দেয়ালে কী লাগাবেন- মিরর নাকি পেইন্টিং?

রুচিশীল মানুষের বাড়ি নির্মাণে যতখানি ভাবনা, বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন আর সাজসজ্জায়ও ঠিক ততখানিই। ঘরের দেয়াল যদি হয় আকর্ষণীয় পেইন্টিং কিংবা দর্শনীয় সব মিররের সমাহার, তা সৌন্দর্যই বাড়ায় না কেবল, দেয় মানসিক প্রশান্তিও। ঘরের দেয়ালসজ্জায় মিরর ব্যবহার করবেন নাকি পেইন্টিং- সেটা ঠিক করুন নানারূপ ঘরসজ্জার মিরর আর পেইন্টিংয়ের সাথে পরিচিত হয়েই।

হরেক রকম মিরর ভাবনা

ঝকঝকে গ্যালারি (Glimmering Gallery)– ঘরের দেয়াল সাজানোর একটি সহজ কিন্তু চমৎকার উপায় হলো নানা আকৃতির মিররের ব্যবহার। একই দেয়ালে পাশাপাশি ভিন্ন রঙ, আকার, আকৃতি আর ফ্রেমের মিরর স্থাপন করে দেয়ালকে দিতে পারেন নান্দনিকতার ছোঁয়া।

অফ সেন্টার মিরর (Off Center Mirror)- ঘরের যেকোনো দেয়ালে মিরর লাগানোর প্রচলিত নিয়ম হলো মাঝখান বরাবর স্থাপন করা। টেবিল, শো-কেস অন্য কোনো আসবাবপত্রের উপরে ঠিক মাঝ বরাবর মিরর স্থাপন করার রীতিতে ভুল নেই কোনো। তবে আজকাল মধ্যরেখা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মিরর সাঁটানো হচ্ছে দেয়ালে, যা দেখতে বরং অধিকতর সুন্দর।

মিররড অবজেক্ট (Mirrored Object)– সাধারণ বড় আকারের অর্ধবৃত্তাকার মিরর একটি আয়তাকার বা বার্গাকার মিররের তুলনায় দেয়ালের চেহারাই পাল্টে দেয়, প্রচলিত সজ্জার বাইরে গিয়ে নতুনত্ব আনে। অর্ধবৃত্তের ব্যাস বরাবর সমান দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তু (ওয়ালম্যাট) দেয়ালে টাঙালে সেটি মিররকেও পূর্ণতা পাইয়ে দেয়।

মিররড ডোর (Mirrored Door)– মিররড ডোরের প্রচলন আজকাল বেশ বেড়েছে, কেবল এর নান্দনিক কদরের জন্যই নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এখানে। সাতসকালে অফিসে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে যেতে হয় যাদের, প্রায়ই সময়ের কারণে নিজের সাজসজ্জার দিকে লক্ষ্য করা হয় না। পুরো দরজা জুড়ে একটি বড় আকারের মিরর থাকলে তাই ঘর থেকে বেরোনোর পূর্বে একনজর নিজেকে দেখে নিলে সহজেই পোশাকের বা অঙ্গসজ্জার ত্রুটি ঠিক করে ফেলা যায়।

হ্যাংয়িং উইন্ডো (Hanging Window)– মিররড ডোরের মতো মিররড উইন্ডোর কদরও বাড়ছে। ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো আর স্বচ্ছ কাচের সতেজকারক আবহের জন্য জানালায় মিররের ব্যবহারই এখন স্বাভাবিক। তবে মিররড উইন্ডোর মধ্যে সর্বশেষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উদ্ভাবন হলো হ্যাংয়িং উইন্ডো। দেয়ালে লাগানো গোলাকার মিরর দেখতে সাধারণত ভালোই লাগে। তবে সেটিকে নান্দনিক করে তোলে এই হ্যাংয়িং উইন্ডো। চিকন আর কালো ফ্রেমের গোলাকার একটি মিররকে মাঝামাঝি উচ্চতায় স্থায়ীভাবে না লাগিয়ে বরং ঝোলানো হয় কোনোকিছু থেকে। আর এই ঝুলে থাকা মিররটি যেন কাজ করে একটুকরো ঝুলন্ত জানালা হিসেবে।

