বাড়ি বানানোর বেসিক: কেমন হবে বাড়ির ফ্রেমিং?

অধিক জনসংখ্যার এই দেশে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এবং সঠিক জ্ঞান না থাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন অনেকেই। সঠিক ধারণা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের বাড়ি কাঠামোগতভাবে হয়ে পড়ে দুর্বল আর বিপদজনক। অথচ বাড়ির কাঠামো নিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য জানা থাকলে সহজেই আপনি আপনার কষ্টে নির্মাণ করা বাড়ির গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারবেন। নির্মাণ সংক্রান্ত বেসিক তথ্যগুলো জানার ধারাবাহিকতায় এই আর্টিকেলে বাসার কাঠামো বা ফ্রেমিং কেমন হওয়া উচিৎ বা কত প্রকারের হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

ফ্রেমিংয়ের বৈশিষ্ট্য

স্থাপত্যের কাজে ফ্রেমিং (Framing) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেমিং এর মাধ্যমে ভবনের সাপোর্ট এবং আকার পাওয়া যায়। ভালো ফ্রেমিং এর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ। 

বৈশিষ্ট্যগুলো হলো – 

১। উপকরণের সহজলভ্যতা।

২। স্বল্পমেয়াদে স্থাপনার কাজ শেষ করার নিশ্চায়ক হবে।

৩। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভবনের ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস হয় কীনা দেখা।

৪। পরিবেশ দূষণ যতোটা সম্ভব কম করবে। 

৫। স্থাপনা যাতে দীর্ঘমেয়াদে মজবুত থাকে সেই দিকটা নিশ্চিত করবে।

ফ্রেমিং এর প্রকারভেদ

নির্মানশিল্পে বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং এর প্রচলন রয়েছে। বাড়ির নকশা ও ভারবহনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রেমিং ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত বিভিন্ন ধরণের ফ্রেমিং গুলো হচ্ছে – 

কাঠের ফ্রেমিং (Wood Framing) 

নির্মাণের জগতে সবচেয়ে পুরাতন এবং বহুল ব্যবহৃত ফ্রেমিং খুব সম্ভবত এই উড ফ্রেম। সহজলভ্য, বারবার ব্যবহার করা যায় এবং সাশ্রয়ী বলে বহু বছর ধরে ফ্রেমিং এর কাজে কাঠ জনপ্রিয়তার আসনে আছে। বড় বড় কাঠের গুড়ি প্রয়োজন মতো কেটে নিয়ে প্লেট, জয়েন্ট, র‍্যাফটার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই উপকরণের সুবিধা হল হাতেই যেমন বহন করা যায় তেমনি সাইটেই একে প্রস্তুত করে নেওয়া যায় প্রয়োজন মতো। কাঠের ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র দেয়ালে ড্রাইওয়াল, প্যানেলিং ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। অবশ্য আজকাল কাঠের ফ্রেমিং এর পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনার জন্য অন্য উপকরণের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এই ধরনের ফ্রেমিং এর স্থাপনার কাজে সময় কম লাগলেও এর কিছু অপকারী দিক ও আছে। কাঠ অগ্নি নিরোধ করতে পারেনা, সেই সাথে দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও খুব বেশি টেকসই না বলে আস্তে আস্তে এর ব্যবহার কমছে।

লাইট গজ স্টীল ফ্রেমিং (Light Gauge Steel Framing)

এই ধরনের ফ্রেমিং কাঠের ফ্রেমিং এর মতোই। পার্থক্য হল কাঠের পরিবর্তে লাইট গজ স্টীল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফ্রেমিং এ গ্যালভানাইজড কোটিং করা হয়ে থাকে ক্ষয়রোধের জন্য। মেটাল কাটিং যন্ত্রের সাহায্যে এই ধরনের স্টীলকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হয়। সাশ্রয়ী, অগ্নি নিরোধক এবং শক্তিশালী গুণাবলীর জন্য এই ফ্রেমিং এর ধরণ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে এই ফ্রেমিং বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Construction site background. Hoisting cranes and new multi-storey buildings. tower crane and unfinished high-rise building. many cranes. construction of a new district of the city

কংক্রিট ব্লক/ইটের ফ্রেমিং (Concrete Block/Brick Framing)

নাম থেকেই বুঝতে পারছি এই ফ্রেমিং এর উপকরণ হল কংক্রিটের ব্লক/ইট। ভারী স্থাপনার জন্য বহুল প্রচলিত এই ফ্রেমিং অবশ্য ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার জন্য উপযুক্ত নয়। তৈরি উপাদান থেকে স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত হলেও এই ফ্রেমিং এ শ্রম অনেকটাই বেশি দিতে হয়। কংক্রিট /সিন্ডার ব্লক, ইট ইত্যাদি হাতে করে বসিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে তাই বলা যায় বেশ কষ্ট। এছাড়া শীতকালে মেসোনারি জয়েন্টের কিছুটা সমস্যা দেখা যায়। 

স্টীল ফ্রেমিং (Steel Framing)

বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মানে স্টীল ফ্রেমিং খুবই জনপ্রিয়। স্টীল কলাম এবং স্টীল ট্রাসের মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন তলা এবং ছাদ নির্মাণ করে ফেলা যায়। মেইন স্ট্রাকচার স্টীল এবং নন সাপোর্ট স্ট্রাকচারের কাজে লাইন্ট গজ স্টীল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাতে স্টীলের স্থাপনা বেশ কার্যকরী কেননা এর স্থিতিস্থাপক গুণ থাকায় কাঠামোর ক্ষতি বেশি হয় না। তবে এই ধরনের স্থাপনা খুব উচ্চ তাপমাত্রার জন্য উপযোগী না। সেই সাথে অধিক হিউমিডিটির জায়গায় দ্রুত করোসনের আশংকা থাকে।

কংক্রিটের ফ্রেমিং (Concrete Framing)

কংক্রিটের তৈরি বীম,কলাম,স্ল্যাব দিয়ে এই ফ্রেমের ভবন নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বহুতল ভবনের পাশাপাশি পার্কিং গ্যারেজ, এলিভেটেড রোডওয়ে নির্মানেও ব্যবহার করা হয় এই ফ্রেমিং। ভবন নির্মাণের কাজে কংক্রিট সাইটেই প্রয়োজন মতো প্রস্তুত করা হয় বলে কিউরিং অনেক সময় ঠিকমতো হয় না। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে খুব বেশি কার্যকর না হলেও বাতাস এবং আবহাওয়াতে এই ফ্রেমিং বেশ কার্যকরী। 

আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাঁশ, তালপাতা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাসার কথা ভুললেও বা চলবে কেন? যদিও খুব বেশি স্থায়ী নয় ওই উপকরণ নির্মিত ফ্রেমিং, তবুও স্বল্প আয়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নির্মাণে এইসব প্রাকৃতিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার আগে ভবনের ভৌগোলিক অবস্থান, কার্যকারিতা, উপকরণের সহজলভ্যতার দিক নজর রেখে ফ্রেমিং বাছাই করে নিলে মজবুত ভবনের নিশ্চয়তা শতভাগ। 

ভূমিকম্প থেকে বাড়ির সুরক্ষা: কী কী করতে হবে?

