই কিন্তু এখন কাটা, বাটা আর চুলোর গরম আঁচ বোঝায় না; খুব ভারী রান্নাঘরের চল এখন কমে আসছে অনেকটাই। ছোট ও এলোমেলো রান্নাঘরে কাজের ইচ্ছেটাও বেশিক্ষণ থাকে না, বিশেষ করে এই ব্যস্ত নগরজীবনের ছোটাছুটিতে। তাই আজকাল মাঝারি ফ্ল্যাট, বড় অ্যাপার্টমেন্ট বা ডুপ্লেক্স বাড়িগুলোতে রান্নাঘরের আকার বেশ বড় রাখা হয় ক্রেতাদের চাহিদার সাথে মিল রেখে। রান্নাঘরের জায়গাটুকু সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে কিচেন কেবিনেটের জুড়ি নেই বললেই চলে। তবে আধুনিক কিচেন কেবিনেট বা ওপেন কিচেন বানানোর জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। জেনে নেওয়া যাক এমন নান্দনিক কিচেন কেবিনেট নকশার কিছু খুঁটিনাটি।

রান্নাঘরের নকশায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর আকৃতি ও ব্যাপ্তি। যদি তুলনামূলক ছোট রান্নাঘর হয় যেখানে জায়গা কম, তাহলে স্ট্রেইট কিচেন বা সমান্তরাল নকশায় আগানো উচিত বলে মনে করেন নকশাকাররা। এতে কেবিনেটগুলো যেকোনো একপাশে বা উভয়পাশে থাকতে পারে, মাঝে অবশ্যই হাঁটাচলা ও প্রয়োজনে বসতে পারার মতো জায়গা থাকতে হবে। এমন রান্নাঘরে যদি অতিরিক্ত শেলফ বা প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করা হয় অথবা খুব বেশি উঁচু করে কেবিনেট তৈরি করা হয়, তাহলে ঘিঞ্জি বা দমবন্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তুলনামূলক বড় রান্নাঘরে ইংরেজি ইউ (U) বা এল (L) আকৃতির নকশা কাজে লাগানো যায়, যা বেশি সুবিধাজনক। যেকোনো নকশার শুরুতেই রান্নাঘরে থাকা বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডগুলো এবং প্লাম্বিং পয়েন্টগুলোর অবস্থান মাথায় রাখতে হবে। এসবের ওপর কেবিনেটের কোনো অংশ যেন সরাসরি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত, এতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন- ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, টোস্টার প্রভৃতি ব্যবহারে সুবিধা হবে।

রান্নাঘরের নকশা যেমনই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার জন্য যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে। কেবিনেটের একদিকে এক্সহস্ট ফ্যান লাগানো গেলে রান্নাঘরের গরম বাতাস বা ধোঁয়া দ্রুত বের হয়ে যেতে পারে, এতে চিটচিটে ভাবটাও বেশ খানিকটা কমে যায়। খোলামেলা রান্নাঘরের জন্য তুলনামূলক বড় আকারের জানালা রাখা যায়, যা কেবিনেটের ফ্রেম ও নকশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এতে রান্নাঘরের পরিবেশ যেমন তরতাজা থাকবে, তেমনই এর সাজে নান্দনিক ভাবও আসবে।

এবার আসা যাক কেবিনেটগুলোর নকশা কেমন হতে পারে, সেই আলোচনায়। বর্তমানে সাধারণ রান্নাঘর বা ওয়েট কিচেনের পাশাপাশি ড্রাই কিচেনের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। তাই কেবিনেট নকশায়ও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেবিনেটগুলো প্রয়োজন অনুসারে পৃথকভাবে ভাগ করে নেওয়া উচিত, এতে কোন কেবিনেটে কেমন জিনিস রাখা হবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, মূল্যবান ক্রোকারিজ/তৈজসপত্রের জন্য, যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত হয়, সেসব ওপরের দিকের বায়ুনিরোধক তাকে রাখা উচিত, যাতে ধুলোবালি না ঢুকতে পারে। দৈনন্দিন ব্যবহারের তৈজসপত্র স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি তাকে রাখা যায় অথবা পুলআউট ড্রয়ারেও রাখা যায়। মশলাপাতি ও অন্যান্য দরকারি ব্যবহারি জিনিস রাখার জন্য চুলা বা বার্নার স্টোভের পাশেই কিছু খোলা কেবিনেট রাখা যায়।