ইনভিজিবল মিরর (Invisible Mirror)– ইনভিজিবল বা অদৃশ্য মিরর বলতে মূলত অত্যন্ত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল মিররের কথা বোঝা হয়েছে। ঘরে কোনো ফায়ারপ্লেস থাকলে, কিংবা অন্য কোনো মাঝারি উচ্চতার আসবাবের ওপরে, বিশেষ করে টেবিলের উপরে এই মিরর স্থাপন করা হয়। এটি এতটা স্বচ্ছ থাকে যে হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে জানালা দিয়ে পাশের ঘরে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

পেইন্টিংয়ের রকমফের

ওম্বার ওয়াল (Ombre Wall)– ওম্বার ওয়াল পেইন্টিংয়ের মূল উপজীব্য হলো ঘরের সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক আবহ আনা। এই পেইন্টিংয়ে ঘরের দেয়ালকে মনে হতে পারে স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি, পশুর লোম, মসৃণ সবুজ ঘাসের মাঠ, নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো মেঘের দল, কিংবা সকালবেলা সূর্যাস্তের কাঁচা আলো। এই পেইন্টিংয়ের মূল উপকরণ  গ্রেডিয়েন্ট (Gradiant) রঙ, যার মাধ্যমে রঙের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাবল্য বাড়িয়ে কমিয়ে এসব ফুটিয়ে তোলা হয়।

পোলকা ডট ওয়াল (Polka Dot Wall)– হলিউড সিনেমা সুইসাইড স্কোয়াড দেখে থাকলে আপনার পোলকা ডটের সাথে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই। এ সিনেমায় রহস্যময় পোলকা ডট ম্যান তার শরীর থেকে নির্ধারিত সময় পরপর পোলকা ডট ছাড়ে যা দেখতে রঙিন ও চোখধাঁধানো। ঘরের দেয়ালেও সেই পোলকা ডটগুলো পেইন্টিং আকারে বসিয়ে দিতে পারেন। একটু নিগূঢ় ডিজাইনের জন্য ছোট আকৃতির ডট আঁকা যেতে পারে একই রঙের উপর। আবার আপনি যদি চান রঙের খেলা, তাহলে বড় বড় পোলকা ডট ভিন্ন ভিন্ন রঙে পেইন্ট করাই শ্রেয়।

জলরঙ (Water Color)– দেয়ালে জলরঙের ব্যবহার একসময় মানুষের ভাবনার বাইরে থাকলেও এখন তা বেশ প্রচলিত। বিশেষ করে শোবার ঘরে বিছানা বরাবর দেয়ালকে জলরঙে রাঙিয়ে ফেললে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়বে মন ভালো করে দেয়া এক দৃশ্য।

ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ (Vertical Stripe)– ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপ বা উল্লম্ব ডোরা সাধারণত বসার ঘরের জন্য উপযোগী একটি পেইন্টিং ডিজাইন। উজ্জ্বল মনোক্রোম্যাটিক (Monochromatic) কোনো রঙের উপর হালকা, প্রশান্তিদায়ক কোনো রঙ ব্যবহার করে লম্বালম্বি স্ট্রাইপ এঁকে এই পেইন্টিং সম্পন্ন করা হয়। বসার ঘরের সাজসজ্জায় এটি ভিন্নতা আনে।

সলিড কালার ব্লক (Solid Colour Block)– একটি ঘরের দেয়ালের রঙ সাধারণত একই রঙে করা হয়। তার উপর নানা ডিজাইন করা হয়ে থাকে। অবশ্য আপনি যদি চান সলিড কালার রেখেই দেয়ালে নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘরের মাঝামাঝি, বিশেষ করে শোবার ঘর হলে বিছানা বরাবর, বিছানার আকার অনুযায়ী একটি সলিড কালার ব্লক পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন ঘরের দেয়ালে। এতে একই রঙের একঘেয়েমি কাটে, এবং এক রঙের মাঝে অন্য রঙের সলিড ব্লকের উপস্থিতি ঘরের অ্যাম্বিয়েন্ট বদলে দেয়।