অপেশাদার কারও পরামর্শে বাড়ি সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মনে রাখবেন, একজনের ১০টি বাড়ি থাকলেও তার পরামর্শ আপনার বাড়িটিকে ভূমিকম্পরোধী করার নিশ্চয়তা দেয় না।

Continue reading

সিঁড়ি বানানোর সময় কী কী বিবেচনায় রাখা উচিৎ?

অনেক সময় অতিরিক্ত উঁচু সিঁড়ি, দরজার নিচের পর্যন্ত ধাপ চলে আসা, অতিরিক্ত সরু সিঁড়ি, উপরে উঠার সময় পর্যাপ্ত বিশ্রামের জায়গা না থাকা ইত্যাদি নানাবিধ অসুবিধা বেশিরভাগ বাসাতেই দেখা যায়।

Continue reading

নির্মাণশিল্পে কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং এর ভবিষ্যৎ

নভেল করোনা ভাইরাসের শেষ কোথায় এ সম্পর্কে কারও জানা নেই। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে আমাদের জীবন ও জীবিকা। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই এর ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। বিশ্বব্যাপী মার্চ মাসের শুরু থেকে চলছে লকডাউন। ঘরবন্দী থাকার দিন সেই যে শুরু হলো, তার শেষ এখনো হয়নি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। অফিস, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাজারসদাই সবকিছুই চলে আসছে চার দেয়ালে বন্দী থেকে।

কিন্তু কিছু কাজ রয়েছে যা কখনোই চার দেয়ালের ভেতরে থেকে করা সম্ভব নয়, আবার এই মহামারিতে করাও ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও আমাদেরকে তা বন্ধ রাখতে হয়েছে। তেমন একটি হলো নির্মাণশিল্প। করোনার প্রাদুর্ভাবে সাপ্লাই চেইন থেকে শুরু করে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সবকিছু মিলিয়ে এই শিল্প এক বিশাল হুমকির মুখে এসে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের সিমেন্টশিল্প, স্টিলশিল্পসহ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকল শিল্প একযোগে এই সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং স্থানীয় সকল ছোট প্রজেক্টের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অনুদান সম্বলিত সকল কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পদ্মা সেতু, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, কর্ণফুলি টানেল, ঢাকা মেট্রোরেলসহ প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের নির্মাণ কাজ, দেশি-বিদেশি শ্রমিকের সক্রিয়তা, কাঁচামালের স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় নির্মাণ কাজে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ সমাপ্তির সময় ২০২২ সাল পর্যন্ত বর্ধনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং করোনা প্রভাবমুক্ত দেশ থেকে শ্রমিক, প্রকৌশলীসহ লোকবল আমদানির কথা পর্যন্ত আমলে নেয়। কিন্তু করোনার প্রভাবমুক্ত কোনো দেশ থেকে জনশক্তি পাওয়া সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে উৎপাদন তথা নির্মাণকাজ বহুদিন বন্ধ থাকার কারণে কাঁচামাল নষ্ট, মেয়াদ উত্তীর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি সহজেই অনুমেয়। ইতোমধ্যে নির্মাণশিল্পের সাথে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষ, যেমন- টেকনিশিয়ান, দিনমজুরেরা কাজ হারিয়ে বেকারত্বের শিকার। ব্যাংকগুলো থেকে লোন নেয়ার পরেও কাজে লাগাতে পারছে না মালিক সম্প্রদায়। অর্থাৎ ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বৃহত্তর অর্থনীতি সবকিছু নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যেকোনো নির্মাণকাজের সময়সীমাকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগে পরিকল্পনা, নকশা অনুমোদন, সরকারি-বেসরকারি অনুদান নিশ্চিতকরণ হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ভাগে চলে সাপ্লাই চেইনের কাজ এবং মালামাল মজুতকরণ। নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে তৃতীয় এবং চতুর্থ ভাগে। আর সেই নির্মাণ কাজ শুরুর প্রাক্কালেই শুরু হয় আমাদের লকডাউন।

নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন মালামালের ক্ষতি হয় অন্যদিকে প্রায় ৩৫ লাখ নির্মাণ শ্রমিক এবং তাদের পরিবার অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন বলে জানান গবেষকরা। এক্ষেত্রে মালিক সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুচিন্তিত পদক্ষেপ এ যাবৎকালীন হয়ে যাওয়া ক্ষতির কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব হবে।

১. যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের নির্মাণকাজে নিয়োগ দেওয়া যাতে পরবর্তীতে আর রোগ সংক্রমণের জন্য কাজ বন্ধ না হয়। কারণ, সরকার ইতোমধ্যে কিছু কিছু কাজ চালু করার অনুমোদন দিয়েছে।

২. সাইটে মালামাল মজুত থেকে শুরু করে কাজ শেষ পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা এবং প্রয়োজনে প্রোজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ।

৩. পররবর্তীতে নির্মাণকাজে প্রিফ্যাব্রিক্যাটেড উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো এবং আগে থেকে মজুদ না করে সাইটেই অল্প সময়ে বানানো সম্ভব এরকম বিকল্প উপকরণের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো। যেমন- কংক্রিট ব্লক অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইটের ব্লককে সুড়কি বানিয়ে ফেলা।

৪. এক গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ৩০,০০০ আবাসন প্রকল্পের কাজসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নির্মাণকর্ম এর মধ্যে হস্তান্তরের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভবপর হয়নি। এগুলো শেষ করার পূর্বে আর কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে এগুলো সম্পূর্ণ করার দিকে মনোনিবেশ করা শ্রেয়।

৫. ইতোমধ্যে ঠিকাদার ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তার জন্য প্রয়োজনে আলাদা ফান্ড গঠন করা যেতে পারে সরকারি অনুদানে, কারণ, সরবরাহ সচল না থাকলে এই প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই।

৬. পুনরায় পদ্মা ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সাইটেই ৪০০০ জন শ্রমিকের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে, যার কারণে শ্রমিকদের অন্য এলাকায় চলাচল বন্ধ হয়। এ যাবৎ এই প্রকল্প থেকে কোনো প্রকার সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। এভাবে প্রতিটি সাইটে প্রোজেক্টের স্কেল অনুযায়ী শ্রমিকদের আবাসনের ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্মাণ কাজকে কিছুটা হলেও সচল করা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার যে প্রভাব আমাদের দেশের উপর পড়েছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি খাতগুলোকেও তৎপর হতে হবে। বিগত মাসগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ মাথায় রেখে ভবিষ্যতে সুচিন্তিত উপায়ে অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

করোনা-পরবর্তী সময়ে শ্রমিক নিয়োগ: যা যা মাথায় রাখা প্রয়োজন

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহতার নাম করোনাভাইরাস। করোনা পরবর্তী সময়ে ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে সকল ক্ষেত্রেই আসছে কাজ করার নতুন নিয়মনীতি। এসময়ে কর্মক্ষেত্রে সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য সকল শিল্পের মতো নির্মাণ শিল্পেও প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতামূলক বিশেষ ব্যবস্থা। এজন্য সাইটে বিভিন্ন ধাপে সঠিক উপায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। 

