Have any question?
Call Now: 01708158112 Email: info@homebuildersclub.org

যে কয়টি প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি নির্মাণে নামা উচিৎ

বাসস্থান মানুষের তৃতীয় মৌলিক চাহিদা। বাংলাদেশের মত ছোট রাষ্ট্রে এক খন্ড জমি মহামূল্যবান। একজন মানুষের জীবদ্দশায় সাধারণত একটি বাড়ি তৈরী করাই স্বপ্নের মত। তাই কী করে সঠিকভাবে নিজের মহামূল্যবান বাড়িটি বানানো যায় তা জেনে নেওয়া জরুরী।
কি থাকবে স্বপ্নের বাড়িতে?
প্রথমেই সিন্ধান্ত নিন কেমন হবে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি। পাঁচতলা নাকি দশতলা, পার্কিং থাকলে কয়টা, লিফট জেনারেটরের সুবিধা থাকবে কিনা, বারান্দা কয়টা চাই, টয়লেট কয়টা দরকার, ছাদে বাগান হবে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রথমেই সিন্ধান্ত নিন। এতে আপনার স্বপ্নের বাড়িটি বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
অর্থায়ন
বাড়ি বানানোর জন্য অর্থায়ন সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। কারণ দেশের অর্থমন্ত্রী যেমন দেশের জন্যে বাজেট পাশ করে ঠিক তেমনি আপনার স্বপ্নের বাড়িটির বাজেটদাতা আপনি। এর জন্য আপনাকে একজন অভিজ্ঞ পুরকৌশলীর কাছে যেতে হবে। ধরুন, আপনি পাঁচ কাঠার একটি প্লটে পাঁচতলা একটি বাড়ি বানাবেন। একজন পুরকৌশলী খরচের ব্যাপারে আপনাকে আনুমানিক ধারণা দিতে পারবে যার ফলে আপনি খুব সহজেই সিন্ধান্ত নিতে পারবেন বাড়িটি কিভাবে বানাবেন। অনেকেই অর্থায়ন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েও নিজের স্বপ্নটি আর পূরণ করতে পারেন না। তাই অর্থায়ন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেলে সিন্ধান্ত নিতে পারবেন যে, ব্যাংক থেকে লোন নিবেন নাকি ডেভেলপারকে বাড়িটি করতে দিয়ে দিবেন। তবে একাধিক মানুষ একসাথে অর্থায়ন করেও বাড়ি বানানো যেতে পারে।
যদি জমি কিনতে হয়
যদি আপনার জমি কিনে বাড়ি বানানো প্রয়োজন হয়ে পড়ে তবে কিছু ব্যাপার বিবেচনা করে কেনা ভাল। যেমনঃ-
১। রাস্তা থেকে জমি অনেক উঁচু কিনা
২। রাস্তা থেকে জমি অনেক নিচু কিনা
৩। আগে পুকুর ছিল কিনা
৪। বাড়ির সামনে কতটুকু রাস্তা আছে ইত্যাদি
জমি নির্বাচন করার পর কেনার ব্যাপারেও সাবধান হতে হবে। যেমনঃ-
১। জমিটির হালনাগাদ ভূমিকর দেওয়া আছে কিনা।
২। বিক্রেতার কাছে জমিটির ভায়া দলিল থাকলে তা ভালোভাবে দেখে নিন এবং একজন ভালো উকিলের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নিন।
৩। বাংলাদেশ সাব রেজিস্টার অফিসে জমির তফসিল অনুযায়ী বিক্রেতা স্বাক্ষর করে জমি আপনার নামে হস্তান্তর করার পর আপনি স্বাক্ষর করে জমির মালিকানা নিয়ে জমির দলিল ও খতিয়ান বুঝে নিন।
ডিজিটাল সার্ভে
সাধারণত আমাদের দেশে জমি ক্রয় বিক্রয়ের সময়ে সার্ভের দ্বারা একটি হ্যান্ডস্কেচ করা হয় যেখানে জমি সঠিক মাপ বোঝা কষ্টকর হয়ে যায়। সেজন্যে মেশিন দিয়ে আপনার জমিটির সার্ভে করে ফেলুন। এতে কোন সাইড কতুটুকু বাঁকা বা কোণাগুলো কত ডিগ্রি এঙ্গেলে রয়েছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। এটি ঠিকমত না করা হলে স্বপ্নের বাড়িটি সাইটে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়।
প্ল্যান পাস
জমি, অর্থায়ন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একজন আর্কিটেক্ট আপনার মতামত অনুযায়ী বাড়ির প্ল্যান বানাবে। বাড়িটি দেখতে কেমন হবে তা জানানোর জন্যে তিনি এলিভেশন, থ্রিডি, এ্যানিমেশন ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এরপর আপনার বাড়িটি যে এলাকায় করছেন সেখানে খবর নিতে হবে যে বাড়ি বানানোর ছাড়পত্র কোন অথরিটি দিয়ে থাকে। যেমন, ঢাকার জন্য রাজউক, রাজশাহীর জন্য আরডিএ, খুলনার জন্য কেডিএ ইত্যাদি। এই অথরিটি থেকে জেনে নিতে হবে প্ল্যান পাসের জন্য কী কী জিনিস জমা দেওয়া প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে যিনি প্ল্যান তৈরি করছেন, তিনি যেন অবশ্যই উক্ত অথরিটির এনলিস্টেড আর্কিটেক্ট হন। তা নাহলে তাঁর স্বাক্ষরে আপনার বাড়ির প্ল্যান বা নকশাটি উক্ত অথরিটি থেকে পাশ করা যাবে না।
সয়েল টেস্ট
প্ল্যান হয়ে গেলেই একজন পুরকৌশলীর মতামত নিয়ে সয়েলটেস্ট করে ফেলতে হবে। আপনার স্বপ্নের বাড়িটি করার জন্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার পরেই বোঝা যাবে আপনার বাড়িটির ভিত্তি কী রকম হবে। আমাদের দেশে সাধারণত এটিকে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে হয় স্বপ্নের বাড়িটি দুর্বল হয়ে পড়ে যা জীবনের হুমকিস্বরূপ, নাহয় প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। তাই সঠিকভাবে একজন জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সয়েল টেস্ট করানো উচিত।