রেইনবো স্ট্রাইপ (Rainbow Stripe)– একটি-দুটি রঙ বাছাই করতে পারছেন না? চাইলে ঘরের দেয়ালে নিয়ে আসতে পারেন রংধনুর সাতটি রঙই। রেইনবো স্ট্রাইপ নামে পরিচিত এই পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে ঘরের দেয়ালের পরতে পরতে রংধনুর সাতটি রঙ দিয়ে এঁকে ফেলতে পারেন। কেউ কেউ একে রংধনুর মতো অর্ধচন্দ্রাকার করে আঁকেন, অনেকে আবার সমান্তরালেই ডিজাইন করে ফেলেন। রুচি ও রঙের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে স্ট্রাইপগুলোর প্রস্থ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

মিরর কিংবা পেইন্টিং, দুটিই ঘরের দেয়ালের সজ্জায় সমান উপযোগী, যদি আপনি তা ঘরের আসবাবপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করতে পারেন। যেহেতু দুটো সম্পর্কেই জেনে গেলেন, কোনটি আপনার ঘরের জন্য যুতসই হবে সেই সিদ্ধান্ত এখন আপনিই নিতে পারবেন।

Home Painting Solution

পেইন্টিংয়ের সাত সতেরো

আপনার ঘরে কেমন পেইন্টিং রাখবেন এটা জানার আগে জানতে হবে কেন পেইন্টিং রাখবেন।

আপনার ঘরে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এই বস্তুটি রাখার দরকার কী? কারণ, আপনি একজন রুচিশীল মানুষ এবং আপনার রুচির পরিচয় বহন করে আপনার ঘরের সৌন্দর্য। আর যখন কেউ দু’লাখ টাকা দামের ক্ষুদ্র একটা পেইন্টিং নিয়ে এসে নিজের ঘরে টাঙায়, তখন সেই পেইন্টিংযের সামনে অন্য যেকোন শো-পিস বা দেয়াল একেবারেই ম্লান হয়ে যায়। আপনি হয়তো খুব দামী রঙ করেছেন একটা দেয়ালে কিন্তু সেই দেয়াল ততক্ষণ পর্যন্ত সুন্দর না যতক্ষণ না আপনি একটা শো-পিস বানাচ্ছেন। এ কারণেই পেইন্টিং খুবই জরুরী। আপনি হয়তো ভাবছেন দেয়ালে একটা ঘড়ি টাঙাবেন কারণ সেই ঘড়িটি প্রয়োজন। অথচ পেইন্টিংযের প্রয়োজনীয়তা তার থেকেও বেশি! একটু ভেবে দেখুন, একটা ঘড়ি কেবল সময় দেবে। আর একটা পেইন্টিং আপনাকে দেবে মনের খোরাক! আর এই মনের খোরাক পেইন্টিং নিয়েই আমাদের আলোচনা।

Painting At Home

পেইন্টিংযের প্রকারভেদঃ

পেইন্টিং অনেক ধরণের হয়। যেমনঃ জল রঙ, তেল রঙ, এক্রেলিক অথবা মিক্স মিডিয়া। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী পেইন্টিং রাখতে পারেন ঘরে। এক্ষেত্রে জল রঙের চাইতে এক্রেলিক বা মিক্স মিডিয়া একটু বেশিই দামী। কিন্তু একটা জলরঙের পেইন্টিং জয়নুল আবেদীন আঁকলে যা দাম, সাধারণ কোন আর্টিস্ট আঁকলে তেমন দাম হবে না। এটা আসলে শিল্পীর অংকনশৈলী ও পরিচিতির ওপর নির্ভর করে। পৃথিবীতে এমনও অনেক পেইন্টিং আছে যেগুলো বাংলাদেশের মোট বাৎসরিক বাজেটের চেয়েও বেশি দামী! তার মানে এই নয় যে, এমন পেইন্টিং দুনিয়াতে একটিই আছে, বরং এর এন্টিক গুণ বিচার করে এমন দাম নির্ধারিত হয়। জল ও তেল রঙের পেইন্টিং সাধারণত কম মূল্যের হয় কারণ এর রঙের দাম কম। এক্রেলিক সেই তুলনায় বেশ দামী রঙ। আবার ক্যানভাস বিচার করেও পেইন্টিংযের দাম নির্ধারিত হয়। নিজ নিজ পছন্দ ও সামর্থ্য বিচার করে পেইন্টিং নির্ধারণ করবেন।

