বাড়ি তৈরির পথে আইনি কাজ

বাংলাদেশে ভূমি নির্মাণ ও বাড়ি করার ধাপে ধাপে প্রতারণা এবং ঠকে যাওয়ার গল্প এত বেশি সাধারণ যে, সাধারণ মানুষ পুরো প্রক্রিয়াটিকে অনেক ক্ষেত্রে শুধু ঝামেলারই মনে করেন না, রীতিমতো ভয় পান। অবশ্যই বাড়ি নির্মাণের সাথে ভূমিক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিক্রয় এবং শ্রমনির্ভর নির্মাণকাজের মতো নানা ধাপ রয়েছে বলে এ ব্যাপারে অনেকগুলো আইন মেনে চলার ব্যাপার থাকে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। কিন্তু জানা থাকলে ও সচেতন থাকলে সকল ঝামেলাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। 

আসুন দেখে নিই বাড়ি নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে আইনি ঝামেলা এড়িয়ে চলতে আপনাকে কী কী করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ

জমি কেনার আগেই জমি ও তার ইতিহাস সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নিন। প্লট নম্বর, বর্তমান মালিকের নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর এই বিষয়গুলি অবশ্যই জেনে নিন। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের জমির ডেটাবেজ রয়েছে। পৌরসভা পর্যায়েও ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। তাই এই তথ্যগুলো জানতে পারলে জমি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা পাওয়াটা অনেক সহজ হয়।

যিনি প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন, তার উচিত প্রপার্টির আগের সব ইতিহাস তথ্য খুঁজে বের করা। যদি আপনার এলাকায় ডেটাবেজ তৈরির কাজ না হয়ে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে আগের মালিক ও এলাকার লোকজন আপনাকে সহায়তা করতে পারেন।

দলিলের প্রযোজ্যতা যাচাই

দলিল হচ্ছে যেকোন সম্পত্তির মালিকানার একমাত্র স্বীকৃত নথি। তাই প্রতিটি ব্যাপারেই দলিল হতে হবে আসল, ত্রুটিমুক্ত এবং নির্ভরযোগ্য। এই নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা যাবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রত্যেকটি রেজিস্টার্ড দলিলের অধীনে আসল দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পর্কে সকল তথ্য থাকে। সাবরেজিস্ট্রারকে সরকারের নির্ধারিত ফি দিয়ে সহজেই মূল দলিলের একটা কপি বের করা যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ক্ষেত্রে বৈধ বণ্টননামা রয়েছে কিনা সেটাও জেনে নেওয়া যাবে।

এছাড়া এই সম্পদের গত দশ বছরের সকল তথ্য অনুসন্ধান করা যায় সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে। জমির মালিকানা যদি বদল বা বন্ধকে রাখা হয়ে থাকে কখনো, সেই তথ্যও পাওয়া যাবে এভাবে। যাচাই করে নিন কেনার আগে যে আপনার জমি দায়মুক্ত কিনা। 

খতিয়ান ও পোর্চা মিলিয়ে নেয়া

এলাকার সরকারি তফসিল অফিসে কোন জমির খতিয়ান বা পোর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। খতিয়ান বা পোর্চার সকল তথ্যই তফসিল অফিস থেকে জানা যাবে, জমির মালিকের নামের সাথে জমির বাকি তথ্যের মিল আছে কিনা সেটাও যাচাই বাছাই করে রাখতে হবে। কোন তথ্যে ভুল থাকলে সেটারও একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা সেখানে উল্লেখ থাকবে। তাই ক্রস রেফারেন্সিং এর জন্য দলিলের বিপক্ষে খতিয়ান ও পোর্চার নাম্বারও মিলিয়ে নিন।

মিউটেশান

অনেকক্ষেত্রে জমির দলিল পুরাতন হলে জমিতে বর্তমান বিক্রেতার নাম থাকে না। কিন্তু জমি কারো কাছ থেকে কিনতে হবে অবশ্যই জমির মালিকের নাম মিউটেশান করে আপডেট করে নেয়াটা অত্যন্ত দরকারি। মিউটেশানের জন্য তিনটি দলিল থাকতে হয়-