কাজ শুরুর পূর্বপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ

নির্মাণ কাজে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ রুখতে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সুষ্ঠু প্রয়োগ। নিম্নবর্ণিত পদক্ষপগুলোর সাহায্যে সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

১. নির্মাণকাজে যথাসম্ভব বড় শ্রমিক গ্রুপ নিয়োগ প্রত্যাহার করে ছোটো গ্রুপে কাজ বিভাজনের উদ্যোগ নিতে হবে।

২. কর্মরত সকল শ্রমিককে তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (PPE) প্রদান করতে হবে। এছাড়া ও নির্মাণের সাথে জড়িত সকল শ্রমিককে একাধিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মাস্ক প্রদান করতে হবে।

৩. সাইটে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার স্থান ও হাত ধোয়ার এবং বিশুদ্ধকরণের সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নির্মাণ সাইটে শ্রমিকদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি শ্রমিককে তার নিজস্ব যন্ত্রপাতি সেট সরবরাহ করতে হবে যাতে ছোঁয়াচে সংক্রমণের আশংকা না থাকে।

৫. কাছাকাছি বা পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা করতে হবে।

৬. নির্মাণ সাইটে পূর্বাবস্থার চেয়ে আরো জোরদার সুপারভিশন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।

শ্রমিকদের জন্য দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ

১. কাজ শুরুর পূর্বে শ্রমিকদেরকে কোভিড-১৯ এর বিস্তার এবং সংক্রমণ রোধে সরকার এবং WHO (World Health Organization) প্রণীত সকল দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে। কেননা, একমাত্র সঠিক সচেতনতাই পারবে এই মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ থেকে সবাইকে সাবধান রাখতে।

২. হাত সঠিকভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৬০% অ্যালকোহলযুক্ত) দিয়ে ধোয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রয়োগ এবং কাশি, থুতু ফেলার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে টিস্যুর ব্যবহার ও নির্দিষ্ট ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা জরুরি।

৩. সাইটে জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলোতে, যেমন- টয়লেট, ডাইনিংয়ে শ্রমিকদের ৬ ফুট দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং এসকল স্থানে নিরাপদ দূরত্ব নির্দেশক প্রতীক ব্যবহার করলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

৪. কোনো শ্রমিকের পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। 

৫. শ্রমিকদের কাজের সময়ে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব (৬ ফুট) বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. শ্রমিকদের প্রতিদিনের কাজের পর নিয়মিত জামা কাপড় সঠিকভাবে পরিষ্কারের ব্যাপারে অবহিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৭. কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা কোভিড-১৯ প্রতিরোধী নয়। কাজেই ওয়ার্কিং গ্লাভস ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও হাত সঠিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশাবলি প্রযোজ্য হবে।

সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের নির্দেশাবলী

১. প্রয়োজন ব্যতীত সাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং মনিটরিং , সুপারভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা।

২. সাইটে প্রবেশের পূর্বে সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা।

৩. সাইটে প্রবেশস্থানে স্ক্রিনিং এবং হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা রাখা।

৪. সাইটে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশের সময় যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. সাইটেই প্রবেশ এবং বহির্গমন গেইট সঠিকভাবে চিহ্নিত করা।

৬. সাইটে প্রবেশের সময় উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তি এবং বয়স্ক, অসুস্থ এবং গর্ভবতী শ্রমিককে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

৭. সাইটে প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় শ্রমিকদের সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধোয়া নিশ্চিত করা।

সর্বোপরি, সাইটে সঠিক নিরাপত্তার স্বার্থে আরো যা যা প্রয়োজন তা হলো:

১. কাজ করতে গিয়ে কারো লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গায় এবং টিস্যুর সাহায্যে কফ, থুতু ফেলার নির্দেশ প্রদানসহ দ্রুততম সময়ে তাদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

২. কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ি আসলে, ড্রাইভারদের যথাসম্ভব না নেমে, যথাস্থানে তা নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. হাত ধোয়ার জায়গা ও টয়লেটসহ পুরো সাইট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৪. সকল যন্ত্রপাতি ও বারবার স্পর্শ লাগে এমন সাইট এরিয়াগুলো প্রতিদিন নির্ধারিত সময় পর পর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৫. নিরাপদ পানি সরবরাহসহ শ্রমিকদেরকে ‘ওয়ান টাইম কাপ’ বা স্ব স্ব ব্যক্তিগত কাপ বা গ্লাস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

৬. কনস্ট্রাকশন সাইটের সকল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

৭. সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে সময় ও কাজ ভেদে শিডিউল পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে একই সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন।

কন্সট্রাকশন সাইটের কাজে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক একত্রে কাজ করা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে কাজের সাথে জড়িত সকলকেই নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।

কোভিড পরবর্তী আবাসন- সতর্কতা ও সচেতনতা

কোভিড১৯ মহামারি ২০২০ সালে আমাদের জীবনধারাকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে স্থান, কাল, পাত্র, শ্রেণী, বর্ণ নির্বিশেষে। আমরা সবাই একটি পর্যায়ে ঘরবন্দী হতে বাধ্য হয়েছি এবং বর্তমানে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধানের আগেই আমাদের বের হয়ে আসতে হচ্ছে ঘর থেকে। কিন্তু এর মধ্যেই নিজের আবাসস্থল থেকে কাজ করা, শিক্ষাগ্রহণ হোম ডেলিভারিসহ অনেক বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে বিশ্ববাসী। সাথে সাথে আমাদের মতো নগরবাসীর সামনে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবাসন বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনাটা আবশ্যক।

বর্তমানে আবাসন বিষয়ে ঢাকা শহরের একমাত্র পছন্দের বা বিলাসের নিয়ামক হচ্ছে স্কয়ার ফুট। এর সাথে টাইলস করা বাসা কিংবা খুব প্রাথমিক কিছু চাহিদার বিনিময়ে আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়ে কিনে নিচ্ছি বিভিন্ন মাপের বাক্স। সেই বাক্সগুলোতে আমাদের স্বপ্ন আমাদের প্রতিদিনের অবসর এবং পরিবারের সাথে কাটানো সেরা সময়গুলোকে করছি বাক্সবন্দী। এই জীবনধারাকে খুব বেশি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই বলা যায়। কিন্তু সানন্দে বসবাস করা বা একটি বিপর্যয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ থাকার জন্য এই ব্যবস্থা কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়। আমাদের এই জীবনধারার কারণে ঢাকা শহর শুধু কংক্রিটের জঞ্জালই হয়ে যায়নি বরং আবাসনের স্বাভাবিক সব সুযোগসুবিধার দামও হয়ে গিয়েছে আকাশচুম্বী। আমাদেরকে তাই অবশ্যই বদলাতে হবে।

স্থাপত্যে যেকোনো ভবনের নকশা শুরু হয় একজন মানুষের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দূরত্বের হিসাবনিকাশের নিরিখে। সেখানে মানুষসংক্রান্ত ব্যাপারে পরিবর্তন না এনে প্রকৌশলীগণ স্ট্রাকচারাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল প্লাম্বিংয়ের মতো কাজগুলো যোগ করেন। এতদিন এখানে সামাজিক দূরত্ব বা দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকার মতো হিসাব যেমন ছিল না, তেমনি পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হত না।