আধুনিক কিচেনের জন্য বর্তমানে কেবিনেটের সাথে পুলআউট ড্রয়ারের ব্যবহার হচ্ছে। একে নাইফ ড্রয়ার, তৈজসপত্র রাখার কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি ভেজিটেবল ট্রায়াঙ্গল বক্সও তালিকায় রাখা যায়।

কিচেনের নকশায় যে দিকটির কথাও আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা হলো ব্যবহারকারীর উচ্চতা। এদিকে যত্নবান হলে এর নিয়মিত ব্যবহারকারী কাজকর্মেও এক অন্যরকম স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন। এজন্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন বার্নার, কিচেন হুড, সিংকসহ পুরো রান্নাঘরেই ব্যবহারকারীর উচ্চতা ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। এর ফলে কাজে আসবে স্বস্তি, দৃষ্টিতে মিলবে শান্তি।

বর্তমানে পাশ্চাত্যধারার সাথে মিল রেখে অনেক বাসাবাড়িতে কিচেন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়। এটি মূলত একটি গ্রানাইট বা মার্বেল পাথরের টেবিলাকৃতি অংশ যার আশেপাশে টুল বা ছোট চেয়ার দিয়ে বসা যায়। ড্রাই কিচেন বা ওপেন কিচেনে এই টেবিল ব্যবহার করা যায়। অধিক স্থায়িত্বের জন্য গ্রানাইট ও মার্বেল পাথর দিয়ে কিচেন কেবিনেটের কাউন্টার-টপও তৈরি করা যায়।

জিপসাম বোর্ডের পাশাপাশি জুট স্টিক বোর্ড, ভিনিয়ার বোর্ড, প্লাইউড বা মেলামাইন বোর্ডও ব্যবহার করা যায় কেবিনেট তৈরির উদ্দেশ্যে। এসব বোর্ডের স্থায়িত্ব যেমন বেশি, তেমনি পরিষ্কার করাও বেশ সহজ, দাগও পড়ে না। জিপসাম বোর্ড অগ্নিনিরোধক ও মেলামাইন বোর্ড পানিনিরোধক, তাই এগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সাধারণ বোর্ডের সাথে পিভিসি ব্যবহার করেও কেবিনেট তৈরি করা যায়।

এভাবেই পরিপাটি ও ছিমছাম নকশার নান্দনিক হেঁশেলে মুগ্ধ হবে সবাই।

একটি আধুনিক রসুইঘর যেমন হওয়া উচিত

একটি আধুনিক রসুইঘর যেমন হওয়া উচিত

গ্রাম বাংলায় রান্নাঘরকে ডাকা হয় “পাক ঘর”। কারণ, এখানে শুধু খাবার পাক করা, মানে রান্না করাই হয় না বরং সবকিছু পরিচ্ছন্নও রাখতে হয়। তাই ঘরের সবচেয়ে জরুরী এই জায়গাটিকে সুন্দরভাবে ডিজাইন এবং ডেকোরেশন করার জন্য সবাই এখন সচেতন।

একটি আদর্শ রান্নাঘরের পাঁচটি অংশ থাকে –

প্যানট্রিঃ এখানে রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য বয়াম, কৌটা, বক্স ইত্যাদি থাকে খাবারদাবার সংরক্ষণের জন্য।

স্টোরেজঃ এখানে বাসনকোসন এবং রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম থাকে।

সিংকঃ এখানে সবজি, বাসনকোসন ইত্যাদি ধোয়া হয়।

প্রিপারেশনঃ এখানে শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি কাটা এবং প্রসেস করা হয়। সাধারণত একটা বড়সড় কাউন্টার অথবা অন্তত টেবিল থাকে এই অংশে।

কুকিংঃ এখানে চুলা এবং ওভেন রাখা হয় রান্নাবান্নার কাজে।

স্টোরেজ ছাড়া বাকি অংশগুলো সাধারণত পাশাপাশি থাকে যাতে রাঁধুনীর কাজ করতে সুবিধা হয়। অনেক বাসাতেই দেখা যায় ত্রিভূজের আকৃতিতে সাজানো হয় এগুলো। স্টোরেজ নিরাপত্তার খাতিরেই কিছুটা দূরে স্থাপন করা হয়।

তিন ধরণের শেইপ সবচেয়ে প্রচলিত রান্নাঘর তৈরির ক্ষেত্রে –

সমান্তরালঃ এক্ষেত্রে কিচেনের ওয়ার্কস্টেশনগুলো পাশাপাশি সমান্তরালভাবে সাজানো হয়।