পেইন্টিং ফ্রেমঃ

পেইন্টিং ফ্রেম কেমন হবে এটার একটা ধারণা পাবেন পেইন্টিংযের ধরণ বিচার করে। পেইন্টিং যদি অনেক রঙ্গিন হয়, তাহলে এর ফ্রেমও জমকালো হওয়া চাই। ধরুন, আপনার বাসায় যদি একটি সাধারণ ফ্রেমে বেশ দামী একটি পেইন্টিং রাখেন, তাহলে কিন্তু সেটা মোটেও ভাল দেখাবে না। মোটকথা পেইন্টিংযের জবরজং রুপের সাথে এর ফ্রেমটিও হওয়া চাই মানানসই। এক্ষেত্রে বাজারে নানা পদের বেশ কিছু ফ্রেম পাওয়া যায়। কোনটা সোনালী, কোনটা রুপালী, কোনটা আবার কালো! সবগুলোতেই দেখবেন নানা রকমের কারুকাজ থাকে। কোনটা বেশ জটিল ফুলের, কোনটা চায়নিজ, কোনটা আবার ইসলামিক আর্টভিত্তিক। এক্ষেত্রে একটা গ্রামের দৃশ্যকে নিশ্চয় আপনি ইসলামিক ছাঁচের কোন ফ্রেম উপহার দেবেন না! আবার ইসলামিক কোন ক্যালিওগ্রাফিতে নিশ্চয় আপনি চায়নিজ কোন ডিজাইনের ফ্রেম দেবেন না! তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এজন্যে ফ্রেম বুঝে নিতে হবে। ফ্রেমের কিছু ম্যাটেরিয়েল ভিন্নতা আছে। সেগুলো হলঃ এমডিএফ এর তৈরি ফ্রেম, কাঠের ফ্রেম, পিভিসি ফ্রেম, এলুমিনিয়াম ফ্রেম।

এমডিএফ হল কম্প্রেসড ম্যাটেরিয়েল যা দিয়ে প্রায় সব ধরণের ফার্নিচার বানানো যায়। এটিকে যেমন খুশি তেমন আকৃতি দেয়া যায়। ফলে এর ব্যবহার বহুলভাবে প্রচলিত। বিভিন্ন ডুকো পেইন্টের মাধ্যমে সুন্দর রঙিন আবহে ফুটিয়ে তোলা যায় যে কোন পেইন্টিং। তবে এমডিএফ এর যম হল পানি! পানির বিন্দু পরিমান স্পর্শ পেলেই এটি ফুলে যায় ও কদিন পরেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই ধরণের ফ্রেম ব্যবহার করলে অবশ্যই পানি থেকে দূরে রাখতে হবে ফ্রেমটি।

কাঠের ফ্রেমে ছবি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। বিভিন্ন রকমের কাঠ আছে। তবে গর্জন ফ্রেম ব্যবহার সবচেয়ে লাভজনক কারণ এটি অনেকদিন টিকে থাকে। কাঠের ফ্রেমে নানা রকমের বার্ণিশ দেয়া হয়। কেউ আবার কাঠের রঙেই রেখে দেন। কেউ ডার্ক ওয়ালনাট রঙটা পছন্দ করেন। কেউ বা আবার একটু লালচে বার্ণিশ পছন্দ করেন। আপনার পছন্দসই রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন যেকোন কাঠের ফ্রেম। এই কাঠের ফ্রেমগুলো ব্রিটিশ আমলে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত ছিল। তখন ছবি মানেই ছিল কাঠের ফ্রেম।এতে নানা রকমের কারুকাজ করা হত। বর্তমানে কাঠের ফ্রেমে কারুকাজে অত্যাধুনিক সিএনসি রাউটার ও লেজার ব্যবহার করা হয়। ফলে আরো অনেক সহজে তৈরি করা যায় বিভিন্ন রকমের ফ্রেম। তবে কাঠের ফ্রেমের সবচেয়ে বড় শত্রু হল পোকা। একবার কোনভাবে এতে পোকা ধরলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায় এই ফ্রেম। ভেতরে থাকা মূল্যবান ছবিটির অবস্থাও একই হয়। তাই প্রতিদিন এই ফ্রেমের নিচে কাঠের গুঁড়ো পড়ে আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। নইলে একদিন দেখবেন লাখ টাকা দামের পেইন্টিং কেটে নষ্ট করে ফেলেছে কাঠের পোকা! কাঠের ফ্রেমে পানিতেও বেশ ক্ষতি সাধিত হয়। তাই যতটা সম্ভব আলো-বাতাসপূর্ণ এলাকায় একে রাখা উত্তম। নইলে সহজেই এতে পচন ধরবে।

