Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

ভবনের ফাউন্ডেশন: বাড়ির নিরাপত্তার প্রথম ধাপ

ফাউন্ডেশন বা ভিত্তিকে বলা যায় ভবনের রক্ষাকর্তা। যেকোনো ভবন শুরু হয় ফাউন্ডেশন তৈরি করার মাধ্যমে। মাটির নিচে দরকারি জায়গা খুঁড়ে ফাউন্ডেশন তৈরি করার দৃশ্য যেকোনো নির্মাণ সাইটে গেলে চোখে পড়বে হরহামেশাই। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের গুরুত্বও অপরিসীম।
ভবনের নিজের, ভবনে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীর ওজন বহন করে ফাউন্ডেশন। এছাড়া প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগ থেকে ভবনের রক্ষাকবচ হিসাবেও কাজ করে এটি। আসুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ফাউন্ডেশনের খুঁটিনাটি।
ফাউন্ডেশন কী?
কোনো প্রকৌশল কাঠামোর যে অংশ মাটির নিচে থাকে তাকে ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন বা Sub Structure বলে। ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন কাঠামোর সর্বনিম্ন অংশ, যার সাহায্যে কাঠামোর নিজস্ব ওজন এবং অন্যান্য আরোপিত ওজনকে মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করা হয়। ভিত্তি মূলত মূল ভবন বা সুপার স্ট্রাকচার (Super Structure) এর বেইজ হিসাবে কাজ করে।
অর্থ্যাৎ কাঠামোর নিজস্ব ওজন এবং এর উপরস্থ অন্যান্য ওজনকে মাটির শক্ত স্তরে স্থানান্তর করার জন্য কাঠামোর যে ভূনিম্মস্থ অংশ কংক্রিট ব্লক, পাইল, গ্রিলেজ ইত্যাদির সমন্বয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়, তাকেই ভিত্তি বা Foundation বলে।

ফুটিং কী?
নিজের বা প্রযুক্ত ওজনের কারণে কাঠামোর বসে যাওয়া (Settlement) প্রতিরোধ করার জন্য কাঠামোর লোডকে মাটির শক্ত স্তরে ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হয়। এজন্য ভিত্তির সবচেয়ে নিচের অংশকে ধাপে ধাপে বড় করে প্রশস্ত করা হয়। এ অংশকেই আসলে ফুটিং বলে। ফুটিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হতে পারে। আগেকার দিনে দোতলা গ্রাম্যবাড়ির ক্ষেত্রে কাঠ (Timber) এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। তবে অধিক লোড আরোপিত হলে ফুটিংকে বর্তমানে আর.সি.সি. ( R.C.C. ) পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।
ফাউন্ডেশনের প্রকারভেদ
ভিত্তি (Foundation) প্রধানত দুই প্রকার –
১. গভীর ভিত্তি ( Deep Foundation)
২. অগভীর ভিত্তি (Shallow Foundation)
গভীর ভিত্তি
যখন সুপার স্ট্রাকচারের সবচেয়ে নিচের অংশকে অনেক গভীরে স্থাপন করা হয়, তখন তাকে গভীর ভিত্তি বলে।
ফুটিংয়ের প্রকারভেদ অনুসারে এটি তিন প্রকার-
•    পাইল ফাউন্ডেশন
•    কফার ড্যাম
•    কেইসন বা ওয়েল ফাউন্ডেশন
অগভীর ভিত্তি
যখন সুপার স্ট্রাকচারের সবচেয়ে নিচের অংশকে মাটির অভ্যন্তরে স্বল্প গভীরতায় স্থাপন করা হয়, তখন তাকে অগভীর ভিত্তি বলে।
 
ফুটিং ব্যবহার সাপেক্ষে এটি চার প্রকার-
•    স্প্রেড ফুটিং (Spread Footing)
•    কম্বাইন্ড ফুটিং (Combined Footing)
•    স্ট্রাপ বা ক্যান্টিলিভার ফুটিং (Strap or Cantilever Footing )
•    ম্যাট বা র্যাফট ফুটিং (Mat or Raft Footing)
ফাউন্ডেশনের গুরুত্ব
একটি কাঠামো বা Superstructure এর উপর নানা ধরনের লোড কাজ করে। ফাউন্ডেশনের কাজ এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনা ও অতিরিক্ত ওজনকে ভূমিতে বড় এলাকার উপর ছড়িয়ে দেওয়া। কাঠামোর উপর নানা ধরনের লোড কাজ করতে পারে। তবে তিন ধরনের লোড অবশ্যই কাজ করবে।
১. ভবনের নিজের ওজন (Dead Load)
২. প্রযুক্ত ওজন (Live load)
৩. বাতাস প্রযুক্ত চাপ (Wind load)

এর বাইরে পরিবেশের অবস্থাভেদে পানি, তুষার, বালি ইত্যাদির ওজন প্রযুক্ত হতে পারে। তবে একটি আলাদা ধরনের চাপ সম্পর্কে ফাউন্ডেশন তৈরির সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে ভূমিকম্পের প্রভাব।
এক্ষেত্রে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ফাউন্ডেশন শক্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। সাথে সাথে এটিও মনে রাখতে হবে, ফাউন্ডেশন তৈরি একটি অত্যন্ত হিসেবী কাজ ও বিশেষজ্ঞ ডিজাইনারের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তাই ফাউন্ডেশন নির্মাণের সময় যা যা অবশ্যই করতে হবে –
•    জমির সয়েল টেস্ট করিয়ে নিন এবং কী ধরনের ফাউন্ডেশন দরকার হবে সেটি সয়েল টেস্টের নিরিখে সিদ্ধান্ত নিন।
•    নিজে কিংবা মিস্ত্রি বা ঠিকাদারের উপর নির্ভর করে ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। এমনকি সাধারণ আলাপের ভিত্তিতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞ ও পেশাদার ইঞ্জিনিয়ারের সহায়তা নিন যিনি এ পেশায় সক্রিয়। এ সম্পর্কে দরকারি ড্রয়িং তার কাছ থেকে সংগ্রহ করুন। সে অনুসারে পেশাদার ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রকৌশলীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ফাউন্ডেশন ও ফুটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করুন।
•    ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নিন। প্রকৌশলীর নির্ধারিত সময় পর পর ভবন ইনস্পেকশন করান, যেন ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।
আপনার বাড়িটি যদি পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে ফেরোস্কেনিং ও কোরকাটিংয়ের মাধ্যমে সহজেই ফাউন্ডেশনের বর্তমান অবস্থা আপনি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। শুরুতে ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে নিতে হবে। এজন্য প্রতি বর্গফুটে খরচ হতে পারে ৫ থেকে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ ২,০০০ বর্গফুটের ছয় তলা একটি ভবনের মূল্যায়ন করতে খরচ হবে মাত্র ৬০ হাজার টাকা।
আর নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে প্রকৌশলী শুরুতেই আপনাকে ফাউন্ডেশনের স্থায়িত্বকাল (সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ বছর) সম্পর্কে ধারণা দেবেন। এছাড়া রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কেও অবগত করবেন তিনি। ফাউন্ডেশন যেহেতু ভবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি, তাই এর নির্মাণের ব্যাপারে থাকুন বিশেষভাবে সতর্ক।