কোভিডের কারণে স্থাপত্য প্রকৌশলবিদ্যায় যারা শিক্ষিত তারা অবশ্যই ডিজাইন বা ভবন নকশায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। এমনকি যারা ভবন নির্মাণ আইন অনুমোদনের সাথে সংশ্লিষ্টতারাও মানুষের বসবাসের জন্য ন্যূনতম সুযোগসুবিধা এবং নিরাপত্তা বিধিমালায় মাথায় রাখবেন এই বিষয়গুলো। তাই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ইমারত সংক্রান্ত বিধিমালাতেও আমরা বিশ্বজুড়ে পরিবর্তন দেখব। 

কিন্তু ভবনের নকশা নির্মাণ করা হয় সেই ভবনে যারা বসবাস করবেন তাদের জন্য। এই কারণেই তাদের চাহিদাও ভবন নির্মাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই ভবনের নকশা কোভিডের মতো মহামারি প্রতিরোধী কিংবা সুরক্ষাবান্ধব হবে কিনা ব্যাপারে আপনাকেও হতে হবে সতর্ক সাবধান। 

কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন মহামারি থেকে নিরাপদ থাকতে? চলুন জেনে নেয়া যাক-

. নজর থাকুক স্কয়ার ফুটের বাইরেও

বেঁচে থাকতে হলে শুধু বেশি স্কয়ার ফুট যথেষ্ট নয়। এর সাথে চাই পর্যাপ্ত আলো বাতাস, চাই ঘরের ভেতর বাহিরের সাথে সুসম্পর্ক, চাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা। শুধু ঘরের স্কয়ার ফিট বাড়াতে গিয়ে বারান্দা বা টেরেসের মতো জায়গা ছোট করে ফেলবেন না। বেডরুমের একঘেয়েমি ঘরবন্দী অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে মানুষকে। সরকারি নিয়ম মেনে সেটব্যাক এবং প্লটের ৪০% জায়গা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি বানান। এতে মুক্ত বাতাস বা মাটির যোগান হবে। বারান্দাগুলোর গ্রিল অত্যধিক ঘন করে ফেলতে নিরুৎসাহিত করুন। শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতটুকু দরকার ততটুকুই নিন।

প্রত্যেক ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণায় আলো আসছে কিনা তা দেখে নিন। ভবনের পেছনের দিকে ফ্ল্যাটের অবস্থান হলে সেদিকে অন্য ফ্ল্যাট থেকে যথেষ্ট দূরত্ব না থাকলে সেই ফ্ল্যাট কেনা বা নির্মাণ অনুমোদন থেকে বিরত থাকুন। ছাদে বাগানসহ কম্যুনিটি স্পেস এখন সরকারি আইনের অংশ। এগুলো আপনার ক্রেতা হিসাবে অধিকারও। এই ব্যাপারগুলোতে তাই জোর দিন। 

. ফ্ল্যাটের ক্রমধারার গুরুত্ব

একটি ভালো ডিজাইনের ফ্ল্যাটে সাধারণত দুটো দরজা থাকে। একটিকে বলা হয় মূল প্রবেশপথ, আরেকটির নাম সার্ভিস প্রবেশপথ। ফার্নিচারের জায়গা বাঁচাতে গিয়ে অনেকে সার্ভিস সংক্রান্ত পথগুলো বন্ধ করে ফেলেন। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে সুস্থ থাকতে। সার্ভিস ফটকের কাছে কমন ওয়াশরুম একটি বেসিন থাকাটা বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের সময় হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্ত হওয়া এবং বাইরে থেকে কেনা বাজারসদাইসহ অন্যান্য সামগ্রী ঘরে আনার আগেই নিরাপদ করতে সাহায্য করে। এছাড়া ময়লা নিষ্কাশন ম্যানেজমেন্টেও এই ক্রমধারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই চিন্তাগুলো একজন প্রশিক্ষণবিহীন মানুষের জন্য আগে থেকে করা খুবই কঠিন। মনে রাখবেন এই পর্যায়কে বলা হয় Spatial Design যা আপনি নিজে এমনকি একজন প্রশিক্ষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও আপনাকে দিতে পারবেন না। এজন্য অবশ্যই IAB এর সদস্যপদপ্রাপ্ত স্থপতির নকশা গ্রহণ করুন। এরকম ছোট ছোট অনেক বিষয়ে একজন স্থপতির নকশা আপনাকে রোগব্যাধি থেকেও নিরাপদ রাখতে পারে।

. কমিয়ে আনুন গ্যারেজ এলাকা   

অনেকেই নিজের গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও গ্যারেজ স্পেস কিনে ভাড়া দেন বা একটি গাড়ি থাকলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে একাধিক গ্যারেজ কিনে রাখতে চেষ্টা করেন। এতে করে অল্প কিছু অর্থনৈতিক লাভ হয়তো হয়। কিন্তু ডেভেলপার স্থপতির উপর অতিরিক্ত গ্যারেজ নকশায় অন্তর্ভুক্ত করার চাপ তৈরি হয়। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায়, ওপরে জায়গা ছেড়ে দিলেও নিচে গ্যারেজের জন্য অনেক জায়গা পাকা করে ফেলতে হয়। এছাড়া গ্যারেজের বাইরে সেটব্যাকও অনেকে পাকা করে ফেলেন। এতে করে ভবনের বসবাসে তাপ বৃদ্ধি হয় এবং শহরজুড়ে মাটি পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে কেন্দ্রীয় পানির সাপ্লাইয়ের উপরে নির্ভরতা বাড়ে। ফলনশীল গাছ পানি শোষনের জন্য এসব জায়গা ফাঁকা রাখুন। গ্যারেজ এলাকায় বরং একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র (যেখানে ডাক্তার এসে ভবনের অসুস্থ রোগীদের প্রাথমিকভাবে দেখতে পারবেন), একটি ফায়ার ফাইটিং কক্ষ (বাধ্যতামূলক), চাকুরিরত গার্ডের জন্য নিজস্ব থাকার ঘর ইত্যাদি নির্মাণে মনোযোগী হোন। এগুলি আপনাকে মহামারির সময় সাহায্য করবে। 

. ল্যান্ডস্কেপিং হোক স্মার্ট

নগরে সামান্য সবুজের সন্ধানে আমরা আধুনিক ভবনে সামান্য জায়গায় কিছু গাছপালা লাগাতে চেষ্টা করি। ছাদে বাগানের পাশাপাশি নিচে ভবনের সামনেও বর্ণিল গাছপালা লাগানো হয়। এর সাথে অনেক ভবনে সুইমিং পুল কিংবা বাহারী পাতাবাহার গাছের সজ্জাও আজকাল দেখা যায়। কিন্তু এই ধরনের খরচগুলোর জন্য পরে মেইনটেনেন্স খরচও দিতে হয়। শহরে সবুজ এবং নিসর্গ খুবই দরকারি এবং প্লটে গাছের পরিমাণ বাড়ানোও খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু কী গাছ লাগাচ্ছেন সে ব্যাপারে সচেতন হওয়াটা আরো বেশি জরুরি। এই ফাঁকা জায়গাগুলিতে পাতাবাহার বা সজ্জাকর গাছ না লাগিয়ে ফলনশীল দেশী গাছ লাগানোটা মহামারির সময় বাইরের বাজার উপকরণের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারা যায়। এছাড়া ভবনে যারা চাকরি করেন তাদের খাদ্য সংস্থানেও এগুলো হতে পারে দরকারি জায়গা। নগর কৃষি দিনে দিনে বিশ্বজুড়ে একটি বড় আন্দোলন হয়ে উঠছে নিজেরা এক হয়ে। Urban Farming-এর জন্য আপনার ভবন প্রস্তুত হলে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যগতভাবে লাভবান হতে পারেন সকল ভবনমালিকই। সাথে সাথে কৃত্রিম এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দিতে পারে স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপিং। 

