ভবন নির্মাণ করতে গেলে প্রারম্ভিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি হচ্ছে পাইলিং। বহুতল ভবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা এবং কাঠামোগত স্থিতির জন্য পাইলিং একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। কিন্তু কোথায় পাইলিং প্রয়োজন হবে, কতটুকু পাইলিং করতে হবে অথবা পাইলিং করার ক্ষেত্রে খরচের হিসেবটাই বা কীভাবে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে নির্মাণ কাজে হাত দেবার আগেই।
পাইলিং কী?
পাইলিং মূলত ভবন বা স্থাপনার জন্য এক ধরনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি, যা মাটিতে দণ্ডায়মান স্থাপনার ভর একটি স্ট্রাকচারাল পদ্ধতি থেকে মাটির নিচে স্থানান্তর করে ও স্থাপনাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখে।
ভবনের ভার বহন ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে কোনো ভবনে পাইলিং করার প্রয়োজন আছে কিনা। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে তলার সংখ্যাও এক্ষেত্রে একটি নিয়ামক। অনেক সময় একে মাটির গভীরে প্রবেশ করা কলামের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে।
কেন করা হয় পাইলিং?
যেকোনো স্থাপনাকে সুদৃঢ় করাই মূলত পাইলিং-এর কাজ। এছাড়া এর কাজগুলো হলো মূলত-
১. ভবনের ভার বহন করা।
২. ভবনের চাপে বা অবস্থানের কারণে যেন মাটি সরে না যায় বা ক্ষয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।
৩. ভবনের দ্বারা তৈরি হওয়া ঘূর্ণন মোমেন্ট বা তীর্যক বলকে প্রতিরোধ করা।
৪. অনেক ক্ষেত্রে জমিতে বালি দিয়ে জমি ভরাট করা হয়। পাইলিং এই বালি-মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. ভবনের ভারকে নরম বা সংকোচনশীল পদার্থের মধ্যে দিয়ে মাটির শক্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়া।
কী কী ধরনের পাইলিং হয়?
• কাস্ট ইন সিটু (CAST IN-SITU) পাইল
বাংলাদেশে প্রচলিত পাইলিং পদ্ধতির মধ্যে কাস্ট-ইন-সিটু পাইল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে, যার ব্যাস ১৮ ইঞ্চি থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনে এটি আরো বাড়ানো যায়। আর দৈর্ঘ্য নির্ভর করে মাটির স্তরের উপর, যা সয়েল টেস্ট রিপোর্টে পাওয়া যায়।
• স্যান্ড (SAND) পাইল
স্যান্ড পাইলের ধারণাটি অপেক্ষাকৃত নতুন। সাধারণত কম তলা বিশিষ্ট স্থাপনা, যেখানে মাটির ভারবহন ক্ষমতা কম, সেখানে স্যান্ড পাইল করে সেটি বৃদ্ধি করা যায় এবং এধরনের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর। তবে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভবপর নয়।
• প্রি-কাস্ট (PRE-CAST) পাইল
প্রি-কাস্ট পাইলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাইল আগে কাস্টিং বা ঢালাই করে নেয়া হয় সুবিধামতো স্থানে (অবশ্যই মাটির অভ্যন্তরে নয়)। তারপর এটি আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বা হাতুড়ি পেটা করে জমির ভুমিতে যথাস্থানে প্রবেশ করানো হয়।
• শোর (SHORE) পাইল
যে সমস্ত স্থাপনায় বেসমেন্ট থাকে, কিংবা অন্য কোনো কারণে মাটি কাটতে হয়, সেখানে পাশের মাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেখানে শোর পাইল করা হয়। এটি করা হয় মূলত, মাটির পার্শ্বচাপ প্রতিরোধ করার জন্য। এর সাথে শিয়ার ওয়ালের তুলনা করা যায়। এটা প্রিকাস্ট বা কাস্ট ইন সিটু বা টিম্বার পাইল হতে পারে।
• টিম্বার (TIMBER) পাইল
টিম্বার পাইল হলো গাছকে (সাধারণত শাল গাছের কাণ্ড) পাইল হিসেবে ব্যবহার করা। এটি ব্যবহার করা হয় কম তলা বিশিষ্ট ভবনে।
পাইলিং-এর হিসেব
পাইলিং-এর ক্ষেত্রে রড, রিইনফোর্স করা কনক্রিট এবং বোরিং এই তিনটি জিনিসের হিসেব করা হয়। একটি সাধারণ পাইলিং (যা কাস্ট ইন সিটু ধরনের) এর হিসাব নিম্নরূপ:
কাস্ট ইন সিটু পাইলের হিসেব (1:1.5:3)
• পাইলটির ব্যাস 18″
• গভীরতা 60′-0″
• পাইলটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মোট 8টি 16mm ব্যাসের রড ব্যবহার করা হয়েছে
• কাট অফ লেভেল আরো 2′-0″ ধরা আছে
• 10mm রড দিয়ে স্পাইরালের কাজ করা আছে
প্রথম L/4 এবং শেষ L/4 এ স্পাইরালের স্পেসিং 4″C/C, বাকিটা 6″C/C ধরতে হবে। কভারিং আদর্শ পরিমাণ ধরে নিতে হবে।
Estimate for 18″Dia Boring = 1×62′-0″ = 62.00 Rft.
Estimate for RCC (1:1.5:3) = 1x{(πx1′-6″x1′-6″)/4}x62′-0″ = 109.56 Cft.
Estimate for Reinforcement:
For 16mm Dia Main Rod. = 8×62′-0″ = 496.00 Rft.
= 238.57 Kg. Lap = 8×2′-0″ = 16.00 Rft. = 7.69 Kg. For 10mm Dia Spiral
= Nπ{(D+d)+8d}
= 152π{(1′-0″+0.032)+(8×0.032)}
= 152π(1.032+0.256) = 615.04 Rft.
= 115.01 Kg. Lap
= 15×1′-0″
= 15.00 Rft = 2.80 Kg.
Total Rod = 364.00 Kg. = 3.64 qntl.
মনে রাখবেন, প্রত্যেক ভবনের পাইলিং-এর হিসেব একইরকম হবে না। তবে এই ধাপ ও ফর্মুলাতে বসিয়েই হিসেব করা হয়। এভাবে হিসেব করে আপনি পাইলিং-এর আগেই আপনার ভবনের পাইলিং-এর জন্য দরকারি রড, সিমেন্ট, বোরিং-এর হিসেব বের করতে পারেন। এরপর বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে মিলিয়ে নিলেই পেয়ে যাবেন আপনার ভবনের পাইলিং-এর খরচের হিসাবটি।