একটি বাড়ি মানে নিরাপদ আশ্রয়। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বাড়িতে ফিরেই সবাই বিশ্রাম নেয়। তাই নিজের আবাসটি হওয়া দরকার সব ধরণের সুযোগ সুবিধায় পরিপূর্ণ। বাড়ি তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো এর প্রয়োজনীয় সব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ করা। বাড়ির ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, এসি, হিটার, কম্পিউটার ইত্যাদি যেকোন ইলেকট্রনিক সুবিধা পাবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরী। এসব সংযোগের রয়েছে নানা ধরণ, আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও রয়েছে খেয়াল রাখার মতো বিষয়। চলুন জেনে নেই বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন।
গৃহস্থলির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালানোর জন্য পুরো বাসায় উপযুক্ত সতর্কতা ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করার প্রক্রিয়াকে “হাউজ ওয়্যারিং” বলে। চারটি বেসিক অংশ থাকে যেকোন হাউজ ওয়্যারিং-এর। যেমনঃ
১। কারেন্ট ক্যারিয়ার (তার ব্যবহার করা হয় এই কাজের জন্য)
২। কন্ট্রোলিং ডিভাইস (এই কাজের জন্য সুইচ ব্যবহার করা হয়)
৩। ইলেকট্রিক্যাল মাউন্টেড ডিভাইস
৪। প্রোটেক্টিভ ডিভাইস (সাধারণত মিনিয়েচার সার্কিট ডিভাইস ব্যবহৃত হয়)
বাড়ির কিছু স্থানে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করা সবচেয়ে জরুরী। এগুলোকে হাউজ ওয়্যারিং পয়েন্টস বলা হয়। যেমনঃ
• সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্টঃ বাড়ির যেখান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের শুরু হয়, তাকেই সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্ট বলে। এই সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্ট স্থাপন করে তারপর তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হয়। এটি ছাড়া কোন ধরণের বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া বেআইনি।
• এনার্জি মিটারঃ এই মিটারটি বাড়িতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসেব রাখে। এখান থেকেই বিদ্যুৎ বিল পরিমাপ করা হয়। সাধারণত সার্ভিস এন্ট্রি পয়েন্টেই এনার্জি মিটার বসানো হয়।
• মেইন প্যানেলঃ এনার্জি মিটার থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক তার বেরিয়ে একটি প্যানেল বোর্ডে গিয়ে যুক্ত হয়। এই বোর্ড থেকেই পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ, অর্থ্যাৎ,“অন-অফ” করা হয়।
• ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডঃ আবাসিক বাসা-বাড়িতে মেইন প্যানেলের পরই স্থাপন করা হয় এই বোর্ড। প্যানেল থেকে নির্গত সকল তার এখানে এসে ভাগ হয়ে যায়। বাড়ির কোথায় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সংযোগ লাগবে এবং কোন ডিভাইসে বা মেশিনে কোন তার যুক্ত হবে সেসব নির্ধারিত হয় এখান থেকে।
ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং সিস্টেমের যত ধরণ-ধারণ
কোন ধরণের ওয়্যারিং সিস্টেম বাড়িতে ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের আগে জেনে নেওয়া দরকার কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন –
• ওয়্যারিং-এর মেয়াদ
• ওয়্যারিং-এর ম্যাটেরিয়েল
• ভবিষ্যতে সংযোগ বর্ধনের (লাইন এক্সটেনশন) এর সম্ভাবনা
• কী পরিমাণ লোড নিতে হবে, অর্থাৎ কতগুলো ডিভাইস যুক্ত হবে
• বিল্ডিং-এর কনস্ট্রাকশনের ধরণ
• নিরাপত্তা
• ওয়্যারিং-এর খরচ
সবচেয়ে বেশি যে ওয়্যারিং সিস্টেমগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিম্নরূপ –
১। পিভিসি কেসিং ওয়্যারিংঃ এক্ষেত্রে কাঠের পরিবর্তে প্লাস্টিক বা পিভিসি ব্যাটেন ব্যবহার করা হয়। উডেন ওয়্যারিং-এর মতই এটি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এবং কন্সট্রাকশন এর পর স্থাপন করা যায়।
২। কনডুইট ওয়্যারিংঃ প্রোটেকশন-এর মধ্যে দিয়ে ক্যাবল প্রবাহিত হলে তাকে বলে কনডুইট ওয়্যারিং। কনডুইট হলো টিউব, চ্যানেল অথবা পাইপ যার মধ্য দিয়ে তার স্থাপিত হয়। সারফেস কনডুইট ওয়্যারিং ছাদ ও দেয়ালের গায়ে স্থাপন করা হয়। আর কনসিলড কনডুইট ওয়্যারিং দেয়ালের ভেতরে ধাতব অথবা পিভিসি কাভারের ভেতর স্থাপিত হয়। এ ধরণের ওয়্যারিং টেকসই বেশি এবং নিরাপত্তাও বেশি দেয়। ফলে আগুন থেকে দূর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু দেয়ালের ভেজা ভাব বেড়ে গেলে তার ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেক্ষেত্রে শর্ট সার্কিট অথবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। এগুলো স্থাপনের খরচও বেশি। হেভি গেজ কনডুইট পাইপ ব্যবহৃত হয় দেয়ালের ওপরে সংযোগ দেবার জন্য। আর লাইট ওয়েট গেজ ব্যবহৃত হয় দেয়ালের ভেতরে স্থাপনের জন্য। তবে ঠিকঠাক মতো জোড়া না দেওয়া হলে ভেতরে পানি ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পিভিসি ধাতবের চাইতে ৫ গুণ বেশি বর্ধিত হয় এবং সেই জায়গা অবশ্যই রাখতে হবে। তাই -৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর ভেতর এর তাপমাত্রা রাখা উচিত।
৩। ফ্লেক্সিবল ওয়্যারিংঃ এই ধাতব কাভারগুলোকে মোচড়ানো বা বাঁকানো যায় প্রয়োজনমতো। ফলে স্থাপন ও ব্যবহার সহজ।
সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং যেন সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়। তা নাহলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার বসতি হোক নিরাপদ ও আরামদায়ক।