. সামাজিকতা হোক নিজেদের মাঝেই 

নগরে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সামাজিক একটি জীবন সবাই আশা করেন। অনেকেই অভিযোগ করেন, ঢাকা শহরে সামাজিক বন্ধন কমে যাচ্ছে অনেকদিন ধরেই। রোবট হয়ে পড়ছি আমরা। আমাদের ভবনের নকশাগুলি এমনভাবেই করা যাতে খুব বেশি সামাজিকতার সুযোগ থাকে না। আমরা যেটুকু সামাজিক কর্মকাণ্ড করি তাও হয়ে পড়ে পার্ক, কম্যুনিটি সেন্টার বা শপিং মল কেন্দ্রিক। অথচ এই কোভিডের সময়ে আপনি বাইরে যেতে পারছেন না আপনার সামাজিক কাজগুলোর জন্য। এটিরও নেতিবাচক প্রভাব অনেক। ভবনের একটি ইউনিট কম নির্মাণ করে কিংবা ছাদকে ব্যবহার করে গড়ে তুলুন নিজস্ব সামাজিক স্পেস। এসব জায়গায় নিজেদের অনুষ্ঠান করার সুযোগ যেমন থাকবে, প্রতিদিন বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং বৈকালিক অবসর কাটাতেও আপনাকে জনারণ্য জায়গায় যেতে হবে না। 

. হোন শক্তি স্বনির্ভর

আধুনিক ভবনে বসবাসকারী আধুনিক নাগরিক হিসাবে আপনি নিঃসন্দেহে চান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে। আপনার ভবনকে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন শক্তির ব্যাপারে স্বনির্ভর করতে। বেরিয়ে আসুন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অতি নির্ভরতা থেকে। ব্যবহার করুন সৌরশক্তি। প্রকৌশলীর পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সোলার প্যানেল লাগিয়ে নিলে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি কমে যাবে গ্রীষ্মের তাপমাত্রাও। নকশায় প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করতে স্থপতিকে উৎসাহ দিন। সঞ্চয় করার ব্যবস্থা করতে বলুন বৃষ্টির পানিনকশার কারিগরির মাধ্যমেই। আপনার বেসিনে বা গোসলে খরচ হওয়া পানি টয়লেটের ফ্ল্যাশে পুনঃব্যবহার করতে নির্দেশনা দিন প্রকৌশলীকে। আরেকটু সচেতন হলে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া পানিও খুব সহজে টয়লেটের ফ্ল্যাশে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পানি বিশুদ্ধকরণে যেমন খরচ কমবে সকলের, তেমনি আপনার পানির বিলও কমে যাবে অনেকভাবে। এই কাজগুলো করলে আপনার ভবন হবে স্বনির্ভর। তাই যেকোনো মহামারি বা দুর্যোগ অবস্থাতেও আপনি নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন সহজেই। 

. নকশার আওতায় আসুক এলাকাও 

আবাসিক এলাকার নকশার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায়, দুই বা তিন রাস্তা জুড়ে শুধুই বাড়ি তৈরি করা হয়। এতে মুদি দোকান, সেলুন বা বাজারের মতো সুবিধা পেতে যেতে হয় বহুদূর এবং অনেক মানুষ অল্প ব্যবসার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। ফলে ভীড় বাড়ে। 

কিন্তু এখন থেকেই এলাকাভিত্তিক নকশার অধীনে প্রতি ৩০ ভবনের জন্য একটি Amenity shop এর ব্যবস্থা চিন্তা করা উচিৎ। এতে করেই তৈরি হবে এলাকাভিত্তিক নিজস্ব অর্থনীতি। এই দোকানগুলি হতে পারে ভবনের ঠিক নিচেই। এমনকি স্মার্ট ল্যান্ডস্কেপ বা সামনে ছেড়ে দেয়া জায়গায় ফলনশীল গাছ লাগিয়ে, সবজির চাষ করে সেগুলো নিজেদের মধ্যে বেচাকেনা হতে পারে এসব দোকানেই। এতে করে বাজারের উপর নির্ভরতা কমবে। মানুষ নিজের এলাকার সাথে সংযুক্ত হবে আরো গভীরভাবে এবং পণ্যের দাম বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াও হবে অনেক সহজ।

কোভিড মহামারির ফলশ্রুতিতে কোনো পরিবর্তন হঠাৎ করে চলে আসবে না। তবে শুরু করতে হবে আজই। কারণ, এই মহামারি কবে নির্মূল হবে সেটা বলা যেমন কঠিন, সেরকম আরো একবার এরকম মহামারি আসলে আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আপনারই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভবনের নকশায় নান্দনিকতা বা ডেকোরেশনের চেয়ে প্রযুক্তি নকশাগত উৎকর্ষ এখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাপারে আপনি, আপনার স্থপতি, প্রকৌশলী, নির্মাতা এবং সরকারের একীভূত মনোযোগই পারে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। 

বর্ষাকালে নির্মাণসাইটে সতর্কতা

অনেক ক্ষেত্রেই বসন্ত আর শরৎকালকে বড় কোনো নির্মাণ প্রজেক্টের সূচনার জন্য খুব ভালো সময় মনে করা হয়। যেকোনো নির্মাণ প্রজেক্টে বাজেট প্রাপ্তি, জনবলের সুলভ সরবরাহ এবং কন্ট্রাক্টর ও সাব কন্ট্রাক্টরদের জন্য আমদানি-রপ্তানির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারার সুযোগ থাকায় মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে প্রচুর কাজ শুরু হতে দেখা যায়। তাই যখন কাজ শুরু হয়, তখন পরিবেশ সাধারণত সুন্দর ও সহনশীল থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। আর বাংলাদেশে নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় জুড়ে চলার প্রবণতায় প্রায় প্রতিটি নির্মাণ প্রজেক্টকেই বৃষ্টি মোকাবেলা করতে হয় একাধিকবার। 

প্রজেক্টের কয়েকটি ধাপের কাজের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি কিছু সুবিধা নিয়ে আসে। মাটি নরম থাকলে ফাউন্ডেশনের জন্য মাটি খোঁড়া সুবিধাজনক হয়। এছাড়া নির্মাণকাজে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বৃষ্টির কিছু সুবিধাজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অসুবিধার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বৃষ্টি নির্মাণকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরকম কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