Wall Painting at Home

পিভিসি হল পলিভিনাইলক্লোরাইড ম্যাটেরিয়েল। এটি প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। অনেকেই একে প্লাস্টিক উড বলেই চেনেন। এটি এমনই এক ম্যাটেরিয়েল যাকে যেকোন আদলে কেটে ফেলা যায়, কারণ এটি যেমন নমনীয়, তেমনই টেকসই। আগুনে না পুড়লে এই পিভিসি দিয়ে তৈরি করা ফ্রেম কয়েকশো বছরেও কিছুই হবে না! শুধু রঙটা একটু চটে যেতে পারে। এছাড়া একেবারেই নতুনের মতই থাকবে। সাধারণত আঠারো মিলিমিটার পুরুত্বের পিভিসি দিয়ে ফ্রেম বানানো হয়। এরপর একে এমডিএফ ম্যাটেরিয়েলের মতো করেই রঙ করা হয়। ভাল মতো পুটিং দিয়ে স্প্রে রং করে দিতে পারলে এর কোন জয়েন্টই দেখা যায় না। এবং এটি অনেক বছর অটুট থাকে। এটি পানিতে নষ্ট হয় না। একে পোকায় ও কাটে না। বাজারেও সহজলভ্য। তবে সাধারণত একে আপনি ফ্রেম আকারে পাবেন না। একে ফ্রেমের আকার দিয়ে নিতে হবে। একবার তৈরি হয়ে গেলে চলে যাবে বছরের পর বছর।

এলুমিনিয়াম ফ্রেম একটু দামী অথচ এটিই বর্তমানে সবচেয়ে সহজলভ্য ও প্রচলিত (যদিও বাংলাদেশে এখনো তেমন দেখা যায় না)। এলুমিনিয়াম ফ্রেমের কয়েকটা রঙ নির্দিষ্ট তাই এর ভেতর তেমন ব্যাতিক্রম চোখে পড়ে না। বড় আকারে ছবি হলে তখন এলুমিনিয়াম দিয়ে ফ্রেমিং করা হয় যেন ছবিটি টিকে যায় অনেক বছর।

 

ফ্রেমের এতো কিছু জানালাম অথচ ফ্রেমের পেছনের অংশ নিয়ে কোন কথা বলব না তা কি হয়? সাধারণত পেইন্টিং দেয়ালে ঝোলানো হয় তাই এটি দেয়ালে ঝোলানোর জন্যে বিভিন্ন ধরনের আংটা ব্যবহার করা হয় পেছনদিকে। অনেক সময় দু’দিকে দু’টো পেরেক লাগিয়ে মাঝে সুতো দিয়েও ঝুলিয়ে দেয়ার চল দেখা যায়, যদিও এটা বেশ পুরোনো পদ্ধতি। এতে পেইন্টিংটা একটু নিচের দিকে নামানো থাকে। দেখতে সুবিধে হয়। কিন্তু বর্তমানে এটা দেখা যায় না তেমন। এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে।

Ancient Way of Installing Paintings

পেইন্টিং শুধু ফ্রেম আর ছবিই নয়, পেইন্টিংযের আরো কিছু প্রয়োজনীয় অংশ থাকে। এর মাঝে একটি হল পেইন্টিংযের চারপাশের সাদা অংশ যা তৈরিতে সাধারণত পিভিসি ব্যবহার করা হয়। এটি পাতলা পলিভিনাইল ক্লোরাইড বোর্ড কেটে বানানো হয়। এর প্রতিটি কোন পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে কাটা হয় যা ছবির সাথে মিলে যায় এবং দেখতে খুবই সুন্দর দেখায় ছবিটা। অনেক ক্ষেত্রে এটি কালো মাউন্ট বোর্ড (কালো বোর্ড) দিয়েও করা হয়। এর মূল কাজ হল আয়না থেকে ছবিকে দূরে রাখা যেন আয়নার সংস্পর্শে এসে ছবি নষ্ট না হয়ে যায়।

Wall Painting Frame

 