১. নামজারি জমাভাগ প্রস্তাবপত্র

২. ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ

৩. মিউটেশান খতিয়ান

খাসজমি এবং ইজারা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনেক ক্ষেত্রে জমি নিজের বিভিন্ন কাজে ইজারা দিয়ে থাকেন। আইন অনুসারে সরকার দেশের সব জমির মালিক এবং এই কারণেই জমির খাজনা সরকারকে দিতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত কাজের জন্য সরকার কোন জমি ইজারা দিয়ে থাকলে তা আইনত কেনাবেচা করা যায় না। তবে আবাসিক কারনে ইজারা দেয়া হলে তার জন্য আলাদা বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশের অনেক আবাসিক প্রপার্টিই সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। সরকার সাধারণত সিডিআর কিংবা রাজউক ইত্যাদি সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে অনেক প্রপার্টি ইজারা দিয়ে থাকে। তাই ওসব প্রপার্টির উপর কোন কাজ করতে গেলে এইসব সংস্থার অনুমতি নিতে হয়, আপনি যে প্রপার্টি কিনতে চাচ্ছেন সেটা সরকারি ইজারায় আছে কিনা সেটা নিজে গিয়ে অনুসন্ধান করে আসতে হবে।

খাজনা পরিশোধ

জমি কেনার আগের বছর পর্যন্ত জমির খাজনা পরিশোধ আছে কিনা সেটা অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত। নইলে পরবর্তীতে জমিতে বকেয়া খাজনা খরিদ্দারকেই শোধ করতে হবে। দিতে হতে পারে জরিমানাও। এছাড়া আগের মালিকের দীর্ঘদিনের খাজনা বাকি থাকা সাপেক্ষে হতে পারে সরকারি মামলাও। তাই খাজনা পরিশোধের রশিদসহই জমি ক্রয় করা উচিত।

ইমারত নির্মাণে আইন

জমি কেনার পরে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে ভবন করলে সেটা সরকার যেকোন সময় ভেঙ্গে দিতে পারেন। তাই আপনাকে যা যা করতে হবে তা নিয়ে আলাপ করা হলো।

অবশ্যই একজন লাইসেন্সধারী স্থপতিকে দিয়ে ভবনের নকশা করাতে হবে যেন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার FAR, MGC এর পাশাপাশি সকল আগুন, ভূমিকম্প এবং সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মেনেই নকশাটি করা হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে FAR বা MGC সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকলেও এবং ইট কাঠের দাম বলতে পারলেও একজন নন-লাইসেন্সড মানুষ ডিজাইন বা নকশা করার যে প্রাথমিক জ্ঞান তাও রাখেন না। সুতরাং এই চর্চা শুধু বিপদই ডেকে আনবে।

পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মের কড়াকড়ি কম হলেও এখানেও একইভাবে একটি বিধি বিধানের বই রয়েছে। এখানেও পেশাদারের সাহায্য নিয়েই ডিজাইন করানো উচিৎ। কারণ, স্থান পরিবর্তন হলেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনে ছাড় দেয়া উচিৎ নয়।

ভবন নির্মাণের সময় শ্রম অধিকার আইন অনুসারে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অনুমোদিত মজুরি এবং জীবনমান সম্পর্কে সচেতন হোন। কোন দুর্ঘটনায় আইন অমান্য হলে সেটাও হতে পারে ঝামেলার কারণ।

নকশা রাজউক বা সিটি কর্পোরেশান থেকে পাশ করানোর পর সেই নকশায় বড় পরিবর্তন আনা (যেমন- ফ্লোরের আয়তন বাড়ানো বা ফাঁকা জায়গা কমিয়ে দেয়া) আইনত দণ্ডনীয়। এ অবস্থায় যেকোন ইন্সপেক্টর এসে প্রমাণ সাপেক্ষে ভবন বা তার অংশবিশেষ ভেঙে দিতে পারেন। তাই এই চর্চাও পরিহার করতে হবে। এ জন্য অনুমোদিত ড্রয়িং অনুসারেই ভবন তুলুন এবং নকশা সংরক্ষণ করুন।

আইন মেনে প্রতিটি ধাপে ভবন তৈরি করলে আপনি ভবন সংক্রান্ত কাজে আইনি ঝামেলায় পড়বেন না। ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ হলেও আপনি ভবনে বসবাস করবেন আরো বেশি সময় ধরে। সেই দীর্ঘ সময়ে নিজের এবং নিজের পরবর্তী প্রজন্মের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে পারে আপনার সচেতনতাই।

জমি কিনবেন: যা যা করা লাগবে

প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মৌলিক অধিকার হিসাবে বাসস্থানের কথা থাকলেও, নিজের জমিতে নিজের বাসস্থান বিলাসিতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। প্রায় ২ কোটি লোকের ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় নিজের জমি শুধু বিলাসিতাই নয়, অনেক সময় প্রায় সোনার হরিণও বলা যায়।

তবে জমির জন্য মানুষের সঞ্চয় বা বিনিয়োগ যেহেতু থেমে নেই, তাই থেমে নেই জমির বেচা-বিক্রিও। বসতবাড়ির জন্য নির্ভেজাল এক টুকরো জমির চাহিদা ঢাকার সীমানা পার হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভাগ বা জেলা শহরগুলোতেও।