  • আর্দ্রতার জন্য কাঠের ফ্রেম বেঁকে বা ফেটে যাওয়া।
  • মাপমতো বানানো উপকরণ সংকুচিত হয়ে বা ফুলে গিয়ে জায়গামতো ফিট না হওয়া। 
  • ধাতব উপকরণে মরিচা ধরে যাওয়া।
  • সাইটের মাটি সরে গিয়ে ফাউন্ডেশন বা স্ট্রাকচারকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া।

এসব কারণে অনেক সময় বর্ষাকালে নির্মাণকাজ বন্ধও করে দিতে হয়। কিন্তু তাতে নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়িক দিকগুলোতে নেমে আসে ক্ষতি এবং মালিক বা ডেভেলপারের জন্যও এমন সময়ক্ষেপণ অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললে বর্ষাকালেও নির্মাণ নিরাপদ ও সচল রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নিই সেই বিষয়গুলো।

নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিন

নির্মাণে সংশ্লিষ্ট লোকবলই আপনার নির্মাণের মূল চালিকাশক্তি। সকলে সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকাটা যেমন আপনার নির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সেরকম আপনার নির্মাণের টাইমলাইন থাকা চাই দুর্ঘটনামুক্ত। যেকোনো ঋতুতেই তাই নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। কিন্তু বর্ষাকালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি বলে চিন্তাও করতে হবে বেশি। কাজের জন্য গামবুটসহ সকল নিরাপত্তা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এর সাথে অস্থায়ী রেলিং বা সেফটি নেট ব্যবহার করতে কনট্রাক্টরকে তাগাদা দিন। সাথে সাথে শ্রমিকদের বৃষ্টিতে বাইরে কাজ করতে হলে তাদের জন্য বৃষ্টি প্রতিরোধী গিয়ারও নিশ্চিত করুন যেন তারা সুস্থ ও নিরাপদ থেকে আপনার কাজটি শেষ করতে পারেন।  

আগে থেকে পরিকল্পনা করুন

ছাদ ঢালাইয়ের মতো কিছু বিশেষ কাজ বৃষ্টি চলাকালীন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঢালাইয়ের পর যখন কিউরিং দরকার হয়, তখন বৃষ্টির পানি আপনার পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে একটি সময় নির্ধারণ করে আগেই প্ল্যান করে নিন। স্থপতি থেকে ভবনের নকশা ও ইঞ্জিনিয়ার থেকে স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং নেবার পরই নির্মাণের টাইমলাইন নিয়ে নির্মাতার সাথে কথা বলুন। বর্ষা শুরুর আগে সংবেদনশীল অংশ, যেগুলোর পানি বা আর্দ্রতায় ক্ষতি হতে পারে, পলিথিনে সেগুলো মুড়িয়ে নিন এবং স্ক্যাফোল্ডিংসহ আলগা ভারী নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ করে ফেলুন।

বৃষ্টি নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ

ধাতব ও কাঠের তৈরি সামগ্রীর পানিতে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই বর্ষার আগেই এগুলোকে পানি থেকে নিরাপদে রাখতে অস্থায়ী শেড জাতীয় কাঠামো তৈরি করা উচিৎ। এছাড়া নির্মাণে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও এই শেডের নিরাপত্তায় আনা উচিৎ এবং নিশ্চিত করা উচিৎ যেন পানি জমে থাকে এরকম কোনো অংশে আলগা বৈদ্যুতিক তার বা সংযোগ না থাকে। কম খরচে পানিরোধী ট্র্যাপ তৈরি করাও একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। বর্তমানে খুব সহজে নির্মাণ করা যায় এরকম অস্থায়ী কাঠামো উপকরণ কিনতেও পাওয়া যায়।

সঠিক উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার

আধুনিক সময়ে অনেক নির্মাণ উপকরণ ও যন্ত্রাংশই পানিরোধী। যেমন- বর্তমানে পানিরোধী রুফশিট পাওয়া যায়। যেটি দিয়ে চাল নির্মাণ করলে অনেক কম খরচে শ্রমিকদের থাকা ও বাইরে কাজ করার স্থানগুলোকে পানি থেকে নিরাপদ করা যায়। এছাড়া কাঠের উপরে বিশেষ কোটিংয়ের ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে, যেগুলো সিজন করা বা না করা দুই ধরনের কাঠকেই পানি থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই একটু বেশি বিনিয়োগ করে এধরনের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কিনলেই বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ রাখতে হয় না।

কংক্রিট ও বৃষ্টির সম্পর্ক

অবশ্যই নির্মাণের টাইমলাইন এমন হওয়া উচিৎ যেন বর্ষা আসার আগেই কংক্রিট কাস্ট করে ফাউন্ডেশন তৈরি করে নির্মাণ গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত নিয়ে আসা যায়। এই কাজ বর্ষার সময় করা যায় না। কংক্রিটের ফুটিং বসানোর আগেও পানি জমে নেই- এটা নিশ্চিত করাটা আবশ্যক। নির্মাণের অন্য অংশেও কাস্টিংয়ের জন্য কংক্রিট প্রস্তুত করা ও ঢালাই করা উচিৎ নয় বৃষ্টি চলমান অবস্থায়। এতে করে পানি ঢুকে মিক্সচারের অনুপাত পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আলাদাভাবে। চলুন দেখে নিই সেগুলো-

১. আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বালি ও সিমেন্ট পানি শোষণ করে আর্দ্র হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায় এদের সাথে পর্যাপ্ত অনুপাতে পানি মেশালেও পানি বেশি হয়ে যেতে পারে ও মিশ্রণকে দুর্বল করে ফেলতে পারে।

২. অনেক মিক্সচার তৈরিতে অ্যাডমিক্সচার ব্যবহার করে বন্ধন বাড়ানো হয় কংক্রিটের। এগুলো কংক্রিট বা ব্লকে ফাঁপা জায়গা ও ফাটল কমাতে সাহায্য করে। মূলত কংক্রিটের ভেতর পানির কণা জমে থাকা প্রতিরোধ করে এই উপাদান, যাতে পরে পানি বের হয়ে এসে ফাটল তৈরি করতে না পারে। এই উপাদানটি বর্ষায় কাজ করতে বাধ্য হলে ব্যবহার করা উচিৎ।

৩. যখন কনক্রিট ঢালাই করা হবে সেসময় পরিবেশ আর্দ্র বা বাতাস বেশি থাকা কোনোভাবেই কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নয়। টানা ১২ ঘণ্টা শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে এই নিশ্চয়তা না থাকলে সেটা বন্ধ রাখাই নিরাপদ।

৪. বর্ষাকালে অনেক সময় প্রচণ্ড বাতাস বা ঝড় হতে পারে। এ সময়েও ঢালাই করা উচিৎ নয়। ঝড় বা বাতাসের কারণে শাটারিংয়ের বাইরে চুইয়ে আসতে পারে কনক্রিট। যেটি পরবর্তীতে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে বা ফাটল তৈরি করতে পারে।

৫. প্লাস্টিকের তারপুলিন বা অন্য যেকোনো ধরনের বৃষ্টিরোধী ক্যানভাস ঢালাইয়ের সময় তৈরি রাখা উচিৎ। আর বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও ঢালাইয়ের স্থান ঢেকে ফেলা উচিৎ আগেই। কংক্রিটের সাথে খোয়াও ঢেকে রাখা দরকারি।

