আপনার ওপেন কিচেনটি যেভাবে সাজাবেন

গৃহনির্মাণে কারো প্রধান লক্ষ্য হয় কেবলই বসবাস উপযোগী একটি বাড়ি তৈরি করা, কারো সবটুকু মনোযোগ থাকে বাড়ির সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা বর্ধনে। বিলাসি মনের সৌন্দর্যপ্রিয় ভাবনাগুলো ছুঁয়ে যায় ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিংবা কিচেনে। ঘরখানি দেখে যেন মনে প্রশান্তি আসে, সেটাই তো আসল ভাবনা।

সেই ভাবনায় ঘরের রসুইখানা কিংবা কিচেনের অবস্থান কোথায়? নির্মাণশৈলির তাবৎ কারিকুরি যেন আটকে আছে বেডরুম আর ড্রয়িংরুমেই। তবে আধুনিক স্থাপত্যকলা সৌখিন মানুষের সেই ভাবনাও দূর করেছে। কিচেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আবির্ভাব হয়েছে ওপেন কিচেন। বন্ধ দেয়ালের রান্নাঘরকে বিদায় বলে খোলা কিচেনে বিস্তর প্রশস্ত পারিপার্শ্বিকতায় রান্না করতে কার না ভালো লাগবে? উপরন্তু, আপনার রন্ধনশৈলির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।

তো এই ওপেন কিচেনখানি কীভাবে আরো একটু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবেন, সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা হয়ে যাক তাহলে।

স্টোরেজ করুন, তবে গোপন

ওপেন কিচেন যেহেতু আপনার বসার ঘরের সাথে মিশে যাবে, তাই সাধারণ রান্নাঘরের মতো এর সাজসজ্জা হলে চলবে না। বিশেষ করে, রান্নাঘরের ব্যবহৃত সামগ্রী রাখবার শেলফ কিংবা স্টোরেজ ক্যাজুয়াল ঘরোয়া ডিজাইনে করতে হবে যেন পুরোটাই একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করে, কিচেন বলে আলাদা না হয়। এতে করে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে রান্নার মাঝে গল্প করা যাবে, মেহমানরাও ঘরোয়া পরিবেশে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।

লেআউট ঠিক করুন ভেবে-চিন্তে

ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ে লেআউট ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজ ধরবার পূর্বেই মাপজোখ ঠিক করে নিন এই বিষয়গুলোর– বসার স্থান থেকে চুলার দূরত্ব, হাঁটা-চলা করবার স্থানটুকু বসার ঘরের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, টিভির অবস্থানটা খুব কাছে হলো কিনা যেখানে রান্নার আওয়াজে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটবে ইত্যাদি। এই সবকিছু বিবেচনা করে ঘরের আকৃতি এবং আপনার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য বিষয়বস্তু অনুসারে ওপেন কিচেনটি ইংরেজি ইউ কিংবা এল আকৃতির হতে পারে।

জোন ভাগ করুন

ওপেন কিচেনের মানেই হচ্ছে বসার ঘর আর রান্নাঘরের তফাৎ মিটিয়ে দেয়া। কিন্তু তাই বলে হ-য-ব-র-ল হলে চলবে না। কিচেন আর বসার ঘর মিলিয়ে পুরোটাকে একটি ঘর বিবেচনা করে কয়েকটি জোনে ভাগ করুন– রান্না, ধোয়ামোছা, খাওয়া, বসা (টিভি দেখা) প্রভৃতি। ঘর একটিই, কিন্তু প্রতিটি জোন আলাদা ও স্বতন্ত্র। এবং সব জোনের মাঝে একটি কমন ফাঁকা স্থান থাকবে যেন একটিতে যেতে হলে অন্যটির সীমানা ভেদ না করতে হয়।

কিচেন জোন জানালার পাশে রাখুন

জোন ভাগ করার ক্ষেত্রে কিচেন জোনটি বহিঃস্থ দেয়াল বা জানালার দিকে রাখুন। এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে এই কৌশল কাজে দেবে। তাছাড়া রান্নার মাঝে যদি খানিকটা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার ছোঁয়া চান তাহলে কিচেনের সাথের দেয়াল স্বচ্ছ কাচ দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এ দেয়ালটি বাড়ির পাশে থাকা বাগানের সাথে লাগোয়া হলে তো কথাই নেই।

কিচেনে কী কী সংযুক্ত করবেন ঠিক করুন

পানির কল, চুলা, এক্সহস্ট ফ্যান, স্টোরেজের মতো মৌলিক উপাদানগুলো ছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনে কিচেনে উন্মুক্ত জায়গা অনুযায়ী বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করুন। যেমন– কিচেন আইল্যান্ড, ব্রেকফাস্ট বার, রেঞ্জ কুকার, স্টাইলিস ফ্রিজার ইত্যাদি।

মার্বেল, গ্লাস, স্টিল না উড?

উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়ে গেলে ঠিক করুন আপনার ওপেন কিচেনটির বিশেষত্ব। সাধারণ নির্মাণশৈলি অনুসরণ করলে কিচেনে আনুষঙ্গিক অংশগুলো তৈরি করা যায় স্টিল দিয়েই। মার্বেল বা কাচ, উভয়ের ব্যবহারই কিচেনকে বেশ দৃষ্টিনন্দন করবে। মার্বেলের বাহারি ডিজাইন কিংবা কাচের স্বচ্ছতা ও চাকচিক্য, যেকোনো একটি বেছে নিন মর্জিমতো। তবে রাজকীয় ভাব আনতে কাঠই এখনো সবার উপরে। কালচে বা বাদামি রঙয়ের পাইন, মেপল, মেহগনি বা রোজউড হতে পারে আপনার ওপেন কিচেনের আভিজাত্যের প্রতীক।

উন্মুক্ত স্থান রাখুন যথেষ্ট পরিমাণে

ওপেন কিচেন করলে কিচেন আর বসার ঘর, অর্থাৎ পুরো ঘরে এমন কোনো স্থান থাকা যাবে না যেখানে পৌঁছতে হলে বিশেষ কসরত করতে হয়, কোনো কিছু ডিঙিয়ে যেতে হয় কিংবা কিছুটা ঘুরে যেতে হয়। ওপেন কিচেনের ধারণাই তৈরি হয়েছে খোলামেলা আবহ তৈরি করার জন্য। তাই প্রয়োজনে ‘কিচেন-এলিমেন্টস’ কম রাখুন, তথাপি ঘরকে যথেষ্ট খোলামেলা রাখবার চেষ্টা করুন।

রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন

কিচেনের বিভিন্ন আসবাবের রঙের ব্যাপারে যত্নবান হোন, রং নির্ধারণ করুন বুঝে-শুনে। ঘরের দেয়ালের সাথে সাদৃশ্য আছে এরকম কোনো রং বাছাই করুন। বসার সোফা, টেবিল, ঘরের দেয়াল আর কিচেনের স্টোরেজ কিংবা অন্যান্য উপাদানের রঙের সিংক হলে সেটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন হবে। তবে রং নির্ধারণেও একটি নির্দিষ্ট নিশ খুঁজে নিতে হবে। যে রং বাছাই করবেন, পুরো ঘরের নিশ হবে সেটি। এক্ষেত্রে খুব বেশি রঙচঙে কিংবা চোখে লাগছে, এরকম রঙ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সাদা, অফ-হোয়াইট, ধূসর, ক্রিমি, ডার্ক ইত্যাদি ওপেন কিচেন ডিজাইনের জনপ্রিয় রঙ।

আলোকসজ্জার কথা ভুলবেন না যেন

কিচেনের জোন ভাগ করার সময়ই আলোকসজ্জা ঠিক করে ফেলতে হবে। রান্নার জোনে যতটা আলো প্রয়োজন, ধোয়ামোছা কিংবা বসার জোনে ততটা নয়। আবার বসার জোনে যেরকম আলো চাই, ডাইনিং জোনে সেরকম নয় নিশ্চয়ই। যদি আপনার ওপেন কিচেনটি যথেষ্ট বড় হয়, তাহলে অন্যসবের সাথে খেয়াল রাখুন এ বিষয়েও, ইলেকট্রিক বাল্ব কিংবা প্রাকৃতিক আলোর (জানালা, স্কাইলাইট, ইত্যাদি) ব্যবস্থা করুন যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে।

সর্বোপরি, একটি ওপেন কিচেন ডিজাইনিংয়ের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে সৌন্দর্য; অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে হিজিবিজি করে ফেলা নয়। আপনার রুচি ও সাধ্য অনুসারে যে নকশা ধরেই এগোন না কেন, ওপেন কিচেন যেন ওপেনই থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় ওপেন কিচেনের মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে।