এল-শেইপঃ এক্ষেত্রে ওয়ার্কস্টেশনগুলোর ভেতর দু’টি পাশাপাশি আর একটি যেকোন এক বাহু বরাবর হয়। এতে করে কোন সরঞ্জাম হাতের নাগালে পাবার জন্য বেশি দূরে চলাফেরা করতে হয় না।

ইউ-শেইপঃ এই ডিজাইনে ওয়ার্কস্টেশনগুলো ইংরেজি “ইউ” অক্ষরের আকৃতিতে থাকে। ফলে একটি ছোট জায়গার ভেতরেই সব কাজ সেরে ফেলা যায়।

তবে রান্নাঘর ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী হলো নিজেকে প্রশ্ন করা, যেমন- আপনি কীভাবে কাজ করে অভ্যস্ত এবং আপনি এতদিন যে ধরণের কিচেন ব্যবহার করেছেন সেখানে কি কি বিষয় আপনার অপছন্দ।

আসুন জেনে নেই কি কি উপকরণ ব্যবহার করে কিচেনের বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়।

শেলফ ও দরজা
কিচেন ক্যাবিনেট, শেলফ এবং দরজা বানাবার মূল উপকরণ হলো পিজম টিএফএল। এগুলো এতই মজবুত যে, ১০-১৫ বছর পর্যন্ত চলে যায়। ম্যালামাইনও ব্যবহার করেন অনেকে। সেক্ষেত্রে দরজার জন্য ১৮ মিঃমিঃ এবং ক্যাবিনেটের জন্য ১৫ মিঃমিঃ প্রস্থের ম্যালামাইন ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনি যদি শৌখিন হয়ে থাকেন এবং মাঝে মধ্যেই কিচেনের চেহারা পাল্টাতে পছন্দ করেন, তাহলে দরজার ম্যাটেরিয়েল এমন রাখতে পারেন যা কয়েক বছর পর পরই বদলানো যায়। বাকি ম্যাটেরিয়েলগুলো আরো দীর্ঘস্থায়ী হলেই ভালো হয়। এতে করে কিচেনের লুকটা বদলাতে পারবেন কিছুদিন পর পরই।

কাউন্টারটপ
সাধারণত তিন ধরণের ম্যাটেরিয়েল ব্যবহার করা হয় কাউন্টারটপ বানাতে –
লেমিনেটঃ কাউন্টার-এর ওপরের অংশটি হাই-প্রেশার লেমিনেট দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পাথরঃ কাউন্টারটি পাথরের বিভিন্ন রূপ দিয়ে বানানো হয়। সবচেয়ে প্রচলিত হলো গ্রানাইট, মার্বেল আর কোয়ার্টজ।
তবে আধুনিক কিচেনে ০.৮ সেঃমিঃ থেকে ১.৫ সেঃমিঃ প্রস্থের অ্যাক্রিলিক কাভার ব্যবহারের প্রচল বেশ বেড়েছে।

বেজবোর্ড
এই জায়গাতে আর্দ্রতা প্রতিরোধক ম্যাটেরিয়েল ব্যবহার করলে ভালো হয়। যেমনঃ লেমিনেট দিয়ে আবৃত প্লাইউড অথবা প্লাস্টিক।

কিচেন ছোট ! কি করি?
ছোট কিচেনের ক্ষেত্রে একটি ইনটেলিজেন্ট ট্রিক হলো দেয়ালের স্পেসকে কাজে লাগানো। আপনার কাউন্টারটপের ওপরে দেয়ালের ফাঁকা স্থানগুলোতে ক্যাবিনেট বসিয়ে সেখানে যাবতীয় তৈজসপত্র রাখতে পারেন। এতে ফ্লোরের জায়গা নষ্ট কম হবে এবং কিচেনকে বড় দেখাবে।

ডেকোরেশন
কিচেনে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কারণ, এখানে খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করতে হয় তা নাহলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি, রান্না থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া আর জলীয় বাষ্প কিচেনের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াকে কঠিন করে ফেলে। তাই একাধিক অথবা একটি বড় জানালা থাকা এবং তা খোলা রাখা খুব জরুরী। আরো ভালো হয় এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে। তাছাড়া দেয়ালে উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করলে একইসাথে আলোও রিফ্লেক্ট করবে বেশি আর কিচেনটি দেখতে বড় দেখাবে।

মনে রাখতে হবে, রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখা অপরিহার্য। কারণ, এখান থেকেই নিশ্চিত হয় পরিবারের সবার তৃপ্তি ও সুস্বাস্থ্য।