স্থাপনার জগতে কংক্রিটের অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানে না, এমন কাউকে বর্তমানে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। প্রধানত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও কংক্রিট সুপারস্ট্রাকচার কনস্ট্রাকশনেও কার্যকর। স্ল্যাব এবং সিঁড়ি নির্মাণের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থাপনাশিল্পেও কংক্রিটের অনবদ্য ভূমিকা আছে। এত প্রয়োজনীয় এই উপাদান সম্পর্কে ভালো করে জানা তাই বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার পূর্বে বেশ দরকারি। এক নজরে তাই দেখে নেয়া যাক ভালো অ্যাগ্রেগেটের কী কী গুণাবলি থাকা দরকার ভালো মানের কংক্রিট পেতে হলে।

সারফেস, টেক্সচার, আকার, গ্রেডেশন, শোষণ ক্ষমতা, বাল্ক ইউনিট ওয়েট, স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি, ময়েশ্চার কনটেন্ট ইত্যাদি হলো অ্যাগ্রেগেটের বৈশিষ্ট্য। অ্যাগ্রেগেটের কাজ হল ঘর্ষণজনিত প্রতিবন্ধকতা রোধ করা, জমাট বাধা রোধ করা, অ্যালকালি এবং সালফেটের প্রভাব ঠেকানো, সাথে সংকীর্ণভাব মোচন করা। সাধারণ স্থাপনার ক্ষেত্রে অ্যাগ্রেগেট ৬৫-৭৫ ভাগ আয়তনের হয়ে থাকে, বাকিটুকুতে থাকে সিমেন্টের মিশ্রণ, পানি এবং বাতাস। অ্যাগ্রেগেট প্রধান ভূমিকা রাখে মানসম্মত কংক্রিটের ক্ষেত্রে। যত ঘনভাবে Aggregate-এর গঠন নিশ্চিত করা যাবে কংক্রিটের স্থায়িত্ব ততই ভালো হবে। এই কারণে অ্যাগ্রেগেটের গ্রেডেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেডেশনের ভিত্তিতে অ্যাগ্রেগেট দুই রকমের হয়ে থাকে।
১। কোর্স অ্যাগ্রেগেট (Coarse Aggregate)
২। ফাইন অ্যাগ্রেগেট (Fine Aggregate)
কোর্স অ্যাগ্রেগেট
আমরা ফুটপাতে হেঁটে যাওয়ার সময়ে বা ড্রাইভের সময় পায়ের নীচে শক্ত যা অনুভব করি এইটাই কোর্স অ্যাগ্রেগেট। প্রাকৃতিক পাথর ভেঙেই এই অ্যাগ্রেগেট পাওয়া যায়। অ্যাগ্রেগেট কেমন হবে তা নির্ভর করে পাথরের ধরনের উপর। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অ্যাগ্রেগেট মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এই ধরনের উপাদান স্ল্যাবের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হয় না, বা রিইনফোর্সমেন্ট বারের মধ্যকার দূরত্বের এক-পঞ্চমাংশের বেশি হয় না।
বিভিন্নরকম কোর্স অ্যাগ্রেগেট আমরা ব্যবহার করে থাকি। যেমন-
১। পাথর বা গ্র্যাভেল

এই ধরনের পাথর একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে বা। কংক্রিটের মিশ্রণে এই গ্র্যাভেল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ইউনিট ওয়েট প্রতি ঘনফুটে ১৪০ থেকে ১৫২ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই মান ১৪৫ পাউন্ড ধরে নেয়া হয়। এ ধরনের অ্যাগ্রেগেটের সাধারণ আকার গ্র্যানিউল থেকে শুরু করে বোল্ডারের মতো বিশাল সাইজেরও হতে পারে।
২। স্যান্ড বা বালি

বালি হল সবচাইতে মসৃণ অ্যাগ্রেগেটের উদাহরণ। বিভিন্ন রকম বালি আছে, শার্প স্যান্ড/বিল্ডার্স স্যান্ড/ক্লিন ড্রাইড স্যান্ড যা কোর্স বা ফাইন বিভিন্ন অ্যাগ্রেগেটের কাজ করে। কোর্স বালি কংক্রিটের মিশ্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
৩। গ্রানাইট

গ্রানাইট এক ধরনের ইগ্নিয়াস পাথরের উদাহরণ। একে বিভিন্ন ডায়ামিটারে চূর্ণ করে অ্যাগ্রেগেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪। পাথরচূর্ণ বা স্টোন চিপ

এই পাথরচূর্ণ সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাগ্রেগেট। কংক্রিটের বেস বা ভিত্তি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এই বস্তুর অ্যাগ্রেগেট-সিমেন্টের অনুপাত মেনে না চললেও হয়।
৫৷ রিসাইকেল্ড অ্যাগ্রেগেট

এই ধরনের অ্যাগ্রেগেট পূর্বে নির্মিত কংক্রিট ভেঙে পছন্দানুযায়ী সাইজে বানিয়ে নেওয়া হয়। বেস লেয়ার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই উপাদান। এর শোষণ ক্ষমতা এবং স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি অন্যান্য প্রাকৃতিক অ্যাগ্রেগেটের চাইতে বেশি থাকে।
এছাড়াও ভার্মিকুলাইট, গ্লাস, স্ল্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন নতুন রকমের অ্যাগ্রেগেট নিয়েও কাজ হচ্ছে।
ফাইন অ্যাগ্রেগেট
ফাইন অ্যাগ্রেগেট হলো বালি বা পাথরচূর্ণ যার ডায়ামিটার ৯.৫৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম হয়। এই অ্যাগ্রেগেট ৪.৭৫ মিলিমিটার সীভের মধ্যে সহজেই পার হয়ে যায়। প্রাকৃতিক বালি, সিল্ট, পাথর গুড়ো, কাদা এসবও ফাইন অ্যাগ্রেগেটের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। ফাইন অ্যাগ্রেগেটের উদ্দেশ্যই হল কোর্স অ্যাগ্রেগেটের মধ্যে বিদ্যমান শূন্যস্থান পূরণ করে আরো বেশি কার্যকরী করে তোলা।

মজবুত দীর্ঘস্থায়ী ঘরের জন্য কংক্রিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যাগ্রেগেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাছাইতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভালো মানের অ্যাগ্রেগেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই আপনার স্থাপনার কাজ হতে পারে সফল এবং দীর্ঘমেয়াদী।