Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

কোন সিমেন্ট ভালো? কোন সিমেন্ট কিনবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর আমরা কিছু আলোচনার মাঝে খুঁজে নিব। প্রথমে দেখা যাক যে সিমেন্টগুলো বাজারে পাওয়া যায় তাদের প্যাকেটে কী লেখা থাকে?

কোন কোড মেনে তৈরি করা হয়?
বাংলাদেশে সিমেন্টের গায়ে বিডিএস ইএন ১৯৭-১:২০০৩ (BDS EN 197-1:2003) লেখা থাকে। এটা লেখা থাকার মানে হচ্ছে এটি বি. এস. টি. আই. দ্বারা মান নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বি. এস. টি. আই. কর্তৃক প্রণীত সিমেন্টের বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে বাংলাদেশে সিমেন্টগুলো তৈরি হয়। এজন্য সিমেন্টের ব্যাগগুলোতে বি. এস. টি. আই. এর লোগো থাকা অত্যাবশ্যক।

কোন ধরণের সিমেন্ট?
সিমেন্টের গায়ে সিইএম II/বিএম (এস-ভি-এল) [CEM II/B-M (S-V-L)] এই ধরণের লেখা থাকে যা দ্বারা বুঝা যায় এটি কোন ধরণের সিমেন্ট। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডে ২৭ ধরণের সিমেন্টের কথা বলা আছে যাদের মূলটি ভাগে ভাগ করা হয়।
সিইএম I পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (CEM I Portland cement): এটি সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিমেন্ট। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫৫% (C3S), ১৯% (C2S), ১০% (C3A), ৭% (C4AF), ২.৮% MgO, ২.৯% (SO3), ১.0% ইগনিশন লস এবং ১.0% মুক্ত CaO এই সিমেন্টের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে C3A কখনোই ১৫% এর বেশি হতে পারবে না।
সিইএম II পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (CEM II Portland-composite cement): এটি সালফেট অ্যাটাক প্রতিরোধক হওয়ায় মাটি এবং পানি সংযুক্ত স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এটি কম তাপ উৎপাদন করে। এটির দাম আর সিইএম I এর দাম একই হওয়ায় এই সিমেন্টই নির্মাণের কাজে এখন বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫১% (C3S), ২৪% (C2S), ৬% (C3A), ১১% (C4AF), ২.৯% MgO, ২.৯% (SO3), .৮% ইগনিশন লস এবং ১.0% মুক্ত CaO এই সিমেন্টের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে C3A কখনোই ৮% এর বেশি হতে পারবে না।
সিইএম III ব্লাস্টফার্নেস সিমেন্ট (CEM III Blastfurnace cement): জরুরী নির্মাণ বা মেরামত, প্রিকাস্ট নির্মাণ ইত্যাদি কাজে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এটি আগেই স্ট্রেথ দিয়ে থাকে। সাধারণত টাইপ III এর তিন দিনের স্ট্রেথ পাওয়া যায় সাত দিনের টাইপ I এবং II সিমেন্টে। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৫৭% (C3S), ১৯% (C2S), ১০% (C3A), ৭% (C4AF), ৩% MgO, ৩.১% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ১.৩% মুক্ত CaO
সিইএম IV পোজোলানিক সিমেন্ট (CEM IV Pozzolanic cement): এটি যে ইমারতে অনেক কংক্রিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেসব নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। যেমন ড্যাম। একসাথে অনেক কংক্রিট ব্যবহার করলে অত্যাধিক তাপ উৎপন্ন হয় যা কমানোই এই সিমেন্টের উদ্দেশ্য। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ২৮% (C3S), ৪৯% (C2S), ৪% (C3A), ১২% (C4AF), ১% MgO, ১.৯% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ০.৮% মুক্ত CaO এখানে C3A ৭% এবং C3S ৩৫% এর বেশি হতে পারবে না।

সিইএম V কম্পোজিট সিমেন্ট (CEM V Composite cement): যেখানে অ্যালকালি মাটি এবং পানিতে সালফেট রয়েছে সেখানে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এটির উপাদানগুলো হচ্ছে ৩৮% (C3S), ৪৩% (C2S), ৪% (C3A), ৯% (C4AF), ১.৯% MgO, ১.৮% (SO3), .৯% ইগনিশন লস এবং ০.৮% মুক্ত CaO এখানে C3A ৫% এর বেশি হতে পারবে না এবং C4AF+2C3A ২০% এর বেশি হতে পারবে না।


এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, সাধারণ নির্মাণ কাজে সিইএম II ব্যবহৃত হয়। এই পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট আবার দুই ধরণের। একটি A-M অন্যটি B-M যা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে এবং এটি লেখা থাকা অত্যাবশকীয়। কোন সিমেন্টেই সিলিকা ফিউম ১০% এর বেশি হতে পারবে না।
স্ট্রেথ ক্লাস

নিচের টেবিল থেকে এই শ্রেণীবিভাগ আমরা বুঝে নিতে পারি।

শক্তির শ্রেণী

সংকোচকারী শক্তি (এমপিএ)

প্রাথমিক সেটিং সময় (মিনিট)

শুরুতে শক্তি

প্রমাণ শক্তি

 দিন

 দিন

২৮ দিন

৩২. এন

১৬

৩২.