স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং
প্ল্যান এবং সয়েল টেস্ট করা হয়ে গেলে একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা স্ট্রাকচার বা কাঠামোগত ড্রয়িং করাতে হবে। মানব দেহের সাথে তুলনা করলে কাঠামোগত ড্রয়িং মূলত আপনার স্বপ্নের বাড়ির কঙ্কালস্বরূপ। তাই এটিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারং ইনিস্টিটিউট স্বীকৃত পুরকৌশলীর দ্বারাই শুধুমাত্র স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং করাতে হবে।
লে আউট চেক
আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং করা হয়ে গেলে তা সাইটে গিয়ে একবার লে-আউট চেক করা ভালো। সাধারণত আমাদের দেশে নির্মাণে যাওয়ার আগে এটি চেক করা হয় না। এটি এ পর্যায়ে করলে বিল্ডিং সেটিং প্ল্যান ঠিক আছে কিনা বা ফাউন্ডেশন অন্যের জমিতে চলে যাবে কিনা প্রাকটিক্যালি তা বোঝা যায় যা কাগজে কলমে অনেক সময় ভুল থাকতে পারে।
অন্যান্য ড্রয়িং
আমাদের দেশে আর্কিটেকচারাল এবং স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং ছাড়া প্ল্যাম্বিং ও ইলেকট্রিক্যাল ড্রয়িং তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অন্যদিকে এসব ড্রয়িং করার পর আর্কিটেক্ট ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারকে দেখিয়ে নেওয়া ভালো। কারণ এর ফলে যেমন বাড়ির সৌন্দর্যগত সমস্যা নিবারণ করা যায়, তেমনি স্ট্রাকচারের ক্ষতি হবে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা যায়।
ডিটেইল বিল অব কোয়ান্টিটি
সব প্রকারের ড্রয়িং বা নকশা হয়ে গেলে ডিটেইল বিল অব কোয়ান্টিটি বানাতে হবে। অর্থাৎ বাড়িটি করতে ঠিক কত খরচ হবে তার হিসাব লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এর ডিটেইল অনেকে অনেকভাবে করে থাকে। ফ্লোর অনুযায়ী হিসাবটা করলে বোঝা অনেক সহজ হয়ে যায়।
নির্মাণ সামগ্রীর ধারণা
বাড়ির মোট খরচের পরিমাণ আপনার হাতে চলে আসলে আপনাকে নির্মাণ সামগ্রী সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। কোথায় সুলভ মূল্যে গুণগত মানের নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যায় তার খোঁজ নিতে হবে। ডেভেলপাররা বাড়ি নির্মাণ করলে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারিক টেস্ট সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এতে করে একজন মালিক হিসেবে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোয়ালিটি নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে আপনার বাড়িটি বানানো হচ্ছে কিনা।
নির্মাণের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ
বাড়ি নির্মাণের আগে জমি প্রস্তুতকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সম্পূর্ণ প্লটটি গাছগাছালি ও আবর্জনাশূন্য করতে হবে। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছেঃ
১। লেবারদের থাকার জন্য জায়গা ও বাথরুম করা প্রয়োজন।
২। বিদ্যুৎ ও গ্যাস, পানির সংযোগ থাকতে হবে কারণ নির্মাণ কাজে এই তিনটি জিনিস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার
আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়ে ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া শুধু মিস্ত্রি দিয়েও বাড়ি বানানো হয়ে যায় যা একদমই অনুচিত। একজন অভিজ্ঞ সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার আপনার বাড়িটি সঠিকভাবে নির্মাণ করার জন্যে পরামর্শ দিতে পারবেন।
কন্ট্রাকটর বা ঠিকাদার নিয়োগ
সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতিতে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে যে আপনার বাড়িটি বানানোর জন্যে লেবার বা শ্রমিক নিয়োগ দিবে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ঠিকাদার অশিক্ষিত। একজন ঠিকাদারও যদি পুরকৌশলী হয়, তবে বাড়ি নির্মাণ আরো সহজ ও ভালো হবে।
সেফটি
বাড়ি নির্মাণের আগে সেফটি নিয়েও আলোচনা করতে হবে। প্রতিবছর নির্মাণকাজে অনেক শ্রমিক মারা যায়। যেমনঃ বিদ্যুৎ ব্যবহারে অসাবধানতা, উপর থেকে নির্মাণ সামগ্রী মাথার উপরে পড়া ইত্যাদি। তাই নির্মাণের আগে ঠিকাদার এবং সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সেফটি প্ল্যান করিয়ে নিতে হবে।
সিডিউল বা সময়তালিকা
সবশেষে একটি সময়তালিকা করে নেওয়া জরুরী। এ থেকে কবে প্রজেক্ট শুরু হবে এবং কবে শেষ হবে তার একটি তারিখ দেওয়া থাকে। কোন ফ্লোর কোন মাসে বা বছরে শেষ হবে জানা থাকলে কাজ যেমন সুন্দর হয়, তেমনি বাজেট নিয়েও ভালোভাবে কাজ করা যায়।