কিন্তু জমি কেনা মানে তো শুধু কিছু টাকার লেনদেন নয়। টাকা-পয়সার হিসেব মিলে গেলে শুরু হবে মালিকানা ও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে অনেক অনেক কাজ। শুধুমাত্র পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে অনেকেই শরণাপন্ন হন দালালের। এর ফলে অপচয় হয় নিজের সময়, অর্থ এবং মূল্যবান মানসিক শান্তি। অনেক সময় তারপরও ঝামেলামুক্ত কেনাবেচা নিশ্চিত করা যায় না। জমি কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে রাখতে হবে সম্যক ধারণা। এজন্য একটি চেকলিস্ট করে মিলিয়ে নিতে হবে প্রতিটি ধাপ। কী কী থাকবে সেই তালিকায়?

বিদ্যমান তথ্যাদি

জমির ক্রেতা হিসাবে প্রথমে বিক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি সকল কাগজপত্র চেয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে-

  • জমির সকল খতিয়ান (CAS, RAS, SA এবং BS খতিয়ান)। 
  • জমিটি সরকারের তালিকাভুক্ত হবার পর যতবার কেনাবেচা হয়েছে সম্ভবপর সকল দলিল।

এই সকল কাগজ দেখে প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি যার কাছ থেকে জমি কিনছেন, তিনি (এবং তার শরীকেরা) বর্তমানে জমির প্রকৃত মালিক। এছাড়া খতিয়ানের তথ্যাদির ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কিনা তা-ও যাচাই করতে হবে। 

এখানে লক্ষ্যণীয় কয়েকটি বিষয় হলো-

  • মৌজা নকশা ছাড়া খতিয়ান অর্থহীন। 
  • তেজগাঁওয়ের ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অফিস থেকে নির্দিষ্ট ফি-র বিনিময়ে যেকোনো জমির নকশা সংগ্রহ করা যায়। ঢাকার বাইরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এই সরবরাহের কাজ করে। 
  • যেসকল জমির মৌজার চূড়ান্ত প্রকাশনা সম্পন্ন হয়েছে সেগুলার ফটোকপি পাওয়া সম্ভব।

নামজারি

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে চলে যান সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী ভূমি কমিশনারের অফিসে। খোঁজ নিন জমিতে মালিক হিসেবে কার নামজারি করা রয়েছে। যদি সকল কাগজপত্র সঠিকও থাকে, তবুও বিক্রেতার নামে নামজারি থাকা আবশ্যক।

যদি সেটা করা না থাকে, তাহলে বিক্রেতাকে বলুন তার নামে বিক্রির আগে জমির নামজারি করিয়ে নিতে। নামজারিকে অনেক ক্ষেত্রে মিউটেশনও বলা হয়ে থাকে। নিজে থেকে গিয়ে নামজারি না করালে এই তথ্য হালনাগাদ থাকে না। কারণ সরকারিভাবে ২০ বছরের আগে জরিপ করা হয় না। আর মিউটেশন না থাকলে খাজনা দেওয়া যায় না।

খাজনা

মনে রাখবেন, জমির মালিকানা আসলে সরকারের কাছ থেকে জমির এক ধরনের ইজারা নেওয়া মাত্র। সুতরাং, অবশ্যই জমির বিপরীতে ভূমিকর দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। জমি কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন বর্তমান মালিক জমির খাজনা হালনাগাদ করেছেন। খাজনা পরিশোধের সকল কাগজপত্র বিক্রেতার কাছ থেকে চেয়ে নিন (মূলকপি সম্ভব না হলে ফটোকপি, তবে মূলকপি নিজে দেখে নেবেন) এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন। 

সাব রেজিস্ট্রি অফিস

সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে NEC সংগ্রহ করতে হবে। একে বাংলায় বলা হয় নির্দায় সনদ। এই অফিসে, বিগত ১২ বছরে জমিটির হেবা, দান, বিক্রি বা এওয়াজমূলে হস্তান্তর নিয়ে তথ্য থাকবে ও সর্বশেষ মালিকের নামের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

হিস্যাবণ্টন নিশ্চিতকরণ

একটি জমি অনেক ক্ষেত্রেই ভাগাভাগির ফলে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছায়। কিন্তু সেই অনুসারে দলিলাদি নিশ্চিত করা থাকে না। শরীকদের সঙ্গে বিক্রেতার অংশনামা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে মিলিয়ে দেখতে হবে যে, বিক্রেতা তার প্রাপ্য অংশই শুধু বিক্রি করছেন। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমির ক্ষেত্রে উপরের ধাপ অনুসারে বিক্রেতার নামজারি করতে হবে ও শরীকদের নাম নিশ্চিত করতে হবে। 