নির্মাণের নান্দনিকতায় কাচের ব্যবহার: সুবিধা ও অসুবিধা

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের গল্প। ইউরোপ জুড়ে শুরু হয়েছে শিল্প বিপ্লব। সকল শিল্পে আসছে নতুন ফর্মুলা। একই ফর্মুলাতে দ্রুত গতিতে যেকোনো কাজ সেরে ফেলার নেশায় বিভোর সারা বিশ্ব। প্রযুক্তির আশীর্বাদে তখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলছে বদলের গান। 

নির্মাণ শিল্পে এই ফর্মুলাকে বাস্তবায়ন করতে একের পর এক যোগ হতে শুরু করল নতুন উপকরণ। প্রথমে শুরু হল রি-ইনফোর্সড কংক্রিটের ব্যবহার যেটি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তারপর সামনে এলো ধাতুর ব্যবহার। সেটি একসময় রূপ নিল সংকর ধাতু স্টিলের জয়জয়কারে। আর স্টিলের হাত ধরে নির্মাণে নতুন করে ফিরে এল কাচ। স্টিলের কাঠামো ও কংক্রিটের মেঝের তৈরি ভবন দ্রুত মুড়ে দিতে কাচ হয়ে উঠল কমার্শিয়াল ভবনের পরিচায়ক। এই ঘরানার নির্মাণ এত দ্রুত ও এত সহজ যে, এখনও চলছে এর জয়জয়কার। 

কাচ একটি শিল্পজাত পণ্য। প্রকৃতিতে সরাসরি কাচ পাওয়া যায় না। তবে অনেক আগে থেকেই বালি গলিয়ে কাচ তৈরি শুরু হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বালি গলালে সরাসরি কাচ তৈরি করা যায়। তবে সময় যত গড়িয়েছে এই শিল্পকে সহজতর করেছে বিজ্ঞান। রোমান প্রক্রিয়া থেকে কাচ তৈরি সহজতর করতে ইসলামি কাচশিল্পীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। 

বর্তমানে কাচ তৈরি করা হয় সিলিকা বা কাচবালির সাথে সোডা, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ফেলস্ফার, সোডিয়াম নাইট্রেট ও কয়লার পাউডার মিশিয়ে। বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত দুই ধরনের কাচ দেখা যায়। সাধারণ কাচ ও ক্রিস্টাল গ্লাস। সাধারণ গ্লাস কাটলে সবুজাভ রং দেখা যায়। ক্রিস্টাল গ্লাস সেই তুলনায় একদমই পরিষ্কার। গ্লাস উৎপাদনের সময় এর পুরুত্ব (Thickness) নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ৩ থেকে ১২ মিলিমিটার পুরুত্বের কাচ খোলা বাজারে দেখা যায়। ৫ ও ১০ মিলিমিটার কাচ ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ভবনের বাইরে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরুত্বের গ্লাস প্যানেল ব্যবহার করা হয়। 

Urban Scene Skyline Morning View Metropolis Concept

ভবনে কাচের ব্যবহার জনপ্রিয় হবার অন্যতম প্রধান কারণ এর স্বচ্ছতা। ভবনের ভেতরে ধুলা প্রবেশ বন্ধ করে একই সাথে আলোর প্রবেশ নিশ্চিত করতে প্রথমে জানালায় কাচ ব্যবহার শুরু হয়। কাচের জানালাতে খরচও কমে যায় শিল্পপণ্য হিসাবে কাচ সহজলভ্য হওয়াতেই। কাচের সহজলভ্যতা ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যই কাচকে এতটা জনপ্রিয় করেছে। এই সূলভ মূল্যের কারণেই কাচের জানালা ভবনের বাইরের অংশের মূল উপাদান হয়ে ওঠার শুরু। 

ইট বা কংক্রিটের নির্মাণ একইসাথে যেমন একের বেশি উপাদান দাবি করে তেমনি এর পেছনে বিনিয়োগ করতে হয় প্রচুর সময়, অর্থ ও শ্রম। এছাড়া নির্মাণ শেষ হলে উপরে দিতে হয় ফিনিশিং ম্যাটেরিয়াল, যেমন- টাইলস বা মোজাইক। কাচ ব্যবহার এই তুলনায় রীতিমত ঝামেলামুক্ত। শুধুমাত্র স্থাপন ও পরিষ্কার করলেই নির্মাণ শেষ করে ফেলা সম্ভব বলে ব্যবসায়িক ভবনের ক্ষেত্রে এটি বেশি জনপ্রিয়। 