৬. বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক সময় কংক্রিটের সারফেসের মান নষ্ট করে দিতে পারে। সামান্য একটি স্ক্র্যাচ টেস্টের মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার এটি বুঝতে পারবেন। এরকম কোনো সমস্যা হলে বৃষ্টি থামার সাথে সাথে একই কংক্রিট বা সিমেন্ট স্প্রে দিয়ে এটিকে মেরামত করা উচিৎ। তবে চিকন স্ল্যাবের বড় ক্ষতি হলে সেটি সরিয়ে নতুন করে কাস্ট করাটাই নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। 

নির্মাণে বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু সতর্কতার অভাব নির্মাণের অংশবিশেষ বা গোটা প্রজেক্টকেই অনেকক্ষেত্রে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা, স্মার্ট প্ল্যানিং ও বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে আপনাকে এই সময় নির্মাণ কাজ চালাতে হবে। ছোট ছোট স্মার্ট পদক্ষেপই পারে কঠিন আবহাওয়াতেও আপনার নির্মাণকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে। 

ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষার খুঁটিনাটি

ভূমিকম্প আজকের সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্করগুলোর একটি। যেকোনো মুহূর্তে বহু মানুষের প্রাণক্ষয়সহ অনেক ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম এই দুর্যোগ। সেকারণে স্থায়ীভাবে সাবধানতা অবলম্বনও জরুরি।

ভূ-অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমির কম্পন হয়। মূলত ভূমিকম্প বলতে পৃথিবী পৃষ্ঠের অংশ বিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনকে বুঝায়। 

তীব্রতা অনুসারে ভূমিকম্প তিন প্রকার- প্রচণ্ড, মাঝারি এবং মৃদু। আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের দূরত্বের উপর নির্ভর করে তিন ভাগে বিভক্ত-

– অগভীর (দূরত্ব ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে)

– মধ্যবর্তী (দূরত্ব ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে)

– গভীর (দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের বেশি হলে)

ভূমিকম্পের কারণ

– ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন 

– আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

– শিলাচ্যুতি

ভবনকে ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষার উপায়

বাংলাদেশ ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা। বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। আমাদের দেশে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভূমিকম্পে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেশি। রাজউকের তথ্যমতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা নির্মিত হয়েছে, বাকি ৯০ শতাংশই অপরিকল্পিত। ঘনবসতি, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে ঢাকা সহ দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলো রয়েছে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে। সেজন্য ভবন নির্মাণের পূর্বে জেনে নেয়া প্রয়োজন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষার খুঁটিনাটি।

জাতীয় বিল্ডিং কোডের নীতিমালা মেনে চলা

ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা লাঘব করা সম্ভব। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প প্রতিরোধক নকশা ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব।

ভবনের কাঠামো লোডের অনুপাত অনুসারে হওয়া 

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুতল ভবনের নীতিমালা মেনে চলতে হবে। ছয় তলার অধিক ভার বহনকারী ভবন নির্মাণে অবশ্যই রিইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। উচ্চতা ও লোডের হিসাব অনুসারে ভবনের ভিত্তি দিতে হবে। নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ না করাই শ্রেয়। যদি একান্তই করতে হয় তাহলে লক্ষ্য রাখতে হবে ভিত্তি যেন শক্ত মাটি পর্যন্ত হয়।

 

পাহাড়ি এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আগেই মাটির বোরিং টেস্ট করে নিতে হবে। ভবনের পাশে পাহাড় বা পানি থাকলে মাটির সমান্তরাল লোড বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক।

নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রে হালকা ম্যাটারিয়ালের ব্যবহার

এমএস রড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুধু দরজা-জানালার ওপর দিয়ে দেয়ালের চারপাশে লিন্টেল দেয়াই শ্রেয়। ভবনের নকশা, কলাম ও বীম ডিজাইনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ভবনটি সিসমিক লোড ও উইন্ড লোডের জন্য সহনীয় হয়। কনক্রিট প্রস্তুত করার সময় খোয়া, সিমেন্ট, বালির উপযুক্ত অনুপাত বজায় রাখতে হবে।

ভবনের দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালা

জনবহুল এলাকায় এক ভবন থেকে অন্য ভবনের দূরত্ব কমপক্ষে ছয় ফুট থাকবে। একান্তই সম্ভব না হলে দুই ভবনের মাঝখানের মাটিকে কংক্রিট সামগ্রী দিয়ে শক্ত করতে হবে।

ভবনের সামনে জায়গা

ভবন নির্মাণের সময় ভবনের সামনে রাজউকের নীতিমালা অনুসারে ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে যেন যেকোনো প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নির্দ্বিধায় প্রবেশ করতে পারে। 

গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপদ স্থাপন

ভূমিকম্পের সময় অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ এবং গ্যাস লাইনের কারণে আগুন ধরে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেশি হতে পারে। তাই বিল্ডিং নির্মাণের সময়ই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

গৃহসজ্জায় সতর্কতা

ঘরের অভ্যন্তরে উঁচু ফার্নিচার যতটা সম্ভব দেয়ালসেটিং করতে হবে, কাচের সামগ্রী, প্লেট গ্লাস বদ্ধ শোকেস বা ক্যাবিনেটে রাখতে হবে। তুলনামূলক ভারী জিনিসপত্র আলমারী বা ক্যাবিনেটের নিচের দিকে রাখতে হবে। দেয়ালে ঝোলানো ভারী শোপিস যেমন ছবির ফ্রেম, আয়না ইত্যাদি বিছানা, সোফা অথবা অন্য কোনো বসার স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে যেন ভূমিকম্পের সময় এগুলো থেকে আহত হবার ঝুঁকি কম থাকে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ে অবস্থিত। অথচ ভূমিকম্প মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। সুতরাং মাঝারি কিংবা বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ব্যাপক ধ্বংস লাঘবে ও ভবনের ভূকম্পন সহনশীলতা বাড়াতে বিল্ডিং কোড মেনে চলা জরুরি, বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ শহরগুলোতে।

বাড়ি নির্মাণ: আগুনের হাত থেকে বাঁচবেন কীভাবে?

বহুদিন ধরেই ভবনে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাটি ঢাকা শহরের নাগরিক জীবনের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। ২০১৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ ও নগর পরিকল্পনা না মেনে স্থাপন করা রাসায়নিক গুদামের কারণে চকবাজারে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যাতে মারা যান ৮১ জন মানুষ।

এরপর ধারাবাহিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে, মজুদ সংক্রান্ত স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড চলতে থাকে। এরপর মার্চ মাসে আসে এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এর কিছুদিন পরেই ধানমণ্ডিতে একটি আবাসিক ভবনে আগুন লেগে মারা যান একজন গৃহকর্মী।

ঢাকা শহরে আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে গেলেও অগ্নি নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা এখনো পরিষ্কার। ঢাকা শহর প্রতিদিন বেড়ে চলেছে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে। মানুষের আবাসন ও বাণিজ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। অথচ সেই ভবনের উচ্চতার সাথে তাল রেখে বাড়েনি ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপণ সামর্থ্য।

বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিকাণ্ডের আগে ফায়ার সার্ভিসের ১০ তলার বেশি আগুন নিভানোর কোনো সরঞ্জামই ছিল না। এসকল বিয়োগান্তক ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে তাই ভবনের নকশাকালেই থাকা চাই অগ্নি নির্বাপণ এবং আগুন লেগে গেলে ভবনে অবস্থানকারীদের দ্রুততার সাথে সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা। এ বিষয়ে করণীয় তাহলে কী কী?