৫২.

৭৫

৩২. আর

১০

৪২. এন

১০

৪২.

৬২.

৬০

৪২. আর

২০

৫২. এন

২০

৫২.

 –

৪৫





এখানে ২৮ দিনের শক্তিকে দুইটি ভাগে ভাগ করে সাধারণ শুরুতে শক্তি পাওয়া কে এন এবং বেশি শক্তি পাওয়াকে আর নামে সূচিত করা হয়েছে।
এছাড়া প্রত্যেকটি সিমেন্টের প্যাকেটের গায়ে লাইসেন্স নং, ম্যানুফ্যাকচারারের নাম ঠিকানা, ওজন, উৎপাদনের তারিখ, অন্য দেশের অরিজিন দেওয়া থাকবে।
এবার জানা যাক অন্যান্য বিষয়

ল্যাবরেটরী টেস্ট:
সিমেন্টের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী টেস্ট আছে। যেমন- টেস্ট ফর ফাইননেস, প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত সেটিং টাইম, সাউন্ডনেস, কম্প্রেসিভ এবং টেনসাইল স্ট্রেন্থ ইত্যাদি। বাজারে ভালো ব্রান্ডের সিমেন্ট এই টেস্টগুলো বুয়েট থেকে করিয়ে থাকে এবং ভোক্তাদের টেস্ট রেজাল্টগুলো দেখিয়ে বিক্রি করে থাকে। আপনি মালিক হিসেবে তাদের রেজাল্টগুলো তুলনা করে দেখতে পারবেন।

সিমেন্টের ব্যাগের ওজন:
বাজারে সিমেন্টের যে ব্যাগগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর নেট ওজন ৫০ কেজি থাকে। এটিও খুব সহজে ওজন নিয়ে যাচাই করা যায়।

বায়ুরোধক কিনা:
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এই সিমেন্টের ব্যাগগুলোকে ভালোভাবে বায়ুরোধক করে প্যাকেজিং করা হয়েছে কিনা দেখে নিতে হবে। অন্যদিকে কংক্রিটিং করার জন্য বেশিদিন সিমেন্ট স্টোরে রাখলেও তার শক্তির হ্রাস পেতে থাকে তবে তা কখনই একেবারে শূন্যের কোটায় আসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি পানি দ্বারা জমাট না বাধবে। গুদামজাত করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সিমেন্টের ব্যাগ সরাসরি মাটির উপর না রেখে শুষ্ক জায়গায় কোন উপযুক্ত পাটাতনের উপর (সাধারণত মাটি থেকেইঞ্চি উপরে) রাখতে হবে যাতে খুব সহজে পানির সংস্পর্শে না আসতে পারে এবং পাশের ব্যাগের সাথে একেবারে লাগিয়ে পরের ব্যাগগুলো রাখতে হবে যেন দুই ব্যাগের মাঝের পথ দিয়ে সেভাবে বায়ু চলাচল না করতে পারে। সবশেষে সম্পূর্ণ সিমেন্টের স্তুপ পলিথিন বা রেক্সিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো। বেশিদিনের গুদামজাত সিমেন্ট শক্ত হয়ে যায় তাও গুঁড়া করে পুনঃ ব্যবহার করা যায় তবে এক্ষেত্রে সিমেন্টের অনুপাত বাড়িয়ে দিতে হয়।

গুণগত মান নির্ণয়ের মাঠ পরীক্ষাঃ
সিমেন্টের গুণগতমান নিরূপণের জন্য নিম্নে আরো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ
যদি সিমেন্টের ভেতর কোনো ঢেলা পাওয়া যায় যা আংগুলের চাপে ভাঙা সম্ভব নয় তাহলে উক্ত সিমেন্ট কংক্রিটিং এর কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
দুআঙুলের মাঝে কিছু সিমেন্ট নিয়ে ঘর্ষণ করলে যদি রেশমের মতো মসৃণ অনুভূত হয় তাহলে সেই সিমেন্ট ভালো।
একটি নতুন সিমেন্টের বস্তায় সরাসরি হাত ঢুকিয়ে যদি ঠান্ডা অনুভূত হয় তবে তাকে ভালো সিমেন্ট বলা যাবে।
কিছু সিমেন্ট দৃঢ় মুঠিতে ধারণ করে পানির ট্যাপের নীচে ধরে অথবা কিছু পানি ঢেলে যাতে করে মুঠোর ফাঁক দিয়ে পানি প্রবেশ করে সিমেন্ট ভিজতে পারে তখন যদি হাতের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়ছে বলে অনুমিত হয় তাহলে সেই সিমেন্টের গুণগত মান ভালো।
এই ফিল্ড টেস্টগুলো সহজেই আপনি নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।