তবে কাচের ব্যবহারকে তুমুল জনপ্রিয় করেছে মূলত দুটি ঘটনা।

১. কাঠামো নির্মাণ শিল্পে ধাতুর জয়যাত্রা 

২. শিল্প বিপ্লবের পর নতুন নান্দনিকতার বিকাশ

প্রথমে বিশুদ্ধ ধাতু ও পরে সংকর অর্থাৎ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের নির্মাণে বড় জায়গা করে নেওয়াতে তাদের সাথে মানানসই নির্মাণ উপকরণের চাহিদা বাড়ে। প্রথমে কংক্রিট ও ইট দিয়ে চেষ্টা করা হলেও কম ভর, নির্মাণের সহজ প্রক্রিয়া এবং বদলে ফেলার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখেই কাচ হয়ে ওঠে ভবনের এক্সটেরিয়রের জন্য সবচেয়ে উপযোগী উপাদান। 

বর্তমানে প্যানেল আকারে আলাদা কাচ নির্মাণের জন্যই তৈরি করা হয় এবং এগুলো জুড়ে দিয়ে তৈরি হয় বিশ্বের প্রায় ৮০% বাণিজ্যিক ভবন। এছাড়া অন্দরসজ্জাতেও বিশেষ করে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সজ্জায় কাচ হয়ে উঠেছে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

আলোর সহজাত প্রবেশ যেমন কাচের আশীর্বাদ, তেমনি এক্ষেত্রে অভিশাপ হলো বাতাসের প্রবাহ রোধ। কাচ দিয়ে তৈরি ভবনের বহির্ভাগ সাধারণত নড়াচড়া করানো যায় না। তাই সরাসরি বাতাস এতে প্রবেশ করতে পারে না। আর সূর্যরশ্মি যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে প্রতিসরিত হয়ে কাচের ভেতর প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকে সেটি অনেক বেড়ে যায়। ফলে ভেতর থেকে খুব বেশি তাপ বাইরে আসতে পারে না। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় গ্রিনহাউজ প্রক্রিয়া। 

এই সমস্যার সমাধান করতে ভবনে প্রচুর পরিমাণে যান্ত্রিক তাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হয়। যেটি বাইরের বাতাসকে ঠাণ্ডা করে ভেতরে প্রেরণের পাশাপাশি ভেতরের গরম বাতাসকে সরাসরি বাইরে বের করে দেয়। এর ফলে ভবন ভেতরে ঠাণ্ডা হলেও বাইরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। 

কাচের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে এর প্রতিফলন। আলো এবং তাপ প্রতিসরণের পাশাপাশি প্রতিফলিতও হয় কাচে। ফলে সূর্যরশ্মির তাপ ভবনের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া কাচের আলোকচ্ছটা বা গ্লেয়ারেও (Glare) অনেক ক্ষেত্রে আশেপাশের মানুষের বেশ সমস্যা হতে পারে। আলোর প্রতিসরণ কমাতে অনেক ক্ষেত্রে টিন্টেড আউট বা অস্বচ্ছ বা আধা-স্বচ্ছ কাচ ব্যবহার করা হয়। এতে ভেতরের তাপমাত্রা কমলেও প্রতিফলনের হার বাড়ে। এই ধরনের কাচগুলো সাধারণত নীল বা সবুজ হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভবনের চেহারাতেও বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে এরকম অতিগ্রাসী রং। 

তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি। কাচ সুলভ ও সাশ্রয়ী হলেও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দাবি করে। বাংলাদেশে সূর্যের কৌণিক অবস্থান, বৃষ্টির আধিক্য, ঢাকা শহরের বাতাসে বিদ্যমান সাধারণের চেয়ে বেশি ধুলোবালি এবং বহুতল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে প্রযুক্তির অভাব বাংলাদেশে ভবনে ব্যবহৃত কাচের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় খুব দ্রুত। ৫-১০ বছরের মধ্যেই কাচের রং নষ্ট হওয়া এবং ফাটলের অভিযোগও শোনা যায় বেশ। তবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হলে এ সমস্যা কাটানো সম্ভব।