ভবন নির্মাণের আগেই নিশ্চিত করুন নিরাপত্তা

প্রথমেই মনে রাখতে হবে (এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ) – আপনার বাড়ির নকশা রাজউক অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদনে অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা একটা প্রধান বিষয়, তাই অগ্নি নির্বাপণে মানসম্পন্ন না হলে ভবন অনুমোদন পাওয়া যাবে না।

বাস্তবে যদিও অনেকেই খরচ কমাতে স্থপতির সাহায্য না নিয়ে নিজেরাই হাতুড়ে লোক দিয়ে নকশা আঁকান এবং অবৈধ উপায়ে তা অনুমোদন নিয়ে আসেন অথবা অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে ভবন তৈরি করেন। এ অবস্থায় আগুন সম্পর্কে কোনো সচেতনতা নকশায় থাকে না। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

ভবনের ব্যাপারে যা যা মানতেই হবে

১. ভবনের প্রকৌশলগত অগ্নি নির্বাপণ সিস্টেমকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সিঁড়ি কোথায় হবে বা কতটা চওড়া হবে- এখানে প্রকৌশলীর কথাই শেষকথা।

২. ভবনের আকার অনুসারে সাধারণ সিঁড়ির সাথে যদি ফায়ার এক্সিটের দরকার হয় তখন তা দিতে হবে। এই ফায়ার এক্সিটকে অগ্নি নিরোধক দরজা দিয়ে বন্ধ করতে হবে এবং এটি প্রতি তলায় করতে হবে।

৩. ভবন নির্মাণের আগেই দমকল বাহিনীর অগ্নি বিষয়ক এক্সপার্টের সাথে কথা বলতে হবে। বাসার সামনের রাস্তায় যে উচ্চতায় আগুন নিভাতে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না সেই উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা উচিত নয়।

৪. বর্তমান জীবন যাপন অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। আমরা প্রায় প্রতিটি ঘরেই এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করি, যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তাই বৈদ্যুতিক, গ্যাস সংক্রান্ত এবং তাপ তৈরি করে এমন প্রতিটি উপকরণের সংযোগ এবং আশেপাশের সরঞ্জাম কেমন হবে এর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সর্বোচ্চ পরিমাণে।

৫. ভবন থেকে ভবনের জন্য নির্ধারিত দূরত্ব রয়েছে। এটিও বজায় রাখা দরকারি যেন এক ভবন থেকে আরেক ভবনে আগুন ছড়াতে না পারে।

অগ্নি নির্বাপণ আইন এবং বাস্তবতা

বাংলাদেশে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে ভবনে অগ্নি নির্বাপণে রয়েছে সুষ্পষ্ট বিধিমালা। সেখানে প্রতিটি অবশ্যপালনীয় ও নিরাপদ ভবনচর্চা সম্পর্কে আলাদাভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণের ধারণা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় কারণ, প্রযুক্তি জড়িত এর সাথে সরাসরি।

বাংলাদেশে ২০০৬ সালে যে অগ্নি নির্বাপণ আইন প্রণীত হয়েছিল এটি বারে বারে সংশোধন করার পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা নেয়া হয়নি বিভিন্ন ধরনের চাপের কারণে।

তবে বর্তমান আইনেও বসতবাড়ি, ফ্ল্যাট, মেস বোর্ডিং বা হোস্টেল, আবাসিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ বা রেস্টুরেন্টে অগ্নি নির্বাপণ বিধিমালা রয়েছে যা মেনে চললে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের জন্য আগুন নেভানো সহজ হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিধিমালা নিম্নরূপ-

১. ভবনের উচ্চতা ও প্রধান সড়কের প্রশস্ততা এবং প্লটের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংক্রান্ত: সব প্লট ও ভবনে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথ থাকতে হবে এবং আবাসিক বহুতল ভবনের সামনের প্রধান সড়ক কমপক্ষে ৯ (নয়) মিটার প্রশস্ত হতে হবে।

একই প্লটে একাধিক ভবন থাকলে দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশের সুবিধার জন্য মূল প্রবেশ পথে গেটের উচ্চতা কমপক্ষে ৫(পাঁচ) মিটার হতে হবে।

২. ওয়েট রাইজার স্থাপন: ভবনে ওয়েট রাইজার থাকতে হবে। প্রতি তলার ছয়শো বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে।

৩. স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার স্থাপন: স্বয়ংক্রিয় ভাবে আগুনের ধোয়া বা তাপ সেন্সর করে নিজে নিজেই এক্টিভ হয়ে যায় এমন স্প্রিংকলার সিস্টেম এখন খুবই সহজলভ্য। করিডোর ও কারখানার মতো জায়গায় এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বসানোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

৪. স্থায়ী অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য পানি সরবরাহ: ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থাকতে হবে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে।

৫. ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ: একটি সচল পাম্প হাউজ থাকতে হবে,এটিকে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণ করতে হবে এবং এটি অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।

৬. স্মোক ও হিট ডিটেক্টশন সিস্টেম: সব স্মোক ও হিট ডিটেক্টর ও এয়ার ডাম্পারের অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করতে হবে। এটি নিচে ফায়ার ফাইটিং রুমে মজুদ থাকবে এবং আগুন লাগলে সবচেয়ে সহজে বের করে আনার প্রক্রিয়া থাকতে হবে।

৭. ইমার্জেন্সি লাইট: জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়। ভবনে ৫’শ জনের জন্য দুটি, এক হাজার জন পর্যন্ত তিনটি এবং এর বেশি লোক থাকলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। এটা শুধু আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত হবে।

৮. বিকল্প সিঁড়ি: ছয় তলার বড় ভবনে অবশ্যই আলাদা ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকতে হবে এবং তা বেজমেন্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে না।

৯. আলাদা লিফট: একাধিক লিফটের একটি বা চারটির বেশি লিফটের দুটি ফায়ার লিফট হিসেবে নির্মাণ ও নকশায় থাকতে হবে।

১০. রিফিউজ অঞ্চল: রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ এলাকা। আগুন লেগে গেলে ভবন থেকে সরাসরি বের হতে না পারলে মানুষ এসব জায়গায় আশ্রয় নিতে পারে। এটিও নকশায় থাকতে হবে।

১১. রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে, অগ্নি নির্বাপণ বিধিমালা আপনার ভবনে কিছু অতিরিক্ত খরচ যোগ করতে পারে। কিন্তু সেই খরচ বাঁচাতে গিয়ে আপনি যদি বিধিমালা না মানেন বা পেশাদার স্থপতি-প্রকৌশলী দ্বারা নকশা ও স্ট্রাকচার প্রণয়ন না করেন ও অবৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি করেন, পরবর্তীতে আগুনের বিপক্ষে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় যে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তা হবে অপূরণীয়।