বাড়ির নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ

প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে তার জীবনের কষ্টার্জিত সকল সঞ্চয় দিয়ে তার কল্পলোকের বাড়িটি নির্মাণ করা। আর এ বাড়ি নির্মাণের প্রথম এবং অন্যতম প্রধান ধাপ হলো নকশা অনুমোদন। ঢাকায় এই অনুমোদন প্রদানের কাজটি করে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেককেই পোহাতে হয় নানাবিধ ঝক্কি-ঝামেলা।

প্লটের প্রকারভেদ

প্রথমেই ধারণা নেয়া  প্রয়োজন প্লটের প্রকারভেদ সম্পর্কে। রাজউকে সাধারণত তিন ধরনের প্লটের শ্রেণীবিভাগ করা হয়-

  • রাজউকের প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।
  • রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের প্লটঃ এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা শাখার প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
  • ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটঃ এক্ষেত্রে রাজউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র নিতে হবে। রাজউক এলাকাভিত্তিক ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদান করে। সেই ছাড়পত্র নিয়ে নির্মাণ অনুমোদনের জন্য নকশা রাজউকের ‘ইমারত নির্মাণ কমিটি’-তে দাখিল করতে হয়।

 

নকশা অনুমোদন

ইতোমধ্যে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী  শ ম রেজাউল করিমের প্রশংসনীয় ডিজিটাল উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে । এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ৭-৫৩ দিনের মধ্যে সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। 

এবারে জেনে নেয়া যাক রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের পূর্বশর্তসমূহ- 

  •  প্রথমেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার জমির দাগ ও মৌজা নম্বর সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর এটি ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) এর কোন শ্রেণিভুক্ত তা দেখে নিতে হবে। আপনার নির্ধারিত জমিটি আবাসিক শ্রেণিভুক্ত হলেই কেবল সেক্ষেত্রে আবাসিক বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে। 
  • জমি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই যা করতে হবে তা হল ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র সংগ্রহ। এজন্য রাজউকের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে।
  • ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হল – জমি রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, খাজনা, জমা, খারিজ, সিএস (CS), আরএস (RS), মৌজা, থানা নাম, অঙ্গীকার নামা, নির্ধারিত আবেদনপত্রে আবেদন, আবেদনপত্র অনুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি এবং ব্যাংকে নির্ধারিত ফি প্রদান।
  • প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি হলো- প্রাতিষ্ঠানিক নকশা অনুমোদনের জন্য বরাদ্দপত্র, কিস্তি পরিশোধের রিসিট, ভূমি জরিপের নকশা, লিজ দলিল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (তৃতীয় ব্যক্তিকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে), ছাড়পত্রের আবেদনপত্র এবং তদানুসারে কাগজপত্র ও দলিলাদি।
  • নকশা প্রণয়নে উভয় ধরনের মালিকানার ক্ষেত্রে জমি সংলগ্ন রাস্তার ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ অনুযায়ী ফার (FAR) প্রযোজ্য হবে।
  • জমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের সাথে রাজউকের নির্ধারিত ফি প্রদানসহ জমির কাগজপত্র এবং সাইটপ্ল্যানের প্রিন্টকপি জমা দিতে হবে।
  • আবেদনের পর রাজউকের জরিপ কর্মকর্তাদের দ্বারা জমি পরিদর্শন শেষে, রিপোর্ট পজিটিভ হলে, খুব দ্রুত জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
  • জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ হল মাটি পরীক্ষা বা সয়েল টেস্ট। এই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে পরের ধাপগুলোতে অগ্রসর হতে হবে।
  • এরপর সুদক্ষ স্থপতি এবং প্রকৌশলী কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের নকশা (প্ল্যান, লে আউট, স্ট্রাকচারাল লে আউট, প্লাম্বিং ইত্যাদি) প্রস্তুত করাতে হবে। নকশা অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও দলিলাদির মধ্যে যা যা থাকবে-
  • ৮ প্রস্থ নকশাসহ আবেদন ছক সম্পূর্ণরূপে পূরণ ও স্বাক্ষর
  • নকশা-প্রণেতা কারিগরি ব্যক্তির পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য নম্বরসহ স্বাক্ষর
  • বৈধ মালিকানার হালনাগাদ সকল দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি প্রদান
  • A4 সাইজের কাগজে FAR-এর হিসাব 
  • গভীর ভিত্তি, পাইলিং এবং বেজমেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ছকে (ইন্ডেমনিটি বন্ড ফর্ম ৩০১) এবং প্রযোজ্য হলে ক্ষতিপূরণ মুচলেকা প্রদান
  • A0-A4 সাইজে মেট্রিক ম্যাপে নকশা প্রণয়ন এবং দাখিলকরণ 
  • নকশাতে অবশ্যই আবেদনকারী (মালিক/ আম মোক্তারের) নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকা জরুরি
  • ছাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানির লে-আউট প্রদর্শনপূর্বক ছাদের নকশা প্রদান
  • প্রবেশ, নির্গমন এবং ড্রাইভওয়ে প্রদর্শনপূর্বক ড্রাইভিং প্ল্যান
  • লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি দুটি সেকশন এবং সকল দিকের উন্নতি ড্রয়িং (এলিভেশন)
  • প্লটের সীমানারেখা হতে প্রযোজ্য ন্যূনতম সেটব্যাক
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রাস্তার জন্য জমি হস্তান্তরের অঙ্গীকারনামা
  • বাসযোগ্য রুম, রান্নাঘর ও গোসলখানা বা টয়লেটের ন্যূনতম ক্ষেত্রফল ও প্রস্থ
  • প্রস্তুতকৃত সকল নকশা চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য পুনরায় রাজউকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ পূর্বক নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
  • পরিশেষে রাজউকের দায়িত্ত্বরত প্রকৌশলীবৃন্দ জমাকৃত নকশা যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে আপনার চাহিদা মোতাবেক অনুমোদন প্রদান করবেন।

সম্পন্ন হয়ে গেলো আপনার বাড়িটির জন্য জমি ও নকশার অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। এবার নির্বিঘ্নে কাজে নামতে পারেন সুদক্ষ কারিগরি ব্যাক্তিদের সহায়তায় আপনার স্বপ্নের বাড়িটিকে বাস্তবরূপ দিতে।