পরিত্যক্ত পরীক্ষাকরণ

তিনটি আলাদা প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হওয়ার ব্যাপারে ক্রেতাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে।

  • জমিটি কোনভাবে খাস কিনা।
  • জমিটি পরিত্যাক্ত বা শত্রু সম্পত্তি কি না।
  • কোনো কারণে সরকার জমিটি অধিগ্রহণ করেছে কি না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (ভূমি) বা সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিলে এই সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।

বন্ধকী

জমির উপরে কোনো ব্যক্তিকে বিক্রয় বা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা (Power of Attorny) অর্পণ করা আছে কিনা সেটিও যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়া জমি দেখিয়ে বা বন্ধক রেখে কোনো ব্যাংক, বীমা বা অন্য ধরনের অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ বা অন্য কোনো ধরনের সুবিধা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে এবং খোঁজ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। 

সরেজমিনে দেখা

সকল কাগজ সঠিক থাকা সাপেক্ষে ক্রেতাকে জমিতে সরেজমিনে যেতে হবে এবং জমির অস্তিত্ব ও কাগজপত্রের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে যা যা দেখা প্রয়োজন তাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

  • জমি- জমির ব্যাপারে যা যা দেখতে হবে-

১. কাগজপত্রে উল্লেখিত দাগ ও খতিয়ান নম্বর মিলিয়ে দেখতে হবে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি আর দেখানো জমি একই কিনা। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের আমিনের সহায়তা নিন। 

২. আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে আপনার জানা তথ্যসমূহের (জমির ইতিহাসসহ) প্রতিটির ব্যাপারে আবারো নিশ্চিত হোন। 

৩. জমির সংযোগ রাস্তার অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিন। রাস্তার ব্যাপারে ভবিষ্যৎ কোনো প্রস্তাবনা আছে কিনা তা-ও জেনে নিন। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা বর্ধনের প্রস্তাবনা থাকতে পারে, যাতে ক্রেতাকে জমির অংশ ছাড়তে হতে পারে। এ ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত হওয়া উচিত। 

৪. জমির ব্যাপারে কোনো মামলা-মোকদ্দমা আছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ নিন। 

  • বিক্রেতা-  বিক্রেতা ও জমির উপর তার অধিকার নিয়ে নিচের বিষয়গুলো দেখতে হবে-

১. জমির উপর বিক্রেতা বলে যিনি নিজেকে দাবি করেছেন তার বিক্রির পর্যাপ্ত অধিকার আছে কিনা।

২. জমির মালিক সাবালক ও মানসিকভাবে সুস্থ কিনা। নাবালক মালিকের জমি আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিযুক্ত করে বেচাকেনার বিধান রয়েছে।

৩. জমির মালিকের কাছ থেকে সরাসরি মৌখিক সম্মতি নেওয়া যে তিনি জমি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জমির কোনো বিষয় সম্পর্কে সামান্য পরিমাণ সন্দেহের উদ্রেক হলেও জমি বায়না করার আগেই, পত্রিকায় আইনগত বিজ্ঞপ্তি দিন। এতে করে অন্য কেউ মালিকানা দাবি করতে চাইলে আগেভাগেই তা করতে পারবে এবং আপনি মামলা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। 

নোটিশ

আইন অনুসারে জমি বায়না করার আগে জমির মালিক ও প্রত্যেক শরীককে নোটিশ দিন। এই প্রক্রিয়া আপনাকে পরবর্তীতে হয়রানি মামলা থেকে রক্ষা করবে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে দলিল প্রণয়ন ও মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কারো উপস্থিতি আপনার প্রয়োজন হবে। 

উপরে সকল প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ মনে হলেও শুধু নামজারি পেতেই কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে। বাকি সকল প্রক্রিয়া একজন দক্ষ কনসালট্যান্ট এবং দেওয়ানী আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে করতে পারলে সম্পূর্ণ বৈধভাবে মাত্র দুই থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব।

জমি কেনার ব্যাপারটি শুধু এখন একটি জীবনভর লালিত স্বপ্নই নয়, অনেক ক্ষেত্রে একটি স্মার্ট বিনিয়োগ। তাই বিনিয়োগের পূর্বে সেটি নিয়ে যথার্থভাবে যাচাই-বাছাই একটি কঠিন প্রক্রিয়া হলেও, তা দেখে, শুনে ও বুঝে নেওয়া একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনার কর্তব্য!