এবার আসি আয়নার কথায়। ছবির আয়না ছবিটিকে নষ্ট হওয়া বা দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করেছেন যে, বাজারে যে সব আয়না আছে এগুলোতে আলো পড়লে আপনার ছবি এতে প্রতিবিম্ব তৈরি করে? যদি এটা খেয়াল করে থাকেন, তবে দেখতে পাবেন বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোন আয়না নেই যাতে আমাদের রিফ্লেকশন পড়ে না। কিন্তু এই রিফ্লেকশন পড়ে না এমন কাঁচও পাওয়া যায়। একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। এই সব কাঁচের মধ্য দিয়ে আপনাকে নয়, ছবিটিকেই দেখা যাবে। একটু সাদাটে হয়ে যায় কিছু ক্ষেত্রে। তবে ছবিটি বোঝা যায় ভালোমত। বাইরের আলো এতে প্রতিফলিত হতে পারে না। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন গ্লাস হাউজে এমন এন্টি-রিফ্লেক্টিভ কাঁচ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মূল্য আকাশ ছোঁয়া! এসব কাঁচের মধ্যে দিয়ে যে ছবি দেখা যায়, সেটি কোন আলো প্রতিফলিত করে না বলেই এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

লেমিনেশনঃ

অনেক সময় ছবি ফ্রেমের ভেতর অনেক কৌশল করে রাখার পরও নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছবিটি লেমিনেশন করে নেয়া যেতে পারে। বাজারে অনেক রকমের ম্যাট লেমিনেশন আছে যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার ছবির স্থায়ীত্ব বেড়ে যাবে অনেক বছর। সাধারণত বড় ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এটি বেশি করা হয়। বড় ছবিগুলোর লেমিনেশন পদ্ধতি একটু আলাদা। ছবিতে দেখলেই বুঝতে পারবেন। এই লেমিনেশন ব্যবহার করলে এটি বাতাসের আর্দ্রতা থেকে মুক্ত থাকবে অনেক দিন ধরে।

Lamination Process

কীভাবে ছবি বসাবেন?

Painting position

ছবি সব সময় চোখে দেখা যায় এমন উচ্চতায় বসানো হয়। এটি চোখের জন্য আরামদায়ক। পুরো ছবিটা দেখা যায়। কিন্তু এই নিয়ম সব সময় মেনে চলা যায় না। সাধারণত এটা ছোট ছবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু একটা হল ঘরে যদি ছবি ঝোলাতে হয়, তাহলে অনেক সময় ছোট ছবিকে মানুষের উচ্চতার সমান বা তারও বড় স্থান নির্বাচন করতে হয়। তখন ছবি দেখার জন্যে আগের দূরত্বের চাইতে বেশি দূরত্ব রাখতে হয়।

painting size

অনেক সময় ডাবল হাইট স্পেস হলে রেলিং এ দাঁড়িয়ে বড় ছবি উপভোগ করার ব্যবস্থাও করতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ছবি যত বড়, ব্যক্তিকে ততটাই দূরে দাঁড়িয়ে ছবিটিকে দেখতে হবে। তাই ছোট ঘরের ভেতর বড় আকারের ছবি না রাখাই উত্তম।

 

ছবির ওপর আলো কেমন হবে?

painting and reflection

ছবির ওপর সাধারণত সাদা আলো দেয়া উচিৎ; বেশি হলুদাভও নয়, আবার নীলচে সাদাও নয়। এই দুই আলোতে ছবির আসল রঙ বোঝা যায় না। তাই সাদাটে আলো বা যাকে আমরা বলি সূর্যালোকের মত, আলোতে পেইন্টিং ভাল থাকে। দেখতেও ভাল লাগে। ওপর থেকে স্পট লাইট ব্যবহার করতে পারেন। আবার হ্যাঙ্গিং স্পটও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রুচিশীলতার পরিচয় দেয়া আবশ্যক।

প্রতিটি ছবিই এক একটি মূল্যবান শিল্প যা মানব মনের ওপর দারুন প্রভাব বিস্তার করে। একে কেমন করে উপস্থাপন করবেন, কেমন করে একে সাজিয়ে তুলবেন সেটার ওপর নির্ভর করে আপনার ঘরের ইন্টেরিয়র দেখতে কেমন হবে। বলা যায়, একটি পেইন্টিং একটি ঘরকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই একে অবহেলা করার কোন অবকাশ নেই।