বাড়ি নির্মাণের সময় লক্ষ্য রাখতে হয় খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারে। কিছু কাজ ক্ষেত্রবিশেষে দৃশ্যমান থাকে, আবার কোনো কোনো কাজ দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু এর প্রতিটি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা কঠিন। এরকম একটি কাজই হচ্ছে সোলিং।
সোলিং কী? কোথায় করা হয় সোলিং? কীভাবে হিসাব করা হয় এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ? আসুন জেনে নিই এক নজরে।
ব্রিক সোলিং কী?
ভবনের ভিত্তি বা ফাউন্ডেশনে, মেঝেতে, কলাম/পিলারের নিচে, রাস্তার সাবগ্রেড স্তরের উপরে সাধারণত এক বা দুই স্তরে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়। এরপর এই ইটের মাঝে যে ফাঁকা স্থান থাকে তা পূর্ণ করা হয় বালি দিয়ে। নির্মাণের পরিভাষায় একেই বলা হয় সোলিং।
ফুটপাথে, রাস্তায়, গ্রাম্যপথে, দালানের মেঝেতে, বাগানের ভিতরে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কংক্রিটের ভিতের নিচে এরকম ইটের সোলিং করা হয়ে থাকে।
কেন করা হয় সোলিং?
সোলিংয়ের উপরে যে ভার থাকে তা সাবগ্রেড স্তরের উপর ছড়িয়ে দিতে মূলত সোলিং করা হয়। সাবগ্রেড স্তরের মাটির ভারবহন ক্ষমতা দরকারের চেয়ে কম হলে সোলিং করে মাটির উপর সাব-বেজ তৈরি করা হয়। সাব-বেজ মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
Rigid বা Flexible Pavement এর চেয়ে অনেক কম খরচে মাটির রাস্তাকে উন্নত করতে সোলিং করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ‘৮০-র দশকের শেষ ভাগে ও ‘৯০ এর দশকে প্রচুর গ্রাম্য রাস্তা সোলিং করে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নত করে কাদামুক্ত করা হয়েছিল।
কংক্রিট বা গাঁথুনির কাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সিমেন্ট-বালি-পানির মিশেল বা মর্টার (যাকে স্থানীয় ভাষায় মশলা বলা হয়) থেকে পানি চুঁইয়ে মিশ্রণের শক্তি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি মোকাবেলা করতে ইটের সোলিংয়ের ফাঁকে বালি দিয়ে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে নিশ্ছিদ্র সমতল তৈরি করা হয় ও তা নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হয়।
সোলিংয়ের প্রকারভেদ
সোলিং মূলত ইট বিছানোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মূলত তিন ধরনের সোলিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১. ফ্ল্যাট বা সোজা সোলিং (Flat Soling)
২. হেরিং-বোন বন্ড সোলিং (Herring-Bone Bond Soling)
৩. কোনাকুনি বা ডায়াগোনাল সোলিং (Diagonal Soling)
কোথায় ব্যবহার করা হয় সোলিং?
উপকরণের সহজলভ্যতা, শ্রমের স্বল্পমূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আমাদের দেশে ইট সবচেয়ে সুলভ মূল্যের নির্মাণ উপকরণ। তাই সোলিংয়ের কাজে অনেক আগে থেকেই ইট ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন কাজে সোলিং করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-
– ইমারতের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিতে।
– কলাম/পিলার ইত্যাদির নিচে।
– রাস্তা তৈরির সময় সাবগ্রেড স্তরের নিচে।
– কালভার্ট তৈরির সময় অ্যাবেটমেন্ট এবং উইং দেয়ালের নিচে।
– ঘরের মেঝেতে।
– জমি বা ঘরের সীমানা প্রাচীরের নিচে।
– লন, বাগান বা মহল্লার ভেতরের রাস্তা তৈরিতে।
– রিটেইনিং দেয়ালের নিচে।
সোলিংয়ের খরচের হিসেব
সোলিংয়ের কাজে খরচের হিসেব করতে গেলে দুটি ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে।
১। ইটের আকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা
২। গাঁথুনির প্যাটার্ন ও উক্ত প্যাটার্নে ইটের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা।
নিচে একটি উদাহরণ দিয়ে এদের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হলো।
সোলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ইটের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল
= ২৫.৪ সেমি. X ১২.৭ সেমি.
= ০.২৫৪ মি. X ০.১২৭ মি.
= (০.২৫৪ X ০.১২৭) বর্গমিটার
ফ্ল্যাটসোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর ফ্ল্যাটসোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৩১টি। হেরিং-বোন বন্ড সোলিং এর ক্ষেত্রে, প্রতি বর্গমিটার জায়গায় এক স্তর হেরিং-বোন বন্ড সোলিং করতে প্রচলিত মাপের ইট প্রয়োজন হবে ৫২টি।
ক্ষেত্রফল অনুসারে এভাবে বের করে নিন আপনার প্রয়োজনীয় সোলিং-এ দরকারি ইটের সংখ্যা। ইটের বাজার মূল্য দিয়ে গুণ করুন। স্থপতি বা প্রকৌশলীর কাছে জেনে নিন প্রয়োজনীয় ইটের সাথে কী পরিমাণ পরিমাণ বালি, সিমেন্ট ও পানি মেশাতে হবে তার অনুপাত। এগুলোর বাজার মূল্য বের করে ইটের দামের সাথে যোগ করলে আপনি নিজেই বের করে ফেলতে পারবেন সোলিংয়ের খরচের আদ্যোপান্ত।