ভবনের ভেতরে বর্তমানে ফুল হাইট কাচের পার্টিশনের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম প্যানেল দিয়ে স্লাইডিং দরজা ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে। এগুলো দামে সাশ্রয়ী ও সহজ ব্যবহার্য হলেও ঘরের বাতাস প্রবাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবুও পরিবর্তনের সুবিধা এবং নিয়ন্ত্রণের সারল্য একে ইন্টেরিয়র শিল্পে একই অবস্থানে রাখবে অনেকদিন। 

ভবনের বাইরের ও ভেতরের পরিবেশের কথা বিবেচনা করলে কাচ দীর্ঘ সময়ের জন্য খুব উপকারী উপাদান নয়। কিন্তু নির্মাণ নান্দনিকতা, খরচের সাশ্রয় ও একই রকম স্বচ্ছ উপকরণ হিসেবে বিকল্প না থাকায় কাচের ব্যবহার অব্যাহত থাকবে আরও অনেকদিন। নির্মাণে কাচের ব্যবহারে তাই হতে হবে হিসেবি, হতে হবে পরিবেশ সচেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী। 

কাচের সাথে সোলার প্যানেল যুক্ত করে দেয়া কিংবা অপারেবল ডিজাইনের মতো কৌশল ব্যবহার করে কাচের প্রভাবকে যেমন পরিবেশবান্ধব করা যায়, তেমনি ভবনের সৌন্দর্যকে বাড়ানো যায় বহুগুণে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হলে ভবনের চেহারার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় ব্যবহার উপযোগিতাও। তাই উপকরণ হিসেবে কাচের কিছু সমস্যা থাকলেও প্রশিক্ষিত স্থপতির চিন্তাশীল নকশা, দক্ষ প্রকৌশলীর নির্মাণ এবং নির্মাতার সদিচ্ছা কাচকে করে তুলতে পারে ভবনের জন্য আশীর্বাদ। 

কীভাবে বাড়ির নকশা আপনাকে দেবে সর্বোচ্চ আলো বাতাসের নিশ্চয়তা?

স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হলেও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আমাদের তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

Continue reading

বাড়িতে ফুরফুরে বাতাস: কেমন ভেন্টিলেশন দরকার?

আমরা যখনই আমাদের স্বপ্নের বাড়ির কথা কল্পনা করি, তখনই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে আলো-বাতাসযুক্ত পরিষ্কার ঝকঝকে বাসা। বাসায় আলো-বাতাসের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকলে বাসাবাড়ির পরিবেশ থাকে সুস্থ এবং আমাদের জীবন হয়ে উঠে স্বাচ্ছন্দ্যময়। এই আলো-বাতাসের পরিমাণ নিশ্চিত করার নামই ভেন্টিলেশন।

আমাদের জানালা, দরজা, ঘুলঘুলি এসব কিছুই ব্যবহার করা হয় বাসার সঠিক ভেন্টিলেশনের জন্য। এছাড়াও এসব প্রাকৃতিক পদ্ধতি ছাড়াও অনেক কৃত্রিম পদ্ধতিতেও বদ্ধ জায়গায় বা ঘরে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। আসুন জেনে নিই ভেন্টিলেশন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় তথ্যগুলো।

ভেন্টিলেশন কী?

ভেন্টিলেশন হলো কোনো ঘরে বা অন্দর স্থানে বাতাসপ্রবাহ নিশ্চিত করা। আমাদের সারাদিন বাসায় থাকা এবং কাজ করার ফলে বাসার ভেতরে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ফলে বাতাস ভারী ও জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ হয়ে যায়। এই বাতাসের স্থানে অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিষ্কার বাতাস বাসার ভেতরে আনার প্রক্রিয়াকে বলে ভেন্টিলেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি দুই ঘণ্টায় একবার পুরো বাসার বাতাস পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন করে ফ্রেশ বাতাস আনতে হবে। এতে করে বাসায় দুর্গন্ধ কিংবা দূষিত পদার্থ ও রোগজীবাণু পুরাতন বাতাসের সাথে বের হয়ে যায়। এজন্য বাসায় উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের গুরুত্ব অপরিসীম।

ভেন্টিলেশনের প্রকারভেদ

আমাদের দেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বাতাস আসে, যা মূলত দক্ষিণ পশ্চিম থেকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অংশের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই ঘরে বাতাসের প্রাকৃতিক প্রবাহের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখা হয় অথবা জানালা দেওয়া হয়।

সাধারণত আমাদের বাসাবাড়িতে বাইরের বাতাস উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আনার জন্য তিন প্রকার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো মেকানিক্যাল, প্রাকৃতিক এবং মিক্সড পদ্ধতির ভেন্টিলেশন নামে পরিচিত। সাধারণত বাসাবাড়িতে আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিক্সড পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা হয়। আসুন দেখে নিই, এই ভেন্টিলেশন পদ্ধতির প্রকারভেদগুলো।

যান্ত্রিক বায়ুচলাচল হলো ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে বাইরের বায়ু প্রবাহিত করার পদ্ধতি। যান্ত্রিক বায়ুচলাচল সিস্টেমগুলোর মধ্যে সরবরাহের ফ্যান (যা বাইরের দিকে বাতাসকে কোনো বিল্ডিংয়ের দিকে ঠেলে দেয়), নিষ্ক্রিয় ফ্যান (যা বিল্ডিংয়ের বাইরে বায়ু টেনে নেওয়া এবং এর ফলে কোনো বিল্ডিংয়ে সমান বায়ুচলাচল প্রবাহ ঘটায়) বা উভয়ের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যান্ত্রিক বায়ুচলাচল প্রায়শই এমন সরঞ্জাম দ্বারা সরবরাহ করা হয় যা কোনো স্থান গরম এবং শীতল করার জন্যও ব্যবহৃত হয়।

প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল হলো পরিকল্পিত ওপেনিং এর (যেমন লুভ্যর, দরজা এবং উইন্ডো) মাধ্যমে কোন বিল্ডিংয়ের মধ্যে বাইরের বাতাসের উদ্দেশ্যমূলক প্যাসিভ প্রবাহ। প্রাকৃতিক বায়ুচলাচলে বাইরের বায়ু সরানোর জন্য যান্ত্রিক সিস্টেমগুলোর প্রয়োজন হয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক ঘটনা যা বাতাসের চাপ বা স্ট্যাক এফেক্টের উপর নির্ভর করে।

মিক্সড-মোড বায়ুচলাচল সিস্টেমগুলো যান্ত্রিক এবং প্রাকৃতিক উভয় প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। যান্ত্রিক এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলো একই সময়ে বা দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বছরের বিভিন্ন ঋতুতে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল প্রবাহ যেহেতু পরিবেশের অবস্থার উপর নির্ভরশীল, তাই এটি সর্বদা উপযুক্ত পরিমাণে বায়ুচলাচল সরবরাহ করতে পারে না। এক্ষেত্রে, যান্ত্রিক সিস্টেমগুলো প্রাকৃতিকভাবে চালিত প্রবাহকে পরিপূরক বা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হতে পারে।

কেন পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন দরকার?

সঠিক বায়ুচলাচল আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং আরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার বাড়িকে আর্দ্রতা, ধোঁয়া, রান্নার গন্ধ এবং অন্দরের দূষণকারী পদার্থগুলো থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। স্ট্রাকচারাল বায়ুচলাচল অ্যাটিকের তাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ক্রলস্পেস এবং বেসমেন্টে স্যাঁতসেঁতে পরিমিত করে এবং ননইন্সুলেটেড দেয়ালকে আর্দ্রতা থেকে মুক্ত রাখে।

সঠিক বায়ুচলাচল হলে বায়ু দূষণকারী জীবাণুরা আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, আপনার বাড়িতে বায়ুপ্রবাহ থাকলে রান্না করা বা পোষা প্রাণী হিসাবে কোন অযাচিত গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

বায়ুচলাচল এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরো একটি কারণ হলো, এটি আপনার বাড়িতে আর্দ্রতা কতটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করে।

একটি ভালো বায়ুচলাচল ব্যবস্থা দূষণকারী পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া এবং আর্দ্রতা ঘরের ভেতর থেকে বের করতে সহায়তা করবে। কিন্তু আমাদের প্রায়ই দুর্বল বায়ুচলাচলের স্থানে থাকতে হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বাড়িতে এবং কর্মক্ষেত্রে ভালো বায়ুচলাচল ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এতসব গুরুত্বপূর্ণ কারণে আমাদের ঘরে সুস্থ আলো এবং সর্বোপরি বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমাদের বাড়ি হয়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের মতো আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর।